হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৯২৫-১০৬৯) (খ)


হযরত মুহাজির ও হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন:
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন,
وَالَّذِينَ تَبَوَّؤُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِن قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِّمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অর্থ: আর উনাদের জন্যেও হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আগমনের পূর্বে যাঁরা এ শহরে বসবাস করেছেন এবং ঈমান এনেছেন এবং উনারা হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মুহব্বত করেন এবং হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে যা দেয়া হয়েছে সে জন্যে উনারা অন্তরে আকাঙ্খা পোষণ করেন না, আর উনারা উনাদেরকে নিজেদের উপর- অগ্রাধিকার দেন, নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও অন্তরের কার্পণ্য থেকে উনাদেরকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত রাখা হয়েছে, আর উনারাই সফলকাম।” (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَالَّذِينَ عَقَدَتْ أَيْمَانُكُمْ فَآتُوهُمْ نَصِيبَهُمْ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدًا
অর্থ: এবং যাদের সঙ্গে আপনারা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন, আপনারা উনাদেরকে উনাদের অংশ দান করবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্ব বিষয় দ্রষ্টা।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قال حضرت البخاري رحمة الله عليه حدثنا حضرت الصلت بن محمد رحمة الله عليه ، ثنا حضرت أبو أسامة رحمة الله عليه ، عن حضرت إدريس رحمة الله عليه ، عن حضرت طلحة بن مصرف رحمة الله عليه عن حضرت سعيد بن جبير رحمة الله عليه عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه (ولكل جعلنا موالي) قال ورثة (والذين عاقدت ايمانكم) كان المهاجرون لما قدموا المدينة يرث المهاجري الانصاري دون ذوي رحمه للاخوة التي آخى النبي صلى الله عليه وسلم بينهم، فلما نزلت (ولكل جعلنا موالي) نسخت ثم قال: (والذين عاقدت أيمانكم فآتوهم نصيبهم) من النصر والرفادة والنصيحة، وقد ذهب الميراث ويوصى له.
অর্থ: হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত সালত ইবনে মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত আবু উসামা রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি হযরত ইদরীস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত ত্বলহা ইবনে মুছররফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত সায়ীদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণনা করেন।
وَلِكُلٍّ جَعَلْنَا مَوَالِيَ
(এবং প্রত্যেকের জন্য আমি মাওয়ালী করেছি) এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মাওয়ালী অর্থ-ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী।
وَالَّذِينَ عَقَدَتْ أَيْمَانُكُمْ
(এবং যাঁদের সঙ্গে আপনারা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন।) এ আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে হিজরত করলেন তখন উনারা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছাড়াই হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ওয়ারিছ বলে গণ্য হতেন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন মুবারক স্থাপন করেছেন তার সুবাদে।
وَلِكُلٍّ جَعَلْنَا مَوَالِيَ
পবিত্র এ আয়াত শরীফ নাযিল হলে হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উত্তরাধিকার দানের বিধান রহিত হয়। তিনি বলেন, পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়,
وَالَّذِينَ عَقَدَتْ أَيْمَانُكُمْ فَآتُوهُمْ نَصِيبَهُمْ
এ আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উনাদের অংশ বলে উনাদেরকে সাহায্য করা, রিফাদা বা আপ্যায়ন এবং কল্যাণ কামনা করা বুঝানো হয়েছে। আর এ মীরাছে ও অসীয়তের বিধান রহিত হয়ে গেছে।
عن حضرت أنس رضى الله تعالى عنه قال حالف النبي صلى الله عليه وسلم بين المهاجرين والانصار في دارنا
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের গৃহ মুবারকে হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেন।”
قال حضرت محمد بن إسحاق رحمة الله عليه وآخى رسول الله صلى الله عليه وسلم بين أصحابه من المهاجرين والانصار، فقال فيما بلغنا ونعوذ بالله أن نقول عليه ما لم يقل - " تأخوا في الله أخوين أخوين " ثم أخذ بيد حضرت علي بن أبي طالب عليه السلام فقال "هذا أخي"
অর্থ: হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হযরত মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন নি, এমন কথা উনার প্রতি আরোপ করা থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে পানাহ চাই। আমরা জানতে পেরেছি, তাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক এর জন্য আপনারা দুইজন ভাই ভাই হয়ে যান। এরপর হযরত আলী ইবনে আবু ত্বলীব কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক ধরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ইনি হচ্ছেন আমার ছাহাবী।
فكان رسول الله صلى الله عليه وسلم سيد المرسلين، وإمام المتقين، ورسول رب العالمين، الذي ليس له خطير ولا نظير من العباد، و حضرت علي بن أبي طالب عليه السلام أخوين، وكان حضرت حمزة بن عبد المطلب رضى الله تعالى عنه أسد الله وأسد رسوله وعم رسول الله صلى الله عليه وسلم و حضرت زيد بن حارثة رضى الله تعالى عنه مولى رسول الله صلى الله عليه وسلم أخوين
অথচ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলেন প্রেরিত হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাইয়্যিদ, মুত্তাক্বিগণ উনাদের ইমাম এবং মহান রব্বুল আলামীন উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি হলেন অদ্বিতীয়, যার কোন সমকক্ষ নেই। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সাল্লাম উনাকে সম্বোধান করলেন ছাহাবী হিসেবে। হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন আসাদুল্লাহু ওয়া আসাদু রসূলিল্লাহ তথা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সিংহ। তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চাচা। তিনি এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযাদকৃত গোলাম হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা হলেন পরস্পর ভাই ভাই।
এছাড়া নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে সব হযরত মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন, উনাদের নামের তালিকা নি¤œ দেয়া হলো-
قال حضرت ابن إسحاق رحمة الله عليه وكان حضرت أبو بكر عليه السلام و حضرت خارجة بن زيد الخزرجي رضى الله تعالى عنه أخوين، و حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام و حضرت عتبان بن مالك رضى الله تعالى عنه أخوين، و حضرت أبو عبيدة رضى الله تعالى عنه و حضرت سعد بن معاذ رضى الله تعالى عنه أخوين و حضرت عبد الرحمن بن عوف رضى الله تعالى عنه و حضرت سعد بن الربيع رضى الله تعالى عنه أخوين، و حضرت الزبير بن العوام رضى الله تعالى عنه و حضرت سلمة بن سلامة بن وقش رضى الله تعالى عنه أخوين، ويقال بل كان حضرت الزبير رضى الله تعالى عنه و حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه أخوين،
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
* হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম এবং হযরত খারিজা ইবনে যায়িদ আল খাজরাজী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা হলেন পরস্পর ভাই ভাই।
* হযরত আবু উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম এবং হযরত উতবান ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হচ্ছেন পরস্পর ভাই ভাই।
* হযরত উবাইদা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যাঁর আসল নাম মুবারক ছিলো হযরত আমির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং বনূ আব্দুল আশহালের হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায ইবনে নু’মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা হলেন পরস্পর ভাই ভাই।
* হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু এবং হারিছ ইবনে খাযরাজ গোত্রের হযরত সা’দ ইবনে রবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা হলেন পরস্পর ভাই ভাই।
* হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং বনূ আব্দুল আশহালের হযরত সালমা ইবনে সালামা ইবনে ওয়াকশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা হলেন পরস্পর ভাই ভাই। কেউ কেউ বলেন বরং হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও বনু যুহরার মিত্র হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা হলেন পরস্পর ভাই ভাই।
و حضرت عثمان بن عفان عليه السلام و حضرت أوس بن ثابت بن المنذر النجاري رضى الله تعالى عنه أخوين، و حضرت طلحة [بن عبيدالله] رضى الله تعالى عنه و حضرت كعب بن مالك رضى الله تعالى عنه أخوين، و حضرت سعيد بن زيد رضى الله تعالى عنه و حضرت أبي بن كعب رضى الله تعالى عنه أخوين، و حضرت مصعب بن عمير رضى الله تعالى عنه و حضرت أبو أيوب رضى الله تعالى عنه أخوين، و حضرت أبو حذيفة بن عتبة رضى الله تعالى عنه و حضرت عباد بن بشر رضى الله تعالى عنه أخوين،
* হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম এবং বনূ নাজ্জারের হযরত আওস ইবনে ছাবিত ইবনে মুনযির আননাজজারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা পরস্পর ভাই ভাই।
* হযরত ত্বলহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং বনূ সালামার হযরত কা’ব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা হলেন পরস্পর ভাই ভাই।
* হযরত সায়ীদ ইবনে যায়িদ ইবনে আমর ইবনে নুকায়ীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং বনূ নাজ্জারের হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা হলেন ভাই ভাই।
* হযরত মুসআব ইবনে উমাইর ইবনে হাশিম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু এবং বনূ নাজ্জারের হযরত আবু আইয়ুব খালিদ ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা হলেন পরস্পর ভাই ভাই।
* হযরত আবু হুযায়ফা ইবনে উতবা ইবনে রবীআ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং বনু আব্দুল আশহালের হযরত আব্বাদ ইবনে বিশর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা ভাই ভাই।
و حضرت عمار وحذيفة بن اليمان العبسى رضى الله تعالى عنه حليف عبد الاشهل أخوين.
ويقال بل كان حضرت عمار رضى الله تعالى عنه و حضرت ثابت بن قيس بن شماس رضى الله تعالى عنه أخوين. و حضرت أبو ذر برير بن جنادة رضى الله تعالى عنه و حضرت المنذر بن عمرو رضى الله تعالى عنه المعنق ليموت أخوين، و حضرت حاطب بن أبي بلتعة رضى الله تعالى عنه و حضرت عويم بن ساعدة رضى الله تعالى عنه أخوين، و حضرت سلمان وأبو الدرداء رضى الله تعالى عنه [عويمر بن ثعلبة] أخوين و حضرت بلال رضى الله تعالى عنه و حضرت أبو رويحة عبد الله بن عبد الرحمن الخثعمي رضى الله تعالى عنه ثم أحد الفزع أخوين.
* হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত হুযাইফা ইবনে ইয়ামান আর আবাসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি আব্দুল আশহালের মিত্র, মতান্তরে হযরত ছাবিত ইবনে কায়স ইবনে শাম্মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা পরস্পর ভাই ভাই।
* হযরত আবু যর বারীর ইবনে জুনাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত মুনযির ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিছাল শরীফ উনাকে আলিঙ্গনকারী ও পরস্পর ভাই ভাই।
* হযরত হাতিব ইবনে আবী বালতায়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইয়াইম ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পরস্পর ভাই ভাই।
* হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা পরস্পর ভাই ভাই।
হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মূল নাম মুবারক ছিলো উয়াইম ইবনে ছা’লাবা।
* হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবূ রুওয়াইহা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান খাছয়ামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধন হয় অতপর কাযা নামক স্থানে দু’জনের মধ্যকার একজনের সাথে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قال حضرت البخاري رحمة الله عليه باب كيف آخى النبي صلى الله عليه وسلم بين أصحابه.
وقال حضرت عبد الرحمن بن عوف رضى الله تعالى عنه آخى النبي صلى الله عليه وسلم بيني وبين حضرت سعد بن الربيع رضى الله تعالى عنه لما قدمنا المدينة.
وقال حضرت أبو جحيفة رحمة الله عليه آخى النبي صلى الله عليه وسلم بين حضرت سلمان الفارسي رضى الله تعالى عنه و حضرت أبي الدرداء.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম গণ উনাদের মধ্যে কিভাবে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেন। সে বিষয় উল্লেখ করতে গিয়ে হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উক্তি মুবারক উদ্ধৃত করেন, তিনি বলেন, আমরা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে হিজরত মুবারক করলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার এবং হযরত সা’দ ইবনে রাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেছেন। আর হযরত আবু জুহায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেন।
حدثنا حضرت محمد بن يوسف رحمة الله عليه، عن حضرت أنس رضى الله تعالى عنه قال قدم حضرت عبد الرحمن بن عوف رضى الله تعالى عنه [المدينة] فآخى النبي صلى الله عليه وسلم بينه وبين حضرت سعد بن الربيع الانصاري رضى الله تعالى عنه،
فعرض عليه أن يناصفه أهله وماله فقال حضرت عبد الرحمن رضى الله تعالى عنه بارك الله لك في أهلك ومالك، دلني على السوق.
فربح شيئا من أقط وسمن، فرآه النبي صلى الله عليه وسلم بعد أيام وعليه وضر من صفرة، فقال النبي صلى الله عليه وسلم "مهيم يا حضرت عبد الرحمن رضى الله تعالى عنه ؟" قال: يا رسول الله صلى الله عليه وسلم تزوجت امرأة من الانصار.
قال "فما سقت فيها؟" قال وزن نواة من ذهب، قال النبي صلى الله عليه وسلم "أولم ولو بشاة" تفرد به من هذا الوجه.
হযরত মুহম্মদ ইবনে ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে আগমন করলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত সা’দ ইবনে রাবী, আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করেন। তখন হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পদ আহলিয়াগণকে সমভাবে বন্টন করে নেয়ার জন্য- হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট প্রস্তাব পেশ করেন। তখন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন হে হযরত সা’দ ইবনে রাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপনি বরং আমাকে বাজারের পথ দেখিয়ে দিন। ফলে তিনি ঘি এবং পনিরের ব্যবসা দ্বারা কিছু লাভবান হলেন। কিছুদিন পর উনার গায়ে হলুদের চিহ্ন দেখে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আব্দুর রহমান এটা কি? তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এক আনছারী মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে আমি নিকাহ করেছি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা মুবারক করলেন কি পরিমান মহর দিয়ে উনাকে নিকাহ করেছেন? তিনি বললেন, এক খেজুর বীচির পরিমাণ স্বর্ণ। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বললেন, একটি বকরী দ্বারা হলেও আপনি ওলীমার আয়োজন করুন। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
قال حضرت الامام أحمد رحمة الله عليه حدثنا حضرت يزيد رحمة الله عليه ، أخبرنا حضرت حميد رحمة الله عليه عن حضرت أنس رضى الله تعالى عنه.
قال قال المهاجرون يا رسول الله ما رأينا مثل قوم قدمنا عليهم أحسن مواساة في قليل، ولا أحسن بذلا من كثير، لقد كفونا المؤونة وأشركونا في المهنأ، حتى لقد خشينا أن يذهبوا بالاجر كله.
قال: "لا! ما أثنيتم عليهم ودعوتم الله لهم"
অর্থ: হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করেছে হযরত ইয়াযীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত হুমায়দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাকে সংবাদ দিয়েছেন হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা যে সম্প্রদায়ের নিকট আগমন করেছি, উনাদের মধ্যে স্বল্প সম্পদ নিয়ে অধিক সহমর্মিতা জ্ঞাপন করতে এবং বেশি সম্পদ থেকে বেশি ব্যায় করতে হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের চাইতে অধিকতর তৎপর অন্য কোন সম্প্রদায়কে আমরা আর দেখিনি। উনারাতো আমাদেরকে জীবিকা সম্পর্কে চিন্তামুক্ত করে দিয়েছেন এবং উৎপাদনে আমাদেরকে অংশীদার করে নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! এমন কি শেষ পর্যন্ত আমাদের আশংকা জাগে যে, উনারা বুঝি সমস্ত ফযীলতই নিয়ে যাবেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন না, যতদিন আপনারা উনাদের শুকরিয়া আদায় করবেন এবং উনাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু’আ করতে থাকবেন ততদিন তা হবে না।”
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
عن حضرت أبي هريرة رضى الله تعالى عنة.
قال قالت الانصار: أقسم بيننا وبين إخواننا النخيل.
قال: لا.
قالوا أفتكفوننا المؤونة ونشرككم في الثمرة، قالوا سمعنا وأطعنا.
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন যে, (ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আমাদের এবং হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ভাইদের মধ্যে খেজুর বাগান বন্টন করে দিন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন না। তখন হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বিনীতভাবে মর্জি পেশ করলেন তবে উনারা আমাদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পরিশ্রম করবেন আর আমরা আপনাদেরকে ফলনে অংশীদার করে দিবো। হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ঠিক আছে, আমরা শুনলাম ও আমরা মেনে নিলাম। (বুখারী শরীফ)
وقال حضرت عبد الرحمن بن زيد بن أسلم رضى الله تعالى عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم للانصار "إن إخوانكم قد تركوا الاموال والاولاد وخرجوا إليكم" فقالوا أموالنا بيننا قطائع فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم "أو غير ذلك؟" قالوا وما ذاك يا رسول الله؟ قال "هم قوم لا يعرفون العمل، فتكفونهم وتقاسمونهم الثمر"
قالوا نعم
অর্থ: হযরত আব্দুর রহমান ইবনে যায়িদ ইবনে আসলাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লক্ষ করে ইরশাদ মুবারক করেন আপনারা হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ভাইগণ উনারা উনাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি পবিত্র মক্কা শরীফে রেখে আপনাদের কাছে এসেছেন। তখন হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বললেন, আমাদের সম্পদ আমাদের উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্টন করে দিন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আচ্ছা তাই করা হবে। হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তা কি হতে পারে? তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, উনারা এমন এক সম্প্রদায় যাঁরা কায়িক শ্রম করতে জানেন না, আপনাদেরকে উনাদের কাজ করে দিতে হবে এবং ফলন ভাগ করে নিবেন। উনারা বললেন, হ্যাঁ তাই হবে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, জামিউল বায়ান, তাফসীরে ত্ববারানী, তাফসীরে ইবনে কাছীর, আত তাফসীরুল হাদীছ, তাফসীরুশ শায়খিল মারাগী, আস সীরাতুন নবুওয়াতী লি ইবনে কাছীর, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল মুকাছছালু ফি আহকামিল হিজরাত)

0 Comments: