ছবি-ভিডিওতে জীবনের আনন্দ নষ্ট

 

ছবি-ভিডিওতে জীবনের আনন্দ নষ্ট

ছবি-ভিডিওর কারণে জীবনের আনন্দ নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষ করে মানুষের হাতে ক্যামেরা-মোবাইল আসার পর কোন কিছুতে সুখ আর আনন্দ বলে আর কিছু নেই। আগে কোন বিয়ে বাড়িতে গেলে, আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হতো, সবাই কথা বলতো। এখন সেগুলো পুরোটাই শুটিং স্পট। শুধু ছবি-ভিডিও তৈরীর জন্য যেন সব আয়োজন, সুখ-আনন্দ অনুভূতি আদান প্রদানের কোন সুযোগ নেই।

 একটা খাবারের রেস্ট্রুরেন্টে যান, খাবারের স্বাদ পরখ পরে, আগে খাবারে সাথে সেলফি তুলতে হবে। খাবারের সাথে সেলফি তুলতে তুলতে গরম খাবার ঠাণ্ডা হবার উপক্রম। কোথাও বেড়াতে গেলে একই অবস্থা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অনুভব না করে শুধু ছবি আর ভিডিও, এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড। মনের খোরাকের থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খোরাক তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

 আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুষ্ঠান হলে সবাই এক হতো, আনন্দ খুশি চলতো। কিন্তু এখন সব কিছু যেন শুটিং কেন্দ্রীক। ক্যামেরাম্যান আনো, প্রফেশনাল ভিডিও বানাও, সোশাল মিডিয়ায় আপলোড দাও, ভিডিও দেখলে মানুষ কী বলবে, শুধু সেই চিন্তা। সুতরাং সবার আনন্দ খুশি মাটি, ক্যামেরার ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সবাইকে পরিপাটি রাখতে হবে, সেটাই এখন বড়।

 শুধু কি অনুষ্ঠান? মসজিদ আর ওয়াজ মাহফিলও এখন শুটিং স্পট। মসজিদে খতিব সাহেব কিংবা মাহফিলের বক্তার মুখ এখন আর দেখা যায় না, ক্যামেরা আর ক্যামেরাম্যানের সারির কারণে। প্রতিনিয়ত উঠতে থাকে ছবি, ভিডিও। সেই ছবি ভিডিও আবার ইউটিউবে আপলোড করে টাকা ইনকাম করে খতিব বা বক্তারা। প্রাণীর ছবি তোলা দ্বীন ইসলামে হারাম, তো সেই ছবি থেকে যে ইউটিউব ফেসবুকে ইনকাম করা হয়, সেটা কি হালাল হবে?

 পবিত্র হজ্জেও একই অবস্থা। হাজীরা এখন আর হজ্জ করতে যায় না, শুটিং করতে যায়। হাতের মধ্যে একটা স্টিক সমেত ক্যামেরা লাগিয়ে একটু পর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ দেয়। হাজীদের এমন সেলফি, লাইভ উৎপাতে অতিষ্ট হয়ে সৌদি সরকার তাদের ওলামাদের দিয়ে সেলফির বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছে। ফতওয়ায় সৌদির ওলামারা বলছে- হজ্জে ছবি ভিডিও করলে লৌকিকতা প্রদর্শন হয়। সৌদির ওলামাদের এমন ফতওয়ার জবাবে সাধারণ জনগণ ছবি-ভিডিও বন্ধ করেনি, বরং উত্তরে বলেছে, হুজুর ! আপনারা যখন ছবি-ভিডিও করেন, তখন লৌকিকতা হয় না? আমরা করলেই কেন লৌকিকতা বা লোক প্রদর্শন হয়। আর তাছাড়া আপনারা কি আমাদের মনে খবর জানেন, আমরা লৌকিকতা প্রদর্শনের জন্য ছবি তুলছি কি না?

 আসলে সৌদি ওলামাদের উচিত ছিলো, হাদীস শরীফে প্রাণীর ছবিকে হারাম বলে যে সমস্ত হাদীস শরীফ আছে, সেই ভিত্তিকে ছবিকে হারাম বলা। কিন্তু তারা যেহেতু নিজেরা ছবি তুলে তাই সেদিকে তারা যায়নি, অন্যদিক দিয়ে ফতওয়া দিয়ে হাজীদের সেলফি বন্ধ করতে চেয়েছিলো, কিন্তু হাজীরা সেটা গ্রহণই করেনি। বরং আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আসলে বন্দুক যদি টার্গেট থেকে এক চুল সরে যায়, তবে গুলি লক্ষ্যস্থল থেকে শত হাত দূরে সরে যাবে, এটাই নিয়ম। যে আলেমরা সাধারণ মানুষের নেতৃত্ব দিবে। সেই কথিত আলেমরা যখন অহরহ হারাম ছবি, ভিডিও সেলফি তোলা শুরু করেছে, তখন সাধারণ মানুষ তো ছবি-ভিডিওর সাগরে ভাসবে, এটাই স্বাভাবিক।

 আবার, ছবি-ভিডিও মানুষকে মানসিক প্রতিবন্ধী বানিয়ে ফেলেছে। নিজের প্রাইভেট জীবনের ছবি ভিডিও তুলে সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করতে তারা আর লজ্জা পাচ্ছে না। মানুষ এতটা নিলর্জ্জ হয়ে গেছে যে, নিজের বেডরুমে ক্যামেরা বসিয়ে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে টাকা কামাই করছে। নাউযুবিল্লাহ।

 আসলে ছবি-ভিডিও-সেলফির উৎপাতে এখন যেকোন পাবলিক প্লেসে অতিষ্ট লাগে। কোন যায়গায় গিয়ে শান্তি পাওয়া যায় না। এসব সেলফি খোরদের নিজেদের প্রাইভেসী তো নাই, অন্যদেরও প্রাইভেসী নষ্ট করে। বাংলাদেশে যে কোন প্রাইভেট প্লেসে ক্যামেরায় ছবি তোলা বা ভিডিও করা বা সেলফি তোলা নিষিদ্ধ করা উচিত। কারণ এসব প্রতিবন্ধীদের উৎপাতে অন্যদের প্রাইভেসী নষ্ট হয়। আপনি কোথাও বেড়াতে গেছেন, আপনার ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছে, কিংবা সে নিজে ভিডিও করছে, সাথে পাশে থাকা আপনাকেও জুড়ে দিচ্ছে। আপনি জানেনও না, আপনার ছবি মিডিয়ায় প্রচার হয়ে গেছে। বিষয়টি কিন্তু খুবই বিপদজনক। বিশেষ করে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার যুগে আপনার ছবি বা ভিডিও যে কেউ কোন অপরাধজনিত কাজে ব্যবহৃত করবে না, সেটা কিন্তু আপনি নিশ্চিত না। তাই যে কোন পাবলিক প্লেসে ক্যামেরা বা ভিডিও নিষিদ্ধ করা উচিত। কারণ এর মাধ্যমে মানুষের প্রাইভেসী হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে ব্যাপকভাবে।

 

0 Comments: