হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৯২৫-১০৬৯) (ক)


৯২৫-১০৬৯
হযরত মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন এবং ইহুদীদের সাথে চুক্তি

হযরত ইবনে জারীর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা মতে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ইহুদীদের ৩টি গোত্র বসবাস করতো। ১। বনু কায়নুকা, ২। বনু নাযীর এবং ৩। বনু কুরায়যা। আনছারগণ উনাদের পূর্বে বুখতে নসর-এর শাসনামলে ইহুদীরা হিজাযে আগমন করে। বুখতে নসর পবিত্র নগরী তথা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ধ্বংস সাধণ করে। সায়লুল আরিম তথা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এই পবিত্র মদীনা শরীফ উনাকে হিফাযতের লক্ষে সর্বগ্রাসী প্লাবনে লোকেরা এদিক-সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে। পরবর্তীতে আউস ও খাযরাজ গোত্রের লোকগণ পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে আগমন করে বসবাস করতে থাকেন। ইহুদীরাও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ বসবাস করতে থাকে। আওস ও খাযরাজগণ ইহুদীদের সাথে মৈত্রী ও সখ্যতা গড়ে তোলেন এবং তাদেরকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেন। কারণ উনাদের দৃষ্টিতে ইহুদীরা হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে ওহীর ইলমের অধিকারী বলে নিজেকে শ্রেষ্ঠত্বের দাবী করতো। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়ে আউস ও খাযরাজ উনাদেরকে হাক্বীক্বী হিদায়েত দানে ধন্য করেন। হিংসা, বিদ্বেষ, বিদ্রোহ গ্রহণ এবং সত্যকে অস্বীকার করার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি এসব দাম্ভিক ইহুদীদেরকে লাঞ্ছিত, অপমানিত ও ধ্বংস করে দেন।
হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হুজরা মুবারকে হযরত মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে মৈত্রী স্থাপন করেন।
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه قال: كتب رسول الله كتابا بين المهاجرين والأنصار، وادع فيه يهود وعاهدهم، وأقرهم على دينهم وأموالهم، وشرط لهم واشترط عليهم: بسم الله الرحمن الرحيم. هذا كتاب من حضرت محمد النبي صلى الله عليه و سلم بين المؤمنين والمسلمين من قريش ويثرب، ومن تبعهم فلحق بهم وجاهد معهم: أنهم امة واحدة من دون الناس: المهاجرون من قريش على ربعتهم يتعاقلون بينهم وهم يفدون عانيهم بالمعروف والقسط بين المؤمنين. وبنو عوف على ربعتهم يتعاقلون معاقلهم الاولى، كل طائفة تفدي عانيها بالمعروف والقسط بين المؤمنين.
অর্থ: হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র মুবারক লিখে দেন এবং এতে ইহুদীদেরকেও এ চুক্তির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ চুক্তিতে তাদের ধর্ম এবং ধন সম্পদের নিরাপত্তা প্রদান করা হয়, তাদের অধিকারসমূহের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয় এবং তাদের উপর কতিপয় শর্ত শারায়েত আরোপ করা হয়। চুক্তিপত্র মুবারক ছিলো এরূপ-
পরম করুনাময় ও দয়ালু মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারকে শুরু করছি।”
এটি হচ্ছে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে মুবারক লিপি। কুরাইশ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মু’মিন ও মুসলমান উনাদের মধ্যে এবং যাঁরা উনাদের অধীন তাদের সাথে শামিল হবে বা উনাদের সাথে জিহাদে মিলে মিশে কাজ করবেন।
 ১। অন্যদের মুকাবিলায় উনারা এক উম্মত হিসেবে গণ্য হবে।
২। কুরাইশ মুহাজিরগণ উনাদের কর্তৃত্ব বহাল থাকবে। উনারা রীতি অনুযায়ী নিজেদের রক্তপন পরিশোধ করবেন এবং প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ইনসাফের ভিত্তিতে বন্দীদের মুক্তিপন পরিশোধ করবেন।
৩। বনু আওফ উনাদের কর্তৃত্বে বহাল থাকবেন। উনারা রীতি ও বিধি মতো দিয়াত পরিশোধ করবেন এবং প্রত্যেক দল রীতি অনুযায়ী ইনসাফের ভিত্তিতে মু’মীন উনাদেরকে ফিদিয়া পরিশোধ করে তাদের বন্দীদের মুক্ত করবেন।
وبنو ساعدة على ربعتهم يتعاقلون معاقلهم الاولى، وكل طائفة منهم تفدي عانيها بالمعروف والقسط بين المؤمنين. وبنو الحارث على ربعتهم يتعاقلون معاقلهم الاولى، وكل طائفة تفدي عانيها بالمعروف والقسط بين المؤمنين. وبنو جشم على ربعتهم يتعاقلون معاقلهم الاولى، وكل طائفة منهم تفدي عانيها بالمعروف والقسط بين المؤمنين. وبنو النجار على ربعتهم يتعاقلون معاقلهم الاولى، وكل طائفة منهم تفدي عانيها بالمعروف والقسط بين المؤمنين. وبنو عمرو بن عوف على ربعتهم يتعاقلون معاقلهم الاولى، وكل طائفة تفدي عانيها بالمعروف والقسط بين المؤمنين.
৪। আর বনু সায়ীদা উনাদের পূর্ব প্রথানুযায়ী উনাদের রক্তপণ পরিশোধ করবেন এবং প্রত্যেক সম্প্রদায় উনাদের বন্দীদের মুক্তিপণ পরিশোধ করবেন যাতে মু’মীন উনাদের মধ্যকার পারস্পরিক ন্যায়নুগ ও ভারসাম্যপূর্ণ হয়।
৫। বনু হারিছ উনাদের পূর্ব প্রথানুযায়ী রক্তপণ পরিশোধ করবেন এবং প্রত্যেক সম্প্রদায় রীতি অনুযায়ী ইনসাফের ভিত্তিতে মু’মিন উনাদের ফিদিয়া পরিশোধ করে উনাদের বন্দীদের মুক্তি করবেন।
৬। বনু জুশাম উনাদের পূর্ণ প্রথানুযায়ী রক্তপণ পরিশোধ করবেন এবং প্রত্যেক সম্প্রদায় রীতি অনুযায়ী ইনসাফের ভিত্তিতে মু’মিন উনাদের ফিদিয়া পরিশোধ করে উনাদের বন্দীদের মুক্ত করবেন।
৭। বনু নাজ্জার উনাদের পূর্ব প্রথানুযায়ী উনাদের রক্তপণ পরিশোধ করবেন এবং প্রত্যেক সম্প্রদায় রীতি অনুযায়ী ইনসাফের ভিত্তিতে মু’মিন উনাদের ফিদিয়া পরিশোধ করে উনাদের বন্দীদের মুক্ত করবেন।
৮। বনু আমর ইবনে আওফ উনাদের পূর্ব প্রথানুযায়ী উনাদের রক্তপণ পরিশোধ করবেন এবং প্রত্যেক সম্প্রদায় রীতি অনুযায়ী ইনসাফের ভিত্তিতে মু’মিন উনাদের ফিদিয়া পরিশোধ করে উনাদের বন্দীদের মুক্ত করবেন।
وبنو النبيت على ربعتهم يتعاقلون معاقلهم الاولى، وكل طائفة تفدي عانيها بالمعروف والقسط بين المؤمنين. وبنو الأوس على ربعتهم يتعاقلون معاقلهم الاولى، وكل طائفة منهم تفدي عانيها بالمعروف والقسط بين المؤمنين. وإن المؤمنين لا يتركون مفرحا بينهم أن يعطوه بالمعروف في فداء أو عقل. وأن لا يحالف مؤمن مولى مؤمن دونه.
৯। বনু নাবীত উনাদের পূর্ণ প্রথাুযায়ী রক্তপণ পরিশোধ করবেন এবং প্রত্যেক সম্প্রদায় উনাদের রীতি অনুযায়ী ইনসাফের ভিত্তিতে মু’মীন উনাদেরকে ফিদিয়া পরিশোধ করে উনাদের বন্দীদের মুক্ত করবেন।
১০। বনু আওস উনাদের পূর্ব প্রথানুযায়ী উনাদের রক্তপণসমূহ পরিশোধ করবেন এবং উনাদের প্রত্যেক সম্প্রদায় রীতি অনুযায়ী ইনসাফের ভিত্তিতে মু’মিন উনাদেরকে ফিদিয়া পরিশোধ করে উনাদের বন্দীদের মুক্ত করবেন।
১১। কোনো মুসলমান যেনো ঋণভারে জর্জরিত অভাবগ্রস্ত লোকজনকে আশ্রয়হীন রাখবে না যাতে করে মুক্তিপণ ও রক্তপণ পরিশোধ করতে পারে।
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, المفرح বলে ঋণভারে জর্জরিত এবং পরিবারের লোকসংখ্যার জন্যে অভাবে নুয়ে পড়া লোককে বুঝায়।
কবি বলেন,
اذا انت لم تبرح تودى امانة- و تحمل اخرى افرحتك الودائع-
অর্থাৎ যখন আপনি সর্বদা আমানত আদায় করতে থাকবেন এবং আরো আমানতের দায়িত্ব কাঁধে নিবেন, তখন আমানতসমূহের দায়িত্ব আপনার কাঁধকে নুইয়ে দিবে।
১২। কোনো মু’মিন ব্যক্তি অন্য কোনো চুক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুমতি না নিয়ে অন্য কারো সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না।
وإن المؤمنين المتقين على من بغى منهم أو ابتغى دسيعة ظلم أو اثم أو عدوان أو فساد بين المؤمنين، وإن أيديهم عليه جميعا ولو كان ولد أحدهم. ولا يقتل مؤمن مؤمنا في كافر. ولا ينصر كافرا على مؤمن. وإن ذمة الله واحدة يجير عليهم أدناهم. وإن المؤمنين بعضهم موالي بعض دون الناس. وإنه من تبعنا من يهود فإن له النصر والاسوة غير مظلومين ولا متناصرين عليهم. وإن سلم المؤمنين واحدة، لا يسالم مؤمن دون مؤمن في قتال في سبيل الله الا على سواء وعدل بينهم. " وإن كل غازية معنا يعقب بعضها بعضا،
১৩। মু’মিন মুত্তাকী উনারা ঐক্যবদ্ধভাবে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়বেন উনাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অন্যায় করবে বা গুরুতর অবিচার, পাপ, সীমালঙ্ঘন বা মুসলমান উনাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে তৎপর হবে। উনাদের সকলের সমবেত হস্ত তার বিরুদ্ধে উত্থিত হবে যদিও তাদের সে কারো আপন পুত্রও হয়।
১৪। কোনো মু’মিন ব্যক্তি কোনো কাফিরের জন্যে কোনো মু’মিন ব্যক্তিকে কতল করবে না বা কোনো মু’মিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো কাফিরকে সাহায্য করা যাবে না।
১৫। নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ পাক উনার জিম্মা বা অভয় অভিন্ন। উনাদের যে কোনো সাধারণ ব্যক্তি অভয় দিয়া সকলকে সে চুক্তির মর্যাদা রক্ষার দায়িত্বে আবদ্ধ করতে পারবে। আর মু’মিনগণ উনারা অন্যান্যদের মুকাবিলায় পরস্পর ভাই ভাই।
১৬। আর ইহুদীদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমাদের আনুগত্য করবে সেও সাহায্য ও সমতার হক্বদার বলে গণ্য হবে। তাদের প্রতি জুলুমও হবে না আর তাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করাও চলবে না।
১৭। আর মুসলমান উনাদের সন্ধি অভিন্ন সন্ধি। মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদে কোনো মু’মিন ব্যক্তি অপর মু’মিন ভাই উনাকে বাদ দিয়ে শত্রুর সাথে সন্ধি করবে না। তা সমভাবে সকলের জন্য ইনসাফ ভিত্তিক হতে হবে।
১৮। আমাদের পক্ষের শক্তিরূপে যে সব যোদ্ধা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধে শরীক হবে তারা একে অন্যের সহায়তা করবে।
وإن المؤمنين يبئ بعضهم على بعض بما نال دماءهم في سبيل الله. وإن المؤمنين المتقين على أحسن هدي وأقومه. وإنه لا يجير مشرك مالا لقريش ولا نفسا، ولا يحول دونه على مؤمن. وإنه من اعتبط مؤمنا قتلا عن بينة فانه قود به، إلا أن يرضى ولي المقتول، وإن المؤمنين عليه كافة، ولا يحل لهم إلا قيام عليه. وإنه لا يحل لمؤمن أقر بما في هذه الصحيفة وآمن بالله واليوم الآخر: أن ينصر محدثا أو أن يؤويه. وإن من نصره أو آواه فعليه لعنة الله وغضبه يوم القيامة، ولا يؤخذ منه صرف ولا عدل.
১৯। মু’মিনগণ মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় নিহতদেরকে পরস্পরে সহায়তা করবে।
২০। আর এতে কোনো বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, মু’মিন মুত্তাক্বিগণ উনারা সত্য সরল ও সঠিক হিদায়েতের উপর রয়েছেন।
২১। আর কোনো মুশরিক বা পৌত্তলিক ব্যক্তি কোনো কুরাইশ উনাদের সম্পদ বা জানের আশ্রয়দাতা হবে না এবং কোনো মু’মিন ব্যক্তিকে এ ব্যাপারে বাধা দিতে পারবে না।
২২। আর যে ব্যক্তি কোনো মু’মিন ব্যক্তিকে শহীদ করবে আর সাক্ষ্য প্রমাণে তা প্রমাণিতও হয়ে যাবে, তার উপর থেকে কিসাস গ্রহণ করা হবে। হত্যার পরিবর্তে তাকে হত্যা করা হবে। হ্যাঁ যদি শহীদ ব্যক্তি উনার উত্তরাধিকারী রক্তপণ নিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে রাজি হয় আর মু’মিনগণ উনাদের এতে সায় থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। আর এছাড়া তার কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই।
২৩। আর যে মু’মিন ব্যক্তি এই সনদের অন্তর্ভুক্ত বিষয়ে ঈমান রাখে এবং তা স্বীকার করে নিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক ও শেষ দিবসের প্রতি যারা ঈমান পোষণ করেন উনাদের জন্য কোনো নতুন ফিতনা সৃষ্টিকারীকে সাহায্য করা বা তাকে আশ্রয় দেয়া বৈধ হবে না। যে ব্যক্তি এমন লোককে সাহায্য সহযোগীতা করবে বা তাকে আশ্রয় দিবে ক্বিয়ামতের দিন তার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত। মহান আল্লাহ পাক উনার গযব তার উপর আপতিত হবে। তার থেকে কোনো ফিদিয়া (মুক্তিপন) বা বদলা গ্রহণ করা হবে না।
وإنكم مهما اختلفتم فيه من شئ فإن مرده إلى الله عز وجل وإلى حضرت محمد صلى الله علىه و سلم. وإن اليهود ينفقون مع المؤمنين ما داموا محاربين: وإن يهود بني عوف امة مع المؤمنين لليهود دينهم وللمسلمين دينهم: مواليهم وأنفسهم، إلا من ظلم وأثم، فانه لا يوتغ الا نفسه وأهل بيته. وإن ليهود بني النجار مثل ما ليهود بني عوف. وإن ليهود بني الحارث مثل ما ليهود بني عوف. وإن ليهود بني ساعدة مثل ما ليهود بني عوف. وإن ليهود بني جشم مثل ما ليهود بني عوف.
২৪। আর যখন তোমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ উপস্থিত হয় তখন মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
২৫। আর ইহুদীরা যতদিন পর্যন্ত মুসলমান উনাদের সাথে মিলেমিশে যুদ্ধ করবে, ততদিন তারা মুসলমান উনাদের সাথে ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
২৬। বনু আওফের ইহুদীরা মু’মিন উনাদের সাথে একই উম্মতরূপে গণ্য হবে। ইহুদীদের জন্য তাদের ধর্ম, মুসলমান উনাদের জন্য উনাদের ধর্ম দ্বীন ইসলাম। তাদের গোলাম ও তারা নিজেরা নিরাপদ থাকবে। তবে যে ব্যক্তি জুলুম বা অপরাধ করবে, সে তার নিজেকে এবং নিজ গৃহবাসীদেরকে ছাড়া অন্য কাউকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।
২৭। আর বনু নাজ্জার গোত্রের ইহুদীরাও বনু আওফের ইহুদীদের মতো অধিকার পাবে।
২৮। বনু হারিছের ইহুদীরাও বনু আওফের ইহুদীদের মতো অধিকার লাভ করবে।
২৯। বনু সায়ীদা গোত্রের ইহুদীরাও বনু আওফের ইহুদীদের সমান অধিকার পাবে।
৩০। বনু জুশামের ইহুদীদের জন্যেও বনু আওফের ইহুদীদের মতো অধিকার থাকবে।
وإن ليهود بني الأوس مثل ما ليهود بني عوف. وإن ليهود بني ثعلبة مثل ما ليهود بني عوف، الا من ظلم وأثم فانه لا يوتغ الا نفسه وأهل بيته. وإن جفنة بطن من ثعلبة كأنفسهم. وإن موالي ثعلبة كأنفسهم. وان لبني الشطيبة مثل ما ليهود بني عوف. و ان البر دون الاثم وإن بطانة يهود كأنفسهم. وإنه لا يخرج منهم أحد الا باذن محمد صلى الله عليه و سلم. وإنه لا ينحجز عن ثار جرح. وإنه من فتك فبنفسه فتك وأهل بيته، الا من ظلم و ان الله على ابرهذا.
৩১। এবং বনু আওফের ইহুদীদের জন্যেও বনু আওফের ইহুদীদের মতো অধিকার থাকবে।
৩২। বনু ছা’লার ইহুদীদের জন্যে বনু আওফের ইহুদীদের মতো অধিকার থাকবে। তবে যে জুলুম বা অপরাধ পাপাচার করবে সে কেবল নিজেকেই ধ্বংস করলো। নিজের ও নিজের পরিজনের ক্ষতি সাধন করলো।
৩৩। আর নিঃসন্দেহে জাফনা গোত্রও ছা’লাবার শাখা গোত্র, সুতরাং তারাও তাদের অর্থাৎ ছা’লাবাদের মতো অধিকার ভোগ করবে।
৩৪। আর বনু শুত্বাইবাহ লোকজনের জন্যেও বনু আওফের ইহুদীদের মতো অধিকার থাকবে বিশ্বস্ততায়, বিশ্বাস ভঙ্গে নয়।
৩৫। আর ছা’লাবাদের মাওয়ালীরাও তাদের মতো অধিকার লাভ করবে।
৩৬। এবং ইহুদী শাখা গোত্রগুলোও তাদের মূল গোত্রের লোকদের সমান অধিকার লাভ করবে।
৩৭। তাদের মধ্যকার কেউই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুমতি ব্যতিরেকে যুদ্ধার্থে বহির্গত হতে পারবে না।
৩৮। অতঃপর যখমের প্রতিশোধ গ্রহনের পথে কোনো বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করা হবে না। যে ব্যক্তি রক্তপাত করবে সে নিজে ও নিজ পরিজনদের ধ্বংস ডেকে আনবে। অবশ্যই যে অত্যাচারিত হয়েছে এবং নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনাকে সে পাবে তার সাথে।
وإن على اليهود نفقتهم، وعلى المسلمين نفقتهم. وإن بينهم النصر على من حارب أهل هذه الصحيفة. وإن بينهم النصح والنصيحة والبر، دون الإثم. وإنه لم يأثم امرؤ بحليفه وإن النصر للمظلوم. وإن اليهود ينفقون مع المؤمنين ما داموا محاربين. وإن يثرب حرام جوفها لأهل هذه الصحيفة. وإن الجار كالنفس غير مضار ولا آثم. وإنه لا تجار حرمة الا باذن أهلها.
৩৯। ইহুদীদের উপর তাদের নিজেদের ব্যয়ভার বর্তাবে এবং মুসলমানগণ উনাদের উপর তাদের নিজেদের ব্যায়ভার বর্তাবে।
৪০। যে কেউ এই চুক্তিনামা গ্রহণকারী কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবে তার বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য করবে এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ ও মঙ্গল কামনার সম্পর্ক থাকবে। এক পক্ষ অপর পক্ষকে সুপরামর্শ দেবে। বিশ্বস্ততা রক্ষা করবে, বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না।
৪১। আর কোনো পক্ষ তার মিত্র পক্ষের অপকর্মের জন্যে দায়ি হবে না আর অত্যাচারিতই সাহায্যের হক্বদার বলে গন্য হবে।
৪২। আর ইহুদীরা যতক্ষন পর্যন্ত ঈমানদারগণ উনাদের সাথী ও সহযোদ্ধারূপে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারাও যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ করবে।
৪৩। আর পবিত্র মদীনা শরীফ উনার উপত্যকা এই চুক্তিনামার সকল পক্ষের কাছে পবিত্র ভুমি বলে গন্য হবে।
৪৪। আর কোনো পক্ষের আশ্রিতরা আশ্রয়দাতার সমান মর্যাদা ও অধিকার লাভ করবে, যে কোনো ক্ষতিসাধণ করবে না এবং অপরাধ করবে না।
৪৫। আর কোনো মহিলাকে তার পরিবারের লোকজনের অনুমতি ব্যতিরেকে আশ্রয় দেয়া যাবে না।
وإنه ما كان بين أهل هذه الصحيفة من حدث أو اشتجار يخاف فساده فان مرده الى الله عزوجل والى حضرت محمد رسول الله صلى الله عليه و سلم، وإن الله على أتقى ما في هذه الصحيفة وأبره. وإنه لا تجار قريش ولا من نصرها. وإن بينهم النصر على من دهم يثرب. وإذا دعوا الى صلح يصالحونه ويلبسونه، فانهم يصالحونه ويلبسونه. وانهم (اليهود) إذا دعوا الى مثل ذلك فانه لهم على المؤمنين الا من حارب في الدين.
৪৬। এই চুক্তিনামা গ্রহণকারী পক্ষসমূহের মধ্যে যদি এমন কোনো নতুন সমস্যার বা বিরোধের উদ্ভব হয় যা থেকে যুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশঙ্কা দেয়া দেয়, তাহলে তা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট মীমাংসার্থে উত্থাপন করতে হবে। এ চুক্তিনামায় যা কিছু রয়েছে এর প্রতি সর্বাধিক নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট খুবই পছন্দনীয়।
৪৭। কোনো কুরাইশ কাফির তাদেরকে তাদের সাহায্যকারীকে আশ্রয় দেয়া চলবে না।
৪৮। আর চুক্তির সকল পক্ষ পবিত্র মদীনা শরীফ উনাকে আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য করবে।
৪৯। যখন তাদেরকে সন্ধির জন্য আহ্বান জানানো হবে তখন তারা সন্ধিবদ্ধ হবে। অনুরূপ যখন তারা সন্ধির জন্য আহ্বান জানাবে তখন মু’মিনগণ উনাদেরকেও সন্ধির আহ্বানে সাড়া দিতে হবে। তবে যদি কেউ ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, তবে তার ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য হবে না।
على كل اناس حصتهم من جانبهم الذي قبلهم. وإن يهود الأوس - مواليهم وأنفسهم - على مثل ما لأهل هذه الصحيفة مع البر المحض. من أهل هذه الصحيفة. وإنه لا يحول هذا الكتاب دون ظالم وآثم. وإنه من خرج (من المدينة) آمن ومن قعد آمن، الا من ظلم أو أثم. وإن الله جار لمن بر واتقى، و حضرت محمد رسول الله صلى الله عليه و سلم
৫০। প্রত্যেককে তার নিজের দিকের প্রতিরোধের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।
৫১। আর আওসের ইহুদীরা তারা নিজেরা হোক বা তাদের মাওয়ালী হোক, এই চুক্তিতে শরীক পক্ষসমূহের সমান অধিকার লাভ করবে, এই চুক্তির পক্ষসমূহের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে।
৫২। আর এ চুক্তিনামা কোনো অত্যাচারী বা অপরাধীর সহায়ক বিবেচিত হবে না। যে ব্যক্তি জিহাদে বের হবে এবং যে ব্যক্তি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে বসে থাকবে উভয়েই নিরাপত্তার হক্বদার বিবেচিত হবে অত্যাচারী এবং অপরাধী তার ব্যতিক্রম বলে গন্য হবে।
৫৩। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওই ব্যক্তির স্বপক্ষে রয়েছেন, যে চুক্তি পালনে নিষ্ঠাবান ও মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে।
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ, ২৭৩-২৭৫ পৃষ্ঠা, মাওসূয়াতুত তারিখিল ইসলামীয়া ৫৪-৫৮ পৃষ্ঠা, মাজাল্লাতু মাজমুয়ুল ফিকহীল ইসলামীয়া)

0 Comments: