একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৭৫

 


ওলীয়ে মাদারজাত, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশ্ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার স্বরণে- একজন কুতুবুয যামান উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

 বেদনা-বিমুগ্ধ মানসিকতায় জীবন যাপনে নতুন মাত্রা যোগ এবং অভীষ্ট লক্ষ্যে ক্রমবর্ধিষ্ণু উত্তরণ           নফসকে নির্মূল করে ফেলার কোশেশ কোন কাজই নয়, যেহেতু নফসের মৌলিকতা কখনোই ধ্বংস হয়না।

          যা আবশ্যিক তা হলো, নফসকে বশীভূত করে রাখা, কখনোই অবাধ্য হতে না দেয়া। এমন অবস্থা আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণের প্রাথমিক স্তরের কামিয়াবী। ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান  আলাইহিস সালাম-উনারও এটি প্রাথমিক স্তরের সাফল্য। কৈশোর কাল থেকেই সরবে অথবা নিরবে, লোকালয়ে অথবা নির্জনে, আত্মীয়-পরিজন বেষ্টিত অথবা বিচ্ছিন্নতায়- যে কোন অবস্থায়ই তিনি আপন একাকীত্বে আল্লাহ পাক-উনার মুহব্বত ও মারিফাতে নিমজ্জিত ছিলেন।

          সকল অবস্থায়ই তিনি ছিলেন অতি সতর্ক। হুযূরী ক্বালব’ (পরিপূর্ণ আত্মনিবেদন)-উনার এক নাম আত্মবোধ সম্পন্ন সতর্কতা অবলম্বন এবং অনুক্ষণ ইস্তিকামত (অবিচল) থাকা। হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজে এরূপ সতর্কতা অবলম্বন করেছেন এবং উনার ব্যাখ্যা এভাবে দিয়েছেনঃ আমি যদি রাতে নিদ্রা যাই, তবে যেনো আমি নিজেকে ধ্বংস করে দিলাম। আর যদি দিনে ঘুমাই তবে যেনো অধীনস্থ জনপদবাসীকে ধ্বংস করে দিলাম।

          এতে বোঝা গেল, এমনভাবে দিন যাপন করতে হবে, অঙ্গ-প্রতঙ্গ-শরীর কাজে ব্যস্ত থাকলেও মন ও মনন যেনো আল্লাহ পাক-উনার মুহব্বত-মারিফাতে ডুবে থাকে। কাজটি অত্যন্ত কঠিন। এ কঠিন কাজে কামিয়াব ছিলেন ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, ছহিবে কাশফ ওয়া কারামত, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, ফখরুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান  আলাইহিস সালাম। উনার জীবনবোধ, জীবনাচরণ ও জীবনযাপন এতো সূক্ষ্মতায় ভরপুর যে, অতি চেনা ও পরিচিত হয়েও অধিকাংশের উপলব্ধির আগম্যতায় তিনি অচেনা ভুবনের বাসিন্দাই রয়ে গেলেন।

          বিদদ্ধ মানুষের জানা যে, ‘সব কথার মরন হলে হৃদয় কথা বলে।ঐশ্বর্যম-িত অন্তরের আলোকময় প্রভায় আল্লাহ পাক-উনার অনুগত বান্দাগণ তখন কেবল অন্তরের ডাকেই (ইলহাম ও ইলকা) সাড়া দিয়ে থাকেন। অন্তর্যামী আল্লাহ পাকই তখন কেবল তাদের মূল লক্ষ্য। আল্লাহ পাক অপার অনুগ্রহে উনাদের অন্তরে যখন মুহব্বত ও মারিফাতের রহস্যপূর্ণ বিছানা পেতে দেন, তখন ইলহাম, ইলকা এবং ইলমে লাদুন্নীর অভাবিত সংযোগে উনাদের অন্তর উদ্ভাসিত হয়ে যায়। সঙ্গতকারণেই এতে তাঁরা দুনিয়ার বিরুদ্ধে বেপরোয়া হয়ে উঠেন। যদিও উনাদের আচরণ, বিচরণ এবং যাবতীয় কার্যাবলী আবশ্যিকভাবে দুনিয়াতেই সম্পাদিত হয়। এমন অবস্থায় স্বভাব-সম্পৃক্ত উদ্বেগ ও সংকট ওলীগণের নিত্য সঙ্গী হয়। এ মর্মে হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

 والمخلصون على خطر عظيم.

 অর্থঃ- মুখলিছগণ (আল্লাহ পাক-উনার নৈকট্যলাভকারী সূক্ষ্মদর্শী ওলীআল্লাহ) নিদারুণ সংকটে নিপতিত।          এমন ওলীআল্লাহগণের অবয়বে দুঃশ্চিন্তার সূক্ষ্ম রেখাপাত সাধারণের অনধিগম্য। আনত মুখ, নিমীলিত চোখ, বিনম্র স্বভাব, নিঃশর্ত আনুগত্য এবং দায়িমী হুজুরীর সঙ্গে নিরহঙ্কার ব্যক্তিত্বের সংমিশ্রণ উনাদেরকে অনুক্ষণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, খাজিনার্তু রহমত, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকটবর্তী করে দেয়। আল্লাহ পাক-উনার প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 انا سيد ولد ادا ولافخر.

 অর্থঃ- আমি আদম (আলাহিস্ সালাম) সন্তানদের সর্দার। কিন্তু আমার কোন ফখর নেই।আল্লাহ পাক-উনার নৈকট্য প্রত্যাশী সকলেরই অনিবার্যভাবে ওয়ারিশসূত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মুবারক ব্যক্তিত্বের পরিমিত হিস্যালাভ করা অত্যাবশক। (অসমাপ্ত)

আবা-১৩৪

0 Comments: