একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১৩০

 

ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ্ ওয়া কারামত, ফখরুল আওলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দীদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

রাতের গভীরে অদৃশ্য স্থান থেকে গায়িবী

আওয়াজে দুআ কবুলের স্বীকৃতি 

সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম আরো নছীহত করেন: নিগূঢ় নৈকট্যপ্রাপ্ত লক্ষ্যস্থল মাহবুব ওলীআল্লাহগণের যতো মুবারক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেসবের মধ্যে এটিই মূল। বিরূপ ধারণা পোষণ করলে এবং বিরূপ দুআ করলে ওলীত্ব ও নৈকট্য বহাল থাকবে কী করে? ওলীআল্লাহগণ মুস্তাজাবুদ্ দাওয়াত, একথা অবশ্যই সত্য। তবে একটি নিগূঢ় বিষয় তোমার উপলব্ধি করা চাই। তা হলো, সাধারণভাবে যে কোন বিষয়ে যে কোন ব্যক্তির দুআর জন্য প্রার্থনার প্রেক্ষিতে এবং নিজের বিষয়েও সূক্ষ্মদর্শী ও নৈকট্যপ্রাপ্ত ওলীআল্লাহগণ মূলতঃ প্রার্থীত বিষয়ের ফায়সালা মহান আল্লাহ পাক এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় মর্জির উপরই অর্পণ করে থাকেন। উনাদের নিজস্ব কোন মত ও পথ থাকে না। মুহব্বত, মারিফাত, নৈকট্য ও দীদার ছাড়া চাওয়ারও আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। কামিয়াবীর চরম ও পরম সোপানে এ বিষয়গুলো চাওয়া থেকেও ওলীআল্লাহগণ বিরত হয়ে পড়েন। তখন জীবন, মরণ, ইহকাল, পরকাল এবং সবকিছু উনাদের কাছে একাকার। বিষয়টি তোমার মতো দুআ প্রার্থনাকারীর সমঝ্-উনার সীমাহীন ঊর্ধ্বে। তবে তুমি যখন বার বার নিবেদন করছো, তোমার বিষয়ে আমি মনোনিবেশ করবো। আবার তোমার জন্য দুআ করবো।

সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম আমার প্রার্থীত বিষয়ের প্রতি মনোনিবেশ করবেন, আমার জন্য নেক দুআ করবেন। উনার যবান মুবারকে এ কথা শুনে আমি আনন্দে আপ্লুত হই, পরম প্রশান্তি লাভ করি। আমার আক্বল ও সমঝ্-উনার  সীমাহীন ঊর্ধ্বে সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার অতুলনীয় শান, মান, ইয্যত, ঐতিহ্য এবং সকলের প্রতি উনার দয়ার্দ্রতা ও স্নেহশীলতা আমি নতুন করে অনুমান করতে থাকি। একটি তুচ্ছ ব্যাপারে উনার ক্বদম মুবারকে বার বার আরজি পেশ করে উনার মহামূল্যবান সময় নষ্ট এবং উনার বিরক্তি সৃষ্টির কারণে আমি অনুতপ্ত হই। আমার দীনতা, হীনতা, অযোগ্যতা  ও অবাধ্যতার তিক্ত উপলব্ধি আমার অনুভূতিকে প্রবলভাবে আক্রান্ত করে। আমি নতুন করে নিজেকে জানতে ও বুঝতে চেষ্টা করি। বেদনা-বিমুগ্ধ মনে সে দিনের মতো আামি ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালামকে ক্বদমবুছী করে চলে আসি। তখন কী ভেবে জানিনা, তিনি আমার দিকে দৃষ্টি মুবারক নিবন্ধ করে মৃদু হাসেন এবং আমাকে সান্ত¡না দান করেন।

আমার অন্তরে অতলান্ত ভাবনা। আবার কী হয় এবং সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম কোন্ কথা বলেন, তা জানার উম্মুখতা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পায়। শঙ্কিত মনে আমি অপেক্ষায় থাকি। আমি নিয়মিতভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার মুবারক ছোহ্বতে বসি, ক্বদমবুছী করি, উনার নছীহত শুনি। কিন্তু আমার প্রার্থীত বিষয়ে কিছু জানতে চাই না। কিছু জিজ্ঞাসাও করি না। ভয় করি, আবার কোন্ বেয়াদবী হয়ে যায়। এভাবে চার পাঁচদিন অতিক্রান্ত হয়।

উনারপর একদিন বিকেলে উনার মুবারক ছোহ্বতে যাই। ক্বদমবুছী করি। সদয় নির্দেশ মতে উনার অদূরে বসি। তিনি কথা না বললে আমি কখনো আগে কথা বলি না। অভ্যাসমতো সেদিনও আমি নিশ্চুপ বসে থাকি। এক পর্যায়ে তিনি অত্যন্ত জামালী হালতে মুবারক হাসিমুখে আমাকে বলেন: তোমার প্রার্থীত বিষয়ের ফায়সালা হয়ে গেছে। তাই তোমার পেরেশানীও দূর হয়েছে। এ বিষয়ে তোমার আর চিন্তার প্রয়োজন নেই। তোমার আত্মীয়-স্বজন, যারা ইউরোপে বসবাসের জন্য পারমিশনের অপেক্ষায় ছিল, সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার তাদেরকে সে পারমিশন দিয়েছে। তাদের পারমিশন হয়ে গেছে। এখন আর তাদের কোন অসুবিধা নেই।

সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার যবান মুবারক থেকে এমন খুশির সংবাদ শুনে আমি অপরিসীম আনন্দিত হই। একই সঙ্গে আমি ভাবতে থাকি, মহান আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহবুব ওলীআল্লাহগণকে কতো অতুলনীয় মর্যাদা ও নিগূঢ় নৈকট্যদান করেছেন! অবিচ্ছেদ্য মুহব্বত-মারিফাত লাভকারী আরিফগণের দৃষ্টি ও রহস্যের মাঝে পর্দার আবরণ উন্মোচিত হয়ে যায়। তখন প্রত্যক্ষ দর্শন, সংযোগ, নৈকট্য ও প্রাপ্তির অব্যাহত ধারা পর্দায় ঢেকে পড়া বা না পড়ার বিষয়টি অবান্তর হয়ে দাঁড়ায়। ওলীআল্লাহগণের অনুভব ও দৃষ্টিতে তখন কোন কিছুই আর অন্তরাল থাকে না। তাঁদের জাহির, বাতিন, দৃশ্য, অদৃশ্য, ইহকাল ও পরকালের ভেদ রেখা মুছে যায়। এমন অবস্থায় অদৃশ্য জগতের রহস্যাবলী জানা, শোনা ও দেখার পরিধি ওলীআল্লাহগণের মাক্বামের সমান্তরাল হয়ে যায়। (চলবে)

আবা-১৯০

0 Comments: