একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১২২

 

ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ্ ওয়া কারামত, ফখরুল আওলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

আজমীর শরীফ-এ চীশ্তিয়া তরীক্বার ইমাম,

কুতুবুল আক্তাব, সুল্তানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ, হযরত খাজা সাইয়্যিদ মুঈনুদ্দীন হাসান চীশ্তি রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপন/অনুপম কারামত-উনার বহিঃপ্রকাশ

চলমান অধ্যায়ের শুরুতে কারামতসম্পর্কে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করা হয়েছে।  আলোচনার প্রাসঙ্গিকতায় আজমীর শরীফ থেকে হাদিয়া প্রাপ্ত পাগড়ী মুবারক-উনার সঙ্গে কারামত’-উনার সম্পৃক্ততা বিষয়ে এখানে কিঞ্চিত আলোকপাত প্রয়োজন। সাধারণভাবে কারামত দুভাগে বিভক্তঃ বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ। দুপ্রকার কারামতেই মানুষের আক্বল, বুদ্ধি ও বিবেচনা পরাভূত হয়। কোন স্বাভাবিক বিষয় ও বস্তুর আকার, প্রকার, পরিধি, ইত্যাদি বদ্লে ফেলে অভিনব অন্য কিছু বানানোকে বাহ্যিক কারামতবলা হয়। অর্থাৎ, ওলীআল্লাহ্গণ কর্র্তৃক স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম কার্যাদি প্রকাশিত হওয়ার নামই বাহ্যিক কারামত। সাধারণ মানুষ অধিক হারে এ কারামত দেখার প্রত্যাশী। সত্য যে, এতে অনেকে হিদায়েতের দিকে ধাবিত হয়। তবে, এ ধাবমানতায় প্রকৃত হিদায়েতের উপলব্ধি (সমঝ্) ও বিশ্বাসের (ঈমান) বন্ধন দৃঢ় থাকেনা। কারণ, মাহবুব ওলীগণের মুবারক স্বভাব-সঞ্জাত অসাধারণ গুণ-বৈশিষ্ট্য এবং আল্লাহ্ পাক ও উনার প্রিয়তম হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, মাশুকে মাওলা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে উনাদের নিগূঢ় নৈকট্যজনিত মাক্বামের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে অনবহিত থেকেই বাহ্যিক কারামতে বিস্মিত হয়ে সাধারণ মানুষ ঈমান গ্রহণ করে থাকে। অবশ্য কোশেশে নিয়োজিত থেকে পরিণতিতে তাদের অনেকেই মজবুত ঈমান, আক্বীদা ও আমলে আল্লাহ্ পাক এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টিলাভে ধন্য হয়।

পক্ষান্তরে, আল্লাহ্ পাক এবং সরওয়ারে কাওনাইন, সিরাজুম্ মুনীরা, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে দায়িমী নিস্বত ও তায়াল্লুক (সম্পর্ক ও নৈকট্য) স্থাপনের মাধ্যমে লব্ধ পবিত্রতা, সত্যবাদিতা, অনাবিল আচরণ-বিচরণ, দুনিয়া বিরাগী মানসিকতা, ইবাদত-বন্দেগীতে নিবিষ্টতা, এবং যাবতীয় সুন্নত পালনের নিমগ্নতায় আল্লাহ্ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সাল্লাম- উভয় উনার মতে ও পথে ইস্তিক্বামত থেকে ওলীআল্লাহ্গণ নিষ্কলুষ জীবনলাভে অসাধারণ গুণ-বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে থাকেন। এমন ওলীগণই প্রকৃত নায়িবে রসূল এবং প্রকৃত হাদী। এসব গুণ-বৈশিষ্ট্যই উনাদের মুবারক স্বভাব-সম্পৃক্ত অভ্যন্তরীণ কারামত। অভ্যন্তরীণ কারামতের অবস্থান আক্বল ও সমঝের সীমাহীন ঊর্ধ্বে থাকায় সাধারণ মানুষ বাহ্যিক কারামত দেখতে প্রত্যাশী হয় এবং বাহ্যিক কারামতকেই তারা প্রকৃত কারামত অভিধায় অভিষিক্ত করে থাকে। স্থূল বিবেচনার কারণে প্রকৃত, অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ কারামত (প্রকৃত কারামত) অনুসন্ধানের কোন অবকাশই তাদের থাকেনা।

নবুওওয়াত ও রিসালত পরীক্ষার জন্য ইহুদীরা ছাহিবুল ওহী ওয়াল কুরআন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তত্ত্বমূলক অজস্র প্রশ্ন করেছে, যা কালামুল্লাহ্ শরীফে উল্লিখিত রয়েছে। তারা কখনো মুজিযা দেখতে চায়নি। মুজিযা দেখে সন্দেহ, সংশয় ও অবিশ্বাস নিরসন  অনিবার্য না হওয়ায় চাঁদ দুভাগ করার মুজিযা দেখেও কাট্টা কাফির আবূ জাহিল ঈমান গ্রহণ করেনি। অথচ সুদূর ইয়েমেন থেকে আসা সত্যান্বেষীগণ এ মুজিযা দেখে রিসালত সম্পর্কে প্রত্যয়ী হয়ে ঈমান গ্রহণ করে সাহাবীর (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) মর্যাদালাভ করেছেন। পূর্ববর্তী কিতাবসমূহেও সাইয়্যিদুল আম্বিয়া, ছাহিবে লাওলাক, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আবির্ভাবের বিষয় উল্লেখ আছে, মুজিযার বিষয় উল্লেখ নেই। জলীলুল ক্বদর রসূল, হযরত মূসা কালীমুল্লাহু আলাইহিস্ সালাম-উনার মুজিযা দেখে ফিরাউন ঈমান আনেনি। কিন্তু বণী ইসরাঈলগণের ঈমান গ্রহণে মুজিযা প্রয়োজন হয়নি। কাফিররাই বাহ্যিক মুজিযার প্রত্যাশী ছিল। বারবার মুজিযা দেখেও তাদের সন্দেহ, সংশয় ও অবিশ্বাস দূর হয়নি। তারা একের পর আরেক মুজিযার প্রার্থী হয়েছে। মূলকথা, অভ্যন্তরীণ মুজিযা উপলব্ধিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে কাফিররা কাফিরই থেকে গেছে।

উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে যে, ওলী আল্লাহগণের মুবারক স্বভাব-সঞ্জাত অভ্যন্তরীণ কারামতই প্রকৃত কারামত। (অসমাপ্ত)

আবা-১৮২

0 Comments: