“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-১০)


পিডিএফ-

“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-১০)


হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে ফজর  নামাযে কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লেখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই।
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে সূরা মায়িদার৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,

لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.

অর্থঃ-তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।
মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল  বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ শিয়া, খারিজী, মুতাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ওহাবী সম্প্রদায়
উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ছূরা কুনূতে নাযেলাসম্পর্কেও সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের প্রতি বদ্ দোয়াকরার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও মুছল্লীদেরকে প্রতি ফজর নামাযে’ ‘কুনূতে নাযেলাপাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্যে তারা ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলাপাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।অথচ কুনূতে নাযেলাসম্পর্কিত ফতওয়ায়ে দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খ-ন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে সাধারণ লোক মনে করবে হানাফী মাযহাব মতে বোধ হয় ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।অথচ শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম করেছে সেটাকে জায়িয বা হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করার কারণে একটি ফরয আমল নামাযঅনায়াসে ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে। 
অথচ নামায হচ্ছে, দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায তরক করা, ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে অবহেলা করা, খুশু-খুযূর সাথে নামায আদায় না করা, হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ। যেমন মিশকাত শরীফ”-এর কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাযায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,

عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.

অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়।
আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

من ترك الصلوة حتى مضى وقتها ثم قضى عذاب فى النار حقبا والحقبة ثمانون سنة والسنة ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان مقداره الف سنة.

অর্থঃ- যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, এমনকি নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে জাহান্নামে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হোক্বা হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের সমান।” (মাজালিসুল আবরার, আল্ মানাসিক) 
হাদীছ শরীফের বর্ণনা মুতাবিক হোক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর * ৩৬০ দিন = ২৮৮০০ দিন * ১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।)
অতএব, এক হোক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর। উল্লেখ্য, ক্বাযা নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে আদায় করেছে। ফরয নামায যথা সময় আদায় না করার কারণেই তাকে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দিবেন। অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায় করলেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি বা রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায় করবেনা আর তওবাও করবে না, তাদের যে কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা ফউত হবার পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হোক্বা তথা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি ভোগ করতে হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায় না করলে কত কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
মূলকথা, যারাই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয ফতওয়া দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ করে দেয়ার মাধ্যমে লানত বা কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে কায্যাব ও উলামায়ে ছূরা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রই সর্বদা করে যাচ্ছে।
কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে যেন সাধারণ মুসলমানগণ নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল ফতওয়া দিচ্ছে তারাও যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে তওবা করে হক্বের উপর ফিরে আসতে পারে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপ্রকাশ করা হলো।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
পূর্ববর্তী আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সত্তর জন বুযূর্গ ও ক্বারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম নির্মমভাবে শহীদ হওয়ার কারণে শহীদকারী রি, য্কাওয়ান, আছিয়্যাহ ও লিহ্ইয়ান গোত্রগুলোর প্রতি বদ্দোয়াকরার লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস কুনূতে নাযেলাপাঠ করেন। এটাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রথম ও শেষ কুনূতে নাযেলাপাঠ। অর্থাৎ এর পূর্বে ও পরে আর কখনই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। কারণ, একমাস কুনূতে নাযেলাপাঠ করার পর তা মানসূখহয়ে যায়।
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

لم يقنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولابعده.

অর্থঃ- আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেছেন। অতঃপর তা পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে ও পরে কখনই তিনি ফজরের নামাযে কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” (উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৩য় জিঃ ১৮১ পৃষ্ঠা, আইনী শরহে হিদায়াহ ২য় খ- ৫৯০ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল ক্বারীকিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ان الله عزوجل نسخ ذالك حين انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم "ليس لك من الأمر شئ .... الخ، فصار ذالك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا.

অর্থঃ- হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মতে, যখন আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর
ليس لك من الامر شئ.

এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।এ আয়াত শরীফ নাযিল করেন তখন থেকেই (ফজরে কুনূত) পাঠ করা মানসূখহয়ে যায়।
আর মানসূখহয়ে যাওয়ার কারণেই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সময়ে বহু যুদ্ধ-জিহাদ ও বালা-মুছীবত সত্ত্বেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলাপাঠ করাকে বিদ্য়াত বলে মন্তব্য করেছেন। 
যেমন এ প্রসঙ্গে মিশকাত শরীফের১১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وعن ابى مالك الاشجعى قال قلت لابى يا ابت انك قد صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر وعثمان وعلى ههنا بالكوفة نحوا من خمس سنين اكانوا يقنتون قال اى بنى محدث.

অর্থঃ- হযরত আবূ মালিক আল্ আশজায়ী (তাবিয়ী) রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে একবার বললাম, হে আমার পিতা! আপনি তো স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে, হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং এখানে কুফায় প্রায় পাঁচ বৎসরকাল পর্যন্ত হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে জামায়াতে নামায আদায় করেছেন, তাঁরা কি কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন? তিনি উত্তরে বললেন, হে আমার প্রিয় বৎস্য! (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।” (ইবনে মাজাহ ৮৯ পৃষ্ঠা, ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ খন্ড)
শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে তাবিয়ীন, তাবেতাবিয়ীন তথা ইমাম-মুজতাহিদগণও কখনো ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি বরং ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে বিদ্য়াত, নাজায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন, “মায়ারিফুস সুনান”-এর ৪র্থ খ-, ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وقال ابو حنيفة لا قنوت فيه واليه ذهب ابو يوسف ومحمد بن الحسن وسائر احابه وابن المبارك والليث بن سعد وسفيان الثورى واحمد واسحاق ويحى بن يحى الاندلسى وذهب اليه من التابعين الاسود والشعبى وسعيد بن جبير وعمرو بن ميمون وابراهيم النخعى وطاؤس والزهرى.

অর্থঃ- হযরত ইমাম আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজরের  নামাযে কোন কুনূতই পাঠ করা যাবেনা। এ মতের উপর হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরতুল আল্লামা মুহম্মদ ইবনে হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমামে আযম, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সকল অনুসরণীয় আছহাবগণের মতে যেমন হযরত ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত লাইছ ইবনে সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আন্দুলুসী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবেনা। অনুরূপভাবে তাবিয়ীনগণের মধ্যে হযরত ইমাম আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম শাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর ইবনে মাইমুনঞ্জরহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইব্রাহীম আন্নাখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কোন প্রকার কুনূত পাঠ করা যাবেনা।
এর উপর ভিত্তি করেই আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম-মুজতাহিদ তথা ইমামে আযম হযরত আবু হানীফা রহমুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকে হানাফী মাযহাবের সকল বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে মানসূখ, নাজায়িয ও বিদ্য়াত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যার বহু প্রমাণ পূর্ববর্তীু সংখ্যায় দেয়া হয়েছে।
তবে হ্যাঁ, শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে ফজর নামাযঞ্জএবং অন্যান্য নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয।
হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে কুনূতে নাযেলাকে জায়িয বলেছেন। যা আমাদের হানাফীদের নিকট বিশুদ্ধ বর্ণনা নয়। আর হানাফীগণের দলীল হচ্ছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ। অর্থাৎ শাফিয়ী মাযহাব মতে ফজর নামাযসহ সকল নামাযেই কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয। আর হানাফীদের মতে অন্যান্য নামাযে তো নয়ই বরং ফজর নামাযেও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই।
কাজেই হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়ে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার অর্থই হচ্ছে, শাফিয়ী মাযহাবের মতকে অনুসরণ করা যা মোটেও শরীয়ত সম্মত নয় বরং সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয। যেমন এ প্রসঙ্গে তাফসীরে আহমদিয়া”-এর ৩৪৩/৩৪৪ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে,

فيكون كل من المذاهب الاربعة حقا بهذا المعنى فالمقلد اذا قلد اى مجتهد يخرج عن الوجوب ولكن ينبغى ان يقلد احدا التزامه والايؤل الى اخر.

অর্থঃ- যখন চার মাযহাবের প্রত্যেকটিই হক্ব হিসেবে সাব্যস্ত হলো, তাই এ অর্থে মুকাল্লিদের জন্য যে কোন একটি মাযহাবের ইমামকে অনুসরণ করাও ওয়াজিব। অতএব, যে ব্যক্তি কোন এক মাযহাবের ইমামকে অনুসরণ করবে সে শুধু সেটাই আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। অন্য কোন মাযহাবের অনুসরণ করবে না।
এ প্রসঙ্গে তাফসীরে আহমদিয়াকিতাবের ৩৪৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে যে,

واما الثانى وهو انه اذا التزم الطبعية يجب عليه ان يدوم على مذهب التزامه ولا ينتقل الى مذهب اخر.

অর্থঃ- দ্বিতীয়তঃ কোনও মাযহাবকে প্রকৃতভাবে গ্রহণ করলে দায়িমীভাবে সে মাযহাবেরই অনুসরণ করা ওয়াজিব। তাই এক মাযহাব পরিবর্তন করে অন্য মাযহাব গ্রহণ করা যাবেনা তথা হারাম।
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠলো যে, হানাফীদের জন্য শাফিয়ী বা অন্যান্য মাযহাবের মাসয়ালার উপর আমল করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। যেহেতু কুনূতে নাযেলা পাঠ করা শাফিয়ী মাযহাবে জায়িয, কিন্তু তা হানাফী মাযহাবে হারাম বিদয়াত ও নাজায়িয। তাই হানাফীদের জন্য কুনূতে নাযেলা পাঠ করাও হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।
হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করলে  অবশ্যই নামায ফাসিদ হবে
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
স্মর্তব্য যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরবের কয়েকটি গোত্রের প্রতি বদদোয়ায় কেবলমাত্র একমাস ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন। অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে এবং পরে আর কখনই তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এমনকি ওফাত মুবারক পর্যন্ত। যার ফলে কুনূতে নাযেলার আমল মানসূখহয়ে যায়। আর  মানসূখহয়ে যাওয়া কোন আমল নামাযে সম্পাদন করলে যে নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যায় তাতে কারোই দ্বিমত নেই। তার কিছু প্রমাণ গত সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে তার আরো কিছু প্রমাণ উল্লেখ করা হলো-
ইসলামের প্রথম যুগে নামাযের মধ্যে কথা-বার্তা বলা, সালাম দেয়া ইত্যাদি সবই বৈধ ছিল পরবর্তীতে কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা নামাযে কথা বলার আমল নিষিদ্ধ বা মানসূখহয়ে যায়। ফলে এখন নামাযের মধ্যে কথা বললে হানাফী মাযহাব মতে তার নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।
সুতরাং মানসূখহয়ে যাওয়ার কারণে নামাযে কথা বললে যেরূপ নামায ফাসিদ হয়ে যায়; ঠিক তদ্রুপ মানসূখহয়ে যাওয়ার কারণে নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করলেও নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে মায়ারিফুস সুনান৪র্থ খ-ের ১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬৩৪]

ان قنوت النازلة نسخ فلا يؤخذ به.

অর্থঃ- নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়েছে। অতএব মানসুখ বিধানের উপর আমল করা বৈধ নয়।
প্রমানিত হলো যে, কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়ে যাওয়ার কারণে নামাযের কোন আমল বা তার সাথে সংশ্লিষ্ট কোন অংশ নয়। তাই নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার অর্থই হবে আমলে কাছীর করা তথা নামাযে কথা বলার শামীল। আর ফিক্বাহ এর কিতাবে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, যা নামাযের আমলও নয় এবং যা নামাযের সাথে সংশ্লিষ্টও নয় এমন আমল করলে নামায ফাসিদ হবে।
যেমন ফতওয়ায়ে আলমগীরীকিতাবের ১ম খ- ১৩৬ এবং ১৩৭ পৃষ্ঠায় কাযীখানেরইবারতে উল্লেখ আছে,
[৬৩৫]

وان اراد به تعليم ذلك الرجل تفسد صلاته لانه ليس من اعمال الصلاة.

অর্থঃ- কোন ব্যক্তি যদি নামাযের মধ্যে থেকে অন্য কোন ব্যক্তিকে শিক্ষ দেয়ার উদ্দেশ্যে কোন আমল করে তাহলে ঐ ব্যক্তির নামায ফাসিদ হয়ে যাবে। কেননা (তালীম দেয়া) সেটা নামাযের মধ্যকার কোন আমল নয়।অতএব বুঝা গেলো যা নামাযের মধ্যকার আমল নয়, তা নামাযে করলে নামায ফাসিদ হবে।
আল হিদায়া মায়াদ দিরায়া”-এর ১ম খ-ের ১৩৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬৩৬]

ان فى الصلاة شغلا واحتج من لم ير الكلام مفسدا.

অর্থঃ- কোন ব্যক্তি যদি নামাযরত অবস্থায় এমন কথাবার্তা বলে যা নামাযে বলা জায়িয নেই। তাতেও নামায ফাসিদ হবে।
তাফসীরে কুরতুবী”-এর ২য় খ-ের ২১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬৩৭]

وهذا قول ابى حنيفة واصحابه والثورى فانهم ذهبوا الى ان الكلام فى الصلاة يفسدها.

অর্থঃ- ইমামে আযম, হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও তাঁর মাযহাবের অনুসরনীয় ইমামগণের মতে এবং হযরত সুফীয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ তাঁদের সকলের মতে নামাযে কথা বলাতে নামায ফাসিদ হবে।
উক্ত কিতাবের ২১৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করা হয়,
[৬৩৮]

وذكر الخرقى عنه ان مذهبه فيمن تكلم عامدا اوساهيا بطلت صلاته.

অর্থঃ- হযরত ইমাম খিরাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই তার মতে নামাযে কোন ব্যক্তি ইচ্ছা করে কিংবা ভূল করে কথা বললে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে।
ফতওয়ায়ে আলমগীরীকিতাবের ১ম খ-ের ৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬৩৯-৬৪৭]

المفسد للصلاة نوعان قول وفعل (النوع الاول فى القول) اذا تكلم فى صلاته .... او عامداخاطئا او قاصدا قليلا او كثيرا تكلم لا اصلاح صلاته عندنا اى ابى حنيفة.

অর্থঃ- দুপ্রকারে নামায ফাসিদ হয়ে থাকে একটি কথা বলাতে অপরটি হলো (নামাযের বাহিরের) কাজের মাধ্যমে। প্রথম প্রকার হচ্ছে যেটা কথা বলার মাধ্যমে নামায ফাসিদ হয়। তাহল ভূলক্রমে অথবা সে ইচ্ছায় ভুল করে কম কথা বলুক কিংবা বেশি কথা বলুক তার নামায শুদ্ধ হবেনা বরং ফাসিদ হবে। এটাই আমাদের হানাফী মাযহাবের ফত্ওয়া। (হিদায়া, দিরায়া, বিনায়া, আল আইনী, শামী, আলমগীরী, কাযীখান, তাফসীরে কুরতুবী)
আর এই নামাযে কথা বলার বিষয়টি ইসলামের প্রথম দিকে মুবাহ্ ছিল। অতঃপর রফে ইয়াদাইন এবং কুনূতে নাযেলার ন্যায় এটাও কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ দ্বারাই মানসুখ হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে কুরতুবী১ম খ-ের ২১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬৪৮]

قال السدى (قانتين) ساكتين دليله ان الاية (قوموا لله قانتين) نزلت فى المنع من الكلام فى الصلاة وكان ذلك مباحا فى صدر الاسلام. وهذا هو الصحيح لما رواه مسلم وغيره عن عبد الله ابن مسعود قال كنا نسلم على رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو فى الصلاة فيرد علينا- فلما رجعنا من عند النجاشى سلمنا عليه فلم يرد علينا فقلنا فقال ان فى الصلاة شغلا وروى زيد بن ارقم قال كنا نتكلم فى الصلاة يكلم الرجل صاحبه وهو الى جنبه فى الصلاة حتى نزلت "قوموا لله قانتين" فامرنا بالسكوت ونهينا عن الكلام.

অর্থঃ- হযরত ইমাম সুদ্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, قوموا لله قانتين আয়াত শরীফের মধ্যে قانتين এর অর্থ হচ্ছে ساكتينতোমরা বিনয়াবনতঃ নীরব অবস্থায় নামাযে দাঁড়াও।তিনি দলীল হিসেবে পেশ করেন যে, নিশ্চয়ই قوموا لله قانتين আয়াত শরীফ খানা নামাযে কথা বলা থেকে নিষেধ করা প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। ইসলামের প্রথম দিকে নামাযে কথা বলা মুবাহ ছিল। এ প্রসঙ্গে মুসলিম শরীফএবং অন্যান্য কিতাবে ছহীহ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযরত থাকা অবস্থায় আমরা সালাম দিতাম তিনি নামাযে থেকে আমাদের সালামের জবাব দিতেন। অতঃপর যখন আমরা আবিসিনিয়ার বাদশা নাজ্জাশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট থেকে প্রত্যাবর্তন করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম দিলাম (তখন তিনি নামাযে ছিলেন) কিন্তু তিনি আমাদের সালামের জবাব দিলেন না। অতঃপর নামায শেষে আমরা হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, “হে আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি নামাযে থাকা অবস্থায় আপনাকে আমরা সালাম দিতাম আপনি তো নামাযে থেকে আমাদের সালামের জবাব দিতেন? অতঃপর তিনি বললেন, অবশ্যই (নামাযে কিছু নির্ধারিত আমল রয়েছে, যা ব্যতীত অন্য কোন কাজে বা কথায় মশগুল হওয়া নিষেধ)। হযরত যায়িদ ইবনে আরক্বাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নামাযে থাকা অবস্থায় কথাবার্তা বলতাম। হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রত্যেক ছাহাবীই তাঁর পাশেই নামাযেরত ছাহাবীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন, তখন

قوموا لله قانتين.

তোমরা আল্লাহ পাক-এর উদ্দেশ্যে নামাযে নীরব অবস্থায় দাঁড়াওআয়াত শরীফ অবতীর্ণ হলো। অতঃপর হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নামাযে চুপ থাকার ব্যাপারে আদেশ করলেন এবং নামাযে কথা বলতে নিষেধ করলেন।
আর এই নিষেধ করার কারণে নামাযে কথা বলার হাদীছ শরীফ হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত যুল ইয়াদাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফসমূহ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত যায়েদ বিন আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীছ শরীফের মাধ্যমে মানসুখ হয়ে যায়।
যেমন আল আইনী”-এর ২য় খ-ের ৪৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬৪৯]

زعم اصحاب ابى حنيفة ان حديث ابى هريرة هذا قصة ذى اليدين منسوخ بحديث ابن مسعود وزيد بن ارقم.

অর্থঃ- হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য দাবী বা বক্তব্য হলো যে, নিশ্চয়ই হযরত যুল ইয়াদাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ঘটনা সংক্রান্ত (বিষয়টি) হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কর্তৃক বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু এবং হযরত যায়িদ ইবনে আরক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফের মাধ্যমে নামাযে কথা বলা সংক্রান্ত হাদীছ শরীফ খানা মানসুখ হয়ে যায়। এবং নামাযে কথা বলা নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে ছহীহ মুসলিম শরীফেবাবও নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন,
[৬৫০-৬৫৪]

باب نسخ الكلام فى الصلاة.

অর্থঃ- নামাযে কথা বলা মানসুখ সম্পর্কিত।” (বুখারী শরীফ, হিদায়া শরীফ, দিরায়া শরীফ, বিনায়া, আইনী)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, নামাযে কথা বললে নামায ফাসিদ হবে। কেননা নামাযে কথা বলা নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের নছ বা স্পষ্ট দলীল রয়েছে। ফলে এখন নামাযে কথা বললে নামায যেমন ফাসিদ হবে, তদ্রুপ কুনূতে নাযেলা নামাযে পাঠ করলেও নামায ফাসিদ হবে। যেহেতু সেটা মানসুখ হয়ে গেছে।
তাছাড়া আরো উল্লেখ্য যে, নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করলে নামায ফাসিদ হবে। কেননা কুনূতে নাযেলা পাঠ করলে তাদীলে আরকানছেড়ে দিয়ে লম্বা একটি দোয়া দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। যাতে ব্যক্তির নামও উল্লেখ করে দোয়া ও বদদোয়া উচ্চ আওয়াজে করতে হয়।  যা নামায ভঙ্গের কারণ।
যেমন আল আইনী২য় খ-ে ৫৯৫ পৃষ্ঠায় এবং তাফসীরে দুররুল্ মানসুরকিতাবের ২য় খ- ৭০ ও ৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬৫৫-৬৭১]

واخرج البخارى ومسلم وابن جرير وابن المنذر وابن ابى حاتم وانحاس فى ناسخه والبيهقى فى سننه وعن ابى هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان اذا اراد ان يدعو على احد او يدعو لاحد قنت بعد الركوع اللهم انج الوليد بن الوليد وسلمة ابن هشام وعياش ابن ابى ربيعة والمستضعفين من المؤمنين اللهم اشددوطاتك على مضر واجعلها عليهم سنين كسنى يوسف يجهر بذلك وكان يقول فى بعض صلاته فى صلاة الفجر اللهم العن فلانا وفلانا لاحياء من احياء العرب يجهر بذلك حتى (نزلت هذه الاية) انزل الله ليس لك من الامر شيئ الاية الخ وفى لفظ اللهم العن لحيان ورعلا وذكوان وعصية عصت الله ورسوله ثم بلغنا انه ترك ذلك لما نزل قوله ليس لك من الامر شئى الاية.

অর্থঃ- হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি, একইভাবে হযরত ইমাম তাবারী ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আননুহাস রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর নাসিখনামক কিতাবে, হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সুনানুল্ বাইহাক্বীনামক কিতাবে হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কারো প্রতি বদদোয়া কিংবা দোয়া করার ইচ্ছা করতেন, তখন (ফজর নামাযে দ্বিতীয় রাকয়াতে) রুকু থেকে উঠার পর কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন এবং (দাঁড়িয়ে) বলতেন, আয় আল্লাহ পাক! আপনি ওলীদ ইবনে ওলীদকে, সালামা ইবনে হিশামকে এবং আইয়্যাশ ইবনে আবী রবিয়্যাহকে মুক্তিদান করুন এবং মুক্তিদান করুন মুমিনদের যারা দূর্বল রয়েছেন তাদেরকে। আয় আল্লাহ্ পাক! মুদার গোত্রের উপর আপনার শাস্তিকে কঠোর করুন এবং তাদের উপর দুর্ভিক্ষ নাযিল করুন। যেমন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সাল্লাম-এর সময় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। এভাবে উচ্চ আওয়াজে কতক নামাযে বিশেষ করে ফজর নামাযে বলতেন, আয় আল্লাহ পাক! আরবের অমুক অমুক গোত্রের প্রতি লানত বর্ষণ করুন। উচ্চ আওয়াজে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন। অতঃপর

ليس لك من الامر شيئ.

এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেইআয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়।
অপর বর্ননায় আছে, আয় আল্লাহ পাক! লিহইয়ান, রিল, যাকওয়ান এবং আছিয়্যাহ্ গোত্রের প্রতি লানত বর্ষণ করুন। যারা আল্লাহ পাক এবং তার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অবাধ্যচারিতা ছিল। অতঃপর আমাদের কাছে বর্ণনা পৌঁছিল যে, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করেছেন যখন

 ليس لك من الامر شيئ.

এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেইআয়াত শরীফ অবতীর্ণ হলো।” (তাফসীরে মাযহারী, কুরতুবী, ইবনে কাছীর, মাসুর, দুররে মানসুর, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, ইরশাদুস সারী, উমদাতুল কারী, ফতহুল বারী)
আর সমস্ত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, নামাযে কারো নাম ধরে দোয়া ও বদ্দোয়া করলে নামায ফাসিদ ও বাতিল হয়ে যাবে। এমন কি নামাযে আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ইন্নালিল্লাহ্ এবং অন্যান্য দোয়া, দুরূদ, তাসবীহ ইত্যাদি উচ্চ আওয়াজে পাঠ করলেও নামায ফাসিদ ও বাতিল হবে। এ সম্পর্কে নিম্নে বিশ্বখ্যাত কিতাব থেকে দলীল পেশ করা হলো-
যেমন বিশ্বখ্যাত তাফসীর তাফসীরে কুরতুবী২য় খ-ের ২১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬৭২]

اجمع المسلمون طرا ان الكلام عامدا فى الصلاة اذا كان المصلى يعلم انه فى صلاة، ولم يكن ذلك فى اصلاح صلاته انه يفسد الصلاة.

অর্থঃ- সকল মুসলমান তথা ইমাম মুজতাহিদগণ একমত যে, যখন কোন নামাযী স্বয়ং নমাযে রয়েছেন এটা জানা সত্বেও স্বেচ্ছায় নামাযে এমন কথা বলে, যেটা তার নামায শুদ্ধ হওয়ার বিষয় নয়, এমতাবস্থায় এ নামাযীর নামায ফাসিদ হবে।
উক্ত (তাফসীরে কুরতুবী) কিতাবের ২য় খ-ের ২১৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[৬৭৩]

انما كان هذا فى صدر الاسلام فاما الان فقد عرف الناس صلاتهم فمن تكلم فيها اعادها وهذا قول العراقين. ابى حنيفة واصحابه والثورى فانهم ذهبوا الى ان الكلام فى لضلاة يفسدها على اى حال كان سهوا او عمدا لصلاة كان او لغير ذلك وهو قول ابراهيم النخعى وعطاء والحسن وحمادبن سليمان وقتادة.

অর্থঃ- শুধুমাত্র ইসলামের সূচনা লগ্নে নামাযের মধ্যে দুনিয়াবী কিংবা দ্বীনী, সালাম-কালাম ইত্যাদি কথাবার্তা বলা (মুবাহ) ছিল। কিন্তু পরবর্তী থেকে এখন পর্যন্ত যে বিধান তা হচ্ছে নামাযে কোন ব্যক্তি কথা বললে তার নামায অবশ্যই পুনরায় দোহরায়ে পড়তে হবে এটা ইরাক্বীদের বর্ণনা মতে। আর ইমামে আযম, হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহ আলাইহি এবং তাঁর মাযহাবের অনুসরনীয় ইমামগণদের মতে এবং হযরত সুফীয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহ আলাইহি-এর মতে, ‘কোন ব্যক্তি তার যে কোন অবস্থায় চাই সেটা ভুলে কিংবা ইচ্ছায় অথবা অন্য কোন কারণে নামাযে কথা বলে, তাহলে তার নামায ফাসিদ হবে। আর এটাই হযরত ইমাম ইব্রাহিম নখ্য়ী রহমতুল্লাল্লাহি আলাইহি, হযরত আতা রহমতুল্লাহ আলাইহি, হযরত ইমাম হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম হাম্মাদ ইবনে সুলাইমান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ক্বাতাদা রহমতুল্লাহ্ আলাইহি-এর অভিমত।
তাফসীরে আল জামিউ আহকামিল কুরআন”-এর ২য় খ-, তয় জুযের ২১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬৭৪]

وقال الشافعى واصحابه من تعمد الكلام وهو يعلم انه لم يتم الصلاة وانه فيها افسد صلاته.

অর্থঃ- হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও তাঁর অনূসারীদের মতে কোন ব্যক্তির স্বীয় নামায শেষ হয়নি, এটা জানা সত্বেও যদি নামাযে কথা বলে তাহলে তার নামায ফাসিদ হবে।
উক্ত খন্ডের ২১৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করা হয়।
[৬৭৫]

ذكر الخرقى (ابو القاسم عمر ابن الحسين شيخ الحنابلة) عنه ان مذهبه فيمن تكلم عامدا او ساهيا بطلت صلاته.

অর্থঃ- হযরত ইমাম খিরাক্বী রহমতুল্লাল্লাহি আলাইহি যিনি (আবুল ক্বাসিম উমর ইবনে হাসান শায়খুল হানাবিল নামে পরিচিত) তার মতে যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছা করে কিংবা ভুল করে নামাযে কথা বলে তার নামায বাতিল হবে।
ফতওয়ায়ে আলমগীরী”-এর ১ম খ-ের ১০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬৭৬]

ولو دعا بما لا يستحيل سؤاله من العباد مثال قوله اللهم اطعمنى او اقض دينى او زوجنى فانه يفسد. ولو قال اللهم ارزقنى فلا نة فالصحيح انه يفسد لان هذا اللفظ ايضا مستعمل فيما بين الناس.

অর্থঃ- যদি কোন নামাযী নামাযের মধ্যে এমন দোয়া করে যেটা বান্দার কাছে চাওয়া অসম্ভব নয়, যেমন সে বললো, আয় আল্লাহ পাক! আমাকে খাদ্য দিন, দ্বীনি চাহিদা পূরণ করুন এবং আমার বিবাহ-এর ব্যবস্থা করে দিন তবে এসব কারণে তার নামায ফাসিদ হবে। এবং কোন ব্যক্তি যদি নামাযে এরকম দোয়া করে যে, আয় আল্লাহ পাক! অমুক রিযিক আমাকে দান করুন, তাহলে বিশুদ্ধ মতে তার নামায ফাসিদ হবে। কেননা  এরুপ শব্দগুলো তো মানুষের মাঝে ব্যবহার হয়ে থাকে।
তাই পরিস্কার হয়ে উঠল যে, নামাযে নিজের কল্যাণ্যের জন্য দোয়া করলে যদি নামায ফাসিদ হয়, তাহলে কুনূতে নাযেলা পাঠ কি করে বৈধ হতে পারে? যাতে অপরের নাম উল্লেখ করে দোয়া এবং বদদোয়া উচ্চ আওয়াজে পড়তে হয়। তা কখনই বৈধ হতে পারেনা। বরং তাতে অবশ্যই নামায ফাসিদ হবে।
ফতওয়ায়ে আলমগীরী”-এর ১ম খ-ের ১০০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[৬৭৭-৬৮১]

وان قال اغفر لامى او لعمى او لخالى او لزيد فسدت صلاته كذا فى السرج الوهاج.

অর্থঃ- সিরাজুল ওয়াহ্হাজ কিতাবে এরূপ বর্ণনা আছে যে, কোন ব্যক্তি যদি নামাযে বলে, (আয় আল্লাহ পাক! আমার মাকে ক্ষমা করুন অথবা আমার চাচাকে ক্ষমা করুন অথবা যদি বলে আমার মামা অথবা কোন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তথা যায়িদকে ক্ষমা করুন, তাহলে তার নামায ফাসিদ হয়ে যাবে। (ফতওয়ায়ে কাযীখান, সিরাজুল ওয়াহ্হাজ, মুহিত, মুনিয়া)
ফতওয়ায়ে আলমগীরী”-এর ১ম খ-ের ৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬৮২-৬৮৪]

رجل عطس فقال المصلى يرحمك الله تفسد صلاته كذا فى المحيطين ولو عطس فى الصلاة فقال اخر يرحمك الله فقال المصلى امين نفسد كذا فى منية المصلى وهكذا فى المحبط.

অর্থঃ- কোন (নামাযবিহীন) ব্যক্তি হাঁচি দিলো আর নামাযী ব্যক্তি জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ (অর্থাৎ) তোমার উপর আল্লাহ পাক করুণা করুক এই দোয়া বলে, তাহলে ঐ নামাযীর নামায ফাসিদ হবে। এটা মুহিতকিতাবসমূহে আছে।
পক্ষান্তরে কোন নামাযরত ব্যক্তি নামাযে যদি হাঁচি দেয়, আর নামাযের বাইরের কোন ব্যক্তি যদি উক্ত হাঁচির জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে অতঃপর নামাযী ব্যক্তি নামাযে তা শ্রবণে আমীন বলে তাহলে তার নামায ফাসিদ হবে। এরূপ বর্ণনা মুনিয়াতুল মুছল্লীএবং মুহীতকিতাবে আছে।
আল আইনী২য় খ-ের ৯৯ ও ৪৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬৮৫]

واذا اخبربما يعجبه فقال سبحان الله او لا اله الا الله او الله اكبر ....... وان اراد به الجواب فسدت عند ابى حنيفة ومحمد رحمهما الله تعالى هكذا فى الخلاصة.

অর্থঃ- যদি কোন নামাযরত ব্যক্তি আশ্চর্যজনক সংবাদ শুনে সুবহানাল্লাহ অথবা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু অথবা আল্লাহু আকবার যদি জাওয়াবের উদ্দেশ্যে বলে তাহলে ইমামে আযম, হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে নামায ফাসিদ হয়ে যাবে। এরূপ বর্ণনা খুলাছাকিতাবে আছে।
ফতওয়ায়ে কাযীখান”-এর ১ম খ- ১৩৮ পৃষ্ঠা, “ফতওয়ায়ে আলমগীরী”-এর ১ম খ-ের ১৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬৮৬-৬৯২]

ولو قال يرحمك الله فسدت صلاته وينبغى ان لا تفسد كما لو دعا بدعاء اخر.

অর্থঃ- কোন নামাযরত ব্যক্তি যদি হাঁচির জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে, তাহলে তার নামায ফাসিদ হবে। তার উচিত হবে নামায ফাসিদ না করা। যেমনিভাবে একে অপরের জন্য দোয়া করাতে নামাযরত নামাযীর নামায ফাসিদ হয়ে থাকে।” (কিতাবুল আসলী ১ম খ- ২০৫ পৃষ্ঠা, কিতাবুল হুজ্জাত, আল আইনী, শামী, হিদায়া)
অতএব, উল্লিখিত বিশ্ববিখ্যাত কিতাবসমূহের ফায়সালার ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে বুঝা গেলো যে, নামাযের মধ্যে কোন নামাযী কথা বললে, মনে মনে কিংবা উচ্চ আওয়াজে কারো জন্য দোয়া বা বদদোয়া করলে, হাঁচির জবাবের নিয়তে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললে, কোন আশ্চর্যজনক সংবাদ শুনে সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুল্লিাহ, লা-ইলাহা ইল্লাহ কিংবা আল্লাহু আকবার বললে নামায ফাসিদ হবে। সুতরাং কুনূতে নাযেলাও অনুরূপ। কাজেই পরিস্কারভাবে ফুটে উঠল যে, অবশ্যই কুনূতে নাযেলা পাঠে নামায ফাসিদ হবে। কেননা এটাও নামাযের বাইরের অংশ এবং এতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চ আওয়াজে নাম ধরে, অন্যের কল্যাণে এবং অভিশাপে লম্বা দোয়া পাঠ করতে হয়। তাতে কি করে নামায শুদ্ধ হতে পারে?
মূলকথা হলো, কুনূতে নাযেলা পাঠ করা সম্পুর্ণ নাজায়িয, বিদয়াত, হারাম এবং নামায ফাসিদ ও বাতিল হওয়ার কারণ। এটাই হানাফী মাযহাবের ফায়সালা এবং চুড়ান্ত ফতওয়া।

ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয বলে ফতওয়া প্রদানকারীদের জিহালতপূর্ণ বক্তব্য ও তার খ-নমূলক জবাব

১ম বক্তব্য ও তার খ-নমূলক জবাব
যারা ফজর নামাযে কুনূতে নাযিলা পাঠ করাকে জায়িয বলে থাকে তারা প্রথমতঃ দলীল হিসাবে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,

ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت فى الفجر شهرا.

অর্থাৎ- হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং একমাস ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন।
তাদের উক্ত বক্তবের জবাবে বলতে হয় যে, তারা দলীল হিসেবে যে হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে তাহলো হাদীছ শরীফের প্রথম অংশ, অথবা উক্ত হাদীছ শরীফেরই দ্বিতীয় অংশে ثم تركه (অতঃপর তিনি উহা পরিত্যাগ করেন) এ শব্দের দ্বারা কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রত্যেক তাফসীর, হাদীছ এবং ফিক্বাহর কিতাবসমূহে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে নিষেধ করা হয়েছে। তাছাড়া কুরআন শরীফের নছও হাদীছ শরীফ দ্বারা সরাসরি নিষেধ করা হয়েছে এবং তাদের পেশকৃত প্রত্যেক হাদীছের শেষাংশে কুনূতে নাযেলাকে পরিত্যাগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কম দৃষ্টিশক্তি, কম জেহেন, কম ইলম্, কম বুঝ কিংবা দাড়ি-কমা, সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে তারা শেষের অংশ বাদ দিয়ে নিজেদেরকে এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্তিমূলক আমল আক্বীদায় নিয়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়, এক ব্যক্তির একবার শরীরে একটি বাগি তথা ফোড়াঁ উঠলে সে তা চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ এক নীম হেকিমের বাড়ীতে যায়, তখন ঐ নীম হেকিম তার চিকিৎসার বই পড়ে দেখে বাগি তথা ফোঁড়া উঠলে ফোড়ায় লোহা গরম করে দাগায়ে দিলে বাগি ভাল হয়। নীম হেকিমও তাই করল। কিন্তু দাগিয়ে দেয়ার পর রোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়ল। পরে রোগীর আত্মীয়স্বজন সবাই রোগীকে দেখতে আসল এবং ফোঁড়ায় দাগা দেয়ার কথা শুনে সকলেই আশ্চর্যবোধ করল। এ ঘটনা জানার জন্য  ঐ নীম হেকিমের কাছে চলে গেল এবং হাতুরে ডাক্তারকে বললো, আচ্ছা ডাক্তার ছাহেব, মানুষের ফোড়া উঠলে যে দাগিয়ে দিতে হয় এরূপ চিকিৎসা আমরা তো শুনিনি। কিন্তু আপনি কোথায় পেলেন? তখন নীম হেকিম বলে উঠলো, আমি তো এ চিকিৎসা বই দেখে করেছি। তখন রোগীর আত্মীয় স্বজনরা সেই বই দেখতে চাইলে নীম হেকিম বই এনে পড়া শুরু করল।
বই-এর প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা আছে যে, বাগি বা ফোঁড়া উঠলে তাতে লোহা গরম করে দাগিয়ে দিলে ফোঁড়া বা বাগি ভাল হয়, এ পর্যন্ত কমা আছে। কিন্তু দাড়ি পর্যন্ত এখনো পড়া শেষ হয়নি, যা পরের পৃষ্ঠায় বাকী আছে। কিন্তু নীম হেকিম পরের পৃষ্ঠা পর্যন্ত যেতে ও পড়তে নারাজ। তখন রোগীর আত্মীয় স্বজনেরা বলতে লাগলো আপনাকে পরের পৃষ্ঠায় যা আছে তা অবশ্যই পড়তে হবে। অবেশেষে নীম হেকিম পরের পৃষ্ঠা খোলার পর সকলেই দেখতে পেলো, স্পষ্ট করে লেখা আছে যে, ‘রোগী যদি গরু হয়।
আর এ জন্যই তো সুবিজ্ঞগণ কিতাবে উল্লেখ করেছেন,

نيم حكيم خطر جان نيم ملا خطر ايمان.

অর্থঃ- আধা ডাক্তার বা হাতুরে ডাক্তার মানুষের জীবন ধ্বংসের কারণ। আর নীম বা আধা মোল্লা তথা কিতাবাদী সম্পর্কে যার কোন গভীর জ্ঞান নেই সেও মুসলমানদের ঈমাণ ধ্বংসের কারণ।
অতএব, এই সমস্ত নীম মোল্লাদের কাছ থেকে ও তার আমল, আক্বীদা এবং বক্তব্য থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আর কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ইজমা ও ক্বিয়াস মুতাবিক যিনি চলেন এবং তদানুযায়ী আমল আক্বীদা পোষণ করে থাকেন তাঁদেরকেই অনুসরন ও অনুকরন করতে হবে।
শুধুমাত্র হাদীছ শরীফে থাকলেই যে আমলযোগ্য তা নয়। কেননা অনেক হাদীছ শরীফ-এর ছহীহ রিওয়াত রয়েছে যা মানসুখ হওয়ার কারণে এখন সেটার উপর আমল করলে ঈমান আমল ও আক্বীদা বরবাদ হয়ে যাবে।
যেমন মদ খেয়ে নামাযে যাওয়া, উটের পেশাব, ঘোড়ার গোস্ত খাওয়া এবং ইসলামের প্রথম অবস্থায় নামাযে কথা বলা মুবাহ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা মানসুখ হয়ে যায়। এরপরেও কেউ যদি এখন নামাযে কথা বলে এবং এ আমল আক্বীদায় দৃঢ় থাকে যে, সেটা তো হাদীছ শরীফে রয়েছে। তাহলে তার নামায কালাম, ঈমান আক্বীদা সব বরবাদ হবে। কেননা এগুলো মানসূখআমল।
এ সম্পর্কে তাফসীরে কুরতুবী”-এর ৩য় জুযের ২১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬৯৩-৬৯৪]

ان الاية نزلت فى المنع من الكلام فى الصلاة وكان ذلك مباحا فى صدر الاسلام وهذا هو الصحيح لما رواه مسلم وغيره عن عبد الله ابن مسعود قال كنا نسلم على رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو فى الصلاة فيرد علينا، فلما رجعنا من عند النجاشى سلمنا عليه فلم يرد علينا فقلنا يا رسول الله كنا نسلم عليك فى الصلاة فترد علينا؟ فقال "ان فى الصلاة شغلأ" وروى زيد بن ارقم قال كنا نتكلم فى الصلاة يكلم الرجل صاحبه وهو الى جنبه فى الصلاة حتى نزلت وقوموا لله قانتين. فامرنا بالسكوت ونهينا عن الكلام.

অর্থঃ- (قوموا لله قانتين) আয়াত শরীফ খানা নামাযে কথা বলা নিষেধ প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়, যা ইসলামের সূচনা লগ্নে নামাযে কথা বলা মুবাহ ছিল, যা মুসলিম শরীফে এবং অন্যান্য কিতাবেও ছহীহ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযরত থাকা অবস্থায় আমরা তাঁকে সালাম দিতাম। অতঃপর তিনি ঐ নামাযেরত থেকে আমাদের সালামের জবাব দিতেন। অতঃপর যখন আমরা আবিসিনিয়ার বাদশা নাজ্জাশী রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছ থেকে প্রত্যাবর্তন করে হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (পূর্বের ন্যায়) নামাযেরত থাকাবস্থায় সালাম দিলাম কিন্তু তিনি আমাদের সালামের উত্তর দিলেন না। অতঃপর আমরা বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এর পূর্বে আপনি নামাযরত অবস্থায় আমরা আপনাকে সালাম দিতাম আর আপনি নামাযরত অবস্থায় আমাদের সালামের জবাব দিতেনকিন্তু এখন আপনি জবাব দিলেন না, এর কারণ কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নামাযে নির্ধারিত আমল রয়েছে। এতেই মশগুল থাকতে হয়। হযরত যায়িদ ইবনে আরক্বাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা নামাযে কথাবার্তা বলতাম। প্রত্যেক ব্যক্তিই তাঁর পাশের ব্যাক্তির সাথে আলাপ করতো। অতঃপর যখন

قوموا لله قانتين.

তোমরা নামাযে নীরব অবস্থায় দাড়াও”- এ আয়াত অবতীর্ণ হলো তখন আমাদেরকে নামাযে চুপ থাকতে আদেশ দেয়া হয় এবং কথাবার্তা বলতে নিষেধ করা হয়। অর্থাাৎ কথা বলার হাদীছ শরীফ মানসুখ হয়। (মুসলিম শরীফ ১ম খ- ২০৪ পৃষ্ঠা)
আল আইনী”-এর ২য় খ-ের ৪৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬৯৫-৬৯৯]

قد كان فى وقت كان الكلام مباحا فى الصلاة ثم نسخ ذلك.

অর্থঃ- “(ইসলামের সূচনা লগ্নে) কিছু সময় মাত্র নামাযে কথা বলা মুবাহ ছিল, অতঃপর সেটা মানসুখ তথা রহিত হয়ে যায়।” (আল বিনায়া শরহুল হিদায়া ২য় খ- ৪৮৬ পৃষ্ঠা, হিদায়া, দিরায়া, শরহে নববী)
অনুরুপভাবে ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় উটের পেশাব ও নামাযে মদ্য পানের ব্যাপারেও হাদীছ শরীফ রয়েছে কিন্তু পরে উহা মানসুখ হয়ে যায়। অনুরূপভাবে পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহারের হাদীছ শরীফও রয়েছে পরে উহা মানসুখ হয়ে যায়।
ঘোড়ার গোস্ত খাওয়ার ব্যাপারেও হাদীছ শরীফ রয়েছে পরে তা মানসুখ হয়ে যায়। তদ্রুপ রফে ইয়াদাইন, ইসলামের প্রথম অবস্থায় জায়িয ছিল পরে উহাও মানসুখ হয়ে যায়। আরও এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা ইসলামের সূচনা লগ্নে কিংবা প্রয়োজনে ব্যবহার করা বা আমল করা বৈধ ছিল, পরে বিভিন্ন কারণে আল্লাহ পাক-এর আদেশেও হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম পরে ইহা নিষেধ করেন। ফলে মানসুখ বা রহিত হয়ে যায়। তদ্রুপ কুনূতে নাযেলাও কেবল মাত্র একমাস পাঠের পর আল্লাহ পাক-এর নির্দেশে রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং বর্জন এবং নিষেধ করেন। ফলে কূনূতে নাযেলা মানসুখ হয়। কাজেই হাদীছ শরীফে থাকলেই যে তা আমল করতে হবে তা নয়। তাই ফতওয়া দেওয়ার পূর্বে মুফ্তীদের উচিত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের নাসিখ মানসুখের বিষয়গুলো ভাল করে অনুশীলন করা। তাছাড়া ফতওয়া দিলে নিজেও গোমরাহ হবে এবং অপরকেও গোমরাহ করে থাকবে। যেমন ফতওয়ায়ে দেওবন্দে নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে জায়িয ফতওয়া দিয়ে তারা যেমন নিজেদের নামাযকে ফাসিদ করছে এবং বিভ্রান্তি হচ্ছে, অনুরূপ অন্যদের নামায ফাসিদ করছে এবং বিভ্রান্ত করছে। এ প্রসঙ্গে نواسخ القران এর ১ম খ-ের ১০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭০০]

عن ابى عبد الرحمن أن عليا عليه السلام مر بقاض فقال اتعرف الناسخ والمنسوخ قال لا قال هلكت واهلكت.

অর্থঃ হযরত আবু আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহু থেকে বর্নিত আছে যে, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কোন এক কাজী বা বিচারকের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করার সময় ঐ কাজী কে লক্ষ্য করে বললেন যে, তুমি কি নাসিখ ও মানসুখ সর্ম্পকে জান? তখন উত্তরে কাজী ছাহেব বললেন না। অতঃপর হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন তুমি নিজেও ধ্বংস তথা গোমরাহ্ হয়েছো এবং অপরকেও ধ্বংস বা গোমরাহ করেছো।
অনুরুপভাবে উক্ত কিতাবের ১০৯ ও ১১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭০১]

عن الضحاك قال مر ابن عباس على قاض قال انعرف الناسخ من المنسوخ؟ قال لا قال هلكت واهلكت.

অর্থঃ হযরত দ্বহ্হাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত যে, কোন এক বিচারকের পার্শ্ব দিয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহু গমনকালে ঐ বিচারককে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি কি নাসিখ ও মানসুখ সর্ম্পকে জান? উত্তরে বিচারক বললেন না। তখন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তায়ালা আনহু তাকে বললেন তুমি নিজেও ধবংস হয়েছো এবং অপরকে ধ্বংস করেছো।
এ সর্ম্পকে নাওয়াসিখুল কুরআনের ১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[৭০২]

لذاكان السلف الضالح يرى معرفة الناسخ والمنسوخ شرطا اهلية المفسر للتفسير والمحدث للحديث.

অর্থঃ এ কারণেই সলফে সালেহীন তথা ইমাম মুজতাহিদগণ তাফসীর ও হাদীছ শাস্ত্রবিদগণের তাফসীর ও হাদীছ শরীফ পরিচয়ের জন্য নাসিখ ও মানসুখ সর্ম্পকে জানা পূর্ব শর্তারোপ করেছেন।
উক্ত কিতাবে আরো আছে যার মর্মার্থ এই যে, প্রত্যেক আলিম ব্যক্তির জন্য নাসিখ ও মানসুখের জ্ঞান থাকা অপরিহার্য তথা ফরয।
যেমন নাওয়াসিখুল কুরআন-এর ১৫ পৃষ্ঠায় আছে,
[৭০৩]

وقد كان الا مام على بن ابى طالب وعبد الله بن عمر وعبد الله بن عباس رضى الله تعالى عنهم لايرضون لاحد ان يتحدث فى الدين الا اذا كان عرفا وعالما بالناسخ والمنسوخ.

অর্থঃ ইমামুল মুমিনীন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁরা এমন ছিলেন যে, যখন দ্বীনের ব্যাপারে কেহ কোন মতামত পেশ করতেন তখন তাঁরা শুধু তাঁদের প্রতিই সম্মতি দিতেন যারা নাসিখ ও মানসুখ সর্ম্পকে পরিজ্ঞাত থাকতো।
কাজেই পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠল যে, নাসিখ ও মানসুখের জ্ঞান না থাকলে তার ফতওয়া দেওয়ার অধিকার তো মোটেই নেই, যদি সে এর পরেও ফতওয়া দেয়, তাহলে সে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর হাদীছ শরীফের মেছদাক হবে هلكت واهلكت. অর্থঃ তুমি ধবংস হয়েছো এবং অপরকেও ধবংস করবে।
স্মর্তব্য যে, কুনুতে নাযেলাও অনুরুপ একটি মানসুখ বা পরিত্যায্য আমল। যা হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলমাত্র একমাস পাঠের পর উহা পরিত্যাগ করেছেন। ফলে মানসুখ হয়েছে। আর কোন হাদীছ শরীফকে মানসুখ হিসেবে প্রমান করতে হলে উহা বর্জনের বা পরিত্যাগের হাদীছ শরীফ কিংবা উহার উপর নিষেধাজ্ঞার অন্য একটি হাদীছ শরীফ কিংবা কুুরআন শরীফে সরাসরি অথবা ইঙ্গিত মুলক নাসিখ দলীল থাকা অপরিহার্য। তাই নিম্নে কুনূতে নাযেলা হানাফী মাযহাব মুতাবিক মানসুখ, এ সর্ম্পকে নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাসমুহ নিম্নে পেশ করা হল।
যেমন বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর, তাফসীরে দুররে মানসুর২য় খ-ের ৭০ ও ৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭০৪]

واخرج البخارى ومسلم وابن جرير وابن المنذر وابن ابى حاتم والنحاس فى ناسخه والبيهقى فى سننه وعن ابى هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان اذا اراد ان يدعو على احد اولاحد قنت بعد الركوع اللهم انج الوليد بن الوليد وسلمة ابن هشام وعياش ابن ابى ربيعة والمستضعفين من المؤمنين اللهم اشدد وطاتك على مضر واجعلها عليهم سنين كسنى يوسف يجهر بذلك وكان يقول فى بعض صلاته فى صلاة الفجر اللهم العن فلانا وفلانا لاحياء من احياء العرب يجهر بذلك حتى نزلت هذه الاية انزل الله ليس لك من الأمر شيئ الاية الخ.
وفى لفظ اللهم العن لحيان ورعلا وذكوان وعصية عصت الله ورسوله ثم بلعنا انه ترك ذلك لما نزل قوله ليس لك من الأمر شيئ الاية.

অর্থঃ ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন, একইভাবে ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইবনে মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি ইবনে আবি হাতিম রহমতুল্লাহি এবং আন্ নুহাস রহমতুল্লাহি আলাইহি তার নাসিখ নামক কিতাবে, ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার সুনান নামক কিতাবে হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। অতঃপর হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নিশ্চয়ই হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম যখন কারো প্রতি বদদোয়া কিংবা দোয়া করার ইচ্ছা করতেন, তখন (ফজর নামাযে দ্বিতীয় রাকায়াতে) রুকু থেকে উঠার পর দাঁড়িয়ে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন, নাযেলা এর দোয়া হল- হে আল্লাহ পাক! আপনি ওলীদ ইবনে ওলীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে, সালামা ইবনে হিশাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে এবং আইয়্যাশ ইবনে আবী রবিয়্যা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে মুক্তি দান করুন। এবং দুর্বল মুমিনদের কে নাযাত দান করুন। (অতঃপর বলতেন) হে আল্লাহ পাক! মুদার গোত্রকে কঠিন শাস্তি দান করুন। এবং তাদের উপর হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম-এর সময়ের ন্যায় দুর্ভিক্ষ নাযিল করুন। এভাবে উচ্চ আওয়াজে কতক নামাযে বিশেষ করে ফজর নামাযে বলতেন, হে আল্লাহ আরবের অমুক অমুক গোত্রের প্রতি লানত বর্ষণ করুন।
এই আয়াত শরীফ অবর্তীন হওয়া পর্যন্ত এভাবে উচ্চ আওয়াজে কুনূতে নাযেলার দোয়া পাঠ করতেন অতঃপর আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর বাণী ليس لك من الأمر شيئএ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেইআয়াত শরীফ খানা অবর্তীন করেন।
অপর বর্ণনায় আছে দোয়াটি হল (অর্থ) হে আল্লাহ পাক লিহ্ইয়ান, রিল, যাকওয়ান এবং আছিয়্যাহ গোত্রের প্রতি লানত বর্ষন করুন, যারা আল্লাহ পাক এবং তাঁর রাসূলের প্রতি অবাধ্য ছিল। এরপরে আমরা জানতে পারলাম যে, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ কুনূতে নাযেলাপাঠ করা বর্জন তথা পরিত্যাগ করেছেন, যখন আল্লাহ পাক
ليس لك من الأمر شيئ.
এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেইআয়াত শরীফ অবর্তীন করেন।
তাফসীরে কুরতুবী ২য় খ-ের ২০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭০৫]

زعم بعض الكوفيون ان هذه الاية ناسخة للقنوت الذى كان النبى صلى الله عليه وسلم يفعله بعد الركوع فى الركعة الاخيرة من الصبح. واحتج بحديث ابن عمر انه سمع النبى صلى الله عليه وسلم يقول فى صلاة الفجر بعد رفع راسه من الركوع فقال اللهم ربنا ولك الحمد فى الاخيرة ثم قال اللهم العن فلا نا وفلانا فا نزل الله عزوجل ليس لك من الأمر شيئ الى اخر الاية اخرجه البخارى واخرجه مسلم ايضا.

অর্থঃ কতক কুফাবাসীদের দাবী যে, নিশ্চয়ই এই (ليس لك من الأمر شيئ) এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেইআয়াত শরীফ খানাই হচ্ছে কুনুতে নাযেলা এরনাসিখ বা রহিতকারী, যেই কুনূতে নাযেলা হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে শেষ রাকাতে রুকুর পরে পাঠ করতেন। যা আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর বর্ণিত হাদীছ শরীফের মাধ্যমে দলীল দেয়া হয়েছে যে, নিশ্চয়ই আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফজর নামাযে রুকু থেকে মাথা উঠার সময় বলতে শুনেছেন। (তিনি বলতেন) হে আল্লাহ পাক! অমুক অমুক কে লানত বর্ষণ করুন।পরে আল্লাহ তায়ালা আয়াত শরীফ অবর্তীন করেন-

ليس لك من الأمر شيئ.

এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেইযা ছহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে রয়েছে। (অর্থাৎ- ঐ আয়াত শরীফ অবর্তীন হওয়ার সাথে সাথেই বদ দোয়া করা পরিত্যাগ তথা বন্ধ করেন)
তাফসীরে কুরতুবী-এর ২য় খ-ের ২০১ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করা হয়-
[৭০৬-৭০৭]

اختلف العلماء فى القنوت فى صلاة الفجرو غيرها. فمنع الكوفيون منه فى الفجر وغيرها. وهو مذهب الليث ويحيى بن يحيى الليثى الاند ليسى صاحب ملك وانكره الشعبى وفى الموطا عن ابن عمر انه كان لايقنت فى شيئ من الصلاة. وروى النسائ انبانا قتيبة عن خلف عن ابى مالك الاشجعى عن ابيه قال صليت خلف النبى صلى الله عليه وسلم فلم يقنت وصليت خلف ابى بكر فلم يقنت وصليت خلف عمر فلم يقنت وصليت خلف عثمان فلم يقنت وصليت خلف على فلم يقنت ثم قال يا بنى انها بدعة.

অর্থঃ ফজরের এবং অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার বিষয়টি নিয়ে ওলামায়ে কিরামদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে কুফী ফক্বীহগণ ফজর এবং অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে নিষেধ করেছেন, তা ليس لك من الامر شيئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেইআয়াত শরীফের ভিত্তিতে।
আর এইরূপ মত আবুল লাইস, ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া আল লাইস আন্দুলুসী যিনি মালিকী মাযহাবের অনুসারী, তিনি কুনূতে নাযেলা এর বিরোধী মত পোষণ করেছেন।
আর ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আল মুয়াত্তা নামক কিতাবে আছে যে, হযরত শাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহু থেকে বর্নিত আছে, নিশ্চয়ই  তিনি কোন নামাযেই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাদের কাছে বর্ণনা করেন। হযরত কুতাইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত খাল্ফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে তিনি আবী মালিক আল আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তাঁর পিতা বলেন যে, আমি হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে নামায আদায় করেছি কিন্তু তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। অতঃপর হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায আদায় করেছি তিনিও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায পড়েছি তিনিও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন নি। একইভাবে হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায পড়েছি তিনিও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর পিছনেও নামায আদায় করেছি তিনিও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। অতঃপর মালিক আল আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিতা বললেন হে প্রিয় বৎস! নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা এখন পড়া বিদয়াত।
এ সম্পর্কে হানাফী মাযহাবের বিশ্ব বিখ্যাত ফক্বীহ ইমাম জালালুদ্দীন সুযূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিখ্যাত ও সর্বজনমান্য তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে জালালাইন শরীফের ৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭০৮-৭০৯]

قال قوم نزلت فى اهل بئر معونة وهم سبعون رجالا من القراء بعثهم رسول الله صلى الله عليه وسلم الى بئر معونة فى سفرسنة اربع من الهجرة على راس اربع اشهر من احد ليعلم الناس القران والعلم اميرهم المنذر بن عمرو فقتلهم عامربن الطفيل فوجد عليهم رسول الله صلى الله عليه وسلم وجدا شديدا وقنت شهرا فى الصلوات كلها يدعو على جماعت من تلك القبائل باللعن والسنين وبالجملة على التقدير على ان النبى صلى الله عليه وسلم اراد الدعاء على قوم فنهاه الله تعالى وقال ليس لك من الأمر شيئ الى اخر الاية. (الملخص من سراج منير)

অর্থঃ মুফাস্সিরীনদের একটি জামায়াত বলেন যে, ليس لك من الأمر شيئএ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।
এই আয়াত শরীফখানা অবতীর্ণ হয় বীরে মাউনায় শহীদগণের ঘটনার প্রেক্ষিতে, আর তাঁরা ছিলেন ৭০ জন ক্বারী তথা কুরআন শরীফ আবৃতকারী (ছাহাবী)। হযরত রসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চতুর্থ হিজরীতে উহুদ যুদ্ধেরঞ্জচার মাসের শেষের দিকে ছফর মাসে তাঁদেরকে বীরে মাউনায়প্রেরণ করলেন এ উদ্দেশ্য যে, তাঁরা মানুষদেরকে কুরআন শরীফ এবং দ্বীনি ইল্ম শিক্ষা দিবেন। আর তাঁদের মধ্যে আমীর ছিলেন মুনযির ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অতঃপর তাঁরা বীরে মাউনায় পৌঁছিলে আমের ইবনে তুফায়িল (মুনাফিক) তাঁদেরকে নির্মমভাবে শহীদ করে ফেলে।
অতঃপর হযরত রসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদেরকে এ মর্মান্তিক শহীদ অবস্থায় পেয়ে, ঐ শহীদকারী (মুনাফিক) গোত্রের প্রতি বদদোয়া ও দুর্ভিক্ষের জন্য প্রত্যেক ফরয নামাযে একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। আর কতক নির্ধারিত বাক্যের মাধ্যমেই তাদের প্রতি বদদোয়া করতেন। তবে জানা যায় যে, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ সকল গোত্রেদের প্রতি (কিছু দিন তথা একমাস যাবৎ) বদদোয়া করতে থাকেন অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ليس لك من الأمر شيئএ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।এ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করে তাদের প্রতি বদদোয়ায় কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে নিষেধ করেন। (আল মুলাখখাস মিন সিরাজুম মুনীর)
তাফসীরে আহমদী-এর ১ম খ-ের ১১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭১০]

لان دعاء القنوت عندنا انما يجب فى الصلوة الوتر خاصة ولايجوز فى صلوة الفجر اصلا.

অর্থঃ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে শুধুমাত্র দোয়ায়ে কুনূত বেতের নামাযে পড়া ওয়াজিব। তাছাড়া ফজর নামাযে মূলত কোন প্রকারের কুনূতই পড়া জায়িয নেই বরং হারাম।
(অসমাপ্ত)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

0 Comments: