কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফাযায়েল ও আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ৪ নং )

ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফাযায়েল ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া  দেয়ার কারণ


সুন্নতের মূর্ত প্রতিক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শেরেকী ও বিদয়াতের মুলৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহলে সুন্নত ও ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক মূখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছুদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লেখাই পত্রস্থ করা হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করেন বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে”- ইমামাহ বা পাগড়ী মুবারক ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার উদ্দেশ্য বা মাকছুদও ঠিক তাই। কারণ অধিকাংশ মুসলমানই পাগড়ীর সঠিক আহকাম ও ফযীলত সম্পর্কে জ্ঞান নয়। যার ফলে তারা পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে যেরূপ ব্যর্থ, তদ্রুপ পাগড়ীর ন্যায় একখানা গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ দায়েমী সুন্নত পালনেও ব্যর্থ। যা অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেজামন্দী হাছিলের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়।
স্মরণযোগ্য যে, অনেকেই পাগড়ীর সঠিক আহকাম ও ফযীলত না জানার কারণে পাগড়ীকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকে এবং পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিকে ঠাট্টা বা বিদ্রুপ করে থাকে। অথচ এটা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কেননা আক্বাইদের ইমামগণ উনাদের মতে শুধু পাগড়ী নয় বরং যে কোন সুন্নতের অবজ্ঞাই কুফরীর কারণ। এ প্রসঙ্গে আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “কদু খাওয়া সুন্নত। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কদু পছন্দ করতেন এবং খেয়েছেন। তাই কেউ যদি বলে যে, আমি কদু খাওয়া পছন্দ করিনা তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেটা পছন্দ করেছেন সেটা সে অপছন্দ করলো।
আর তাই আক্বাইদের কিতাবে লিখা হয় যে,
اهانة السنة كفر.
অর্থ: সুন্নতের অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, পাগড়ীর ন্যায় মহান সুন্নতের প্রতি অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা নিঃসন্দেহে ঈমান হানীর কারণ। অথচ বান্দার ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল কবুলযোগ্য হওয়ার জন্যে প্রধানতম শর্ত হচ্ছে- আক্বীদা শুদ্ধ থাকা অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা। কারণ বিশুদ্ধ আক্বীদা আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত। তাই যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
والعصر ان الانسان لفى خسر الا الذين امنوا وعملوا الصالحات.
অর্থ: আছরের সময়ের কছম। সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে, একমাত্র তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছেন।” (সূরা আছর)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক মানব জাতির ধ্বংস হতে নাযাত পাওয়ার প্রথম উপায় হিসাবে ঈমান (আক্বীদা)কে আখ্যায়িত করেছেন। অতঃপর আমলের প্রশ্ন। কারণ ঈমানহীন ব্যক্তির নেক আমলের কোন মূল্যই যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট নেই। কাজেই বান্দার জন্য প্রধানতম ফরয এই যে, সে সর্ব প্রথম তার ঈমান বা আক্বীদাকে বিশুদ্ধ করবে অর্থাৎ ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা পোষণ করবে।
কেননা আক্বীদাগত কারণেই ইসলামে ৭২টি বাতিল ফেরকার আবির্ভাব হয়েছে। যদিও তাদের কথাবার্তা, চাল-চলন, ছূরত-সীরত ইত্যাদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রেই মুসলমানের ন্যায় বা ইসলামসম্মত। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়ে ইসলাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণ বিপরীত আক্বীদা পোষণ করে থাকে, যা সুস্পষ্ট কুফরী। যেমন-
ক্বদরিয়া সম্প্রদায়- তারা তক্বদীরকে অবিশ্বাস করে, অথচ তক্বদীরের উপর ঈমান আনা ফরয।
খারেজী সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা হলো, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা কাফির। নাউযুবিল্লাহ! অথচ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের প্রতি সুধারণা পোষণ করা ঈমানের অঙ্গ বা ফরয।
রাফেজী বা শিয়া সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা মতে শিয়াদের ইমামদের মর্যাদা নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদের চেয়েও বেশি, বর্তমান কুরআন শরীফ পরিবর্তীত, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ব্যতীত খোলাফায়ে রাশেদীনের সকলেই মুরতাদ। নাউযুবিল্লাহ!
মুশাব্বিহা বা মুনাব্বিরা সম্প্রদায়:- তাদের আক্বীদা হলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি নূর বা আলোমহান আল্লাহ পাক উনার দেহ বা আকার-আকৃতি রয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি উল্লিখিত সকল বিষয় থেকেই সম্পূর্ণ বেনিয়াজ ও পবিত্র। অনুরূপ বর্তমান যামানার ভয়ঙ্কর ফিৎনা- কাদিয়ানী সম্প্রদায়, তাদের আক্বীদা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শেষ নবী নন, উনার পর আরো নবী পৃথিবীতে আসবে, তাই তারা গোলাম কাদিয়ানীকে নবী বলে বিশ্বাস করে, যা অকাট্য কুফরী।
অথচ তারা প্রত্যেকেই বাহ্যিক দৃষ্টিতে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাতের কথা বলে, টুপি, কোর্তা, পাগড়ী পরিধান করে। এতকিছুর পরও তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মুতাবেক কাফির বা অমুসলিম। কারণ তাদের উপরোক্ত আক্বীদাসমূহ সম্পূর্ণই কুফরী।
আর এদের প্রসঙ্গেই হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে যে,
ستفترق امتى على ثلاث وسبعين فرقة كلهم فى النار الا ملة واحدة قيل من هى يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما انا عليه واصحابى.
অর্থ: অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সকল দল জাহান্নামে যাবে। জিজ্ঞাসা করা হলো- যে দলটি (নাযাত পাবে) সেটা কোন দল? ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে (মত-পথের) উপর আমি আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়া ল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা রয়েছি, তার উপর যারা থাকবে, তারাই সেই নাযাতপ্রাপ্ত দল।” (আহমদ, আবু দাউদ, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশাতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তারীকুছ ছবীহ, মুযাহিরো হক্ব)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের যেকোন আমলই করা হোক না কেন এবং যে কেউই করুক না কেন, তা যদি আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীফত সম্মতভাবে কর হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য। আর যদি আক্বীদার মধ্যে কোন ত্রুটি থাকে, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন- খারেজী, রাফেজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি সম্প্রদায় পরিত্যাজ্য ও বাতিল।
অতএব, প্রতিটি মুসলমানকেই পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে সঠিক বা বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করতে হবে। কোনভাবেই পাগড়ীকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না।
দ্বিতীয়ত: অনেকেই অজ্ঞতা হেতু বলে থাকে যে, পাগড়ী পরিধান করা দায়েমী সুন্নত নয় বরং শুধুমাত্র নামাযের মধ্যে পরিধান করলেই চলে। আবার কেউ কেউ সুন্নত স্বীকার করলেও নামাযের মধ্যে পাগড়ী পরিধান করার সুন্নত ও ফযীলতকে অস্বীকার করে থাকে।
অথচ তাদের উল্লিখিত বক্তব্য শুধু শরীয়ত বিরোধীই নয় বরং মনগড়া, অজ্ঞতামূলক ও বিভ্রান্তিকরও বটে। কারণ পাগড়ী পরিধান করা নামাযের বাইরে ও ভিতরে উভয় অবস্থায়ই সুন্নত ও ফযীলতের কারণ। যেমন, নামাযের বাইরে পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে হাদীছ শরীফ-এর সহীহ কিতাব তিরমিযী শরীফ-এরহাশিয়ায় উল্লেখ আছে, ان لبس العمامة سنة
অর্থ: নিঃসন্দেহে পাগড়ী পরিধান করা (দায়েমী) সুন্নত।” (হাশিয়ায়ে শামায়িলে তিরমিযী/৮)
আর নামাযের মধ্যে পাগড়ী পরিধান করার ফযীলত সম্পর্কে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে যে,
ان ركعتين مع العمامة افضل من سبعين ركعة بدونها.
অর্থ: নিশ্চয়ই পাগড়ী পরিধান করে দুরাকায়াত নামায আদায় করা, পাগড়ী ছাড়া ৭০ রাকায়াত নামায আদায় করার চেয়ে অধিক ফযীলতপূর্ণ।” (হাশিয়ায়ে শামায়িলে তিরমিযী/৮)
পাগড়ীর উল্লিখিত ফযীলত থেকে যেন উম্মত মাহরুম না হয় সে জন্য সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উম্মতদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে,
فاعتموا فان العمامة سيماء الاسلام وهى الحاجز بين المسلمين والمشركين.
অর্থ: তোমরা পাগড়ী পরিধান কর। নিশ্চয়ই পাগড়ী ইসলামের নির্দশন এবং তা মুসলমান ও মুশরিকদের মাঝে পার্থক্যকারী।” (যারকানী ৬ষ্ঠ জি:, ২৭২ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী, ২১ জি:, ৩০৮ পৃষ্ঠা, খাছায়িলুন নবী ৭৮ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল আহওয়াজী ৫ম জি, ৪১২ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ করেন যে,
عليكم بالعمائم فانها سيماء الملئكة.
অর্থ: তোমাদের জন্য পাগড়ী অবধারিত, কেননা তা ফেরেশতাগণ উনাদের নিদর্শন স্বরূপ।” (মিশকাত শরীফ/৩৩৭, ফাইদুল ক্বদীর ৪র্থ জি, ৪৫৪ পৃষ্ঠা, শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী ৫ম জি:, ১৭৬ পৃষ্ঠা)
অতএব, সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পাগড়ী পরিধান করা যেরূপ দায়েমী সুন্নত। তদ্রুপ অশেষ ফযীলত লাভেরও কারণ। নামাযের সময় যেরূপ পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত, নামাযের বাইরেও তদ্রুপ পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত। অর্থাৎ পাগড়ী পরিধান করা হচ্ছে- দায়েমী বা সার্বক্ষণিক সুন্নত।
এছাড়াও পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগণিত পাঠকের পক্ষ হতে প্রেরিত অসংখ্য চিঠিও পাগড়ী ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়েফতওয়া দেয়ার একটি কারণ।
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.
অর্থ: যদি তোমরা না জান, তবে আহলে যিকির বা হক্কানী আলেমগণ উনাদের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা নহল/৪৩ ও আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যারা জানেন, উনাদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
অতএব, যাঁরা জানেন, উনাদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে। যেমন আখেরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থ: যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়, জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের বেড়ি পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ, আহমদ, মিশকাত, বযলুল মাজহুদ, উরফুশশাজী, তুহফাতুল আহওয়াজী, মায়ারিফুস সুনান, মিরকাত, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ ইত্যাদি)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ্বা আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।
কাজেই উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এ যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্য অর্থাৎ যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার জন্য লক্ষ্য এবং বিদয়াতীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ যেন পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে কুফরী আক্বীদা পোষণ না করে অর্থাৎ পাগড়ীর ন্যায় মহান সুন্নতকে যেন অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করে এবং তাদের প্ররোচনায় যেন এ মহান সুন্নত ত্যাগ করত: অশেষ ফযীলত ও রেযায়ে মাওলা অর্জনে ব্যর্থ না হয় বরং পাগড়ী সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়ে সঠিক ও সহীহ আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং পাগড়ীর ন্যায় অশেষ ফযীলতপূর্ণ সুন্নত পালন করে যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ রেযামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতেপাগড়ী মুবারক ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া প্রকাশ করা হলো।
এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থ: যে ব্যক্তি যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার (সন্তুষ্টি লাভের) জন্য মুহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশশাজী, তুহফাতুল আহওয়াজী, মায়ারিফুস সুনান, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ ইত্যাদি)
বস্তুত: মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এর মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়পাগড়ী ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কেসঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ উনাদের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন প্রত্যেকেই পাগড়ী সম্পর্কে অবগত হতে পারে এং সুন্নত মুবারক আমল করে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক এতমিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলত: মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মুমিন অপর মুমিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে যে,
المؤمن مرأة المؤمن.
অর্থ: এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য আয়না স্বরূপ। (আবূ দাউদ শরীফ, ফযলুল মাজহুদ)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্য সমবেত আনছার এবং মুহাজির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহকামকে সহজতর করার উদ্দেশ্য শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইবনে সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।এ কথা শুনে হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মাআরেফ)
অতএব, পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে রয়েছে, তাদের সে ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এর মেছদাক হওয়াই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে পাগড়ী সম্পর্কিত ফতওয়া প্রকাশ করার মূল কারণ।
বস্তুত: পাগড়ী পরিধান করা যদিও সুন্নততবে সুন্নতের অনুসরণই যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিলের একমাত্র মাধ্যম। কেননা যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাকে ইরশাদ করেছেন,
قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور رحيم.
অর্থ: হে হাবীব! (সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলুন, যদি তোমরা যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার ভালবাসা চাও তবে আমাকে (আমার সুন্নতকে) অনুসরণ কর তবেই মহান আল্লাহ পাক তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের সকল গুণাহ-খতা ক্ষমা করে দিবেন। যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান/৩১)
আর উক্ত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হাদীছ  কুদসীতেইরশাদ হয়েছে,
لايزال العبد يتقرب الى بالنوافل حتى احبه.
অর্থ: যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমার বান্দারা নফল অর্থাৎ সুন্নত বা মুস্তাহাব আমলের দ্বারা আমার এতটুকু নৈকট্য বা সন্তুষ্টি হাছিল করে যে, স্বয়ং আমি মহান আল্লাহ পাক নিজেই তাকে মুহব্বত করি বা ভালবাসি।
অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, পাগড়ীর আমলের দ্বারা বান্দা অবশ্যই যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ রেজামন্দী লাভ করতে পারবে। কারণ পাগড়ী আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতসমূহের মধ্যে একখানা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও অশেষ ফযীলতপূর্ণ সুন্নত।

(পূব প্রকাশিতের পর)
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধান করা দায়েমী সুন্নত হওয়ার বিস্তারিত, নির্ভরযোগ্য যে অকাট্য দলীল-আদিল্লাসমূহ

গত কয়েক সংখ্যার আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, খোলাফায়ে রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাসহ সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং চার মাযহাব ও চার তরীক্বার ইমামসহ সকল আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতসমূহ বা আদেশ-নিষেধসমূহ সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্মা বা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন করতেন। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, ইমামহ বা পাগড়ীর ক্ষেত্রেও উনারা আখেরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, শাফিউল মুজনেবীন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই অনুসরণ-অনুকরণ করতেন। অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা দায়েমীভাবে পাগড়ী পরিধান করতেন।
অথচ আজকাল অনেকেই পীর, ছূফী, দরবেশ, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাসসীর, আল্লামা, আশেকে রসূল কত কি দাবি করে। কিন্তু পাগড়ীদায়েমীভাবে পরিধান করাতো দূরের কথাই নামাযের সময়ও পরিধান করেনা।
অথচ পাগড়ী পরিধান করা হচ্ছে, আখেরী নবী ও রসূল, দোজাহানের বাদশাহ, ফখরে মওজুদাত, সরকারের কায়েনাত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ তথা দায়েমী সুন্নত। শুধু তাই নয় পূর্ববর্তী সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ সকলেই পাগড়ী পরিধান করেছেন এবং যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার ফেরেশতাগণও দায়েমীভাবে পাগড়ী পরিধান করে থাকেন।
অতএব, পাগড়ী পরিধান করা ফেরেশতাগণ উনাদের সুন্নত, সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের সুন্নত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সুন্নত, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের সুন্নত ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের সুন্নত। উনারা প্রত্যেকেই দায়েমী বা সার্বক্ষণিকভাবে অর্থাৎ অধিকাংশ সময় পাগড়ী পরিধান করেন বা করতেন।
নি¤œ উল্লিখিত বিষয়ে পর্যায়ক্রমে ও বিস্তারিতভাবে নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীল-আদিল্লাসমূহ উল্লেখ করা হলো-
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধান করা
ফেরেশতাগণ উনাদের নিদর্শন
আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, শাফিউল উমামরাউফুর রাহীম, রহমতুল্লিল আলামীন, সাইয়্যিদুল বাশার, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফ-এ পাগড়ীকে ফেরেশতাগণ উনাদেরনিদর্শন বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ ফেরেশতাগণ উনাদের সর্দার হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম তিনিসহ সকল ফেরেশতাগণই পাগড়ী পরিধান করেন। ফেরেশতাগণ যে পাগড়ী পরিধান করেন তা পবিত্র কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। যেমন, যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ-এ সূরায়ে আলে ইমরান”-এর ১২৫নং আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
يمددكم ربكم بخمسة الاف من الملئكة مسومين.
অর্থ: তোমাদের পালনকর্তা চিহ্নিত ঘোড়ার উপর পাঁচ হাজার ফেরেশতা তোমাদের সাহায্যে পাঠাবেন।” (সূরা আলে ইমরান/১২৫)
উক্ত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় ফেরেশতাগণ উনাদের পাগড়ী সম্পর্কে তাফসীরগ্রন্থসমূহেবিশদ আলোচনা এসেছে যা নি¤œ উপস্থাপন করা হলো।
(১)
روى عن على بن ابى طالب وابن عباس وغيرهما ان الملائكة اعتمت بعمائم بيض قدارسلوها بين اكتافهم ذكره البيهقى عن ابن عباس وحكاه المهدوى عن الزجاج الا جبريل فانه كان بعمامة صفراء على مثل الزبير بن العوام. (تفسير القرطبى الجلد الثانى ص ১৯৬)
অর্থ: হযরত আলী ইবনে আবু তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও অন্যান্যদের থেকে বর্ণিত আছে- নিঃসন্দেহে ফেরেশতাগণ সাদা পাগড়ীপরিধান করেছিলেন যার শামলা উনাদের দুকাধের মধ্যবর্তীস্থালে ছিল। বাইহাক্বী ইহা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। আর হযরত মাহদুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত যুজাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের থেকে বর্ণনা করেন, হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উনার পাগড়ী মুবারক হযরত যুবাইর ইবনে আউওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ন্যায় ঘিয়া রংয়ের ছিল।” (তাফসীরে কুরতুবী ২য় জিঃ ১৯৬ পৃষ্ঠা)
(২)
وقال عباد بن عبد الله بن الزبير وهشام بن عروة والكلبى نزلت الملائكة فى سيما الزبير عليهم عمائم صفر مرخاة على اكتافهم (تفسير القرطبى الجلد الثانى ص ১৯৬)
অর্থ: হযরত ইবাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর, হিশাম ইবনে উরওয়াহ ও কালবী রহমাতুল্লাহি আলাইহিম তিনি বলেন- (বদর যুদ্ধে) ফেরেশতাগণ আগমণ করেন হযরত জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ন্যায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী পরিহিত অবস্থায়। এমতাবস্থায় উনাদের পাগড়ীর শামলা ছিল দুকাধের মধ্যবর্তী স্থানে। (তাফসীরে কুরতুবী ২য় জিঃ ১৯৬ পৃষ্ঠা)
(৩)
قال عبد الله رضى الله عنه كانت ملائكة صفراء اعتم بها الزبير رضى الله عنه. (تفسير القرطبى الجلد الثانى ص ১৯৬)
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, উনাদের চিহ্ন বা পাগড়ী ছিল ঘিয়া রংয়ের, যে রংয়ের পাগড়ী হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পড়েছিলেন।” (তাফসীরে কুরতুবী ২য় জি: ১৯৬ পৃষ্ঠা)
(৪)
نزل جبريل معتجرا بعمامة صفراء على مثل الزبير رضى الله عنه. (تفسير القرطبى الجلد الثانى ص ১৯৬)
অর্থ: (বদর যুদ্ধের দিন) হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ন্যায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী মাথায় বেঁধে আগমণ করেছিলেন।” (তাফসীরে কুরতবী ২য় জিঃ ১৯৭ পৃষ্ঠা)
(৫)
قال عروة بن الزبير رضى الله عنه كانت الملائكة على خيل بلق وعليهم عمائم صفر. (تفسير الخازن الجلد الاول ص ২৮০)
অর্থ: হযরত উরওয়াহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, (বদর যুদ্ধে) ফেরেশতাগণ সাদা ডোরা বিশিষ্ট ঘোড়ায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় ছিলেন।” (তাফসীরে খাযেন ১ম জিঃ ২৮০ পৃষ্ঠা)
(৬)
قال على وابن عباس رضى الله عنهم كان عليهم عمائم بيض قدارسلوها بين اكتافهم. (تفسير الخازن الجلد الاول ص ২৮০)
অর্থ: হযরত আলী ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলেন, উনাদের (বদর যুদ্ধে ফেরেশতাগণ উনাদের) মাথায় সাদা পাগড়ীশোভা পাচ্ছিল, আর পাগড়ী মুবারক-এর শামলা ছিল উনাদের দুকাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে।” (তাফসীরে খাযেন ১ম জিঃ ২৮০ পৃষ্ঠা)
(৭)
قال هشام بن عروة والكلبى كانت عليهم عمائم صفر مرخاة على اكتافهم. (تفسير الخازن الجلد الاول ص ২৮০)
অর্থ: হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ ও কালবী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা তিনি বলেন, উনাদের পাগড়ীগুলো ছিল ঘিয়া বর্ণের আর পাগড়ীর শামলা ছিল দুকাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলন্ত।” (তাফসীরে খাযেন ১ম জিঃ ২৮০ পৃষ্ঠা)
(৮)
قيل كانت عمامة الزبير يوم بدر صفرا فنزلت الملائكة كذلك. (تفسير الخازن الجلد الاول ص ২৮০)
অর্থ: কেউ কেউ বলেন, বদর যুদ্ধের দিন হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঘিয়া বর্ণের পাগড়ী ছিল। অতঃপর ফেরেশতাগণও অনুরূপভাবে অবতরণ করেন।” (তাফসীরে খাযেন ১ম জিঃ ২৮০ পৃষ্ঠা)
(৯)
قال الكلبى معلمين بعمائم صفر مرخاة على اكتافهم وكانت عمامة الزبير يوم بدر صفراء فنزلت الملائكة كذلك. (نفسير البغوى الجلد الاول ص ২৮০)
অর্থ: কালবী বলেন, চিহ্নিত ফেরেশতাগণ (বদর যুদ্ধে) ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী দুকাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে শামলা ঝুলিয়ে দেয়া অবস্থায় ছিলেন। আর হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পাগড়ী ও বদর যুদ্ধের দিন ঘিয়া রংয়ের ছিল। ফেরেশতাগণও অনুরূপভাবে এসেছিলেন।” (তাফসীরে বাগবী ১ম জিঃ ২৮০ পৃষ্ঠা)
(১০)
عن عبد الله بن الزبير رضى الله عنه ان الزبير كانت عليه عمامة صفراء معتجرا بها فنزلت الملائكة وعليه عمائم صفر. (تفسير روح المعانى الجلد الثالث ص ৪৬)
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নিশ্চয়ই হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাথায় ঘিয়া বর্ণের পাগড়ী বাঁধা ছিল। এমনকি ফেরেশতাগণ এসেছিলেন উনাদের মাথায়ও ঘিয়া বর্ণের পাগড়ী ছিল।” (তাফসীরে রুহুল মায়ানী ৩য় জিঃ ৪৬ পৃষ্ঠা)
(১১)
اخزج ابن اسحاق والطبرانى عن ابن عباس رضى الله عنه قال كانت سيماء الملائكة يوم بدر عمائم بيض قد ارسلوها فى ظهورهم ويوم حنين عمائم حمر. (تفسير روح المعانى الجلد الثالث ص ৪৬)
অর্থ: ইবনে ইসহাক ও তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বদ যুদ্ধের দিন ফেরেশতাগণ উনাদের বিশেষ চিহ্ন ছিল সাদা পাগড়ী যার শামলা উনাদের পিঠে ঝুলন্ত ছিল। আর হুনাইন যুদ্ধের দিন গন্ধম রংয়ের পাগড়ী চিহ্ন হিসেবে ছিল।” (তাফসীরে রুহুল মায়ানী ৩য় জিঃ ৪৬ পৃষ্ঠা)
(১২)
وفى رواية اخرى ...................... انها كانت يوم بدر بعمائم سود ويوم احد بعمائم حمر. (تفسير روح المعانى الجلد الثالث ص ৪৬)
অর্থ: অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, বদর যুদ্ধের দিন উনাদের (ফেরেশতাগণ উনাদের) কালো পাগড়ীএবং উহুদ যুদ্ধের দিন গন্ধম রংয়ের পাগড়ী ছিল। (তাফসীরে রুহুল মায়ানী ৩য় জিঃ ৪৬ পৃষ্ঠা)
(১৩)
روى ان الملائكة كانوا بعمائم بيض الا جبريل عليه السلام فانه كان بعمامة صفراء على مثل الزبير بن العوام نزلوا على الخيل البلق. (تفسير روح البيان الجلد الثانى ص ৯০)
অর্থ: বর্ণিত রয়েছে যে, (বদর যুদ্ধের দিন) হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত অন্যান্য ফেরেশতাগণ উনারা সাদা পাগড়ীপরিহিত ছিলেন। কেননা হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম হযরত যুবাইর ইবনে আউওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের পাগড়ী মুবারক-এর অনুরূপ ঘিয়া পাগড়ী পরিহিত ছিলেন যাঁরা সাদা ডোরা বিমিষ্ট ঘোড়ায় আরোহণ করে এসেছিলেন।” (তাফসীরে রুহুল বয়ান ২য় জিঃ, ৯০ পৃষ্ঠা)
(১৪)
قال عروة بن الزبير كانت الملائكة على خيل بلق عليهم عمائم صفر. (تفسير المظهرى جلد دوم ص ১৩৩)
অর্থ: হযরত উরওয়াহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, (বদর যুদ্ধে) ফেরেশতাগণ সাদা ডোরা বিশিষ্ট ঘোড়ায় আরোহন করে ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় ছিলেন।” (তাফসীরে মাযহারী ২য় জিঃ, ১৩৩ পৃষ্ঠা)
(১৫)
قال النبى صلى الله عليه وسلم تسوموا فان الملائكة قد تسومت وكان على الزبير ذلك اليوم عمامة صفراء ..... نزلوا عليهم عمائم صفر وقد طرحوها بين اكتافهم. (تفسير احكام القران لابن العربى الجلد الاول ص ২৯৭)
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের বদর যুদ্ধের দিন) বলেছেন; তোমরা চিহ্ন ধারণ কর কেননা নিশ্চয়ই ফেরেশতাগণ চিহ্ন ধারণ করেছেন। সেই দিন হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাথায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী ছিল। ......... এবং ফেরেশতাগণ ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী পরে এসেছিলেন। উনাদের পাগড়ীর প্রান্ত (শামলা) দুকাঁধের মাঝখানে ঝুলন্ত ছিল।” (তাফসীরে আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী ১ম জিঃ, ২৯৭ পৃষ্ঠা)
(১৬)
قال عروة بن الزبير كانت الملائكة على خيل بلق عليهم عمائم بيض قدارسلوها بين اكتافهم وقال هشام بن عروة عمائم صفر. (تفسير ابى السعود الجلد الثانى ص ৮১)
অর্থ: হযরত উরওয়াহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, (বদর যুদ্ধের দিন) ফেরেশতাগণ উনারা সাদা ডোরা বিশিষ্ট ঘোড়ায় সাদা পাগড়ীপরিহিত ছিলেন। পাগড়ীর শামলা উনাদের দুকাধের মাঝে ঝুলছিল। হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনাদের পাগড়ী ছিল ঘিয়া রংয়ের।” (তাফসীরে আবু সাউদ ২য় জিঃ, ৮১ পৃষ্ঠা)
(১৭)
روى انهم كانوا بعمائم بيض الا جبريل عليه السلام فانه كان بعمامة صفراء على مثل الزبير بن العوام رضى الله عنه. (تفسير ابى السعود الجلد الثانى ص ৮০)
অর্থ: বর্ণিত আছে, (বদর যুদ্ধে) হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত অন্যান্য ফেরেশতাগণ সাদা পাগড়ীপরিহিত ছিলেন। আর হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম হযরত যুবাইল ইবনে আউওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের ন্যায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী পরিহিত ছিলেন।” (তাফসীরে আবু সাউদ ২য় জিঃ, ৮০ পৃষ্ঠা)
(১৮)
قال هشام بن عروة كانت الملائكة على خيل بلق وعليهم عمائم صفر. (زاد المسير فى علم التفسير الجلد الثانى ص ২৫)
অর্থ: হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, (বদর যুদ্ধের দিন) ফেরেশতাগণ সাদা ডোরা বিশিষ্ট ঘোড়ায় আরোহণ করে ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় ছিলেন।” (যাদুল মাসীর ফী ইলমীত তাফসীর ২য় জিঃ ২৫ পৃষ্ঠা)
(১৯)
ان الملائكة نزلت يوم بدر على خيل بلق وعليهم عمائم صفر وهو قول هشام بن عروة. (تفسير الماوردى الجلد الاول ص ১২৯)
অর্থ: বদরের যুদ্ধের দিন ফেরেশতাগণ সাদা ডোরা বিশিষ্ট ঘোড়ায় আরোহন করে ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় অবর্তীণ হয়েছিলেন। উক্তিটি হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার।” (তাফসীরে মাওয়ারদী ১ম জিঃ, ১২৯ পৃষ্ঠা)
(২০)
عليهم البياض قد ارخوا اطراف العمائم بين اكتافهم ...... وهو اطراف العمائم بين الاكتاف. (تفسير السمر قندى الجلد الاول ص ২৯৬)
অর্থ: বদর যুদ্ধের ফেরেশতাগণ উনাদের মাথায় সাদা পাগড়ী ছিল আর উনাদের পাগড়ীর শামলা দুকাঁধের মাঝে ঝুলন্ত ছিল।” (তাফসীরে সমরকান্দী ১ম জিঃ, ২৯৬ পৃষ্ঠা)
(২১)
(مسومين) ...... ففى التفسير انهم كانوا بعمائم بيض الا جبريل فبعمامة صفراء ... (معنى مسومين مرسلين) ومعنى السومة فيها ان الله تعالى سومهم اى جعل عليهم علامة وهى العمائم. (تفسير الدر المصون الجلد الثانى ص ২০৬)
অর্থ: “(مسومين চিহ্নধারী) শব্দের তাফসীর হচ্ছে- নিশ্চয়ই সমস্ত ফেরেশতাগণ সাদা পাগড়ীপরিহিত ছিলেন তবে হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উনার ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী ছিল। ( مسومينচিহ্নিত) এখানে سومة অর্থ: যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে চিহ্নিত করেছেন অর্থাৎ উনাদেরকে বিশেষ চিহ্ন পাগড়ী দ্বারা সজ্জিত করে পাঠিয়েছেন।” (তাফসীরে দুররুল মাছুন ২য় জিঃ, ২০৬ পৃষ্ঠা)
(২২)
(مسومين) بكسر الواو وقرأ الباقون (مسومين) بفتح الواو وروى ان الملائكة اعلمت يومئذ بعمائم بيض الا جبريل عليه السلام فانه كان بعمامة صفراء على مثل زبير بن العوام وقال عباد بن حمزة بن عبد الله بن الزبير نزلت الملائكة فى سيماء الزبير عليهم عمائم صفر. (تفسير المحرر الوجيز الجلدالاول ص ৫০৪)
অর্থ: “(مسومين) এর নিচে যেরসহ পঠিত হয়েছে কেউ কেউ (مسومين) এর واو এর উপর যবরসহ পড়েন। ...... বর্ণিত আছে, বদরের দিন ফেরেশতাগণ উনাদেরকে সাদা পাগড়ীদ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু জিবরাইল আলাইহিস সালাম উনার পাগড়ী হযরত যুবাইর ইবনে আউওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ন্যায় ঘিয়া বর্ণের ছিল। হযরত ইবাদ ইবনে হামযাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ফেরেশতাগণ হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছূরতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। উনাদের মাথায় ছিল ঘিয়া বর্ণের পাগড়ী।” (তাফসীরে মুহাররারুল ওয়াজিয ১ম জিঃ, ৫০৪ পৃষ্ঠা)
(২৩)
(مسومين) كانت سيما الملائكة يوم بدر عمائم بيضاء الا جبريل فانه كانت عمامته صفراء وقيل كانت عمائمهم صفر. (التسهيل لعلوم التنزيل الجلد الاول ص ১৫৮)
অর্থ: مسومين (চিহ্নধারী ফেরেশতাগণ) বদর যুদ্ধের দিন হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তিনি ছাড়া অন্যান্য ফেরেশতাগণ উনাদের চিহ্ন ছিল সাদা পাগড়ী। নিশ্চয়ই উনার পাগড়ী ছিল ঘিয়া রংয়ের। কেউ কেউ বলেন, অন্যান্য ফেরেশতাগণ উনাদের পাগড়ী ছিল ঘিয়া রংয়ের।” (তাসহীলু লি উলমীত তানযীল ১ম জিঃ, ১৫৮ পৃষ্ঠায়)
(২৪-২৫)
عن ابن عباس رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فى (مسومين) قال (معلمين) وكان سيماء الملائكة يوم بدر عمائم سود ويوم حنين عمانم حمر. (تفسير القران العظيم الجلد الاول ص৬০১ تفسير ابن كثير الجلد الاول ص ৬০১)
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি مسومين এর ব্যাখ্যায় معلمين (চিহ্ন) বলেছেন যে, বদর যুদ্ধের দিন ফেরেশতাদের চিহ্ন ছিল কালো পাগড়ীএবং হুনাইন যুদ্ধের দিন গন্ধম রংয়ের পাগড়ী।” (তাফসীরে আল কুরআনুল আযীম ১ম জিঃ, ৬০১ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে কাছির ১ম জিঃ, ৬০১ পৃষ্ঠা)
(২৬-২৭)
عن ابن عباس رضى الله عنهما قال كان سيماء الملائكة يوم بدر عمائم بيض قد ارسلوها فى ظهورهم ويوم حنين عمائم حمر. (تفسير القران العظيم الجلد الاول ص ৬০১، تفسير ابن كثير الجلد الاول ص ৬০১)
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন ফেরেশতাগণ উনাদের নিদর্শন ছিল সাদা পাগড়ী, যার শামলা উনাদের পিঠের উপর প্রলম্বিত ছিল। আর হুনাইন যুদ্ধের দিন পাগড়ী ছিল গন্ধম রংয়ের।” (তাফসীরে আল কুরআনুল আযীম ১ম জিঃ, ৬০১ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে কাছির ১ম জিঃ, ৬০১ পৃষ্ঠা)
(২৮-২৯)
عن يحيى بن عباد ان الزبير رضى الله عنه كان عليه يوم بدر عمامة صفراء معتجرا بها فنزلت الملائكة عليهم عمائم صفر. (تفسير القران العظيم الجلد الاول ص ৬০১، تفسير بر كثير الجلد الاول ص ৬০১)
অর্থ: হযরত ইয়াহইয়া ইবনে ইবাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই বদর যুদ্ধের দিন হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাথায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী বাঁধা ছিল। আর সেদিন ফেরেশতাগণ এমতাবস্থায় এসেছিলেন যে, উনাদের মাথায়ও ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী ছিল।” (তাফসীরে আল কুরআনুল আযীম ১ম জিঃ, ৬০১ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে কাছির ১ম জিঃ, ৬০১ পৃষ্ঠা)
(৩০)
مسومين على الفتح بمعنى معلمين من السمة وهى العلامة نقل أنهم كانوا بعما ثم صفر. (حاشية الشهاب على تفسير البيضاوى الجلد الثالث ص ৬১)
অর্থ: مسومين শব্দে واو এর উপর যবরসহ পড়তে হবে। যার অর্থ معلمين চিহ্নিত। مسومين শব্দটি سمة থেকে এসেছে। যার অর্থ علامة চিহ্ন। আমরা বলি, “নিশ্চয়ই উনারা (ফেরেশতাগণ) ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী পরিহিত ছিলেন। (হাশিয়াতুশ শিহাব আলা তাফসীরিল বাইযাভী৩য় জিঃ, ৬১ পৃষ্ঠা)
(৩১)
قال ابن عباس رضى الله عنهما كانت سيماء الملائكة يوم بدر عمائم بيض قد ارسلوها فى ظهورهم. (حاشية محى الدين شيخ زاده على البيضاوى الجلد الاول ص ৬৬৯)
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিবস ফেরেশতাগণ উনাদের বিশেষ চিহ্ন ছিল সাদা পাগড়ীযার শামলা উনাদের পিঠের উপর প্রলম্বিত ছিল।” (হাশিয়াতু মুহিউদ্দীন শায়খ যাদাহ আলা তাফসীরিল বাইযাভী”-এর ১ম জিঃ, ৬৬৯ পৃষ্ঠা)
(৩২)
روى انهم كانوا بعمائم بيض الا جبريل عليه السلام فانه كان بعمائم صفراء. (حاشية محى الدين شيخ زاده على تفسير البيضاوى الجلد الاول ص ৬৬৯)
অর্থ: বর্ণিত রয়েছে, (বদর যুদ্ধে) উনাদের (ফেরেশতাগণ উনাদের) সাদা পাগড়ীছিল তবে হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উনার পাগড়ী ছিল ঘিয়া বর্ণের।” (হাশিয়াতু মুহিউদ্দীন শায়খ যাদাহ আলা তাফসীরিল বাইযাভী-এর ১ম জিঃ, ৬৬৯)
(৩৩)
روى انهم كانوا على خيول بلق عليهم عمائم بيض قدارسلوها بين اكتافهم. (حاشية محى الدين شيخ زاده على تفسير البيضاوى الجلد الاول ص ৬৬৯)
অর্থ: বর্ণিত আছে, (বদর যুদ্ধে) উনারা (ফেরেশতাগণ) সাদা ডোরা বিশিষ্ট ঘোড়ায় সাদা পাগড়ীপরিহিত ছিলেন। যার শামলা উনাদের দুকাঁধের মাঝে ঝুলছিল।” (হাশিয়াতু মুহিউদ্দীন শায়খ যাদাহ আলা তাফসীরিল বাইযাভী-এর ১ম জিঃ, ৬৬৯ পৃষ্ঠা)
(৩৪)
قال القرطبى منزل جبريل عليه الصلاة والسلام متعمما بعمامة صفراء على مثل الزبير بن العوام رضى الله عنه. (حاشية محى الدين شيخ زاده على تفسير البيضاوى الجلد الاول ص ৬৬৯)
অর্থ: কুরতুবী বলেন, (বদর যুদ্ধে) হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম হযরত যুবাইর ইবনে আউওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার পাগড়ীর ন্যায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী পরিধান করে এসছিলেন। (হাশিয়াতু মুহিউদ্দীন শায়খ যাদাহ আলা তাফসীরিল বাইযাভী-এর ১ম জিঃ, ৬৬৯ পৃষ্ঠা)
(৩৫)
روى الواحدى عن عباد بن عبد الله بن الزبير انه قال كانت على الزبير عمامة صفراء فنزلت الملائكة عليهم عمائم صفر. (حاشية محى الدين شيخ زاده على تفسير البيضاوى الجلد الاول ص ৬৬৯)
অর্থ: ওয়াহিদী হযরত ইবাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পাগড়ী ছিল ঘিয়া রংয়ের। এমনকি ফেরেশতাগণ আগমণ করেন এমতাবস্থায় উনাদের মাথায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী ছিল।” (হাশিয়াতু মুহিউদ্দীন শায়খ যাদাহ আলা তাফসীরিল বাইযাভী”-এর ১ম জিঃ, ৬৬৯ পৃষ্ঠা)
(৩৬)
عليهم عمائم صفر او بيض ارسلوها بين اكتافهم. (تفسير الجلالين ص ৬০)
অর্থ: “(বদর যুদ্ধে) উনাদের (ফেরেশতাগণ উনাদের) মাথায় ঘিয়া অথবা সাদা পাগড়ীছিল এবং শামলা ছিল উনাদের দুকাঁধের মাঝামাঝি ঝুলন্তাবস্থায়।” (তাফসীরুল জালালাইন ৬০ পৃষ্ঠা)
(৩৭)
عن عروة بن الزبير كانت عمامة جبريل يوم بدر صفراء. (حاشية الجمل على الجلالين الجلد الاول ص ৩১২)
অর্থ: হযরত উরওয়াহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উনার পাগড়ী মুবারক ছিল ঘিয়া রংয়ের।” (হাশিয়াতুল জামাল আলাল জালালাইন ১ম জিঃ, ৩১২ পৃষ্ঠা)
(৩৮)
رواه ابن اسحق والطبر انى عن ابن عباس رضى الله عنه قال كانت سيمأ الملائكة يوم بدر عمائم بيضاء. (حاشية الجمل على الجلالين الجلد الاول ص ৩১২)
অর্থ: ইবনে ইসহাক ও তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন ফেরেশতাগণ উনাদের নিদর্শন ছিল সাদা পাগড়ী।” (হাশিয়াতুল জামাল আলাল জালালাইন ১ম জিঃ, ৩১২ পৃষ্ঠা)
(৩৯)
ان جبريل كانت عمامته صفراء وغيره كانت عمامته بيضاء. (حاشية الجمل على الجلالين الجلد الاول ص ৩১২)
অর্থ: “(বদর যুদ্ধে) হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উনার পাগড়ী ছিল ঘিয়া বর্ণের আর অন্যান্য ফেরেশতাগণ উনাদের পাগড়ী ছিল সাদা বর্ণের।” (হাশিয়াতুল জামাল আলাল জালালাইন ১ম জিঃ, ৩১২ পৃষ্ঠা)
(৪০)
عن ابن عباس رضى الله عنهما قال كانت سيماء الملائكة يوم بدر عمائم بيضاء. (حاشية الجمل على الجلالين الجلد الاول ص ৩১২)
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধে ফেরেশতাগণ উনাদের বিশেষ নিদর্শন ছিল সাদা পাগড়ী।” (হাশিয়াতুল জামাল আলাল জালালাইন ১ম জিঃ, ৩১২ পৃষ্ঠা)
(৪১)
كانت سيماء الملائكة يوم بدر عمائم سوداء ويوم احد عمائم حمراء. (فتح القدير الجلد الاول ص ৩৭৯)
অর্থ: বদর যুদ্ধের দিন ফেরেশতাগণ উনাদের বিশেষ নিদর্শন ছিল কালো পাগড়ীআর উহুদ যুদ্ধের দিন ছিল গন্ধম রংয়ের পাগড়ী।” (তাফসীরে ফতহুল ক্বাদীর ১ম জিঃ, ৩৭৯ পৃষ্ঠা)
(৪২)
واخرج ابن شيبة وابن جرير وابن المنذر وابن ابى حاتم وابن مردوية عن عبد الله بن الزبير ان الزبير كان عليه يوم بدر عمامة صفراء معتجرا بها فنزلت الملائكة عليهم عمائم صفر. (فتح القدير الجلد الاول ص ৩৭৯)
অর্থ: হযরত ইবনে শাইবাহ, ইবনে যারীর, ইবনে মুনযীর, ইবনে আবূ হাতেম ও ইবনে মারদুবী রহমতুল্লাহি আলাইহিম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, নিঃসন্দেহে বদর যুদ্ধের দিন হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাথায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী বাঁধা ছিল। আর ফেরেশতাগণ অবতীর্ণ হয়েছিলেন এমতাবস্থায় যে, উনাদের মাথায় ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী ছিল।” (তাফসীরে ফতহুল ক্বাদীর ১ম জিঃ, ৩৭৯ পৃষ্ঠা)
(৪৩)
واخرج ابن اسحاق والطبرانى عن ابن عباس رضى الله عنه قال كانت سيماء الملائكة يوم بدر عمائم بيضاء قد ارسلوها فى ظهورهم ويوم حنين عمائم حمراء. (فتح القدير الجلد الاول ص ৩৭৯)
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক ও তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন ফেরেশতাগণ উনাদের বিশেষ চিহ্ন ছিল সাদা পাগড়ী। যার শ্যামলা উনাদের পিঠে ঝুলানো ছিল। আর হুনাইন যুদ্ধের দিন ছিল তাদের গন্ধম রংয়ের পাগড়ী।” (তাফসীরে ফতহুল ক্বাদীর ১ম জিঃ, ৩৭৯ পৃষ্ঠা)
(৪৪)
قيل ان الملائكة اعتمت بعمائم بيض وقيل حمر وقيل خضر وقيل صفر. (فتح القدير الجلد الاول ص ৩৭৮)
অর্থ: কারো মতে নিঃসন্দেহে ফেরেশতাগণ সাদা পাগড়ীপরিধান করে থাকেন। আবার কেউ বলেন, গন্ধম রংয়ের, কেউ বলেন, “সবুজ পাগড়ী। আবার কারো মতে ঘিয়া রংয়ের পাগড়ী।” (তাফসীরে ফতহুল ক্বাদীর ১ম জিঃ, ৩৭৯ পৃষ্ঠা)
(৪৫)
سعد بن ابى وقاص المروى فى (الصحيحين) انه قال رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم احد ومعه رجلان يقاتلان عنه عليهما ثياب بيض كأشد القتال مارايتهما قبل ولا بعد يعنى جبريل وميكائيل. (تفسير القاسمى الجلد الثانى ص ১৩৫)
অর্থ: হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ মারবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, (সহীহাইনে রয়েছে) আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উহুদের দিন দেখেছি এ অবস্থায় যে, উনার সঙ্গে দুজন লোক উনার পক্ষ হয়ে যুদ্ধে করছেন, উনারা সাদা পোশাক (পাগড়ী) ধারী ছিলেন। উনারা তুমুল যুদ্ধ করছিলেন, যাঁদেরকে আমি পূর্বে ও পরে কোনদিন দেখিনি।উল্লিখিত দুজন ছিলেন হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম ও হযরত মিকাইল আলাইহিস সালাম। (তাফসীরে কাসিমী ২য় জিঃ, ১৩৫ পৃষ্ঠা)অসমাপ্ত

0 Comments: