খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম দ্বিতীয় খণ্ড ( পর্ব -১)

পিডিএফ লিংক- https://drive.google.com/open?id=1J8Q2xa9L4YPKNWOWg7NJPm1HJBYdImLs

খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম দ্বিতীয় খণ্ড ( পর্ব -১)
 খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম দ্বিতীয় খণ্ড 
(পর্ব -১)
কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদাত অনন্তকালব্যাপী জারিকৃত মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সুমহান সম্মানার্থে প্রকাশিত



بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ.
يَكُوْنُ بَعْدِىْ خُلَفَاءُ وَبَعْدَ الْـخُلَفَاءِ اُمَرَاءُ وَبَعْدَ الْاُمَرَاءِ مُلُوْكٌ وَّبَعْدَ الْمُلُوْكِ جَبَابِرَةٌ وَّبَعْدَ الْـجَبَابِرَة ِ يـَخْرُجُ رَجُلٌ مِّنْ اَهْلِ بَـيْتـِىْ يـَمْلَاُ الْاَرْضَ عَدْلًا.
অর্থ: “আমার পরে হযরত খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যুগ, হযরত খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের পর আমীর-উমরাদের যুগ, আমীর-উমারাদের পর রাজা-বাদশাহদের যুগ তথা রাজতন্ত্র। রাজতন্ত্রের পর হবে চরম অত্যাচারী, চরম যালিম, চরম অহঙ্কারী, চরম পথভ্রষ্ট, চরম পথভ্রষ্টকারী, চরম বিভ্রান্তকর শাসকদের শাসন ব্যবস্থা, জোর জবরদস্তিমূলক শাসন ব্যবস্থা, যুলুমতন্ত্র তথা সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র। অতঃপর আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে আমার একজন আখাচ্ছুল খাছ আওলাদ, একজন মহান খলীফা আলাইহিস সালাম তিনি দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নিবেন। তিনি দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নিয়ে পুরো পৃথিবী, সারা কায়িনাত সম্মানিত ইনসাফ মুবারক দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিবেন তথা সারা বিশ্বে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ ৫/৪৫৬, ইসতিয়াব ১/১৩৭)


خَلِيْفَةُ اللهِ حَضْرَتْ اَلسَّفَّاحُ عَلَيْهِ السَّلَامُ

খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম

দ্বিতীয় খ-


গবেষণা কেন্দ্র: মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
         
প্রকাশনায়:
          গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
        ৫/১, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা-১২১৭
        ফোন (পিএবিএক্স) : ৯৩৩৮৭৮৭, ৮৩৩৩৯২৭
        মোবাইল : ০১৭১১-২৩৮৪৪৭, ০১৭১১-২৬৪৬৯৪, ০১৭১২-   ৬৪৮৪৫৩
        ফ্যাক্স  : ৮৮-০২-৯৩৩৮৭৮৮
       ওয়েবসাইট  :uswatun-hasanah.net; al-ihsan.net;

                         al-hilaal.net; attaqweemush-shamsi.net

প্রথম প্রকাশ (২য় খ-ণ্ড):
          মুহাররমুল হারাম শরীফ                        ১৪৩৭ হিজরী সন
          সাদিস                                            ১৩৮৩ শামসী সন
         
প্রাপ্তিস্থান:
          মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ (বিক্রয় কেন্দ্র)
          ৫/১, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা-১২১৭
         ফোন (পিএবিএক্স) : ৮৩১৪৮৪৮ (বর্ধিত ১২৫), মোবাইল : ০১৭৯১-৭২৪২৯৭

কম্পিউটার অলঙ্করণ:
          মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ (কম্পিউটার বিভাগ)
          ৫/১, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা-১২১৭
         ফোন (পিএবিএক্স) : ৮৩১৪৮৪৮ (বর্ধিত ১২১)
           মোবাইল : ০১৭১২-৮৫৫৩৪৫
মুদ্রণে:
          মুহম্মদিয়া বুক বাইন্ডিং অ্যান্ড প্রিন্টিং প্রেস
        ১৩/২, গোলাপবাগ, ঢাকা। ফোন : ৭৫৪৭৭৯৬
        মোবাইল : ০১৭১১-১৭৮৬৮৪, ০১৮৩৪-৯৬২১৬৮

হাদিয়া: .............. টাকা


الـمؤسس والـمشرف لـمركز البحث مـحمدية جامعة شريف والـمجلة الشهرية البينات والـجريدة اليومية الاحسان- خليفة الله، خليفة رسول الله، امام الشريعة والطريقة، قطب العالـم، الغوث الاعظم، سلطان الاولياء، مـخزن الـمعرفة، خزينة الرحمة، معين الـملة، لسان الامة، تاج الـمفسرين، رئيس الـمحدثين، فخر الفقهاء، حاكم الـحديث، حجة الاسلام، سيد الـمجتهدين، محى السنة، ماحى البدعة، صاحب الالـهام، رسول نـما، سيد الاولياء، سلطان العارفين، امام الصديقين، سيد الـمجددين، سيد الـخلفاء، ابو الـخلفاء، امام الائمة، الـمجدد الاعظم، قيوم الزمان، الـجبارى الاول، القوى الاول، سلطان نصير، حبيب الله، جامع الالقاب، اولاد الرسول، مولانا سيّدنا امام
خَلِيْفَةُ اللهِ حَضْرَتْ اَلسَّفَّاحُ عَلَيْهِ السَّلَامُ
الـحسنى والـحسينى والقريشى والـحنفى والقادرى
والصيشتى والنقشبندى والـمجددى والـمحمدى
راجارباغ شريف، داكا
গবেষণা কেন্দ্র: মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ, দৈনিক আল ইহসান শরীফ এবং মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনাদের প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক- খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরী‘য়াহ ওয়াত তরীক্বাহ, কুতুবুল ‘আলম, আল গওছুল আ’যম, সুলত্বানুল আওলিয়া, মাখযানুল মা’রিফাহ, খযীনাতুর রহমাহ, মুঈনুল মিল্লাহ, লিসানুল উম্মাহ, তাজুল মুফাসসিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ফুক্বাহা, হাকীমুল হাদীছ, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, মুহইউস সুন্নাহ, মাহিউল বিদয়াহ, ছাহিবুল ইলহাম, রসূলে নুমা, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, সুলত্বানুল ‘আরিফীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, সাইয়্যিদুল মুজাদ্দিদীন, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, ইমামুল আইম্মাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামি‘উল আলক্বাব, আওলাদে রসূল, মাওলানা সাইয়্যিদুনা ইমাম -
খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম
আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী ওয়াল হানাফী ওয়াল ক্বাদিরী ওয়াল চীশতী ওয়ান নকশবন্দী ওয়াল মুজাদ্দিদী ওয়াল মুহম্মদী
রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা।
সূচিপত্র
নং       শিরোনাম        পৃষ্ঠা
        اَلْبِدَايَةُ (আল বিদায়াহ).............................................................      
        ‘সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওওয়াহ মুবারক’ উনার পরিচিতি ..........................................................................  
       সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারকই হচ্ছে মুসলমান উনাদের একমাত্র শাসন ব্যবস্থা ................................................         
        সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক উনার উৎস................................................................................
       সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক উনার গুরুত্ব এবং আবশ্যকতা ...........................................................       
        খলীফা উনার শর্তাবলী ....................................................      ১২
       খলীফা উনার নিকট আনুগত্যতার বায়াত গ্রহণ করা ফরয ............    ১৩
       খলীফা উনার অনুসরণ-অনুকরণ করা ফরয.............................     ১৪
        খলীফা উনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয এবং বিদ্রোহীকে কতল করা বৈধ .........................................       ১৪
১০      খলীফা মনোনীত হওয়ার ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত আলোচনা .................     ১৫
১১      মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম তিনি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ ...........................................        ১৬
১২      প্রথম প্রমাণ..................................................................      ১৭
১৩      দ্বিতীয় প্রমাণ.................................................................      ১৮
১৪      তৃতীয় প্রমাণ.................................................................      ২২
১৫      চতুর্থ প্রমাণ..................................................................      ২৬
১৬      পঞ্চম প্রমাণ..................................................................      ৩৩
১৭      ষষ্ঠ প্রমাণ....................................................................       ৩৭
১৮      সপ্তম প্রমাণ..................................................................      ৪১
১৯      অষ্টম প্রমাণ..................................................................      ৪৪
২০     اَلنِّهَايَةُ (আন নিহায়াহ) .....................................................      ৪৭



اَلْبِدَايَةُ (আল বিদায়াহ)

اَلْـحَمْدُ وَالصَّلـٰوةُ وَالسَّلَامُ لِشَيْخِنَا مَـمْدُوْحٍ مُّرْشِدٍ قِبْلَةٍ خَلِيْفَةِ اللهِ حَضْرَتْ اَلسَّفَّاحِ عَلَيْهِ الصَّلـٰوةُ وَالسَّلَامُ وَعَلـٰى اَهْلِ بَيْتِهِ الْكَرِيْـمِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ وَالصَّلـٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلـٰى سَيّـِدِ اْلاَنْبِيَاءِ وَالْـمُرْسَلِيْنَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلـٰى وَالِدَىْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَضْرَتْ اُمَّهَاتِ الْـمُؤْمِنِيْنَ عَلَيْهِنَّ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ اَهْلِ بَيْتِهِ الْكَرِيْمِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ وَالْـحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ اَمَّا بَعْدُ:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
 وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِى الْاَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ওয়াদা মুবারক দিচ্ছেন যে, যাঁরা ঈমান আনবেন এবং আমলে ছলেহ করবেন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে অবশ্যই অবশ্যই দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক হাদিয়া করবেন, যেমনিভাবে তিনি পূর্ববর্তী উনাদেরকে হাদিয়া করেছিলেন।” (সম্মানিত সূরা নূর শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ: ৫৫)
আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি যতদিন ইচ্ছা করেন ততদিন আপনাদের মাঝে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান থাকবে। অতঃপর তিনি এক সময় তা তুলে নিবেন। তারপর দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি যতদিন ইচ্ছা করেন ততদিন দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত থাকবে। অতঃপর একসময় এই সম্মানিত খিলাফত মুবারক বিদায় নিয়ে এমন শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে অত্যাচারী রাজা-বাদশাহরা ক্ষমতা লাভের জন্য একে অপরের সাথে কামড়া-কামড়ি করবে এবং তা টিকিয়ে রাখার জন্য যেকোনো উপায় বেছে নিবে। অর্থাৎ রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তারপর হবে অত্যাচার, অবিচার, যুলুম-নির্যাতন, স্বৈরাচার, গুমরাহী, বিভ্রান্তি, পথভ্রষ্টতা ও বেইনসাফীতে পরিপূর্ণ শাসন ব্যবস্থা, জোর-জবরদস্তিমূলক শাসন ব্যবস্থা, যুলুমতন্ত্র তথা সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র। মহান আল্লাহ পাক তিনি এক সময় তা মিটিয়ে দিবেন, নিশ্চিহ্ন করে দিবেন। অতঃপর পুনরায় দুনিয়ার যমীনে ‘সম্মানিত খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক’ প্রতিষ্ঠিত হবে।” সুবহানাল্লাহ! (আহমদ, ত্বয়ালসী, বাযযার, বাইহাক্বী, মিশকাত ইত্যাদি)
আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার থেকে স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হচ্ছে যে, বর্তমান সময়টা হচ্ছে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুনির্দিষ্ট সময়। আর এই সময়েই দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে ১০ম খলীফা সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম।  অতএব, তিনি বাংলাদেশ তো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ। (সুবহানাল্লাহ)
প্রথম খ- ও প্রথম খ- উনার ২য় সংস্করণে চির অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাহভিত্তিক অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করা হয়েছে যে, ‘সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিই হচ্ছেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম।’ অত্র খ-ে মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে- ‘মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি বাংলাদেশ তো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ।’ এই বিষয়ে অসংখ্য-অগণিত অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাহভিত্তিক প্রমাণ মওজূদ থাকা সত্ত্বেও কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় এখানে তা থেকে ৮টি প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। আর শুরুতে স্থান পেয়েছে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক ও উনার আনুষঙ্গিক বিষয়ে সংক্ষিপ্তভাবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। আশা রাখি, উপরোক্ত বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি, হৃদয়াঙ্গম এবং ব্যাপক প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে হক্ব তালাশীদের জন্য এই ৮টি প্রমাণ অবশ্যই যথেষ্ট হবে। আর নাহক্বদের সম্মুখে আরো লক্ষ-কোটি প্রমাণ পেশ করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও তারা আদৌ মানবে না। কারণ তাদের অন্তরে মোহর পড়ে গেছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উসীলায় আমাদের সবাইকে, খাছ করে এই কিতাব মুবারক উনার প্রচার-প্রসার এবং খিদমত মুবারক-এ যারা সম্পৃক্ত আছেন এবং থাকবেন উনাদের সবাইকে আখাচ্ছুল খাছভাবে আবাদুল আবাদের তরে কবুল করুন, গাইবী মদদ করুন, ইহসান করুন। (আমীন)


‘সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক’ উনার পরিচিতি


خِلَافَةٌ (খিলাফত) শব্দ মুবারকখানা আরবী। উনার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- প্রতিনিধিত্ব করা, স্থলাভিষিক্ত হওয়া। মূলকথা হলো- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নায়িব হয়ে উনার যাহিরী-বাতিনী প্রতিনিধিত্ব করা।
عَلـٰى অর্থ- উপর। مِنْهَاج অর্থ হচ্ছে- সিঁড়ি, পদাঙ্ক, পথ ইত্যাদি। اَلنُّـبُوَّة এখানে নুবুওওয়াত বলতে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক ও রিসালত মুবারক উনাদেরকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে।
সুতরাং خِلَافَةٌ عَلـٰى مِنْهَاجِ النُّـبُوَّةِ (খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ) উনার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ নায়িব হয়ে উনার পদাঙ্ক মুবারক তথা উনাকে অনুসরণ-অনুকরণ করে উনার যাহিরী-বাতিনী প্রতিনিধিত্ব করা। সুবহানাল্লাহ!
পরিভাষায়- মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যাহিরী-বাতিনী সর্বদিক থেকে সূক্ষ্মাতি-সূক্ষ্ম, পুঙ্খানু-পুঙ্খরূপে অনুসরণ-অনুকরণ করে সম্মানিত শরীয়ত উনার নির্দিষ্ট পন্থায় তথা সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে কোনো এলাকা অথবা গোটা পৃথিবী বা সারা কায়িনাত পরিচালনা করাকে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক বলে। আর যিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ নায়িব হয়ে উনাকে যাহিরী-বাতিনী সর্বদিক থেকে সূক্ষ্মাতি-সূক্ষ্ম ও পুঙ্খানু-পুঙ্খরূপে অনুসরণ-অনুকরণ করে সম্মানিত শরীয়ত উনার নির্দিষ্ট তর্য-তরীকায় তথা সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে কোনো এলাকা অথবা গোটা পৃথিবী অথবা সারা কায়িনাত শাসন বা পরিচালনা করেন উনাকে খলীফা বলে।
সহজে বুঝার জন্য, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সম্মানিত ওহী মুবারক অনুযায়ী যেভাবে শাসনকার্য পরিচালা করেন, উনাকে নুবুওওয়াত ও রিসালাত বলে। আর উম্মত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে অনুসরণ করে সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার নির্দিষ্ট তর্য-তরীক্বায় যেভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন, উনাকে খিলাফত বলে।

সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারকই হচ্ছে মুসলমান উনাদের একমাত্র শাসন ব্যবস্থা

‘সম্মানিত নুবুওওয়াত-রিসালাত মুবারক ও সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক’ ছাড়া রাজতন্ত্র থেকে শুরু করে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, মাওবাদ, লেলিনবাদ ইত্যাদি যত তন্ত্র-মন্ত্র, মতবাদ রয়েছে সবকিছুই মানুষের মনগড়া বানানো পদ্ধতি, তর্য-তরীক্বা। এগুলো কোনোটাই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে জায়িয নেই; বরং বাতিল বা পরিত্যাজ্য এবং সম্পূর্ণরূপে হারাম, নাজায়িয ও কুফরী-শিরকীর অন্তর্ভুক্ত ও চির জাহান্নামী হওয়ার কারণ। এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
هُوَ الَّذِىْ اَرْسَلَ رَسُولَهٗ بِالْـهُدٰى وَدِيْنِ الْـحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الـدِّيْنِ كُـلِّـهٖ وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا.
অর্থ: তিনি সেই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন, যিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সত্য দ্বীন ও পবিত্র হিদায়েতসহ পাঠিয়েছেন অতীতের পবিত্র ওহী মুবারক উনার দ্বারা নাযিলকৃত সমস্ত দ্বীন এবং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মানবরচিত সমস্ত তন্ত্র-মন্ত্র-মতবাদকে বাতিল ঘোষণা করে দিয়ে। আর সাক্ষী হিসেবে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনিই যথেষ্ট।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা ফাতহ শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ- ২৮)
কাজেই সম্মানিত ইসলাম উনার মধ্যে রয়েছে, সম্মানিত নুবুওওয়াত-রিসালাত মুবারক এবং সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক। যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর ক্বিয়ামত পর্যন্ত নতুন করে আর কোনো নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনারা দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নিবেন না, তাই ক্বিয়ামত পর্যন্ত সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য একমাত্র শাসন ব্যবস্থা হচ্ছে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক। এছাড়া সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য অন্য কোনো শাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম-নাজায়িয ও কুফরী-শিরকীর অন্তর্ভুক্ত।


সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক উনার উৎস

‘সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক’ এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। এটা পূর্ববর্তী যামানায়ও ছিলো। তবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর প্রথম খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারক গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে এই উম্মতের ‘সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক’ উনার সূচনা হয়েছে। আর সেই মুবারক সময়টি ছিলোÑ ১১ হিজরী সনের ১৩ রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুছ ছুলাছা’ তথা মঙ্গলবার দিন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার পর ফারূক্বে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ইবনুল খত্ত্বাব আলাইহিস সালাম তিনি, সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম তিনি, আসাদুল্লাহিল গালিব সাইয়্যিদুনা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি, ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি, সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা পর্যায়ক্রমে একজন উনার পর অপরজন খলীফা মনোনীত হয়েছেন এবং সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করেছেন। এভাবেই পৃথিবীর বুকে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক উনাদের গুরুত্ব এবং আবশ্যকতা

সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক হচ্ছেন ‘শিয়ারুল ইসলাম’ তথা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার একখানা বিশেষ শিয়ার বা নির্দশন মুবারক এবং সম্মানিত মুসলমান উনাদের একমাত্র শাসন ব্যবস্থা। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক ব্যতীত কস্মিনকালেও দুনিয়ার যমীনে হাক্বীক্বীভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, সম্মানিত ইসলামী আইন-কানুন জারি হতে পারে না। দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে হাক্বীক্বীভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আদেশ-নির্দেশ মুবারক, বিধি-বিধানসমূহ, আইন-কানুনসমূহ জারি করতে হলে ‘সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক’ উনার কোনো বিকল্প নেই। যতদিন দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত ছিল ততদিন সম্মানিত মুসলমান উনারা পৃথিবীর বুকে স্বাধীনভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পালন করতে পেরেছিলেন। কাফির-মুশরিকরা সম্মানিত মুসলমান উনাদের উপর কোনো প্রকার যুলুম-নির্যাতন করার সুযোগ পায়নি, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে নিয়ে কোনো প্রকার চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করার সুযোগ পায়নি। তখন জগদ্বাসী দুনিয়ার যমীনে থেকেই জান্নাতী অমীয় সুখ-শান্তি উপভোগ করেছিলেন। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিলো বিশ্বময়। সমগ্র পৃথিবীর বুকে ছিলো সম্মানিত মুসলমান উনাদের একক আধিপত্য। সম্মানিত মুসলমান উনাদের নাম মুবারক শুনলে কাফির-মুশরিকদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতো। কাফির-মুশরিকরা সম্মানিত মুসলমান উনাদের গোলামে পরিণত হয়েছিলো। সুবহানাল্লাহ!কিন্তু যখনই সম্মানিত মুসলমান উনারা সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ উনার থেকে দূরে সরে গেছেন, তখনই মুসলমান উনাদের অধঃপতন শুরু হয়েছে। আর সেই অধঃপতন আজ কঠিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। আজকে মুসলমান উনারা পৃর্থিবীর বুকে স্বাধীনভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পালন করতে পারছেন না। দিকে দিকে কাফির-মুশরিকদের হাতে মার খাচ্ছেন। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে সম্মানিত মুসলমান উনাদের উপর যুলুম-নির্যাতন করা হচ্ছে না। বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশেই চলছে সম্মানিত মুসলমান উনাদের উপর অবর্ণনীয় যুলুম-নির্যাতন, অত্যাচার-অবিচার। শহীদ করা হচ্ছে কোটি কোটি মুসলমান উনাদেরকে। ইজ্জত-সম্ভ্রম নষ্ট করা হচ্ছে কোটি কোটি মুসলমান মা-বোন উনাদের। না‘উযুবিল্লাহ!
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّ اللهَ لَيَزَعُ بِالسُّلْطَانِ اَكْثَرَ مِـمَّا يَزَعُ بِالْقُرْاٰنِ.
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন খলীফা উনার দ্বারা এমন অনেক কিছুর প্রতিরোধ করেন বা অবসান ঘটান, যা সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার দ্বারা প্রতিরোধকৃত বা অপসৃত অপকর্মসমূহের তুলনায় অধিক। সুবহানাল্লাহ! (ইবনে কাছীর ৫/১১১, তাফসীরু কুরআনিল আযীম লিত্ববারনী, ফাতহুল ক্বাদীর ৪/৩৪৫, আদাবুদ দ্বীন ওয়াদ দুনিয়া লিল মাওয়ারদী ১/১৩৫)
এই বিষয়টি আজ সুস্পষ্ট। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় শোয়া তিনশ’ কোটি মুসলমান। প্রত্যেকের ঘরে ঘরে রয়েছে সম্মানিত কুরআন শরীফ। তারপরেও মুসলমানরা আজ অশ্লীল-অশালীন, হারাম-নাজায়িয ও কুফরী-শিরকীমূলক কার্যকলাপের মহাসাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। তারা আজ জাহিলিয়াতের সর্বশেষ সীমায় উপনীত হয়েছেÑ আপন বাবা-মেয়ে, মা-ছেলে, ভাই-বোন অবৈধ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। স্বয়ং সম্মানিত কা’বা শরীফ ও সম্মানিত রওযা শরীফ উনাদের ভিতর রয়েছে সিসিটিভি। (না‘ঊযুবিল্লাহ) কিন্তু এর কোনো অবসান ঘটছে না; বরং দিন দিন তা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকৃপক্ষে এর অবসানের জন্য আবশ্যক একজন মহান খলীফা আলাইহিস সালাম উনার। সেটাই সাইয়্যিদুনা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেছেন,
لَا يُصْلِحُ النَّاسَ اِلَّا اَمِيْرٌ
 অর্থ: “মানুষ কখনোই একজন খলীফা ব্যতীত পরিশুদ্ধ হতে পারে না, হাক্বীক্বী কল্যাণ লাভ করতে পারে না।” (শু‘য়াবুল ঈমান ১০/১৫, কানযুল উম্মাল ৫/৭৫১)
‘আল ফিক্বহু ‘আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ’ ৫ম খ-ের ৩৬৬ পৃষ্ঠায় রয়েছে,
اِتَّفَقَ الْاَئِمَّةُ رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالـٰى عَلـٰى اَنَّ الْاِمَامَةَ فَرْضٌ وَّاَنَّهٗ لَا بُدَّ لِلْمُسْلِمِيْنَ مِنْ اِمَامٍ يُّقِيْمُ شَعَائِرَ الـدِّيْنِ وَيُنْصِفُ الْـمَظْـلُوْمِيْنَ مِنَ الظَّالِـمِيْنَ.
অর্থ: ‘সমস্ত হযরত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা একমত পোষণ করেছেন যে, নিশ্চয়ই সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক হচ্ছে সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য একটি ফরয তথা অপরিহার্য বিষয়। আর নিশ্চয়ই সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য একজন খলীফা থাকা আবশ্যক যিনি সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার বিধানসমূহ প্রতিষ্ঠা করবেন, যালিমদের বিরুদ্ধে মযলূমদের পক্ষে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন।’ সুবহানাল্লাহ!
‘শরহে আক্বাইদে নাসাফী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,
 وَالْـمُسْلِمُوْنَ لَابُدَّلَـهُمْ مِّنْ اِمَامٍ يَّقُوْمُ بِتَنْفِيْذِ اَحْكَامِهِمْ وَاِقَامَةِ حُدُوْدِهِمْ وَسَدِّ ثُغُوْرِهِمْ وَتَـجْهِيْزِ جُيُوْشِهِمْ وَاَخْذِ صَدَقَاتِـهِمْ وَقَهْرِ الْـمُتَغَـلِّـبَةِ وَالْـمُتَلَصِّصَةِ وَقُطَّاعِ الطَّرِيْقِ وَاِقَامَةِ الْـجُمَعِ وَالْاَعْيَادِ وَقَطْعِ الْـمُنَازَعَاتِ الْوَاقِعَةِ بَيْنَ الْعِبَادِ وَقَبُوْلِ الشَّهَادَاتِ الْقَائِمَةِ عَلَى الْـحُقُوْقِ وَتَزْوِيْجِ الصِّغَارِ وَالصَّغَائِرِ الَّذِيْنَ لَا اَوْلِيَاءَ لَـهُمْ وَقِسْمَةِ الْغَنَائِمِ وَنَـحْوِ ذٰلِكَ مِنَ الْاُمُوْرِ الَّتِـىْ لَايَتَوَلَّاهَا اٰحَادُ الْاُمَّةِ.
অর্থ: “সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য একজন খলীফা অপরিহার্য। তিনি তাদের মধ্যে সম্মানিত শরীয়ত উনার আহকামসমূহ জারি করবেন, হুদূদ তথা দ-বিধি বাস্তবায়ন করবেন, সীমান্ত হিফাযতের ব্যবস্থা করবেন, সেনা অভিযান প্রেরণ করবেন, সদক্বা উসুল করবেন, যালিম ও চোর-ডাকাত দমন করবেন, জুমুয়াহ ও ঈদের নামায কায়িম করবেন, মানুষের বিবাদ মীমাংসা করবেন এবং বিভিন্ন হক-হুকুকের উপর সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন, অভিভাবকহীন না বালেগ ছেলে-মেয়েদের বিবাহ-শাদী দিবেন এবং গনীমতের মাল বণ্টন করবেন। এরূপভাবে সেসব কাজ করবেন যা ইমাম তথা খলীফা ব্যতীত উম্মতের অন্য কোনো ব্যক্তি সমাধা করতে সক্ষম নয়।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী-১৩৮)
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে একজন খলীফা এবং সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক উনাদের গুরুত্ব ও আবশ্যকতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সুতরাং সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক উনার জন্য কোশেশ করা এবং বর্তমান যামানার যিনি খলীফা, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আমীরুল মু’মিনীন, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম মুবারক-এ জমায়েত হওয়া।


খলীফা উনার শর্তাবলী


মুসলিম হওয়া, বালিগ হওয়া, স্বাধীন হওয়া, দৈহিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হওয়া, শাসিত অঞ্চলকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করার মতো প্রয়োজনীয় ক্ষমতার অধিকারী হওয়া, বীরত্বের অধিকারী হওয়া, মনোনীত হওয়া,
পুরুষ হওয়া: এই ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার ইমাম মুজতাহিদগণ ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, খলীফা উনাকে অবশ্যই পুরুষ হতে হবে। মহিলারা কখনোই খলীফা হতে পারে না। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لَنْ يُّفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا اَمْرَهُمُ امْرَاَةً
 অর্থ: “ওই সম্প্রদায় কখনোই সফলতা লাভ করতে পারবে না, যেই সম্প্রদায়ের শাসক হবে মহিলা।” (বুখারী, নাসাঈ, তিরমিযী ইত্যাদি)
  ন্যায় বিচারক হওয়া: খলীফা উনাকে পূর্ণ ন্যায় বিচারক হতে হবে। অর্থাৎ যিনি খলীফা হবেন তিনি হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা যেরূপভাবে ন্যায়বিচার করেছেন, তিনি সেরূপ ন্যায়বিচার করবেন।
মুজতাহিদ হওয়া: খলীফা উনাকে অবশ্যই মুজতাহিদ হতে হবে।
আলিম হওয়া: তিনি আলিম তথা পরিপূর্ণরূপে ইলমে লাদুন্নী প্রাপ্ত হবেন।
কুরাঈশ বংশীয় হওয়া: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اَلْاَئِمَّةُ مِنْ قُرَيْشٍ
অর্থ: “খলীফা হবেন কুরাঈশ বংশ থেকে।” (আহমদ ৩/১৮৩, বাযযার ১২/৩২১, ত্বয়ালসী ২/২২৪, নাসাঈ ৫/৪০৫, আবী ইয়া’লা ৬/৩২১ ইত্যাদি)
তাই যিনি খলীফা হবেন উনাকে অবশ্যই সম্মানিত কুরাঈশ বংশীয় হতে হবে। এই সম্পর্কে হযরতআল্লামা মাওয়ারদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
 اِنْعِقَادُ الْاِجْـمَاعِ عَلَيْهِ
অর্থ: “এর উপর ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” (আহকামুস সুলত্বানিয়্যাহ ৫পৃ.)
 যামানার সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হওয়া: খলীফা তিনি উনার যামানার সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হবেন।
হাক্বীক্বী মুত্তাক্বী হওয়া: যিনি খলীফা হবেন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক সমস্ত প্রকার গুনাহের কাজ থেকে পরিপূর্ণরূপে মাহফুয থাকবেন। শুধু তাই নয়, তিনি গুনাহের কাজ করাতো দূরের কথা, এমনকি তিনি কোনো মুস্তাহাব সুন্নত মুবারকও তরক করবেন না। সুবহানাল্লাহ!
 ফাসিক্ব না হওয়া: ফাসিক্ব ওই ব্যক্তি যে ফরয, ওয়াজিব এবং সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আমল তরক করে থাকে, হারাম-নাজায়িয কাজ করে থাকে। আর ফাসিক্ব কখনোই খলীফা হতে পারে না। এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنّـِــىْ جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ اِمَامًا قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّـتِىْ قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِى الظّٰلِمِيْنَ
অর্থ: “আমি আপনাকে সমস্ত মানুষের জন্য ইমাম হিসেবে মনোনীত করেছি। তখন (হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম) তিনি বলেন, আমার সম্মানিত বংশধর উনাদের মধ্য থেকেও? মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আমার অঙ্গীকার যালিমদের নিকট পৌঁছবে না। অর্থাৎ যালিম-ফাসিক্বরা কখনোই খলীফা হতে পারবে না।” (সম্মানিত সূরা বাক্বারা শরীফ, সম্মানিত আয়াত শরীফ: ১২৪)
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হানাফী মাযহাবের বিশ্বখ্যাত ফক্বীহ ইমাম আবূ বকর জাছ্ছাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
فَـثَــبَتَ بِدَلَالَةِ هٰذِهِ الْاٰيَةِ بُطْلَانُ اِمَامَةِ الْفَاسِقِ وَاَنَّهٗ لَا يَكُوْنُ خَلِيْفَةً.
অর্থ: “এই সম্মানিত আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফাসিক্ব ব্যক্তির ইমামত তথা খিলাফত বাতিল। সে কখনোই খলীফা হতে পারে না।” (আহকামুল কুরআন লিজাছ্ছাছ ১ম জিলদ ৮৬ পৃ.)
ইলহাম ও ইলক্বা মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া: যিনি খলীফা হবেন তিনি দায়িমীভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক সম্মানিত ইলহাম-ইলক্বা মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেন। সুবহানাল্লাহ!

খলীফা উনার নিকট আনুগত্যতার বায়াত গ্রহণ করা ফরয

এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَن حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنُ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰی عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنْ خَلَعَ يَدًا مِّنْ طَاعَةٍ لَقِىَ اللهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا حُجَّةَ لَهٗ وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِىْ عُنُقِهٖ بَيْعَةٌ مَّاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি শুনেছি, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যে ব্যক্তি খলীফা উনার আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিলো, ক্বিয়ামতের দিন সে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার কাছে কোনো (ওযর-আপত্তি) প্রমাণ থাকবে না। আর যে ব্যক্তি সম্মানিত খলীফা উনার সম্মানিত হাত মুবারক-এ আনুগত্যতার বায়াত গ্রহণ না করে মারা গেল, সে যেন জাহিলিয়্যাতের মধ্যে তথা ঈমান হারা হয়ে, বেঈমান হয়ে মারা গেল।” (মুসলিম শরীফ ৬/২২, মু’জামুল কবীর ১৪/২৫২, সুনানুল কুবরা লিলবাইহাক্বী ৮/১৫৬, শরহুস সুন্নাহ ১০/৮১ ইত্যাদি)

খলীফা উনার অনুসরণ-অনুকরণ করা ফরয

এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُولِى الْاَمْرِ مِنْكُمْ
 অর্থ: “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে অনুসরণ করো এবং অনুসরণ করো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং তোমাদের মাঝে যারা উলিল আমর তথা খলীফা রয়েছেন উনাদেরকে।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা নিসা শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৫৯)
আর সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
مَنْ يُّطِعِ الْاَمِيْرَ فَقَدْ اَطَاعَنِىْ وَمَنْ يَّعْصِ الْاَمِيْرَ فَقَدْ عَصَانِىْ.
অর্থ: “যে ব্যক্তি খলীফা উনার অনুসরণ-অনুকরণ করলো, সে মূলত আমারই অনুসরণ-অনুকরণ করলো। সুবহানাল্লাহ! আর যে ব্যক্তি খলীফা উনার নাফরমানী করলো, সে মূলত আমারই নাফরমানী করলো।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

খলীফা উনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা সম্পূর্ণরূপে
হারাম-নাজায়িয এবং বিদ্রোহীকে কতল করা বৈধ

এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَاِنْ طَـــائِفَتٰنِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اقْتَتَلُوْا فَاَصْلِحُوْا بَيْنَهُمَا فَاِنْ بَغَتْ اِحْدٰهُـمَا عَلَى الْاُخْرٰى فَقَاتِلُوا الَّتىْ تَبْغِىْ حَتّٰى تَفِىْءَ اِلـٰى اَمْرِ اللهِ.
অর্থ: “যদি মু’মিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; যে পর্যন্ত না তারা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক উনার দিকে ফিরে আসে।” (সম্মানিত সূরা হুজরাত শরীফ: সম্মানিত আয়াত ৯)
আর সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
عَن حَضْرَتْ عَرْفَجَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰی عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنْ اَتَاكُمْ وَاَمْرُكُمْ جَمِيْعٌ عَلـٰى رَجُلٍ وَاحِدٍ يُّرِيْدُ اَنْ يَّشُقَّ عَصَاكُمْ اَوْ يُفَرِّقَ جَمَاعَتَكُمْ فَاقْتُلُوْهُ.
অর্থ: “হযরত আরফাজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি শুনেছি, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি মনোনীত, সৎ ও ইনসাফগার খলীফা উনার বিরুদ্ধাচরণ করার সংকল্প নিয়ে তোমাদের নিকট আসে, অথচ অবস্থা হলো এই যে, তোমরা উক্ত খলীফা উনার আনুগত্যে ঐক্যবদ্ধ রয়েছো। তবে যে লোক তোমাদের সেই ঐক্য ও সংহতিকে বিনষ্ট করার উদ্দেশ্য নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তাকে তোমরা কতল করো।” (মুসলিম, মু’জামুল কবীর ১২/৮১, সুনানুল কুবরা লিলবাইহাক্বী ৮/১৬৯, আবী আউওয়ানা ৮/২০৮)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَن حَضْرَتْ اُسَامَةَ بْنِ شَرِيْكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰی عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَيُّـمَا رَجُلٍ خَرَجَ يُـفَـرِّقُ بَيْنَ اُمَّتِىْ فَاضْرِبُوْا عُنُقَهٗ.
অর্থ: “হযরত উসামা ইবনে শারীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যে কোনো ব্যক্তি মনোনীত খলীফা উনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে আমার উম্মতের মাঝে বিভেদ-বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে, তাকে কতল করো।” (নাসায়ী, মু’জামুল কাবীর ১/২০৬, ফাতহুল কাবীর ১/৪৫৯, মিশকাত)

খলীফা মনোনীত হওয়ার ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اِذَا اَرَادَ اللهُ اَن يـَّخْلُقَ خَلْقًا لِّـلْـخِـلَافَةِ مَسَحَ ناصِيَتَهٗ بِيَدِهٖ.
অর্থ: “যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মাহবূব ব্যক্তিত্ব মুবারক বা ওলীউল্লাহ উনাদের মধ্য থেকে কাউকে খলীফা হিসেবে সৃষ্টি করার ইচ্ছা মুবারক পোষণ করেছেন, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে খলীফা হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি উনার কুদরতী হাত মুবারক উক্ত মাহবূব ব্যক্তিত্ব মুবারক বা মহান ওলীউল্লাহ উনার কপাল মুবারক-এ বুলিয়ে দিয়েছেন তথা কপাল মুবারক-এ কুদরতী হাত মুবারক বুলিয়ে দিয়ে সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার বিশেষ মাক্বাম মুবারকখানা হাদিয়া করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!(তারীখুল খুলাফা-১৪, ফাতহুল কাবীর ১/৬৯, জামিউল আহাদীছ ২/২৪৬, দায়লামী ১/২৪৮ জামউল জাওয়ামি, জামিউছ ছগীর ১/৩০ ইত্যাদি)
কাজেই হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যেমন মনোনীত ঠিক তেমনিভাবে খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারাও মনোনীত। বিশেষ করে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারা যেহেতু আখাচ্ছুল খাছভাবে মনোনীত তাই উনাদের প্রত্যেকের শান মুবারক-এ আলাদাভাবে হাদীছ শরীফ রয়েছে। যেমন মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার শান মুবারক-এ অনেক সম্মানিত হাদীছ শরীফ রয়েছে। সেখান থেকে কিছু ১ম খ-ে আলোচনা করা হয়েছে এবং সামনেও আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং যিনি খলীফা হবেন তিনি কস্মিনকালেও ভোট-নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন না; বরং তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক মনোনীত হবেন। আর যিনি খলীফা হবেন তিনি উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পূর্বেই উনার পরে যিনি খলীফা হবেন, উনাকে মনোনীত করে যাবেন।
উল্লেখ্য যে, একজন খলীফা আলাইহিস সালাম উনার যত গুণাবলী মুবারক বর্ণনা করা হয়েছে বর্তমান যামানায় তা একমাত্র মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম উনার মাঝেই পরিপূর্ণরূপে বিদ্যমান। আর সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা এই বিষয়টি যেহেতু চির অকাট্য ও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, বর্তমান সময়টা হচ্ছে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নির্দিষ্ট সময়। কাজেই সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উসীলায় বর্তমান যামানায় অবশ্য অবশ্যই সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ।

সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম তিনি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ।

সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং সম্মানিত ইজমা শরীফ ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অসংখ্য-অগণিত অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য সম্মানিত দলীল-আদিল্লাহ মুবারক দ্বারা অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও চির অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি অতিশীঘ্রই বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মুজাদ্দিদে আ’যম, ছাহিবুল ইলমিল আউওয়ালি ওয়াল ইলমিল আখিরি মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাদের বেমেছাল দয়া, দান, ফযল, করম ও ইহসান মুবারক উনাদের বদৌলতে এই সম্পর্কে নি¤œ কতিপয় চির অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ তুলে ধরা হলো-

প্রথম প্রমাণ

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصّٰلِـحٰتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِى الْاَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ওয়াদা মুবারক দিচ্ছেন যে, যাঁরা ঈমান আনবেন এবং আমলে ছলেহ করবেন, উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্য অবশ্যই দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক হাদিয়া করবেন; যেমনিভাবে তিনি পূর্ববর্তী উনাদেরকে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুুওওয়াহ মুবারক হাদিয়া করেছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা নূর শরীফ, সম্মানিত আয়াত শরীফ: ৫৫)
আলোচ্য সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, যাঁরা ঈমান আনবেন এবং আমলে ছালিহ করবেন, উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্য অবশ্যই দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক হাদিয়া করবেন; যেমনিভাবে তিনি পূর্ববর্তী উনাদেরকে খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক হাদিয়া করেছিলেন। এটা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা মুবারক।
এখানে কিন্তু বলা হয়নি যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সময় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক হবে এবং হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার সময় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক হবে। এছাড়া আর অন্য কোনো সময় তথা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বে অর্থাৎ উনার পূর্ববর্তী যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক কায়িম হবে না। বরং এখানে স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, ঈমান আনলে এবং আমলে ছলেহ করলে যে কোনো সময় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক কায়িম হবে। আর সে সময়টা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বেও হতে পারে। এখানে নির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেয়া হয়নি। সুতরাং এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার থেকে এই বিষয়টিও অত্যন্ত সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ঈমান আনলে এবং আমলে ছালিহ করলে বর্তমান যামানায়ও অবশ্য অবশ্যই সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক কায়িম হবে; যেমনটি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সময় কায়িম হয়েছিলো। মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই দিবেন। এটা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা। আর মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা মুবারক অবশ্যই সত্য। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা মুবারক সত্য।” (সম্মানিত সূরা ইউনূস শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৫৫)
আর বর্তমান যামানায় যেহেতু সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং পূর্ববর্তী সম্মানিত আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন আখাচ্ছুল খাছ খলীফা তথা ১০ম খলীফা, সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন এবং তিনি উনার মুরীদান উনাদেরকে নিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ আমলে ছালেহ “সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ” দায়িমীভাবে পালন করে যাচ্ছেন সুবহানাল্লাহ! এবং তা অনন্তকালের জন্য জারি করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং উনার মুবারক উসীলায় বর্তমান যামানায় বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ!


দ্বিতীয় প্রমাণ

عَنْ اُمّ ِ الْـمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ اُمِّ سَلَمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ اخْتِلَافٌ عِنْدَ مَوْتِ خَلِيْفَةٍ فَيَخْرُجُ رَجُلٌ مّـِنْ اَهْلِ الْمَدِيْـنَـةِ هَارِبًا اِلـٰى مَكَّةَ فَيَأْتِيْهِ نَاسٌ مِّنْ اَهْلِ مَكَّةَ فَيُخْرِجُوْنَهوَهُوَ كَارِهٌ فَيُبَايِعُوْنَهبَيْنَ الرُّكْنِ وَالْمَقَامِ وَيُبْعَثُ اِلَيْهِ بَعْثٌ مِّنَ الشَّامِ فَيُخْسَفُ بِـهِمْ بِالْبَيْدَاءِ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِيْنَةِ فَاِذَا رَاَى النَّاسُ ذٰلِكَ اَتَاهُ اَبْدَالُ الشَّامِ وَعَصَائِبُ اَهْلِ الْعِرَاقِ فَيُبَايِعُوْنَهثُـمَّ يَنْشَاُ رَجُلٌ مِّنْ قُرَيْشٍ اَخْوَالُهكَلْبٌ فَيَبْعَثُ اِلَيْهِمْ بَعْثًا فَيَظْهَرُوْنَ عَلَيْهِمْ وَذٰلِكَ بَعْثُ كَلْبٍ وَّيَعْمَلُ فِى النَّاسِ بِسُنَّةِ نَبِيّـِهِمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيُلْقِى الْاِسْلاَمُ بـِجِرَانِهٖ اِلَى الْاَرْضِ فَيَلْبَثُ سَبْعَ سِنِيْنَ ثُـمَّ يُتَوَفّٰـى وَيُصَلّـِىْ عَلَيْهِ الْمُسْلِمُوْنَ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, শেষ যামানায় একজন খলীফা উনার বিছাল শরীফ মুবারক গ্রহণ করার সময় নেতৃস্থানীয় লোকদের মধ্যে আর একজন খলীফা মনোনীত করার ব্যাপারে ইখতিলাফ তথা মতবিরোধ দেখা দিবে। তখন এক ব্যক্তি তথা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি নিজেকে গোপন রাখার উদ্দেশ্যে সম্মানিত মদীনা শরীফ থেকে সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবেন। এই সময় সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার সম্মানিত অধিবাসী উনারা উনাকে খুঁজে বের করবেন। কিন্তু তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। (প্রকৃতপক্ষে তিনি হলেন হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম। তিনি নিজেকে গোপন রাখতে চাইবেন। কিন্তু উনার মুবারক কর্মকা-ে এবং সম্মানিত চেহারা মুবারক উনার নূরানী জ্যোতির্ময় আলোকে লোকেরা চিনে ফেলবেন যে, ইনিই হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম।) অতঃপর রুকনে ইয়ামেন ও মাক্বামে ইব্রাহীম শরীফ উনাদের মধ্যবর্তী স্থানে লোকেরা উনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করবেন। এরপর সিরিয়া হতে একদল সৈন্য উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রেরণ করা হবে। কিন্তু সম্মানিত মক্কা শরীফ ও সম্মানিত মদীনা শরীফ উনাদের মধ্যবর্তী ‘বাইদা’ নামক স্থানে তাদেরকে ভূগর্ভে পুঁতে ফেলা হবে। অতঃপর যখন চতুর্দিকে এই খবর ছড়িয়ে পড়বে এবং লোকেরা চাক্ষুষ এই অবস্থা দেখতে পাবে, তখন সিরিয়ার আবদালগণ উনারা এবং ইরাকের একটি বিরাট জামায়াত উনার নিকট আসবেন এবং উনার মুবারক হাতে বাইয়াত হবেন। অতঃপর কুরাইশের এক ব্যক্তি যার মামার বংশ হবে ‘বনূ কালব’ সেও হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার বিরুদ্ধে একদল সৈন্য পাঠাবে। উনার সেনাবাহিনী তাদের উপর বিজয়ী হবেন। এটা ‘ফিতনায়ে কালব’। আর তিনি তথা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি মানুষের মাঝে উনাদের নবী তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সুন্নত মুবারক মুতাবিক কাজ-কর্ম পরিচালনা করবেন এবং পুনরায় পৃথিবীতে ইসলাম পুরোপুরিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি সাত বৎসর এই অবস্থায় অবস্থান করবেন এবং মুসলমানগণ উনার জানাযা পড়বেন।” (আবূ দাউদ, মুসনাদে আহমদ ৬/৩১৬, মুসনাদে আবী ইয়া’লা ১২/৩৬৯, আল মু’জামুল কাবীর ১৭/২০৭, আল মু’জামুল আওসাত্ব ২/৩৫, ইবনে আবী শায়বা ৭/৪৬০, ছহীহ ইবনে হিব্বান ১৫/১৫৮, মুছান্নাফে আব্দির রাজজাক ১১/৩৭১, আহকামুশ শরীয়াহ ৪/৫৩১, মাজমাউয যাওয়াইদ ৭/২৬২, আস সুনানুল ওয়ারিদা ফিল ফিতান ৫/১০৮৩, মুসনাদে ইসহাক্ব ৪/১৭০, আখবারিল মাহদী লিছ সুয়ূত্বী ১/৫৬, জামিউল আহাদীছ লিছ সুয়ূত্বী ২৪/২২৯, জামউল জাওয়ামি’ লিছ সুয়ূত্বী ১/২৬৩০৬, আল ফাতহুল কাবীর ৩/৪০৫, আল হাওই ২/৫৬, আত তাযকিরাহ ১/৬৯১, জামিউল উছূল ১০/৭৪৮০, কানযুল উম্মাল ১১/১৩৫, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১০/৩৭২, আন নিহায়াহ ১/১৬, মুখতাছারু তারীখে দিমাশক্ব ১/২৮, আল মুক্বাদ্দিমাহ ১/১৭৩, আছ ছওয়াইকুল মুহ্রিক্বাহ ২/৪৭৬, আদ র্দুরুল মানছূর ১৩/৪০৭, তাফসীরে মাযহারী, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি)
এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বে অবশ্য অবশ্যই সম্মানিত খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে। সুতরাং যারা বলে থাকে যে, সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের কোথাও নেই যে, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক কায়িম হবে, তাদের এই কথা ভুল এবং সম্মানিত কুরআন শরীফ ও সম্মানিত সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ বলে প্রমাণিত হলো। এখন কথা হলো যে, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক কায়িম যদি নাই হয়, তাহলে হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার সময় খলীফা আসবেন কোথা থেকে? অথচ উপরোক্ত হাদীছ শরীফ মুবারক উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে,
يَكُوْنُ اخْتِلَافٌ عِنْدَ مَوْتِ خَلِيفَةٍ فَيَخْرُجُ رَجُلٌ مِّنْ اَهْلِ الْمَدِيْــنَـةِ هَارِبًا اِلـٰى مَكَّةَ
“একজন সম্মানিত খলীফা আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ মুবারক গ্রহণ করার সময় নেতৃস্থানীয় লোকদের মধ্যে ইখতিলাফ দেখা দিবে যে, উনার পরে কে খলীফা হবেন। তখন একজন ব্যক্তি তথা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার থেকে সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার দিকে রওয়ানা হবেন।”
অর্থাৎ হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি খলীফা হিসেবে প্রকাশ হওয়ার পূর্বে সম্মানিত মুসলমান উনারা খুব কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন। ইহুদী, খ্রিস্টান, বিধর্মীরা এবং মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’রা সম্মানিত মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে কঠিন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে। তখনো সম্মানিত মুসলমান উনাদের সংখ্যা কাফির-মুশরিকদের তুলনায় বেশি থাকবে। কিন্তু মুনাফিক্ব ও ‘উলামায়ে সূ’দের কারণে সম্মানিত মুসলমান উনারা সাময়িকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবেন। এমতাবস্থায় সম্মানিত মুসলমান উনারা এই কঠিন পরিস্থিতির মুকাবিলা করার জন্য একজন বিশেষ খলীফা আলাইহিস সালাম উনার প্রয়োজন অনুভব করবেন। ওই সময় মুসলমানদের মধ্যে যিনি খলীফা থাকবেন উনার বিছাল শরীফ গ্রহণ করার সময় সম্মানিত সভাসদগণ উনাদের মধ্যে ইখতিলাফ দেখা দিবে যে, এই কঠিন পরিস্থিতিতে কাকে খলীফা হিসেবে মনোনীত করা যায়।
তখন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে সর্বশেষ খলীফা তথা ১২তম খলীফা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি নিজেকে গোপন রাখার উদ্দেশ্যে সম্মানিত মদীনা শরীফ থেকে সম্মানিত মক্কা শরীফ-এ যাবেন। ওই সময় যেই সমস্ত সুমহান ওলীউল্লাহ উনারা থাকবেন, উনারা সম্মানিত হাদীছ শরীফ মুবারক উনার মধ্যে বর্ণিত বিভিন্ন আলামত দেখে হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনাকে চিনে ফেলবেন এবং উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করবেন।
সুতরাং উপরোক্ত সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার খলীফা হিসেবে প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে পৃথিবীতে সম্মানিত খিলাফত মুবারক কায়িম থাকবে এবং খলীফাও থাকবেন। যদি হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বে সম্মানিত খিলাফত মুবারক কায়িম না-ই হয়, তাহলে উনার পূর্বে খলীফা আসবেন কোথা থেকে? অথচ তখন যে একজন মহান খলীফা থাকবেন এবং সম্মানিত খিলাফত মুবারকও থাকবে এই বিষয়টি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার থেকে আরো একটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার সময় সম্মানিত মদীনা শরীফ, সম্মানিত মক্কা শরীফ এবং সম্মানিত ক্বা’বা শরীফ উনাদের মধ্যে কোনো সিসিটিভি থাকবে না। কারণ সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার ভিতর এবং উনার আশেপাশে সিসিটিভি থাকা অবস্থায় তিনি কস্মিনকালেও সম্মানিত কা’বা শরীফ তাওয়াফ করতে পারেন না। কেননা ছবি-তোলা, আঁকা, রাখা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। এখন কথা হলো যে, তাহলে উনার পূর্বে সেই সিসিটিভিগুলো ধ্বংস করবেন কে? বর্তমান যামানায় যেই সমস্ত ফিতনা-ফাসাদসমূহ রয়েছে এই সমস্ত ফিতনা-ফাসাদগুলো মিটিয়ে দিয়ে সারা বিশ্বে সম্মানিত খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেন কে?
অবশ্য অবশ্যই সেই সুমহান কাজটি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন আখাচ্ছুল খাছ বিশেষ খলীফা আলাইহিস সালাম তিনিই করবেন। তাহলে সেই সুমহান আখাচ্ছুল খাছ বিশেষ খলীফা আলাইহিস সালাম তিনি কে? আমরা জানি, এই পর্যন্ত মোট ৯ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারা অতীত হয়েছেন। উনারা হচ্ছেনÑ ১. ছিদ্দীক্বে আকবর সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম, ২. ফারূক্বে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ইবনুল খত্ত্বাব আলাইহিস সালাম, ৩. সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম, ৪. আসাদুল্লাহিল গালিব সাইয়্যিদুনা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, ৫. ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম, ৬. ছাহিবুস সির সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু , ৭. সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ৮. হযরত ওমর বিন আব্দুল আজীজ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ৯. সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ১২তম খলীফা। আর ১০ম খলীফা হচ্ছেন মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস্ সাফ্ফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম এবং ১১তম খলীফা হচ্ছেন মুজাদ্দিদে আ’যমে ছানী, খলীফাতুল উমাম আল মানছূর হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস্ সালাম। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং এটা আর বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, মূলত সেই সুমহান আখাচ্ছুল খাছ বিশেষ খলীফা আলাইহিস সালাম তিনিই হচ্ছেন মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, অতিশীঘ্রই উনার মুবারক উসীলায় দুনিয়ার যমীনে, সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, উনার মুবারক উসীলায় এক সময় সম্মানিত মক্কা শরীফ, সম্মানিত মদীনা শরীফ এবং সম্মানিত কা’বা শরীফ উনাদের ভিতর যত সিসিটিভি রয়েছে এই সমস্ত সিসিটিভিগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং উনি ছবি ছাড়াই সম্মানিত মক্কা শরীফ ও সম্মানিত মদীনা শরীফ-এ সম্মানিত হজ্জ মুবারক করতে যাবেন ইনশাআল্লাহ।


0 Comments: