একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৭

 


একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

 খালিছ আল্লাহ্ওয়ালা মানুষের নিরন্তর জিকির-ফিকির, ধ্যান-খেয়াল, মুরাকাবা-মুশাহিদা, ইবাদত-বন্দেগী পালনে কর্মক্ষেত্রের বিপত্তি ও জগৎ-সংসারের আবিলতা অন্তরায় সৃষ্টি করে থাকে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা, পরিবেশ-প্রতিবেশ অনুকূল না হলে তাঁদের একাগ্রতা ও মনোযোগে ব্যত্যয় ঘটে। একজনের যা ভালোলাগে, অন্যজনের তা মনঃপুত না হলে মানসিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। তাই দেখা যায়, যুগে যুগে ওলী আল্লাহ্গণ উনাদের জনপদের মানুষের নিষ্ঠুর আচরণে কষ্ট পেয়েছেন, অনেকে নিগৃহীত হয়েছেন। তবে আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের লক্ষ্যে অনিবার্য এই জিহাদে ওলী আল্লাহ্গণ প্রতিপক্ষকে পর্যুদস্ত করেই শুধু ক্ষান্ত থাকেননি, আল্লাহ্ পাক উনার মুহব্বত ও মারিফাত হাছিলের একমাত্র মুবারক মাধ্যম হজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদিস শরীফ উনার বাণী অনুসরণে তারা নিজ নফসের সাথে জ্বিহাদকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। সকল যুগেই আল্লাহ্ পাক উনার মাহবুব বান্দাদের সংখ্যা কম থাকায় এই উভয়বিধ জিহাদই কামিয়াবী অর্জনের নিয়ামক শক্তি হিসেবে ধার্য হয়েছে। জীবিকা অর্জনের সকল ক্ষেত্র ও স্তরে বিশেষতঃ চাকরি ক্ষেত্রের প্রতিকূল অবস্থা আল্লাহ্ ওয়ালাগণের মনঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় কর্তৃপক্ষের অসংযত আচরণ, পারিপার্শ্বিক অনাচার, নিয়মতান্ত্রিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ইত্যাদি বহুবিধ অনভিপ্রেত কারণে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ বিষময় হয়ে ওঠে। এতে দেশ ও দশের উদ্দিষ্ট কল্যাণ নস্যাৎ হয় এবং সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষের অভিযাত্রা বাধাগ্রস্থ হয়। নৈতিক অবক্ষয়ের একই ধারাবাহিকতায় কর্মক্ষেত্রের বৈরী পরিবেশ স্বাধীনচেতা হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহ উনাকে দুঃখিত ও ক্ষুব্ধ করে তোলে। একসময়ে তিনি মনে মনে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। নীতি ও রীতির প্রশ্নে আবাল্য স্বাধীন এবং মাদারজাদ এই ওলীআল্লাহ উনার উপরস্থদের সাথে বচসা কখনো তীব্র থেকে তীব্রতর  হয়ে ওঠে। কর্তৃপক্ষের সাথে মতবিরোধের চরম পর্যায়ে তিনি ছুটিতে থাকা শুরু করেন। এভাবে সাকুল্য ছুটিভোগের পরিমান হয় দীর্ঘতর। এতে দুনিয়াদার কর্তৃপক্ষ তাঁর প্রতি  বিরূপ হয়ে যায়। প্রকৃত দ্বীনদার ও দুনিয়াদারদের মধ্যে প্রচলিত সাংঘর্ষিক দ্বন্দ্বে তাঁর অজ্ঞ কর্তৃপক্ষের নাখোশ হয়ে ওঠা অস্বাভাবিক ছিলনা। এমন অবস্থায়, অফিসের কাজে বহাল থেকে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব না হওয়ায় এবং সর্বপরি আল্লাহ্পাক উনার ধ্যান-খেয়াল ও মুহব্বতে অনুক্ষণ মশগুল থাকার প্রয়োজনে পরিবেশ অবাঞ্ছিত হওয়ায় চাকুরীর প্রতি তাঁর প্রচন্ড অনীহা ও ঘৃনা জন্মে। এরূপ অবস্থা বিরাজমান ছিল দার্জিলিং, আসাম, কলকাতা, রাজশাহী, বগুড়া এবং ঢাকায়, অর্থাৎ সকল কর্মক্ষেত্রেই। এটাই তো স্বাভাবিক নিয়ম যে, আল্লাহ্ পাক উনার নিগূঢ় নৈকট্যলাভের প্রতিবন্ধক সামান্যতম ত্রুটি বিচ্যুতিকেও ওলী আল্লাহ্গণ ঘৃনার চোখে দেখবেন এবং বৈরী পরিবেশ পরিহার করে নিজেদেরকে হেফাজতে রাখবেন। অবশেষে মহান আল্লাহ পাক-এর অবধারিত ইচ্ছায় কুতুবুজ্জামান, আরিফবিল্লাহ, আওলাদে রাসূল, হযরতুল আল্লামা, শাহ্ সূফী সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান, আল হাসানী, ওয়াল হুসাইনী, ওয়াল কুরাঈশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সর্বশেষ ঢাকার কর্মস্থল থেকে স্বেচ্ছায় চাকুরী ইস্তেফা দিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির আবিলতা থেকে নিজেকে মুক্ত করেন।

        চাকুরী ছেড়ে দিয়ে এখন তিনি স্বাধীন। ফেলে আসা চাকুরী জীবনের আনন্দ-বেদনা ঘেরা স্মৃতিরা উনাকে আর আকর্ষিত করেনা। আল্লাহ্ পাক সদয় হলে হালাল জীবিকা অর্জনের জন্য হয়তো ভিন্ন একটা পথ বেছে নিতে হবে। তবে এখন জাগতিক সকল আবিলতা থেকে তাঁর অখন্ড অবসর। এমন নিরঙ্কুশ অবসরে কেবল আল্লাহ পাক উনার প্রেম সাগরে নিমজ্জিত হওয়া, আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মারিফাত ও মুহব্বতে অবিরাম মশগুল থাকা, অসীমের আকর্ষণ তাঁকে এখন ব্যাকুল করে তোলে। ইবাদত-বন্দেগী, জিকির-ফিকির, মোরাকাবা-মোশাহিদা ও মহান আল্লাহ্ পাক-এর ধ্যান-খেয়ালের নিবিষ্টতা তাঁকে কেবলই তন্ময়তা এনে দেয়। প্রাণের আকুতি, এ তন্ময়তার আবেশ কখনো যেনো ভেঙ্গে না যায়। এযেনো নিগূঢ়ভাবে গারে হেরায় সাইয়্যিদুল আলম, ইমামুন নাবিয়্যীন, সরদারে দোজাঁহা, হাবীবে আযম, সাহেবে লাওলাক, দলীলে কাবায়ে মাকসুদ, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আল্লাহ পাককে অনুভবের অনুসরণে এক উদ্বেলিত ও নিরন্তর প্রয়াস। (অসমাপ্ত)

আবা-৬৬

 

0 Comments: