সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক

 

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক

 হযরত শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত ‘মাদারিজুন নুবুওয়াত শরীফ’ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, “সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র জিসম মুবারক থেকে সবসময় মেশক ও আম্বরের সুগন্ধি বের হতো।” সুবহানাল্লাহ!

‘মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ শরীফ’ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, 

وكان عبد المطلب يفوح منه رائحة المسك الاذفر،

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র জিসম মুবারক থেকে মেশকের প্রবল সুগন্ধি মুবারক বিচ্ছুরিত হতো।” সুবহানাল্লাহ!

‘শারহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব শরীফ’ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,

وكانت قريش إذا أصابها قحط شديد تأخذ بيد عبد المطلب فتخرج به إلى جبل ثبير فيتقربون به إلى الله، ويسألونه أن يسقيهم الغيث، فكان يغيثهم ويسقيهم ببركة نور رسول الله صلى الله عليه وسلم غيثًا عظيمًا.

অর্থ: “কুরাইশরা যখন কঠিন দুর্ভিক্ষে পড়তো, তখন তারা সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার সম্মানিত হাত মুবারক ধরে (অত্যন্ত সম্মানের সাথে) ছাবীর পাহাড়ে নিয়ে যেতো এবং উনার সম্মানিত উসীলা মুবারক দিয়ে তারা মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য কামনা করতো এবং বৃষ্টি প্রার্থনা করতো। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনার বরকত মুবারক-এ তাদেরকে প্রচুর বৃষ্টি দান করতেন।” সুবহানাল্লাহ! (শারহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব শরীফ)

কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,

ويقول الشهرستاني: "ظهر نور النبي صلى الله عليه وسلم في أسارير عبد المطلب بعض الظهور، وببركة ذلك النور ألهم النذر في ذبح ولده، وببركته كان يأمر ولده بترك الظلم والبغي، ويحثهم على مكارم الأخلاق، وينهاهم عن دنيات الأمور، وببركة ذلك النور كان يقول في وصاياه: إنه لن يخرج من الدنيا ظلوم حتى ينتقم منه، وتصيبه عقوبة، إلى أن هلك رجل ظلوم لم تصبه عقوبة، فقيل لعبد المطلب في ذلك

 অর্থ: “হযরত ইমাম শাহরাস্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র কপাল মুবারক-এ ‘নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বিশেষভাবে প্রকাশিত হতেন। সুবহানাল্লাহ! এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকত মুবারক-এ সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম উনাকে কুরবানী করার মান্নত করার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ! আর এই সম্মানিত ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনার বরকত মুবারকেই সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যুলুম, অন্যায় ও অত্যাচার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ মুবারক দিতেন এবং উত্তম চরিত্র মুবারক গ্রহণের ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন, উনাদেরকে নি¤œ ও নিকৃষ্ট কাজ থেকে বিরত রাখতেন। এই ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনার বরকতেই তিনি উনার সম্মানিত নছীহত বা উপদেশ মুবারক-এ বলতেন, দুনিয়ার যমীন থেকে কখনও যুলুম-নির্যাতন, অত্যাচার-অবিচার দূর হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত এর জন্য শাস্তি দেয়া না হবে।” (আস সীরাতুন নুবুওওয়াহ)

‘শারহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব শরীফ’ উনার মধ্যে এসেছে,

ولما جعله الله فيه من مخالفة ما كان عليه الجاهلية بإلهام من الله، وكان يأمر أولاده بترك الظلم والبغي، ويحثهم على مكارم الأخلاق وينهاهم عن دنيات الأمور، ويؤثر عنه سنن جاء بها القرآن والسنة كالوفاء بالنذر، والمنع من نكاح المحارم، وقطع يد السارق، والنهي عن قتل الموءودة وتحريم الخمر والزنا، وأن لا يطوف بالبيت عريان،.

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত ইলহাম মুবারক দ্বারা সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জাহিলিয়াতের যুগে আলাদাভাবে বেশিষ্ট্য ম-িত করেছেন। তিনি উনার সম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যুলুম, অন্যায় ও অত্যাচার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ মুবারক দিতেন এবং উত্তম চরিত্র মুবারক গ্রহণের ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন, উনাদেরকে নি¤œ ও নিকৃষ্ট কাজ থেকে বিরত রাখতেন। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বারা যেই সকল সুন্নত বা বিধানসমূহ শুরু হয়েছে, তার অধিকাংশগুলো সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ এবং সম্মানিত ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে এসেছে। তারমধ্যে কতিপয় হচ্ছেন, ১.মান্নত পূর্ণ করা, ২. মাহরামদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ, ৩. চোরের হাত কাটা, ৪. কন্যা সন্তান হত্যা নিষিদ্ধ, ৫. মদ ও ব্যভিচার হারাম করণ, ৬. বিবস্ত্র হয়ে বাইতুল্লাহ শরীফ (সম্মানিত ও পবিত্র কা’বা শরীফ) তাওয়াফ না করা ইত্যাদি।” সুবহানাল্লাহ! (শারহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব)

কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,

وتؤثر عنه سنن جاء القرآن بأكثرها، وجاءت السنة بها: منها الوفاء بالنذر، والمنع من نكاح المحارم، وقطع يد السارق، والنهي عن قتل الموؤدة، وتحريم الخمر والزنا، وأن لا يطوف بالبيت عريان كذا في كلام سبط ابن الجوزي

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বারা যেই সকল সুন্নত বা বিধানসমূহ শুরু হয়েছে, তার অধিকাংশগুলোই (পরবর্তীতে) সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ এবং সম্মানিত ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে এসেছে তথা সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে সেগুলো জারী রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা সাইয়্যিদুনা জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জারীকৃত সুন্নত বা বিধানসমূহ অত্যন্ত বেমেছালভাবে কবুল করেছেন। সুবহানাল্লাহ!) তারমধ্যে কতিপয় হচ্ছেন, ১.মান্নত পূর্ণ করা, ২. মাহরামদের (যেমন- বোন, ফুফু, খালা) সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ, ৩. চোরের হাত কাটা, ৪. কন্যা সন্তান হত্যা নিষিদ্ধ, ৫. মদ ও ব্যভিচার হারাম করণ, ৬. বিবস্ত্র হয়ে সম্মানিত ও পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ (সম্মানিত ও পবিত্র কা’বা শরীফ) তাওয়াফ না করা।” (আস সীরতুল হালবিয়্যাহ শরীফ ১/৭)

‘আস সীরতুল হালবিয়্যাহ শরীফ’ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,

  وكان عبد المطلب يأمر أولاده بترك الظلم والبغي، ويحثهم على مكارم الأخلاق وينهاهم عن دنيئات الأمور.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যুলুম, অন্যায় ও অত্যাচার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ মুবারক দিতেন এবং উত্তম চরিত্র মুবারক গ্রহণের ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন, উনাদেরকে নি¤œ ও নিকৃষ্ট কাজ থেকে বিরত রাখতেন।” (আস সীরাতুল হালবিয়্যাহ শরীফ ১/৭) 

‘আস সীরতুল হালবিয়্যাহ শরীফ’ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,

وكان يقول لن يخرج من الدنيا ظلوم حتى ينتقم منه.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলতেন, দুনিয়ার যমীন থেকে কখনও যুলুম-নির্যাতন, অত্যাচার-অবিচার দূর হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত এর জন্য শাস্তি দেয়া না হবে।” (আস সীরতুল হালবিয়্যাহ শরীফ ১/৭)

কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,

وهو أول من طلى الكعبة بالذهب

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক যিনি সর্বপ্রথম সম্মানিত ও পবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে স্বর্ণ দ্বারা প্রলেপ দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!

কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,

أنه كان أول من سن دية النفس مائة من الإبل،

অর্থ: “তিনিই সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক যিনি সর্বপ্রথম একজন মানুষের ‘রক্তপণ একশত উট’ এ বিষয়টি প্রবর্তণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!

কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,

وممن حرم الخمر على نفسه، وهو أول من تحنث بغار حراء,. 

অর্থ: “তিনি সেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের মধ্যে অন্যতম যিনি নিজের উপর মদ হারাম করেছিলেন এবং তিনিই সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক যিনি সর্বপ্রথম সম্মানিত হেরা গুহা মুবারক-এ নির্জনে ইবাদাত মুবারক করতেন।” সুবহানাল্লাহ!

কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,

أول من تحنث بحراء كان إذا دخل شهر رمضان صعده وأطعم المساكين،

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই সম্মানিত হেরা গুহায় নির্জনে ইবাদাত-বন্দেগী করার সূচনা করেন। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস আসলে তিনি সম্মানিত হেরা গুহায় আরোহণ মুবারক করতেন এবং মিসকীনদেরকে (বিশেষভাবে) খাদ্য খাওয়াতেন।” সুবহানাল্লাহ! (শারহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব শরীফ)

কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,

وكان إذا دخل شهر رمضان، صعده وأطعم المساكين، وكان صعوده للتخلي من الناس؛ ليتفكر في جلال الله وعظمته. 

অর্থ: “যখন সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাস আসতো, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত হেরা গুহা মুবারক-এ আরোহণ মুবারক করতেন এবং মিসকীনদেরকে (বিশেষভাবে) খাদ্য খাওয়াতেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি সেখানে আরোহণ মুবারক করতেন লোকজন থেকে আলাদা হয়ে নির্জনে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত জালাল ও ‘আযমত মুবারক তথা মহিমা, মহত্ত্ব, সম্মান, মর্যাদা-মর্তবা ও বড়ত্ব মুবারক সম্পর্কে ফিকির করার জন্য।” সুবহানাল্লাহ! 

অপর বর্ণনায় এসেছে,

وكان إذا دخل شهر رمضان صعد حراء وأطعم المساكين جميع الشهر وكان صعوده للتخلي عن الناس يتفكر في جلال الله وعظمته

অর্থ: “যখন সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাস আসতো, সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত হেরা গুহা মুবারক-এ আরোহণ মুবারক করতেন এবং সারা মাসব্যাপী মিসকীনদেরকে (বিশেষভাবে) খাদ্য খাওয়াতেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি সেখানে আরোহণ মুবারক করতেন লোকজন থেকে আলাদা হয়ে নির্জনে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত জালাল ও আযমত মুবারক তথা মহিমা, মহত্ত্ব, সম্মান, মর্যাদা-মর্তবা ও বড়ত্ব মুবারক সম্পর্কে ফিকির করার জন্য।” সুবহানাল্লাহ!


0 Comments: