“অবশ্যই তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ কোরনা।”

Image result for মৃত্যু“অবশ্যই তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ কোরনা।”

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ
অর্থাৎ;-হে ইমানদারগন, আল্লাহকে যেমন ভয়করা উচিৎ তেমনই ভাবে ভয় করতে থাক, এবং অবশ্যই মুসলমান নাহয়ে মৃত্যু বরণ কোরনা।

এ আয়াতে তাকওয়া শব্দের অর্থ ভয় বলা হয়েছে। ইসলামী পরিভাষায় কয়েকটি আচরণের সমাহারকেই তাকওয়া বলে, যেমন;-ধর্মানুরাগ, খোদাভীতি, সংযমশীলতা ইত্যাদি। এ সমস্ত গুনাবলীর শিখরে অবস্থানকারীকেই মুত্তাকী বলে। মুমিনগনকে মুসলীম না হয়ে মৃত্যু বরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হতে পারে, মুমিন অপেক্ষা মুসলীমের গুরুত্ব বেশী। শব্দদ্বয় একটির জায়গায় অন্যটি ব্যবহার হয়ে থাকে। ইমান অন্তরের বস্তু আর ইসলাম আচরণের বস্তু। ইমানকে আচরণে প্রকাশ করাতেই পূর্ণাঙ্গতা। সে কথাই বলা হয়েছে।


কলেমা নামাজ, রোজা প্রভৃতি যথাযত পালন করেই আমরা ভাবি ইসলাম পূর্ণাঙ্গ হয়ে গেছে, কিন্তু আসলে কি তাই?আল্লাহ বলেন, তিনি জ্বীন ও ইনসানকে শুধুই তার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু সঙ্গে দিয়েছেন পার্থিব চাহিদা। শুধুমাত্র ইবাদত করতে গেলে এগুলোর কি হবে। অতএব আমাদের সেই ইবাদতের তাৎপর্য বুঝতে হবে। ফরজ ইবাদতের বাইরে প্রতিটা কাজই যদি আমরা আল্লার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে তারই উপর ভরসা করে করি তবে তাও হবে ইবাদত। আর এখানেই হল সম্পূর্ণ আত্মসমর্পন, তখনই হব আমরা মুসলীম। মৃত্যু যখনই আসুক আমরা যেন এ অবস্থার বাইরে না থাকি।

وَاعْتَصِمُواْ بِحَبْلِ اللّهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُواْ وَاذْكُرُواْ نِعْمَةَ اللّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاء فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىَ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
অর্থাৎ;-আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়হস্তে ধারণ কর, পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা, আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ করো যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরষ্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। অতএব তারই অনুগ্রহে ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুণ্ডের কিনারায় অবস্থান করছিলে, অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদের মুক্তি দিয়েছেন। এ ভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শন সমুহ তোমাদের জন্য্য প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হও।“

মুত্তাকী হওয়ার পরই একতাবদ্ধ হওয়ার পালা। মানুষকে একতাবদ্ধ করতে প্রয়োজন, সহমত, নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও মাধ্যম। এআয়াতে আল্লাহ সেই মাধ্যমের সন্ধান দিলেন। সুরা বাক্বারায় আমরা দেখেছি কোরআনকে মজবুত হাতল বলা হয়েছে, এখানে মজবুত রশি বলা হচ্ছে। যার এক প্রান্ত আল্লাহর কাছে, অপর প্রান্ত মানুষের কাছে, হাদীশে বলা হয়েছে।এই কোরআনের মাধ্যমেই আল্লাহ মদীনার আওফ ও খাজরাজ গোত্রের দীর্ঘ দিনের শত্রুতাকে সম্প্রীতিতে বদলে দিলেন। তারা আপোষে ভাই ভাই হয়ে গেল। এ যেন তারা ধ্বংসের প্রান্তসীমা থেকে ফিরে এল। শুধু তাই নয় মোহাজীর ও আনসারগনের ভ্রাতৃত্ব নজির বিহীন হয়ে আছে।

وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অর্থাৎ;-“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ যারা সৎ কর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখবে। আর তারাই হবে সফলকাম”।

মুত্তাকীগন কোরআনের এর মাধ্যমে জমাত বদ্ধ হওয়ার পর তাদের সামনে তিনটি কাজের দায়িত্ব এসে গেল;-
প্রথমটি সৎকর্মের প্রতি আহবান।
দ্বিতীয়টি ভাল কাজের নির্দেশ ও
তৃতীয়টি অন্যায় হতে অন্যকে বিরত রাখা বা বাধা দেওয়া।
অন্যায় হতে বিরত রাখার তিনটি স্তর আছে। প্রথমটি শক্তি প্রয়োগে বাধা দেওয়া। প্রথমটি সম্ভব নাহলে দ্বিতীয়টি, অর্থাৎ ভাল কথায় বুঝিয়ে অথবা প্রতিবাদী ভাষায় বাধা দেওয়া। যদি এটিও অসম্ভব হয় তবে, তৃতীয়টি, অন্তরে ঘৃণা পোষন করা। সাথে সাথে দ্বিতীয়টির জন্য তৈরী ও পরে প্রথমটির উপযুক্ত হয়ে শক্তি প্রয়োগে বাধা দেওয়া। তৃতীয় অবস্থাটিকে ইমানের দূর্বলতম অবস্থান বলা হয়েছে। আর যারা একাজ যথাযত পালন করবে তারাই হবে সার্থক বা সফলকাম। আর এভাবেই কোরআনের বানী বা ইসলামকে বিশ্বের দরবারে বিস্তৃত করতে হবে। ‘মিনকুম’ শব্দ দ্বারা ইসলামের বৃহত গোষ্টি হতে ক্ষুদ্র দলে আনা হয়েছে।

وَلاَ تَكُونُواْ كَالَّذِينَ تَفَرَّقُواْ وَاخْتَلَفُواْ مِن بَعْدِ مَا جَاءهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُوْلَـئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
অর্থাৎ;-আর তাদের মত হয়োনা, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং নিদর্শণ সমুহ আসার পরও বিরোধিতা করতে শুরু করেছে; তাদের জন্য রয়েছে ভয়ঙ্কর আজাব।
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ فَأَمَّا الَّذِينَ اسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أَكْفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ فَذُوقُواْ الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ
অর্থাৎ;-সেদিন কোন মুখ উজ্জ্বল হবে, আর কোন মুখ হবে কালো।। বস্তুতঃ যাদের মুখ কালো হবে, তাদের বলা হবে, তোমরা কি ইমান আনার পর কাফের হয়ে গিয়েছিলে?এবার সে কুফরীর বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহন করো।

যারা ইমান আনার পর ইসলাম ত্যাগ করবে বা কাফের হয়ে যাবে, কেয়ামতের দিন তাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে। এখান থেকেই তাদের আজাব শুরু হবে। অপর পক্ষে ইমানদারদের চেহারা উজ্জ্বল হবে।
وَأَمَّا الَّذِينَ ابْيَضَّتْ وُجُوهُهُمْ فَفِي رَحْمَةِ اللّهِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থাৎ;-আর যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে, তারা থাকবে রহমতের মাঝে, তাতে তারা অনন্তকাল অব্থান করবে।
تِلْكَ آيَاتُ اللّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّ وَمَا اللّهُ يُرِيدُ ظُلْمًا لِّلْعَالَمِينَ
অর্থাৎ;-এ গুলো হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ, যা আপনাদের যথাযত পাঠ করে শোনানো হচ্ছে। আর আল্লাহ বিশ্ব জাহানের প্রতি উৎপীড়ন করতে চান না।।
وَلِلّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ وَإِلَى اللّهِ تُرْجَعُ الأُمُورُ

অর্থাৎ;-আর যা কিছু আসমান ও জমিনে রয়েছে, সে সবই আল্লাহর এবং আল্লাহর প্রতিই সব কিছু প্রত্যাবর্তনশীল।



0 Comments: