কাদিয়ানি রদ -২৬

 


খতমে নুবুওওয়াত প্রচার কেন্দ্র

খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারীরা কাফির

ইসলামী শরীয়তের হুকুম মোতাবেক যারা মুসলমান থেকে খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত হয়

(যেমন- কাদিয়ানী, বাহাই  ইত্যাদি)

তাদের তওবার জন্য নির্ধারিত সময় ৩দিন। এরপর তওবা না করলে তাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড

 

কাদিয়ানী রদ! (১)

 

(পঞ্চম ভাগ)

          (মুবাহিছে আযম, বাহরুল উলূম, ফখরুল ফোক্বাহা, রইছুল মোহাদ্দিসীন, তাজুল মোফাসসিরীন, হাফিজে হাদীস, মুফতীয়ে আজম, পীরে কামিল, মুর্শিদে মোকাম্মিল হযরত মাওলানা আল্লামা শাহ্ সূফী মুহম্মদ রুহুল আমিন (রঃ) কর্তৃক প্রণীত কাদিয়ানী রদকিতাবখানা (৬ষ্ঠ খন্ডে সমাপ্ত) আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছি। যাতে কাদিয়ানীদের সম্পর্কে সঠিক ধারণাসহ সমস্ত বাতিল ফিরকা থেকে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীদের ঈমান আক্বীদার হিফাযত হয়। আল্লাহ্ পাক আমাদের প্রচেষ্টার কামিয়াবী দান করুন (আমিন)। এক্ষেত্রে তাঁর কিতাব থেকে হুবহু উদ্ধৃত করা হলো, তবে তখনকার ভাষার সাথে বর্তমানে প্রচলিত ভাষার কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্যণীয়)।

 

(ধারাবাহিক)

 পাঠক, মির্জ্জা ছাহেবের কথায় বুঝা যায় যে, হজরত নবি (ছাঃ) এর ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা হইয়াছিল, কিন্তু ইহা মির্জ্জা ছাহেবের বাতীল দাবি, কারণ হজরত একটা স্বপে¦র কথা প্রকাশ করিয়া উহার তাবির করিয়াছিলেন, তিনি এস্থলে কোন ভবিষ্যদ্বাণী করেন নাই।

           মেশকাতের ৩৯৫ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে,

عن النبى صلى الله عليه وسلم قال رأيت فى المنام- انى اهاجر من مكة الى ارض بها نخل فذهب وهلى الى انها اليمامة او هجر فاذا هى المدينة يثرب-

নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলিয়াছেন, আমি স্বপ¦যোগে দেখিলাম যে, নিশ্চয় আমি মক্কা শরিফ হইতে এরূপ জমির দিকে হেজরত করিব- যাহাতে খোর্ম্মা বৃক্ষ সকল এছ। ইহাতে আমার ধারণা হইয়াছিল যে, উহা ইমামা কিম্বা হাজার হইবে, হঠাৎ বুঝিতে পরিলাম যে, উহা মদিনা-এছরব।

          এই হাদিছে বুঝা যায় যে, হজরত স্বপ¦যোগে উহা মদিনা বলিয়া বুঝিতে পারিয়াছিলেন, যদি ইহাকে মির্জ্জা ছাহেবের মতে ভবিষ্যদ্বাণী বলিয়া ধরিয়া লওয়া হয়, তবে বলি, তিনি মদিনা শরিফে হেজরত করার ভবিষ্যদ্বাণী করিয়াছিলেন, ইহাতে কোথায় তাঁহার ভবিষ্যদ্বাণী ভ্রান্তিমূলক হইল।

১৩। মির্জ্জা ছাহেব এজালাতোল-আওহামের ৩৬৩ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেনঃ-

উর্দূ কম্পোজ করতে হবে

যখন হযরত (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিবিরা তাঁহার সাক্ষাতে হস্ত মাপিতে আরম্ভ করিলেন, তখন তাঁহাকে এই ভূলের সংবাদ প্রদান করা হইল না, এমনি কি তিনি এন্তেকাল করিয়া গেলেন। ইহাতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, হজরতের মত এই ছিল যে, প্রকৃতপক্ষে যে বিবির হস্ত লম্বা ছিল, তিনিই প্রথমে এন্তেকাল করিবেন। এই হেতু তাঁহার সাক্ষাতে তাঁহারা হস্ত মাপিতে লাগিলেন, কিন্তু তিনি নিষেধ করেন নাই।’ (অসমাপ্ত)

 

ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক কাদিয়ানীদের কাফিরষোষণা! (২)

          -অনুবাদক- আলহাজ্ব মুহম্মদ হাবিবুল হক

 

(ধারাবাহিক)

আব্দুল ওয়াহিদ খান রচিত তারিখ-ই-আফকার-ই-ছিয়াছাত”-এর ১৮১ পৃষ্ঠায় মুসলমানদের ধর্মীয় সহনশীলতা সম্বন্ধে লিখেছেন, “সকল সময়ে এবং যুগে মুসলিম রাজ্যে ধর্মীয় সহনশীলতা ছিল একটি পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্য। উদাহরণ আছে যে, বিভিন্ন সরকার মুসলমানদের উপর ধর্মীয় সীমাবদ্ধকরণ আরোপ করেছে এবং মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের হিসাব দিতে প্রচন্ড কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে (বাদশাহ্র মত বিরোধের কারণে)। কিন্তু ইতিহাসে কোন নজির নেই। যেমন মুসলিম রাজ্যে অমুসলিম প্রজারা সম-ব্যবহার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগে সমর্থ ছিল।

          তিনি উল্লেখ করেছেন যে, মুসলিম রাষ্ট্রে  পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বিরাজমান ছিল এবং বিভিন্ন ধর্মের সদস্যরা তাদের নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী ধর্ম অনুষ্ঠান পালন করত (তাদের নীতি অনুযায়ী)। তাদের ধর্মানুষ্ঠান পালনের স্থানসমূহ রক্ষনাবেক্ষন সরকারের নীতির অন্তর্ভূক্ত ছিল। মোতাওয়াকিল এর সময়ে নিপীড়নের কয়েকটি ঘটনা জানা যায়। যার কারণ ছিল এই যে, তখন অমুসলিম প্রজারা প্রতিষ্ঠিত মুসলিম সরকারে বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্র করেছিল এবং ষড়যন্ত্রগুলো হয়েছিল অমুসলিমদের উপাসনা স্থানে। এই কারণে  অমুসলিমদের চলাচলে কিছু বাধ্যবাধকতা এবং তাদের পোশাক সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল। এছাড়া মোতাওয়াকিল ব্যক্তিগতভাবে প্রচলিত মত অবলম্বন করে না এমন ছিলেন না এবং ধর্মীয় ব্যাপারে সহনশীলতার সমর্থক ছিলেন।

          তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, আব্বাসীয় সরকার ধর্মীয় ব্যাপারে ধৈর্য্য অবলম্বনে এতই উদারতা দেখিয়েছেন যে, ম্যানির অনুসারী যারা ইরানের অধিবাসী হয়েও ইরানে রাজনৈতিক আশ্রয় পায়নি কিন্তু বাগদাদে তাদের মতামত প্রচারের অনুমতি পেয়ে ছিল। একইভাবে ভারতীয়, ইহুদী এবং খৃষ্টান মিশনারীরা মুসলিম রাষ্ট্রে কোন বাধা ছাড়াই তাদের ধর্ম প্রচার করেছে। বনু উমাইয়াদের শাসনামলে অমুসলিমদের রাজকার্য্যে উচ্চপদে নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু বনু আব্বাসদের শাসনামলে একজন অমুসলিমকে প্রধান মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে। মোহতাসিমের প্রধান মন্ত্রী ফজল বিন মারওয়ান ছিল খৃষ্টান এবং তার কার্যকালে বাইতুল হিকমাতে- যাতে বিভিন্ন বিষয়ের কিতাবাদী অনুবাদ করা হয়েছে। তার সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনায় অমুসলিমরা নিয়োজিত ছিল। বনু আব্বাসের আদালতে জিব্রাঈল পরিবারের গুরুত্ব পাওয়া একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক ঘটনা।

          আব্দুর রহিম তার সম্পাদিত মুসলিম ব্যবহার শাস্ত্রে” (পুনঃ মুদ্রন ১৯৫৮) ২৫১ পৃষ্ঠায় পবিত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি প্রথা রদ্দুল মোখতারভলিউম ৩, পৃষ্ঠা ৩১৯-৩২০ থেকে উল্লেখ করেন, “অমুসলিমদের থাকতে এবং যা তারা বিশ্বাস করেএই নীতি অনুযায়ী ইমাম শাফী (রঃ)-এর ফতওয়া হলো- মুসলিম আইন অমুসলিমদের মদপানে বাধা দেয়া থেকে বিরত থাকবে। এবং ইমাম আযম আবূ হানিফা (রঃ) মতে, মুসলিম আইন অমুসলিমদের দ্বারা মদ বিক্রির ব্যবস্থা করবে এবং যদি কোন ব্যক্তি লোকসানের জন্য উহা ক্ষতিগ্রস্ত করে তবে তাকে অপরাখ বলে গণ্য করা হবে।

          মওদুদী তার রচিত বই ইসলামী রিয়াসতেউল্লেখ করে যে, জিম্মি দুই প্রকার। প্রথমতঃ যারা মুসলিম রাষ্ট্র থেকে নিরাপত্তা বিধানে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ এবং দ্বিতীয়তঃ যারা পেয়েছে কোন চুক্তি ছাড়া। প্রথমোক্ত জিম্মিরা চুক্তিনামা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হবে। দ্বিতীয় প্রকারের জিম্মিদের জন্য এটা স্পষ্ট ইঙ্গিতে বহন করে যে, আমরা তাদের জীবন, সম্পত্তি এবং সম্মানের একইভাবে নিরাপত্তা বিধান করবো, যেমন আমরা আমাদের নিজেদের জীবন, সম্পত্তি ও সম্মানের নিরাপত্তার বিধান করি। তাদের রক্তের বিনিময় মুসলমানদের রক্তের বিনিময়ের সমানই হবে। তাদের ধর্ম প্রচার পালনে থাকবে সঠিক স্বাধীনতা। তাদের ধর্মালয় থাকবে সম্পূণ নিরাপদ। তাদের ধমীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করার অধিকার ভোগ করবে এবং ইসলামী শিক্ষা তারা উপর চাপিয়ে দেয়া হবে না। (পৃষ্ঠা ৫২৩)

          পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াত, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চুক্তিনামা, তাঁর অনুসারীরা এবং ইতিহাসের অন্যান্য মুসলিম খলীফাদের আচরণ থেকে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, অমুসলিমরা তৎকালে যে অধিকার (রেয়াত) ভোগ করেছে তা এখনও পর্যন্ত কোন কোন উপনিবেশিকতাবাদের সমর্থকরা তাদের প্রজাদের জন্য অনুমোদন করে নাই। আসলে এই রকম অধিকার অনেক রাষ্ট্রেই তাদের নাগরিকদের জন্য কার্যকর করা হয়নি। অমুসলিমরা তাদের ধর্ম পালনে এবং প্রচারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করেছে এবং প্রকৃত প্রস্তাবে ধর্ম প্রচার এবং পালনকে একটি মৌলিক মানবধিকার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। (অসমাপ্ত)

************************************

খতমে নুবুওওয়াত প্রচার কেন্দ্র

খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারীরা কাফির

ইসলামী শরীয়তের হুকুম মোতাবেক যারা মুসলমান থেকে খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত হয়

(যেমন- কাদিয়ানী, বাহাই  ইত্যাদি)

তাদের তওবার জন্য নির্ধারিত সময় ৩দিন। এরপর তওবা না করলে তাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড

 

কাদিয়ানী রদ! (১)

 

(পঞ্চম ভাগ)

          (মুবাহিছে আযম, বাহরুল উলূম, ফখরুল ফোক্বাহা, রইছুল মোহাদ্দিসীন, তাজুল মোফাসসিরীন, হাফিজে হাদীস, মুফতীয়ে আজম, পীরে কামিল, মুর্শিদে মোকাম্মিল হযরত মাওলানা আল্লামা শাহ্ সূফী মুহম্মদ রুহুল আমিন (রঃ) কর্তৃক প্রণীত কাদিয়ানী রদ কিতাবখানা (৬ষ্ঠ খন্ডে সমাপ্ত) আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছি। যাতে কাদিয়ানীদের সম্পর্কে সঠিক ধারণাসহ সমস্ত বাতিল ফিরকা থেকে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীদের ঈমান আক্বীদার হিফাযত হয়। আল্লাহ্ পাক আমাদের প্রচেষ্টার কামিয়াবী দান করুন (আমিন)। এক্ষেত্রে তাঁর কিতাব থেকে হুবহু উদ্ধৃত করা হলো, তবে তখনকার ভাষার সাথে বর্তমানে প্রচলিত ভাষার কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্যণীয়)।

 

(ধারাবাহিক)

 পাঠক, মির্জ্জা ছাহেবের কথায় বুঝা যায় যে, হজরত নবি (ছাঃ) এর ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা হইয়াছিল, কিন্তু ইহা মির্জ্জা ছাহেবের বাতীল দাবি, কারণ হজরত একটা স্বপে¦র কথা প্রকাশ করিয়া উহার তাবির করিয়াছিলেন, তিনি এস্থলে কোন ভবিষ্যদ্বাণী করেন নাই।

           মেশকাতের ৩৯৫ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে,

عن النبى صلى الله عليه وسلم قال رأيت فى المنام- انى اهاجر من مكة الى ارض بها نخل فذهب وهلى الى انها اليمامة او هجر فاذا هى المدينة يثرب-

নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলিয়াছেন, আমি স্বপ¦যোগে দেখিলাম যে, নিশ্চয় আমি মক্কা শরিফ হইতে এরূপ জমির দিকে হেজরত করিব- যাহাতে খোর্ম্মা বৃক্ষ সকল এছ। ইহাতে আমার ধারণা হইয়াছিল যে, উহা ইমামা কিম্বা হাজার হইবে, হঠাৎ বুঝিতে পরিলাম যে, উহা মদিনা-এছরব।

          এই হাদিছে বুঝা যায় যে, হজরত স্বপ¦যোগে উহা মদিনা বলিয়া বুঝিতে পারিয়াছিলেন, যদি ইহাকে মির্জ্জা ছাহেবের মতে ভবিষ্যদ্বাণী বলিয়া ধরিয়া লওয়া হয়, তবে বলি, তিনি মদিনা শরিফে হেজরত করার ভবিষ্যদ্বাণী করিয়াছিলেন, ইহাতে কোথায় তাঁহার ভবিষ্যদ্বাণী ভ্রান্তিমূলক হইল।

১৩। মির্জ্জা ছাহেব এজালাতোল-আওহামের ৩৬৩ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেনঃ-

উর্দূ কম্পোজ করতে হবে

যখন হযরত (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিবিরা তাঁহার সাক্ষাতে হস্ত মাপিতে আরম্ভ করিলেন, তখন তাঁহাকে এই ভূলের সংবাদ প্রদান করা হইল না, এমনি কি তিনি এন্তেকাল করিয়া গেলেন। ইহাতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, হজরতের মত এই ছিল যে, প্রকৃতপক্ষে যে বিবির হস্ত লম্বা ছিল, তিনিই প্রথমে এন্তেকাল করিবেন। এই হেতু তাঁহার সাক্ষাতে তাঁহারা হস্ত মাপিতে লাগিলেন, কিন্তু তিনি নিষেধ করেন নাই। (অসমাপ্ত)

 

ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক কাদিয়ানীদের কাফির ষোষণা! (২)

          -অনুবাদক- আলহাজ্ব মুহম্মদ হাবিবুল হক

 

(ধারাবাহিক)

 ধর্মীয় বিষয়ে ইসলাম শর্তহীন ধৈর্য্যের শিক্ষা দেয় এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণে একজন মানুষের পরিণতীর উপর নির্ভর করে। এ ব্যাপারে কোন জোর-জবর দস্তি ইসলামে গ্রহণীয় নয়। কেউ বিশ্বাস করতে পারে এবং কেউ বিশ্বাস নাও করতে পারে। এমন কি কারো বিশ্বাসে হস্তক্ষেপের ক্ষমতা পবিত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও দেয়া হয়নি, তাঁর দায়িত্ব এতটুকুই যে তিনি সংবাদ অবহিত করবেন এবং ব্যাখ্যা করে দিবেন এবং যদি ঈমান আনে তবে, তিনি জান্নাতের সুঃসংবাদ দিবেন আর যদি অবিশ্বাস করে তবে তাকে জাহান্নামের দুঃসংবাদ জানিয়ে দিবেন। এটাই তাঁর দায়িত্ব।

          এ সকল যুক্তি যদিও বড়ো একটা প্রাসঙ্গিক নয় কারণ বিবৃত আইনে কাদিয়ানী বিশ্বাস পরিবর্তন করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার জন্য জবর দস্তি করা হয়নি।

          এ প্রসঙ্গের সম্মুখীন হয়ে মিঃ মুজিবুর রহমান অভিযোগ করেন যে, ইসলাম তাদের ধর্ম হিসেবে প্রচারে কাদিয়ানীদের বিরত রাখা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তারা মুসলমানও নয় এবং এই বিষয়গুলি ঐ সকল আয়াতের সাথে সংশ্লিষ্টও নয় যা ইকরার (জোর বা হুমকির) নীতির সাথে প্রযোজ্য। আয়াতগুলি অন্য ধর্মাবলম্বীদের ইসলাম গ্রহণে সংশ্লিষ্ট।

          মিঃ মুজিবুর রহমান কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের আলোকে দলিলের শর্ত সমূহের প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করেন। ঐ সকল যুক্তি সম্বন্ধে আলোচনা করার কোন প্রয়োজন নেই। যেহেতু কি করা যাবে বা কি করা যাবে না। এই মর্মে কতৃপক্ষীয় আদেশ রয়েছে এবং ঐ সকল প্রস্তাবনার সত্যতা সম্বন্ধে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। হুদায়বিয়ার সন্ধি যার ঈশ্বর বাদীদের সাথে অবস্থানবত কোনো মুসলমান। তাদের বিনা অনুমতিতে মুসলমানদের নিকট চলে যায় তাকে মক্কাবাসীদের নিকট ফেরত দিতে হবে। এ রকম কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে। মক্কাবাসীদের দুর্ব্যাহার ও অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মক্কা থেকে পলায়ন করে মদীনা শরীফে গিয়েছিলেন কিন্তু হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সন্ধির শর্তানুযায়ী তাদের কে মক্কায় ফিরে যেতে নির্দেশ দেন।

          মিঃ মুজিবুর রহমান যুক্তি উপস্থাপন করেন যে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময় কায়েদ-ই-আজম ও আহমদীদের মধ্যে একটি আইন সম্মত চুক্তি সম্পাদন করা হয় এবং কায়েদ-ই-আজম ঘোষণা করে যে, মুসলিম ও অমুসলিম সকলেই সমান অধিকার ভোগ করবে। এবং প্রত্যেকই স্বাধীন ভাবে তার নিজ ধর্ম প্রচার ও পালন করতে পারবে। একেও পরোক্ষভাবে চুক্তিনামা বা একরার নামাই বলা যেতে পারে। বিভিন্ন ব্যবস্থায় সন্নিবেশিত হয়েছে সংবিধান পাকিস্থানের সকল নাগরীকদের। তাদের ধর্ম সাধারণ্যে প্রকাশ করা, পালন করা এবং প্রচার করার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করবে। ১৯৭৪ ঈঃ সাল পযর্ন্ত তারা কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করে নি।

          কাদিয়ানী সম্প্রদায় এবং কায়েদ-ই-আজমের মধ্যে সম্পাদিত কোন চুক্তিনামা তারা দেখাতে পারে নি যে তাদেরকে মুসলমান হিসাবে গণ্য করতে হবে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময়ে বা কায়েদ-ই-আজমের জীবদ্বশায়ও এই প্রশ্ন উত্থাপন করা হয় নি। ১৯৫৬ এবং ১৯৬২ সালে সংবিধান এবং ১৯৭৩ সালের মুল সংবিধানের উপর কোনো আস্থা রাখা যাবে না কেননা সংবিধানের সংশোধনের দ্বারা সর্বসম্মত ভাবে গৃহিত হয়ে কাদিয়ানীদের কাফির হয়েছিল পাকিস্তানের মুসলমানদের ধরাবাহিক বিক্ষোভের ফলস্বরূপ। এটা কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করেছিল।

          এই অধ্যাদেশ প্রবর্তনের  প্রয়োজন বুঝার জন্য ১৯৭৪ সালের সংবিধানের সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে হবে। যা দ্বারা কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করা হয়েছে। মিঃ মুজিবুর রহমান প্রচন্ডভাবে তার মতামত ব্যক্ত করার সময়ে উল্লেখ করে যে, সংবিধান কাদিয়ানীদের শুধু মাত্র কাফির ঘোষণা করেছে। কিন্তু তাদেরকে কাফের হিসাবে গন্য করার কোনো বাধ্যবাধকতা প্রয়োগ করে নি। জবাবে আমরা তাকে প্রশ্ন করি। পাকিস্তানের কাদিয়ানী নাগরিকদের জন্য সংবিধানের বাধ্যবাধকতা আছে কিনা? তিনি স্বীকার করেন এটা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা তাদের উপর প্রযোজ্য সংবিধান এবং আইনানুযায়ী কাদিয়ানীদের কাফির ঘোষণা করা হয়েছে। কাদিয়ানীরা জাতীয় সংসদ ও প্রাদেশিক সংসদের নির্বাচনে অমুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত আসনে প্রতিযোগীতা করতে পারবে। মামলা মোকদ্দমায় যেখানে ধর্ম বিশ্বাসের প্রশ্ন থাকবে তারা অবশ্যই সেখানে অমুসলিম উল্লেখ করবে। মুসলমান মনে করে তাদের কোনো আইন সম্মত দাবী গ্রহণযোগ্য নয়। এই মামলার যুক্তি তর্কে তাদের নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবে উল্লেখ করা পরিস্কার ভাবে অসংবিধানিক।

           অনুচ্ছেদ ২৬০(৩) দ্বারা কাদিয়ানীদের কাফির ঘোষণা করা হয়েছে সংবিধান এবং আইনানুযায়ী। অনুচ্ছেদ ২০-এ পাকিস্তানী নাগরিকদের তাদের নিজ ধর্ম প্রচারের ক্ষমতা সংরক্ষণের নিশ্চয়তা বিধান করে। এই অনুচ্ছেদটির কার্যকারীতা সন্দেহাতীত ভাবে সংবিধানের অন্যান্য বিধির প্রয়োগ সাপেক্ষে। এই বিষয়টি মিঃ মুুজিবুর রহমান মেনে নেন।  (অসমাপ্ত) 

**************************************************************************************************

কাদিয়ানী রদ! (১)

(পঞ্চম ভাগ)

          (মুবাহিছে আযম, বাহরুল উলূম, ফখরুল ফোক্বাহা, রইছুল মোহাদ্দিসীন, তাজুল মোফাসসিরীন, হাফিজে হাদীস, মুফতীয়ে আজম, পীরে কামিল, মুর্শিদে মোকাম্মিল হযরত মাওলানা আল্লামা শাহ্ সূফী মুহম্মদ রুহুল আমিন রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রণীত কাদিয়ানী রদকিতাবখানা (৬ষ্ঠ খন্ডে সমাপ্ত) আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছি। যাতে কাদিয়ানীদের সম্পর্কে সঠিক ধারণাসহ সমস্ত বাতিল ফিরকা থেকে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীদের ঈমান আক্বীদার হিফাযত হয়। আল্লাহ্ পাক আমাদের প্রচেষ্টার কামিয়াবী দান করুন (আমিন)। এক্ষেত্রে তাঁর কিতাব থেকে হুবহু উদ্ধৃত করা হলো, তবে তখনকার ভাষার সাথে বর্তমানে প্রচলিত ভাষার কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্যণীয়)।

(ধারাবাহিক)   

          পাঠক! হাদিছটি মেশকাতের ১৬৫ পৃষ্ঠায় লিখিত আছেঃ-

عن عائشة ان بعض ازواج النبى صلى الله عليه وسلم قلن للنبى صلى الله عليه وسلم اينا اسرع بك لحوقا؟ قال اطولكن يدا فأخذوا قصبة يذرعونها وكانت سودة اطولهن يدا فعلمنا بعد انما كان طول يدها الصدقة وكانت اسرعنا احوقا به زينب وكانت تحب الصدقة.

          ‘‘আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহু রেওয়াএত করিয়াছেন, নিশ্চয় নবি (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কতক বিবি হজরতকে বলিয়াছিলেন, আমাদের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি সর্ব্বাগ্রে আপনার সহিত মিলিত হইবেন? হজরত ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন, তোমাদের মধ্যে যাহার হস্ত বেশী লম্বা হইবে (দাতা হইবে)। তৎপরে তাঁহারা বাঁশ দ্বারা হস্ত মাপিতে লাগিলেন। (হযরত) ছওদার হস্ত সমধিক লম্বা ছিল। তৎপরে আমরা জানিতে পারিলাম যেহস্ত লম্বা হওয়ার অর্থ দান করা। আমাদের মধ্যে সর্ব্বাগ্রে (হজরত) জয়নব উক্ত হজরতের (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহিত মিলিত হইয়াছিলেন, তিনি দান করা পছন্দ করিতেন।’’

          এই হাদিছে বুঝা যায় যে, হজরত (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলিয়াছিলেন যে, যে বিবির হস্ত অধিক লম্বা হইবে, সেই বিবি প্রথমে মরিবেন। ইহার অর্থ এই যে, যে বিবি অধিকতর দানশীলা হইবেন, তিনি বিবিদের মধ্যে সর্ব্বাগ্রে এন্তেকাল করিবেন। বিবিরা উহার প্রকৃত অর্থ না বুঝিয়া নিজেদের হস্ত মাপিয়াছিলেন, কিন্তু হযরত ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে এই ভবিষ্যদ্বাণী বুঝিতে পারেন নাই, ইহা একেবারে বাতীল দাবি। কোন হাদিছে এইরূপ কথা নাই যে, তাঁহারা হজরতের সাক্ষাতে হস্ত মাপিয়াছিলেন।

          কাজেই মির্জ্জা ছাহেব নিজের শয়তানি এলহামি ভবিষ্যদ্বাণীগুলির দোষ ঢাকিবার জন্য হজরত ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর এইরূপ মিথ্যা অপবাদ করিতে দ্বিধা বোধ করেন নাই, ইহাতে মির্জ্জা ছাহেবের ইমান ও নবি-ভক্তির নমুনা প্রকাশ হইয়া গেল।(অসমাপ্ত)

 

ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক কাদিয়ানীদের কাফিরষোষণা! (২)

(ধারাবাহিক)

          আর্টিকেল ২৬০ (৩)-এর সাথে পাঠ করলে আর্টিকেল ২০ যে, এটাই বুঝায় যে, কাদিয়ানীরা একেশ্বরবাদ এবং মির্জার নুবুওওয়াত প্রচার করতে পারবে কিন্তু তারা নিজেদেরকে মুসলমান প্রচার করতে পারবে না এবং তাদের বিশ্বাসকে ইসলাম হিসেবে প্রচার করতে পারবে না। সংক্ষিপ্তাদেশে অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু পর্যবেক্ষণ এসে গেছে কিন্তু বিস্তৃত রায়ে বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অতএব, এটা বলা ঠিক নয় যে, সংবিধান তাদের নিজেদেরকে অমুসলিম বলতে বাধ্য করে না।

          এই মামলায় বড় সমস্যাটি হয় কাদিয়ানীদের আচরণে। যদিও আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে তারা তাদেরকে মুসলমানদাবী করতে পারবে না এবং তাদের বিশ্বাসকে ইসলাম বলতে পারবে না কিন্তু তারা তাদেরকে মুসলিম দাবী এবং তাদেরও ধর্ম প্রচার ইসলামের নামেই করতে থাকে। তাদের উচিত ছিল নিজেদেরকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে মুসলমান হিসেবে জাহির না করা; কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীতে তারা এক ঘুয়েমী করে,, নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগে মুসলিম উম্মাহ্র ধৈর্য্যরে উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।

          লক্বব ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কারণ ঐ সকল লক্বব ব্যবহার বৈধ কেবলমাত্র হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহু ও উম্মুল মুমিনীনগণের জন্য। ঐ সকল লক্বব ব্যবহার করে কাদিয়ানীরা পরোক্ষভাবে নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবেই জাহির করতে থাকে। উম্মুল মুমিনীন, আমিরুল মুমিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, খলীফাতুল মুমিনীন (সবই মুসলিম উম্মাহ্র প্রধাণরূপে বুঝায়) লক্ববগুলিতে মুমিনীন (মুসলমান) বা মুসলিমীন শব্দগুলি জনগণকে প্রতারিত করতে পারে যে, এই সকল লক্ববধারী লোকেরা মুসলমানই হবে। কুরআন শরীফে রদিয়াল্লাহ্ আনহুব্যবহার করা হয়েছে, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সহচরদের প্রতি অথবা বড় জোর মুসলমানদের প্রতি রহমত স্বরূপ। মুসলমানরা সাহাবীএবং আহলে বাইতলক্বব ব্যবহার করেছেন যথাক্রমে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সহচরদের জন্য এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য যারা ছিলেন শ্রেষ্ঠ মুসলমান। এই সকল লক্বব মির্জার সহচরদের জন্য ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য ব্যবহার করা অর্থ কাদিয়ানীরা নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবে জাহির করা।

          অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- মুসলমানদের দৃষ্টিতে কোনই সন্দেহ নেই যে, এই সকল পবিত্র লক্বব মির্জার স্ত্রী, তার পরিবারের সদস্য, সহচর এবং তার স্থলাভিষিক্তদের জন্য ব্যবহার করা বিকৃত করারই শামিল।

          একইভাবে আযান দেয়া এবং উপাসনালয়কে মসজিদ বলা হলে, এটাই নিশ্চিতভাবে ধরা যায় যেযে আযান দেয় এবং যারা ঐ স্থানে মসজিদে উপাসনা করে তারাও মুসলমান।

          এই সকল লক্বব এবং অভিব্যক্তি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার শর্তসমূহ সংবিধানের শর্তসমূহই বাস্তবায়ন এবং একটি পরিণতি বা পূনরাবৃত্তিতে এই অধ্যাদেশের নীতিতে কাদিয়ানীরা নিজেদেরকে মুসলমান বলতে পারবে না এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুসলমান হিসেবে জাহির করতে পারবে না। অনুরূপ বিবেচনায়, ধর্মপ্রচারে নিষেধাজ্ঞা প্রবর্তন করা হয়েছিল।

          প্রথমতঃ পাঞ্জাবেই কাদিয়ানীরা কূট কৌশলের মাধ্যমে নিজেদের মুসলমান হিসেবে প্রচারের দ্বারা কিছু মুসলমানকে প্ররোচিত করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা প্রচার করেছিল যে, “আহমদী (কাদিয়ানী) মতবাদ গ্রহণ করলেই তারা ইসলাম থেকে খারিজ বা তারা বিশ্বাসী থেকে অবিশ্বাসীতে পরিণত হবে- এটা মনে করার কারণ নেই বরং তাদেরকে আরও ভাল মুসলমান হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হলো।এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যথার্থই তারা প্রথমেই তাদের লক্ষ্যস্থল ঠিক করেছিল শিক্ষিত (সাধারণ) মুসলমানদের যারা প্রচন্ড অপছন্দ করত উপদলীয়তা (৭৩ ফিরকা) এবং মাওলানাদের অনমনীয় কঠোরতা এবং ক্রমান্বয়ে আকৃষ্ট করতে থাকে তাদের মতের প্রতিযেটাকে তারা বলতো ইসলামের মধ্যে উদারতা (কাদিয়ানী মত)।

          এই কৌশল তাদেরকে সামান্য কিছু লাভ দিয়েছে যা একটি ব্যবসার সাথে প্রচন্ড সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা হলো- কোন নিম্নমানের সামগ্রী সু-পরিচিত উন্নত মানের সামগ্রীর নামে প্রতারণাপূর্বক গছিয়ে দেয়া। যদি কাদিয়ানীরা স্বীকার করে নেয় যে, তারা যে ধর্মে ধর্মান্তরিত করছে তা ইসলাম ব্যতীত অন্য কিছু, তবে মুসলমানদের মধ্যে এমনকি সবচেয়ে অসতর্ক জন ও তার বিশ্বাসকে অবিশ্বাসে পরিণত করতে রাজী হবেনা।

          আমরা প্রফেসর তাহির-উল-কাদরীর সাথে একমত যে, কাদিয়ানীরা যদি সাংবিধানিক শর্তসমূহ পালনে পদক্ষেপ গ্রহণ করত তবে এই অধ্যাদেশ ঘোষণার কোন প্রয়োজন ছিলনা। কাদিয়ানীদের ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ করার এটাও একটি কারণ ছিল।

          অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল যে, কাদিয়ানীরা নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবে জাহির করে প্রত্যেক মুসলমান যার সাথে দেখা হবে তাকেই কাদিয়ানী ধর্মে ধর্মান্তরিত করার কৌশল চালাবে। (অসমাপ্ত)

 ****************************************************************************

কাদিয়ানী রদ! (১)

(পঞ্চম ভাগ)

          (মুবাহিছে আযম, বাহরুল উলূম, ফখরুল ফোক্বাহা, রইছুল মোহাদ্দিসীন, তাজুল মোফাসসিরীন, হাফিজে হাদীস, মুফতীয়ে আজম, পীরে কামিল, মুর্শিদে মোকাম্মিল হযরত মাওলানা আল্লামা শাহ্ সূফী মুহম্মদ রুহুল আমিন রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রণীত কাদিয়ানী রদকিতাবখানা (৬ষ্ঠ খন্ডে সমাপ্ত) আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছি। যাতে কাদিয়ানীদের সম্পর্কে সঠিক ধারণাসহ সমস্ত বাতিল ফিরকা থেকে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীদের ঈমান আক্বীদার হিফাযত হয়। আল্লাহ্ পাক আমাদের প্রচেষ্টার কামিয়াবী দান করুন (আমিন)। এক্ষেত্রে তাঁর কিতাব থেকে হুবহু উদ্ধৃত করা হলো, তবে তখনকার ভাষার সাথে বর্তমানে প্রচলিত ভাষার কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্যণীয়)।

(ধারাবাহিক)   

চতুর্থ অধ্যায়

মির্জ্জা ছাহেবের ভিন্ন ভিন্ন মত

কুরআনঃ-

ولو كان من عند غير الله لوجدوا فيه اختلافا كثيرا-

আর যদি উক্ত কালামুল্লাহ শরীফ আল্লাহ পাক ব্যতীত অন্য কাহারও পক্ষ হইতে হইত, তবে অবশ্য তাহারা উহাতে বহু মতভেদ পাইতেন।’ (সূরা নিসা/৮২)

          আল্লাহ তায়ালা উক্ত আয়াতে সত্য ও মিথ্যা এলহামের দাবিদারগণের চিনিবার বড় নিদর্শন প্রকাশ করিয়াছেন যদি কোন ব্যক্তি নিজের কথাকে আল্লাহ তায়ালার কথা ও এলহাম বলিয়া প্রকাশ করে, কিন্তু সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে নিশ্চয় তাহার কথাগুলিতে বিস্তর অনৈক্যভাব পরিলক্ষিত হইবে। তের শতাব্দীর মধ্যে বহু লোক মিথ্যা দাবী ও মিথ্যা এলহাম প্রকাশ করিয়াছিল, কিছুকাল পরে, লাঞ্ছিত ও বিফল মনোরথ অবস্থায় মৃত্যুমুখে পতিত হইয়াছিল।

          মির্জ্জা ছাহেবের কেতাবগুলি প্রকাশ্য-দৃষ্টিতে একটু মনোমুগ্ধকর বলিয়া অনুমিত হয়, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা যাহাদিগকে সূক্ষ্মদৃষ্টি-শক্তি ও বিবেক দান করিয়াছেন, তাহারা যেরূপ কষ্টি পাথরে খাঁটি সোনা পরীক্ষা করা হয়, সেইরূপ  সত্য মিথ্যা  প্রভেদ করিয়া লইয়া থাকেন, নিজেও ফাছাদ হইতে নিরাপদে থাকেন এবং লোকদিগকে সত্য পথে পরিচালিত করেন।

          মির্জ্জা ছাহেব নিজের কেতাবসমূহে সর্বদা সময় ও সুবিধা বুঝিয়া লিখিয়া থাকেন, তাহাকে এক প্রকার সুবিধাবাদী বলিলেও অত্যুক্তি হয় না, এইহেতু তাহার কথাগুলিতে বহু অনৈক্য দেখা যায়, এই অনৈক্যগুলি সামান্য নহে, বরং মোটামোটি ভাবের অনৈক্য দেখা যায়। যখন কুর-আন কষ্টি আমাদের হাতে রহিয়াছে, তখন কি জন্য মির্জ্জা ছাহেবের শিক্ষাকে অন্যান্য মিথ্যা এলহাম ও রেছালাতের দাবি গণের ন্যায় মিথ্যা বলা হইবে না?

          মির্জ্জা ছাহেবের কেতাবসমূহে বহু অনৈক্য সন্নিবেশিত হইয়াছে, এস্থলে কয়েকটির কথা উল্লেখ করিয়া মির্জ্জাভক্তদিগকে চ্যালেঞ্জ দিতেছি, তাহারা যেন নিম্নোক্ত ভিন্ন ভিন্ন মতগুলির মধ্যে সমতা স্থাপন করিয়া দেখান। আর যদি সক্ষম না হন, তবে কুর-আন শরীফের উল্লিখিত স্পষ্ট দলীল ও নুরে-ইমানের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া যথা কর্ত্তব্য স্থির করিয়া লন।  (অসমাপ্ত)

 

ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক

কাদিয়ানীদের কাফিরষোষণা! (২)

(অনুবাদক- আলহাজ্ব মুহম্মদ হাবিবুল হক)

(ধারাবাহিক)

          এটা মুসলমানদের মধ্যে অসন্তোষ ও বিরোধ সৃষ্টি করে যা আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থীর সমস্যায় পরিণত হয়। নিজেকে প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহ্দী দাবীরও তীব্র প্রতিবাদ করা হয়। এটা শুধু একটি দাবীই ছিলনা; কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ইতিহাস থেকেই ইহা পরিস্কারভাবে জানা যায়, প্রকৃতপক্ষে মির্জার লেখা পুস্তকেই আছে যে, মির্জাকে শুধু আলেমদের থেকেই নয়, সাধারণ মুসলমান সম্প্রদায় থেকেও প্রচন্ড বিরোধীতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তার রচনাগুলি তার প্রতিপক্ষের জন্য ছিল খুবই অসম্মানজনক এবং গালিগালাজপূর্ণ। সর্ব সাধারণের প্রতিবাদের অনেক ঘটনাও ঘটেছে। আব্দুল কাদের রচিত হায়াতে তাইয়্যেবার ১২১, ১২৬ এবং ১৪০ পৃষ্ঠা উদাহরণ স্বরূপ দেখা যেতে পারে। মির্জার অধিকাংশ লেখাই তার বিরোধীদের প্রতি ধিক্কারজনক এবং গালিগালাজপূর্ণ। তিনি অবশ্য উল্লেখ করেন যে, মুসলমানরা প্রধানতঃ তার (মির্জা) প্রতিই বিরোধীতা করে। (দেখুন, হাম্মাতুল বুশরা/৩৩, ইজালত-উল-আওহাম/১১)

          হাম্মাত-উল-বুশরার ৩৫ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, এটা এই দাবী যে জন্য আমার লোকেরা (মুসলমান, যারা আহমদী নয়) আমার সাথে ঝগড়া করেছে এবং আমাকে (مرتد) স্বধর্ম ত্যাগী বলেছে। তারা কথা বলেছে কিন্তু কোন শ্রদ্ধাবোধ ছিলনা আল্লাহ্ পাক-এর নিকট থেকে ওহী প্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি। তারা তাকে (মির্জা) বলেছে, সে বিশ্বাসঘাতক, মিথ্যাবাদী ও ধর্মত্যাগী (مرتد) কিন্তু তারা যদি শাসকদের তলোয়ারের ভয় না পেত, আমাকে হত্যা করত।

          কিন্তু ঘটনা এরূপ শিহরণ ও প্রচন্ড সংঘর্ষের উৎপত্তি করে যে, মির্জা সাহেবের অনুসারীরা ওদের ভূমিকম্পরূপে আখ্যায়িত করে। সীরাত-ই-মেহদীর সংগ্রাহকের পর পর উল্লেখানুযায়ী অনুরূপ ভূমিকম্পের সংখ্যা ছিল পাঁচটি।

(১) আহমদীদের মধ্যে প্রথম শিহরণ বা কম্পন সৃষ্টি হয় ১৮৮৬ ইং সালে। যখন মির্জার পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণের ভবিষ্যদ্বানী সত্ত্বেও কণ্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে।

(২) দ্বিতীয় শিহরণ ঘটে যখন কণ্যা সন্তানের পর পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে এবং মৃত্যুবরণ করে।

(৩) তৃতীয়টি ছিল যা ভারতীয় মুসলমানদের হতবুদ্ধি অবস্থার সৃষ্টি করে ছিল, তার (মির্জা) প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মেহদী দাবী। (৪) চতুর্থ শিহরণ অনুভব করে, যখন আথামের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বানী কার্যকর না হয়। (৫) পঞ্চম শিহরণ অনুভব  করে, মির্জার মৃত্যুতে (যা ঘটে ছিল মৌলভী সানাউল্লাহ্র মৃত্যুর অনেক পূর্বে এবং এমন একটি ভাগ্যগত রোগে, যাকে কলেরা বলা হয়। মির্জার মতানুযায়ী এই রোগে মৃত্যু হয় তাদের যারা আল্লাহ্ পাক-এর পরিত্যক্ত এবং যারা আল্লাহ্ পাক-এর সম্বন্ধে মিথ্যা কথা আবিস্কার করে। (সীরাত-ই-মেহেদী নং ১১৩, পৃষ্ঠা ৮৬-৯০)

          এই তালিকাটি মির্জার ভবিষ্যদ্বানীর ভিত্তিতেই করা হয় বলে কথিত। কিন্তু এই প্রত্যেকটি ঘটনাকে যদি একটি করে ভূমিকম্প হিসেবে ধরা হয় তাহলে ঐ ভবিষ্যদ্বানীর আলোকে তালিকাটি অসম্পূর্ণ।

          মুহম্মদী বেগমকে বিবাহ্ করতে মির্জার ব্যর্থতায় তাকে যে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের মুখোমুখি হতে হয়েছে, ভূকম্প বিদ্যানুযায়ী ঐ গুলোর স্থায়ীত্ব ছিল বেশ দীর্ঘ এবং পরপর কয়েকটি কম্পনের সাথে তুলনীয়। এইভাবে মির্জার পয়গম্বর দাবীতে যে বিরোধীতা এবং প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তার তীব্রতা আজ পর্যন্ত হ্রাস পায়নি। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ভূমিকম্প এবং মুহম্মদী বেগমের সুদীর্ঘ কাহিনীর উপাখ্যান মির্জাকে একইভাবে মুসলমান, খৃষ্টান এবং হিন্দুদের নিকট পরিহাস ও ঠাট্টার পাত্রে পরিণত করেছিল। ১৮৯১ সালে প্রতিশ্রুত মসীহ এবং মেহদী দাবী এবং পয়গম্বর হওয়ার দাবী বা পবিত্র রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুপ্ত বিষয়াদীর প্রকাশ মুসিলম উম্মাহ্, আলেম ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একইভাবে দীর্ঘস্থায়ী বিরোধীতা, ক্ষোভ, দোষারোপ এবং সমালোচনা বিরাজ করতে থাকে। (সীরাত-ই-মেহেদী, ভলিউম/১ পৃষ্ঠা ৯০, ভলিউম/২ পৃষ্ঠা ৪৪, ৪৬, ৮৭, ভলিউম/৩ পৃষ্ঠা ৯৪)

          এটা তার জীবদ্দশায় বারংবার মুসলমানদের উত্যক্ত করার বর্ণনা। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ১৯৫৩ সালে সামরিক শাসন জারী, মুনির কমিটি গঠন, ১৯৭৪ সালের সংবিধানের পরিবর্তন প্রমাণ করে মুসলমানদের মধ্যে বিরাজমান চরম অস্থিরতা, মনস্তাপ ও উত্তেজনার। মুসলমানদের মনে আঘাত পায় তেমন কিছু করা, পাকিস্তান সরকারের শাস্তি দান বিধির ১২৯৮ সি সেকশনে নিষিদ্ধ রয়েছে।            (অসমাপ্ত)

******************************************************************

আবা-৮১,৮২,৮৩,৮৪ 

 

  

0 Comments: