হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ‘শরহে ছুদূর বা পবিত্র সিনা মুবারক চাক’ সম্পর্কে বাতিলপন্থীদের ভ্রান্ত ধারণার অপনোদন


হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ‘শরহে ছুদূর
বা পবিত্র সিনা মুবারক চাক’ সম্পর্কে বাতিলপন্থীদের ভ্রান্ত ধারণার অপনোদন
মহামহিমান্বিত এক মাস পবিত্র ‘রজবুল হারাম শরীফ’। এ মহাপবিত্র মাসে সবিশেষ আলোচিত ঘটনা হল ‘পবিত্র মি’রাজ শরীফ’। পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাসে পবিত্র মি’রাজ শরীফ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে এক শ্রেণীর গুমরাহ লোক মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ সীমাহীন বেয়াদবী ও কুফরীমূলক কথা-বার্তা বলে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার আলোচনাকালে যে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে আলোচিত হয় তার মধ্যে অতীব উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- ‘পবিত্র শরহে ছুদূর বা পবিত্র সিনা মুবারক চাক বা প্রসারিত করা।’ অন্যান্য বিষয়ের মতো এ বিষয়েও বিদয়াতী গুমরাহ মিথ্যাবাদী লোকগুলো কুফরীর বিষাক্ত বাষ্প ছড়াতে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ!

যেমন: ‘পবিত্র শরহে ছুদূর বা সিনা মুবারক চাক বা প্রসারিত করা’ প্রসঙ্গে বিদয়াতী গুমরাহ মিথ্যাবাদী লোকগুলো বলে থাকে যে-

প্রথমবার সিনা মুবারক চাকের সময় উনার পবিত্র ক্বলব মুবারক ফেঁড়ে শয়তানের অংশ বের করে পবিত্র ক্বলব মুবারক পবিত্র করা হয়েছিল নাঊযুবিল্লাহ! এবং শিশুসুলভ আচরণ দূরীভূত করা হয়েছিল। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!
দ্বিতীয়বার পবিত্র সিনা মুবারক চাকের সময় উনার ভিতর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ ও কামভাব দূর করা হয়েছিল। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!

তৃতীয়বার পবিত্র সিনা মুবারক চাক করা হয়েছিল পবিত্র নুবুওওয়াত উনার ভার বহন ও ধারণ করার জন্য নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! এবং
চতুর্থবার পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাতে- পবিত্র মি’রাজ শরীফ করার ও তা বরদাশত করার যোগ্যতা পয়দা করার জন্য পবিত্র সিনা মুবারক চাক করা হয়েছিল। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!
অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ইনশিরাহ শরীফ উনার ৪ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি মহান আল্লাহ পাক আপনার আলোচনা ও মর্যাদা-মর্তবা মুবারক সমুন্নত ও বুলন্দ করেছি।” সুবহানাল্লাহ!
মর্যাদা-মর্তবা মুবারক বুলন্দ করা সম্পর্কে বলা হয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা এতো বুলন্দ করেছেন যে, তিনি স্বয়ং স্বীয় নাম মুবারক উনার সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক সংযুক্ত করে দিয়েছেন। যা পবিত্র ‘কালিমা ত্বইয়িবা’ হিসেবে মশহুর। পবিত্র কালিমা ত্বইয়িবা হচ্ছে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’।
সমস্ত উম্মতের পবিত্র ইজমা শরীফ হচ্ছে- কেউ যদি ক্বিয়ামত পর্যন্ত শুধু ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে তাহলেও সে ঈমানদার হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত ‘মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ স্বীকার না করবে বা না বলবে।
যেমন, কোনো হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদেরকে পবিত্র নুবুওওয়াত ও পবিত্র রিসালত দেয়া হয়নি বা উনাদের পবিত্র নুবুওওয়াত ও পবিত্র রিসালত উনার স্বীকৃতি দেয়া হয়নি যতক্ষণ পর্যন্ত উনারা ‘মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ এই পবিত্র কালিমা শরীফ উনার স্বীকৃতি না দিয়েছেন।
লক্ষ-কোটি বুলন্দ মর্যাদাসমূহের কথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। এর মধ্যে একটি বিশেষ মর্যাদার বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যেমন- যদি কেউ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুন নাজাত মুবারক বা নূরুশ শিফা মুবারক পান করে বা খায় আর সে যদি কাফিরও হয় তারপরেও মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুন নাজাত মুবারক বা নূরুশ শিফা মুবারক পান করা বা খাওয়ার কারণে এর উসীলায় পবিত্র ঈমান দিয়ে জাহান্নাম হারাম করে পবিত্র জান্নাত ওয়াজিব করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে, একশখানা ছহীফা ও চারখানা কিতাব প্রতিটির মধ্যেই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপক আলোচনা ও ছানা-ছিফত মুবারক উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু এতোটুকুই নয়; বরং এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপক আলোচনা ও ছানা-ছিফত মুবারক করে নিজেদেরকে সম্মানিত করে নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
আরো বর্ণিত রয়েছে, সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপক আলোচনা ও ছানা-ছিফত মুবারক করে নিজেরা সম্মানিত হয়ে স্ব স্ব মাক্বামে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
আরো উল্লেখ করা হয়, সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপক আলোচনা ও ছানা-ছিফত মুবারক করে সারা কায়িনাতের মধ্যে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে সবচেয়ে সম্মানিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
আর পরবর্তীতে হযরত তাবিয়ীন, তাবি’ তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম ও ক্বিয়ামত পর্যন্ত যতো হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ আসবেন, উনারা সকলেই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপক আলোচনা ও ছানা-ছিফত মুবারক করে সম্মানিত হয়েছেন, হচ্ছেন ও হবেন। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক ও আলোচনা মুবারক যে ব্যক্তিই করবে সে ব্যক্তিই সম্মানিত ও ফযীলতপ্রাপ্ত হবে। কারণ সমস্ত সম্মান, ফযীলত, বুযূর্গী ও মর্যাদা ইত্যাদির মালিক ও বণ্টনকারী হচ্ছেন স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! এই যদি হয় প্রকৃত অবস্থা তবে উনার শান মুবারক উনার খিলাফ কথাগুলো কিভাবে বলা যেতে পারে? উপরন্তু যে বা যারা খেলাফ বলবে সে বা তারা অবশ্যই কাট্টা কাফির চির জাহান্নামীরূপে সাব্যস্ত হবে।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীমাহীন বুলন্দ মর্যাদা ও আলোচনা মুবারক উনার আনুষ্ঠানিক বহিঃপ্রকাশের ঘটনা হলো- পবিত্র মি’রাজ শরীফ ও পবিত্র সিনা মুবারক চাক করার ঘটনা। কিন্তু অন্তরে গালিজ থাকার কারণে বাতিল ফিরকার লোকেরা উনার সীমাহীন শান-মান মর্যাদা মুবারক উনাকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়ে এলোমেলো বক্তব্য দিয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা ইনশিরাহ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক করেন। অর্থাৎ উনার ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী ও সম্মান মুবারক বর্ণনা করেন। বিশেষ করে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে সব মর্যাদা দিয়েছেন তারমধ্যে বিশেষ কয়েকটি পবিত্র সূরা ইনশিরাহ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। আর প্রথমেই শরহে ছুদূর বা পবিত্র সিনা মুবারক প্রসারিত করার কথা বলা হয়েছে। যা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম উনার প্রতি নিয়ামতসমূহের বিশেষ এক নিয়ামত মুবারক। যেমন- মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ইনশিরাহ শরীফ উনার ১ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি কি আপনার পবিত্র সিনা মুবারক চাক ও প্রসারিত করিনি? অর্থাৎ আমি আপনার পবিত্র সিনা মুবারক চাক ও প্রসারিত করেছি।”

ছহীহ ও বিশুদ্ধ মতে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সিনা মুবারক চাক করা হয়েছিল চারবার। প্রথমবার যখন তিনি স্বীয় দুধ মা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমা সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার লালন-পালনে, তখন উনার দুনিয়াবি বয়স মুবারক তিন থেকে পাঁচ বছর ছিল। দ্বিতীয়বার দশ থেকে চৌদ্দ বছর বয়স মুবারকে। তৃতীয়বার আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র নুবুওওয়াত শরীফ ঘোষণার সময় পবিত্র হিরা গুহায় এবং চতুর্থবার আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাতে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার মধ্যে।
মহান আল্লাহ পাক উনার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দুশমন কাফির, মুনাফিক, দাজ্জালের চেলা, পথভ্রষ্টরা বলে থাকে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রথমবার সিনা মুবারক চাকের সময় উনার ভিতর থেকে ক্বলব মুবারক বের করে তা ফেড়ে শয়তানের অংশ ফেলে দিয়ে ক্বলব মুবারককে পবিত্র করা হয়েছিল এবং শিশুসুলভ আচরণ দূরীভূত করা হয়েছিল। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
তাদের এ বক্তব্য কাট্টা কুফরীমূলক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যারোপ। কারণ উম্মতদেরকে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচানোর জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে প্রেরণ করলেন উনারই মধ্যে শয়তানের অংশ থাকে কিভাবে? নাঊযুবিল্লাহ!
আর শিশুসুলভ আচরণ সম্পর্কে বলতে হয় যে, ‘হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনারা তো নবী যদিও উনারা শিশু হোন না কেন।’ (আল ইতকান শরীফ)
আর যিনি হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, যিনি নূরে মুজাসসাম, যিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়টা তো অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকেও সম্পূর্ণ আলাদা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি তখনও নবী ছিলাম, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি মাটি ও পানিতে অবস্থান করেছিলেন। রূহ এবং শরীর মুবারকে ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ!

কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ তথা সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা মতে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সমস্ত প্রকার খারাপ বিষয় এবং অপবিত্রতা থেকে সম্পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র; এমনকি পবিত্র থেকে পবিত্রতম। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দুশমন কাফির, মুনাফিক, দাজ্জালের চেলা, পথভ্রষ্টরা বলে থাকে যে, দ্বিতীয়বার পবিত্র সিনা মুবারক চাকের সময় উনার ভিতর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ ও কাম ভাব দূর করা হয়েছিল। নাঊযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
তাদের এ বক্তব্যও কাট্টা কুফরীমূলক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি চরম অপবাদ। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের মধ্যে যাঁরা ওলীআল্লাহ হিসেবে মনোনীত হন উনারাই তো সমস্ত প্রকার বদ স্বভাব থেকে মুক্ত থাকেন। তাহলে যিনি সমস্ত কায়িনাতের হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হাবীবুল্লাহ উনার মধ্যে কি করে বদ খাছলত থাকতে পারে? কারণ যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, তিনি তো মহান আল্লাহ পাক উনার রঙে রঙিন, উনার গুণে গুণান্বিত। পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক ফরমান, “আমি আপনাকে খলীল ও হাবীব হিসেবে গ্রহণ করেছি।”
মহান আল্লাহ পাক উনার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দুশমন কাফির, মুনাফিক, দাজ্জালের চেলা, গুমরাহরা বলে থাকে যে, তৃতীয়বার সিনা মুবারক চাক করা হয়েছিল পবিত্র নুবুওওয়াত উনার ভার বহন ও ধারণ করার জন্য। নাঊযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
গুমরাহ ও বাতিল ফিরকার লোকদের এ বক্তব্যও পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের সম্পূর্ণ খিলাফ ও কুফরীমূলক। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা বিনা সিনা মুবারক চাকে পবিত্র নুবুওওয়াত ও পবিত্র রিসালত উনার ভার ধারণ ও বহন করলেন। তাহলে যিনি হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, যিনি হাবীবুল্লাহ, যিনি নূরে মুজাসসাম (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি সিনা মুবারক চাক ব্যতীত পবিত্র নুবুওওয়াত ও পবিত্র রিসালত উনার ভার বহন ও ধারণ করতে সক্ষম ছিলেন না? নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!

এ ধারণা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা ও শানের পরিপন্থী, যা কাট্টা কুফরী। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মনোনীত করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক ফেরেশতা ও মানুষের মধ্যে হতে রসূল মনোনীত করেছেন।”
মহান আল্লাহ পাক উনার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দুশমন কাফির, মুনাফিক, দাজ্জালের চেলা, পথভ্রষ্টরা বলে থাকে যে, চতুর্থবার পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাতে পবিত্র সিনা মুবারক চাক করা হয়েছে পবিত্র মি’রাজ শরীফ করা ও তা বরদাশত করার যোগ্যতা হাছিলের জন্য। নাঊযুবিল্লাহ!
বাতিল ফিরক্বা, ওহাবী, সালাফী, দেওবন্দী মওদুদী ও খারিজী পথভ্রষ্টদের এ বক্তব্য পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও সম্মানিত ইসলামী শরীয়াহ উনার খিলাফ হওয়ায় কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিটি বিষয় পবিত্র ওহী মুবারক উনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সুতরাং উনার অযোগ্যতা বলার অর্থ হলো কাট্টা কুফরী করা।

মূলত, সঠিক বক্তব্য হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চারবার পবিত্র সিনা মুবারক চাকের লক্ষ-কোটি কারণ রয়েছে। এরমধ্যে একটি কারণ হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক তিনি যে উনাকে অসীম-অফুরন্ত নিয়ামত মুবারক হাদিয়া করেছেন সেটার প্রকাশ ঘটানো বা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা। কাজেই পবিত্র করা, মুহলিকাত দূর করা যা মুনজিয়াত পয়দা করা কোনোটাই উদ্দেশ্য নয়। কারণ তিনি তো পরিপূর্ণভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে গুণান্বিত হয়েই পয়দা হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দুশমন কাফির, মুনাফিক, দাজ্জালের চেলা, গুমরাহরা আরো বলে থাকে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদত মুবারক থেকে আদৌ মা’ছুম ছিলেন না। সিনা মুবারক চাক করে মা’ছুম বা নিষ্পাপ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
ওহাবী, খারিজী, মওদুদী জামাতী, কওমী, তাবলীগীদের তথা বদ মাযহাব ও বাতিলপন্থীদের উপরোক্ত বক্তব্যও সম্পুর্ণ কুফরীমূলক।
মূল ফতওয়া হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামিন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সৃষ্টিগতভাবেই মা’ছুম বা নিষ্পাপ। এছাড়াও হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা তো সর্বাবস্থায়ই মা’ছুম বা নিষ্পাপ। পবিত্র নুবুওওয়াত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হওয়ার পূর্বে হোক বা পরে হোক না কেন, সর্বাবস্থায়ই উনারা নিষ্পাপ তথা মা’ছুম। এর উপর বিশ্বাস করা ফরযে আইন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো অন্যান্য হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাইয়্যিদ অর্থাৎ হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল। তাহলে তিনি কত উত্তমভাবে মা’ছুম, তা তো চিন্তা-ফিকিরের বাইরে।

অতএব, পবিত্র শরহে ছুদূর বা পবিত্র সিনা মুবারক চাকের যে ঘটনা, তা হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদত্ত নিয়ামত মুবারকসমূহের একটি নিয়ামত মুবারক প্রদানের আনুষ্ঠানিক ঘটনা। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত নিয়ামত মুবারক দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। নতুন করে দেয়ার মতো কোনো নিয়ামত মুবারক বাকি ছিল না। এর মেছাল হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তারপরেও দুনিয়াবী জিন্দেগীর চল্লিশ বছর বয়স মুবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র নুবুওওয়াত ও পবিত্র রিসালত মুবারক প্রকাশ করেন।


0 Comments: