কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফাযায়েল ও আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ১ নং )


কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফাযায়েল ও আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া  শরীফ


[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা ভিত্তিক একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামাজ ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ নামাজের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর নামাজে বা অন্যান্য সময় কোরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্ নামাজ বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া,  প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করার পর ১৯তম ফতওয়া হিসেবে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফাযায়েল ও আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।]
কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে ইমামাহ্ বা পাগড়ীর ফাযায়েল এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া  দেয়ার কারণ
সুন্নতের মূর্ত প্রতিক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শেরেকী ও বিদ্য়াতের মুলৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক মূখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছুদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লেখাই পত্রস্থ করা হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করনে বিশেষ সহায়ক।
            তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে”- ইমামাহ্ বা পাগড়ী ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার উদ্দেশ্য বা মাকছুদও ঠিক তাই। কারণ অধিকাংশ মুসলমানই পাগড়ীর সঠিক আহ্কাম ও ফযীলত সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। যার ফলে তারা পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে যেরূপ ব্যর্থ, তদ্রুপ পাগড়ীর ন্যায় একখানা গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ দায়েমী সুন্নত পালনেও ব্যর্থ। যা অবশ্যই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেজামন্দী হাছিলের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়।
            স্মরণযোগ্য যে, অনেকেই পাগড়ীর সঠিক আহ্কাম ও ফযীলত না জানার কারণে পাগড়ীকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকে এবং পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিকে ঠাট্টা বা বিদ্রুপ করে থাকে। অথচ এটা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কেননা আক্বাইদের ইমামগণের মতে শুধু পাগড়ী নয় বরং যে কোন সুন্নতের অবজ্ঞাই কুফরীর কারণ। এ প্রসঙ্গে আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “কদু  খাওয়া সুন্নত। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কদু পছন্দ করতেন এবং খেয়েছেন। তাই কেউ যদি বলে যে, আমি কদু খাওয়া পছন্দ করিনা তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেটা পছন্দ করেছেন সেটা সে অপছন্দ করলো।আর তাই আক্বাইদের কিতাবে লিখা হয় যে, اهانة السنة كفر.
অর্থঃ- সুন্নতের অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।
            সুতরাং বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, পাগড়ীর ন্যায় মহান সুন্নতের প্রতি অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল্য করা নিঃসন্দেহে ঈমান হানীর কারণ। অথচ বান্দার ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল কবুলযোগ্য হওয়ার জন্যে প্রধানতম শর্ত হচ্ছে- আক্বীদা শুদ্ধ থাকা অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা। কারণ বিশুদ্ধ আক্বীদা আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত। তাই মহান আল্লাহ্ পাক, পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেন,
والعصر ان الانسان لفى خسر الا الذين امنوا وعملوا الصالحات.
অর্থঃ- আছরের সময়ের কছম! সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে, একমাত্র তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে।” (সূরা আছর)
            উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক মানব জাতির ধ্বংস হতে নাযাত পাওয়ার প্রথম উপায় হিসাবে ঈমান (আক্বীদা)কে আখ্যায়িত করেছেন। অতঃপর আমলের প্রশ্ন। কারণ ঈমানহীন ব্যক্তির নেক আমলের কোন মূল্যই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট নেই। কাজেই বান্দার জন্যে প্রধানতম ফরজ এই যে, সে সর্ব প্রথম তার ঈমান বা আক্বীদাকে বিশুদ্ধ করবে অর্থাৎ ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে, আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা  পোষণ করবে।
            কেননা আক্বীদাগত কারণেই ইসলামে ৭২টি বাতিল ফেরকার আবির্ভাব হয়েছে। যদিও তাদের কথাবার্তা, চাল-চলন, ছূরত-সীরত ইত্যাদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রেই মুসলমানের ন্যায় বা ইসলামসম্মত, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়ে ইসলাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণ বিপরীত আক্বীদা পোষণ করে থাকে, যা সুস্পষ্ট কুফরী। যেমন- ক্বদরিয়া সম্প্রদায়- তারা তক্বদীরকে অবিশ্বাস করে, অথচ তক্বদীরের উপর ঈমান আনা ফরজ।
খারেজী সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা হলো- হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুগণ কাফের(নাউযুবিল্লাহ্), অথচ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুগণের প্রতি সুধারণা পোষণ করা ঈমানের অঙ্গ বা ফরজ।
রাফেজী বা শিয়া সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা মতে শিয়াদের ইমামদের মর্যাদা নবী-রাসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের চেয়েও বেশী, বর্তমান কুরআন শরীফ পরিবর্তীত, হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু ব্যতীত খোলাফা-ই-রাশেদীনের সকলেই মুরতাদ। (নাউযুবিল্লাহ)
মুশাব্বিহা বা মুনাব্বিরা সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা হলো, মহান আল্লাহ্ পাক নূর বা আলোমহান আল্লাহ্ পাক-এর দেহ বা আকার-আকৃতি রয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক উল্লিখিত সকল বিষয় থেকেই সম্পূর্ণ বেনিয়াজ ও পবিত্র।
অনুরূপ বর্তমান যামানার ভয়ঙ্কর ফিৎনা- কাদিয়ানী সম্প্রদায়, তাদের আক্বীদা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী নন, তাঁর পর আরো নবী পৃথিবীতে আসবে, তাই তারা গোলাম কাদিয়ানীকে নবী বলে বিশ্বাস করে, যা অকাট্য কুফরী।
            অথচ তারা প্রত্যেকেই বাহ্যিক দৃষ্টিতে নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাতের কথা বলে, টুপি, কোর্তা, পাগড়ী পরিধান করে। এতকিছুর পরও তারা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মোতাবেক কাফের বা অমুসলিম। কারণ তাদের উপরোক্ত আক্বীদাসমূহ সম্পূর্ণই কুফরী।
আর এদের প্রসঙ্গেই হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
ستفرق امتى على ثلاث وسبعين فرقة كلهم فى النار الا ملة واحدة قيل من هى يارسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما انا عليه واصحابى.
অর্থঃ- অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সকল দল জাহান্নামে যাবে। জিজ্ঞাসা করা হলো- যে দলটি (নাযাত পাবে) সেটা কোন দল? ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে (মত-পথের) উপর আমি আমার সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুগণ রয়েছি, তার উপর যারা থাকবে, তারাই সেই নাযাত প্রাপ্ত দল।” (আহ্মদ, আবু দাউদ, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)
            উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের  যেকোন আমলই করা হোক না কেন এবং যে কেউই করুক না কেন, তা যদি আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করা হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য। আর যদি আক্বীদার মধ্যে কোন ত্রুটি থাকে, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন- খারেজী, রাফেজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি সম্প্রদায় পরিত্যাজ্য ও বাতিল।
            অতএব, প্রতিটি মুসলমানকেই পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে সঠিক বা বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করতে হবে। কোন ভাবেই পাগড়ীকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবেনা।
দ্বিতীয়তঃ অনেকেই অজ্ঞতা হেতু বলে থাকে যে, পাগড়ী পরিধান করা দায়েমী সুন্নত নয় বরং শুধুমাত্র নামাজের মধ্যে পরিধান করলেই চলে। আবার কেউ কেউ সুন্নত স্বীকার করলেও নামাজের মধ্যে পাগড়ী পরিধান করার সুন্নত ও ফযীলতকে অস্বীকার করে থাকে।
            অথচ তাদের উল্লিখিত বক্তব্য শুধু শরীয়ত বিরোধীই নয় বরং মনগড়া, অজ্ঞতামূলক ও বিভ্রান্তিকরও বটে। কারণ পাগড়ী পরিধান করা নামাজের বাইরে ও ভিতরে উভয় অবস্থায়ই সুন্নত ও ফযীলতের কারণ। যেমন, নামাজের বাইরে পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে হাদীস শরীফের সহীহ্ কিতাব শামায়েলে তিরমিযীরহাশিয়ায় উল্লেখ আছে, ان لبس العمامة سنة.
অর্থঃ- নিঃসন্দেহে পাগড়ী পরিধান করা (দায়েমী) সুন্নত।” (হাশিয়ায়ে শামায়েলে তিরমিযী/৮)
আর নামাজের মধ্যে পাগড়ী পরিধান করার ফযীলত সম্পর্কে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে যে,
ان ركعتين مع العمامة افضل من سبعين ركعة بدونها.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই পাগড়ী পরিধান করে দুরাকায়াত নামাজ আদায় করা, পাগড়ী ছাড়া ৭০ রাকায়াত নামাজ আদায় করার চেয়ে অধিক ফযীলতপূর্ণ।” (হাশিয়ায়ে শামায়েলে তিরমিযী/৮)
            পাগড়ীর উল্লিখিত ফযীলত থেকে যেন উম্মত মাহরুম না হয় সে জন্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উম্মতদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে,
فاعتموا فان العمامة سيماء الاسلام وهى الى الحاجز بين المسلمين والمشركين.
অর্থঃ- তোমরা পাগড়ী পরিধান কর। নিশ্চয়ই পাগড়ী ইসলামের নির্দশন এবং তা মুসলমান ও মুশরিকদের মাঝে পার্থক্যকারী।” (যারকানী, উমদাতুল ক্বারী)
            সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো এরশাদ করেন যে,
عليكم بالعمائم فانها سيماء الملئكة.
অর্থঃ- তোমাদের জন্যে পাগড়ী অবধারিত, কেননা তা ফেরেশ্তাগণের নিদর্শন স্বরূপ।” (মেশকাত শরীফ/৩৭৭)
            অতএব, সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পাগড়ী পরিধান করা যেরূপ দায়েমী সুন্নত। তদ্রুপ অশেষ ফযীলত লাভেরও কারণ। নামাজের সময় যেরূপ পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত, নামাজের বাইরেও তদ্রুপ পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত। অর্থাৎ পাগড়ী পরিধান করা হচ্ছে- দায়েমী বা সার্বক্ষণিক সুন্নত।
            এছাড়াও পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগণিত পাঠকের পক্ষ হতে প্রেরিত অসংখ্য চিঠিও পাগড়ী ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া দেয়ার একটি কারণ।
            কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে এরশাদ করেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.
অর্থঃ- যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা নহল/৪৩ ও আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
            অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন আখেরী রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থঃ- যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়,  জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, আহ্মদ, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
            অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ¡া আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।
            কাজেই উপরোক্ত হাদীস শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে এবং বিদ্য়াতীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ যেন পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে কুফরী আক্বীদা পোষণ না করে অর্থাৎ পাগড়ীর ন্যায় মহান সুন্নতকে যেন অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করে এবং তাদের প্ররোচনায় যেন এ মহান সুন্নত ত্যাগ করতঃ অশেষ ফযীলত ও রেজায়ে মাওলা অর্জনে ব্যর্থ না হয় বরং পাগড়ী সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়ে সঠিক ও সহীহ্ আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং পাগড়ীর ন্যায় অশেষ ফযীলতপূর্ণ সুন্নত পালন করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যেই মসিক আল বাইয়্যিনাতেপাগড়ী মোবারক ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া প্রকাশ করা হলো।
            এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
            এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মুহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেশকাত, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
            বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীস শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
            কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “পাগড়ী ও তার  সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্র্কে  সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন  প্রত্যেকেই পাগড়ী সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং সুন্নত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
            মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মুমিন অপর মুমিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে, المؤمن مرأة المؤمن.
অর্থঃ- এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)
            এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত আনছার এবং মোহাজির রদিয়াল্লাহু আনহুগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।এ কথা শুনে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মাআরেফ)
            অতএব, পাগড়ী সম্পর্কিত বিষয়ে যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে রয়েছে, তাদের সে ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত হাদীস শরীফের মেছদাক হওয়াই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে পাগড়ী সম্পর্কিত ফতওয়া প্রকাশ করার মূল কারণ।    
            বস্তুতঃ পাগড়ী পরিধান করা যদিও সুন্নততবে সুন্নতের অনুসরণই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিলের একমাত্র মাধ্যম। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেছেন,
قل انكنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور رحيم.
অর্থঃ- হে হাবীব! (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলুন, যদি তোমরা মহান আল্লাহ্ পাক-এর ভালবাসা চাও তবে আমাকে (আমার সুন্নতকে) অনুসরণ কর তবেই আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের সকল গুণাহ্-খতা ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান/৩১)
            আর উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীসে কুদসীতেএরশাদ হয়েছে,
لايزال العبد يتقرب الى بالنوافل حتى احبه.
অর্থঃ- মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, আমার বান্দারা নফল অর্থাৎ সুন্নত বা মুস্তাহাব আমলের দ্বারা আমার এতটুকু নৈকট্য বা সন্তষ্টি হাছিল করে যে, স্বয়ং আমি আল্লাহ্ পাক তাকে মুহব্বত করি বা ভালবাসি।
            অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, পাগড়ীর আমলের দ্বারা বান্দা অবশ্যই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী লাভ করতে পারবে। কারণ পাগড়ী আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতসমূহের মধ্যে একখানা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও অশেষ ফযীলতপূর্ণ  সুন্নত। তাই পাগড়ী সম্পর্কে বিস্তারিত  আলোচনার পূর্বে সুন্নতের গুরুত্ব ও ফযীলতসম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা করা একান্তই জরুরী। আর তখনই মূলতঃ সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, শরীয়তে পাগড়ীর কতটুকু গুরুত্ব ও ফযীলত রয়েছে এবং পাগড়ী পরিধানকারী ব্যক্তি মহান আল্লাহ্ পাক-এর নিকট কতটুকু প্রিয়।
কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে  সুন্নত পালনের গুরুত্ব তথা পাগড়ী পরিধানের প্রয়োজনীয়তা
            উল্লেখ্য, অনেকে পাগড়ী পরিধানের ব্যাপারে আপত্তি করে বলে থাকে যে, পাগড়ীর সুন্নত পালনের এত কি জরুরত রয়েছে? তারা আরো মন্তব্য করে থাকে যে, পাগড়ীর সুন্নত পালনের উপর জোর দেয়ার কোন দরকার নেই, কারণ এটা সুন্নত মাত্র।
            অথচ কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের অসংখ্য স্থানে সুন্নত পালন করার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক-এর মারিফত-মহব্বত তথা রেজামন্দী হাছিলের প্রধান ও একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সুন্নতে রসূল”-এর পরিপূর্ণ বা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুসরণ-অনুকরণ করা।
            এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ্ পাক যখন মানুষ সৃষ্টি করার কথা ফেরেশ্তাদেরকে জানালেন, ফেরেশ্তারা বললেন,
اتجعل فيها من يفسد فيها ويسفك الدماء ونحن نسبح بحمدك ونقدس لك.
অর্থঃ- আপনি কি এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যারা মারামারি করবে, কাটাকাটি ও রক্ত প্রবাহিত করবে? অথচ আমরা সবসময় আপনার প্রশংসার সাথে তাস্বীহ্-তাহ্লীল পাঠ করছি ও পবিত্রতা বর্ণনা করছি।” (সূরা বাক্বারা/৩০)
            অর্থাৎ যদি তাস্বীহ্-তাহ্লীল ও যিকির-আয্কারের জন্যে হয় তবে তো আমরাই রয়েছি, তাহলে বণী আদম সৃষ্টি করার কি কারণ রয়েছে?
এ কথার জবাবে আল্লাহ্ পাক বললেন,
انى اعلم مالا تعلمون.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই আমি যা জানি, তোমরা তা জাননা।” (সূরা বাক্বারা/৩০)
            অর্থাৎ আমি জমিনে খলীফা কেন পাঠাবো, তা তোমাদের জানা নেই। উক্ত গুপ্তভেদ জানানোর উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ পাক সূরা জারিয়াতের ৫৬নং আয়াত শরীফে বলেন,
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون.
অর্থঃ- আমি জ্বিন ও মানব জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।
            উল্লেখ্য, ইবাদত হলো দুপ্রকার। (১) ইবাদতে জাহেরাহ (২) ইবাদতে বাতেনাহ।
ইবাদতে জাহেরাহ হচ্ছে নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত, মুয়ামেলাত, মুয়াশেরাত ইত্যাদি।
            আর ইবাদতে বাতেনাহ হচ্ছে ইরফানে খোদাওয়ান্দী বা আল্লাহ্ পাক-এর মারিফত, মহব্বত। শুধু ইবাদতে জাহেরাহ করার জন্যে হলে তো ফেরেস্তারাই ছিল।
            মূলতঃ আল্লাহ্ পাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ইবাদতে জাহেরার সাথে সাথে ইবাদতে বাতেনাহ অর্থাৎ ইরফানে খোদাওয়ান্দী বা আল্লাহ্ পাক-এর মহব্বত, মারিফত হাছিল করার জন্যে। এ প্রসঙ্গে তাফসীরে ليعبدون শব্দের ব্যাখ্যায় মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও অনুসরণীয় মুফাস্সিরীনে কিরামগণ বলেন, ليعرفون. অর্থাৎ ইরফানে খোদাওন্দী বা আল্লাহ্ পাক-এর মারিফাত ও মহব্বত হাছিল করার জন্য জ্বিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন।
            আর সেই মহব্বত-মারিফাত হাছিল করা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন,
  قل انكنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور رحيم.
অর্র্থঃ- হে হাবীব, আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহ্ পাককে মুহব্বত কর বা আল্লাহ্ পাক-এর মহব্বত হাছিল করতে চাও, তবে তোমরা আমার অনুসরণ কর। আল্লাহ্ পাক তোমাদের মহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুণাহ্খাতা ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ্ পাক অত্যাধিক ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা ইমরান/৩১)
            উপরোক্ত আয়াত শরীফে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ পাক-এর মহব্বত হাছিল করতে হলে আল্লাহ্র রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করতে হবে।
            কেননা মহান আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন,
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহ্ পাক-এর রসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহ্যাব/২১)
            সুতরাং প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করতে হবে। আর ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ মজুসী-মোশরেকদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা থেকে সম্পূর্ণই বেঁচে থাকতে হবে। কোন বিষয়েই তাদেরকে অনুসরণ করা যাবেনা। কারণ এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে-
عن جابر عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اتاه عمربن الخطاب فقال انانسمع احاديث من يهود تعجبنا افترى ان نكتب بعضها فقال امتهوكون انتم كما تهوكت اليهود والنصارى لقد جئت كم بها بيضاء نقية ولوكان موسى حيا ماوسعه الا اتباعى.
অর্থঃ- হযরত জাবের রদিয়াল্লাহু আনহু, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করে বলেন, একদিন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে এসে বলেন, (ইয়া রাসূলাল্লাহ্) আমরা ইহুদীদের কাছ থেকে আশ্চর্য্যজনক অনেক কথা শুনি, আপনি সেগুলো থেকে কিছু লিখে রাখার অনুমতি দেন কি? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রাহ্মাতুল্লিল আলামীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা কি ইহুদী-নাছারাদের ন্যায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছো? অথচ আমি তোমাদের জন্য স্পষ্ট ও পরিপূর্ণ দ্বীন নিয়ে এসেছি। যদি হযরত মুসা (আঃ) জীবিত থাকতেন, তবে তাঁকেও আমার ইত্তেবা বা অনুসরণ করতে হতো।” (আহ্মদ, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)
            আর তাই মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে বান্দাদেরকে নির্দেশ দিয়ে বলেন,
 وما اتاكم الرسول فخذوه ومانهاكم عنه فانتهوا واتقوا الله ان الله شديد العقاب.
অর্থঃ- রাসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে যা আদেশ করেন তা পালন কর, আর তোমাদেরকে যা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন, তা থেকে বিরত থাকো। আর আল্লাহ্ পাককে ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর/২১)
            আর হাদীস শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
لايؤمن احدكم حتى يكون هواه تبعا لماجئت به.
অর্থঃ- তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিনে কামেল হতে পারবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তার নফ্স, আমি যে আদর্শ এনেছি তার অনুগত না হবে।” (শরহুস্ সুন্নাহ্, আরবাঈন, কিতাবুল হুজ্জাহ্, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাযীহ্)
            উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দ্বীন বা আদর্শ আমাদের জন্য এনেছেন, তার মূলই হচ্ছে- কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ। মূলতঃ হাদীস শরীফ বা সুন্নাহ্ সমূহ যেরূপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শ। তদ্রুপ কুরআন শরীফের সম্পূর্ণটাই তাঁর অনুপম আদর্শ। যেমন- এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, একবার কিছু সংখ্যক হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহু হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চরিত্র বা আদর্শ মোবারক কিরূপ ছিল? জবাবে উম্মুল মুমিনীন, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “কেন তোমরা কি কুরআন শরীফ পাঠ করনি ?” كان خلقه القران.
            মূলতঃ সমগ্র কুরআন শরীফই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চরিত্র বা আদর্শ মোবারক।
            আর তাই আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্বের সময়, আরাফাতের ময়দানে লক্ষ, লক্ষ সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুগণের উপস্থিতিতে বলেন, হযরত মালেক বিন আনাস রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
تركت فيكم امرين لن تضلوا ماتمسكتم بهما كتاب الله وسنتى.
অর্থঃ- আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে গেলাম, যতদিন তোমরা এ দুটি জিনিস আঁকড়িয়ে থাকবে, ততদিন তোমরা গোমরাহ্ হবেনা। একটি হলো- আল্লাহ্ পাক-এর কিতাব, আর দ্বিতীয়টি হলো- আমার সুন্নত।” (মুয়াত্তায়ে মালেক, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)
            অতএব, প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ্ পাক-এর কিতাব কুরআন শরীফকেঅনুসরণ-অনুকরণ করা যেরূপ সকলের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য, তদ্রুপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস শরীফ তথা সুন্নাহ্কে অনুসরণ-অনুকরণ করাও সকলের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য।
            কাজেই সুন্নত বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কুরআন শরীফকে অনুসরণ করলে যেরূপ হিদায়েতের উপর কায়েম থাকা সম্ভব নয়, তদ্রুপ কুরআন শরীফকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সুন্নত অনুসরণ করলেও হিদায়েতের উপর থাকা সম্ভব নয়। বরং কুরআন ও সুন্নাহ্ উভয়কেই অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। অথচ কিছু সংখ্যক লোক রয়েছে, যারা শুধুমাত্র কুরআন শরীফকেই গুরুত্ব দেয় বা অনুসরণ-অনুকরণ করে কিন্তু হাদীস শরীফ বা সুন্নতকে গুরুত্ব দেয়না এবং অনুসরণ-অনুকরণ করেনা। মূলতঃ এরা বাতিল ও জাহান্নামী ফেরকাহ- কোরআনিয়াফেরকাহ্র অন্তর্ভূক্ত। এদের সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে কঠোর হুশিয়ার বাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। 
            যেমন আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন বলেন,
فليحذر الذين يخالفون عن امره ان تصيبهم فتنة اويصيبهم عذاب اليم.
অর্থঃ- সুতরাং যারা তাঁর (রাসূলের) আদেশের বিরোধীতা করে, তাদের ভয় করা উচিত যে, তাদের উপর এসে পড়বে কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা নূর/৬৩)
আর এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
عن ابى رافع لا الفئن احدكم متكئا على اريكته ياتيه الامر من امرى مما امرت به او نهيت عنه فيقول لا ادرى ماوجدنا فى كتاب الله اتبعناه.
অর্থঃ- হযরত আবু রাফে রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত- রাসূলে মকবুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি তোমাদের কাউকে যেন এরূপ না দেখি যে, সে তার গদীতে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে। আর তার নিকট আমার আদেশাবলীর কোন একটি আদেশ পৌঁছাল, যাতে আমি কোন বিষয়ে আদেশ বা নিষেধ করেছি। তখন সে বলবে, আমি এসব কিছু জানিনা, আল্লাহ্র কিতাবে যা পাবো, তাই অনুসরণ করবো।” (তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্, আহ্মদ, বায়হাক্বী, মেশকাত, মায়ারেফুস্ সুনান)
            হাদীস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে,
عن العرباض بن سارية قام رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال ايحسب احدكم متكئا على اريكته يظن ان الله لم يحرم شيئا الا مافى هذا القران الا وانى والله قد امرت و وعظت ونهيت عن اشياء انها لمثل القران.
অর্থঃ- হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার গদীতে ঠেস দিয়ে একথা মনে কর যে, আল্লাহ্ পাক যা এ কুরআন শরীফে অবতীর্ণ করেছেন, তা ব্যতীত তিনি আর কিছুই হারাম করেননি? তোমরা জেনে রাখ, আমি খোদার কছম করে বলছি- নিশ্চয় আমি তোমাদের অনেক বিষয়ে আদেশ দিয়েছি, উপদেশ দিয়েছি এবং নিষেধও করেছি, আমার এরূপ বিষয়ও নিশ্চয়ই কুরআন শরীফের বিষয়ের ন্যায়।” (আবূ দাউদ, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)
            উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টই বুঝা গেল যে, কুরআন শরীফকে অনুসরণ ও বিশ্বাস করা যেরূপ ফরজ, তদ্রুপ হাদীস শরীফ তথা সুন্নতের প্রতি বিশ্বাস রাখা ও অনুসরণ-অনুকরণ করাও ফরজ। কেননা হাদীস শরীফ কুরআন শরীফের মতই ওহীর অন্তর্ভূক্ত। কুরআন শরীফ যেরূপ আল্লাহ্ পাক-এর কালাম, হাদীস শরীফও তদ্রুপ আল্লাহ্ পাক-এর কালাম। অর্থাৎ কুরআন শরীফ হচ্ছে- ওহীয়ে মাত্লু। আর হাদীস শরীফ হচ্ছে ওহীয়ে গায়রে মাত্লু। কারণ মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেন,
وما ينطق عن الهواء ان هو الاوحى يوحى.
অর্থঃ- তিনি (সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহী ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথাই বলেন না।
            এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু, একদিন একটি বোর্ড বা কাগজের মধ্যে কিছু হাদীস শরীফ লিখে দেয়ালে ঝুলিয়ে দেন। লেখাগুলোর হেডিং ছিল- আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ।
            জনৈক ব্যক্তি লেখাগুলো পাঠ করে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু-এর দরবার শরীফে আসলো এবং বললো, হে আমীরুল মুমিনীন! শিরোণামে লেখা হয়েছে- আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশঅথচ সেখানে হাদীস শরীফ স্থান পেয়েছে। হাদীস শরীফও কি আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ? জবাবে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “হে ব্যক্তি! তুমি কি কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করেছো?” সে ব্যক্তি বললো- হুজুর বেয়াদবী মাফ করবেন, আমি একজন কুরআনে হাফেজ। জবাবে হযরত ওমর ইবনুর খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “তুমি কি কুরআন শরীফের সেই আয়াত শরীফখানা তিলাওয়াত করনি?” যেখানে আল্লাহ্ পাক বলেন,
وما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا واتقوالله ان الله شديد العقاب.
অর্থঃ- রাসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের যা আদেশ করেন, তা আঁকড়িয়ে ধর। আর যার থেকে বিরত থাকতে বলেন, তার থেকে বিরত থাক। আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর/২১)
            এ আয়াত শরীফ শুনে সে ব্যক্তি বললো- হে আমীরুল মুমিনীন! এখন আমি বুঝতে পেরেছি। অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ পালন করা আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ পালন করারই নামান্তর।
            আর তাই হাম্বলী মায্হাবের ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতা, ইমামুল মুহাদ্দেসীন, ফখরুল ফুক্বাহা হযরত ইমাম আহ্মদ বিন হাম্বল (রঃ) উক্ত আয়াত শরীফের ভিত্তিতে ফতওয়া দিয়েছেন যে, “সমস্ত সুন্নতগুলোই পালন করা ফরজ।
            অতএব, স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, সুন্নতের গুরুত্ব অপরিসীম। অর্থাৎ হিদায়েত বা দ্বীনের উপর থাকতে হলে, প্রতিক্ষেত্রে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুক্ষ্ম অনুসরণ-অনুকরণ করা অবশ্য কর্তব্য।
            উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত পালন করার দ্বারাই যে, হক্ব মত হক্ব পথে কায়েম থাকা এবং বিদ্য়াত-বেশরা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব, নিম্নোক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা তা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়। যেমন হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
عن عرباض بن سارية قال صلى بنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يوم ثم اقبل علينا بوجهه فوعظنا موعظة بليغة ذرقت منها العيون ووجلت منها القلوب فقال رجل يا رسول الله! كان هذه موعظة مؤدع فاوصينا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اوصيكم بتقوى الله والسمع والطاعة وان كان عبدا حبشيا فانه من يعش منكم بعدى فسيرى اختلافا كثيرا فعليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوابها وعضوا عليها بالنواجذ ........
অর্থঃ- হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমাদের সাথে নামাজ আদায় করলেন, নামাজ শেষে মর্মস্পর্ষী ওয়াজ করলেন, যদ্দরুণ চক্ষু হতে পানি নির্গত হলো, অন্তরগুলো কেঁপে উঠলো। এক ব্যক্তি (দাঁড়িয়ে) বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার এ ওয়াজ কোন বিদায়ী ব্যক্তির ওয়াজের ন্যায় মনে হচ্ছে। সুতরাং আমাদেরকে (আরো) উপদেশ দান করুন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি- আল্লাহ্ পাককে ভয় করার ব্যাপারে, আর তোমাদের নেতা (খলীফা) যদি হাবশী কৃতদাসও হয়, তার কথা শ্রবণ করবে এবং তাকে অনুসরণ করবে। আর নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য হতে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। সুতরাং তখন তোমাদের উপর আমার সুন্নত ও আমার হিদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফাগণের সুন্নত অনুসরণ-অনুকরণ করা সর্বোতভাবে ওয়াজিব। তোমরা উক্ত সুন্নতকে মাড়ীর দাঁত দিয়ে মজবুত করে আঁকড়িয়ে ধর।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, আহ্মদ, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)
            হাদীস শরীফের উক্ত আলোচনা দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, ফিৎনা-ফাসাদ, মতভেদ-মতবিরোধ ও বাতিল পন্থীদের বাতিল মতবাদ থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করার একটাই মাধ্যম, আর তা হচ্ছে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুগণের মত ও পথকে তথা সুন্নাহ্কে পরিপূর্ণভাবে আঁকড়িয়ে ধরা। আর তাই আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
ستفترق امتى على ثلاث وسبعين فرقة كلهم فى النار الاملة واحدة قالوا من هى يا رسول الله قال ما انا عليه واصحابى.
অর্থঃ- অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সবগুলো দল জাহান্নামে যাবে। হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নাযাতপ্রাপ্ত দল কোনটি? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি ও আমার সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুগণের মত পথ তথা সুন্নাহ্র উপর যারা প্রতিষ্ঠিত।” (আহ্মদ, আবূ দাউদ, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)
            সুতরাং নাযাতপ্রাপ্ত বা জান্নাতী তারাই, যারা ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করে। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করার অর্থই হচ্ছে তাঁর রেসালতকে স্বীকার করে নেয়া। আর তার ব্যতিক্রম করার অর্থ হচ্ছে রেসালতকে অস্বীকার করা। যার ফলে হাদীস শরীফে স্পষ্টভাবে এরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل امتى يدخلون الجنة الامن ابى قيل ومن ابى قال من اطاعنى دخل الجنة ومن عصانى فقد ابى.
অর্থঃ- হযরত আবু হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে যাবে, তবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে আমাকে অস্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসা করা হলো- ইয়া রাসূলাল্লাহ্! কে আপনাকে অস্বীকার করেছে? জবাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে অনুসরণ করেছে, সে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে। আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করেছে (আমাকে অনুসরণ করেনি), সে ব্যক্তিই আমাকে অস্বীকার করেছে।” (বোখারী, মেশকাত, ফাতহুলবারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে কিরমানী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)
            অতএব, কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, বান্দা তখনই জান্নাত তথা মহান আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী লাভ করতে পারবে, যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত সমূহের পরিপূর্ণ অনুসরণ করবে। আর এটাই মূলতঃ বান্দার জন্য সবচেয়ে বিরাট সফলতা। তাই মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে  এরশাদ করেন,
من يطع الله ورسوله فقد فازفوزا عظيما.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূলকে অনুসরণ করলো, সে ব্যক্তি বিরাট সফলতা অর্জন করলো।” (সূরা আহ্যাব/৭১)
            তবে প্রশ্ন হলো- সুন্নতের কতটুকু এবং কিরূপ অনুসরণ করতে হবে? মূলতঃ মাথার তালু হতে পায়ের তলা, হায়াত হতে মউত পর্যন্ত, প্রতিটি ক্ষেত্রে ও প্রতিটি বিষয়ে আখেরী রাসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হুবহু অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। কোন বিষয়ই যেমন বাড়ানো যাবেনা, তদ্রুপ কমানোও যাবেনা। যেমন- এ প্রসঙ্গে  মহান আল্লাহ্ পাক  কালামে পাকে এরশাদ করেন,
يا ايها الذين امنوا لاتحرموا طيبات ما احل الله لكم ولا تعتدوا ان الله لا يحب المعتدين.
অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্ পাক তোমাদের জন্যে পবিত্র বস্তু হতে যা হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করোনা। আর সীমালঙ্ঘন করোনা। কেননা নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক সীমালঙ্গনকারীকে ভালবাসেন না।
            উপরোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয় যে, আফদালুন্ নাস্ বাদাল আম্বিয়া, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রদিয়াল্লাহু আনহু, আসাদুল্লাহ্ হযরত আলী কাররমাল্লাহু ওযাজহাহু রদিয়াল্লাহু আনহু, ফক্বীহুল উমাম, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদিয়াল্লাহু আনহু, উনারা তিনজন একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুজুরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমরা মনস্থির করেছি যে, আজ থেকে চট পরিধান করবো, গোশ্ত খাবোনা ইত্যাদি বলতে লাগলেন। একথা শুনে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ করে রইলেন, কারণ, وما ينطق عن الهواء ان هو الا وحى يوحى.
অর্থঃ- আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, ওহী ব্যতীত কোন কথাই বলেন না।
            আর তখনই আল্লাহ্ পাক উক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করেন যে, “হে ঈমানদারগণআল্লাহ্ পাক তোমাদের জন্যে পবিত্র বস্তু হতে যা হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করোনা, আর সীমালঙ্গন করোনা। কেননা নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক সীমালঙ্গণকারীকে ভালবাসেন না।
আর এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
وعن انس قال جاء ثلاثة رهط اليى ازواج النبى صلى الله عليه وسلم. يسئلون عن عبادة النبى صلى الله عليه وسلم. فلما اخبروا بها كانهم تقالوها. فقالوا اين نحن من النبى صلى الله عليه وسلم وقد غفر الله له ماتقدم من ذنبه وماتأخر فقال احدهم اما انا فاصلى الليل ابدا وقال الاخر انا اصوم الدهر ولا افطر وقال الاخر انا اعتزل النساء فلا اتزوج ابدا فجاء النبى صلى الله عليه وسلم اليهم فقال انتم الذين قلتم كذا وكذا؟ اما والله انى لاخشاكم لله واتقاكم له لكنى اصوم وافطر واصلى وارقد واتزوج النساء فقال النبى صلى الله عليه وسلم فمن رغب عن سنتى فليس منى.
অর্থঃ- হযরত আনাস ইবনে মালিক রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন তিনজন সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহু আসলেন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন রদিয়াল্লাহু আনহুগণের কাছে, আল্লাহ্ পাক-এর রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইবাদত বা আমল সম্পর্কে জানার জন্যে।
            যখন তাঁদেরকে আল্লাহ্ পাক-এর রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইবাদত বা আমল সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হলো, তখন তাঁরা ইবাদতগুলোকে (নিজেদের জন্য) কম মনে করলেন এবং তাঁরা বললেন, আল্লাহ্ পাক-এর রাসূলের তুলনায় আমরা কোথায়? কারণ আল্লাহ্ পাক-এর রাসূলের পূর্বের এবং পরের সমস্ত কিছু ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। (সে কারণে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য কম ইবাদত করলেও চলবে কিন্তু আমাদেরকে এর চাইতে বেশী ইবাদত করতে হবে এরূপ চিন্তা করে) তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, আমি সারা রাত্রি নামাজ পড়বো, কখনো ঘুমাবো না। আরেকজন বললেন, আমি সারা জীবন রোজা রাখবো, কখনো রোজা ভঙ্গ করবো না। আরেকজন বললেন, আমি সারা জীবন স্ত্রীর থেকে দূরে থাকবো। কখনো বিয়ে-শাদী করবো না। এমন সময় আল্লাহ্ পাক-এর রাসূল,  হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের কাছে এসে বললেন,  তোমরা কি সেই লোক, যারা একথা বলেছ যে, সারা রাত্র নামাজ পড়বো, সারা জীবন রোজা রাখবো, আর স্ত্রীর কাছে যাবনা, বিয়ে-শাদী করবো না।
            আল্লাহ্ পাক-এর রাসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সাবধান! তোমরা সতর্ক হয়ে যাও। আমি আল্লাহ্ পাককে তোমাদের চেয়ে বেশী ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে বেশী মোত্তাকী, তথাপি আমি নামাজ পড়ি, ঘুমাই, রোজা রাখি, রোজা ভঙ্গ করি, স্ত্রীর কাছে যাই। (বিয়ে-শাদী করেছি)
            আল্লাহ্ পাক-এর রাসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যে আমার সুন্নতের খেলাফ করবে, সে আমার উম্মত থেকে খারিজ হয়ে যাবে।” (বোখারী, মুসলিম, মেশকাত, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে কেরমানী, শরহে নববী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, তালীকুছ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)
            উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ্র রাসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রতিক্ষেত্রে অর্থাৎ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ইত্যাদি সকল অবস্থাতেই হুবহু অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। কোন প্রকার ইফরাত ও তাফরীত (কম-বেশী) করা যাবেনা।
            কুরআন ও সুন্নাহ্র উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেজামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভ করতে হলে, সুন্নতের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং হুবহু অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। পাগড়ীর ব্যাপার বলে তাকে হাল্কাভাবে গ্রহণ করা যাবেনা অথবা ছেড়ে দেয়া যাবেনা, কারণ সুন্নতের খেলাফ আমল করে কখনোই মহান আল্লাহ্ পাক-এর মারিফত মহব্বত তথা রেজামন্দী অর্জন করা সম্ভব নয়।
            বরং সুন্নতের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ও পুক্ষ্মানুপুক্ষ্ম এবং হুবহু অনুসরণ-অনুকরণ করার মাধ্যমেই মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দি হাছিল করা সম্ভব। যেমনটি হাছিল করেছিলেন হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুগণ। যেহেতু তাঁরা পরিপূর্ণভাবেই সুন্নতের অনুসরণ করেছেন।
(অসমাপ্ত)

0 Comments: