১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৩ ( এমন ছোট ছাগী কি করে দুধ দেয়?)


এমন ছোট ছাগী কি করে দুধ দেয়?- পর্ব-৩

মক্কা শরীফের এক কিশোর; তিনি তখনও যৌবনে পদার্পণ করেননি। কুরাইশ গোত্রের এক সর্দার, উকবা ইবনে আবূ মুয়ীতের একপাল ছাগল তিনি মক্কা শরীফের গিরিপথগুলোতে চরাতেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন সকালে উঠে উকবার ছাগলের পাল নিয়ে বের হয়ে যেতেন, আবার সন্ধ্যায় ফিরতেন।

একদিন এ কিশোর ছেলেটি দু'জন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন; চেহারায় বুযুর্গীর ছাপ বিরাজমান। উনারা দূর থেকে ছেলেটির দিকেই এগিয়ে আসছেন। উনারা অত্যন্ত পরিশ্রান্ত ও পিপাসার্ত ছিলেন। নিকটে এসে উনারা ছেলেটিকে সালাম জানিয়ে বললেন, “বৎস! এ ছাগলগুলো থেকে কিছু দুধ দোহন করে আমাদেরকে দিন। আমরা পান করে পিপাসা নিবৃত্ত করি।”

কিন্তু ছেলেটি বললেন, “এটা তো আমার দ্বারা সম্ভব নয়। কারণ ছাগলগুলো আমার নয়। আমি এগুলোর রাখাল ও আমানতদার মাত্র।” বুযুর্গ ব্যক্তি দু'জন এই কথায় অসন্তুষ্ট হলেন না, বরং উনাদের মুখমন্ডলে একধরনের সন্তুষ্টির ছাপ ফুটে উঠলো। উনাদের মধ্যে প্রথম বুযুর্গ ব্যক্তি তখন বললেন, “তাহলে এমন একটি ছাগী আমাকে দিন, যা এখনো পাঁঠার সংস্পর্শে আসেনি।” ছেলেটি নিকটেই দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছোট্ট ছাগীর দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন। প্রথম বুযুর্গ ব্যক্তি এগিয়ে গিয়ে ছাগীটি ধরে ফেললেন এবং “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম” বলে উনার হাত মুবারক ছাগীটির ওলানে রাখলেন।

অবাক বিস্ময়ে ছেলেটি এ দৃশ্য দেখে মনে মনে বললেন, 'কখনও পাঁঠার সংস্পর্শে আসেনি এমন ছোট ছাগী কি করে দুধ দেয়?' কিন্তু কি আশ্চর্য! কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাগীটির ওলান ফুলে উঠলো এবং প্রচুর পরিমাণে দুধ বের হতে থাকলো। দ্বিতীয় বুযুর্গ ব্যক্তি তখন একটি গর্তবিশিষ্ট পাথর নিয়ে, তাতে দুধ ভর্তি করলেন। তারপর উনারা উভয়ে তা পান করলেন এবং ছেলেটিকেও উনাদের সাথে পান করালেন। তারপর সবাই যখন পরিতৃপ্ত হলেন, তখন প্রথম বুযুর্গ ব্যক্তি ছাগীটির ওলান লক্ষ্য করে বললেন, 'চুপসে যাও।' আর অমনি সেটি পূর্বের ন্যায় চুপসে গেলো। ছেলেটি যা কিছু দেখছিলেন, সবই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিলো। তিনি প্রথম বুযুর্গ ব্যক্তিকে অনুরোধ করলেন, ‘আপনি যে কথাগুলো উচ্চারণ করলেন, তা দয়া করে আমাকে শিখিয়ে দিন।' কিন্তু প্রথম বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, “আপনি তো শিক্ষাপ্রাপ্ত বালক।”


এই প্রথম বুযুর্গ ব্যক্তি আর কেউ নন, তিনি হলেন স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর উনার সঙ্গী দ্বিতীয় বুযুর্গ ব্যক্তি হলেন খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! কিশোর ছেলেটির যেমন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাদেরকে ভালো লেগেছিল তেমনি উনাদের কাছেও ছেলেটির আচরণ, আমানতদারী ও বিচক্ষণতা চমৎকার মনে হয়েছিল। এই ঘটনার অল্প কিছুদিন পরেই সেই কিশোর ছেলেটি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাদিম হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করেন।

ছাগলের রাখাল সেই সৌভাগ্যবান কিশোরটি হলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে প্রতিপালিত হন, উনাকেই অনুসরণ করেন এবং উনারই মতো আচার-আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হন। এ কারণে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘হিদায়াত প্রাপ্তি, আচার-আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে তিনিই হচ্ছেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উত্তম ব্যক্তি।' সুবহানাল্লাহ!



0 Comments: