সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার পথে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে বলা হয়, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দিকে কিছুটা সামনে অগ্রসর হলে হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মতো হযরত বুরাইদা আসলামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ৭০ জন অশ্বারোহীসহ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্ধানে বের হন, যাতে করে কুরাইশ কাফিরদের নিকট থেকে একশত উট পুরস্কার পাওয়া যায়। যখন হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটবর্তী হলেন তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কে? হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি বুরাইদা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললেন, “হে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম আমার কাজ শীতল ও সঠিক হয়েছে।”
এরপর জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কোন গোত্রের? হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি আসলাম গোত্রের। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার দিকে তাকিয়ে বললেন, سلمنا অর্থাৎ আমরা নিরাপদ।” এরপর জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি আসলাম গোত্রের কোন শাখার? হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, বনী সাহমের। তিনি বললেন, خرج سهمك অর্থাৎ ‘আপনার অংশ বেরিয়ে এসেছে’ অর্থাৎ পবিত্র ইসলাম উনার মধ্যে আপনার অংশ রয়েছে।
হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আপনি কে? তিনি বললেন,
انا حضرت محمد بن عبد الله رسول الله صلى الله عليه و سلم
“আমি হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন,
اشهد ان لا اله الا الله وان محمدا عبده و رسوله صلى الله عليه و سلم
অর্থ: “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পুরনূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণ করলেন এবং উনার সঙ্গী ৭০ জন ব্যক্তি উনারা সবাই মুসলমান হলেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশকালে আপনার সামনে একটি পতাকা রাখতে ইচ্ছা করছি। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং পাগড়ী মুবারক খুললেন এবং বর্শার মাথায় বেঁধে হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দিলেন। যে সময় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিলেন তখন হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পতাকা মুবারক হাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে ছিলেন। (দালাইল, আল ইস্তিয়াব, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১ম খণ্ড ৩৬৪ ও ৩৬৫ পৃষ্ঠা)
পবিত্র হিজরত মুবারক ও হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল মুহব্বত ও খিদমত মুবারক
আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার বুযুর্গী ও ফযীলত মুবারক বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি একাধিক স্থানে উনার পবিত্র ছানা-ছিফত মুবারক করেছেন। উনার প্রশংসায় অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের পরে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী তিনিই হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট মুবারক করার লক্ষ্যে উনার মাল ও জান সব মহান আল্লাহ পাক উনার পথে ব্যয় করেছেন। অর্থাৎ উনি মাল ও জানের চেয়েও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অধিক মুহব্বত করতেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিনে কামিল হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি মুহব্বত করবে।”
অপর এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তার মাল ও জান হতেও যতক্ষণ পর্যন্ত বেশি মুহব্বত না করবে।”
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র হিজরত মুবারক উনার কথা জানালেন, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবচেয়ে প্রিয় ছাহাবী খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে বললেন, “হে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম! আমাকে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফ যেতে হবে। আর সেই পবিত্র হিজরত বরকতময় মুবারকের সময় আপনিই হবেন আমার একমাত্র সঙ্গী। কাজেই আপনি বরকতময় হিজরতের জন্য প্রস্তুত থাকুন। পবিত্র হিজরত মুবারক করার নির্দেশ মুবারক এলে আমি আপনাকে জানাবো।
এদিকে এ ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র হিজরত মুবারক করার নির্দেশ মুবারক দিলেন। পবিত্র হিজরত মুবারক উনার পথে বিশ্রাম নেয়ার উদ্দেশ্যে গারে ছুর বা ছাওর পর্বতের গুহায় প্রবেশ করলেন। প্রবেশ করে দেখলেন সেখানে অনেক ছিদ্র রয়েছে। সে ছিদ্রতে বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছু থাকতে পারে এ আশঙ্কায় হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নিজ পাগড়ী মুবারক ও চাদর মুবারক টুকরো টুকরো করে ছিদ্রের মুখগুলো বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু একটি ছিদ্র বন্ধ করার মতো কোনো কাপড় অবশিষ্ট রইলো না। তাই সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নিজ পা মুবারক উনার গোড়ালি মুবারক দ্বারা উক্ত ছিদ্রের মুখে চাপ দিয়ে রাখলেন।
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার উক্ত জানু মুবারক উনার উপর মাথা মুবারক রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন।
উল্লিখিত ছিদ্রের ভিতর অবস্থান করছিল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার যুগের একটি সাপ। সাপটি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক যিয়ারত লাভ করার উদ্দেশ্যই এখানে অবস্থান করছিল। সাপটি শত চেষ্টা করেও বের হতে না পেরে অপারগ হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পা মুবারকে আঘাত করলো। আঘাতের সাথে সাথে বিষের ক্রিয়ায় এবং বিষের যন্ত্রণায় উনার চোখ মুবারক দিয়ে দর দর করে পানি মুবারক পড়তে লাগলো। তবুও তিনি নিজ পা মুবারক একটুও নড়াচড়া করলেন না যেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘুম মুবারক উনার কোনো ব্যাঘাত না হয়। হঠাৎ করে উনার চোখ মুবারক উনার এক ফোঁটা পানি মুবারক আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র চেহারা মুবারক উনার উপর পড়লো। সাথে সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘুম মুবারক ভেঙে গেলো। দেখলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বিষের যন্ত্রণায় কাঁদছেন।
এ অবস্থা দেখে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ মুখ মুবারক থেকে একটু নূরুল বারাকাত মুবারক (থু থু) মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম! আপনার এ অবস্থা হওয়ার সাথে সাথে কেন আমাকে ঘুম মুবারক থেকে জাগ্রত করলেন না?” জবাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার ঘুম মুবারক উনার ব্যাঘাত ঘটবে এবং আপনার সাথে বেয়াদবী হবে ভেবে আমি কোনো নড়াচড়া করিনি এবং আপনাকে ঘুম মুবারক থেকে জাগ্রত করিনি। সুবহানাল্লাহ!
ফিকিরের বিষয় যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কত গাঢ় মুহব্বত ছিলো। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এত গাঢ় মুহব্বত উনার পরিপ্রেক্ষিতে উনার সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “যেকোনো ব্যক্তি আমাদের প্রতি যে কোনো প্রকারের ইহসান করেছে আমরা তার প্রতিদান দিয়েছি, কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার ইহসান ব্যতীত। অর্থাৎ উনারটাও দেয়া হয়েছে- তবে তিনি যেহেতু অনেক বেশি খিদমত মুবারক করেছেন তাই- স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিও ক্বিয়ামতের দিন উনাকে বিশেষ প্রতিদান প্রদান করবেন। আর কারো ধন-সম্পদ আমাকে ততখানি উপকৃত করেনি যতখানি উপকৃত করেছে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ধন-সম্পদ। আর আমি যদি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকেই বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। জেনে রেখ! নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বন্ধু।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)
সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার সংক্ষিপ্ত সঠিক ইতিহাস
‘হিজরত’ শব্দটি হিজরান অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সাধারণভাবে দেশত্যাগ করাকে ‘হিজরত’ বলা হয়। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার পরিভাষায় হিজরত বলা হয়, ফিতনা-ফাসাদের আশঙ্কায় অথবা সম্মানিত দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশত্যাগ করে অন্য কোনো দেশে গমন করা। মূলত, ‘সম্মানিত দ্বীন উনার কারণে কোনো দেশত্যাগ করাও হিজরতের অন্তর্ভুক্ত।’
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দুশমন কাফির-মুশরিকরা গোপনে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে, আগামীকাল ভোরবেলা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পবিত্র হুজরা শরীফ থেকে যখন বাইরে তাশরীফ মুবারক রাখবেন তখন হঠাৎ হামলা করে উনাকে শহীদ করা হবে। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! কাফির-মুশরিকদের এসব গোপন সিদ্ধান্তের কথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানতে পারেন। কারণ তিনি তো মুত্তালা আলাল গইব। অতঃপর সেই প্রতিক্ষিত সময়টি এলো যখন তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফ পবিত্র হিজরত করার বিষয়ে পবিত্র ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে নির্দেশ মুবারক পেলেন। এদিকে পবিত্র হিজরত উনার ছয় মাস পূর্ব থেকেই তিনি আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে জানিয়ে রাখেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকেও হিজরত করতে হবে। তাই তিনি পূর্ব থেকেই হিজরত করার জন্যে দুটি উষ্ট্রী এবং কিছু পাথেয় তৈরি করে রাখেন। সুবহানাল্লাহ!
নির্দিষ্ট রাতে কাফিররা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফ ঘেরাও করলো। রাত যখন গভীর হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হুজরা শরীফ থেকে বের হলেন। সে সময় তিনি ‘পবিত্র সূরা ইয়াসীন শরীফ’ উনার একটি পবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করছিলেন। তিনি এক মুঠো মাটি হাতে নিয়ে ‘শাহাতিল ওয়াজুহ’ (মুখম-ল আচ্ছন্ন হয়ে যাক) এটা পাঠ করে কাফির-মুশরিকদের দিকে ছুঁড়ে মারলেন এবং তাদের ব্যুহ ভেদ করে নির্বিঘেœ বেরিয়ে গেলেন। সে সময় মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক কুদরতে অবরোধকারীরা যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলো; ফলে তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেরিয়ে যেতে দেখতে পেলো না। প্রথমে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার গৃহে গমন করলেন এবং সেখান থেকে উনাকে নিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বাইরে গিয়ে পবিত্র ছাওর পর্বত গুহায় তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন।
ভোরবেলা কাফির-মুশরিকরা জানতে পেলো- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ ছেড়ে চলে গেছেন। তারা উনার সন্ধানে চারদিকে ছুটাছুটি শুরু করলো। তারা খুঁজতে খুঁজতে ‘পবিত্র ছাওর’ পর্বতের কাছে গেলো। তাদের পদধ্বনি শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কাফির-মুশরিকরা যদি আমাদেরকে দেখে ফেলে?’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন- “চিন্তার কোনো কারণ নেই। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।” মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক কুদরতে গুহামুখে এমন কতকগুলো নিদর্শন মুবারক ফুটে উঠলো যে, তা দেখে কাফির-মুশরিকরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়লো। তাদের মনে ধারণা জন্মালো যে, এ গুহার ভেতরে কেউ প্রবেশ করেননি। তাই তারা ফিরে গেলো। সুবহানাল্লাহ! তিন দিন তিন রাত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনারা সেখানে অবস্থান মুবারক করেন। চতুর্থ দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছওর পর্বত গুহা থেকে বের হয়ে এক রাত এক দিন পথ চললেন। পরদিন দুপুর বেলা রোদের তেজ প্রখর হয়ে উঠলে বিশ্রামের জন্যে একটি বৃহদাকার পাথরের ছায়ায় উনারা কিছুক্ষণ অবস্থান মুবারক করলেন। অদূরেই একটি গোয়ালা ছিল; তার বকরী থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুধ পান করলেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর সেখান থেকে তিনি আবার রওয়ানা হলেন। তিনি সামনে নূরুদ দারাজাত পা মুবারক বাড়াতেই সোরাকা বিন জাশিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হঠাৎ উনাকে দেখে ফেললেন (তিনি তখনও ঈমান মুবারক প্রকাশ করেননি)। তিনি কুরাঈশদের পক্ষ থেকে পুরস্কারের লোভে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্ধানে বেরিয়েছিলেন। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পেয়েই ঘোড়া ছুটিয়ে দিলেন। কিন্তু ঘোড়াটি হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল। তিনি আবার নিজেকে সামলে নিলেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর হামলা করার জন্যে তৈরি হলেন। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! কিন্তু এবারও সামনে এগুতেই উনার ঘোড়া হাঁটু পর্যন্ত মাটিতে বসে গেল। এবার তিনি শঙ্কিত হয়ে উঠলেন এবং বুঝতে পারলেন। ব্যাপারটা মোটেই সুবিধাজনক নয়। উনার পক্ষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর হামলা করা কিছুতেই সম্ভবপর নয়। তিনি অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়লেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আত্মসমর্পণ করে ক্ষমা ভিক্ষা চাইলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ক্ষমা করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমন বার্তা পূর্বেই পবিত্র মদীনা শরীফ পৌঁছেছিল। তাই গোটা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মুবারক শুভাগমনের জন্যে প্রতীক্ষমান ছিলেন। ছোট-বড় সবাই প্রতিদিন সকালে শহরের বাইরে গিয়ে জমায়েত হতেন এবং দুপুর পর্যন্ত ইন্তেজার করে ফিরে আসতেন। অবশেষে একদিন উনাদের সেই প্রতীক্ষিত বরকতময় মুহূর্তটি এসেই পড়লো। দূর থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক নেয়ার আলামত দেখে গোটা শহরটি তাকবীর ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠলো। প্রত্যেক প্রতীক্ষাকারী হৃদয় উজাড় করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বাগত জানালেন এই বলে যে, “ত্বলায়াল বাদরু আলাইনা, মিন ছানিয়াতিল বিদায়ি। ওয়াজাবাত শুকরু আলাইনা, মাদায়া লিল্লাহি দাঈ।” সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করার সৌভাগ্য কে লাভ করবেন? এর সমাধান মোটেই সহজসাধ্য ছিল না। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুবারক সমাধান দিয়ে বললেন যে, আমার সম্মানিত উষ্ট্রী যে সৌভাগ্যবান ব্যক্তির গৃহের সামনে দাঁড়াবে, খিদমত মুবারক করার সৌভাগ্য তিনিই লাভ করবেন।’ ঘটনাক্রমে এ সৌভাগ্যটুকু লাভ করলেন হযরত আবু আইয়ুব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সুবহানাল্লাহ! বর্তমানে যেখানে মসজিদে নববী শরীফ অবস্থিত, উনার নিকটেই ছিল উনার মুবারক গৃহ। গৃহ মুবারকটি ছিল দ্বিতল বিশিষ্ট। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশ্রাম মুবারকের জন্যে তিনি উপরের তলাটি পেশ করেন। কিন্তু যিয়ারতপ্রার্থীদের আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিচের তলায় থাকা পছন্দ করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায় সাত মাস এখানে মুবারক অবস্থান করেন। সুবহানাল্লাহ! এটাই হচ্ছেন- পবিত্র হিজরত মুবারক উনার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হিজরত ও সম্মানিত তাবুক জিহাদকে কথিত লংমার্চের সাথে তুলনা করে উলামায়ে সূ’রা কুফরী করেছে
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিটি আমল মুবারকই হচ্ছে পবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قل .....ان اتبع الا ما يوحى الى
অর্থ: বলুন আমি তো কেবল ওই ওহী মুবারক উনার অনুসরণ করি, যা আমার প্রতি অবতীর্ণ হয়। (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫০)
কাজেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হিজরত মুবারক এবং তাবুক জিহাদ মহান আল্লাহ পাক উনার ওহী মুবারক দ্বারা ফায়ছালাকৃত ও সংঘটিত হয়েছে। যেমন- হিজরত মুবারক সম্পর্কে পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ ৩০নং পবিত্র আয়াতে কারীমা উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّـهُ وَاللَّـهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
অর্থ: “স্মরণ করুন, (আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) কাফিরেরা আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আপনাকে বন্দি করার জন্য, শহীদ করার জন্য অথবা নির্বাসিত করার জন্য এবং তারা (বিভিন্ন) ষড়যন্ত্র করে। মহান আল্লাহ পাক তিনিও হিকমত (কৌশল) করেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি শ্রেষ্ঠ হিকমতওয়ালা।”
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কাফির মুশরিকদের ষড়যন্ত্রের সমুদয় ঘটনা অবহিত করেন এবং উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে হিজরত করার অনুমতি প্রদান করেন এবং সেইসাথে হিজরতকালীন উনাকে এই দু’আ পাঠ করতে বলা হয়-
وقل رب ادخلنى مدخل صدق واخرجنى مخرج صدق واجعل لى من لدنك سلطانا نصيرا
অর্থ: “বলুন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে উত্তমরূপে পৌঁছিয়ে দিন এবং আমাকে উত্তমরূপে নিয়ে যান এবং আমার জন্য আপনার তরফ থেকে সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বউত্তম বিজয় ও সাহায্য দান করুন।” (পবিত্র সূরা বণী ইসরাইল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮০)
একইভাবে তাবুক জিহাদের আদেশ প্রদান সম্পর্কে পবিত্র সূরা তওবা শরীফ উনার ৭৩নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
يا ايها النبى جاهد الكفار والـمنافقين
অর্থ: “আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কাফির ও মুনাফিকদের বিরূদ্ধে জিহাদ করুন।”
কাজেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হিজরত মুবারক এবং তাবুক জিহাদ ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ই ওহী মুবারক অনুযায়ী সংঘটিত হয়েছিল।
কিন্তু লংমার্চের বিষয়টি কি ওহী মুবারক দ্বারা ফায়ছালাকৃত? কস্মিকালেও নয়। তাহলে তা কী করে ওহী মুবারক উনার ফায়ছালাকৃত বিষয়ের সাথে তুলনা দেয়া যেতে পারে। কাজেই, লংমার্চকে ওহী মুবারক দ্বারা ফায়ছালাকৃত কোনো বিষয়ের সাথে তুলনা দেয়ার অর্থ হচ্ছে কুফরী করা। কোনো মুসলমান কুফরী করলে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে কাফির ও মুরতাদে পরিণত হয়।
আর শরীয়তে মুরতাদের শাস্তি বা ফায়সালা হলো, তার স্ত্রী তালাক হবে যদি বিয়ে করে থাকে এবং এক্ষেত্রে পুনরায় তওবা না করে, বিয়ে না দোহরানো ব্যতীত তার স্ত্রীর সাথে বসবাস করা বৈধ হবে না। আর এ অবৈধ অবস্থায় সন্তান হলে সে সন্তানও অবৈধ হবে। হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে যদি হজ্জ করে থাকে, সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে, তার ওয়ারিছস্বত্ব বাতিল হবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য এবং যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ-। কেননা হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, তিন কারণে মৃত্যুদ- দেয়া জায়িয। যথা- ১. ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। ২. ওই ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিণী, যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। ৩. যে অন্যায়ভাবে কাউকে ক্বতল করে, তাকে।
আর মুরতাদ মারা যাবার পর যারা জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণ উনাদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবেনা। বরং তাকে মৃত শুকরও কুকুরের ন্যায় গর্তের মধ্যে পূঁতে রাখতে হবে।
মূলত, লংমার্চ হচ্ছে কাফিরদের দ্বারা প্রবর্তিত বা উদ্ভাবিত পদ্ধতি বা বিষয়ের নাম। যা আদৌ শরীয়তসম্মত নয়।
যেমন লংমার্চ সম্পর্কে ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, ১৯৩০-৩৪ সালের মধ্যবর্তী সময় তৎকালীন চীনের প্রেসিডেন্ট চিয়াং কাইশেক কম্যুনিস্টদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালালে পালানোর কৌশল হিসেবে কম্যুনিস্টরা চীনের দক্ষিণ-পূর্ব কিয়াংসি থেকে পশ্চিম দিক দিয়ে ঘুরে প্রায় ৬-৮ হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে চীনের উত্তর-পশ্চিম সেনসি প্রদেশে পৌঁছে। পথে তাদের ১৮টি পাহাড়ের সারি ও ২৪টি নদী অতিক্রম করতে হয়। ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী কাট্টা নাস্তিক মাওসেতুংয়ের নেতৃত্বে কম্যুনিস্টদের এই দীর্ঘ বিপদসঙ্কুল পথ অতিক্রমের কাহিনীই ইতিহাসে লংমার্চ নামে পরিচিত।
কাজেই, লংমার্চ সর্বপ্রথম ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদের ধারক ও বাহক কট্টর নাস্তিক, কাফির মাওসেতুং কর্তৃক উদ্ভাবিত।
সুতরাং কোনো মুসলমানের পক্ষে কাফির, মুশরিক, মুনাফিকদের কোনো নিয়ম-নীতি, তর্য-তরীক্বা গ্রহণ বা অনুসরণ করা জায়িয নেই।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ولا تطع الكافرين والـمنافقين
অর্থ: “কাফির ও মুনাফিকদের আনুগত্য বা অনুসরণ করো না।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৮)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
পক্ষান্তরে হিজরত ও জিহাদ এ বিষয় দুটি হচ্ছে পবিত্র ওহী মুবারক উনার দ্বারা ফায়ছালাকৃত, যা পবিত্র দ্বীন ইসলাম বা পবিত্র শরীয়ত উনার অন্তর্ভুক্ত বিষয়।
হিজরতের অর্থ: হিজরত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- ত্যাগ করা, পরিবর্তন করা, বর্জন করা ইত্যাদি। হিজরতের পারিভাষিক অর্থ হলো- ফিতনার আশঙ্কায় এবং ঈমান হিফাজত কিংবা দ্বীন পালনের নিমিত্তে দারুল কুফর হতে দারুল ইসলাম- এ গমন করাকে হিজরত বলে। আরেক বর্ণনা মতে, কাফির-মুশরিকদের অত্যাচারে জীবন নাশ হওয়ার আশঙ্কা থাকলে কিংবা পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনে বাধাগ্রস্ত হলে তখন এক ভূমি থেকে অন্য ভূমির প্রতি স্থানান্তরিত হওয়াকে হিজরত বলে।
হিজরতের হুকুম: কোনো জনপদের মুসলমান অধিবাসী যদি দ্বীন পালনে বাধাগ্রস্ত হন, ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার এবং অনৈসলামিক কার্যকলাপ উনাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়, তখন ওই মুসলমান অধিবাসীদের জন্য ওই জনপদ থেকে অনুকূল পরিবেশে হিজরত করা ফরয।
এ মর্মে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قالوا الـم تكن ارض الله واسعة فتهاجروا فيها
অর্থ: “হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা (হিসাব গ্রহণকালে) বলবেন, মহান আল্লাহ পাক উনার যমীন কি প্রশস্ত ছিল না? তোমাদের উচিত ছিল স্বদেশ পরিত্যাগ করে (নিরাপদ স্থানে) চলে যাওয়া।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৭)
অর্থাৎ হিজরত করা পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। তবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত হিজরতের দ্বার উন্মুক্ত থাকবে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে-
لا تنقطع الـهجرة حتى تنقطع التوبة
অর্থ: “তওবার অবকাশ থাকা পর্যন্ত হিজরতের ধারাও বলবৎ থাকবে।”
জিহাদের অর্থ: জিহাদ শব্দের আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ হলো- চেষ্টা করা, কষ্ট স্বীকার করা, শক্তি ব্যয় করা, জিহাদ করা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ হলো- মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম মুবারক বুলন্দ বা সমুন্নত করার লক্ষ্যে তথা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বোল-বালা, প্রচার-প্রসারের নিমিত্তে কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, বাহন, মাল, জান সর্বশক্তি প্রয়োগ করে প্রকাশ্যে লড়াই করাকে জিহাদ বলে।
অতএব, পবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা ফায়ছালাকৃত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক বিষয় হিজরত ও তাবুক জিহাদের সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মনোনীত হযরত নবী-রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরম বিদ্বেষী কট্টর নাস্তিক, কাফির মাওসেতুং-এর উদ্ভাবিত লংমার্চকে তুলনা করে উলামায়ে সূ’রা ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদে পরিণত হয়েছে। তাদের উচিত অতিসত্বর উক্ত কুফরী বক্তব্য ও আমল পরিহার করতঃ প্রকাশ্যে খালিছ তওবা করা।
মহাপবিত্র ১লা রবীউল আউওয়াল শরীফ একটি ঐতিহাসিক দিবস
সম্মানিত ইসলাম উনার ইতিহাস ও বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ আছে ইসলামের ব্যাপক আলোচিত হিজরত হলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত।
হিজরতের পটভূমি তৈরি হয়েছিল ঐতিহাসিক আকাবা নামক স্থানের শপথের মাধ্যমে। সম্মানিত নবুওওয়াত উনার ১১তম বছর মদীনা শরীফের ছয়জন ঈমানদার আর ১২তম বছর ১২ জন পবিত্র আকাবা নামক স্থানে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কাজে সাহায্য করার জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে শপথ নেন। আর ১৩তম বছরে ৭৩ জন পুরুষ ও দুজন নারী উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাত মুবারকে বাইয়াত গ্রহণ করেন। উনারা পবিত্র মক্কা শরীফের মুসলমানদের আশ্রয় দেয়ার অঙ্গীকার করেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের নিয়ে পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস থেকে পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত করার অনুমতি দিলেন। পবিত্র মদীনা শরীফে সর্বপ্রথম হিজরত করেন হযরত মুসআব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহ আনহু তিনি।
আফদ্বালুন নাস, বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। যাতে করে তিনি উনার সঙ্গে পবিত্র হিজরত মুবারক করতে পারেন। উক্ত হিজরত মুবারক উনার ছয় মাস পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুল আসইয়াদ, সাইয়্যিদুশ শুহুর, শাহরুল আ’যম পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসের ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবারে) হিজরত মুবারক করেন।
তিনি বাইয়াতে আকাবার তিন মাস পর পহেলা রবীউল আউওয়াল শরীফ আবার রওনা দেন। পবিত্র ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফে তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ তাশরিফ মুবারক নেন।
সুতরাং উক্ত বরকতময় পবিত্র দিবস যথাযথভাবে পালন করে সমস্ত নিয়ামত বরকত সাকীনা মাগফিরাত নাজাত লাভ করার মাধ্যম দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হাক্বীকী সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করা সকলের জন্যই আবশ্যক।
হিজরতের সময় ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার আত্মত্যাগ মুবারক
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমরা যতদূর জানতে পেরেছি, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে মদীনা শরীফ উনার উদ্দেশ্যে বের হন, তখন এ সম্পর্কে হযরত সাইয়্যিদুনা হযরত আলী ইবনে আবূ ত্বলিব আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম এবং উনার পরিবারের লোকজন ছাড়া আর কেউ তা জানতেন না। আর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহি সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নায়িব বা স্থলাভিষিক্ত করে যান এবং উনার নিকট লোকজনের যেসব আমানত ছিলো তা ফেরত দেয়ার নির্দেশ মুবারক দেন। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে কারো নিকট কোনো দুর্মূল্য ও পছন্দনীয় বস্তু থাকলে তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আমানত রাখা হতো। কারণ তারা উনার সত্যবাদিতা ও আমানতদারী সম্পর্কে অবগত ছিলো।” সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, কাফির-মুশরিকরা যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করে দেখতে পেলো, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূত-পবিত্র কম্বল মুবারক গায়ে দিয়ে একজন শুয়ে রয়েছেন। এদিকে তারা কম্বল মুবারক ধরে টানাটানি করতে লাগলো। আর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি কম্বল মুবারক খুবই শক্ত করে ধরে রেখেছেন যাতে করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারেন। সুবহানাল্লাহ! কাফির-মুশরিকরা কম্বল মুবারক টানাটানি করতে করতে সকাল হয়ে গেলো। অনেকক্ষণ পর তারা কম্বল মুবারক টেনে নিয়ে দেখতে পেলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন, কম্বল মুবারক উনার ভিতরে যিনি শুয়ে ছিলেন তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! কাট্টা কাফির আবূ জাহিল সে উনার গাল মুবারক-এ একটা আঘাত করে পবিত্র হুজরা শরীফ থেকে বের হলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খোঁজার জন্য। নাঊযুবিল্লাহ!
পবিত্র হিজরত উনার সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিছনে হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অগ্রসর
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন ছাওর গুহা মুবারক থেকে রওয়ানা দিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পথ ধরে চলতে লাগলেন। এদিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্ধান না পেয়ে মক্কার কাফির-মুশরিক নেতারা ঘোষণা করলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনাকে অর্থাৎ উনাদের দু’জন বা একজনকে যে এনে দিতে পারবে তাকে একশ উট পুরস্কৃত করা হবে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! এই ঘোষণা শুনে উনাদের ক্বদম মুবারক উনার চিহ্ন মুবারক অনুসন্ধানে লোকজন বেরিয়ে পড়লো। কিন্তু তারা তা মিলাতে সক্ষম হলো না বরং বিষয়টি তাদের নিকট সন্দেহজনক হয়ে উঠলো।
হযরত শিহাব যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। হযরত সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জু’শাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, কুরাইশ কাফির-মুশরিকদের দূত এসে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ বা বন্দি করার পুরস্কারের ঘোষণা দেয়। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! হযরত সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জু’শাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন আমার স্বগোত্র বনী মুদলিজের একটি মাজলিসে আমি উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় তাদের এক ব্যক্তি আমাদের দিকে এগিয়ে এসে সম্মুখে দাঁড়ায়। আমরা তখন উপবিষ্ট ছিলাম। লোকটি বললো, হে হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আমি সবেমাত্র উপকূলীয় পথে কিছু লোক দেখে এসেছি, আমার ধারণা উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার সঙ্গী হবেন। হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তখনো মুসলমান হননি) তিনি বললেন, আমি বুঝতে পারলাম যে, উনারা আসলেই উনারা। কিন্তু আমি তাদেরকে বললাম- না, উনারা নন। তুমি হয়তো অমুককে দেখেছ যে, আমাদের সম্মুখ দিয়ে একটু আগে চলে গেছে। এরপর আমি মজলিসে কিছু সময় অবস্থান করি, তারপর উঠে দাঁড়াই এবং গৃহে প্রবেশ করি। আমি আমার ঘোড়া বের করার জন্য আমার বাঁদীকে নির্দেশ দেই। আমি তাকে টিলার পেছনে ঘোড়া নিয়ে আমার অপেক্ষায় থাকতে বলি এবং আমি বর্শা নিয়ে ঘরের পিছন দিক দিয়ে বেরিয়ে পড়ি। আমার ঘোড়ার নিকট আসি এবং তার উপর সাওয়ার হই। তাকে ছুটাই আর সে ছুটে যায়। আমাকে নিয়ে ছুটতে ছুটতে ঘোড়াটি হোঁচট খায় এবং আমি তার পিঠ থেকে নিচে পড়ে যাই। আমি উঠে দাঁড়াই এবং তূনের প্রতি হাত বাড়াই এবং তা থেকে ভাগ্য গণনার তীর বের করে তার সাহায্যে ভাগ্য পরীক্ষা করি। উনাদের ক্ষতি করবো কিনা তা জানার চেষ্টা করি। যা আমি পছন্দ করি না তাই বের হলো। ভাগ্য পরীক্ষা তীরের বিরোধিতা করে আমি ঘোড়ায় সাওয়ার হই, ঘোড়া আমাকে কাছাকাছি নিয়ে যায়। এমনকি আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জবান মুবারক থেকে পবিত্র তিলাওয়াত মুবারক উনার আওয়াজ মুবারক শুনতে পাই। কোনো দিকে উনার লক্ষ্য নেই। আর সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি তখন আমার এদিকে তাকাচ্ছিলেন। আমার ঘোড়ার দু’পা মাটিতে আটকে পড়ে হাঁটু পর্যন্ত দেবে যায়। আমি ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যাই। আমি উঠে দাঁড়াই, ঘোড়াকে শাসাই। সেও উঠে কিন্তু সামনের পা দুটি মাটি থেকে বের করতে পারলো না। সে যখন সোজা হয়ে দাঁড়ালো, তখন তার সামনের দু’পায়ের নিচ থেকে ধুলা উড়ে আচ্ছন্ন করে ফেললো। আবার আমি তীর দ্বারা ভাগ্য পরীক্ষা করলাম। এবারো তাই বের হলো যা আমার অপছন্দ। হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি তা দেখেই আঁচ করতে পারলাম যে, উনাকে আমার কবল থেকে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে- এটা একান্তই সত্য। উনারা দাঁড়ালেন আমি ঘোড়ায় সাওয়ার হয়ে উনাদের নিকট পৌঁছি। মাটিতে আটকা পড়ে আমার যে দশা হয় তাতে মনে এমন ভাবের উদয় হয় অবিলম্বে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বীন ইসলাম জয়যুক্ত হবে। সুবহানাল্লাহ! তখন আমি উনাকে বললাম- আপনার জাতি আপনাকে পাকড়াও করার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। উনাদেরকে নিয়ে লোকেরা যা করতে চায়, সে সম্পর্কে আমি উনাদেরকে অবহিত করলাম এবং আমি উনাদেরকে পথের সম্বল আর সামগ্রী দানের প্রস্তাব পেশ করলাম। উনারা আমাকে কোনো জবাব দিলেন না। কোনো কথা আমার নিকট জিজ্ঞাসাও করলেন না। কেবল এটুকুই বললেন যে, আমাদের বিষয়টি গোপন রাখবে। আমাকে নিরাপত্তা পত্র লিখে দেয়ার জন্য আমি আবেদন জানালে তিনি হযরত আমির ইবনে ফুহায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেন। তিনি আমাকে চামড়ায় নিরাপত্তা পত্র লিখে দেন। এরপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মুখে অগ্রসর হন।
আরো বর্ণিত রয়েছে, “হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন ফিরে আসেন (এ অনুসন্ধানী অভিযান থেকে) তখন সন্ধানকারী দলের কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে বলতেন, এদিকে এ পর্যন্ত থেমে যাও। অর্থাৎ এদিকে গিয়ে লাভ হবে না, কেউ নেই। যখন প্রকাশ পেলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিশ্চিত পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পৌঁছেছেন। তখন তিনি লোকদের নিকট সেসব ঘটনা প্রকাশ করতে শুরু করলেন যা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন এবং উনার মাধ্যমে যেসব ঘটনা মুবারক ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে কুরাইশ কাফির সরদাররা উনার পক্ষ থেকে অনিষ্টের আশঙ্কা করতে থাকে। তারা এ আশঙ্কা করে যে, এটা তাদের অনেকের ইসলাম গ্রহণের কারণ হয়ে যেতে পারে। আর হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন মুদলিজ গোত্রের সরদার। তখন অভিশপ্ত আবূ জাহল বনূ মুদলিজ গোত্রের নিকট নিম্নোক্ত কবিতাটি লিখে পাঠায়।
بنى مدلج انى اخاف سفيهكم- سراقة مستغو لنصر حضرت محمد صلى الله عليه وسلم عليكم به الا يفرق جمعكم- فيصبح شتى بعد عزو سودد
অর্থ: “বনী মুদলিজ গোত্রের লোকজন! তোমাদের নির্বোধ হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে আমার ভয় হয়, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাহায্য বা উনার খিদমত করে তিনি তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করবেন। নাঊযুবিল্লাহ! তোমাদের উচিত উনাকে প্রতিহত করা, যাতে করে তিনি কোনো ফাটল ধরাতে না পারেন তোমাদের ঐক্যে। ফলে মর্যাদা আর কর্তৃত্বের পর তোমরা হয়ে পড়বে শত বিভক্ত।”
কাট্টা কাফির আবু জাহিলের জবাবে হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিচের কবিতাটি লিখে পাঠান।
ابا حكم و الله لوكنت شاهدا- لامر جوادى اذ تسوخ قوائمه-
হে আবুল হাকাম (আবূ জাহিল)! তুমি যদি দেখতে আমার ঘোড়ার পা যখন দেবে যায় মাটিতে
عجبت و لم تشكك بان حضرت محمدا صلى الله عليه وسلم - رسول و برهان فمن ذا يقاو مه-
তবে তুমি অবাক হতে। সন্দেহ করতে না যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সুস্পষ্ট প্রমাণ- কে আছে উনার মুকাবিলা করতে পারে?
عليك فكف القوم عنه فاننى اخال لنا يوما ستبدو معالمه
তোমাদের কর্তব্য হলো- লোকদেরকে উনার দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া। আমার আকাঙ্খা একদিন উনার পবিত্র দ্বীনের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ পাবে।
بامر تود النصر فيه فانهم- و ان جميع الناس طرا مسالمه
যাতে তুমিও উনার খিদমত বা গোলামী করতে আকাঙ্খী হবে, কারণ তারা এবং সকল মানুষ উনার সঙ্গে সন্ধি করতে উদগ্রীব হবে। সুবহানাল্লাহ!

0 Comments:
Post a Comment