সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল উলূম ওয়াল হিকাম,কাশিফে ইসরারে জলী ওয়া খফী, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
মহাসম্মাানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইসিম বা নাম ও কুনিয়াত মুবারক:
সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল ইলম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ মুহম্মদ হাসান আসকারী আলাইহিস সালাম তিনি আহলু বাইত শরীফ আলাইহিস সালাম উনার এগারোতম ইমাম। উনার মুবারক ইসম বা নাম হাসান। কেউ কেউ হুসাইন আলাইহিস সালাম বলেও উল্লেখ করেছেন।
কুনিয়াত বা উপনাম মুবারক হচ্ছেন আবূ মুহম্মদ। উনার নাম মুবারক এবং কুনিয়াত সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক ও কুনিয়াত মুবারক উনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তিনি স্বীয় সম্মানিত পিতা ইমামুম মিন আইম্মাতিল মুসলিমীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আশির সাইয়্যিদুনা হযরত আলী নক্বী আলাইহিস সালাম উনার ‘আসকারী’ লক্বব মুবারক দ্বারা সর্বাধিক পরিচিতি মুবারক লাভ করেছিলেন।
উনার সম্মানিত মাতা উনার নাম মুবারক- সোসান আলাইহিস সালাম। আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নাম রেখেছিলেন- ‘হাদীছ’। তিনি উনাকে ‘হাদীছ’ বলেই সম্বোধন করতেন। অনেকেই মনে করতেন যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত সোসান আলাইহাস সালাম তিনি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার হাফিযাহ ছিলেন। তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ শাস্ত্রে বিশেষ বুৎপত্তি লাভ করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
আর আমলের ক্ষেত্রেও তিনি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উত্তমরূপে অনুসরণ-অনুকরণ করতেন। সে কারণে উনার সম্মানিত আহাল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশি হয়ে উনাকে ‘হাদীছ’ বলে সম্বোধন করতেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত লক্বব বা উপাধি মুবারক:
সম্মানিত লক্বব মুবারক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বিশেষ নিয়ামত মুবারক। যার মধ্যে যে গুণ বা বৈশিষ্ট্য প্রাধান্য পায় সাধারণত উনার তদ্রুপ লক্বব মুবারক জাহির বা প্রকাশিত হয়। আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গুণে গুনান্বিত ছিলেন। কাজেই উনার লক্বব মুবারকও জাহির বা প্রকাশ পেয়েছে সেভাবেই। সুবহানাল্লাহ! যদি সেগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া যায় তাহলে মহাগ্রন্থে পরিণত হবে। তবে আমরা স্বল্প পরিসরে তন্মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করছি বরকত লাভের উদ্দেশ্যে।
(১) যকী: বুদ্ধিমান, তীক্ষ্ম ধীশক্তি সম্পন্ন। তিনি ছিলেন সে সময়ে সকলের চেয়ে বেশি ধীশক্তির অধিকারী, অত্যন্ত বুদ্ধিমান। উনার বুদ্ধিমত্তার কাছে সকলেই হার মানতে বাধ্য হতেন। সুবহানাল্লাহ!
(২) খালিছ: অর্থ পবিত্র পরিচ্ছন্ন ও ইখলাছের অধিকারী। তিনি ইখলাছ তথা জাহিরী-বাতিনী উভয় প্রকার পরিশুদ্ধিতার এমন চরম মাক্বামে উপনীত হয়েছিলেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা অত্যন্ত খুশি হয়ে উনাকে খালিছ নামে পরিচিত করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
(৩) সিরাজ: সুদীপ্ত বাতি। তিনি সীরাত-ছুরাত, আকৃতি-প্রকৃতি সব দিক থেকে এমনই সৌন্দর্য মুবারক উনাদের অধিকারী ছিলেন যার ফলশ্রুতিতে সমসাময়িক ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা উনাকে সিরাজ বা সুদীপ্ত বাতী লক্ববে ভূষিত করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
(৪) আসকারী: নির্ভিক সৈন্যবাহিনী। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদত শরীফ থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিছাল শরীফ পর্যন্ত তিনি দ্বীনের প্রচার-প্রসার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যাপৃত ছিলেন। এজন্য তিনি সদা প্রস্তুত থাকতেন। উনার এমন শক্তিমত্তা দেখলে মনে হতো তিনিই যেন একাই একটি বিরাট আকারের সেনা বাহিনী। সুবহানাল্লাহ!
(৫) সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন: সকল ইজতিহাদকারীর তিনি ছিলেন সাইয়্যিদ। তদানিন্তন সময়ের সকল ইমাম-মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে কিরামই উনাকে শ্রেষ্ঠ মুজতাহিদ বলে স্বীকৃতি দিতেন। সুবহানাল্লাহ!
(৬) ইমামুল আউলিয়া: সকল আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের তিনি ছিলেন ইমাম। সবাই উনার ইমামত মুবারক গ্রহণ করেছেন। সে সময় কোন ওলী-আল্লাহই উনার সাথে ইখতিলাফ বা দ্বিমত পোষণ করেননি। সবাই উনার ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ লাভের প্রত্যাশি ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এছাড়াও আরো বহু সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন তিনি।
পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুলত্বানুন নাছীর সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন- সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল উলূম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম তিনি ২৩১ হিজরী সনের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১০ই সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়াম শরীফ (ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ তথা সোমবার) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে মু’তাবার বা গ্রহণযোগ্য মত। সুবহানা মুর্শিদ ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
সম্মানিত কারামত ও কামালত মুবারক:
সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল উলূম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম উনার থেকেও অনেক সম্মানিত কারামত ও অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-
(১)
মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন : এক সময় আমি এত নিঃস্ব হয়ে পড়ি যে, জীবিকা নির্বাহ দুর্বিষহ হয়ে পরে। আমার সম্মানিত পিতা আমাকে সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল উলূম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম উনার খিদমতে হাযির হতে বললেন। কেননা, তিনি দানশীলতায় জগৎখ্যাত ছিলেন। আমি পিতাকে জিজ্ঞাসা করলাম- আপনি উনাকে চিনেন? তিনি বললেন, না, আমি উনাকে চিনি না। আমি উনাকে কখনোও দেখিওনি।
অতঃপর আমরা উদ্দেশ্য হাছিলের জন্যে সফর শুরু করলাম। পথিমধ্যে আমার পিতা আমাকে বললেন, যদি তিনি আমাদেরকে পাঁচশত মুদ্রা দান করেন, তবে দু’শ মুদ্রা দিয়ে আমরা কাপড় তৈরি করবো, দু’শ মুদ্রা দিয়ে শস্য কিনবো এবং অবশিষ্ট একশ’ মুদ্রা অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করবো। আমি মনে মনে বললাম: সম্ভবত তিনি আমাকে তিনশ মুদ্রা দিবেন। যদি তাই হয়, তবে একশ’ মুদ্রায় কাপড়, একশ’ মুদ্রায় অন্যান্য বস্তু ক্রয় করবো এবং অবশিষ্ট একশ’ মুদ্রা দিয়ে একটি গাধা কিনে কোহিস্তান চলে যাবো।
এরপর আমরা যখন উনার দরবার শরীফ-এ উপস্থিত হলাম, তখন আমাদের তরফ থেকে কোন কথা বলার আগেই উনার খাদিম বাইরে এসে বলেন: আলী ইবনে ইবরাহীম ও তার পুত্র মুহম্মদ অন্দরে চলে আসুন। আমরা ভিতরে গেলাম এবং সালাম পেশ করলাম। তিনি বললেন, হে আলী! এ পর্যন্ত তোমার এখানে আসার পথে কি বাধা ছিল? আমার পিতা বললেন: এই হীন অবস্থায় আপনার কাছে আসতে আমি লজ্জাবোধ করছিলাম। আমরা যখন বাইরে এলাম, তখন উনার খাদিম আমাদের পিছনে পিছনে এলেন। তিনি একটি থলে আমার পিতার হাতে দিল, যাতে পাঁচশ মুদ্রা ছিল। দু’শ কাপড়ের জন্যে, দু’শ শস্য কিনার জন্যে এবং একশ’ মুদ্রা অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের জন্যে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর তিনি আমাকে একটি থলে দিয়ে বলেনচ: এতে তিনশ’ দিরহাম আছে। একশ’ কাপড়ের জন্যে, একশ’ অন্যান্য প্রয়োজনের জন্যে এবং একশ’ গাধা কিনার জন্যে। কিন্তু কোহিস্তানের দিকে যেতে পারবে না। অন্য কোথাও চলে যাবে। উনার সেই খাদিম সেই স্থানের দিকে ইশারাও করলো। আমি সেখানে গিয়ে বিয়েও করে নিলাম। বিয়ের দিনেই দু’হাজার দিরহাম আমার হাতে আসে।
(২)
এক ব্যক্তি বলেন: আমার পিতা সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল উলূম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম উনার গৃহপালিত পশু-পাখির চিকিৎসা করতেন। খলীফা মুস্তায়ীনের কাছে একটি খচ্চর ছিল, যাকে কোন ব্যক্তি বশে আনতে পারতো না। অর্থাৎ জ্বিন ও লাগাম দিয়ে তার উপর সওয়ার হতে পারতো না। জনৈক মুসাহিব খলীফাকে বলল: আপনি আপনার চরদেরকে বলুন, তারা এ খচ্চরটি সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল উলূম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম উনাকে দিয়ে একে বস করিয়ে সওয়ারী বানিয়ে নিবেন অথবা এই খচ্চর তার প্রাণনাশের কারণ হবে।
সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল ইলম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম তিনি খলীফার খচ্চরটিকে সুস্থ করতে সেখানে তাশরীফ মুবারক নিলেন। তখন খচ্চর সরাইখানার বারান্দায় দাঁড়ানো ছিল। তিনি খচ্চরের কাছে গিয়ে পিঠে হাত রাখলেন। তখন খচ্চরের শরীর থেকে ঘাম নির্গত হতে লাগলো। অতঃপর তিনি খানকা শরীফ উনার কাছে গেলেন এবং উনার প্রতি অত্যন্ত সম্মান প্রদর্শন করলেন। খলীফা উনাকে বসিয়ে উনার নিকটবর্তী হয়ে নিজেও বসলো। অতঃপর বললেন, হে আওলাদে রসূল! দয়া করে এ খচ্চরকে লাগাম পরিয়ে দিন। সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল উলূম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম আমার পিতাকে লাগাম দিতে বললেন। মুস্তায়ীন বললেন: হুযূর! আপনি নিজেই লাগাম দিন। সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল ইলম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম তিনি নিজেই খচ্চরকে অনায়াসে লাগাম পরিয়ে স্বস্থানে এসে বসলেন। খলীফা পুনরায় বললেন: হুযূর! দয়া করে জিনও আপনিই কষে দিন। সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল উলূম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম পুনরায় উঠলেন এবং খচ্চরের পিঠে জিন কষে আপন জায়গায় ফিরে গেলেন।
মুস্তায়ীন আরজ করলেন: খুব চমৎকার হবে যদি আপনি এর পিঠে সওয়ারও হয়ে যান। সে মতে সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল উলূম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম খচ্চরে সওয়ার হলেন এবং সরাইখানার আঙিনাতেই দৌঁড়াতে লাগলেন। এ সময়ের মধ্যে খচ্চরের স্বভাবে কোন অবাধ্যতা দেখা গেল না। তিনি নিচে অবতরণ করলে খলীফা বললেন: হুযূর! এ খচ্চরটি কেমন? তিনি বললেন: এর চেয়ে ভাল খচ্চর আমি দেখিনি। অতঃপর খলীফা খচ্চরটি উনার খিদমতে পেশ করলেন। তিনি আমার পিতাকে বললেন: এটি নিয়ে যাও। তিনি খুবই সহজেই খচ্চর নিয়ে এলেন। খচ্চর কোন অবাধ্যতা প্রকাশ করলো না। সুবহানাল্লাহ!
(৩)
এক ব্যক্তি বর্ণনা করেন: আমি আমার দারিদ্র্যের কথা সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল উলূম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম উনাকে বললাম। তখন উনার হাতে একটি বেত ছিল। তিনি সেটি দিয়ে মাটি খনন করতেই সেখান থেকে পাঁচশ দিরহামের স্বর্ণ নির্গত হল। তিনি তার সবটুকুই আমাকে দিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
(৪)
অন্য এক ব্যক্তি বর্ণনা করেন: আমি জেলখানায় ছিলাম। একদিন আমি জেলখানার কষ্ট ও বেদনার কথা সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল উলূম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম উনাকে লিখে পাঠালাম। আমি আমার দারিদ্র্য তা সম্পর্কেও কিছু লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লজ্জা অন্তরায় হওয়ায় লিখতে পারলাম না। তিনি পত্রের জাওয়াবে লিখলেন, “আজ পবিত্র যোহরের নামায আপন ঘরেই পড়বে। সে মতে মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ মেহেরবানীতে আমি মুক্তি পেলাম এবং পবিত্র যোহরের নামায আপন বাড়িতে গিয়েই পড়লাম। হঠাৎ আমি হুযূরের একজন দূতকে আসতে দেখলাম। তিনি আমার জন্যে একশ দীনার নিয়ে আসলেন। এর সাথে একটি পত্রও ছিল। তাতে লেখা ছিল, যখনই তোমার অর্থকড়ির প্রয়োজন হবে, নিঃসঙ্কোচে আমার কাছ থেকে চেয়ে নিবে। তুমি যা চাবে, তাই পাবে। সুবহানাল্লাহ!
(৫)
অন্য এক ব্যক্তি বর্ণনা করেন : আমি একটি মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করে সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল উলূম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম উনার কাছে পত্র লিখলাম। আমি চতুর্থ দিনের জ্বর সম্পর্কেও উনাকে জিজ্ঞাসা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যথাসময়ে মনে না থাকায় সে কথা লেখা হল না। তিনি জাওয়াবে লিখলেন: তোমার মাসয়ালার উত্তর দেয়া হল। তুমি চতুর্থদিনের পালাজ্বর সম্পর্কেও প্রশ্ন করতে চেয়েছিলে। কিন্তু তুমি ভুলে গেছো। দেখ, পবিত্র আয়াত শরীফ খানি কাগজে লিখে জ্বরগ্রস্ত ব্যক্তির গলায় ঝুলিয়ে দিবে। আমি তাই করলাম এবং জ্বরাক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!
(৬)
এক ব্যক্তি বর্ণনা করেন: আমি সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল উলূম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম উনার কাছে বসা ছিলাম। জনৈক সুশ্রী যুবক ভিতরে এসে গেলে আমি ভাবতে লাগলাম এ যুবক কে? সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল ইলম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম তিনি বললেন: সে আমার আহলিয়ার চাচাতো ভাই। তার কাছে এক খ- পাথর আছে, যার উপর আমার পিতৃপুরুষরা স্ব স্ব আংটি স্থাপন করেছেন। ফলে, তাদের মোহর খোদিত হয়ে গেছে। সে আমার কাছেও এই উদ্দেশ্যে এসেছে যাতে আমি আমার আংটি এই পাথরের উপর রাখি। অতঃপর তিনি যুবকের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন : তোমার প্রস্তরখ-ও নিয়ে আসো। নিয়ে আসলে তিনি নিজের আংটিটি সেখানে রাখলেন। ফলে, পাথরের উপর ‘আল হাসান ইবনে আলী’ শব্দগুলো খোদিত হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!
(৭)
জনৈক ব্যক্তি বর্ণনা করেন: আমি ‘মিশকাত’ শব্দের অর্থ জিজ্ঞাসা করে সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, বাহরুল উলূম ওয়াল হিকাম, ইমামুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল হাদী আশার আলাইহিস সালাম উনার কাছে চিঠি লিখলাম। আমার আহলিয়া সন্তান সম্ভবা ছিল। তাই আমি চাইলাম যে, তার জন্যেও দোয়া করাই এবং সে শিশুর নামও যেন তিনিই রাখেন। চিঠির জাওয়াবে তিনি লিখলেন: মিশকাত উনার অর্থ মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ক্বলব। কিন্তু শিশু ও তার জননী সম্পর্কে কিছুই লিখলেন না। তবে চিঠির শেষে লিখলেন মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে মহাপুরষ্কারে ভুষিত করুন এবং বিকল্প দান করুন। এরপর আমার আহলিয়ার রেহেম থেকে মৃত শিশুকন্যা ভুমিষ্ঠ হলো। কিন্তু পরবর্তীতে তার পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করলো। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামলু হাদী আশার আলাইহিস সালাম তিনি ২৬০ হিজরী সনের ৮ই পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ বা জুমুয়াবার পবিত্র বিছালী বা শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তিনি ২৯ বছর দুনিয়াবী হায়াত মুবারক ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

0 Comments:
Post a Comment