হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৯২৫-১০৬৯) (চ)


তাফসীরে বাগবী’ গ্রন্থে হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার কতিপয় বৈশিষ্ট্য মুবারক বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার এমন কতিপয় বৈশিষ্ট্য মুবারক রয়েছে, যেগুলো অন্য কোনো মহিলার মধ্যে দৃশ্যমান হয়নি। তিনি নিজেও খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত প্রকাশার্থে এসব বিষয় শোকরানাস্বরূপ বর্ণনা করতেন।
তহিরা, তইয়িবা, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন, আমি গর্ববোধ করছি না; বরং প্রকৃত বিষয়টি শুকরানাস্বরূপ বর্ণনা করতেছি যে, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে এমন ৯টি বিষয় দান করেছেন, যা ইহজগতে অন্য কাউকে দান করেননি।
১)     আমার পবিত্র নিকাহ মুবারক উনার পূর্বে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার ছূরত মুবারক স্বপ্নযোগে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে পেশ করেছিলেন।
২)     আমার বয়স মুবারক যখন ৬ বছর, তখন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে নিকাহ মুবারক করেন।
৩)     ৯ বছর বয়স মুবারক-এ আমি উনার পবিত্রতম হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ গ্রহণ করি।
৪)     আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম হুজরা শরীফ-এ শুধুমাত্র আমিই কুমারী উম্মুল মু’মিনীন হিসেবে তাশরীফ নিয়েছি।
৫)     আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার পবিত্রতম বিছানা মুবারক-এ অবস্থান করা কালে পবিত্র ওহী মুবারক নাযিল হয়েছে।
৬)     আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আমি সর্বাপেক্ষা প্রিয়।
৭)     আমার পবিত্রতা ঘোষণা করে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে।
৮)     আমি স্বয়ং চোখ মুবারক দ্বারা দুইবার হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম উনাকে সরাসরি দেখেছি এবং তিনি আমাকে সালামও জানিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
৯)     আমারই পবিত্রতম কোল মুবারক-এ মাথা মুবারক রেখে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্রতম বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।এছাড়া আরো অসংখ্য অগণিত উনার পবিত্রতম মর্যাদা-মর্তবা মুবারকের বিষয় রয়েছে যেমন-
১০) উনার পবিত্রতম হুজরা শরীফ উনার মধ্যেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম রওযা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
১১) উনার পবিত্রতার প্রতি লক্ষ্য রেখে মহান আল্লাহ পাক তিনি তায়াম্মুমের বিধান নাযিল করেন।
১২) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে তোমরা তোমাদের পবিত্র দ্বীন শিক্ষা করবে।
১৩) হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে সর্বপ্রকার মাসয়ালা-মাসায়িল ও পবিত্র খিলাফত পরিচালনার পরামর্শ গ্রহণ করেছেন।
১৪) উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মিসওয়াক মুবারক চিবিয়ে নরম করে দিতেন এবং একই পাত্র মুবারক-এ গোসল মুবারকও করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
১৫) তিনি পেয়ালা মুবারক উনার যে অংশে ঠোঁট মুবারক লাগিয়ে পানি পান করতেন পেয়ালা মুবারক উনার ঠিক ওই অংশ মুবারক-এ ঠোঁট মুবারক লাগিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও পানি পান করতেন। সুবহানাল্লাহ!
এরকম আরো হাজারো, লক্ষ-কোটি তথা সীমাহীন খুছূছিয়ত বা গুণ-বৈশিষ্ট্য মুবারক রয়েছে তা মানুষের বর্ণনা, কল্পনা ও চিন্তাশক্তির সীমাহীন ঊর্ধ্বে। 

পবিত্র আযান উনার সূচনা, পবিত্র আযান উনার মাহাত্ম্য এবং মুয়াজ্জিন উনার উত্তর দান
যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে হিজরত মুবারক করলেন তখন উনারা পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত পবিত্র ছলাত বা পবিত্র নামায আদায় করতে লাগলেন।
স্মরণীয় যে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, দু’রাকাআত নামায, ফজর ও আছর যা পবিত্র আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের প্রারম্ভেই ফরয করা হয়েছিলো। এরপর পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ উনার মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হয়। কিন্তু তখন পবিত্র মাগরিব নামায ছাড়া অপরাপর ওয়াক্তের নামায ছিলো দু’রাকআত করে। পবিত্র হিজরত শরীফ উনার পর মুসাফির উনাদের জন্য দু’রাকআতই রয়ে গেলো আর মুক্বীম উনাদের জন্য পবিত্র যুহর, পবিত্র আছর ও পবিত্র ইশা উনাদের ফরয নামায চার রাকআত করে দেয়া হলো। (বুখারী শরীফ, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
قال حضرت ابن إسحاق رحمة الله عليه فلما اطمأن رسول الله صلى الله عليه وسلم بالمدينة واجتمع إليه إخوانه من المهاجرين واجتمع كبائر  الانصار استحكم أمر الاسلام، فقامت الصلاة وفرضت الزكاة والصيام، وقامت الحدود وفرض الحلال والحرام وتبوأ الاسلام بين أظهرهم وكان هذا الحي من الانصار هم الذين تبوؤا الدار والايمان
অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মদীনা শরীফ তাশরীফ মুবারক নিলেন, হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও বিশিষ্ট হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যখন উনার পার্শ্ব মুবারকে সমবেত হলেন, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম যখন দৃঢ়তা-স্থিরতা হলো তখন পবিত্র ছলাত বা পবিত্র নামায প্রতিষ্ঠিত হলো। পরবর্তীতে পবিত্র ছওম ও পবিত্র যাকাত ফরয করা হলো। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার হুদূদ তথা দ-বিধি প্রবর্তিত হলো। হালাল-হারামের বিধান জারি করা হলো এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাদের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো। আর হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা ছিলেন সেই সম্মানিত গোত্র যাঁরা পূর্ব থেকেই পবিত্র মদীনা শরীফ শহরে বসবাস করতেন এবং পবিত্র ঈমান আনয়ন করেছিলেন।
وقد كان رسول الله صلى الله عليه وسلم حين قدمها إنما يجتمع الناس إليه للصلاة لحين مواقيتها بغير دعوة، فهم رسول الله صلى الله عليه وسلم أن يجعل بوقا كبوق يهود الذي يدعون به لصلاتهم، ثم كرهه، ثم أمر بالناقوس فنحت ليضرب به للمسلمين للصلاة، فبينا هم على ذلك رأى حضرت عبد الله بن زيد بن ثعلبة بن عبد ربه رضى الله تعالى عنه أخو بلحارث بن الخزرج، النداء، فأتى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: يا رسول الله صلى الله عليه وسلم إنه طاف بي هذه الليلة طائف،
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র হিজরত মুবারক করে তাশরীফ মুবারক রাখলেন তখন কোনোরকম আহবান ছাড়াই পবিত্র ছলাত বা পবিত্র নামায উনার সময় হলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র ছলাত বা পবিত্র নামায উনার নির্ধারিত সময়ে বিনা ডাকে বা আহবানে উনার নিকট এসে সমবেত হতেন। এ সময় অনেকে পরমর্শ দিলেন ইহুদীদের মতো শিঙ্গা বা বিউগলের মতো কিছু একটা বানানোর। যা দিয়ে ইহুদীরা তাদের ধর্মের লোকজনকে তাদের উপাসানার দিকে ডাকে। পরে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা অপছন্দ করলেন। এরপর নাকূস তৈরির আলোচনা হলো যাতে তার আওয়াজ দ্বারা মুসলমান উনাদেরকে পবিত্র নামায উনার জন্য ডাকা যায়। যখন উনারা এসব চিন্তা-ভাবনা করছিলেন এমন সময় বিল হারিছ ইবনে খাযরাজের অন্যতম সদস্য হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়িদ ইবনে ছা’লাবা ইবনে আবদ রাব্বিহী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বপ্ন যোগে পবিত্র ছলাত উনার জন্য আহবান পদ্ধতি দেখতে পান। অতঃপর তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হয়ে বলতে লাগলেন, ইয়া রসূল্লাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আজ রাত্রে আমার নিকট একজন আগন্তুক আগমন করেন।
مر بي رجل عليه ثوبان أخضران يحمل ناقوسا في يده، فقلت يا حضرت عبد الله رضى الله تعالى عنه أتبيع هذا الناقوس ؟ فقال: وما تصنع به ؟ قال قلت ندعو به إلى الصلاة، قال ألا أدلك على خير من ذلك ؟ قلت وما هو ؟ قال تقول، الله أكبر الله أكبر، الله أكبر الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن محمدا رسول الله، أشهد أن محمدا رسول الله، حي على الصلاة، حي على الصلاة، حي على الفلاح، حي على الفلاح، الله أكبر الله أكبر، لا إله إلا الله.
লোকটির গায়ে দুটি সবুজ বস্ত্র। উনার হাতে ছিলো নাকূস। আমি উনাকে বললাম, হে মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা! আপনি কি এ নাকূস বা ঘণ্টাটি বিক্রি করবেন? লোকটি বললেন, এটা দিয়ে আপনি কি করবেন? আমি বললাম, আমরা এটা দ্বারা পবিত্র নামায উনার জন্য মানুষকে আহবান জানাবো। সে ব্যক্তি বললেন, আমি কি আপনাকে এর চাইতে উত্তম পন্থা বলে দিবো না? আমি বললাম, তা কি? তিনি বললেন, (তা এই যে) আপনি বলবেন,
الله أكبر الله أكبر، الله أكبر الله أگبر،
أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن لا إله إلا الله،
أشهد أن محمدا رسول الله،
أشهد أن محمدا رسول الله،
حي على الصلاة، حي على الصلاة،
حي على الفلاح، حي على الفلاح،
 الله أكبر الله أكبر، لا إله إلا الله.
فلما أخبر بها رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: " إنها لرؤيا حق إن شاء الله، فقم مع حضرت بلال رضى الله تعالى عنه فألقها عليه، فليؤذن بها فانه أندى  صوتا منك " فلما أذن بها حضرت بلال رضى الله تعالى عنه سمعه حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام وهو في بيته، فخرج إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو يجر رداءه وهو يقول: يا نبي الله صلى الله عليه وسلم والذي بعثك بالحق لقد رأيت مثل الذي رأى. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم فلله الحمد [على ذلك].
তিনি যখন এ সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবহিত করলেন, তখন তিনি বললেন: ইনশাআল্লাহ! এটা হচ্ছে সত্যস্বপ্ন। আপনি হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পার্শ্বে দাঁড়ান এবং পবিত্র আযান উনার বাক্যগুলো শিখিয়ে দিনযাতে করে তিনি এ বাক্য মুবারকগুলো দ্বারা পবিত্র আযান দেন। কারণ, তিনি আপনার তুলনায় উচ্চ কন্ঠধারী। তারপর হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ বাক্যগুলো দ্বারা পবিত্র আযান দিলে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উনার হুজরা শরীফ থেকেই তা শুনতে পান। তিনি চাদর টানতে টানতে ঘর থেকে বের হয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ছুটে এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সেই পবিত্র রব উনার ক্বসম! যিনি আপনাকে হক্ব ও সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, তিনি যা স্বপ্নে দেখেছেন, অনুরূপ আমিও স্বপ্নে দেখেছি। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সমস্ত প্রশংসা মহান আরøাহ পাক উনার জন্য।
قال حضرت ابن إسحاق رحمة الله عليه : فحدثني بهذا الحديث حضرت محمد بن إبراهيم بن الحارث رحمة الله عليه ، عن حضرت محمد بن عبد الله بن زيد بن ثعلبة بن عبد ربه رحمة الله عليه عن أبيه. وقد روى هذا الحديث أبو داود والترمذي وابن ماجه وابن خزيمة من طرق عن حضرت محمد بن إسحاق رحمة الله عليه به، وصححه الترمذي وابن خزيمة وغيرهما. وعند أبي داود أنه علمه الاقامة قال: ثم تقول إذا أقمت الصلاة: الله أكبر الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن محمدا رسول الله حي على الصلاة، حي على الفلاح، قد قامت الصلاة قد قامت الصلاة، الله أكبر الله أكبر، لا إله إلا الله.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম ইবনে হারিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার থেকে হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে যায়িদ ইবনে ছা’লাবা ইবনে আবদ রাব্বিহী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা উনার সূত্রে আমার নিকট এই পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন। আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ এবং ইবনে খুযায়মা গ্রন্থকার উনারা বিভিন্ন সূত্রে পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন এবং তিরমিযী, ইবনে খুযাইমা প্রমূখ পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রন্থকার পবিত্র হাদীছ শরীফটিকে ছহীহ তথা বিশুদ্ধ ও নির্ভুল বলে মত প্রকাশ করেছেন। হযরত ইমাম আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে উনাকে ইক্বামতের বাক্য মুবারকগুলোও বলা হয়েছে। তিনি বললেন, ইকামতে বলবেন,
الله أكبر الله أكبر،  (দুই বার)
 أشهد أن لا إله إلا الله، (দুই বার)
 أشهد أن محمدا رسول الله (দুই বার)
حي على الصلاة، (দুই বার)
حي على الفلاح،(দুই বার) 
قد قامت الصلاة قد قامت الصلاة،
الله أكبر الله أكبر،
لا إله إلا الله.
এ সম্পর্কে আরো বর্ণিত রয়েছে,
قال حضرت ابن هشام رحمة الله عليه: وذكر حضرت  ابن جريج  رحمة الله عليه. قال: قال لي حضرت عطاء رحمة الله عليه: سمعت حضرت عبيد بن عمير رحمة الله عليه يقول: ائتمر النبي صلى الله عليه وسلم وأصحابه بالناقوس للاجتماع للصلاة، فبينا حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام يريد أن يشتري خشبتين للناقوس إذ رأى حضرت عمر عليه السلام في المنام لا تجعلوا الناقوس بل أذنوا للصلاة.
অর্থ: “হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ইবনে জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেছেন, হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত উবাইদ ইবনে উমাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলতে শুনেছি, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নামাযে সমবেত হওয়ার ব্যাপারে নাকূস বা ঘণ্টা ব্যবহারের পরামর্শ করেন। এ সময় হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি নাকূসের জন্য দুটি কাষ্ট ক্রয়েরও ইচ্ছা করেন। এ সময় এক রাত্রিতে হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি স্বপ্নে দেখলেন (কেউ যেনো উনাকে বলছেন) নাকূস বাজাবেন না বরং পবিত্র ছলাত উনার জন্যে আযান দিন। 
فذهب حضرت عمر عليه السلام إلى النبي صلى الله عليه وسلم ليخبره بما رأى وقد جاء النبي صلى الله عليه وسلم الوحي بذلك فما راع عمر إلا بلال يؤذن: فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم حين أخبره بذلك "قد سبقك بذلك الوحي" وهذا يدل على أنه قد جاء الوحي بتقرير ما رآه حضرت عبد الله بن زيد بن عبد ربه رضى الله تعالى عنه كما صرح به بعضهم.
তখন হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে স্বপ্নের কথা অবহিত করার জন্য খিদমত মুবারকে রওয়ানা দেন। এ সময় আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এ ব্যাপারে পবিত্র ওহী মুবারক নাযিল হয়। এ সময় ফারূকে আ’যম হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আযান শুনে হতচকিত হলেন। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এ সম্পর্কে ইতোমধ্যেই পবিত্র ওহী মুবারক অবতীর্ণ হয়েছে। (কাজেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবদ রাব্বিহী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বপ্নে যা দেখেছেন তার সমর্থনে পবিত্র ওহী মুবারক নাযিল হয়েছিলো।) সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ২য় খ-, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ, ২৩৩ পৃষ্ঠা)
আরো বর্ণিত রয়েছে,
قد روى ابن ماجه هذا الحديث: عن حضرت أبي عبيد محمد بن عبيد بن ميمون رحمة الله عليه  عن حضرت محمد بن سلمة الحراني رحمة الله عليه عن حضرت ابن إسحاق رحمة الله عليه كما تقدم.
ثم قال: قال حضرت أبو عبيد رحمة الله عليه: وأخبرني حضرت أبو بكر الحكمي رحمة الله عليه  أن حضرت عبد الله بن زيد الانصاري رضى الله تعالى عنه قال في ذلك: الحمد لله ذي الجلال وذي الاكرام حمدا على الاذان كبيرا إذ أتاني به البشير من الله فأكرم به لدي بشيرا في ليال والى بهن ثلاث كلما جاء زادني توقيرا
অর্থ: “হযরত ইমাম ইবনে মাযাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হযরত আবু উবাইদ মুহম্মদ ইবনে উবাইদ ইবনে মাইমুন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত মুহম্মদ ইবনে সালামা আল হারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে পূর্বোক্তের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। এরপর তিনি বলেন, হযরত আবু উবাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন যে, হযরত আবু বকর আল হাকামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাকে জানান যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়িদ আল আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি আযানরূপ নিয়ামতের জন্য মহান আল্লাহ পাক যুল-জালাল ওয়াল ইকরাম উনার বেশুমার প্রশংসা, শুকরিয়া করি। হঠাৎ আমার নিকট আগমন করেন মহান আল্লাহ পাক উনার সুসংবাদদাতা, যিনি আমার নিকট সুসংবাদ নিয়ে আসেন। তিনি কতই না উত্তম সুসংবাদদাতা। একের পর এক তিন রজনী তিনি আগমন করেন সে সুসংবাদ নিয়ে যখনই তিনি আগমন করেছেন তখনই আমার সুমহান মর্যাদাকে প্রকাশ করেছেন।” (সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ১ম খ- ৪০৪ পৃষ্ঠা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ২৩২ পৃষ্ঠা)
قال حضرت الزهري رحمة الله عليه : وزاد بلال في نداء صلاة الغداة، الصلاة خير من النوم مرتين، فأقرها رسول الله صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র ফযর উনার নামাযের আযানে হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যোগ করেন আছ ছলাতু খাইরুম মিনান নাওম। (ঘুম থেকে নামায উত্তম) দু’বার। আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা অনুমোদন দিলেন।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩৩৩ পৃষ্ঠা)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
حَدَّثَنَا حضرت مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْر رحمة الله عليه حَدَّثَنَا حضرت عَبْدَةُ رحمة الله عليه عَنْ حضرت طَلْحَةَ بْنِ يَحْيَى رحمة الله عليه عَنْ عَمِّهِ قَالَ كُنْتُ عِنْدَ حضرت مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِى سُفْيَانَ رضى الله تعالى عنه فَجَاءَهُ الْمُؤَذِّنُ يَدْعُوهُ إِلَى الصَّلاَةِ فَقَالَ مُعَاوِيَةُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ. الْمُؤَذِّنُونَ أَطْوَلُ النَّاسِ أَعْنَاقًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
অর্থ: ইমাম হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে নুমায়ীর রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন- আমার নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত আবদা রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি হযরত ত্বলহা ইবনে ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি উনার চাচা থেকে। তিনি বলেন, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি ক্বিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনগণ র্দীঘ ঘাড়বিশিষ্ট হবেন।” (মুসলিম শরীফ : ১ম জিলদ ১৬৭ পৃষ্ঠা)
অর্থাৎ মুয়াজ্জিন উনাদের ঘাড় এতো উঁচ্চ হবে যে, সকলের উপর দিয়ে উনাদেরকে দেখা যাবে বা উনাদের সম্মান অধিক হবে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো এসেছে,
عن حضرت أبي هريرة رضى الله تعالى عنه أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال :إذا نودي للصلاة أدبر الشيطان له ضراط حتى لا يسمع النداء فإذا قضي النداء أقبل حتى إذا ثوب بالصلاة أدبر حتى إذا قضي التثويب أقبل حتى يخطر بين المرء ونفسه يقول أذكر كذا أذكر كذا لما لم يكن يذكر حتى يظل الرجل إن يدري كم صلى.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যখন পবিত্র ছলাত বা নামাযের জন্য আযান দেয়া হতে থাকে তখন শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পলায়ন করতে থাকে এবং এমন কাজকর্ম করতে থাকে যাতে সে পবিত্র আযান না শুনে। অতপর যখন পবিত্র আযান শেষ হয়ে যায় তখন সে ফিরে আসে। আবার যখন ইক্বামত বলা হয় তখন সে পুনরায় পিঠ ফিরে পালাতে থাকে এবং যখন পবিত্র ইক্বামত শেষ হয়ে যায় পুনরায় সে ফিরে আসে এবং খটকা ঢালতে থাকে মুসলমান উনাদের অন্তরে। সে বলে অমুক বিষয় স্মরণ করো, অমুক বিষয় স্মরণ করো, যে সব বিষয় মুসলমান উনাদের মনে ছিলো না। অবশেষে মুসলমান এরূপ হয়ে যায় যে সে বলতে পারে না কত রাকয়াত নামায পড়েছে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
অর্থাৎ শয়তান মুসলমান তথা মানুষের অন্তরে বসে দায়িমীভাবে ওয়াসওয়াসা দেয়, তবে যখন বান্দা যিকির করে তখন শয়তান পালিয়ে যায় আর যখন মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে গাফিল হয় তখন আবার শয়তান এসে ওয়াসওয়াসা দেয়া শুরু করে দেয়।

0 Comments: