একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৮

 


একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

 শাদী মোবারক-

 ইতোপূর্বে কর্মজীবনসম্পর্কিত আলোচনায় দেখা গেছে কুতুবুজ্জামান, আরিফবিল্লাহ্, আওলাদে রাসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ্ সূফী আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান, আল হাসানী, ওয়াল হুসাইনি, ওয়াল কুরাঈশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ১৯৩৬ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর যাপিত জীবনের যাবতীয় অনুকূল কর্মপ্রবাহ ধর্মকাজের সহায়ক। স্বামীর নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন ধর্মপালনে স্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে নেককার স্বামীর সাহচার্যে লব্ধ আল্লাহ্ পাক-এর নিয়ামত সম্ভারে স্ত্রীর জীবন বিকশিত ও ধন্য হয়।

 মমতাময় সান্নিধ্য, পারস্পরিক পরিপূরক অবদান এবং অকৃতিম ভাব ও ভালোবাসার লেনদেন, অনাবিল প্রশান্তিতে উভয়ের কলূষমুক্ত মন ও মননকে পরোয়ারদিগার-এর প্রতি সমর্পিত করে দেয়। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন-এর মত এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে অনুগত থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে ধর্ম পালনে যতো প্রকার আপদ ও বিপত্তি দেখা দেয়, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের অথবা একজনের ধর্ম বিমুখতা এবং অনাচার তার মধ্যে প্রকট। বর্তমানে দেখা যায় এবং অতীত ইতিহাসেও লক্ষ্য করা গেছে, অবিবাহিত কালযাপনও ধর্মভীরুতা অর্জনে বিপর্যয় ঘটায়।

 সর্বজন বিদিত যে, অবিবাহিত জীবন যাপনে অভ্যস্ত থেকে উনারা কামিয়াবী অর্জন করেছেন, সংখ্যায় উনারা নগন্য। এক্ষেত্রে নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাস উনাদের সংখ্যাও অত্যল্প। আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টিলাভের বাধ্যতামূলক অবধারিত মুবারক মাধ্যম  হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন, “ইসলাম ধর্মে বৈরাগ্য নেই।তিনি আরো সাবধান করেছেন, “বিয়ে করা আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নতের প্রতি বিমুখ হয়, সে আমার প্রতি বিমুখ হয়।বিয়ের প্রয়োজন ও গুরুত্ব বুঝাতে অন্যত্র তিনি বলেছেন, “যে আমার সুন্নতের প্রতি বিমুখ হয়, সে আমার দলভুক্ত নয়। বিয়ে আমার অন্যতম সুন্নত। অতএব যে আমাকে মুহব্বত করে সে যেনো আমার সুন্নত পালন করে (বিয়ে করে)।

  বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর ধর্মভিত্তিক প্রেমময় বন্ধন ইবলিশের কুমন্ত্রণা থেকে আত্মরক্ষার সুদৃঢ় প্রাচীর। আল্লাহ পাক উনার আমোঘ নিয়মে নেকবখ্ত স্ত্রীর গর্ভ থেকেই নেক সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। স্বীকৃত অভিমত এই যে, ইবাদতের জন্য নির্জনবাস অপেক্ষা বিয়ে করা উত্তম। ঈমানদার স্ত্রী, আল্লাহ্ পাক উনার স্মরণে স্বামীকে সাহায্য করে থাকে। দুনিয়ার ধনরত্ন অর্জনে পরশমনিতুল্য এমন নেককার স্ত্রীর ফযীলত বর্ণনায় হযরত ওমর ফারুক আলাইহিস সালাস উনার জিজ্ঞাসার জবাবে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা অর্জন কর আল্লাহ্ পাক উনার যিকিরকারী রসনা, শোকরকারী অন্তর এবং ঈমানদার স্ত্রী।এ হাদীস শরীফে ঈমানদার ও নেককার স্ত্রীকে যিকির এবং শোকরের সমমর্যাদা দেয়া হয়েছে।

 কারণ ঈমানদার স্ত্রীর সহায়তাগুণেই আলোচ্য হাদীস শরীফে বর্ণিত পূর্বোক্ত দুটি অতুলনীয় গুণ অর্জনের অনুকূল ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। এমতক্ষেত্রে অভিজাত বংশের দ্বীনদার, ধর্মপালনে অভ্যস্ত, সদাচারিনী, রূপবতী, অল্পেতুষ্ট ইত্যাদি অনিবার্য বৈশিষ্ট্যগুণ সম্পন্না কুমারী পাত্রী নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন অপরিহার্য। পক্ষান্তরে স্বামীর ধর্মবিমুখতা ও অনাচার দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি করে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় জাগতিক প্রশান্তির ব্যত্যয় ঘটে এবং ইবাদত-বন্দেগীর মনোযোগ ও নিবেদন বিনষ্ট হয়ে আল্লাহ্ পাক উনার নৈকট্য হাছিলে অন্তরায় সৃষ্টি হয়। তাই পাত্র নির্বাচনে পাত্রী পক্ষেরও সাবধান হওয়া জরুরী। পাত্র নির্বাচনে তার বংশ, শিষ্টাচার, স্বভাব-চরিত্র, শিক্ষা-দীক্ষা, ধর্মভীরুতা ইত্যাদি  যাচাই করা আবশ্যক। কুফুমান্য করা বিয়ের অন্যতম শর্ত। রূপলাবন্য, বংশ মর্যাদা, আর্থিক সংগতি, ধর্মপরায়ণতা এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে পাত্র ও পাত্রী পক্ষের সমকক্ষতা প্রয়োজন। তবে এ বিষয়গুলোর মধ্যে র্ধমপরায়ণতাকে প্রাধান্য দিতে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন।

        আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত ও মারিফাত হাসিলের সোপানগুলোর (মাকাম) অনুক্রম পর্যায়ক্রমে অতিক্রম করে নির্ধারিত মনজিলে মাকসুদ উনার চূড়ান্ত ধাপে উপনীত হবার উদগ্র বাসনায় কালামুল্লাহ্ শরীফ ও হাদীস শরীফ অনুসরণে মাদারজাদ ওলী, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইবাদত-বন্দেগী ও যিকির-ফিকিরে সহায়তা ও প্রেরণালাভের উদ্দেশ্যে মুবারক বংশের একজন নেককার পাত্রী খুঁজতে থাকেন বিয়ে করার মানসে।

 নিয়ামত ও কামালত-এর পরিপূর্ণতা দানের লক্ষ্যে মর্যাদাবান ওলীগণের নেক নিয়ত আল্লাহ্ পাক অবশ্যই পূরণ করে থাকেন। প্রভাকরদী গ্রামের এই মাদারজাদ ওলী সন্ধান পেয়ে যান আরেকজন মাদারজাদ ওলীর। উনার নিবাস প্রভাকরদীর অদূরে নুরানীগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) জেলার সোনারগাঁও থানাধীন, “বাড়ী মজলিশগ্রামের  একই উর্দ্ধতন পুরুষের মুবারক বংশজাত সাইয়্যিদ পরিবারে। নাম  মুবারক সাইয়্যিদাহ আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম, আল্লাহ পাক উনার নির্ধারিত  মহান ব্যবস্থায় উনাকেই বিয়ে করেন হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি। পরিনয়সূত্রে আবদ্ধ এই দুই মাদারজাদ ওলী পরিপূর্ণ কামালত হাসিলের অভিন্ন প্রয়াসে ছিলেন পরস্পরে পরিপূরক।

 ক্রমান্বয়ে উভয়ের অভিন্ন উর্দ্ধতন মুবারক মহামিলন ঘটেছে আক্বরামুল আউয়ালীন ওয়াল আখেরীন, সাইয়্যিদুল বাশার, শাফিউল মুজনিবীন, হাবীবে আযম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে। (অসমাপ্ত)

আবা-৬৭

0 Comments: