“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-৬)


পিডিএফ-

“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-৬)


হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া। হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লেখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক। তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে সূরা মায়িদা৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
 لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.
  অর্থঃ-তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল  বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ শিয়া, খারিজী, মুতাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরক্বাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ওহাবী সম্প্রদায়  উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ছূরা কুনূতে নাযেলাসম্পর্কেও সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের প্রতি বদ্ দোয়াকরার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও মুছল্লীদেরকে ফজর নামাযে’ ‘কুনূতে নাযেলাপাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্যে তারা ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলাপাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।  অথচ কুনূতে নাযেলাসম্পর্কিত ফতওয়ায়ে দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন যা ইমামে আযম, হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হানাফী মাযহাবের সমস্ত ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খ-ন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।  তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে সাধারণ লোক মনে করবে হানাফী মাযহাব মতে বোধ হয় ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।অথচ শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম করেছে সেটাকে জায়িয বা হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করার কারণে একটি ফরয আমল নামাযঅনায়াসে ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে।   অথচ নামায হচ্ছে, দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায তরক করা, ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে অবহেলা করা, খুশু-খুযূর সাথে নামায আদায় না করা, হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ।  যেমন মিশকাত শরীফ”-এর কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাদ্বায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
 عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
 অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়। আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
  من ترك الصلوة حتى مضى وقتها ثم قضى عذاب فى النار حقبا والحقبة ثمانون سنة والسنة ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان مقداره الف سنة.
 অর্থঃ- যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, এমনকি নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে জাহান্নামে এক হুক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হুক্বা হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের সমান।” (মাজালিসুল আবরার, আল্ মানাসিক)     হাদীছ শরীফের বর্ণনা মুতাবেক হুক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর * ৩৬০ দিন = ২৮৮০০ দিন * ১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।) অতএব, এক হুক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর। উল্লেখ্য, ক্বাযা নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে আদায় করেছে। ফরয নামায যথা সময় আদায় না করার কারণেই তাকে এক হুক্বা শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দিবেন। অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায় করলেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি বা রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায় করবেনা আর তওবাও করবে না, তাদের যে কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।  নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা ফউত হবার পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হুক্বা তথা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি ভোগ করতে হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায় না করলে কত কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। মূলকথা, যারাই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয ফতওয়া দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ করে দেয়ার মাধ্যমে লানত বা কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।  প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে কায্যাব ও উলামায়ে ছূরা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রই সর্বদা করে যাচ্ছে। কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে যেন সাধারণ মুসলমানগণ নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল ফতওয়া দিচ্ছে তারাও যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে তওবা করে হক্বের উপর ফিরে আসতে পারে, সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে, সে উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপ্রকাশ করা হলো। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন) (পূর্ব প্রকাশিতের পর) কুনূতে নাযেলা পাঠ করা সর্ম্পকে তাবিয়ী, তাবে তাবেয়ী, তথা ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের বক্তব্য ও আমল পূর্ববর্তী আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সত্তর জন বুযূর্গ ও ক্বারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নির্মমভাবে শহীদ করার কারণে শহীদকারী রি, য্কাওয়ান ও আছিয়্যাহ গোত্রত্রয়ের প্রতি বদ্দোয়াকরার লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস কুনূতে নাযেলাপাঠ করেন। এটাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রথম ও শেষ কুনূতে নাযেলাপাঠ। অর্থাৎ এর পূর্বে ও পরে আর কখনই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। কারণ, একমাস কুনূতে নাযেলাপাঠ করার পর তা মানসূখহয়ে যায়।  যেমন,এ প্রসঙ্গে হিদায়া-এর শরাহ আইনীকিতাবের ২য় খ-ের ৫৯৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে, [৩২১-৩২২]
 ولابى حنيفة ومحمد انه اى ان القنوت فى الفجر منسوخ ..... ولامتابعة فيه اى فى المنسوخ لان الاتباع فيه لا يجوز.
 অর্থঃ- বিখ্যাত তাবিয়ী ইমামে আযম, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে অর্থাৎ হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার বিধান মানসূখহয়ে গেছে। আর মানসূখবিষয়কে অনুসরণ করা বা এর উপর আমল করা সম্পূর্ণ নাজায়িয বা হারাম।’ (আইনুল হিদায়া) আর মানসূখহয়ে যাওয়ার কারণেই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সময়ে বহু যুদ্ধ-জিহাদ ও বালা-মুছীবত সত্ত্বেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলাপাঠ করাকে বিদ্য়াত বলে মন্তব্য করেছেন।  নাসাঈ শরীফ”-এর ১ম খ-ের ১৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩২৩]
 اخبرنا قتيبة عن خلف هو ابن خليفة عن ابى مالك الاشجعى عن ابيه قال صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم فلم يقنت وصليت خلف ابى بكر فلم يقنت وصليت خلف عمر فلم يقنت وصليت خلف عثمان فلم يقنت وصليت خلف على فلم يقنت ثم قال يابنى انها بدعة.
 অর্থঃ- হযরত ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত কুতাইবা রহমাতুল্লাহি আলাইহি আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, তিনি আবার খাল্ফ যিনি ইবনে খালীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি নামে প্রসিদ্ধ এর থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি হযরত আবু মালিক আশজায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত আবু মালিক আশজায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তাঁর পিতা বলেন, আমি হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে জামায়াতে নামায আদায় করেছি  কিন্তু রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ফজর) নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে জামায়াতে নামায আদায় করেছি তিনিও কোন নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। একইভাবে হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহ আনহু এর পিছনে নামায পড়েছি কিন্তু তাঁরা কেউই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। অতঃপর হযরত মালিক আশজায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে লক্ষ্য করে তাঁর পিতা বললেন, হে আমার বৎস! নিশ্চয়ই (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।মূলতঃ আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হায়াত মুবারক বা তাঁর উপস্থিতিতেই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার আমল মানসূখহয়ে যাওয়ার কারণে এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পরবর্তীতে কুনূতে নাযেলার আমল পরিত্যাগ করার কারণে ও এটাকে বিদ্য়াত বলে ফতওয়া দেয়ার কারণেই অনুসরণীয় তাবিয়ীন, তাবেতাবিয়ীন তথা ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে বিদ্য়াত ও নাজায়িয বলেছেন। আর কুনূতে নাযেলাতরক করাকে ফরয-ওয়াজিব বলে ফতওয়া দিয়েছেন।  নিম্নে কুনূতে নাযেলা সম্পর্কিত তাবিয়ীন, তাবেতাবিয়ীন তথা ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম গণের বক্তব্য ও আমল তুলে ধরা হলো- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পর  তাবিয়ী, তাবে তাবেয়ী তথা ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণও কখনো ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি বরং এটাকে বিদ্য়াতবলে মন্তব্য করেছেন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত মুবারকের পর যেরূপ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি, তদ্রুপ হযরত তাবিয়ী, তাবে তাবিয়ী তথা ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণও কখনো ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি বরং এটাকে বিদ্য়াতবলে মন্তব্য করেছেন। যেমন বিখ্যাত ইমাম ও মুজতাহিদ হযরত ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এ সর্ম্পকে আবু দাউদ শরীফ”-এর ১ম খ-, ৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,  [৩২৪]
 ولم ير ابن المبارك القنوت فى الفجر.
 অর্থঃ- হযরত ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহিকে ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে দেখা যায়নি।  উল্লেখ্য যে, কাফিরদের প্রতি বদ দোয়ায় যে কুনূত ফজরের নামাযে পড়া হতো তাকে কুনূতে নাযেলা বলে। ফতওয়ায় যে কুনূত সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে তা কুনূতে নাযেলা।।  এ সর্ম্পকে হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহিহি-এর মুওয়াত্তাশরীফের শরাহ আওজাযুল মাসালিক”-এর ২য় খ-, ৩০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩২৫]
 وقنوت اللعن المذكور فى الرواية محمول على القنوت المخصوص الذى فيه لعن الكفرة المسمى بقنوت النوازل.
 অর্থঃ- উক্ত বর্ণনার মধ্যে যে লানত তথা বদ্দোয়ার কুনূত সম্পর্কে বলা হয়েছে, সে কুনূতটি সুনির্দিষ্টভাবে কাফিরদের প্রতি বদ্দোয়ায় পড়া হয়। আর এই কুনূতকেই কুনূতে নাযেলা হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে যাওয়ায় হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজেও তা আমল করেননি এবং অন্যকেও আমল করতে নিষেধ করেছেন। যেমন, “আওজাযুল মাসালিক”-এর ২য় খ-, ৩০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩২৬]
 وهذا صريح فى نسخ قنوت اللعن ولذا قال مالك ليس عليه العمل.
 অর্থঃ- এটা সুস্পষ্ট যে, লানতের কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়ে গেছে। তাই হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এর উপর আমল করা যাবে না তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয।অধিকাংশ ইমাম-মুজতাহিদগণ কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফের উপর আমল করেছেন। যেমন, “আবু দাউদ শরীফ”-এর ১ম খ-, ৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩২৭]
 وعن ابى مالك الاشجعى قال قلت لابى يا ابت انك صليت خلف رسول الله وابى بكر وعمر وعثمان وعلى بن ابى طالب ههنا بالكوفة نحوا من خمس سنين أكانوا يقنتون قال اى بنى محدث حدثنا صالخ بن عبد الله حدثنا ابو عونة عن ابى مالك الاشجعى بهذا الاسناد نحوه بمعناه قال ابو عيسى هذا حديث حسن صحيح العمل عليه عند اكثر اهل العلم.
 অর্থঃ- হযরত আবূ মালিক আশজায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি আমার পিতাকে লক্ষ্য করে বললাম, হে আমার পিতা! আপনি স্বয়ং হযরত রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে নামায আদায় করেছেন, অনুরূপভাবে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উছমান যিন্ নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং এখানে কুফায় হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে প্রায় পাঁচ বৎসর জামায়াতে নামায আদায় করেছেন, তারা কি সকলেই ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন? জবাবে তাঁর পিতা (হযরত তারিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বললেন, হে বৎস! এটা এখন করলে বিদয়াত হবে। ইমাম আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আবূ আওয়ানা-এর মাধ্যমে আবূ মালেক আশজায়ী রহমতুল্লাহ আলাইহি-এর কাছ থেকে ছালেহ ইবনে আব্দুল্লাহ বর্ণনা করেছেন যে, এ হাদীছ শরীফখানার সনদের ব্যাপারে আবূ ঈসা বিন ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিহি বলেন, এ হাদীছ শরীফখানা হাসান ছহীহ। এর উপর অধিকাংশ আহলুল ইল্ম তথা ইমাম-মুজতাহিদগণ আমল করেছেন। অর্থাৎ অধিকাংশ ইমাম-মুজতাহিদগণ উক্ত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করেছেন। (অনুরূপ তুহফাতুল আহওয়াযী ২য় খ- ৪৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।) বুখারী শরীফ”-এর ১ম খ-, ১৩৬ পৃষ্ঠার ৬নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে, [৩২৮]
 وعن انس ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت شهرا ثم تركه فقوله ثم تركه يدل على ان القنوت فى الفرائض كان ثم نسخ قاله العينى ايضا.
 অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করার পর উহা পরিত্যাগ করেছেন। قوله ثم تركه ঃ অতঃপর পরিত্যাগ করেছেন এ কথার দ্বারা দালালত বা প্রমাণ করে যে, কুনূতে নাযেলা সমস্ত ফরয নামাযসমূহে ছিল অতঃপর তা মানসুখ হয়ে যায়। অনুরূপ হযরত ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি  আলাইহিও বলেছেন।   বিখ্যাত তাবিয়ী হযরত ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতেও কুনূতে নাযেলা মানসুখ। যেমন, এ সম্পর্কে মিরয়াতুল মানাজীহ”-এর ২য় খ-, ২৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩২৯] উর্দূ কম্পোজ করতে হবে  অর্থঃ- ফজর নামাযে যে কুনূতে নাযেলা ছিল তা শুধু মাত্র এক মাস ছিল। অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে যায়। আর এই হাদীছ শরীফ খানাই ইমামে আযম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দলীল।” “ছহীহ মুসলিম শরীফ”-এর ১ম খ-, ২৩৭ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে, [৩৩০]
 وذهب ابو حنيفة واحمد واخرون الى انه لاقنوت فى الصبح.
 অর্থঃ- ইমাম আযম, হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং পরবর্তী অপরাপর সকলের মতে ফজরের নামাযে কোন কুনূত-ই নেই। অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই।উল্লেখ্য যে, ছহিবুল হিদায়া রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইবনে আবি শাইবাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ওয়াল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, এবং হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখ ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়া সংক্রান্ড হাদীছ শরীফকে মানসুখ বলেছেন এবং নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফকে তারা দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। যেমন ইবনে মাজাহ”-এর ৮৯ পৃষ্ঠার উল্লেখ আছে, [৩৩১]
 من حديث ابن مسعود وانه قال لم يقنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه ثم لم يقنت قبله ولا بعده.
 অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদিয়াল্লাহু আনহু-এর থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, হযরত রসুল্লুল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র একমাস ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন। তাছাড়া এর পূর্বে এবং পরে তিনি কখনই আর কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।  ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা মানসুখ হওয়ার উপর সকল ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইজমা হয়েছে। হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ মতকেই গ্রহণ করেছেন।  যেমন এ সর্ম্পকে নাইলুল আওতার’-এর ২য় খ-, ৩৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৩২-৩৩৭]
 تمسك بهذا الطحاوى فى ترك القنوت فى الفجر قال لانهم اجمعوا على نسخه فى المغرب فيكون فى الصبح كذلك.
 অর্থঃ- হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা তরক করার মতকেই মজবুতীর সাথে গ্রহণ করেছেন। হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে, মাগরিবের নামাযের কুনূত মানসুখ হওয়ার ব্যাপারে সকল ইমামদের যেমন ইজমা হয়েছে, অনুরূপভাবে ফজরের নামাযে কুনুতে নাযেলা মানসূখ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইমামদের ইজমা হয়েছে।  (অনুরূপভাবে ফতহুল বারী২য় খ-, ৪৯০ পৃষ্ঠায়, ‘শরহুয্ যুরকানী১ম খ- ৪৫৭ পৃষ্ঠা, ‘ইরশাদুস সারী২য় খ-, ২৩৫ পৃষ্ঠা, ‘আল আইনী২য় খ-, ‘যুরকানী শরীফ১০ম খ-, ৪১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।) আরো উল্লেখ্য যে, হানাফী ও হাম্বলী মাযহাব মতে বিত্র নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কুনূত নেই। যেমন মুওয়াত্তায়ে মালিক’-এর বিখ্যাত শরাহ আওজাযুল মাসালিক”-এর ২য় খ-, ৩০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৩৮]
 فعلم بذلك ان الحنفية ولاحنابلة متفقون فى دوام القنوت الوتر دون الصبح.
 অর্থঃ- জ্ঞাতব্য বিষয় এই যে, নিশ্চয়ই হানাফী এবং হাম্বলী মাযহাব এ ব্যাপারে এক মত যে, বিত্র নামাযে সর্বদা কুনূত পাঠ করবে। কিন্তু ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করবেনা।হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর শরহুল মুহাজ্জাব”-এর ৩য় খ-, ৫০৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, [৩৩৯-৩৪১]
 ثم ان كلام الطحاوى فى شرح الاثار صريح فى نسخ قنوت النازلة.
 অর্থঃ- অতঃপর অবশ্যই হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বক্তব্য শরহে আছার’-এর মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, কুনূতে নাযেলা মানসুখ। (মায়ারিফুস সুনান ৪র্থ খন্ড) মায়ারিফুস সুনান”-এর ৪র্থ খ-, ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৪২]
 وقال ابو حنيفة لا قنوت فيه واليه ذهب ابو يوسف ومحمد بن الحسن وسائر اصحابه وابن المبارك والليث بن سعد وسفيان الثورى واحمد واسحاق ويحى بن يحى الاندلسى وذهب اليه من التابعين الاسود والشعبى وسعيد بن جبير وعمرو بن ميمون وابراهيم النخعى وطاؤس والزهرى.
 অর্থঃ- হযরত ইমাম আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজরের  নামাযে কোন কুনূতই পাঠ করা যাবে না। এ মতের উপর হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরতুল আল্লামা মুহম্মদ ইবনে হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমামে আযম, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সকল অনুসরনীয় ইমামগণের মতে যেমন হযরত ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত লাইছ ইবনে সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি, ও হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আন্দুলুসী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবে না। অনুরূপভাবে তাবিয়ীনগণের মধ্যে হযরত ইমাম আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম শাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর ইবনে মায়মুনঞ্জরহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইব্রাহীম আননাখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কোন প্রকার কুনূত পাঠ করা যাবে না। মায়ারিফুস সুনান”-এর ৪র্থ খ-, ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৪৩]
 والحديث حجة لنا فى ترك القنوت فى الفجر ويصرح فيه بانه محدث وصحيح الترمذى واعترف الحافظ فى التلخيص.
 অর্থঃ- ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা সংক্রান্ত হাদীছ শরীফ খানা আমাদের হানাফী মাযহাবের দলীল এবং এটাও সুস্পষ্ট যে, ফজরের নামাযে কুনুতে নাযেলা পড়া বিদয়াত। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই হাদীছ শরীফকে ছহীহ বলেছেন এবং হযরত ইমাম হাফিয রহমতুল্লাহি আলাইহি এই মতকেই তালখীসে প্রাধান্য দিয়েছেন।” “বুখারী শরীফ”-এর ১ম খ-, ২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৪৪]
 فعند ابى حنيفة رحمة الله تعالى ليس فى الفجر قنوت اصلا.
 অর্থঃ- হযরত ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে ফজরের নামাযে (আছলান) তথা প্রকৃতপক্ষেই কোন প্রকারের কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা নেই।” “ছহীহ মুসলিম শরীফ”-এর ৩য় খ-, ৩৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৪৫]
 وذهب ابو حنيفة واحمد واخرون الى انه لاقنوت فى الصبح.
 অর্থঃ- ইমাম আযম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং অন্যান্য ইমামগণের মতে ফজর নামাযে কোন প্রকারের কুনূত নেই।  লাউস্ সুনান”-এর ৬ষ্ঠ খ-, ৯৫ পৃষ্ঠায় এবং শরহে মায়ানিল আছারকিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৪৬-৩৪৭]
 فثبت بما ذكرنا انه لا ينبغى القنوت فى الفجر فى حال الحرب ولا غيره قياسا ونظرا على ما ذكرنا من ذلك، وهذا قول ابى حنيفة وابى يوسف ومحمد رحمهم الله تعالى.
 অর্থঃ- হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে পূর্বের যে সমস্ত যুক্তিভিত্তিক এবং দলীলভিত্তিক আলোচনা আমরা করেছি, তা থেকে এটাই প্রমানিত হল যে, যুদ্ধাবস্থায় এবং অন্যান্য সময়েও ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই। এটাই ইমাম আযম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের চুড়ান্ত অভিমত।” “আল আইনী শরহুল হিদায়া”-এর ২য় খ-, ৫৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৪৮-৩৫১]
 لابى حنيفة ومحمد رحمه الله انه اى القنوت فى الفر منسوخ متابعة فيه اى فى المنسوخ لان الاتباع فيه لايجوز.
 অর্থঃ- ইমামে আযম, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে অবশ্যই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা সম্পর্কিত বর্ণনাটি মানসূখ বা রহিত হয়েছে। আর মানসূখ হাদীছ শরীফের অনুসরণ জায়িয নেই। বরং মানসূখের অনুসরণ করা হারাম। কাজেই কনূতে নাযেলা যেহেতু মানসূখ তাই তার অনসরণ করা হারাম।” (আইনুল হিদায়া, দিরায়া, কিফায়া ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ আছে।) কুনূতে নাযেলা ফরয নামাযে এবং বিপদকালীন অবস্থায় সব নামাযে পড়তে হবে সে সর্ম্পকে হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বক্তব্য মায়ারিফুস সুনান’-এর ৪র্থ খ-ে উল্লেখ আছে, [৩৫২]
 واما القنوت فى الصلوات كلها فى النوازل فلم يقل به الا الشافعى الخ.
 অর্থঃ- মুছিবতের সময় প্রত্যেক ফরয নামাযসমুহে কুনূত পাঠ করতে হবে এরূপ কথা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি ব্যতীত আর অন্য কোন ইমাম-মুজতাহিদগণ বলেননি।উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে, [৩৫৩]
 القنوت فى صلاة الفجر وهو قول الشافعى.
 অর্থঃ- হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কথা হলো, কুনূত ফজরের নামাযে।অতএব ইমাম আযম হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি কুনূতে নাযেলা ফজর নামাযে পাঠ করা বিদয়াত, নাজায়িয ও হারামের যে ফতওয়া দিয়েছেন, সেটাই চুড়ান্ত ফতওয়া। পরবর্তী হানাফী অনুসরনীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণও যদি মাযহাবের ইমামের বিপরীত মত পোষণ করেন সেটাও বর্জনীয়। কেননা শরহে বিকায়া, হিদায়া, শামীইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “বিশ্বের মধ্যে চারটি মাযহাবই সুপ্রসিদ্ধ ও অনুসরনীয়। তাই মাযহাবের ইমামগণই হচ্ছেন সাতটি স্তরের প্রথম স্তরের ফক্বীহ। তাঁরা যেসব মাসয়ালা-মাসায়িল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেসব মাসয়ালা-মাসায়িলের বিপক্ষে পরবর্তী স্তরের ফক্বীহগণ ফতওয়া তথা সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না, যদিও ফতওয়া দেন বা সিদ্ধান্ত দেন তবে তা গ্রহণ যোগ্য তো হবেই না বরং বর্জনীয়। চাই মূল মাসয়ালা-মাসায়িল কিংবা শাখা-মাসায়িল হোকনা কেন যেহেতু তারাও মাযহাবের মুকাল্লিদ। যেমন কেউ কেউ বলে থাকে, হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ফতওয়া দিয়েছেন ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাতে কোন ক্ষতি নেই। এ কারণে উলামায়ে ছূরা মুছিবতের সময় তা পাঠ করার ফতওয়া দিয়ে মানুষের নামাযকে নষ্ট করে দিচ্ছে। যা মাযহাবের ইমাম, ইমামে আযম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও তাঁর বিশ্বখ্যাত দুশাগরেদ হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি-এর বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।  প্রথমতঃ তাদের উক্ত বক্তব্য খ-নের নিমিত্তে ইমাম ও মুজতাহিদগণের স্তরগুলো বর্ণনা করা হলো। বাকী অংশ খ-নমুলক আলোচনায় উল্লেখ করা হবে। (ইনশাআল্লাহ) ফুক্বাহায়ে কিরাম বা ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের তবক্বাহ প্রকাশ থাকে যে, ‘ফতওয়ায়ে শামীকিতাবের মুকাদ্দিমায় আছে, “ফক্বীহ আলিমগণের ক্রমান্বয়ে সাতটি তবক্বা বা স্তর রয়েছে। যেমন, “দুররুল মুখতারকিতাবে উল্লেখ আছে, [৩৫৪-৩৫৫]
 واما المقيد فعلى سبع فى طبقات الفقهاء مراتب.
 অর্থঃ- ফক্বীহগণ প্রসিদ্ধ সাতটি তবক্বা বা স্তরে বিভক্ত।প্রথম তবক্বাহঃ মুজতাহিদে মতলক্ব
 ولاولى طبقة المجتهدين فى الشرع كالاثمة الاربعة رضى الله عنهم ومن سلك مسلكهم فى تاسيس قواعد الاصول وبه يمتازون عن غيرهم.
 অর্থঃ- প্রথম তবক্বা বা স্তরটি হচ্ছে শরীয়তের মুজাতাহিদগণ। অর্থাৎ মুজতাহিদে মতলক্ব যেমন ইমাম চতুষ্টয় এবং যারা উক্ত ইমামগণের ন্যায় শরীয়তের ভিত্তি সুদৃঢ় করেছেন তাঁরাই প্রথম তবক্বাহ-এর ফক্বীহ।  দ্বিতীয় তবক্বাহঃ মুজতাহিদ ফিল মাযহাব
 الثانية طبقة المجتهدين فى المذهب كابى يوسف ومحمد وسائر اصحاب ابى حنيفة القادرين على استخراج الاحكام وان خالفوا فى بعض احكام الفروع لكن يقلدون فى قواعد الاصول وبه يمتازون عن المعارضين فى المذهب كالشافعى وغيره المخالفين له فى الاحكام غير مقلدين له فى الاصول.
 অর্থঃ- দ্বিতীয় স্তরের যারা ফক্বীহ ছিলেন যেমন হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখ ইমামে আযম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাল্লাহি আলাইহি-এর ছাত্রগণ তাঁরা সকলেই তাঁর মাযহাবের উপর তাকলীদী ছিলেন অর্থাৎ তাঁরা মাযহাবের অধীন মুজতাহিদ ছিলেন এবং ইজতিহাদ করার উপযুক্ত ছিলেন। যদিও কোন কোন আনুসাঙ্গিক মাসয়ালায় ইমামগণের সাথে মতভেদ করেছেন কিন্তু সকলেই ইমামগণের উছূলের ফায়দা অনুযায়ী মাসয়ালা নিরূপন করেছেন সে কারণেই তারা স্বাধীন মুজতাহিদ। তবে মাযহাব ও উছূলের আহকামের ব্যাপারে ইমাম আযম, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যারা বিপরীত মত পোষণ করেছেন যেমন ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আন্যান্য মাযহাব প্রণেতা যাঁরা রয়েছেন তাঁরা উছূলের ক্ষেত্রেও তাঁর গাইরে মুকাল্লিদের অর্ন্তভুক্ত।তৃতীয় তবক্বাহ ঃ মুজতাহিদ ফিল মাসায়িল
 الثالثة طبقة المجتهدين فى المسائل التى لانص فيها عن صاحب المذهب كالخصاف وابى جعفر الطحاوى وابى الحسن الكرخى وشمئس الائمة السرخسى وفخر الاسلام البزدوى وفخر الدين قاضيخان وامثالهم فانهم لايقدرون على شئى من المخالفة لا فى الاصول ولا فى الفروع لكنهم يستنبطون الاحكام فى المسائل التى لانص فيها على حسب الاصول والقواعد.
 অর্থঃ- তৃতীয় তবক্বার ফক্বীহগণ হচ্ছেন হযরত ইমাম খাছ্ছাফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবূ জাফর তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবুল হাছান কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম শামছুল আইম্মা সারাখ্সী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ফখ্রুল ইসলাম বযদুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ফখরুদ্দীন কাযীখান রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রভৃতি এরুপ স্তরের আলিমগণ তাঁরা আনুসাঙ্গিক মাসয়ালায় কিংবা উছুলের মাসায়ালায় ইমামগণের বিপরীত কিছু করতে পারতেন না। তবে যে সমস্ত মাছায়ালায় ইমামগণ পরিষ্কার সমাধান করে যাননি সেটাই শুধুমাত্র ইমামগণের নির্দ্ধারিত উছুল অনুসারে তাঁরা নির্ণয় করতেন। চতুর্থ তবক্বাহঃ আছ্হাবুত্ তাখ্রীজ
 الرابعة طبقة اصحاب التخريج من المقلدين كالرازى واضرابه فانهم لايقدرون على الاجتهاد اصلا لكنهم لاحاطتهم بالاصول وضبطهم للماخذ يقدرون على تفصيل قول ذى وجهين وحكم مبهم محتمل لامرين منقول عن صاحب المذهب او احد من اصحابه برائهم ونظرهم فى الاصول والمقايسة على امثاله ونظائره من الفروع وما فى الهداية من قوله كذا فى تخريج الكرخى وتخريج الرازى من هذا القبيل.
 অর্থঃ- চতুর্থ তবক্বা, আছহাবুত তাখরীজঃ অতঃপর হযরত ইমাম রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং সেই শ্রেণীর আলিমগণ ছিলেন চতুর্থ তবকার ফক্বীহ। তাঁরাও বস্ততঃ কোনও প্রকার মাসয়ালা নির্ণয় করতে পারতেন না কিন্তু ইমামগণের উছুলের মধ্যে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন বলে ইমাম ছাহেব কিংবা তদীয়  ছাত্রবৃন্দের কিতাবের মধ্য হতে মুজমাল ও মুব্হাম শব্দগুলি নিজেদের মতানুযায়ী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে দিতে পারতেন মাত্র। হিদায়া কিতাবের স্থানে স্থানে কোন কোন মাসয়ালায়, যে মারুফ র্কাখীর মত’, কিংবা রাযীর মত’, বলে উল্লেখ করা হয়েছে এটা তাঁদের স্বাধীন ইজতিহাদ নয় বরং পূর্বের ইমামগণের ইজ্তিহাদ বলে বুঝতে হবে।  পঞ্চম তবক্বাহ ঃ আছহাবুত্ তারজীহ্
 الخامسة طبقة اصحاب الترجيح من المقلدين كابى الحسن القدورى وصاحب الهداية وامثالهما وشانهم تفضيل بعض الروايات كقولهم هذا اولى وهذا اصح وهذا ارفق للناس.
 অর্থঃ- পঞ্চম তবক্বাহ্, আছহাবুত তারজীহঃ অর্থাৎ চতুর্থ তবক্বার ইমামদের পরে আবুল হাছান কুদুরী, হিদায়া প্রণেতা ও এই শ্রেনীর আলিমগণ পঞ্চম তবক্বার ফক্বীহ ছিলেন। তাঁদের দুটি রিওয়ায়েতের মধ্যে ভাল-মন্দ তুলনা করার অধিকার ছিল মাত্র। অর্থাৎ কোন ক্বওলটি উত্তম ও ছহীহ এবং কোনটি লোকের পক্ষে সহজ এটাই মাত্র বলতে পারতেন। ষষ্ঠ তবক্বাহঃ আছহাবুত্ তমীয
 السادسة طبقة المقلدين القادرين على التميز بين الاقوى وضعيف وظاهر المذهب والرواية النادرة كاصحاب المتون المعتبرة من المتاخرين مثل صاحب الكنز وصاحب المختار وصاحب الوقاية وصاحب المجمع شانهم ان لاينقلون اقوال المردودة ولا رواية لضعيفة.
 অর্থঃ- ষষ্ঠ তবক্বার মুকাল্লিদ ফক্বীহগণ পূর্বতন ফক্বীহ উলামাগণের ক্বওলের মধ্যে কোনটি দুর্বল, কোনটি প্রবল, কোনটি যাহির এবং কোনটি নাদির এটাই মাত্র পার্থক্য করতে পারতেন। যেমন মাতুনের গ্রন্থকার এবং ছহিবু কানযুদ্ দাক্বায়িক্ব, মুখতার, বিকায়া ও মাজমা প্রভৃতি কিতাবের প্রণেতাগণ এই ষষ্ঠ তবক্বার মুকাল্লিদ ফক্বীহ ছিলেন। তাঁরা যয়ীফও পরিত্যক্ত ক্বওলগুলি নকল করেননি।সপ্তম তবক্বাহঃ তবক্বায়ে মুক্বাল্লিদীন
 السابعة طبقة المقلدين الذين لايقدرون على ماذكر ولايفرقون بين الغث والسمين الخ.
 অর্থাৎ- সর্বশেষ বা সপ্তম স্তরের ফক্বীহগণের জন্য, পূর্বতন ফক্বীহগণের ফায়সালাসমূহের সমালোচনা করার কোন ক্ষমতা নেই। অর্থাৎ এ তবক্বার ফক্বীহগণ পূর্ববতী ফক্বীহগণের কোন সমাধানকে কম বেশী করতে পারবেন না।আর এরূপ নীতিমালা হাদায়িকে হানাফিয়া ও উর্দু আলমগিরী কিতাবের ভূমিকায় আছে।  দুররুল মুখতারকিতাবে উল্লেখ আছে, [৩৫৬-৩৫৭]
 وما نحن فعلينا الاتباع ما رجحوه وما صححوه كما لو افتوا فى حيواتهم.
 অর্থঃ- আমাদের সপ্তম স্তরের ফক্বীহগণের পক্ষে পূর্বতন ফক্বীহগণ যা পছন্দ করেছেন এবং যা ছহীহ্ বলে আমল করে গেছেন তারই অনুসরণ করতে হবে। যদিও এরূপ পূর্বতন উলামাগণের ফতওয়া তাঁদের জীবদ্দশায় প্রতিপালিত হত।  ফতওয়ায়ে শামীকিতাবে উল্লিখিত উক্তির পোষকতায় বর্ণিত আছে যেমন, অর্থাৎ সপ্তম তবক্বা ওলামাগণের তাঁদের উর্দ্ধতন তবক্বা সমুহের আলিমগণের বিপরীত কিছু করার ক্ষমতা নেই। উল্লেখিত ইমাম মুজতাহিদগণের তবক্বা তথা ফক্বীহগণের স্তর আলোচনার মাধ্যমেই পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠেছে যে, হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তৃতীয় তবক্বা বা স্তরের একজন ফক্বীহ ও মুকাল্লিদ। তিনি উছূলের মাসয়ালায় কিংবা আনুসঙ্গিক মাসয়ালায় মাযহাবের ইমাম, ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিপক্ষে কোন মতামত পোষণ করার যোগ্যতা রাখেন না। আর মতামত দিলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে যেসব ব্যাপারে বা সিদ্ধান্ত দিয়ে যাননি, শুধুমাত্র সেটাই ইমামগণের নির্ধারিত উছূলের ভিত্তিতে নির্ণয় করার ক্ষমতা রাখেন। বিধায় কুনূতে নাযেলা ফজর নামাযে পাঠ করা বিদয়াত, নাজাযিয় ও হারাম হিসেবে ইমাম আযম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি যে ফতওয়া দিয়েছেন সেটাই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আর এ কারণেই ফক্বীহগণের তবক্বা বর্ণনা করে স্পষ্টভাবে বুঝানো হলো যে, যারা হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বরাতে কুনূতে নাযেলার পক্ষে দলীল দিয়ে থাকে তাদের বক্তব্য ভিত্তিহীন ও অমূলক যা ইমামে আযম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিরোধিতামূলক। (চলবে) পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন


0 Comments: