সাইয়্যিদুনা যাবীহুল্লাহ হযরত আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক তা’রীফ-,কপাল মুবারকে নূর,বেমেছাল পবিত্রতা,মর্যাদা-মর্তবা,বুযূর্গী সম্মান মুবারক,বংশগত পবিত্রতা মুবারক,পিতা উনার নাম কি,বিছালী শান মুবারক,প্রশংসামূলক “পবিত্র না’ত শরীফ”খুছুছিয়ত মুবারক-
সাইয়্যিদুনা যাবীহুল্লাহ হযরত আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক তা’রীফ-
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
قَلَّ لااسئلكم عَلَيْهِ أَجْرًا أَلَا المَوَدَّةَ فِي القُرْبَى
অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জানিয়ে দিন, আমি তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাচ্ছি না। আর চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও; তাহলে তোমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে, আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়া।” (পবিত্র সূরা শুরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-২৩)
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত (ওয়ালিদ) পিতা উনার পবিত্র নাম মুবারক হলেন হযরত ‘আব্দুল্লাহ’ আলাইহিস সালাম। মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নিকট সবচেয়ে প্রিয় নাম মুবারক হচ্ছেন ‘আব্দুল্লাহ’ ও ‘আব্দুর রহমান’।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান নাম মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সর্বাধিক প্রিয় ও পছন্দনীয়। সুবহানাল্লাহ।” (মুসলিম শরীফ)
তবে তিনি ‘যাবীহুল্লাহ’ লক্বব মুবারকে মশহুর হয়েছেন বা পরিচিতি লাভ করেছেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম। উনার সম্মানিত মাতা হচ্ছেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম।
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ছানা-ছিফত, ফযীলত বেমেছাল। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জিসিম মুবারকে মাস, বছর অবস্থান করেছেন। যা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।
সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ১৩ ভাই। উনারা হলেন-
১. হারিছ: তিনি পিতার বড় ছেলে ছিলেন। তিনি যমযম কূপ খননের সময় পিতাকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার যুগ পাননি।
২. আবু ত্বালিব: যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম উনার প্রায় ৪২ বছর খিদমত মুবারক করেছেন। তিনি সুপারিশ পেয়ে জান্নাতী হবেন। (মুসলিম শরীফ)
৩. যাবীর: উনার কুনিয়াত আবুল হারিছ। তিনিও যমযম কূপ খননের কাজে শরীক ছিলেন।
৪. আব্দুল কা’বাহ: তিনি ছোটবেলাতেই লিখতে শিখেছিলেন।
৫. আম্মুর রসূল সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত হামযাহ আলাইহিস সালাম: তিনি জলীলুল ক্বদর ছাহাবী ছিলেন। তিনি উহুদ জিহাদে সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
৬. আম্মুর রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম: তিনি জলীলুল ক্বদর ছাহাবী ছিলেন।
৭. মুক্বাব্বিম: উনার কুনিয়াত আবূ বকর।
৮. হাজল: কেউ অন্য ক্বিরায়াতে জাহল পড়েছেন। উনার নাম মুগীরাহ। উনাকে ‘খালখাল’ও বলা হতো।
৯. দ্বিরার: তিনি কুরাইশদের সুদর্শন ও দানশীল যুবক ছিলেন।
১০. কুছাম: তিনি নাবালিগ অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।
১১. আবু লাহাব: তার অপর নাম আব্দুল উযযা। তার ধ্বংসের ব্যাপারে পবিত্র সূরা লাহাব শরীফ নাযিল হয়।
১২. গাইদাক্ব: উনার নাম মুছআব। কেউ বলেন, নওফিল। তিনি অধিক দান করতেন এজন্য উনাকে গাইদাক্ব বলা হতো। কেননা তিনি কুরাইশদের মধ্যে প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক ছিলেন এবং কুরাইশদের মধ্যে অধিক দানশীল ছিলেন।
১৩. আবু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম।
(সুবুলুল হুদা ১১তম খ- ৮২ পৃষ্ঠা, হালাবিয়াহ ৩য় খ- ৪০০ পৃষ্ঠা, শরহুয যারকানী ৪ খ- ৪৬৪, ৪৬৫ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বোন ছিলেন ৬ জন। উনারা হলেন-
১. উম্মু হাকীম: উনার নাম মুবারক ছিল বাইদ্বা।
২. আতিক্বাহ: কারো মতে, তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
৩. বাররাহ।
৪. আরওয়া: কারো কারো মতে, তিনিও পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
৫. আমীমাহ।
৬. আম্মাতুর রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছফিয়্যাহ আলাইহাস সালাম: তিনি হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাতা ছিলেন। তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে হিজরত মুবারক করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
(আস সীরাতুল হালাবিয়া ৩য় খ- ৪০০ পৃষ্ঠা, শরহুয যারক্বানী ৪র্থ খ- ৪৮৮ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা ছহিবাহ তথা জাওযাতুম মুকররমাহ ছিলেন উম্মু রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা বিনতে ওহহাব আলাইহাস সালাম। যিনি হচ্ছেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা মাতা। তিনি ছিলেন সম্মানিত কুরাইশ বংশীয়। সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক অবস্থান করছিলেন। এজন্য দেখা গেছে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক অত্যন্ত নূরানীময় ছিলো সদাসর্বদাই জ্যোৎস্নার চাঁদের ন্যায় জ্বলজ্বল করতো এবং উনার জিসিম মুবারক থেকে নূর বিচ্ছুরিত হতো। সুবহানাল্লাহ! তিনি সকলের কাছেই সবচেয়ে প্রিয় ও পছন্দনীয় ছিলেন। তবে কিছু কাফির, মুশরিক, ইহুদী, নাছারা কিছু বদবখত, নাদান তারা উনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতো। উনার মাঝে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক অবস্থান করছেন- এটা ইহুদী-নাছারারা বুঝতে পেরে উনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য নানা প্রকার ষড়যন্ত্র করতো। কিন্তু কখনো তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত করতে পারেনি।
‘মাদারিজুন নুবুওওয়াত’-এ উল্লেখ রয়েছে, আহলে কিতাব তথা ইহুদী, খ্রিস্টানরা যখন দেখতে পেলো সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক অবস্থান করছেন তখন তারা উনার বিরুদ্ধে শত্রুতা শুরু করলো উনাকে শহীদ করার জন্য নানা প্রকার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তসহ এই সমস্ত দুষ্টরা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে সমবেত হতে লাগলো। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে এসে বিভিন্ন মু’যিজা শরীফ, কারামত, বিস্ময়কর ঘটনা অবলোকন করে হতবাক ও হতাশ হয়ে পলায়ন করলো। পরাজয় ও লাঞ্ছিতের গ্লানি নিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরলো। একদা সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শিকারে বের হলেন। আহলে কিতাব তথা ইহুদীদের একটা দুষ্ট দল তারা সিরিয়া থেকে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে এসেছিলো। এই সমস্ত ইহুদী নাছারারা উনাকে দেখে হিংসার বশবর্তী হয়ে শহীদ করতে উদ্যত হলো। নাঊযুবিল্লাহ! সেই স্থানে উপস্থিত ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে মান্নাফ আলাইহিস সালাম। যিনি ছিলেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহি আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পিতা। হযরত ওয়াহাব ইবনে মান্নাফ আলাইহিস সালাম তিনি দেখতে পেলেন কোথা থেকে যেন কিছু অস্ত্রধারী লোক তরবারী নিয়ে ওই সমস্ত শত্রুদের তাড়িয়ে দিতে লাগলেন। শত্রুরা সেখান থেকে পালিয়ে গেলো। সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও বাড়িতে ফিরলেন। এদিকে সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে মান্নাফ আলাইহিস সালাম তিনি ঘরে ফিরে উনার পরিবারগণের নিকট ঘটনাটি জানান এবং বলেন, আমার মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহি আলাইহাস সালাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবতে আযীম মুবারক সম্পন্ন করতে মুবারক দিতে চাই। পরিবারের সকলেই সম্মতি প্রকাশ করলেন। অপরদিকে যখন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার কাছে সংবাদ পৌঁছলো তিনিও রাজি হয়ে গেলেন। অতঃপর যথাসময়ে সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ যাবীহিল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহি আলাইহাস সালাম উনার নিসবতে আযীম মুবারক সুসম্পন্ন হলো। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পুত্র সাইয়্যিদুনা যাবীহুল্লাহ হযরত আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিসবতে আযীম মুবারক সম্পন্ন করার দেয়ার জন্য যাচ্ছিলেন পথিমধ্যে এক ইহুদী মহিলা যার নাম ছিলো ফাতিমা বিনতে মুররা। যে পবিত্র তাওরাত শরীফ ইনযীল শরীফ তথা আসমানী কিতাবে অভিজ্ঞা ছিলো। সে সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কপাল মুবারকে উজ্জ্বল নূর মুবারক দেখে উনাকে দাওয়াত দিলো এবং উক্ত ইহুদী মহিলা সেই নূর মুবারক নিজের মধ্যে পাওয়ার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সান্নিধ্য পাওয়ার প্রস্তাব পেশ করলো। যদি তিনি আমার সঙ্গে অবস্থান করেন তাহলে আমি উনাকে একশত উট হাদিয়া করবো। সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুব শক্ত ভাষায় জাওয়াব দিয়ে বললেন,
أما الحرام فالحمام دونه
والحل لا حل فأستبينه
فكيف بالأمر الذي تبغينه
يحمى الكريم عرضه و دينه-
অর্থ: “হারাম গ্রহণ অপেক্ষা মৃত্যুই শ্রেয় আর এমন কাজ মোটেও হালাল নয়, যা প্রকাশ করা যায় না। যে অবৈধ কাজে তুমি আগ্রহী তা আমার দ্বারা কখনো সম্ভব নয়। সম্মানিত ব্যক্তিগণ উনারা নিজের আব্রু, নিজের দ্বীনের হিফাযত করেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল মুস্তাফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহি আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নিসবতে আযীম মুবারক সুসম্পন্ন হওয়ার পর পথিমধ্যে ওই ইহুদী মেয়েটি আবার দূর থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পেলো। মেয়েটি জিজ্ঞাসা করলো, “হে সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি এখান থেকে চলে যাওয়ার পর কোথাও অবস্থান করেছেন? সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমি এখান থেকে চলে যাওয়ার পর সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব ইবনে আব্দুল মান্নাফ আলাইহিস সালাম উনার বানাত সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহি আলাইহাস সালাম উনাকে নিসবতে আযীম মুবারক করেছি এবং উনার সঙ্গে তিন দিন অবস্থান করেছি। একথা শুনে ওই ইহুদী মহিলাটি বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি কোনো অসৎ চরিত্রা মহিলা নই। আপনার চেহারা মুবারকে পবিত্র নুবুওওয়াতের নূর মুবারক দেখে ইচ্ছা করেছিলাম যে, এই নূর মুবারক আমার থেকে প্রকাশিত হোক। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি যেখানে চেয়েছেন সেখানেই সেই পবিত্র নূর মুবারক রেখেছেন। (দালাইলু আবু নুআইম, তাবাকাতে ইবনে সা’দ)
আরো বর্ণিত রয়েছে, বনী আসাদ গোত্রের নাওয়াফিল উনার মেয়ে রুকাইকা নামক মহিলা পবিত্র কা’বা শরীফ উনার পার্শ্বে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সাইয়্যিদুনা যাবীহুল্লাহ হযরত আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন এমন সময় ওই মহিলাটি সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক উনার দিকে তাকালে উনার কপাল মুবারকে উজ্জ্বল নূর মুবারক দেখতে পান। তখন সেই মহিলা সেই নূর মুবারক লাভ করার জন্য পাগলপারা হয়ে যান এবং বলতে থাকেন যে, হে সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার জানের বদলে যে একশত উট কুরবানী করা হয়েছিলো, আমি সেই ১০০টি উট আপনার পক্ষ থেকে পরিশোধ করবো, আপনি আমাকে নিসবতে আযীম মুবারক উনার মাধ্যমে গ্রহণ করুন। মহিলাটি এই প্রস্তাব দিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই মহিলাটির প্রস্তাব গ্রহণ না করে ফিরে আসলেন। (মাওয়াহিবুল লাদুননীয়া, আল বারাহীনুল ক্বতইয়াহ)
প্রকাশ থাকে যে, উক্ত মহিলাটির নাম সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। যেমন, উনার নাম ছিলো কুতাইলা তথা রুকাইযা ও লাইলা।
কাজেই সাইয়্যিদুনা যাবীহুল্লাহ হযরত আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা ও পবিত্রতা বেমেছাল যা মাখলুকাতের ফিকিরের ঊর্ধ্বে। মূলত, উনার মর্যাদা হচ্ছে তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা। সারা কায়িনাতের মধ্যে তিনি একক, যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাখলুকাতের মধ্যে একক। খলীক্ব হিসাবে যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি এক এবং একক। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা যাবীহুল্লাহ হযরত আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কপাল মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূর মুবারক -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
قَدْ جَاءَكُمْ مِنْ اللهِ نُورٌ
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নূর (অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি) এসেছেন।” (সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ- ১৬)
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ললাট মুবারকে রাখেন। হযরত সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার আলাইহিস সালাম উনার থেকে উম্মুল বাশার সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনার হয়ে আবু রসুলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৌঁছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ললাট মুবারকে সেই নূর মুবারক সদাসর্বদাই চমকাতো। জিন-ইনসান থেকে শুরু করে সমস্ত মাখলুক সেই নূর মুবারক দেখে ইতমিনান হতো, খুশি প্রকাশ করতো। এমনকি সেই নূর মুবারক ধারণ ও উনার খিদমত করার জন্য আরবের মহিলাগণ অনেকেই সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবতে আযীম মুবারক স্থাপনে আর্জি জানিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে-
বিশ্ববিখ্যাত হাদীছ শরীফ উনার কিতাব ‘মুছান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক’ উনার ৫ম জিলদ ৩১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عَنْ عَبْدُ الرَّزَّاقُ عَنْ مُحَمَّدٍ عَنْ الزُّهَرِيِّ قَالَ... وَكَانَ عَبْد الله أَحْسَنُ رَجُلٍ رُئِيَ فِي قُرَيْش مُجْتَمِعَاتٍ. فَقَالَتْ اِمْرَأَةٌ مِنْهُنَّ يَا نِسَاءُ قُرَيْش? أَيَّتُكُنَّ يَتَزَوَّجُهَا هَذَا الفَتَى فنصطت النُّورُ الَّذِي بَيْنَ عَيْنَيْهِ قَالَ وَكَانَ بَيْنَ عَيْنَيْهِ نُورٍ
অর্থ: হযরত আব্দুর রাযযাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি অত্যধিক সুদর্শন সুমহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন, এরূপ সুদর্শন পুরুষ কুরাইশ তথা কায়িনাতের মধ্যে কমই দেখা যেতো। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি একদিন মহিলাদের এক জামায়াতের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মহিলাদের মধ্য হতে একজন সবাইকে সম্বোধন করে বললেন, হে কুরাইশ মহিলাগণ! আপনারা কি চান যে, এই সম্মানিত পুরুষ তিনি আপনাদের কাউকে নিসবতে আযীম মুবারক করুন। অতঃপর উনার কপাল মুবারকে যে নূর মুবারক রয়েছেন তা আপনাদের মধ্যে অবস্থান করুন। রাবী বলেন, ‘সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র কপাল মুবারকে তখন নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবস্থান করছিলেন।’ সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,
وقال ابن سعد انا وهب بن جرير بن حازم ثنا أبى سمعت ابا يزيد المدنى قال نبئت ان عبد الله أتى على امراة من خثعم، فرأيت بين عينيه نورا ساطعا الى السماء، فقالت هل لك فى؟ قال نعم حتى ارمى الجمرة، فانطلق فرمى الجمرة ثم اتى امرأته امنة عليها السلام ثم ذكر الخثعمية فاتاها, فقالت هل أتيت امرأة بعدى؟ قال نعم امراتى امنة عليها السلام- قالت فلا حاجة لى فيك انك مررت وبين عينيك نور ساطع الى السماء, فلما وقعت عليها ذهب, فأخيرها انها قد حملت بخير أهل الارض
অর্থ: “হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত ওয়াহাব ইবনে জারীর ইবনে হাজিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি স্বীয় পিতা থেকে এবং আবূ ইয়াযীদ মাদানী থেকে শ্রবণ করেন। তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি খাছআমী গোত্রের এক নারীর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় সেই নারী (সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহ আলাইহিস সালাম) উনার কপাল মুবারক থেকে আসমান পর্যন্ত একটি নূর মুবারক দেখতে পেলেন। অতঃপর মহিলাটি উক্ত নূর মুবারক দেখে বললেন, আপনি কি আমার সাথে নিসবতে আযীম মুবারক স্থাপন করবেন? সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হ্যাঁ, কংকরগুলো ফেলে আসি। কংকর ফেলে দেয়ার পর তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট চলে গেলেন এবং উনার সঙ্গে অবস্থান করলেন। অতঃপর খাছআম গোত্রের মেয়েটির কথা স্মরণ হলে উনার কাছে গেলেন। উক্ত মেয়েটি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনাকে দেখেই বললেন, এখান থেকে চলে যাওয়ার পর কোনো নারীর সঙ্গে আপনার কি সাক্ষাৎ মুবারক হয়েছে? সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমার যিনি যাওজাতুম মুকাররমাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তখন সেই মহিলা বললো, হে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম এখন আপনাকে পাওয়ার সেই হাজত বা আকাঙ্খা আমার নেই। নিশ্চয়ই আপনি যখন আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন তখন আপনার কপাল মুবারক থেকে আসমান পর্যন্ত একখানা নূর মুবারক বিস্তৃত ছিলো। এখন সেই নূর মুবারক নেই আপনার আহলিয়া উনার নিকট সেই নূর মুবারক চলে গেছেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনাকে সুসংবাদ দিন যে, নিশ্চিয়ই তিনি যমীনের সর্বোত্তম ব্যক্তিত্বকে ধারণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (ইবনে আসাকির, খছায়িছূল কুবরা ১ম খন্ড, ৭০ পৃষ্ঠা)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال كانت امرأة من خثعم تعرض نفسها فى موسم من المواسم، وكانت ذات جمال ومعها ادم عليه السلام تطوف به كأنها تبيعه فأتت على عبد الله بن عبد المطلب عليه السلام، فلما رأته أعجبها فعرضت نفسها عليه، فقال مكانك حتى ارجع اليك فانطلق الى اهله فبدا له فواقع اهله فحملت بالنبى صلى الله عليه وسلم، فلما رجع اليها قالت ومن أنت؟ قال انا الذى وعدتك، قالت لا ما انت هو ولئن كنت ذلك لقد رأيت بين عينيك نورا ما اراه الان
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খাছআম গোত্রের এক খুব ছূরত মহিলা পবিত্র হজ্জ সময় বা মওসুমে পবিত্র কা’বা শরীফ-এ আসতো এবং উনার কাছে বিভিন্ন ধরনের আচার থাকতো। তা বিক্রি করতেন। তিনি একবার সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার নিকট আসলেন। মহিলাটি যখন সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখলেন, দেখে আশ্চর্য হলেন এবং মহিলাটি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট নিজকে পেশ করলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি বললেন- আমি আসছি। অতঃপর তিনি বাড়িতে চলে গেলেন এবং উনার যাওজাতুম মুকাররমাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার সাথে অবস্থান করলেন। অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ধারণ করলেন। অতঃপর হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে পুনরায় ওই মহিলাটির সাক্ষাৎ হলো। মহিলাটি বললো, আপনি কে? সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি সেই ব্যক্তি, যে আপনার কাছে ফিরে আসার ওয়াদা করেছিলেন। মহিলাটি বললো, আপনি ওই ব্যক্তি নন, কারণ আপনার কপাল মুবারকে একখানা নূর মুবারক দেখেছিলাম যা এখন অদৃশ্য হয়ে গেছে যা আমি এখন আর দেখছি না।” সুবহানাল্লাহ! (বাইহাক্বী, আবূ নায়ীম, ইবনে আসাকির, খছায়িছূল কুবরা ১ম খন্ড ৭১ পৃষ্ঠা)
‘খছায়িছূল কুবরা’ ১ম জিলদ ৭১ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে,
عن ابن شهاب قال كان عبد الله عليه السلام احسن رجل رؤى قط خرج يوما على نساء قريش، فقالت امرأة منهن أيتكن تتزوج بهذا الفتى فتصطب النور الذى بين عينيه، فانى أرى بين عينيه نورا، فتزوجته حضرت امنة عليها السلام فحملت برسول الله صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “হযরত ইবনে শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি বেমেছাল অতি সুন্দর ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যা বর্ণনার ঊর্ধ্বে। হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি একদা কিছু কুরাইশ মহিলাদের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন উনাদের মধ্যে একজন মহিলা বললেন, আপনাদের মধ্যে কে আছেন উনার সাথে নিসবতে আযীম সম্পন্ন করে উনার কপাল মুবারকে যে নূর মুবারক রয়েছেন তা ধারণ করবেন। আর নিশ্চয়ই আমি দেখতে পাচ্ছি উনার দু’চক্ষু মুবারক উনার মাঝে নূর মুবারক তথা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন হলো। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজের কাছে ধারণ করলেন।” সুবহানাল্লাহ! (বাইহাক্বী, আবূ নায়ীম, খাছায়িছুল কুবরা ১ম খন্ড ৭১ পৃষ্ঠা)
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
عن عروة وغيره قالوا ان قتيلة بنت نوفل اخت ورقة بن نوفل كانت تنظر وتعتاف فمر بها عبد الله عليه السلام فدعته ليستبضع منها ولزمت طرف ثوبه، فأبى وقال حتى أتيك وخرج سريعا حتى دخل على حضرت امنة عليها السلام فوقع عليها فحملت برسول الله صلى الله عليه وسلم ثم رجع، الى المرأة فوجدها تنتظره، فقال لها هل لك فى الذى عرضت على؟ قالت لا، مررت وفى وجهك نور ساطع، ثم رجعت وليس فيه ذلك النور، وفى لفظ مررت وبين عينيك غرة مثل غرة الفرس ورجعت وليس هى فى وجهك
অর্থ: “হযরত উরওয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আরো অনেকের থেকে বর্ণিত। উনারা বলেন, নিশ্চয়ই ওরাকা ইবনে নওফিল উনার ভগ্নি হযরত কাতীলাহ জ্যোতিবিদ ছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম একদা তিনি পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় সেই মহিলা উনাকে দাওয়াত করলেন এবং উনার পবিত্র চাদর মুবারক ধরলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসবেন বলে সেখান থেকে দ্রুত বের হয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট প্রবেশ করলেন। অতঃপর উনার সঙ্গে অবস্থান করলেন যার ফলে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার মধ্যে অবস্থান করলেন। তারপর পুনরায় সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাতিলার নিকট গিয়ে তাকে অপেক্ষমান পেলেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তুমি যে আমাকে নিসবতে আযীম মুবারকের প্রস্তাব দিয়েছিলে এ সম্পর্কে তোমার মতামত কি? কাতিলা বললো, না। আপনি যখন এখান থেকে গমন করেছিলেন। তখন আপনার কপাল মুবারকে একখানা উজ্জ্বল দীপ্ত নূর মুবারক ছিলো। ফিরে আসার পর সেই নূর মুবারক আপনার চেহারা মুবারক উনার মধ্যে নেই।”
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন,
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال المرأة التى عرضت على حضرت عبد الله عليه السلام ما عرضت هى أخت ورقة بن نوفل
অর্থ: “যে মহিলা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনাকে নিসবতে আযীম মুবারকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ওরাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু উনার বোন।” (খাছায়িছুল কুবরা ১ম খন্ড ৭১ পৃষ্ঠা, ইবনে সা’দ, ইবনে আসাকির)
স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার যিনি হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক কোথায় রাখবেন তা পূর্ব থেকে মনোনীত করে রেখেছেন। যদিও বা আরবের অনেক মহিলারাই সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনাকে নিসবতে আযীম মুবারকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন; কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি তো মনোনীত করে রেখেছেন যে, উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার মাঝে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রাখবেন। যেদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক উনার মহাসম্মানিত পিতা হযরত যাবীহিল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার ললাট মুবারক থেকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ উনার মাঝে তাশরীফ নেন সেই রাত্রি মুবারককে ‘লাইলাতুর রাগায়িব’ বলা হয়। আর লাইলাতুর রাগায়িব উনার ফযীলত সমস্ত রাত্রি মুবারক থেকে বেশি। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের বেমেছাল পবিত্রতা-
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات على ان جميع ابائه صلى الله عليه وسلم وامهاته الى ادم وحواء عليهما السلام ليس فيهم كافر.
অর্থ: “আমি সর্বদা পবিত্র পৃষ্ঠ মুবারক হতে পবিত্রা রেহেম শরীফ উনার মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছি। আমার পূর্ববর্তী যত পুরুষ ও মহিলাগণ উনারা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এবং উম্মুল বাশার হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনার পর্যন্ত অতীত হয়েছেন, উনাদের কেউই কাফির ছিলেন না।” সুবহানাল্লাহ!
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ব-পুরুষ সকলেই ছিলেন যুগের সবচাইতে সম্ভ্রান্ত, মর্যাদাশীল ও মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ও মকবুল বান্দা উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি পবিত্র পুরুষ ও পবিত্রা মহিলাগণ উনাদের মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় এ যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। চাই পিতা উনার দিক থেকে হোক কিংবা মাতা উনার দিক থেকে হোক উনাদের কেউই মুশরিক বা কাফির ছিলেন না। এমনকি উনাদের মধ্যে কেউ চারিত্রিক দোষেও দোষী ছিলেন না। প্রত্যেকেই পবিত্র চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
لم يلتق ابوى قط على سفاح.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষগণ কেউই চারিত্রিক দোষে দোষী ছিলেন না।” সুবহানাল্লাহ!
অতএব, প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষগণ শুধু ঈমানদারই নন, বরং উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ মাহবুব বান্দা-বান্দী উনাদের অন্তর্ভুক্ত। আর এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وتقلبك فى الساجدين.
অর্থ: “আপনাকে সিজদাকারীদের মধ্যে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)
তাফসীরে মাদারেক ও জামালের গ্রন্থকার এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুধু পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা নন, বরং উনার সকল পূর্বপুরুষ উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার তাওহীদভুক্ত বলে ঘোষণা দেন। প্রকৃতপক্ষে উনার পূর্বপুরুষগণ উনারা সকলেই ঈমানদার ও সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব-ব্যক্তিত্বা ছিলেন।
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি সর্বযুগে যুগশ্রেষ্ঠ বান্দা-বান্দী উনাদের মাধ্যমে যমীনে এসেছেন। তাহলে উনারা কি করে কাফির-মুশরিক হতে পারেন? নাউযুবিল্লাহ! কারণ প্রথমত, কাফিররা হচ্ছে নাপাক। দ্বিতীয়ত, সাধারণ ঈমানদার দাস-দাসীরাও সমস্ত কাফির-মুশরিকদের চেয়েও উত্তম।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শধন্য পবিত্র বিষয়গুলোর মর্যাদা আরশে আযীম উনার চেয়ে বেশি হলে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ধারক-বাহক উনার সম্মানিত পিতা-মাতা উনাদের মর্যাদা-মর্তবা মুবারক কতটুকু?
সমস্ত হযরত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা করেছেন যে, পবিত্র রওযা শরীফ উনার যে মাটি মুবারক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারক স্পর্শ করে আছে, তা আরশে আযীম থেকেও বেশি মর্যাদাবান ও সম্মানিত সুমহান। তাহলে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে পিতা-মাতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ধারণ করেছেন সে সমস্ত সুমহান ব্যক্তিত্ব উনাদের ফযীলত তাহলে কত বেশি এবং উনারা কতটুকু সম্মানিত তা বলার অপেক্ষাই রাখে না। আর বেহেশতে উনাদের সুউচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে দুনিয়াবাসী কোনো মানুষের পক্ষে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। সুবহানাল্লাহ!
এতে প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-পিতামহ আলাইহিমুস সালাম অর্থাৎ উর্ধ্বতন পূর্ব পুরুষগণ অর্থাৎ যে সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব-ব্যক্তিত্বা উনাদের মাধ্যমে তিনি যুগে যুগে স্তরে স্তরে স্থানান্তরিত হয়ে এসেছেন উনাদের সকলেই ঈমানদার তথা ওয়াহ্দানিয়াতের উপর ছিলেন। অন্যথায় বুখারী শরীফ উনার ছহীহ্ রেওয়ায়েত এবং পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার ঘোষণা ভুল প্রমাণিত হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ!
আবূ রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহিল মুর্কারাম আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী সম্মান মুবারক-
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি আপনাকে সম্মানিত কাউছার মুবারক হাদিয়া করেছি।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা কাউছার শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১)
‘সম্মানিত কাউছার শরীফ’ উনার লক্ষ- কোটি অর্থ মুবারক রয়েছেন। তার মধ্যে বিশেষ একটি অর্থ হচ্ছেন ‘খইরে কাছীর’ তথা সমস্ত প্রকার ভালাই। অর্থাৎ যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত প্রকার ভালাই তথা উত্তম থেকে উত্তমতর বিষয়গুলো হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তাই উনার সাথে সম্পৃক্ত যেকোনো বিষয়ের মর্যাদা অন্যান্য সমস্ত বিষয় থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি গুণ বেশি শ্রেষ্ঠ এবং উত্তম। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণেই মাটির মর্যাদা আসমান-যমীন, কা’বা শরীফ এবং স্বয়ং সম্মানিত আরশে আযীম থেকে লক্ষ-কোটিগুণ বেশি শ্রেষ্ঠ এবং উত্তম। সুবহানাল্লাহ! উনার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণেই হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত করা ফরয এবং উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান মুবারক হচ্ছেন, উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন, এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক রয়েছেন সমস্ত কিছুর অধিকারী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ! উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান মুবারক সম্পর্কে স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى
অর্থ: “আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনি সমস্ত বান্দাদেরকে, উম্মতদেরকে বলে দিন যে, আমি তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চাই না। চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়। তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। বরং তোমাদের জন্য এটা চিন্তা করাটাও কাট্টা কুফরী ও চির জাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে। তবে তোমরা যদি মা’রিফাত-মুহব্বত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক পেতে চাও, তাহলে তোমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে আমার নিকটজন তথা আহলে বাইত শরীফ উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়া।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা শূরা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ- ২৩)
আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,
عن حضرت ابن عباس رضي الله تعالى عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم أَحِبُّوا اللَّهَ لِمَا يَغْذُوكُمْ مِنْ نِعمِة وَأَحِبُّونِى لحُبِّ اللَّهِ وَأَحِبُّوا أَهْلَ بَيْتِى لِحُبِّى.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূর মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো, কেননা তিনি তোমাদেরকে অসংখ্য-অগণিত নিয়ামত মুবারক দানে ধন্য করেছেন। আর তোমরা আমাকে মুহব্বত করো, যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করার জন্য। আর তোমরা আমার মুহব্বত-মা’রিফাত, রেযামিন্দ-সন্তুষ্টি মুবারক পেতে হলে আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)
যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে যেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনার মাধ্যমে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন, যেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনার মাঝে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদীর্ঘ বছর অবস্থান করেছেন এবং যিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান হওয়ার সৌভাগ্য মুবারক অর্জন করেছেন, সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক আবূ রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক, শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক কত উপরে সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার বাইরে। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন, এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক, শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক, মাক্বামাত মুবারক রয়েছেন সমস্ত কিছুর অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ!
তাই সমস্ত জিন-ইনসানের জন্য, সমস্ত কায়িনাতবাসীর জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনার ছানা-ছিফত মুবারক করা, উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়া, উনার সম্মানিত বিছালী শান মুবারক দিবস ২রা মুহররমুল হারাম শরীফ উপলক্ষে আযীমুশ শান সম্মানিত মাহফিল মুবারক উনার ইন্তিজাম করা, সম্মানিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করা।
মূলত আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক যিনি সমস্ত বিশ্ববাসীকে, সারা কায়িনাতবাসীকে হাক্বীক্বী তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক, মা’রিফাত-মুহব্বত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক দানের লক্ষ্যে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ব্বোচ্চ জাকজমকের সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান হমুবারক প্রকাশ দিবস ২রা মুহররমুল হারাম শরীফ উপলক্ষে আযীমুশ শান ওয়ায শরীফ, মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ ও মক্ববূল মুনাজাত শরীফ উনার মাহফিল মুবারক উনার ইনতিযাম মুবারক করে যাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে সেই বিশেষ নিয়ামত মুবারক দানে ধন্য করুন। আমীন!
আন নূর, আন নাযীর, নি’মাতুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশগত পবিত্রতা মুবারক-
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وتقلبك فى الساجدين
অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনার স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয়টিও ছিল সিজদাকারীগণ উনাদের মাধ্যমে।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)
আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে আল্লামা হযরত ইমাম ইবনে হিববান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
لازال نوره صلى الله عليه وسلم ينقل من ساجد الى ساجد.
অর্থ: “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূর মুবারক সিজদাকারীগণ উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৪৫)
ان اباء النبى صلى الله عليه وسلم كانوا مؤمنين.
অর্থ: “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ব-পুরুষগণ সকলেই ঈমানদার ছিলেন।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৪৫)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-
من نبى الى نبى حتى اخرجتك نبيا وفى رواية اخرى مازال النبى صلى الله عليه وسلم يقلبك فى اصلاب الانبياء حتى ولدته امه.
অর্থ: “খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আমি আপনার অজুদ মুবারক উনাকে নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত করে নবী হিসেবে আপনার প্রকাশ ঘটিয়েছি।”
অপর রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জিসিম মুবারক থেকে স্থানান্তরিত হয়ে উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ আনেন।” (বাযযার শরীফ, তিবরানী শরীফ, খাছায়িসুল কুবরা, দালাছিলোল নুবুওয়াত, সীরাতুল হালবিয়া ১/৪৪, মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়্যাহ, শরহু আল্লামাতিয যারকানী)
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, সুলত্বানুল আউলিয়া, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন- “খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনার অজুদ মুবারক যাঁদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে দুনিয়াতে তাশরীফ মুবারক এনেছেন উনারা অনেকেই ছিলেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম। আর যাঁরা হযরত নবী-রসূল ছিলেন না উনারা ছিলেন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নায়িব বা স্থলাভিষিক্ত। সে যামানার সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল। সর্বশ্রেষ্ঠ পরহেযগার। সকল গুণে গুণান্বিত। আদর্শ ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। এটাই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা বা বিশ্বাস। কাজেই এর বিপরীত চিন্তা করাটাও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।”
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি একদিন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যখন কুরাইশগণ পরস্পর মিলিত হয়, তখন তারা একজন অন্যজনের সাথে হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে সাক্ষাৎ করে। আর যখন আমাদের সাথে সাক্ষাৎ হয় তখন তাদের চেহারা এমন সঙ্কুচিত হয় যে, তাদেরকে চেনা যায়না। এটা শুনে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত জালালী শান মুবারক জাহির করলনে। অতঃপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার কছম! যাঁর কুদরতী হাত মুবারক উনার মধ্যে আমার প্রাণ মুবারক রয়েছে। কোনো ব্যক্তির অন্তরে ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমান প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পূর্ণরূপে মুহব্বত করবে।”
অতঃপর আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কুরাইশরা পরস্পর বসে যখন তাদের বংশধরদের নিয়ে আলোচনা করে। তখন আপনার সম্পর্কে বলে যে, আপনি নাকি অনুর্বর যমীনে উৎপাদিত খেজুর। নাঊযুবিল্লাহ!
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “নিশ্চয়ই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যেদিন সমস্ত মাখলুকাত সৃষ্টি করলেন, সেদিন আমাকে সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। অতঃপর যখন তাদেরকে বিভক্ত করলেন, তখন আমাকে সর্বোত্তম ভাগে মনোনীত করলেন। যখন তাদেরকে গোত্রে বিভক্ত করলেন, তখন আমাকে সর্বোত্তম গোত্রে পাঠালেন। তারপর যখন পরিবার সৃষ্টি করলেন, তখন আমাকে সর্বশ্রেষ্ঠ পরিবারে পাঠালেন। কাজেই আমি বংশগতভাবে তোমাদের সবার থেকে শ্রেষ্ঠ এবং পরিবারের দিক থেকেও আমি তোমাদের সকলের চেয়ে সর্বোত্তম।” (পবিত্র তিরমিযী শরীফ, পবিত্র ইবনে মাজাহ শরীফ, পবিত্র দালায়িলুন নুবুওওয়াত)
অপর বর্ণনায় এসেছে-
فانا خيركم نفسا وخيركم ابا.
অর্থ: “আমার ব্যক্তিত্ব মুবারক তোমাদের সকলের চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং হযরত ওয়ালিদাইন আলাইহিমাস সালাম উনাদের দিক দিয়ে সকলের থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ।” (বিদায়া ওয়ান নিহায়া, মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়্যাহ, দালায়িলুন নুবুওওয়াত)
উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্ব¡া আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন- আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বলেছেন যে, আমি পূর্ব-পশ্চিম ঘুরে দেখেছি কিন্তু আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়েও শ্রেষ্ঠ কাউকে পাইনি এবং বনি হাশিমের চেয়েও সর্বোত্তম কাউকে পাইনি।” (পবিত্র বাইহাক্বী শরীফ, পবিত্র তিবরানী শরীফ, খাসায়িসুল কুবরা, সীরাতুল হালাবিয়া)
রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টির দু’হাজার বছর পূর্বে ‘কুরাইশ’ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সামনে একখানা নূর আকারে ছিল। এই নূর মুবারক যখন তাছবীহ পাঠ করতেন, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও উনার সাথে সাথে তাছবীহ পাঠ করতেন। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করে এই নূর মুবারক উনার পিঠ মুবারক উনার মধ্যে রেখে দিলেন।
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এরপর খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যম দিয়ে পৃথিবীতে পাঠালেন। তারপর হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যম দিয়ে স্থানান্তরিত করলেন। এমনিভাবে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে অতি সম্মানিত বান্দাগণ উনাদের মাধ্যমে এবং অতি পবিত্রা মহিলাগণ উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত করতে থাকেন। অবশেষে আমি আমার পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক নিয়েছি। আমার পূর্ব-পুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনারা কেউ কখনো চারিত্রিক দোষে দোষী ছিলেন না।” (খাছায়িসুল কুবরা শরীফ,সীরাতুল হালাবিয়া, নাসীমুর রিয়াদ শরহে শিফা শরীফ)
বলার অপেক্ষা রাখে না, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ মুবারক প্রাপ্ত প্রতিটি মুবারক বিষয়ই আরশে মুয়াল্লা উনার চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা সম্পন্ন। সুবহানাল্লাহ!
তাহলে উনার অজুদ বা নূর মুবারক যাঁদের পৃষ্ঠ মুবারক উনাদের মধ্যে অবস্থান নিয়েছেন উনারা কি করে অপবিত্র থাকতে পারেন?
উনারা ছিলেন সকলেই পূত-পবিত্র। ঈমানদার তো বটেই। জান্নাতী তো অবশ্যই। বরং স্বয়ং জান্নাতই উনাদের পাওয়ার জন্য উদগ্রীব। উনাদের প্রবেশের কারণে স্বয়ং জান্নাতের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কাজেই, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম বংশ মর্যাদা সম্পর্কে যারা প্রশ্ন উত্থাপন করে, তাদের অন্তরে জাররা পরিমাণ ঈমান প্রবেশ করতে পারেনি। তারা কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী।
মহান আল্লাহ পাক হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উছীলায় সকলকে হাক্বীক্বী হুসনে যন দান করুন। আমীন!
সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা উনার নাম কি আযর?
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে এরূপভাবে মনোনীত যে, উনাদের কারো পিতা-মাতা পর্যন্ত কেউই কাফির কিংবা মুশরিক ছিলেন না। বরং উনাদের মধ্যে অনেকে হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন আর যাঁরা নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না উনারা ঈমানদার তো অবশ্যই উপরন্তু উনারা ছিলেন উনাদের যুগে মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল বান্দা ও ওলী উনাদের অন্তর্ভুক্ত। এটাই হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের মত এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ উনাদের মত। এ মতের বিপরীত মত, অর্থ, ব্যাখ্যা, বক্তব্য, লিখনী সবই কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
প্রকৃতপক্ষে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিতা ছিলেন পরিপূর্ণ দ্বীনদার, পরহেযগার, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মত ও পথের পরিপূর্ণ অনুসারী একজন খালিছ ঈমানদার।
সর্বোপরি তিনি ছিলেন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রুবূবিয়াত প্রকাশের মহানতম ওসীলা। কেননা সমগ্র মাখলূক্বাত বা কায়িনাত সৃষ্টির যিনি মূল উৎস সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ওজুদ ‘নূর’ মুবারক উনার একজন মহান ধারক-বাহক।
আবুল বাশার হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে যে সকল মনোনীত ও সম্মানিত পুরুষ-মহিলা আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ওজুদ ‘নূর’ মুবারক হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে উনারা সকলেই ছিলেন সর্বকালের সর্বযুগের শ্রেষ্ঠতম পবিত্রতম সুমহান ব্যক্তিত্ব। উনাদের মধ্যে কেউই কাফির, মুশরিক বা বেদ্বীন ইত্যাদি ছিলেন না। উনারা সকলেই ছিলেন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত খাছ বান্দা-বান্দি উনাদের অন্তর্ভুক্ত।
মূলত, যারা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা বা পরিবারকে মূর্তিপূজক হিসেবে অভিহিত করে কুফরী কাজটি করে থাকে তারা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ ও জাহিল হওয়ার কারণেই করে থাকে। এছাড়া তারা মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত নবী ও রসূল হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহানতম ও পবিত্রতম শান, মান, মর্যাদা, মর্তবা সম্পর্কে এবং উনার সুমহান পরিচয় সম্পর্কে চরম অজ্ঞ ও গ- মূর্খ হওয়ার কারণে এবং পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ৭৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত لابيه ازر উনার মূল ও সঠিক অর্থ যা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে তা গ্রহণ না করে তার বিপরীতে শুধুমাত্র আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থের উপর ভিত্তি করে অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করার কারণে করে থাকে। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ উনাদের অর্থ ও ব্যাখ্যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তির শান বা মর্যাদা অনুযায়ী করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী যে অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়েছে সে অনুযায়ী অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনুসরণীয় হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা যে অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছেন, সে অনুযায়ী অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হবে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পবিত্র কালাম উনার শান বজায় রেখে শাব্দিক বা আভিধানিক অর্থ ও ব্যাখ্যাও গ্রহণ করতে হবে। তবে সবক্ষেত্রে শাব্দিক অর্থ ও ব্যাখ্যা আদৌ গ্রহণীয় ও অনুসরণীয় নয়। বরং ক্ষেত্র বিশেষ তা কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণও বটে।
যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারকে পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ ৫৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত مكر শব্দ মুবারক উনার আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ ‘ধোঁকাবাজির’ পরিবর্তে ‘হিকমত’ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কুফরী হবে।
অনুরূপভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে পবিত্র সূরা দ্বুহা শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত ضالا শব্দ মুবারক উনার শাব্দিক অর্থ ‘বিভ্রান্ত’ গ্রহণ না করে বরং তার পরিবর্তে ‘কিতাববিহীন’ অর্থ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কুফরী হবে।
একইভাবে পবিত্র সূরা হিজর শরীফ ৯৯নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে اليقين শব্দ মুবারক উনার শাব্দিক বা আভিধানিক অর্থ ‘বিশ্বাস’ গ্রহণ না করে ‘মৃত্যু’ অর্থ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কুফরী হবে। এমনি ধরনের আরো বহু পবিত্র আয়াত শরীফ রয়েছে যাদের শুধুমাত্র আভিধানিক অর্থের উপর ভিত্তি করে অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হলে অশুদ্ধ ও কুফরী হবে। যেরূপ কুফরী হয়েছে পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ৭৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত اب (আবুন) শব্দ মুবারক উনার শাব্দিক অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করে।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
واذ قال ابرهيم لابيه ازر اتتخذ اصناما الـهة.
অর্থ: “আর যখন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় চাচা আযরকে বললেন, আপনি কি মূর্তিকে ইলাহ (মা’বুদ) হিসেবে গ্রহণ করছেন?” (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৪)
এ আয়াত শরীফেابيه উনার মধ্যে اب (আবুন) শব্দ মুবারক উনার শাব্দিক একটি অর্থ ‘পিতা’ গ্রহণ করে বলা হচ্ছে ‘আযর’ হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিতা। কিন্তু হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের সর্বসম্মত মতে, এখানে ابيه শব্দ মুবারক উনার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে ‘আযর’ হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার চাচা। অর্থাৎ উদ্ধৃত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে اب (আবুন) শব্দ মুবারক উনার অর্থ পিতা না হয়ে উনার অর্থ হবে চাচা। কারণ, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অনেক স্থানেই اب (আবুন) শব্দটি পিতা ব্যতীত অন্য অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
ام كنتم شهداء اذ حضر يعقوب الموت اذ قال لبنيه ما تعبدون من بعدى قالوا نعبد الـهك واله ابائك ابرهيم واسمعيل واسحق الـها واحدا.
অর্থ: “তোমরা কি উপস্থিত ছিলে? যখন হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ গ্রহণের সময় উপস্থিত হলো তখন তিনি উনার সন্তানগণ উনাদেরকে বললেন, ‘আপনারা আমার পর কার ইবাদত করবেন? উনারা উত্তরে বললেন, ‘আমরা আপনার রব তায়ালা উনার এবং আপনার পূর্ব পিতা (আপনার দাদা) হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার এবং (আপনার চাচা) হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনার এবং (আপনার পিতা) হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম উনার একক রব খালিক্ব মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করবো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৩)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে اب (আবুন) দ্বারা দাদা, চাচা ও পিতা সকলকে বুঝানো হয়েছে। যেমন, এ সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারী’ উনার ৩য় খ-ের ২৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وكان ازر على الصحيح عما لابراهيم والعرب يطلقون الاب على العم كما فى قوله تعالى نعبد الـهك واله ابائك ابراهيم واسماعيل واسحاق الـها واحدا.
অর্থ: “বিশুদ্ধ মতে, আযর ছিলো হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা। আর আরবরা চাচাকেও اب (আবুন) শব্দে অভিহিত করে থাকে।” যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা আপনার প্রতিপালক ও আপনার পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম উনাদের একক প্রতিপালক মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করবো।”
“তাফসীরে মাযহারী” কিতাব উনার ৩য় খ-ের ২৫৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে-
والعرب يطلقون الاب على العم.
অর্থ: “আরববাসীরা الاب (আল আবু) শব্দটি চাচার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেন।” তাফসীরে কবীর কিতাবের ১৩তম খ-ের ৩৮ পৃষ্ঠায়ও অনুরূপ উল্লেখ রয়েছে।
সুতরাং পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ৭৪নং আয়াত শরীফে ابيه ازر এর অর্থ হলো আযর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা। উনার পিতা নন।
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে-
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه ان ابا ابراهيم عليه السلام لم يكن اسمه ازر وانما كان اسمه تارح.
অর্থ: “রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতার নাম আযর নয়। বরং উনার পিতার নাম মুবারক হলো হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম।” (ইবনে আবি হাতিম শরীফ, ইবনে কাছীর শরীফ- ৩/২৪৮)
এ সম্পর্কে তাফসীরে কবীর শরীফ ১৩/৩৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে-
ان والد ابراهيم عليه السلام كان تارح وازر كان عما له والعم قد يطلق عليه اسم الاب.
অর্থ: “নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা ছিলেন হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম। আর আযর ছিলো উনার চাচা। এবং আম্মুন (চাচা) শব্দটি কখনো ‘ইসমুল আব’ অর্থাৎ পিতা নামে ব্যবহৃত হয়।”
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে-
ان والد ابراهيم عليه السلام ما كان مشركا وثبت ان ازر كان مشركا فوجب القطع بان والد ابراهيم كان انسانا اخر غير ازر.
অর্থ: “নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতা (হযরত তারাখ আলাইহিস সালাম) মুশরিক ছিলেন না। বরং আযর (উনার চাচা) মুশরিক ছিল। কেননা, অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম উনার পিতা আযর নয়। বরং অন্য একজন অর্থাৎ হযরত তারাখ বা তারাহ আলাইহিস সালাম।” (তাফসীরে কবীর শরীফ- ১৩/৩৯)
তাফসীরে মাযহারী- ৩/২৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
ليس ازر ابا لابراهيم انما هو ابراهيم بن تارح.
অর্থ: “আযর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতা নয়। বরং নিশ্চয়ই তিনি (হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম) হলেন হযরত তারাখ বা তারাহ আলাইহিস সালাম উনার সুযোগ্য সন্তান।”
তাফসীরে মাযহারী- ৩/২৫৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
وفى القاموس ازر اسم عم ابراهيم عليه السلام واما ابوه فانه تارح.
অর্থ: “ক্বামূস অভিধানে উল্লেখ করা হয়েছে, আযর হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার চাচার নাম। আর নিশ্চয়ই উনার পিতার নাম হলো হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম।”
মূলত, হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিসহ সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগ উনাদের পিতা-মাতা বা পূর্বপুরুষ ছিলেন পরিপূর্ণ ঈমানদার, খালিছ মু’মিন। কেউই কাফির ছিলেন না।
এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
ان اباء الانبياء ماكانوا كفارا ويدل عليه وجوه منها قوله وتقلبك فى الساجدين.
অর্থ: “নিশ্চয়ই সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পিতা বা পূর্বপুরুষ উনারা কেউই কাফির ছিলেননা। তার দলীল হচ্ছে, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এ কালাম বা পবিত্র আয়াত শরীফ-
وتقلبك فى الساجدين.
অর্থ: “তিনি আপনাকে (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) সিজদাকারীগণ উনাদের মধ্যে স্থানান্তরিত করেছেন।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ ২৯, তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৮)
প্রকাশ থাকে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ملة ابيكم ابرهيم هو سمكم الـمسلمين.
অর্থ: “তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র দ্বীন উনার উপর কায়িম থাক। তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলমান।” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৮)
কাজেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যাঁদের মাধ্যমে যমীনে তাশরীফ এনেছেন অর্থাৎ আবুল বাশার হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে আবূ রসূলিনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত উনারা সকলেই ছিলেন সিজদাকারী। অর্থাৎ সকলেই নামায-কালাম, যিকির-আযকার, ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল ছিলেন। উনারা সকলেই পূর্ণ পরহেযগার, মুত্তাক্বী ও ধার্মিক ছিলেন।
এ সম্পর্কে পবিত্র তাফসীর শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
فالاية دالة على ان جميع اباء محمد صلى الله عليه وسلم كانوا مسلمين وحينئذ يجب القطع بان والد ابراهيم عليه السلام كان مسلما.
অর্থ: “উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা এটাই ছাবিত বা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ উনারা সকলেই পরিপূর্ণ মুসলমান ছিলেন। এ থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত বা সাব্যস্ত যে, নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতা তিনি মুসলমান ছিলেন।” (তাফসীরে কবীর শরীফ- ১৩/৩৮)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
لـم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات.
অর্থ: “আমি সর্বদা পূত-পবিত্র নারী ও পুরুষ উনাদের মাধ্যমেই স্থানান্তরিত হয়েছি।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কবীর শরীফ- ১৩/৩৯)
তিনি আরো বলেন-
لـم يلتق ابوى قط على سفاح.
অর্থ: “আমার পিতা-মাতা (পূর্বপুরুষ) কেউই কখনো কোনো অন্যায় ও অশ্লীল কাজে জড়িত হননি।” (কানযুল উম্মাল শরীফ, ইবনে আসাকীর, বারাহিনে কাতিয়াহ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
بعثت من خير قرون بنى ادم قرنا فقرنا حتى بعثت من القرن الذى كنت فيه.
অর্থ: “আমি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানগণ উনাদের মধ্যে সর্বোত্তম সম্প্রদায়ের মধ্যেই সর্বদা প্রেরিত হয়েছি। এমনকি আমি যে (কুরাইশ) সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিলাম সেটিই ছিলো সর্বোত্তম সম্প্রদায়।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, তাফসীরে মাযহারী শরীফ ৪র্থ খ- ৩০৮ পৃষ্ঠা)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় কিতাবে বর্ণিত হয়েছে-
فلا يـمكن ان يكون كافرا فى سلسلة ابائه صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা (পূর্বপুরুষ) উনাদের সিলসিলার মধ্যে কেউই কাফির হওয়া সম্ভব নয়।” (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ৪র্থ খ- ৩০৮ পৃষ্ঠা)
এ সম্পর্কে কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-
ان احدا من اجداده ما كان من الـمشركين.
অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাপ-দাদাগণ উনারা কেউই মুশরিক ছিলেন না।” (তাফসীরে কবীর শরীফ- ১৩ খ- ৩৯ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য, অনেকে “পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ” উনার ৪৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র সূরা তওবা শরীফ উনার ১১৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের বরাত দিয়ে বলে থাকে যে, “হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার পিতার জন্য ইস্তিগফার করেছেন। কাজেই উনার পিতা ঈমানদার ছিলেন না।” নাউযুবিল্লাহ!
মূলত, যারা একথা বলে থাকে, তারা উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের অর্থই বুঝেনি। কারণ “পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ” উনার ৪৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قال سلم عليك ساستغفر لك ربى.
অর্থ: “হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আপনার প্রতি (বিদায়কালীন) সালাম, অচিরেই আমি আমার প্রতিপালক উনার নিকট আপনার জন্য মাগফিরাত কামনা করবো।”
অনুরূপ “পবিত্র সূরা তওবা শরীফ” উনার ১১৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ما كان استغفار ابرهيم لابيه الا عن موعدة وعدها اياه.
অর্থ: “হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার তরফ থেকে স্বীয় চাচার মাগফিরাত কামনা করা ছিলো কেবলমাত্র তার সাথে ওয়াদা করার কারণে।” অর্থাৎ প্রথমত হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় চাচার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, তিনি তার জন্য ইস্তিগফার করবেন যেন উনার চাচা তওবা করে, শিরক ছেড়ে ঈমান গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায় সেজন্য দোয়া করবেন।
আর তাই “পবিত্র সূরা তওবা শরীফ” উনার ১১৪নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সেই ওয়াদা পালনার্থে এবং মুশরিকদের জন্য দোয়া করা নিষেধ হওয়ার পূর্বে হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার চাচার জন্য দোয়া করেছিলেন।
যেমন, উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসীর শরীফ-এ এসেছে-
ان ذلك كان قبل النهى عن الاستغفار للمشرك وقد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعمه ابى طالب والله لاستغفرن لك.
অর্থ: “নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ইস্তিগফার কামনা করাটা ছিল মুশরিকদের জন্য দোয়া করা নিষেধ হওয়ার পূর্বের। যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নিষেধ হওয়ার পূর্বে) উনার চাচা আবূ তালিব উনাকে বলেছিলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! অবশ্যই আমি আপনার তওবা নছীব হওয়ার জন্য দোয়া করবো।” (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ৬/১০০)
এছাড়া হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার চাচা আযরের জন্য এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা আবূ তালিবের জন্য সরাসরি দোয়া করেননি; বরং তাদের ইস্তিগফার কামনা করেছেন। অর্থাৎ আযর ও আবু তালিব তাদের যেন তওবা নছীব হয়, তারা যেন ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়, ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয় সেজন্য দোয়া করেছেন। আর তাও ছিল মুশরিকদের জন্য দোয়া নিষেধ সংক্রান্ত বিধান (আয়াত শরীফ) নাযিল হওয়ার পূর্বে।
আর চাচা হিসেবে আযর সে হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এবং আবূ তালিব তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনেক খিদমত করেছে। তার বিনিময়স্বরূপ হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা তাদের ইস্তিগফার (তওবা কবুল হওয়ার দোয়া) কামনা করেছেন।
এ সম্পর্কে তাফসীরে উল্লেখ রয়েছে-
وما كان استغفار ابراهيم لابيه يعنى ازر وكان عما لابراهيم عليه السلام وكان ابراهيم بن تارح عليه السلام.
অর্থ: “হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিতার জন্যে ইস্তিগফার করেন অর্থাৎ আযরের জন্যে ইস্তিগফার করেন। আযর ছিল হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার চাচা। আর হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ।” (তাফসীর মাযহারী শরীফ ৪ খ- ৩০৮ পৃষ্ঠা)
এ কথা বিশেষভাবে স্মরণীয় ও প্রণিধানযোগ্য যে, সকল হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা এ বিষয়ে ইজমা বা ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শরীর মুবারকে বা পা মুবারকে যা কিছু স্পর্শ করেছে তা আরশে মুআল্লা উনার চাইতে লক্ষ-কোটিগুণ বেশি মর্যাদাবান। সুবহানাল্লাহ!
তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র অজুদ ‘নূর’ মুবারক তা যাঁদের মাধ্যম হয়ে পর্যায়ক্রমে স্থানান্তরিত হয়ে তিনি যমীনে আগমন করেছেন সেই সকল ব্যক্তিগণ উনাদের মর্যাদা কত বেমেছাল হবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
বস্তুত সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহান শানে এরূপ কুফরীমূলক উক্তি করার অর্থ হলো খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে চরম ধৃষ্ঠতা প্রদর্শন করা। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
আরো উল্লেখ্য, যেই পবিত্র নসব-নসল সূত্রে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ আনেন উনাদের পূর্ব-পুরুষ উনাদের নসব-নসলনামায় ‘কেউ কেউ ঈমানদার ছিলেন না’ এরূপ কল্পনা বা ধারণা করাও কাট্টা কুফরী।
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিতা ছিলেন হাক্বীক্বী পরহেযগার, মুত্তাক্বী, পরিপূর্ণ ঈমানদার ও মুসলমান। উনার নাম মুবারক ছিল হযরত তারাখ মতান্তরে তারিহ বা তারাহ আলাইহিস সালাম। আর আযর নামক ব্যক্তি ছিল উনার চাচা। আরো প্রমাণিত হলো যে, পূর্ববর্তী সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পূর্বপুরুষগণ এবং সর্বোপরি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষগণ হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে আবূ রসূলিনা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত সকলেই ছিলেন পূত-পবিত্র চরিত্র মুবারক উনার অধিকারী, পূর্ণ ধার্মিক ও পরিপূর্ণ মুসলমান।
অতএব, যে ব্যক্তি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা ও পরিবার সম্পর্কে কুফরীমূলক আক্বীদা রাখবে ও বক্তব্য-লিখনী প্রকাশ করবে পবিত্র ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী তার উপরে মুরতাদের হুকুম বর্তাবে। অর্থাৎ সে ইসলাম বা মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে। পবিত্র ইসলামী খিলাফত থাকলে তাকে তিনদিন সময় দেয়া হতো তওবা করার জন্য। তিনদিনের মধ্যে তওবা না করলে তার শাস্তি হতো মৃত্যুদ-। সে মারা গেলে তার জানাযা পড়া জায়িয হবে না। তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না; বরং তাকে মৃত কুকুর-শৃগালের মতো মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে। তার জীবনের সমস্ত নেক আমল বাতিল হয়ে যাবে। বিয়ে করে থাকলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে এবং সে হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। সে ওয়ারিছস্বত্ব থেকেও বঞ্চিত হবে।
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উনার ওয়াক্বিয়া মুবারক
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
رجحه الامام الواقدى و قال و كان حضرة عبد الله عليه السلام قد رجع ضعيفا مع قريش لـما رجعوا من تـجارتـهم و مروا بالـمدينة فتخلف عند اخواله بنى عدى بن النجار فاقام عندهم مريضا شهرا فلما قدم اصحابه مكة سألـهم حضرة عبد الـمطلب عليه السلام عنه فقالوا خلفناه مريضا فبعث اليه اخاه الـحارث فوجده قد توفى و دفن فى دار التابعة و قيل دفن بالابواء
অর্থ: হযরত ইমাম ওয়াক্বিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তারজীহ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত বর্ণনা সূত্রে বর্ণনা করে বলেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মারিদ্বী শান মুবারক উনাকে গ্রহণ করায় কুরাইশদের সাথে ব্যবসা থেকে প্রত্যাবর্তন করার ইচ্ছা মুবারক পোষণ করেন। যখন ব্যবসা থেকে ফিরে আসার ইচ্ছা মুবারক পোষণ করলেন এবং সকলেই পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করতে লাগলেন।
তখন মারিদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করার কারণে যবীহুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে স্বীয় ‘মাতুল’ বংশীয় ‘বনু নাজ্জার’ গোত্রের ‘আদী’ বংশীয় মামাগণের নিকট রেখে কুরাইশগণ পবিত্র মক্কা শরীফ-এ প্রত্যাবর্তণ করেন। অতঃপর হযরত খাজা যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত মামাগণ উনার নিকট এক মাস মারিদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করা অবস্থায় অবস্থান করেন।
এমতাবস্থায় যখন সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথীগণ পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে পৌঁছে গেলেন, তখন হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন, অতঃপর উনারা সকলেই জবাবে বললেন, সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে আমরা মারিদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করার কারণে (পবিত্র মদীনা শরীফ-এ) রেখে এসেছি। এ জবাব শুনার পর পরই সাইয়্যিদুনা খাজা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় প্রাণপ্রতীম আওলাদ- সাইয়্যিদুনা খাজা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার অবস্থা জানার জন্য সাইয়্যিদুনা খাজা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনারই আপন ভাই হারিছ উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ-এ প্রেরণ করেন।
অতঃপর তিনি সেখানে গিয়ে দেখতে পেলেন যে, সাইয়্যিদুনা খাজা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। ‘সম্মানিত দারে তাবিয়ায়’ উনার পবিত্র রওযা শরীফ স্থাপন করা হয়েছে।
কেউ কেউ বলেন, ‘আবওয়া নামক স্থানে উনার পবিত্র রওযা শরীফ স্থাপন করা হয়েছে অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা খাজা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র রওজা শরীফ ‘আবওয়া’ নামক স্থান মুবারক-এ অবস্থিত। (শারুহুয যারকানী ১ম খ- ২০৬ পৃষ্ঠা, ইবনুল আছীর, ফীয যাহরিল বা’সিম, খাছায়িছুল কুবরা)
এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত আছে-
و يذكر عن ابن حضرة عباس رضى الله تعالى عنه انه لـما توفى سيدنا حضرة عبد الله عليه السلام قالت الـملائكة يا الـهنا و يا سيدنا بقى نبيك يتيما وفى رواية صار نبيك فبقى من غير حافظ و مرب فقال الله! انا له حافظ و نصير و فى رواية انا وليه و حافظه و حاميه و ربه و عونه و رازقه و كافيه فصلوا عليه وتبركوا باسـمه
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা যবীবুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা (কেঁদে কেঁদে) বলছিলেন- ইয়া বারে ইলাহী, খালিক, মালিক, রব মহান রব্বুল আলামীন! আপনার প্রিয়তম হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো এখন ইয়াতীম হয়ে গেলেন!
অপর বর্ণনায় রয়েছে- হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, ইয়া বারে ইলাহী! আপনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি এখন এমন ইয়াতীম হয়ে গেলেন! উনার তো আর কোনো রক্ষনাবেক্ষণকারী এবং দেখা-শুনা তথা লালন-পালনকারী আর কেউ বাকী থাকলেন না! এ জবাবে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম আপনারা সাক্ষী থাকুন- আমিই উনার পরম অভিভাবক, আমিই উনার পবিত্রতম হিফাযতকারী, আমি উনার হাযত মুবারক পুরণকারী তথা আমিই উনার পবিত্রতম রক্ষনাবেক্ষকারী, আমিই উনার পবিত্রতম রব তায়ালা তথা লালন-পালনকারী, আমিই উনার পবিত্রতম সাহায্যকারী, আমিই উনার পবিত্রতম রিযিকদাতা এবং সার্বিক বিষয়ে আমিই উনার জন্য যথেষ্ট। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই হে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! আপনারা সকলেই আমার প্রিয়তম হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম শান মুবারক-এ পবিত্রতম ছলাত মুবারক তথা দরূদ শরীফ পাঠ করুন এবং উনার পবিত্র নাম মুবারক উনার যিকির করে সীমাহীন বরকত মুবারক হাছিল করুন। সুবহানাল্লাহ! (শারহুয যারকানী ১ম খ- ২০৭ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহিলল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূত-পবিত্র জবান মুবারক-এ পাঠকৃত প্রশংসামূলক “পবিত্র না’ত শরীফ”
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার কথা শুনে সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহিলল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পূত-পবিত্র জবান মুবারক-এ শোকাবহ ও প্রশংসামূলক “পবিত্র না’ত শরীফ” পাঠ করেন। এ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
و قالت حضرة امنة عليها السلام زوجته عليهما السلام ترثيه :
عَفَا جانبُ البطحاءِ من ال هاشم ** و جاور لَـحْدًا خارجًا في الغَمَاغِم
دَعَتْه الـمنايا دعوة فأجابـها ** و ما تركتْ في الناس مثل ابن هاشم
عشية راحوا يـحملون سريره ** تَعَاوَرَهُ أصحابه في التزاحم
فإن تك غالته الـمنون و رَيْبَها ** فقد كان مِعْطاءً كثير التراحم
অর্থ: ত্বাহিরা, ত্বইয়িবাহ, খাতুনে জান্নাহ, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি উনার পবিত্রতম জীবন মুবারক উনার চির সাথী- হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার শোকাবহ সংবাদ মুবারক শোনার সাথে সাথেই শোকাবহ ও প্রশংসামূলক এই পবিত্রতম না’ত শরীফ খানা পাঠ করেন-
* ‘সম্মানিত বাতহা’ উনার তথা সম্মানিত কংকরময় উপত্যকা উনার ‘কোল’ ‘পবিত্র হাশিমী বংশ’ (এখন) খালি হয়ে গেছে! শোরগোল আর কোলাহলের মাঝে ‘পবিত্র হাশিমী বংশ উনার গৌরবময় আওলাদ’ তিনি পবিত্র এক ‘কবর মুবারক-এ’ তথা রওজা শরীফ-এ চির নিদ্রা মুবারক-এ নিমগ্ন হয়ে আছেন! সুবহানাল্লাহ!
(وجاور لَحْدًا خارجًا في الغَمَاغِم এই শব্দ মুবারক দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- وكان الـمراد الاكفان التى لف فيها فكانـها قالت حور مدرجا فى اكفانه لـحدا بعيدا عن اماكن اهله হযরত খাজা যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় পবিত্রতম পরিবারবর্গ উনাদের আবাসস্থল থেকে বহু দূরে- বহির্দেশে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং উনাকে এই কোলাহলের মধ্য দিয়ে কাফন মুবারক পরিয়ে রওজা শরীফ উনার মধ্যে রাখা হয়েছে। মূলত হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ আলাইহাস সালাম তিনি সেই মহান বিষয় মুবারক উনাকে কেন্দ্র করে উক্ত “না’ত শরীফ” উনার অংশ মুবারক উল্লেখ করেছেন।)
* পবিত্র মৃত্যু তথা পবিত্র বিছালী শান মুবারক উনাকে আহবান করেছেন আর তিনি সে আহবানে সাড়া দিতে সদা প্রস্তুত বিধায় আহবানে সাড়া দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! এই শোকাবহ পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ এমন করুণ যে, যা এখন ইবনে হাশিম তথা সম্মানিত হাশিমী গোত্র উনার পূত-পবিত্র আওলাদ খাজা যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মতো আর কোনো লোকই রেখে যাননি। সুবহানাল্লাহ!
* কতোই না দুঃখজনক! ছিলো সেই শোকাবহ পবিত্রতম ‘সন্ধ্যা’, যে পবিত্রতম শোকাবহ সন্ধ্যায় উনাকে উনার আপন সঙ্গী-সাথীগণ “পবিত্র খাটিয়া মুবারক উনার মধ্যে” উঠায়ে পবিত্র রওজা শরীফ উনার দিকে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পবিত্র রওজা শরীফ উনার মধ্যে রেখে এসেছেন!
* যদিও উনাকে মৃত্যু তথা পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করতে হয়েছে, যা ক্ষণস্থায়ী ও নশ্বর, কিন্তু এই ক্ষণস্থায়ী মৃত্যু তথা পবিত্র বিছালী শান মুবারক কখনোই সাইয়্যিদুনা খাজা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যে সমস্ত অমর কৃতিত্ব মুবারক রেখে গেছেন, সেগুলোকে কোনো দিনই মুছে দিতে পারবে না। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করলেও উনার কৃতিত্ব মুবারক চির অমর হয়ে আছেন এবং আবাদুল-আবাদ থাকবেন। সুবহানাল্লাহ! কারণ তিনি ছিলেন- মহান দাতা ও পরম দয়ালু। সুবহানাল্লাহ! (শারহুয যারকানী ১ম খ- : ২০৬-২০৭, সুবূলুল হুদা)
সর্বশ্রেষ্ঠ ও মহাসম্মানিত পিতা উনার পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস পালন করার ফযীলত
আমি আপনি আমরা সকলেই কমবেশি নিজেদের পিতা-মাতা উনাদের ইন্তেকাল দিবস পালন করি। এ উপলক্ষে বিশেষভাবে দান-সদকা ও দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করি। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যিনি আমাদের ঈমান দান করেছেন, যে উসীলায় আমরা সৃষ্টি হয়েছি সেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক দিবস কবে? এবং এ উপলক্ষে উম্মত হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কি?
অত্যন্ত আফসুস! মুসলিম উম্মাহর জন্য; উম্মাহ জানেই না কত তারিখে আবু রসুলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম তিনি মহাপবিত্র বিছালী শান মুবারক গ্রহণ করেছেন।
বিষয়টির গভীরে যদি আমরা প্রবেশ করি তাহলে বুঝা উচিত- যিনি নূরে মুজাসসাম, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাঝে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন- ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এমনকি নিজের জানের চেয়ে আমাকে বেশী মুহব্বত না করবে।”
নিজের পিতা-মাতার চেয়ে যদি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেশি মুহব্বত করতেই হয়, তাহলে আমরা কিভাবে উনার মহাসম্মানিত পিতাজান আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ দিবস পালন না করে নিজেদের পিতা-মাতার বিছাল শরীফ দিবস পালন করি?
মহান আল্লাহ পাক উনার বেমেছাল রহমত মুসলিম উম্মাহ’র জন্য যে যামানার মহান ইমাম ও মুজাদ্দিদ মুজাদ্দিদে আ’যম, সুলত্বানিন নাছীর, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল রাজারবাগ শরীফ উনার সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি আমাদেরকে এই মহাপবিত্র দিবস সম্পর্কে জানিয়েছেন, এ দিবসকে পালন করার সুযোগ করে দিয়েছেন; সাইয়্যিদুনা আবু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস ২ মুহররমুল হারাম শরীফ উপলক্ষে বিশেষ মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ ও মুনাজাত শরীফ মাহফিল উনার ব্যাপক আয়োজন করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল ক্বওনাইন, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আবূরসূলিনা আলাইহিস সালাম উনার খুছুছিয়ত মুবারক-
মাখলুকাত মাঝে মহান আল্লাহ পাক কর্তৃক আখাছছুল খাছভাবে মনোনীত ব্যক্তিত্বগণ উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতম। তিনি মহান বারী তায়ালা উনার সর্বাধিক প্রিয়পাত্র বলেই নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধারণ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قلت يارسول الله صلى الله عليه وسلم بابى انت وامى اخبرنى عن اول شئ خلقه الله قبل الاشياء قال يا جابر ان الله تعالى خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره فجعل ذلك النور يدور بالقدرة حيث شاء الله تعالى ولم يكن فى ذلك الوقت لوح ولا قلم ولا سماء ولا ارض.
অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেছেন? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি জেনে রাখুন। মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আপনার নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন। অতঃপর সেই নূর মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা মুবারক অনুযায়ী বিচরণ মুবারক করতে থাকেন। সেই সময় লৌহ-কলম, আসমান-যমীন কোনো কিছুই ছিলো না। (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া)
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি দুনিয়ার যমীনে ২৫ বছর অবস্থান মুবারক করেন। সে অনুযায়ী ঈসায়ী ৫৪৫ সনে তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মাঝে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার পর্যায়ক্রমে ছয়জন আহলিয়া ছিলেন। উনাদের মধ্যে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার আদী বংশের যাহরা গোত্রের সাইয়্যিদুনা হযরত ফাতিমা বিনতে আমর ইবনে আইছ আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফে হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার হুলিয়া মুবারক উনার হুসনিয়াত তৎকালীন আরবীদেরকে অত্যাধিক আশ্চর্যান্বি^ত করেছে। কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
كان صيت حسن حضرت عبد الله عليه السلام و جماله مشتهرا.
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হুসনিয়াত ও জামালিয়তের কারণে অত্যাধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (মাদারেজুন নবুওওয়াত)
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক কর্তৃক পূর্ব মনোনীত মহান ব্যক্তিত্ব। সঙ্গতকারণেই উনার শান মুবারক ও খুছুছিয়ত মুবারক সম্পর্কে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহে সুস্পষ্ট আলোচনা মুবারক ছিলো। এ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
اهل الكتاب كانوا يعرفون عن بعض العلمات ان النبى صلى الله عليه وسلم اخر الزمان يكون من صلب حضرت عبد الله عليه السلام فيعادونه عدوانا.
অর্থ: আহলে কিতাবগণ বিভিন্ন আলামত (তথা তাদের কিতাবী বর্ণনার কারণে) জানত যে, আখিরী নবী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ঔরস মুবারক হতে তাশরীফ মুবারক আনবেন। (তারা উনাকে খুব-ভালোভাবেই চিনতো) তারা উনার প্রতি শত্রুতা পোষণ করতো। (আল বারাহিনুল ক্বতইয়্যা ফি মাওলিদী খইরিল বারিয়্যা)
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সদা-সর্বদা গাইবী মদদ দ্বারা বেষ্টিত ছিলেন। অপরদিকে উনার অসংখ্য কারামত মুবারক নিয়মিত প্রকাশ হতো। কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
كان حضرت عبد الله عليه السلام ذهب للصيد يوما فوصل جماعة كثيرة من جانب الشام لقصد حضرت عبد الله عليه السلام مسلين سيوفا وكان حضرت وهب بن مناف عليه السلام فى ذلك الصحراء ايضا فراى فرسانا اجلادا لايشبهون باهل عالم الشهادة ظهورا من الغيب و دفعوا الجماعة عنه دفعا.
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি শিকার করার জন্য এক স্থানে তাশরীফ মুবারক রাখলেন। তখন শাম দেশের দিক হতে একদল শত্রু উনাকে শহীদ করার জন্য তরবারী নিয়ে এগিয়ে আসলো। সে স্থানে হযরত ওয়াহাব ইবনে মান্নাফ আলাইহিস সালাম তিনিও উপস্থিত ছিলেন। তিনি দেখতে পেলেন, সাধারণ মানুষের সাথে সামনজস্য নেই এমন একদল তেজস্বী অশ্বারোহী দ্রুতগতিতে আসলো। আগত অশ্বারোহী দল সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার শত্রুদেরকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে পুনরায় অদৃশ্য হয়ে যায়। (নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা আলাইহিস সালাম উনাকে যেরূপ পূর্বেই মনোনীত করে রেখেছেন, তদ্রƒপ হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও মনোনীত করেই দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। সঙ্গতকারণেই উনাদের নিসবাতুল আযীম মুবারক ছিলো মহান বারী তায়ালা কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত। তাই তো অন্যান্য মহিলাদের প্রস্তাবনা বাতিল করে উনাদের শাদী মুবারক সম্পন্ন হয়। কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
قال حسن بن احـمد البكرى رحمة الله عليه لـما اراد الجليل جل جلا له ان ينقل نور سيدنا محمد صلى الله عليه وسلم، جرك فى قلب عبد الله بن عبد الـمطلب عليه السلام ان يتزوج فقال عبد الله عليه السلام لامه عليها السلام اريد منك ان تـخطبى لى امراة ذات حسن وجمال وقد واعتدال وبـهاء وكمال وحسب ونسب عال، قالت حبا وكرامة يا ولدى، ثـم انـها دارت احياء قريش وبنات العرب، فلم يعجبها الا امنة بنت وهب عليها السلام، فقال يا اماه انظريها مرة ثانية، فمضب ونظرتـها فاذا هى تضىء كانـها كوكب درى، فانقدوها اوقية من فضة واوقية من ذهب، ومائة من الابل ومثلها من البقر والغنم وذبح واصلح طعام كثير، لاجل عرس عبد الله بن عبد الـمطلب عليه السلام، و زفت له ثـم اختلا بـها عبد الله فى خلوة الـطاعة عشبة، وكانت ليلة الـجمعة روى انه لـما اراد الله ان يـخلق مـحمدا صلى الله عليه وسلم فى بطن امه امنة عليها السلام ليلة الـجمعة من شهر رجب الاصم،
অর্থ; হযরত হাসান বিন আহমদ বাকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: যখন মহান আল্লাহ জাল্লা জালালুহু তিনি সাইয়্যিদুনা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারককে উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ স্থানান্তরিত করার ইচ্ছা মুবারক করলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক অন্তরে নিকাহ করার আগ্রহ সৃষ্টি করে দিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীবুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম তিনি নিজ মাতা উনাকে বললেন, আমি চাচ্ছি আপনি আমার সাথে একজন আহলিয়াকে নিকাহের মাধ্যমে সম্পর্ক করে দেন; যিনি হবেন উত্তম চরিত্রের অধিকারিনী, সুদশর্না, ন্যায় নিষ্ঠাবান, জ্যোতির্ময়, পূর্ণতাপ্রাপ্তা ও সুউচ্চ বংশ ও গোত্রের ব্যক্তিত্বা। উনার মাতা তিনি উত্তরে বললেন, হে আমার স্নেহের আওলাদ! আপনার জন্য মুহব্বত ও সম্মান-ইজ্জত। অতঃপর তিনি (উনার মাতা) কুরাইশ বংশের ও আরবের সকল কুমারী মহিলাগণের ব্যাপারে প্রতিটি বাড়ি থেকে সংবাদ নিলেন। উনার কাছে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আমিনা বিনতে ওয়াহাব আলাইহাস সালাম তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে উপযুক্ত মনে হলো না। বলা হলো- হে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাতা! আপনি দ্বিতীয়বারের মতো আবারো উনাকে দেখুন। অতএব, তিনি আবারো দেখলেন এমতাবস্থায় যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি নূরানী আলোকময়, যেন মুক্তা সাদৃশ্য তারকা। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উনাদের উভয়ের মধ্যে নিকাহ মুবারক সুসম্পন্ন করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এই মুবারক বিবাহে উনাকে নগদ এক আউকিয়া স্বর্ণ ও এক আউকিয়া রৌপ্য দেনমোহর হিসেবে প্রদান করা হয়েছিলো। সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকাহ মুবারক উনার ওলীমায় একশতটি উট, একশত গরু, একশত বকরী (খাশি, মেষ, ভেড়া, দুম্বা, ছাগল) জবাই করা হয়েছিলো এবং প্রচুর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ফুল সজ্জিত ঘর মুবারকে পাঠানো হলো। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার আহলিয়া উনার সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎ মুবারক লাভ করলেন। সেই মুবারক রাতখানা ছিলো লাইলাতুল পবিত্র জুমুয়াতি বা জুমুয়া উনার রাত। বর্ণিত রয়েছে যে, “যখন মহান আল্লাহ পাক চাইলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার বরকতময় রেহেম শরীফ উনাতে তাশরীফ মুবারক নেন, সে সময়টি ছিলো রজবুল আছাম মাস উনার ১লা লাইলাতুল জুমুয়াতি বা জুমুয়াবার রাত (লক্ষণীয় যে, সেই বছর রজব মাসের ১লা জুমুয়াবার ছিলো ১লা তারিখেই)। (আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আ’লাম)
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মুবারক ব্যবসা করার জন্য সিরিয়া মতান্তরে বসরা সফর করেছেন। যা উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণের ঘটনা মুবারক হতে খুব সহজেই অনুধাবনীয়।
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণের তারিখ সম্পর্কে উম্মাহ ছিল গাফিল। খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সুলত্বানুল আউলিয়া, মাখযানুল মা’রিফাহ, খযীনাতুর রহমাহ, মুঈনুল মিল্লাহ, লিসানুল উম্মাহ, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সীমাহীন দয়া ও ইহসান। তিনি আমাদের চোখ-কান খুলে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উনার তারিখ পবিত্র ২রা মুর্হরমুল হারাম শরীফ। একটু সূক্ষ্মভাবে ফিকির করলে দেখা যাবে আমরা প্রায়ই পাঠ করি, কিন্তু হাক্বীক্বী নিসবত না থাকার কারণে বিষয়টি আমাদের উপলব্ধিতে আসেনি। আমরা পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার তাওয়াল্লুদ শরীফে পাঠ করি-
وَلَـمَّا تَـمَّ مِنْ حَـمْلِه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِتَّةُ اَشْهُرٍ عَلٰى مَشْهُوْرِ الْاَقْوَالِ الْـمَرْوِيَّةِ، تُوُفّـىَ بِالْـمَدِيْنَةِ الْـمُنَوَّرَةِ الشَّرِيْفَةِ حَضْرَتْ ذَبِيْحُ اللهِ الْمُكَرَّمُ اَبُوْهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَانَ قَدِ اجْتَازَ بِاَخْوَالِه بَنِىْ عَدِىّ مّنَ الطَّائِفَةِ النَّجَّارِيَّةِ، وَمَكَثَ فِيْهِمْ شَهْرًا سَقِيْمًا يُّعَانُوْنَ سُقْمَه وَشَكْوَاهُ،
অর্থ: মশহুর তথা অধিক প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে, যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার পবিত্রতম রেহেম শরীফ উনার মধ্যে অবস্থানকাল মুবারক ছয় মাস পূর্ণ হলো, তখন উনার সম্মানিত পিতা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মদীনা মুনাওওয়ারা শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। যখন তিনি নাজ্জারিয়া গোত্রের বনী আদী বংশে উনার মামাগণ উনাদের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, তখন তিনি উনার মামাগণ উনাদের বাড়িতে রোগ নিরাময়ের জন্য একমাস থাকাবস্থায় সে রোগেই পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার পবিত্রতম রেহেম শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান মুবারক নিয়েছেন পহেলা রজবুল হারাম শরীফ। সে অনুযায়ী ছয় মাস পুরা হয় ১লা মহররম শরীফে। সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেছেন ২রা মহররমুল হারাম শরীফে। কাজেই সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক শানে আমাদেরকে হাক্বীক্বী হুসনে যন পোষণ করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উসীলায় আমাদেরকে সেই তাওফীক্ব দান করুন।

0 Comments:
Post a Comment