রাহবারে সাইয়্যিদাহ, মাশুকায়ে ইলাহী, উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক পোশাক পরিধান, উনার মুবারক চাল-চলন, উনার মুবারক কথা-বার্তা সবসময়ের জন্য সুন্নতী সাজে সজ্জিত।

 রাহবারে সাইয়্যিদাহ, মাশুকায়ে ইলাহী, উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক পোশাক পরিধান, উনার মুবারক চাল-চলন, উনার মুবারক কথা-বার্তা সবসময়ের জন্য সুন্নতী সাজে সজ্জিত।

নূরে জাহান, বাহরুল আ’লিমা, উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি নিজে যেমন শরীয়ত মুতাবিক খাছ পর্দা করেছেন এবং করছেন, তেমনি উনার স্বীয় আওলাদ আলাইহিমুস সালাম অর্থাৎ হযরত শাহযাদা ক্বিবলা আলাইহিস সালাম, হযরত শাহযাদী ক্বিবলাদ্বয় আলাইহিমাস সালাম, হযরত শাহনাওয়াসী ক্বিবলাতুন আলাইহিমুস সালাম, হযরত শাহদামাদ ক্বিবলাদ্বয় আলাইহিমাস সালাম উনাদের প্রত্যেককেও সেই খাছ পর্দার মধ্যেই রেখেছেন। এবং সকল মুরীদানদের মহান আল্লাহ পাক উনার ফরয হুকুম পালন করার জন্য নছিহত মুবারক করছেন। সুবহানাল্লাহ্!  

হযরত সাইয়্যিদাতুন নিসা উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম ‘স্বাধীনা’ মহিলা এবং পরাধীন মহিলা বা দাসীদের মধ্যে পার্থক্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন। পবিত্র আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ মুতাবিক যারা পর্দা করবে, পর্দার মধ্যে ঘরে অবস্থান করবে এমনকি প্রয়োজনে ঘর থেকে বাইরে বের হবে তারাই মূলত ‘স্বাধীন’ মহিলা। এমন পর্দানশীন মহিলা যখন ঘর থেকে বের হন তখন তাকে কেউ উত্ত্যক্ত করে না বরং প্রত্যেকে উনাকে সম্মান করে।

আর যারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন খতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ অমান্য করে বেপর্দা অবস্থায় থাকে অথবা ঘর থেকে বের হয়, তারাই মূলত ‘পরাধীন’ মহিলা। এমন বেপর্দা মহিলা যখন ঘরে-বাইরে, রাস্তা-ঘাটে, অফিস-আদালতে অর্থাৎ যার যার কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করে তখনই তারা বেপর্দার কারণে উত্ত্যক্ত হয় অর্থাৎ শয়তানের উঁকিঝুঁকি দেয়ার ফলেই তারা নিজেদের অবমাননা নিজেরাই ডেকে আনে। নাউযুবিল্লাহ্!

উদাহরণস¦রূপ পেশ করা যায় যে, রাস্তার খোলা খাবার অথবা মিষ্টির দোকানের খোলা মিষ্টি সুরচিপূর্ণ ব্যক্তিরা কিনতে চান না বা খেতেও চান না। তার একটাই কারণ এসব খোলা খাবারের উপর মশা মাছি এবং ধুলোবালি পড়ে থাকে। আর সেটাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় যে, যেসব মহিলা পর্দা করে না বা হাত, মুখ, পা খোলা অবস্থায় ঘরের বাইরে বের হয় তারা অবশ্যই পরাধীন মহিলা অথবা দাসীর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং ‘নারীর স্বাধীনতা’ নয়, বরং নারী পরাধীনতার পরিচয় এখানে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়।

শুধু তাই নয়, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম ‘নারীদের সমান অধিকারের’ বিষয় তথা সমধিকার সম্পর্কে সজাগ করে দিচ্ছেন। তথাকথিত নারীবাদীরা মনে করে, সমধিকার বলতে একজন পুরুষ যে কাজ করতে পারে একজন নারী তাদের পাশে থেকে সে কাজই করবে। নাউযুবিল্লাহ্! বরং তাদের এ ধারণাই ভুল, মিথ্যা এবং ধোঁকাপূর্ণ।

‘সমধিকার’ বলতে এটাই বুঝানো হয়, যার যা অধিকার রয়েছে সেটা পরিবারেরই হোক আর সমাজেরই হোক না কেন; তার অধিকার গুলোরই তার নিজস্ব গুণাবলীতে বা বৈশিষ্ট্যে বাস্তবায়ন করা। তার মানে এই নয় যে, নারী-পুরুষ একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একত্রে কাজ করবে। তাদের এ কথার দাবির ফলশ্রুতিতে যা হয়-

প্রথমত: বেপর্দা হতে হয়। আর যখনই বেপর্দা হয়, পবিত্র হাদীছ শরীফ মুতাবিক তখন শয়তান পাপ কাজে লিপ্ত করার জন্য উঁকিঝুঁকি দিতে থাকে।

দ্বিতীয়ত: পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِاِمْرَأَةٍ اِلَّا كَانَ ثَالِثُهُمَا الشَّيْطَانُ

অর্থ: “যখন কোনো পুরুষ কোনো (বেগানা) মহিলার সাথে একাকী বা নিরিবিলিতে মিলিত হয়, তখন তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান।”

অর্থাৎ তখন শয়তান তাদেরকে পাপ কাজে উদ্ভুদ্ধ করে, এমনকি পাপ কাজে লিপ্ত করে দেয়। ফলে শুরু হয় ফিতনা-ফাসাদ। ফলে একজন নারী নিজেই শুধু পাপে লিপ্ত হয় না অন্যকেও তার সাথে পাপিষ্ঠ করে। নিজেই পরিবারে, সমাজে হেয় ঘৃণিত হয় আবার অপরজনকেও একই অবস্থার সম্মুখীন করে। নিজেরা এই অপকর্মের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং সাথে সাথে অন্যদেরকেও এই নোংরা পথে আসার জন্য প্রলুব্ধ করে ও সহায়তা করে। মাঝখান থেকে ফায়দাটা হয় কার? ফায়দা হয় খোদ ইবলিস শয়তানের এবং তার চেলা ইসলামবিদ্বেষী কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীদের। এরা বিভিন্নভাবে খুশি প্রকাশ করতে থাকে। নারীদের অধঃপতিত অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন দেখে শয়তান এবং বিধর্মীরা আত্মতৃপ্তি লাভ করে। কলুষিত জীবন নারীকে দুনিয়ায় যেমন লাঞ্ছিত করে পরকালেও নিজেকে এবং তার সাথে সম্পৃক্ত পুরুষ, স্বামী, মা-বাবা সবাইকে জাহান্নামী করে। আর সেজন্যই সাইয়্যিদাতুন নিসা, উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম কালের বিভীষিকায় অন্ধকারাচ্ছন্ন সমধিকারের উক্ত ধ্যান-ধারণাই সকলকে ত্যাগ করতে বলেছেন।

মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পুরুষ তত্ত্বাবধায়ক তার পরিবারের। আর মহিলা তত্ত্বাবধায়ক তার স্বামীর ঘরের ও তার সন্তানের।” (বুখারী শরীফ)

মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুরুষ জাতির কর্মপরিধিকে মহিলা জাতির কর্মপরিধি থেকে পৃথক করে দিয়েছেন। সে মুতাবিক মহিলাগণ বাড়ির ভেতরের জন্য দায়িত্বশীল। তবে শরীয়তের ফায়সালা এমন নয় যে- বিশেষ শরয়ী প্রয়োজন হলে নারীরা ঘর থেকে বের হতে পারবে না। অবশ্যই প্রয়োজনে আপাদমস্তক ঢেকে পর্দাসহ বের হতে পারবে। কাজেই পুরুষ এবং নারী উভয়ই যার যার অবস্থানে অত্যন্ত সম্মানিত ও মর্যাদাবান। সুবহানাল্লাহ্! 

অথচ কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা দ্বীন ইসলাম প্রদত্ত নারীদের এত সম্মান-মর্যাদা দেখে হিংসাবশত তথাকথিত সমাজে প্রচলিত ‘নারী স্বাধীনতা, ‘নারী অধিকার, ‘সমধিকার’ প্রভৃতি শরীয়ত বিরোধী ধোঁকাপূর্ণ এবং মিথ্যা দাবিতে তথাকথিত নারীবাদীদের উস্কিয়ে দিয়ে তাদের পরিবারে, সমাজে ক্ষতিসাধন করছে। 

সুতরাং বিধর্মীদের এই পাতানো ফাঁদ থেকে অর্থাৎ তাদের হিংসাবশত ষড়যন্ত্র থেকে নারীসমাজ যাতে মুক্তি লাভ করে সেটারই বলিষ্ঠ আহবান জানাচ্ছেন আমাদের প্রাণ-প্রিয়া সাইয়্যিদাতুন নিসা, উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ্!

সাইয়্যিদাতুন নিসা, ফক্বীহাতুন নিসা, উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম যেহেতু খাছ মুয়াল্লিমা। তাই উনার দ্বীনী শিক্ষার ব্যাপকতা সর্বত্রময়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- 

اَلْعِلْمُ نُوْرٌ

অর্থ: “ইলম হচ্ছে নূর বা আলো।”

সুতরাং এই ইলমের আলো তিনি চারিদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ!

উনার প্রতিষ্ঠিত আদর্শ বিদ্যাপিঠ ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ বালিকা মাদরাসা একটি আদর্শ দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উক্ত মাদরাসায় দ্বীনী ইলম অর্থাৎ (পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা-ক্বিয়াস শরীফ সম্বলিত বিধান) অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ, ইলমে তাছাউফসহ সমস্ত শিক্ষাই প্রদান করে থাকেন। আরবী, ইংরেজি, বাংলা, উর্দু, বিজ্ঞান, আক্বাইদ, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ও এই মাদরাসায় পড়ানো হয়ে থাকে। 

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اَلدِّيْنُ كُلُّه اَدَبٌ

অর্থ: “দ্বীন পুরোটাই হচ্ছে আদব ও শিষ্টাচারের সমন্বয়।” 

আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে শ্রদ্ধেয়া উম্মুল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম এই মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীসহ আরো যত মহিলা মুরীদান রয়েছেন প্রত্যেককে আদব, শরাফত, ভদ্রতা, শিষ্টাচার শিক্ষা প্রদান করে থাকেন। তাছাউফশূন্য মহিলাদের তাছাউফ শিক্ষা দিয়ে থাকেন। মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত মা’রিফত অর্জন করার জন্য যিকির-ফিকির উনাদের তর্য-তরীক্বা শিক্ষা দিয়ে থাকেন। অন্তর পরিশুদ্ধ করার অর্থাৎ শয়তান দূর করার উক্ত শিক্ষাই উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি দিয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اُذْكُرُواْ نِعْمَةَ اللّٰهِ عَلَيْكُمْ

অর্থ: “তোমাদেরকে যে নিয়ামত মুবারক দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামত মুবারক উনাকে স্মরণ করো।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَا زَيْدَنَّكُمْ

অর্থ: “তোমরা যদি নিয়ামত মুবারক উনার শুকরিয়া আদায় করো তাহলে তোমাদের প্রতি নিয়ামত মুবারক বৃদ্ধি করে দেয়া হবে।”

সুতরাং আমরা এই পরম রহমতপূর্ণ-নিয়ামতপূর্ণ ৭ই শরীফ যেমন স্মরণ রাখবো এবং সাথে সাথে পালন করবো। ঠিক তেমনি সাইয়িদাতুন নিসা, উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনাকে যে আমাদের মাঝে এত মহান নিয়ামতস্বরূপ পাঠনো হলো, সেই নিয়ামতের ক্বদর করে উনার মুবারক ছোহবত ইখতিয়ারের মাধ্যমে হাক্বীক্বী দ্বীনী শিক্ষা অর্জনের মধ্য দিয়ে নেক্কার পরহেযগার মু’মিনা হওয়ার চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ্! তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের মহিলাদের নিয়ামত আরো বৃদ্ধি করে দিবেন। অর্থাৎ আমরা প্রত্যেক মহিলারা সবসময় খাছ নিয়ামত, রহমত, বরকত, সাকিনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারবো। ইনশাআল্লাহ! 


0 Comments: