“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-৩)

পিডিএফ-          









 “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-৩)


  হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া। হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ     সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লেখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।          তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে সূরা মায়িদার৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
 لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.
  অর্থঃ-তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।”          মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল  বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ শিয়া, খারিজী, মুতাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ওহাবী সম্প্রদায়।          উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ছূরা  কুনূতে নাযেলাসম্পর্কেও সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের প্রতি বদ্ দোয়াকরার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও মুছল্লীদেরকে প্রতি ফজর নামাযে’ ‘কুনূতে নাযেলাপাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে।        শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্যে তারা ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলাপাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।’         অথচ কুনূতে নাযেলাসম্পর্কিত ফতওয়ায়ে দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খ-ন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।        তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে সাধারণ লোক মনে করবে হানাফী মাযহাব মতে বোধ হয় ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।অথচ শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম করেছে সেটাকে জায়িয বা হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করার কারণে একটি ফরয আমল নামাযঅনায়াসে ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে।               অথচ নামায হচ্ছে, দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায তরক করা, ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে অবহেলা করা, খুশু-খুযূর সাথে নামায আদায় না করা, হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ। যেমন মিশকাত শরীফ”-এর কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাযায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
 عن جابر رضى الله تعال عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
 অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়। আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
  من ترك الصلوة حتى مضى وقتها ثم قضى عذاب فى النار حقباء والحقبة ثمانون سنة والسنة ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان مقداره الف سنة.
 অর্থঃ- যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, এমনকি নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে জাহান্নামে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হোক্বা হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের সমান।” (মাজালিসুল আবরার, আল্ মানাসিক)             হাদীছ শরীফের বর্ণনা মোতাবেক হোক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর * ৩৬০ দিন = ২৮৮০০ দিন * ১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।)          অতএব, এক হোক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর। উল্লেখ্য, ক্বাযা নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে আদায় করেছে। ফরয নামায যথা সময় আদায় না করার কারণেই তাকে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দিবেন। অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায় করলেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি বা রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায় করবেনা আর তওবাও করবে না, তাদের যে কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।       নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা ফউত হবার পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হোক্বা তথা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি ভোগ করতে হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায় না করলে কত কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা।        মূলকথা, যারাই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয ফতওয়া দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ করে দেয়ার মাধ্যমে লানত বা কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।              প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে কায্যাব ও উলামায়ে ছূরা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রই সর্বদা করে যাচ্ছে।             কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে যেন সাধারণ মুসলমানগণ নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল ফতওয়া দিচ্ছে তারাও যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে তওবা করে হক্বের উপর ফিরে আসতে পারে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপ্রকাশ করা হলো।       আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)  (পূর্ব প্রকাশিতের পর) কুনূতে নাযেলা ও নাসেখ বা শারেহ,
মানসূখ বা মাশরূহ পূর্ববর্তী সংখ্যায় প্রদত্ত তাফসীর ও হাদীছ শরীফের অসংখ্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সত্তর জন বুযূর্গ ও ক্বারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমকে নির্মমভাবে শহীদ করার কারণে শহীদকারী রি, য্কাওয়ান ও আছিয়্যাহ গোত্রত্রয়ের প্রতি বদ্দোয়াকরার লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস কুনূতে নাযেলাপাঠ করেন। এটাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রথম ও শেষ কুনূতে নাযেলাপাঠ। অর্থাৎ এর পূর্বে ও পরে আর কখনই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। কারণ, একমাস কুনূতে নাযেলাপাঠ করার পর তা মানসূখ বা মাশরূহ হয়ে যায়। কুনূতে নাযেলামানসূখ বা মাশরূহ হয়ে যাওয়ার বিস্তারিত প্রমাণ সামনে পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ। এখানে প্রমাণস্বরূপ দুএকটি দলীল পেশ করা হলো। যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, [১৩৭-১৩৯]
قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على عصية وذكوان.
 অর্থাৎ- হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছিয়্যা ও যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের উপর বদ্ দোয়াকরার লক্ষ্যে একমাস কুনূতে নাযেলাপাঠ করেন।” (শরহে মায়ানিল আছার ১ম জিঃ ১৭৫ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠা, হিদায়াহ ২য় জিঃ ৫৯০ পৃষ্ঠা)             উল্লেখ্য, যে সকল হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেছিলেন। সে সকল হাদীছ শরীফে একথাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যেثم تركهঅতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ করেন।হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ আছে যে, [১৪০-১৪২]
 لم يقنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولابعده.
 অর্থঃ- আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেছেন। অতঃপর তা পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে ও পরে কখনই তিনি ফজরের নামাযে কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” (উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৩য় জিঃ ১৮১ পৃষ্ঠা, আইনী শরহে হিদায়াহ ২য় খ- ৫৯০ পৃষ্ঠা)            কারণ, আমাদের হানাফী মাযহাব মতে এরপর থেকে ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করার হুকুম ও আমল মানসূখ বা মাশ্রূহ হয়ে যায়। যেমন, এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল ক্বারীকিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১৪৩]
 ان الله عزوجل نسخ ذالك حين انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم "ليس لك من الامر شئ" .... الخ فصار ذالك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا.
 অর্থঃ- হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মতে, যখন আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ليس لك من الامر شئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।এ আয়াত শরীফ নাযিল করেন তখন থেকেই (ফজরে কুনূত) পাঠ করা মানসূখ বা মাশ্রূহ হয়ে যায়।এ প্রসঙ্গে হিদায়া-এর শরাহ আইনীকিতাবের ২য় খ-ের ৫৯৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে, [১৪৪-১৪৫]
 ولابى حنيفة ومحمد انه اى ان القنوت فى الفجر منسوخ ... ولامتابعة فيه اى فى المنسوخ لان الاتباع فيه لا يجوز.
 অর্থঃ- ইমামে  আযম, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে অর্থাৎ হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার বিধান মানসূখ বা মাশ্রূহ হয়ে গেছে। আর মানসূখ বা মাশ্রূহ বিষয়কে অনুসরণ করা বা এর উপর আমল করা সম্পূর্ণ নাজায়িয বা হারাম।’ (আইনুল হিদায়া)             আর মানসূখ বা মাশ্রূহ হয়ে যাওয়ার কারণেই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সময়ে বহু যুদ্ধ-জিহাদ ও বালা-মুছীবত সত্ত্বেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।    যেমন এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিশ্বখ্যাত কিতাব, “কিতাবুল হুজ্জাত”-এর ১ম খ-ের ১০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১৪৬-১৪৭]
 ان ابن مسعود لم يقنت هو ولا احد من اصحابه حتى فارق الدنيا يعنى فى صلوة الفجر، سنده صحيح.
 অর্থাৎ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ জীবনে কখনো ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেননি।” (এ সনদটি ছহীহ্) (আছার ১ম খ- ৬৭ পৃষ্ঠা)      এ কারণেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এটাকে বিদয়াত অর্থাৎ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহবলে উল্লেখ করেছেন। যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, [১৪৮-১৫১]
 انها بدعة.
  অর্থাৎ- ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করা বিদয়াত।” (কুরতুবী, বুখারী, নাসাঈ, মাজমাউল আনহুর, ১ম খ-, ১২৯ পৃষ্ঠা)            অতএব, প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলাপাঠ করার ব্যাপারে তাফসীর ও হাদীছ শরীফের বর্ণনা সত্যই। তবে তা মাত্র একবারই। কেননা, এরপর ফজরে কুনূতে নাযেলাপাঠ করার হুকুম মানসূখ বা মাশ্রূহ হয়ে যায়। সুতরাং কুনূতে নাযেলাপাঠ করা সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো বর্তমানে মানসূখ বা মাশ্রূহ’-এর অন্তর্ভুক্ত।  অথচ বাতিলপন্থি ও উলামায়ে ছূরা সেই মানসূখবা মাশ্রূহ হয়ে যাওয়া বর্ণনাগুলোকে পুঁজি করেই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলাপাঠ করছে ও পাঠ করাকে জায়িয বলছে।    অথচ শরীয়তের বিধান হলো- মানসূখ বা মাশ্রূহহয়ে যাওয়া বিষয়ের উপর আমল করা বা সেটাকে জায়িয বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যেমন, শরাব পান করার হুকুম মানসূখবা মাশ্রূহহয়ে গেছে। তাই এখন যদি কেউ মানসূখ বা মাশ্রূহহয়ে যাওয়া বর্ণনাসমূহকে গ্রহণ করে শরাব পান করে বা শরাব পান করাকে জায়িয বলে তবে সেটা হবে সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী।             উল্লেখ্য, হাক্বীক্বত বাতিলপন্থি ও উলামায়ে ছূরা দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্থ হয়ে এতটাই জাহিল বা মূর্খে পরিণত হয়েছে যে, ‘নাসেখ-মানসূখসম্পর্কিত ইল্মটুকুও তাদের নেই। অথচ যাদের  নাসেখ-মানসূখসম্পর্কিত ইল্ম নেই তাদের জন্য ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই হারাম। কারণ তারা ফতওয়া দিলে তাদের ফতওয়া ভুল হবে। যেরূপ ভুল হয়েছে কুনূতে নাযেলার ক্ষেত্রে। তাদের যদি নাসেখ-মানসূখসংক্রান্ত সামান্যতম ইল্মও থাকতো তবে তারা কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে কখনোই ভুল ফতওয়া দিতে পারতো না এবং গোমরাহীতে নিমজ্জিত হতো না। তাই তাদের জিহালতী ও গোমরাহী দূর করার লক্ষ্যে নাসেখ-মানসূখসম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে। এতে কুনূতে নাযেলা’-এর বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। (ইনশাআল্লাহ) নাসেখ বা শারেহ ও মানসূখ বা মাশ্রূহ-এর পরিচয়, উদাহরণ ও গুরুত্ব           উল্লেখ্য যে, উছূলে তাফসীর শাস্ত্রে ناسخ (নাসেখ) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাফসীরবিদ ও হাদীছবিদগণ তথা সকল ইমাম-মুজতাহিদগণ বলেন, ناسخ (নাসেখ) منسوخ (মানসুখ)-এর জ্ঞানার্জন ব্যতীত কারো জন্য কুরআন শরীফের তাফসীর, হাদীছ শরীফের তাশরীহ এবং ফতওয়া প্রদান করা বৈধ নয়। যেমন, হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এক বিচারককে  উদ্দেশ্য করে বলেন, [১৫২]
 اتعرف الناسخ والمنسوخ قال لا قال على رضى الله تعالى عنه هلكت واهلكت.
 অর্থঃ- তুমি কি নাসেখ এবং মানসুখের পরিচয় করতে পার? বিচারক বললো না, তখন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তুমি নিজেও ধ্বংস তথা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছো এবং অন্যকেও ক্ষতিগ্রস্থ করেছো।” (নাসিখূল কুরআন ১ম খ- ১০৫  পৃষ্ঠা) এ সম্পর্কে নাওয়াসিখুল কুরআননামক কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত আছে যে, [১৫৩]
 لذا كان السلف الصالح يرى معرفة الناسخ والمنسوخ شرطا اهلية المفسر للتفسير والمحدث للحديث.
 অর্থঃ- এ কারণে  সলফে ছলিহীন তথা প্রথম যুগের ইমাম-মুজতাহিদগণ, হাদীছ ও তাফসীর শাস্ত্রবিদগণের জন্য নাসেখ ও মানসূখের পরিচয়ের জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে শর্তারোপ করেছেন।”      উক্ত কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায় আরো বলা হয়, [১৫৪]
 وقد كان الامام على بن ابى طالب وعبد الله بن عمر وعبد الله بن عباس رضى الله تعالى عنهم لايرضون لاحد ان يتحدث فى الدين الا اذا كان عارفا عالما بالناسخ والمنسوخ من القران.
 অর্থাৎ- ইমামুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবূ তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমাগণ এমন ছিলেন যে, দ্বীনের ব্যাপারে কেউ কোন মতামত পেশ করলে তাতে তাঁরা কোন প্রকার সম্মতি দিতেন না, তবে হ্যাঁ যদি সে ব্যক্তি পবিত্র কুরআনের নাসেখ ও মানসুখের ব্যাপারে পরিচয় করতে পারতো এবং জ্ঞান রাখতো, তাহলে তাতে তাঁরা রায় পেশ করতেন।এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত আছে যে, [১৫৫]
 وقد جاء فى الأثر عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما بأنه كان يفسر قوله تعالى ومن يؤت الحكمة فقد اوتى خيرا كثيرا بان الحكمة معرفة ناسخ القران ومنسوخه ومحكمه و متشابهه و مقدمه ومؤخره وحلاله وحرامه وأمثاله.
 অর্থঃ- আছার নামক কিতাবে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি  তথায় আল্লাহ্ পাক-এর কালাম পাক-এর من يؤت الحكمة فقد اوتى خيرا كثيرا “(অর্থঃ আল্লাহ পাক যাকে হিক্মত বা প্রজ্ঞা দান করেছেন, তাঁকে অনেক কল্যাণ দান করেছেন।)এ আয়াত শরীফের মধ্যে حكمة এর অর্থ করেছেন এভাবে যে, ‘হিকমতহচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফের নাসেখ ও মানসুখ, আয়াতে মুহকামা এবং মুতাশাবিহা, মুকাদ্দিমা, মুয়াখ্খারা, হালাল, হারাম এবং উপমাসমূহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা” ‘নাসেখ ও মানসূখেরজ্ঞানার্জন কতটুকু জরুরী সে সম্পর্কে নাসিখুল কুরআন নামক কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায় আরো বলা হয়েছে, [১৫৬]
 اوجب على العلماء وعلى المتعلمين على كافة المسلمين من علم الناسخ القران ومنسوخه.
 অর্থঃ- প্রত্যেক আলিম, মুতায়াল্লিম (ইল্ম অন্বেষণকারী) এবং সমস্ত মুসলমানগণের জন্য পবিত্র কুরআন শরীফের নাসেখ ও মানসুখের (ফরয পরিমাণ) জ্ঞানার্জন আবশ্যক।নাসেখ বা শারেহ-মানসূখ বা মাশ্রূহ-এর সংজ্ঞা, প্রকারভেদ  এবং লুগাতী ও ইছতিলাহী অর্থ [১৫৭-১৫৯] ناسخ (নাসিখুন) ইস্মে ফায়িল এর একবচন। نسخ (নাস্খুন) মূলধাতু থেকে নির্গত। যার লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, বদল করা, দূরীভূত করা, স্থলাভিষিক্ত করা, বাতিল করা, পরিবর্তণ করা, চুড়ান্ত ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি। তবে ناسخ (নাসিখুন) শব্দের অর্থ হচ্ছে ব্যাখাকারী।   منسوخ (মানসূখুন) শব্দটি অনুরূপ نسخ (নাস্খুন) মূলধাতু থেকে উদগত। যার লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো, বদল করা, দূরীভূত করা, স্থলাভিষিক্ত করা, বাতিল করা, পরিবর্তণ করা, চুড়ান্ত ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি। তবে منسوخ (মানসুখ)-এর অর্থ হচ্ছে যা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।’          উল্লেখ্য, নাসখুন-এর অর্থ বিভিন্ন লুগাতে এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, النسخ (আন্ নাসখু) অর্থ الازالة (আল ইযালাহ) অর্থাৎ দূরীভূত করা। (আল ইতকান ৭৩২ পৃষ্ঠা, লিসানুল আরব, আল কামুস ইত্যাদি) যেমন, মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, [১৬০]
 فينسخ الله ما يلقى الشيطان.
 অর্থঃ- অতঃপর আল্লাহ পাক দূরীভূত করেছেন শয়তান যা মিশ্রণ করেছে।” (সূরা হজ্জ/৫২) التبديل (আত্ তাব্দীল) তথা স্থলাভিষিক্ত করা। যেমন আল্লাহ পাক-এর বাণী, [১৬১]
 واذا بدلنا اية مكان اية.
 অর্থঃ- আমি যখন এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত আনয়ন করি।” (সূরা নহল/১০১) النقل (আন্ নাক্বলু) তথা পরিবর্তন করা, যেমন বলা হয়, نسخت الكتاب بكتاب اخر অর্থঃ- এক কিতাবকে আরেক কিতাবের দ্বারা পরিবর্তন করা হয়েছে।الابطال (আল ইব্ত্বাল) তথা বাতিল করা। যেমন বলা হয়, نسخ الحاكم القائد অর্থঃ- হাকিম চালককে বাতিল করেছেকারো কারো মতে ناسخ (নাসিখুন)-এর অর্থ হচ্ছে شارح (শারিহুন্) অর্থাৎ ব্যাখ্যাকারী। আর منسوخ (মান্সূখুন)-এর অর্থ হচ্ছে مشروح (মাশরুহুন্) অর্থাৎ যাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।  আর ইছতিলাহী বা শরয়ী অর্থে ঃ ناسخ (নাসেখ) ও منسوخ (মানসূখ)-এর বিভিন্ন সংজ্ঞা রয়েছে। যেমন, আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, [১৬২]
 الناسخ هو رفع الحكم الشرعى بدليل شرعى متاخر.
 অর্থঃ- পূর্ববর্তী শরয়ী হুকুমকে পরবর্তী  শরয়ী হুকুম দ্বারা ব্যাখ্যা করাকেই ناسخ (নাসেখ) বলে।” (নাওয়াসিখুল কুরআন) আল আওনুল কবীরকিতাবে উল্লেখ আছে, [১৬৩]
 الناسخ هو بيان انتهاء حكم شرعى بطريق شرعى متراخ عنه.
 অর্থাৎ- পূর্বের শরয়ী বিধানকে পরের কোন শরয়ী বিধান দ্বারা ব্যাখ্যা করাকেই নাসেখ বলা হয়।কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, [১৬৪-১৬৬]
 الناسخ هو رفع الشارع حكما شرعيا بدليل شرعى متراخ عنه.
 অর্থাৎ- শরীয়ত প্রণেতা কর্তৃক কোন শরয়ী প্রমাণ দ্বারা পূর্বের কোন শরয়ী বিধানকে ব্যাখ্যা করাকে নাসেখ বলে।” (কানযুল ঈমান, খাযায়িনুল ইরফান, উছূলুশ শাশী) নাসেখ বা শারেহ ও মানসূখ বা মাশরূহ-এর মেছাল বা উদাহরণ মিযানুল আখবারগ্রন্থকারের ভাষ্য মতে, “পূর্ববর্তী কোন শরীয়তের বিধানকে পরবর্তী কোন শরয়ী বিধানের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করাকে নাসেখ বলে।যেমন, “ছহীহ ইবনে মাজাহ শরীফের৮৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে, [১৬৭]
 حدثنا حاتم بن نصر الصبى ثنا محمد بن يعلى زنبور ثنا عنبسة بن عبد الرحمن عن عبد الله بن نافع عن ابيه عن ام سلمة قالت نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن القنوت فى الفجر.
 অর্থঃ- হযরত হাতিম ইবনে সাব্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি .... হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়তে নিষেধ করেছেন।”           আর এই হাদীছ শরীফ খানাই হচ্ছে কুনূতে নাযেলাকে নাসেখ বা ব্যাখ্যাকারী। অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে পূর্ববর্তী যে বিধান ছিলো তা পরবর্তী নির্দেশের দ্বারা মানসূখ বা ব্যাখ্যাকরা হয়েছে।  কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ  দ্বারা আয়াত শরীফ মানসূখ বা মাশরূহ্ হওয়ার মেছাল  নাওয়াসেখুল কুরআনকিতাবের ২৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,  [১৬৮]
 يايها الذين امنوا اتقوا الله حق تقاته ... الخ.
 অর্থঃ- হে ইমানদারগণ! আল্লাহ পাককে ভয় করার মত ভয় কর।”  এ আয়াত শরীফের হুকুম, [১৬৯-১৭১]
 فاتقوا الله ما استطعتم.
  এ আয়াত শরীফের মাধ্যমে মানসূখ বা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে, “অতঃপর তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় কর তোমাদের শক্তি ও সামর্থ অনুসারে।আর
  فاقتلوا المشركين حيث وجدتموهم.
 অর্থঃ- তোমরা মুশরিকদের যেখানেই পাবে হত্যা কর।এ আয়াত শরীফ খানা لا اكره فى الدين. অর্থঃ- দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই।এ আয়াত শরীফের মাধ্যমে মানসূখ বা ব্যাখ্যা করাহয়েছে। অতএব, উল্লিখিত আয়াত শরীফগুলোর মধ্যে প্রথমে উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহ হচ্ছে হৃশুঃèম্পঞ্জ মানসুখ। অর্থাৎ পরে উল্লিখিত আয়াত শরীফগুলো দ্বারা পূর্ববর্তী আয়াত শরীফের হুকুমকে মানসূখতথা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।  হাদীছ শরীফ দ্বারা হাদীছ শরীফ মানসুখ বা মাশ্রূহ হওয়ার মেছাল বা উদাহরণ হযরত রবিয়াহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, [১৭২-১৭৫]

وعن ربيعة قالت ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال انى نهيتكم عن الثلاث عن زيارة القبور فزوها فقد اذن محمد صلى الله عليه وسلم فى زيارة قبر امه.

অর্থঃ- হযরত রবিয়াহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে তিনটি জিনিস থেকে নিষেধ করেছিলাম তন্মধ্যে একটি  হচ্ছে কবর যিয়ারত করা। তবে এখন থেকে কবর যিয়ারত করো। এমনকি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং তাঁর আম্মাজান আলাইহাস্ সালাম-এর মাযার শরীফ যিয়ারতের অনুমতিও দিয়েছেন।” (নাওয়াসিখুল কুরআন, আল ইতকান, মিযানুল আখবার)            উল্লিখিত হাদীছ শরীফের প্রথম অংশ যাতে ক্ববর যিয়ারত নিষেধ করা হয়েছিল তা মানসূখ বা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কেননা পরবর্তী হাদীছ শরীফের অংশ তথা এখন থেকে কবর যিয়ারত করো এর দ্বারা পূর্বের হুকুম মানসূখ বা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাই প্রথম অংশকে মানসূখ বা মাশ্রূহ এবং দ্বিতীয় অংশকে নাসিখ বা শারেহ অর্থাৎ ব্যাখ্যাকারী বলা হয়। (নাওয়াসিখুল কুরআন, ইতকান, মিযানুল আখবার) নাসেখ বা শারেহ ও মানসূখ বা মাশরূহ্-এর প্রকারভেদ হযরতুল আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি আল ইতকানকিতাবের ৩য় খ-ের ৭৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, [১৭৬-১৭৭]
 النسخ فى القران على ثلاثة اضرب احدها ما نسخ تلاوته وحكمه معا الثانى مانسخ حكمه دون تلاوته الثالث مانصخ تلاوته دون حكمه.
 অর্থাৎ- পবিত্র কুরআন শরীফে নাসেখ ও মানসূখ তিন প্রকার।প্রথম প্রকার হচ্ছেঃ যার তিলাওয়াত ও হুকুম একই সঙ্গে রহিত হয়ে গেছে। এর উদাহরণে যে আয়াত শরীফকে উল্লেখ করা হয়েছে তাহলো-
 كان فيما انزل عشر رضعات معلومات بخمس معلومات.
 অর্থঃ- দশবারের পরিবর্তে পাঁচবার দুধ পান করানোর ব্যাপারে আল্লাহ পাক আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করেন।” (নাওয়াসিখুল কুরআন) উক্ত আয়াত শরীফের হুকুম ও তেলাওয়াত উভয়টি মানসূখ হয়ে গেছে। এ সম্পর্কে আবূ দাউদ শরীফেবলা হয়েছে, [১৭৮]
 وعن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كان فيها انزل الله من القران عشر رضعات يحرمن ثم نسخن بخمس معلومات يحرمن فتوفى النبى صلى الله عليه وسلم وهن يقرا من القران.
 অর্থঃ- হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, দশবার দুধ পান করানো হলে তাতে হুরমত প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর আল্লাহ পাক আবার নাযিল করেন, “দশবারের পরিবর্তে পাঁচবার দুধ পান করালে হুরমত প্রতিষ্ঠিত হবে।এ অংশের দ্বারা পূর্বের অর্থাৎ দশবারের হুকুমও মানসূখ বা ব্যাখ্যা হয়ে যায়। অতঃপর হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত তথা বেছাল মুবারকের পর তার সংশ্লিষ্ট اخوتكم من الرضعات এ আয়াত শরীফের অংশটুকু মানসূখ হিসাবে পাঠ করা হয়।”          অতএব, প্রমাণিত হল যে, দশবারের স্থানে পাঁচবার দুধ পান করা সংক্রান্ত আয়াতের মাধ্যমে দশবার দুধ পান করানোর আয়াত শরীফের হুকুম ও তেলাওয়াত উভয় মানসূখ বা ব্যাখ্যাহয়ে গেছে। অবশ্য পরবর্তীতে উভয়টিই মানসূখহয়ে গেছে। দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে, [১৭৯-১৮০]
 مانسخ حكمه دون تلاوته.
 অর্থঃ- যে আয়াত শরীফের হুকুম মানসূখ বা ব্যাখ্যাহয়ে গেছে কিন্তু তিলাওয়াত এখনও বাকী রয়েছে।যেমন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
 الزانى لاينكح الا زانية ... الخ.
 অর্থঃ- যিনাকারী পুরুষ- যিনাকারীনী মহিলা ব্যতীত বিবাহ করবেনা।” (সূরা নূর/৩) এ  আয়াত শরীফের হুকুম বা বিধানঃ
 وانكحوا الايامى منكم.
  অর্থঃ- তোমাদের মধ্যে যারা বিধবা তথা বিবাহহীন রয়েছে তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও।” (সূরা নূর/৩২) এ আয়াত শরীফখানার মাধ্যমে মানসূখ বা মাশরূহহয়েছে। তৃতীয় প্রকার হচ্ছে,
 ما نسخ تلاوته دون حمكه.
 অর্থঃ- যে সমস্ত আয়াত শরীফের হুকুম শুরু থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ তথা জারী আছে এবং থাকবে কিন্তু তেলাওয়াত মানসূখ হয়ে  গেছে।যেমন, তেলাওয়াত মানসূখ আয়াত শরীফখানা হচ্ছে, [১৮১]
 الشيخ والشيخة اذا زنيا فارجموهما الخ.
 অর্থঃ- বিবাহিত ও বিবাহিতা যদি যিনা বা ব্যভীচারের কাজে লিপ্ত হয়ে যায়, তখন তাদের উভয়কে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলো।” (নাওয়াসিখুল কুরআন)        অর্থাৎ উক্ত আয়াত শরীফ খানার হুকুম এখনও জারী রয়েছে। তবে তেলাওয়াত মানসূখহয়ে গেছে। রজমেরযে বিধান রয়েছে তা এর উপর ভিত্তি করেই কার্যকর করা হয়ে থাকে।   কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, আমভাবে নাসেখ ও মানসূখ চার প্রকার।  যথাঃ  (১) ناسخ القران بالقران. এখানে পবিত্র কুরআন শরীফের এক আয়াত শরীফ দ্বারা অপর আয়াত শরীফ উদ্দেশ্য অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফের  এক আয়াত অন্য আয়াত শরীফকে শারেহ বা ব্যাখ্যাকারী। যেমন, [১৮২]
 انزل الله عشر رضعات معلومات.
 অর্থঃ- আল্লাহ পাক দশবার দুধ পানের বিধানের পরিবর্তে।এ আয়াত শরীফ খানা بخمس معلومات. অর্থঃ- পাচঁবার।এ আয়াত শরীফের মাধ্যমে মানসূখ হয়েছে। অতএব, প্রথমটি মাশরূহ এবং পরেরটি শারেহ (পরে উভয়ই মানসূখ বা মাশরূহ হয়ে যায়।) (২) ناسخ الحديث بالحديث. অর্থাৎ- হাদীছ শরীফের মাধ্যমে হাদীছ শরীফকে মানসূখ বা মাশ্রূহ করা।        যেমন, [১৮৩]
 وعن ربيعة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال انى نهيتكم عن الثلاث عن زيارة القبور.
 অর্থঃ- হযরত রবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি তোমাদেরকে তিনটি জিনিস করা থেকে নিষেধ করেছি। তার মধ্যে একটি হলো কবর যিয়ারত করা।এটা মানসূখ বা মাশরূহ হয়ে গেছে। কেননা নিম্নের হাদীছ শরীফ খানা তার নাসেখ বা শারেহ। আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরে বলেন, فزروها. তোমরা এখন কবর যিয়ারত কর।” (নাওয়াসিখুল কুরআন) এ সম্পর্কে বুখারী শরীফের১ম খ-ের ১৩৬ পৃষ্টায় ৬নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে, [১৮৪-১৯১]
 وعن انس رضى الله عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت شهرا ثم تركه. فقوله ثم تركه يدل على ان القنوت فى الفرائض كان ثم نسخ.
 অর্থঃ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র একমাস (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পড়ে ছিলেন। অতঃপর এ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শেষের বর্ণনা (ثم تركه অতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ করেছেন) এ কথার দ্বারা এটাই প্রমাণ করে যে, ফরয নামাযসমূহে কুনূতে নাযেলা ছিলো, পরে তা মানসুখ বা মাশ্রূহ্ হয়ে গেছে। (বুখারী, মুসলীম, তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত, আশরাফুত তাওযীহ, মিরায়াতুল মানাজীহ, ইরশাদুস্ সারী, ফতহুল বারী, উমদাতুল কারী) অর্থাৎ قنت شهرا (একমাস কুনূত পড়েছেন) এ অংশটুকু হচ্ছে মানসূখ বা মাশ্রূহ।’  আর ثم تركه. (অতঃপর তা পরিত্যাগ করেন।) এ অংশটুকু নাখেস বা শারেহ।             তাছাড়া আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সরাসরি হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার মাধ্যমে ফজরে কুনূতে নাযেলাপাঠ করাকে নিষেধ করে দেন তারও বহু প্রমাণ হাদীছ শরীফে রয়েছে।  যেমন, “ইবনে মাজাহ শরীফকিতাবের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১৯২]
 وعن ام سلمة قالت نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن القنوت فى صلوة الفجر.
 অর্থঃ- হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়তে নিষেধ করেছেন।” (৩) ناسخ الحديث بالقران অর্থঃ- পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের মাধ্যমে হাদীছ শরীফ মানসূখ বা মাশ্রূহ হওয়া।এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের১ম খ-ের ১৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, [১৯৩]
 عن انس ابن مالك قال قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على رعل وذكوان.
 অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাযে রিল, এবং যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদ দোয়ায় এক মাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন।উক্ত হাদীছ শরীফ খানা সূরা আলে ইমরানের১২৮নং আয়াত শরীফ [১৯৪]
 ليس لك من الامر شئ.
  অর্থঃ- এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।এর মাধ্যমে মানসূখ বা মাশ্রূহ হয়ে যায়। যার ফলে পরবর্তীতে কুনূতে নাযেলা-এর আমল মানসূখ হয়ে গেছে। যেমন, “তাফসীরে কুরতুবীর৪র্থ খ-ের ২০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১৯৫]
 ان هذه الاية ناسخة للقنوت الذى كان النبى صلى الله عليه وسلم يفعله بعد الركوع فى الركعة الاخير من الصبح.
 অর্থঃ- নিশ্চয়ই ليس لك من الامر شئ (এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।)এ আয়াত শরীফখানাই হচ্ছে কুনূতে নাযেলাকে নাসেখ বা ব্যাখ্যাকারী। যে কুনূতে নাযেলা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকূর পর পাঠ করতেন।  উল্লেখ্য, আয়াত শরীফ দ্বারা হাদীছ শরীফ মানসূখ বা মাশ্রূহহওয়ার আরেকটি প্রমাণ হলো। হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, [২০০]
 وعن روى ارقم رضى الله تعالى عنه قال كنا نتكلم فى الصلوة الخ.
 অর্থঃ- হযরত আরক্বাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ইসলামের শুরুতে নামাযে কথা বলতাম পরে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এর
 ومن يقنت منكن لله ورسوله الخ.
  অর্থঃ- তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উদ্দেশ্যে নীরব থাকে।এ আয়াত শরীফখানা অবতীর্ণ হলে আমরা নামাযে কথা বলা থেকে বিরত থাকলাম। (তাফসীরে কুরতুবী, লিসানুল আরব) কেননা এ আয়াত শরীফখানার মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদের  নামাযে  নীরবতা তথা কথা না বলার জন্য নির্দেশ করেছেন।অতএব, ومن يقنت منكن لله الخ. এ আয়াত শরীফখানা নাসেখ বা শারেহ। আর হযরত আরক্বাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ খানা অর্থাৎ নামাযে কথা বার্তা সংক্রান্ত হাদীছ শরীফখানা মানসূখ বা মাশ্রূহ্।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, লুগাতুল  হাদীছ) (৪) ناسخ القران بالحديث. অর্থঃ- হাদীছ শরীফের দ্বারা কুরআন শরীফের আয়াতের হুকুম মানসূখ হয়ে যাওয়া। আর  এ ব্যাপারে ইমাম ও মুজতাহিদগণের মাঝে কিছু ইখতিলাফ বা মতপার্থক্য রয়েছে।             হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুফিয়ান সাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখদের মতে হাদীছ শরীফ দ্বারা কুরআন শরীফের আয়াতের হুকুম মানসূখ বা মাশ্রূহ হয় না। তাদের দলীল হলোঃ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, [২০১-২০৩]
 اذا روى لكم عنى حديث فاعرضوه على كتاب الله فان وافق الكتاب فاقبلوه والا فردوه.
 অর্থঃ- হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে, যখন  তোমাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে কোন হাদীছ শরীফ বর্ণনা করা হবে তখন তোমরা তা আল্লাহ পাক-এর কালামুল্লাহ শরীফ-এর সাথে মিলিয়ে দেখবে। যদি এর সঙ্গে মিলে যায় তবে তা গ্রহণ করবে। আর যদি না মিলে তবে তা গ্রহণ করবেনা।” (মিশকাত শরীফ, নাওয়াসিখুল কুরআন)  তারা দলীল হিসেবে আর একটি হাদীছ শরীফ পেশ করে থাকে তা হচ্ছে, كلامى لاينسخ القران. অর্থঃ- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার বাণী কুরআন শরীফের বাণীকে মানসূখ করে না।আর আমাদের ইমাম, ইমামে আযম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও তাঁর মাযহাবের অনুসারী ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ও মালিকী মাযহাবের ইমাম, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে হাদীছ শরীফ দ্বারা পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের হুকুম মানসূখ বা মাশ্রূহ হয়। আমাদের দলীল হলোঃ মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন, [২০৪]
 كتب عليكم اذا حضر احدكم الموت ان ترك خيران الوصية للوالدين والا قربين الاية.
 অর্থঃ- যখন তোমাদের কারো ইন্তিকালের সময় উপস্থিত হয়, আর সে যদি কিছু ধনসম্পদ ত্যাগ করে যায়, তবে তার ওছিয়ত পালন করা আবশ্যক তার পিতা-মাতা ও নিকটতম আত্মীয় স্বজনদের জন্য।” (সূরা বাক্বারা/১৮০)  এ আয়াত শরীফের হুকুমঃ
 لاوصية لوارث
  অর্থঃ- ওয়ারিছের জন্য কোন অছিয়ত নেই।এ হাদীছ শরীফ দ্বারা মানসূখ বা মাশ্রূহ হয়ে যায়। যেমন, এ প্রসঙ্গে তিরমিযী শরীফেবর্ণিত রয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, [২০৫]
 ان الله اعطى لكل ذى حق حقه فلاوصية لوارث.
 অর্থঃ- আল্লাহ পাক প্রত্যেক হক্বদারের হক্ব দিয়েছেন অর্থাৎ নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং এখন থেকে কোন ওয়ারিছের পক্ষে ওছিয়ত করা বৈধ নয়।এর সমর্থন করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহুমা। তিনি বলেন, [২০৬-২০৮]
 قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لاوصية لوارث الا ان تجيزه الورثة.
 অর্থঃ- হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোন ওয়ারিছদের পক্ষে ওয়াছিয়ত করা বৈধ নয়, তবে হ্যাঁ অন্যান্য ওয়ারিছগণ যদি অনুমতি দেন তা অন্য কথা।” (আহকামূল কুরআন, আল ইতকান, তিরমিযী)          অতএব, বর্ণিত আয়াত শরীফ খানা বর্ণিত হাদীছ শরীফদ্বয়ের মাধ্যমে মানসূখ বা মাশ্রূহ হয়েছে। তাছাড়া মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন, [২০৯-২১৫]
 فامسكوهن فى البيوت.
   অর্থঃ- অতঃপর (ব্যভিচারিনী) মহিলাদের গৃহে আবদ্ধ রাখ।” (সূরা নিসা/১৫) এ আয়াত শরীফখানা
 الثيب بالثيب جلد مائة.
 অর্থঃ- বিবাহিত বিবাহিতা ব্যভিচারে লিপ্ত হলে একশত দোররা মারতে হবে।” (আবূ দাউদ, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুযাহিরে হক্ব, মুসনদে আহমদ) এ হাদীছ শরীফের মাধ্যমে মানসূখ বা মাশ্রূহ হয়েছে। অনুরূপ আরো অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে।  অতএব, সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হানাফী ও মালিকী মাযহাব মতে হাদীছ শরীফ দ্বারাও আয়াত শরীফের হুকুম মানসূখ বা মাশ্রূহহয়। যেমন, উপরোক্ত ক্ষেত্রে হয়েছে। নাসেখ বা শারেহ ও মানসূখ বা মাশ্রূহ্-এর ফায়দা বা উপকারিতা নাওয়াযিখুল কুরআন, মীযানুল আখবার ও আল ইতকানগ্রন্থকার বলেন, একই বিষয়ে দুটি বিধান আসলে পূর্বের বিধানকে প্রাধান্য না দিয়ে পরের বিধানকেই প্রাধান্য দিতে হবে; এবং বুঝতে হবে যে, পূর্বের বিধানের চেয়ে পরের বিধানটি সহজসাধ্য কিংবা এতে অন্য কোন কল্যাণ রয়েছে।  এ প্রসঙ্গে নাওয়াসিখুল কুরআননামক কিতাবের ১৪ ও ১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২১৬]
 فما ثبت فيه مجكما غير منسوخ نفذناه وعملناه وماكان منسوخا منه لم نعمل به.
 অর্থঃ- শরীয়তের বিধানের মধ্যে মানসূখ ব্যতিত কোন শক্তিশালী দলীলের প্রমাণ পেলে আমরা তা বাস্তবায়িত করতাম এবং তার উপর আমল করতাম। আর মানসূখ বা মাশ্রূহ কোন বিধান পেলে আমরা  এর উপর আমল করার থেকে বিরত থাকতাম। অর্থাৎ আমরা মানসূখের উপর কোন আমল করতাম না।হযরত ইমাম জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, [২১৭]
 المنسوخ لايعمل به.
 অর্থঃ- মানসূখ বা মাশ্রূহ এমন একটি বিধান যার উপর কোন আমল করা যাবেনা।” (নাওয়াসিখুল কুরআন) স্মর্তব্য যে, ‘কুনূতে নাযেলারবিধানটিও অনুরূপ একটি বিধান। যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুনাফিকদের প্রতি বদ্দোয়ায় একমাস ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। পরে কুনূতে নাযেলা মানসূখ বা মাশ্রূহ হয়ে যায়।             মূলকথা হলো- কুনুতে নাযেলা সম্পর্কিত মাসয়ালাটি যেহেতু নাসেখ-মানসূখএর সাথে সম্পর্কযুক্ত সেহেতু নাসেখ ও মানসূখসম্পর্কে মোটামুটি বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। যদ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, কুরআন শরীফের আয়াতের মাধ্যমে এবং হাদীছ শরীফের মাধ্যমেও হাদীছ শরীফ-এর আমল ও হুকুম মানসূখ হয়ে যায়। আর কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারাই কুনূতে নাযেলামানসূখ বা মাশ্রূহ হয়েছে।     অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, ‘কুনূতে নাযেলাসম্পর্কিত মানসূখহয়ে যাওয়া হাদীছ শরীফগুলোর উপর ভিত্তি করে ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা এবং এটাকে জায়িয ফতওয়া দেয়া শরীয়ত মুতাবিক সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। কারণ, এতে শরীয়তের বিধানকেই মূলতঃ অস্বীকার করা হয়। (অসমাপ্ত) পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন  

0 Comments: