কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফাযায়েল ও আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ২ নং )


কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফাযায়েল ও আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
গবেষণা কেন্দ্র
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ

[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা ভিত্তিক একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামাজ ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ নামাজের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর নামাজে বা অন্যান্য সময় কোরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্ নামাজ বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া,  প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং নূরে মুহম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করার পর ১৯তম ফতওয়া হিসেবে ইমামাহ্ বা পাগড়ী মোবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।]
ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফাযায়েল ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের মূর্ত প্রতিক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শেরেকী ও বিদ্য়াতের মুলৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক মূখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছুদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লেখাই পত্রস্থ করা হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করনে বিশেষ সহায়ক।
            তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে”- ইমামাহ্ বা পাগড়ী মোবারক ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার উদ্দেশ্য বা মাকছুদও ঠিক তাই। কারণ অধিকাংশ মুসলমানই পাগড়ীর সঠিক আহ্কাম ও ফযীলত সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। যার ফলে তারা পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে যেরূপ ব্যর্থ, তদ্রুপ পাগড়ীর ন্যায় একখানা গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ দায়েমী সুন্নত পালনেও ব্যর্থ। যা অবশ্যই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেজামন্দী হাছিলের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়।
            স্মরণযোগ্য যে, অনেকেই পাগড়ীর সঠিক আহ্কাম ও ফযীলত না জানার কারণে পাগড়ীকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকে এবং পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিকে ঠাট্টা বা বিদ্রুপ করে থাকে। অথচ এটা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কেননা আক্বাইদের ইমামগণের মতে শুধু পাগড়ী নয় বরং যে কোন সুন্নতের অবজ্ঞাই কুফরীর কারণ। এ প্রসঙ্গে আকাইদের কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “কদু  খাওয়া সুন্নত। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কদু পছন্দ করতেন এবং খেয়েছেন। তাই কেউ যদি বলে যে, আমি কদু খাওয়া পছন্দ করিনা তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেটা পছন্দ করেছেন সেটা সে অপছন্দ করলো।
            আর তাই আকাইদের কিতাবে লিখা হয় যে,
اهانة السنة كفر.
অর্থঃ- সুন্নতের অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।
            সুতরাং বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, পাগড়ীর ন্যায় মহান সুন্নতের প্রতি অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল্য করা নিঃসন্দেহে ঈমান হানীর কারণ। অথচ বান্দার ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল কবুলযোগ্য হওয়ার জন্যে প্রধানতম শর্ত হচ্ছে- আক্বীদা শুদ্ধ থাকা অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা। কারণ বিশুদ্ধ আক্বীদা আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত। তাই মহান আল্লাহ্ পাক, পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেন,
والعصر ان الانسان لفى خسر الا الذين امنوا وعملوا الصالحات.
অর্থঃ- আছরের সময়ের কছম! সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে, একমাত্র তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে।” (সূরা আছর)
            উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক মানব জাতির ধ্বংস হতে নাযাত পাওয়ার প্রথম উপায় হিসাবে ঈমান (আক্বীদা)কে আখ্যায়িত করেছেন। অতঃপর আমলের প্রশ্ন। কারণ ঈমানহীন ব্যক্তির নেক আমলের কোন মূল্যই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট নেই। কাজেই বান্দার জন্যে প্রধানতম ফরজ এই যে, সে সর্ব প্রথম তার ঈমান বা আক্বীদাকে বিশুদ্ধ করবে অর্থাৎ ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে, আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা  পোষণ করবে।
            কেননা আক্বীদাগত কারণেই ইসলামে ৭২টি বাতিল ফেরকার আবির্ভাব হয়েছে। যদিও তাদের কথাবার্তা, চাল-চলন, ছূরত-সীরত ইত্যাদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রেই মুসলমানের ন্যায় বা ইসলামসম্মত, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়ে ইসলাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণ বিপরীত আক্বীদা পোষণ করে থাকে, যা সুস্পষ্ট কুফরী। যেমন- ক্বদরিয়া সম্প্রদায়- তারা তক্বদীরকে অবিশ্বাস করে, অথচ তক্বদীরের উপর ঈমান আনা ফরজ।
খারেজী সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা হলো, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ কাফির। (নাউযুবিল্লাহ্), অথচ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহুমগণের প্রতি সুধারণা পোষণ করা ঈমানের অঙ্গ বা ফরজ।
রাফেজী বা শিয়া সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা মতে শিয়াদের ইমামদের মর্যাদা নবী-রাসূল আলাইহিস্ সালামগণের চেয়েও বেশী, বর্তমান কুরআন শরীফ পরিবর্তীত, হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু ব্যতীত খোলাফা-ই-রাশেদীনের সকলেই মুরতাদ। (নাউযুবিল্লাহ)
মুশাব্বিহা বা মুনাব্বিরা সম্প্রদায়ঃ- তাদের আক্বীদা হলো, মহান আল্লাহ্ পাক নূর বা আলোমহান আল্লাহ্ পাক-এর দেহ বা আকার-আকৃতি রয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক উল্লিখিত সকল বিষয় থেকেই সম্পূর্ণ বেনিয়াজ ও পবিত্র।
            অনুরূপ বর্তমান যামানার ভয়ঙ্কর ফিৎনা- কাদিয়ানী সম্প্রদায়, তাদের আক্বীদা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী নন, তাঁর পর আরো নবী পৃথিবীতে আসবে, তাই তারা গোলাম কাদিয়ানীকে নবী বলে বিশ্বাস করে, যা অকাট্য কুফরী।
            অথচ তারা প্রত্যেকেই বাহ্যিক দৃষ্টিতে নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাতের কথা বলে, টুপি, কোর্তা, পাগড়ী পরিধান করে। এতকিছুর পরও তারা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মোতাবেক কাফির বা অমুসলিম। কারণ তাদের উপরোক্ত আক্বীদাসমূহ সম্পূর্ণই কুফরী।
            আর এদের প্রসঙ্গেই হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
ستفترق امتى على ثلاث وسبعين فرقة كلهم فى النار الا ملة واحدة قيل من هى يارسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما انا عليه واصحابى.
অর্থঃ- অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সকল দল জাহান্নামে যাবে। জিজ্ঞাসা করা হলো- যে দলটি (নাযাত পাবে) সেটা কোন দল? ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে (মত-পথের) উপর আমি আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ রয়েছি, তার উপর যারা থাকবে, তারাই সেই নাযাত প্রাপ্ত দল।” (আহ্মদ, আবু দাউদ, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)
            উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের  যেকোন আমলই করা হোক না কেন এবং যে কেউই করুক না কেন, তা যদি আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করা হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য। আর যদি আক্বীদার মধ্যে কোন ত্রুটি থাকে, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন- খারেজী, রাফেজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি সম্প্রদায় পরিত্যাজ্য ও বাতিল।
            অতএব, প্রতিটি মুসলমানকেই পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে সঠিক বা বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করতে হবে। কোন ভাবেই পাগড়ীকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবেনা।
দ্বিতীয়তঃ অনেকেই অজ্ঞতা হেতু বলে থাকে যে, পাগড়ী পরিধান করা দায়েমী সুন্নত নয় বরং শুধুমাত্র নামাজের মধ্যে পরিধান করলেই চলে। আবার কেউ কেউ সুন্নত স্বীকার করলেও নামাজের মধ্যে পাগড়ী পরিধান করার সুন্নত ও ফযীলতকে অস্বীকার করে থাকে।
            অথচ তাদের উল্লিখিত বক্তব্য শুধু শরীয়ত বিরোধীই নয় বরং মনগড়া, অজ্ঞতামূলক ও বিভ্রান্তিকরও বটে। কারণ পাগড়ী পরিধান করা নামাজের বাইরে ও ভিতরে উভয় অবস্থায়ই সুন্নত ও ফযীলতের কারণ। যেমন, নামাজের বাইরে পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে হাদীস শরীফের সহীহ্ কিতাব তিরমিযী শরীফেরহাশিয়ায় উল্লেখ আছে, ان لبس العمامة سنة.
অর্থঃ- নিঃসন্দেহে পাগড়ী পরিধান করা (দায়েমী) সুন্নত।”(হাশিয়ায়ে শামায়েলে তিরমিযী/৮)
আর নামাজের মধ্যে পাগড়ী পরিধান করার ফযীলত সম্পর্কে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে যে,
ان ركعتين مع العمامة افضل من سبعين ركعة بدونها.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই পাগড়ী পরিধান করে দুরাকায়াত নামাজ আদায় করা, পাগড়ী ছাড়া ৭০ রাকায়াত নামাজ আদায় করার চেয়ে অধিক ফযীলতপূর্ণ।” (হাশিয়ায়ে শামায়েলে তিরমিযী/৮)
            পাগড়ীর উল্লিখিত ফযীলত থেকে যেন উম্মত মাহরুম না হয় সে জন্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উম্মতদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে,
فاعتموا فان العمامة سيماء الاسلام وهى الحاجز بين المسلمين والمشركين.
অর্থঃ- তোমরা পাগড়ী পরিধান কর। নিশ্চয়ই পাগড়ী ইসলামের নির্দশন এবং তা মুসলমান ও মুশরিকদের মাঝে পার্থক্যকারী।” (যারকানী, উমদাতুল ক্বারী)
            সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো এরশাদ করেন যে,
عليكم بالعمائم فانها سيماء الملئكة.
অর্থঃ- তোমাদের জন্যে পাগড়ী অবধারিত, কেননা তা ফেরেশ্তাগণের নিদর্শন স্বরূপ।” (মেশকাত শরীফ/৩৩৭)
            অতএব, সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পাগড়ী পরিধান করা যেরূপ দায়েমী সুন্নত। তদ্রুপ অশেষ ফযীলত লাভেরও কারণ। নামাজের সময় যেরূপ পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত, নামাজের বাইরেও তদ্রুপ পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত। অর্থাৎ পাগড়ী পরিধান করা হচ্ছে- দায়েমী বা সার্বক্ষণিক সুন্নত।
            এছাড়াও পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগণিত পাঠকের পক্ষ হতে প্রেরিত অসংখ্য চিঠিও পাগড়ী ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া দেয়ার একটি কারণ।
            কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে এরশাদ করেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.
অর্থঃ- যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা নহল/৪৩ ও আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
            অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন আখেরী রাসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থঃ- যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়,  জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, আহ্মদ, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
            অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ¡া আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।
            কাজেই উপরোক্ত হাদীস শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে এবং বিদ্য়াতীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ যেন পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে কুফরী আক্বীদা পোষণ না করে অর্থাৎ পাগড়ীর ন্যায় মহান সুন্নতকে যেন অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করে এবং তাদের প্ররোচনায় যেন এ মহান সুন্নত ত্যাগ করতঃ অশেষ ফযীলত ও রেজায়ে মাওলা অর্জনে ব্যর্থ না হয় বরং পাগড়ী সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়ে সঠিক ও সহীহ্ আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং পাগড়ীর ন্যায় অশেষ ফযীলতপূর্ণ সুন্নত পালন করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যেই মসিক আল বাইয়্যিনাতেপাগড়ী মোবারক ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া প্রকাশ করা হলো।
            এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
            এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মুহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেশকাত, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীস শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
            কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “পাগড়ী ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্র্কেসঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন  প্রত্যেকেই পাগড়ী সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং সুন্নত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
            মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মুমিন অপর মুমিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে, المؤمن مرأة المؤمن.
অর্থঃ- এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)
            এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত আনছার এবং মোহাজির রদিয়াল্লাহু আনহুমগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।এ কথা শুনে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মাআরেফ)
            অতএব, পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে রয়েছে, তাদের সে ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত হাদীস শরীফের মেছদাক হওয়াই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে পাগড়ী সম্পর্কিত ফতওয়া প্রকাশ করার মূল কারণ।    
            বস্তুতঃ পাগড়ী পরিধান করা যদিও সুন্নততবে সুন্নতের অনুসরণই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিলের একমাত্র মাধ্যম। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেছেন,
قل انكنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور رحيم.
অর্থঃ- হে হাবীব! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলুন, যদি তোমরা মহান আল্লাহ্ পাক-এর ভালবাসা চাও তবে আমাকে (আমার সুন্নতকে) অনুসরণ কর তবেই আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের সকল গুণাহ্-খতা ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান/৩১)
            আর উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীসে কুদসীতেএরশাদ হয়েছে,
لايزال العبد يتقرب الى بالنوافل حتى احبه.
অর্থঃ- মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, আমার বান্দারা নফল অর্থাৎ সুন্নত বা মুস্তাহাব আমলের দ্বারা আমার এতটুকু নৈকট্য বা সন্তষ্টি হাছিল করে যে, স্বয়ং আমি আল্লাহ্ পাক তাকে মুহব্বত করি বা ভালবাসি।
            অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, পাগড়ীর আমলের দ্বারা বান্দা অবশ্যই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী লাভ করতে পারবে। কারণ পাগড়ী আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতসমূহের মধ্যে একখানা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও অশেষ ফযীলতপূর্ণ  সুন্নত। তাই পাগড়ী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে সুন্নতের গুরুত্ব ও ফযীলতসম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা করা একান্তই জরুরী। আর তখনই মূলতঃ সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, শরীয়তে পাগড়ীর কতটুকু গুরুত্ব ও ফযীলত রয়েছে এবং পাগড়ী পরিধানকারী ব্যক্তি মহান আল্লাহ্ পাক-এর নিকট কতটুকু প্রিয়।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম সুন্নত দৃঢ়ভাবে অনুসরণে উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম উম্মত ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের অবিস্মরনীয় ঘটনাসমূহ
            উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম উম্মত, মিয়ারে হক, হিদায়েতের আলোক বর্তিকা, ইসলামের বীর সেনানী, হিদায়েতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হচ্ছেন- হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ। হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের কতটুকু অনুসরণ-অনুকরণ করতেন, সে সম্পর্কিত আলোচনার পূর্বে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের ফাযায়েল-ফযীলত ও মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা করা একান্তই কর্তব্য।
            উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের অশেষ ও সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করেছেন, যা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের প্রায় সর্বত্র সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তন্মধ্যে নিম্নোক্ত আয়াত শরীফখানাই আক্বলমন্দের জন্যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের মর্যাদা-মর্তবা অনুধাবনে যথেষ্ট।      যেমন মহান আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন,
والسابقون الاولون من المهاجرين الانصر والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم ورضوا عنه واعدلهم جنت تجرى تحتها الانهار خالدين فيها ابدا ذالك الفوز العظيم.
অর্থঃ- “(ঈমান ও আমলে) সর্বপ্রথম প্রথম স্থান অধিকারী আনছার ও মুহাজির অর্থাৎ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ এবং ইখলাছের সাথে উক্ত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের অনুসরণকারী সকলের প্রতিই আল্লাহ্ পাক সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট। হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁদের অনুসারীদের জন্য আল্লাহ্ পাক এরূপ বেহেশ্ত নির্ধারিত করে রেখেছেন, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হতে থাকবে, তারা চিরদিন সে বেহেশ্তে অবস্থান করবেন, যা তাঁদের বিরাট সফলতা।” (সূরা তওবা/১০০)
            এ আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ সকলের প্রতিই আল্লাহ্ পাক পূর্ণ সন্তুষ্ট এবং তাঁরা সকলেই নিশ্চিত জান্নাতী। শুধু তাই নয়, সাথে সাথে যারা তাঁদেরকে অর্থাৎ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণকে ইখলাছের সাথে অনুসরণ করবে, তাঁদের প্রতিও আল্লাহ্ পাক তদ্রুপ সন্তুষ্ট এবং তাঁদের জন্যেও তদ্রুপ বেহেশ্ত নিশ্চিত। (সুবহানাল্লাহ্)
            আর তাই হাদীস শরীফে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের মর্যাদা-মর্তবা যথাযথভাবে অবগত হয়ে, তাঁদেরকে ইখলাছের সহিত পরিপূর্ণ অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن مسعود قال من كان مستنا فليستن بمن قدمات فان الحى لا تؤمن عليه الفتنة اولئك اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم كانوا افضل هذه الامة ابرها قلوبا واعمقها علما واقلها تكلفا اختارهم الله لصحبة نبيه ولاقامة دينه فاعرفوالهم فضلهم واتبعوهم على اثرهم وتمسكوا بما استطعتم من اخلاقهم وسير هم فانهم كانوا على الهدى المستقيم.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত- যে ব্যক্তি শরীয়তের সঠিক তরীক্বা অনুসরণ করতে চায়, তার উচিত হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের অনুসরণ করা। সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণই উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম, তাঁরা আত্মার দিক দিয়ে অধিক পবিত্র, ইল্মের দিক দিয়ে গভীর ইল্মের অধিকারী, তাঁরা লোক দেখানো কোন আমল করতে জানেন না। আল্লাহ্ পাক তাঁদেরকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথী হিসাবে মনোনীত করেন। সুতরাং তাঁদের মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়েল-ফযীলত, শান-শওকত সম্পর্কে অবগত হও এবং তাঁদের কথা ও কাজের অনুসরণ কর এবং যথাসম্ভব তাঁদের সীরত-ছূরতকে গ্রহণ কর, কারণ তাঁরা হিদায়েত ও সিরাতুল মুস্তাক্বীম”-এর উপর দৃঢ়চিত্ত ছিলেন।” (রজীন, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়্যাতুল লুময়াত, তালীক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানজীহ্)
            স্মরণযোগ্য যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের অশেষ ও অবর্ণনীয় ফাযায়েল-ফযীলত ও মর্যাদা-মর্তবার কারণেই শরীয়ত তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ্ শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
ان الذين يؤذون الله ورسوله لعنهم الله فى الدنيا والاخرة واعد لهم عذابا مهينا.
অর্থঃ- নিশ্চয় যারা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আহ্যাব/৫৭)
            মূলতঃ উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তিরস্কার করা, সমালোচনা করা, গালি দেয়া ইত্যাদি সবই আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়ার শামিল।
            যেমন হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে,
الله الله فى اصحابى لا تتخذوهم غرضا من بعدى فمن احبهم فبحبى احبهم ومن ابغضهم فببغضى ابغضهم ومن اذاهم فقد اذانى ومن اذانى فقد اذى الله ومن اذى الله فيوشك ان ياخذه.
অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। আমার সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। আমার ওফাত মোবারকের পরে তাঁদেরকে তোমরা তিরস্কারের লক্ষ্যস্থল করনা। যে ব্যক্তি তাঁদেরকে মুহব্বত করলো, সে আমার প্রতি মুহব্বত করার কারণেই করলো। আর যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো, সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই তা করলো। আর যে ব্যক্তি তাঁদেরকে কষ্ট দিল, সে যেন আমাকেই কষ্ট দিল। আর যে ব্যক্তি আমাকে কষ্ট দিল, সে মূলতঃ আল্লাহ্ পাককেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহ্ পাককে কষ্ট দিবে, আল্লাহ্ পাক তাকে অতি শীঘ্রই পাকড়াও করবেন।” (তিরমিযী, মেশকাত, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মায়ারেফুস্ সুনান, উরফুশ্ শাজী, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)
            এ আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তাঁদেরকে তিরস্কার করা, গালি দেয়া, আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ হতে লানত প্রাপ্তি ও জাহান্নামের আযাবের উপযুক্ত হওয়ার কারণ। শুধু তাই নয়, এ ধরণের লোকদের প্রতি লানতের বদ্দোয়া করার নির্দেশ বান্দাদেরকেও দেয়া হয়েছে।
            যেমন হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمر قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا رأيتم الذين يسبون اصحابى فقولوا لعنة الله على شركم.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যখন তোমরা দেখ যে, কেউ আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণকে গালি দিচ্ছে, তখন তোমরা বল- তোমার এ জঘন্যতম কাজের জন্য তোমার প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর লানত।” (তিরমিযী, মেশকাত, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মায়ারেফুস্ সুনান, উরফুশ্ শাজী, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব)
            আর তাই হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষিত হয়েছে,
فمن سبهم فعليه فعنة الله والملائكة والناس اجمعين ولا يقبل الله منه صرفا ولا عدلا.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণকে গালি দেয়, তাদের প্রতি শুধু আল্লাহ্ পাক-এর লানত নয় বরং ফেরেশ্তা, মানুষ এমনকি সকল মাখলুকাতের পক্ষ থেকেই তাদের প্রতি লানত বর্ষিত হয়। (যার ফলে) তাদের কোন ফরজ ও নফল ইবাদত আল্লাহ্ পাক কবুল করেননা।” (মোযাহেরে হক্ব)
            অতএব প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তাঁদের কোন প্রকার সমালোচনা করা, তাঁদেরকে নাক্বেছ বা অপূর্ণ বলা, তাঁদেরকে অশালীন ভাষায় গালি দেয়া হারাম ও নাজায়েয। সাথে সাথে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহ সকল মাখলুকাতের পক্ষ হতে লানত বর্ষণের কারণ। যা জাহান্নামী হওয়ার কারণও বটে।
            উল্লেখ্য কিছু লোক রয়েছে, যারা কুরআন-সুন্নাহ্র প্রতি অজ্ঞতাহেতু, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের অশেষ ও অবর্ণনীয় মর্যাদা-মর্তবা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে এবং কিছু সংখ্যক ইসলাম ও ছাহাবী বিদ্বেষী ঐতিহাসিকদের কুআন-সুন্নাহ্ বিরোধী, মনগড়া, ইতিহাস পাঠ করে, আর সে দলীল দিয়ে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সবচেয়ে অধিক প্রিয়পাত্র, ন্যায়ের মূর্তপ্রতীক, সত্যের চরম নিদর্শন, হক্বের পূর্ণ মাপকাঠি, দ্বীন ইসলামের ভিত্তি স্থাপনকারী এবং আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত, সম্মানিত, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সমালোচনা করে, তিরস্কার করে ও অশালীন ভাষায় গালি দেয়। মূলতঃ এ সকল লোক যেরূপ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শত্রু, তদ্রুপ দ্বীন ইসলামেরও শত্রু। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রত্যেকেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য।
            অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়েল-ফযীলত অপরিসীম। তাঁদেরকে মহব্বত করা ঈমানের অঙ্গ, আর তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরী। শুধু তাই নয়, তাঁদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা মহান আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী হাছিলের বিশেষ উপায়।  
            উল্লেখ্য, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ এত বিরাট কামিয়াবী তথা ফাযায়েল-ফযীলত ও মর্যাদা-মর্তবা হাছিল করেছেন শুধুমাত্র সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ তথা সুন্নতের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তথা হুবহু অনুসরণ-অনুকরণ করার কারণেই। নিম্নে মেছালস্বরূপ কতিপয় ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের সুন্নত অনুসরণের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো-
খলীফাতু রসূলিল্লাহ্, আমীরুল মুমিনীন, ছিদ্দীকে আকবর, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু-এর সুন্নতের প্রতি মুহব্বত
            যাঁর মর্যাদা-মর্তবা ও শান বর্ণনা করেছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন, যেমন মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকের সূরা তাওবার৪০ নং আয়াত শরীফে এরশাদ করেন,
ثانى اثنين اذهما فى الغار اذ يقول لصاحبه لاتحزن ان الله معنا.
অর্থঃ- তিনি ছিলেন দুজাহানের একজন। যখন তাঁরা গুহায় অবস্থান করছিলেন তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, চিন্তা করবেন না নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ পাক আমাদের সাথে রয়েছেন।
            মূলতঃ মহান আল্লাহ্ পাক উল্লিখিত আয়াত শরীফে খলীফাতু রসূলিল্লাহ্ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু-এর তিনটি মর্যাদা বর্ণনা করেছেন, (১) হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু হচ্ছেন- দুজনের দ্বিতীয়। (২) তিনি আখেরী রাসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সাথী বা সঙ্গী। (৩) হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে মহান আল্লাহ্ পাক রয়েছেন।
            আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
افضل الناس بعد الانبياء حضرت ابوبكر الصديق رضى الله عنه.
অর্থঃ- নবী-রাসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পর সর্বশ্রেষ্ঠ বা সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ মানুষ হচ্ছেন- হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু।
            আমীরুল মুমিনীন, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু এত মর্যাদা  ও ফযীলত লাভ করার অন্যতম কারণ হচ্ছে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ তথা সুন্নতসমূহের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করা। আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতের প্রতি তাঁর যে কতটুকু আগ্রহ ও মুহব্বত ছিল নিম্নোক্ত ঘটনাসমূহ থেকেই তা আঁচ করা যায়।
            হাদীস শরীফের ছহীহ্ কিতাব বুখারী শরীফেবর্ণিত রয়েছে, “মুসলিম জাহানের প্রথম খলীফা, খলীফাতু রসূলিল্লাহ্ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু অসুস্থ। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রদিয়াল্লাহু আনহা তাঁর পরিচর্যা করছেন। হঠাৎ তিনি নিজ কন্যা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করলেন, মাগো! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাফন মোবারকের জন্য কুটুকরো কাপড় লেগেছিল? উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রদিয়াল্লাহু আনহা জবাব দিলেন, তিন টুকরো! খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আবূ বকর রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমার জন্যও তিন টুকরো কাপড়ের ব্যবস্থা করো।
            এভাবে রোগ বেড়েই চললো! সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করলেন মাগো! আজ কি বার! উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রদিয়াল্লাহু আনহা উত্তর দিলেন আব্বাজান! আজ সোমবার। কিছুক্ষণ নিরব থাকলেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু। উপরের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবলেন। এরপর স্পষ্ট ভাষায় গভীর আবেগ ও মুহব্বতের সাথে বললেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তেষট্টি বছর বয়সে এবং সোমবারই ইন্তিকাল করেছিলেন। কত ভাল হয় যদি আল্লাহ্ পাক এই সোমবারেই আমার ইন্তিকাল দান করেন। (সুবহানাল্লাহ্)
            অতএব, এ ঘটনা থেকেই অনুমান করা যায় যে, আমীরুল মুমিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু সুন্নতের কতটুকু অনুসরণ-অনুকরণ করতেন এবং সুন্নতের প্রতি তাঁর কতটুকু আগ্রহ ও মুহব্বত ছিল।
            মহান আল্লাহ্ পাক যখন তাঁর হাবীব, আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হিজরতের কথা জানালেন, তখন আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ছাহাবী খলীফাতু রসূলিল্লাহ্ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহুকে ডেকে বললেন, “হে আবূ বকর ছিদ্দিক রদিয়াল্লাহু আনহু! আমাকে মক্কা শরীফ থেকে হিজরত করে মদীনা শরীফ যেতে হবে। আর সেই হিজরতের সময় একমাত্র আপনিই হবেন আমার সঙ্গী। কাজেই আপনি হিজরতের জন্য প্রস্তুত থাকুন। হিজরত করার নির্দেশ এলে আমি আপনাকে জানাবো। এদিকে এ ঘটনার প্রায় ছয়মাস পর মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হিজরত করার নির্দেশ দিলেন। আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ পেয়ে প্রিয় ছাহাবী হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু-এর বাড়ীতে গিয়ে দরজায় একবার মাত্র আওয়াজ করলেন, সাথে সাথে দরজা খুলে গেল এবং হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু হিজরতের যাবতীয় মাল-সামানাসহ আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মুখে দন্ডায়মান। আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশ্চার্যন্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন- হে আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু! আপনি কি করে এত তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিলেন? এবং আপনি কিভাবে জানলেন যে, আজ আমি আসবো, যার ফলে আপনি সমস্ত মাল-আসবাব প্রস্তুত করে রেখেছেন? জবাবে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! গত ছয় মাস পূর্বে আপনি আমাকে ডেকে বলেছিলেন, হিজরতের সময় আমি আপনার সঙ্গী হবো, সেদিন থেকেই আমি হিজরতের যাবতীয় মাল-আসবাব প্রস্তুত করে রেখেছি এবং সেদিন থেকে প্রতি রাতে দরজার সাথে পিঠ লাগিয়ে অপেক্ষা করি যেন আপনি আসার সাথে সাথে দরজা খুলে দিতে পারি। (সুবহানাল্লাহ্)
            এরপর যখন হিজরতের পথে বিশ্রাম নেয়ার উদ্দেশ্যে গারেছুূর বা ছাওর পর্বতের গুহায় প্রবেশ করলেন। প্রবেশ করে দেখলেন সেখানে অনেক ছিদ্র রয়েছে। সে ছিদ্রতে বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছু থাকতে পারে এ আশঙ্কায় হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু নিজ পাগড়ী ও চাদর টুকরো টুকরো করে ছিদ্রের মুখগুলো বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু একটি ছিদ্র বন্ধ করার মত কাপড় অবশিষ্ট রইলো না। তাই হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু নিজ পা মোবারকের গোড়ালী দ্বারা উক্ত ছিদ্রের মুখে চাপ দিয়ে রাখলেন।  এদিকে আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু-এর উক্ত জানুর উপর মাথা মোবারক রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। উল্লিখিত ছিদ্রের ভিতর অবস্থান করছিলো হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর যুগের একটি সাপ। সাপটি আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যিয়ারত লাভ করার উদ্দেশ্যই এখানে অবস্থান করছিল। সাপটি শত চেষ্টা করেও বের হতে না পেরে অপারগ হয়ে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু-এর পায়ে আঘাত করলো। সাথে সাথে বিষের ক্রিয়ায় হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু-এর সমস্ত শরীর নীল বর্ণের হয়ে গেল। বিষের যন্ত্রণায় চোখ দিয়ে দর দর করে পানি পরতে লাগলো। তবুও নিজ পা একটুও নড়াচড়া করলেন না যেন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘুমের কোন ব্যঘাত না হয়। হঠাৎ করে তাঁর চোখের এক ফোটা পানি আখেরী রাসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মোবারকে পড়লো সাথে সাথে তাঁর ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখলেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু-এর সমস্ত শরীর নীল বর্ণের হয়ে গেছে এবং তিনি বিষের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এ অবস্থা দেখে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ মুখ মোবারক থেকে একটু থু থু মোবারক হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু-এর ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আবূ বকর রদিয়াল্লাহু আনহু! আপনার এ অবস্থা হওয়ার সাথে সাথে কেন আমাকে ঘুম থেকে জাগ্রত করলেন না? জবাবে আবূ বকর রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে এবং আপনার সাথে বেয়াদবী হবে ভেবে আমি কোন নড়াচড়া করিনি এবং আপনাকে ঘুম থেকে জাগ্রত করিনি। (সুবহানাল্লাহ্)
            এবার ফিকির করে দেখুন! আখেরী রাসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সুন্নতের প্রতি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু-এর কত দৃঢ় মুহব্বত ছিল। আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সুন্নতের প্রতি এত দৃঢ় মুহব্বতের কারণেই তাঁর ওফাত মোবারকও সুন্নত মোতাবেক হয়েছে। অর্থাৎ আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেরূপ বিদায় নেয়ার পূর্বে খয়বারের জিহাদের সময় খাওয়ানো গোশ্তের সাথে মিশ্রিত বিষের ক্রিয়া অনুভব করেছিলেন এবং এর দ্বারা শাহাদত লাভ করেছিলেন। তদ্রুপ খলীফাতু রসূলিল্লাহ্ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহুকে তাঁর এক গোলাম গোশ্তের সাথে বিষ মিশ্রিত করে খাইয়েছিল তাঁর ইন্তিকালের এক বছর পূর্বে। ইন্তিকালের পূর্বে তিনি সেই বিষের ক্রিয়া অনুভব করেন এবং শাহাদতের মর্যাদা লাভ করে সুন্নত মোতাবেক ইন্তিকাল করেন। (সুবহানাল্লাহ্)
আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু-এর সুন্নত পালনের সেই ঐতিহাসিক ঘটনা
            ইসলামের দ্বিতীয় খলীফায়ে রাশেদ, নবীদের পর দ্বিতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, যাঁর সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক বলেন, اشداء على الكفار.
অর্র্থাৎ- কাফেরদের প্রতি কঠোর।
            আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, الحق ينطق على لسان عمر.
অর্থঃ- স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু-এর জবানে কথা বলেন।
            সেই হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু-এর খেলাফতকালে জেরুজালেম তথা বায়তুল মোকাদ্দাস ইহুদীদের হাত থেকে মুক্ত করেন, মুসলিম সেনাপতি, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবূ উবায়দাহ্ ইবনুল র্জারাহ্ রদিয়াল্লাহু আনহু। বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয়ের পর তিনি আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট এই বলে চিঠি লিখেন যে, বায়তুল মোকাদ্দাস ইহুদী কবল থেকে মুক্ত হয়েছে, তবে তাদের ইচ্ছা- বায়তুল মোকাদ্দাসের চাবি আমীরুল মুমিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীনের হাতে হস্তান্তর করবে। সুতরাং অনুগ্রহ পূর্বক আপনি জেরুজালেমে আসুন।
            চিঠি পেয়ে আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু নিজ সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে জেরুজালেমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। উল্লেখ আছে যে, তখন আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু-এর পরিধানে নতুন কোন বস্ত্র ছিলনা। বরং তাঁর পরিধানে যে বস্ত্রটি ছিল, তম্মধ্যে তের থেকে চৌদ্দটি পট্টি ছিল, তার মধ্যে একটি পট্টি ছিল চামড়ার। জনৈক ব্যক্তি বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার পরিধেয় পট্টিযুক্ত বস্ত্রটি পরিবর্তন করে নিলে ভাল হতো। জবাবে আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
نحن قوم اعزنا الله بالاسلام.
অর্থঃ- আমরা তো এমন সম্প্রদায়, যাদেরকে আল্লাহ্ পাক ইসলামের দ্বারা সম্মাণিত করেছেন।কাজেই আমাকে এরূপ অবস্থায়ই যেতে দাও।
            আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু উক্ত অবস্থাতেই জেরুজালেম গিয়ে পৌঁছলেন। যখন তিনি জেরুজালেম পৌঁছলেন, তখন তিনি ছিলেন উটের লাগাম ধরা অবস্থায় যমীনে, আর তাঁর খাদেম ছিল উটের উপর সাওয়ার অবস্থায়। ইহুদীরা তাওরাত কিতাব খুলে তার বর্ণনার সাথে সব মিলাচ্ছিল। যখন দেখলো- তাওরাত কিতাবের বর্ণনার সাথে সব মিলে যায়, তখন তারা আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট বায়তুল মোকাদ্দাসের চাবি হস্তান্তর করলো।
            চাবি হস্তান্তরের পর ইহুদীরা আরজ করলো- হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি এতদূর থেকে এসেছেন, আপনার সম্মানার্থে আমরা ইসলামী কায়দায় কিছু মেহ্মানদারীর ব্যবস্থা করতে চাই, যদি আপনি সম্মতি প্রকাশ করেন। সম্মতি পেয়ে ইহুদীরা মেহ্মানদারীর ব্যবস্থা করলো।
            আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু সকলকে নিয়ে যথাসময়ে সেখানে উপস্থিত হলেন। তাঁর সম্মুখে চামড়ার (সুন্নতী) দস্তরখানা বিছিয়ে দেয়া হলো এবং তাতে রুটি ও একটি পাত্রে গোশ্ত দেয়া হলো। আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু দস্তরখানা থেকে রুটি নিয়ে গোশ্ত দিয়ে খেলেন, খাওয়া শেষে দস্তরখানায় পড়ে থাকা রুটির টুকরাগুলো টুকিয়ে টুকিয়ে অর্থাৎ দস্তরখানা পরিস্কার করে খাচ্ছিলেন। এটা দেখে জনৈক ব্যক্তি বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এখানে অনেক রাজা-বাদশা, আমীর-ওমরা উপস্থিত, আপনি যদি তাদের সম্মুখে এরূপভাবে রুটির টুকরা টুকিয়ে টুকিয়ে খান, তবে কেমন দেখা যায়? জবাবে আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
ااترك سنة حبيبى لاجل هذه الحمقاء.
অর্থঃ- আমি কি এসকল আহ্মকদের (রাজা-বাদশাদের) জন্য আমার হাবীব (সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নতকে পরিহার করবো।” (সুবহানাল্লাহ্) অর্থাৎ খাওয়ার পর দস্তরখানা বা প্লেট পরিস্কার করে খাওয়া সুন্নতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সে সুন্নত যথাযথ পালন করেছেন। তিনি সব কিছুর উপর সুন্নতকে প্রাধান্য দিয়েছেন বা দিতেন, উক্ত ঐতিহাসিক ঘটনাই তার বাস্তব প্রমাণ।
            হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু হাজরে আসওয়াদকে চুমু দেয়ার সময় বলেছিলেন,
لولا انى رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقبلك ما قبلتك.
অর্থঃ- আমি যদি আখেরী রাসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তোমাকে চুমু দিতে না দেখতাম তবে কখনো তোমাকে চুমু দিতাম না।” (মেশকাত)
            আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু সর্বদা মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে এই বলে দোয়া করতেন,
اللهم ارزقنى شهادة فى سبيلك واجعل موتى فى بلاد رسولك.
অর্থঃ- আয় আল্লাহ্ পাক! আমাকে আপনার রাস্তায় শহীদ হওয়ার তাওফিক দিন এবং আপনার হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শহর মদীনা শরীফে ইন্তিকাল করার তাওফিক দান করুন।
            মহান আল্লাহ্ পাক হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু-এর এই দোয়া কবুল করেছেন। তাই তিনি যেরূপ শাহদত বরণ করেছেন তদ্রুপ মদীনা শরীফে ইন্তিকাল করার মত মহান সৌভাগ্যও লাভ করেছেন। মূলতঃ আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সুন্নতের প্রতি সীমাহীন মুহব্বত থাকার ফলেই তা সম্ভব হয়েছে।
(অসমাপ্ত)

0 Comments: