একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৫

 


একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান

পিতা-মাতার বুযুর্গী ও বিলাদত-

 পূর্বেই বলা হয়েছে, কুতুবুজ্জামান, আরিফবিল্লাহ্, আওলাদে রাসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ্ সূফী আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি - উনার পিতা-মাতা উভয়েই ছিলেন আল্লাহ্ পাক- উনার খাছ ওলী। দুজনেরই মোবারক বংশানুক্রম, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার সাথে সংযুক্ত হয়েছে। সিরাত-সূরত, ইবাদত-বন্দেগী, আমল-আখলাক, যিকির-ফিকির, দান-খয়রাত, ধৈর্যশীলতা, উদারতা, বদান্যতা, সহানুভূতি, সুন্নাত অনুসরণে নিরবচ্ছিন্ন নিষ্ঠা ইত্যাদি অতুলনীয় গুণাবলীতে তাঁরা ছিলেন বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। স্বভাব সঞ্জাত এসব গুণাবলীর উৎকর্ষতায় উভয়েই হয়ে উঠেছিলেন সকলের অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। এমন বুযুর্গ পিতা-মাতার ঘরেই তিনি প্রভাকরদী গ্রামে ১৯০৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পরম পিতৃ-মাতৃ মমতায় এই মাদারজাদ ওলী, জন্মলগ্ন থেকেই দ্বীনের সহীহ্ সবকলাভে বড় হতে থাকেন। শিশুকালেই তাঁর মাধ্যমে অনেক কারামতের প্রকাশ ঘটিয়ে খাছ ওলীআল্লাহ্ হিসেবে আল্লাহ্ পাক তাঁর অনুপম মর্যাদা ও মর্তবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আলোচনার যথাস্থানে তাৎপর্যময় এসব কারামত সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে।

পিতা-মাতার ইন্তিকাল ও লালন-পালন-

        মাত্র পাঁচ বছর বয়স মোবারকে এই মহান ওলীআল্লাহ স্নেহময়ী আম্মা দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। মাতৃ বিরহের যাতনা বহনের ধৈর্য ও ক্ষমতা কোন শিশুরই থাকেনা। মমতাময় মাতৃ সান্নিধ্য হারিয়ে তিনিও অব্যক্ত বেদনায় দগ্ধ হতে থাকেন। কিন্তু করুণাময় আল্লাহ্ পাক তাঁর মনোনীত প্রিয় বান্দাদের সকল বিষয়কর্ম, মনোতুষ্টি ও মনোবেদনা ভিন্ন রূপান্তর প্রক্রিয়ায় ফায়সালা করে থাকেন। ভিন্ন পদ্ধতির এই রূপান্তরে বিশেষ নিয়ামত সম্ভারে সমৃদ্ধি দানের অনিবার্য প্রয়োজনে আম্মাকে হারানোর সীমাহীন যন্ত্রণা কাতরতায় দগ্ধ পাঁচ বছর বয়সের শিশু ওলী আল্লাহ মন ও মননকে পরনির্ভরশীল না করে আল্লাহ্ পাক আত্মপ্রত্যয়ী করে গড়ে তোলেন এবং দুনিয়া থেকে বিরাগ করে আখিরাতের দিকে ঝুঁকিয়ে (রুজু করে) দেন। শিশু বয়সের এই আত্মপ্রত্যয়, আত্মনিবেদন ও মুক্তমনন তাঁর স্বাধীন মনোবৃত্তি ও বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব গঠনে অনুকূল ভূমিকা পালন করে। আল্লাহ্ পাক- উনার নিগূঢ় নৈকট্যলাভে শাণিত অনুভূতি, গভীর আকুতি, নিরন্তর প্রয়াস, চিন্তামগ্ন পরিশীলিত নিবিষ্টতা, মুক্তমনন ও জাগ্রত বিবেকে সুন্নাত অনুসরণই একজন উম্মতের জন্য প্রাথমিক ও পরিণত সোপান হিসেবে ধার্য থাকায় শৈশবকালেই তাঁর মধ্যে আল্লাহ্ পাক এসব অমোঘ উপাদানের ভিত নির্মাণ করেছেন।

দুনিয়াবী কার্যাবলী এবং নশ্বর জীবনে মানুষের আচরণ ও বিচরণ আল্লাহ্ পাক নিয়মের অধীন করেছেন। তাই পার্থিব ও পারলৌকিক প্রয়োজনে লেন-দেন, ভাব বিনিময়, রুটি-রুজি অর্জন ও বন্টন, পরিবার প্রতিপালন, প্রতিকার ও পরিপোষকতামূলক আদান-প্রদান এবং সামগ্রিক কর্মতৎপরতায় মানুষ ব্যষ্টি ও সমষ্টির সাথে সম্পৃক্ত হতে বাধ্য হয়। সৃষ্টি পরিচালনায় এ বাধ্যতা আল্লাহ্ পাক- উনার ই প্রবর্তিত বিধান। অবধারিত এই বিধানে আল্লাহ্ পাক হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান (রঃ)- উনার আম্মার ইন্তিকালের পর তাঁকে তাঁর বড় বোন হযরত সাইয়্যিদা রহিমা খাতুন (রঃ) নিকট লালন-পালনের ব্যবস্থা করেন। আম্মাকে হারানোর দুঃসহ বেদনা পরম স্নেহ ও আদরে তাঁকে ভুলিয়ে দিতে থাকেন এই মমতাময়ী বড় বোন।

শিক্ষালাভ-

        আল্লাহ্ পাক- উনার পূর্ব নির্ধারিত ব্যবস্থায় এই বড় বোনই ইল্ম হাছিলে উনাকে সহায়তা দান করেন এবং মনোযোগী করে তোলেন। আল্লাহ্ পাক- উনার মহব্বত ও মারিফাত অর্জনের নিয়ামক উপাদান ইল্ম অর্জনের জন্য উনাকে শিশু বয়সেই প্রভাকরদী গ্রামের বাড়ীর মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়া হয়। এখানকার শিক্ষা শেষে তিনি বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জিলাধীন সোনারগাঁওস্থ বুরুন্দী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। প্রাচীন এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠানটি এখনো বহাল ও চালু আছে। এখানে তিনি ইল্ম- উনার বিভিন্ন শাখায় পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এছাড়া অন্যান্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণসহ ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন বরেন্য আলিম- উনার নিকট তিনি ইল্ম হাছিল করেন। সর্বোপরি তিনি নিজ প্রচেষ্টায় ইল্ম অর্জনে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। জ্ঞানার্জনের পিপাসা ছিল তাঁর মজ্জাগত। দ্বীনি ইল্ম হাছিলের পর দৃঢ় মনোবল ও অদম্য আগ্রহে তিনি অন্যান্য সাধারণ শিক্ষায় ব্রতী হন। ১৯৩০ সালে তিনি সসম্মানে এনট্রান্স পাশ করেন। ঢাকা ইনঞ্জিনিয়ারিং স্কুল থেকে ১৯৩৫ সালে তিনি সাব ওভারশীয়ার পরীক্ষায় পাশ করেন। এসময়ে তিনি প্রভাকরদী গ্রামের বাড়ীতে আসেন। এ বছরই উনার আব্বা ইন্তিকাল করেন। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৩৭ সালে তিনি ওভারশীয়ার পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। (অসমাপ্ত)

আবা-৬৪

 

0 Comments: