হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম-উনার পিতার নাম মুবারক ছিল হযরত তারিখ আলাইহিস সালাম, আযর নামক ব্যক্তি ছিল হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম-উনার চাচা।



Image result for ইবরহীম
হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম-উনার পিতার নাম মুবারক ছিল হযরত তারিখ আলাইহিস্‌ সালাম। আযর নামক ব্যক্তি ছিল হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম-উনার চাচা।


“নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বপুরুষগণ সকলেই ছিলেন মুসলমান। হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম-উনার পিতার নাম মুবারক ছিল হযরত তারিখ আলাইহিস্‌ সালাম। আযর নামক ব্যক্তি ছিল হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম-উনার চাচা।”

মহান আল্লাহ্‌ পাক ইরশাদ করেন, “আর যখন হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম তাঁর চাচা আযরকে বললেন, আপনি কি মূর্তিকে ইলাহ্‌ (মা’বুদ) হিসেবে গ্রহণ করছেন?” (সূরা আনআম/৭৪)

এ আয়াত শরীফ-এ “আবূহু আযর” -এর শাব্দিক অর্থ উনার পিতা আযর। কিন্তু ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরামগণ-এর সর্বসম্মত মতে, এখানে “আবূহু” অর্থ উনার চাচা। অর্থাৎ “আবুন” শব্দের অর্থ পিতা না হয়ে এর অর্থ হবে চাচা। কারণ, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর অনেক স্থানেই ‘আবুন’ শব্দটি পিতা ব্যতীত অন্য অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “পিতা-মাতা উভয়ের জন্যে রয়েছে মৃতের পরিত্যক্ত মালের এক ষষ্ঠাংশ; যদি মৃতের কোন পুত্র সন্তান থাকে।” (সূরা নিসা/১১)
এ আয়াত শরীফ-এ পিতা ও মাতা উভয়ের ক্ষেত্রেই “আবুন” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
অনুরূপ ‘সূরা বাক্বারা’-এর ১৩৩ নম্বর আয়াত শরীফ-এ বলা হয়েছে, “(হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্‌ সালাম-এর সন্তানদের কথা) আমরা আপনার ইলাহ্‌ ও আপনার পিতা (পূর্বপুরুষ) হযরত ইব্‌রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাক আলাইহিমুস্‌ সালাম-এর ইলাহ্‌-এর ইবাদত করব।”

হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্‌ সালাম হলেন, হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্‌ সালাম-এর চাচা। কাজেই উক্ত আয়াত শরীফ-এ চাচার ক্ষেত্রেও ‘আবুন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
অনুরূপভাবে হাদীছ শরীফ-এরও বহু স্থানে চাচা’র ক্ষেত্রে (আবুন) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, “তাফসীরে কবীর” ১৩-৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার চাচা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আমার নিকট ফিরিয়ে দাও।” এখানেও ‘আবুন’ শব্দ দ্বারা চাচাকে বুঝানো হয়েছে।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয়ই আমার চাচা (আবূ তালিব) ও তোমাদের পিতা উভয়ই জাহান্নামী।” এ সম্পর্কে “তাফসীরে মাযহারী” কিতাবের ৩য় খণ্ডের ২৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, “আরববাসীরা (আল আবু) শব্দটি চাচার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেন।”
“তাফসীরে কবীর” কিতাবের ১৩তম খণ্ডের ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, (আম্মুন) চাচা শব্দটি সাধারণতঃ (আবুন) (পিতা) হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।”
আরবী “আবুন” শব্দটির শাব্দিক অর্থ পিতা। কিন্তু কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ এবং আরব দেশে প্রচলিত পরিভাষায় ‘আবুন’ শব্দটি চাচা অর্থেও ব্যবহৃত হতো। সুতরাং সূরা আনআম-এর ৭৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ “আবূহু” এর অর্থ হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম-এর চাচা আযর।
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, “হযরত আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম-এর পিতার নাম আযর নয়। বরং উনার পিতার নাম মুবারক হলো হযরত তারিখ আলাইহিস্‌ সালাম।” (ইবনে আবি হাতিম, ইবনে কাছির- ৩/২৪৮)
“নিশ্চয়ই হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম-এর পিতা (হযরত তারিখ আলাইহিস্‌ সালাম) মুশরিক ছিলেন না। বরং আযর (উনার চাচা) মুশরিক ছিল। কেননা, অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, নিশ্চয়ই হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম-এর পিতা অন্য একজন অর্থাৎ হযরত তারিখ আলাইহিস্‌ সালাম; কিন্তু আযর নয়।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৯)
কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, “নিশ্চয়ই হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম-এর পিতার নাম ছিলো হযরত তারিখ আলাইহিস্‌ সালাম। আর আযর ছিলো উনার চাচার নাম। তখন চাচাকেও সাধারণতঃ আবুন (পিতা) বলা হত। (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৮)
মূলতঃ হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালামসহ প্রত্যেক নবী-রসূল আলাইহিমুস্‌ সালামগণ-এর পিতা-মাতা বা পূর্বপুরুষ ছিলেন পরিপূর্ণ ঈমানদার, খালিছ মু’মিন। কেউই কাফির ছিলেন না।
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “নিশ্চয়ই সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্‌ সালাম-এর পিতা বা পূর্বপুরুষ কেউই কাফির ছিলেন না। তার দলীল হচ্ছে আল্লাহ্‌ পাক-এর এ কালাম বা আয়াত শরীফ। (আল্লাহ্‌ পাক বলেন) “তিনি আপনাকে (হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদাকারীদের মধ্যে স্থানান্তরিত করেছেন।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৮)
আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ্‌ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদের মাধ্যমে যমীনে তাশরীফ এনেছেন অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালাম থেকে হযরত আব্দুল্লাহ্‌ আলাইহিস্‌ সালাম পর্যন্ত সকলেই ছিলেন সিজদাকারী। অর্থাৎ সকলেই নামায, কালাম, যিকির, আযকার, ইবাদত, বন্দিগীতে মশগুল ছিলেন। উনারা সকলেই পূর্ণ পরহিযগার, মুত্তাক্বী ও ধার্মিক ছিলেন।

অনেকে “সূরা মরিয়ম”-এর ৪৭ নম্বর আয়াত শরীফ ও সূরা তওবা-এর ১১৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এর বরাত দিয়ে বলে যে, “হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম তাঁর পিতার জন্য ইস্তিগফার করেছেন কাজেই তাঁর পিতা ঈমানদার ছিলেন না।”
যারা একথা বলে তারা উক্ত আয়াত শরীফদ্বয়-এর অর্থই বুঝেনি। কারণ “সূরা মরিয়ম”-এর ৪৭ নম্বর আয়াত শরীফ-এ আল্লাহ পাক বলেন, “হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম বলেন, আপনার প্রতি (বিদায়কালীন) সালাম, অচিরেই আমি আমার প্রতিপালক-এর নিকট আপনার জন্য মাগফিরাত কামনা করব।”
এবং “সূরা তওবার” ১১৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ আল্লাহ পাক বলেন, “হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম কর্তৃক স্বীয় চাচার মাগফিরাত কামনা করা ছিলো কেবল মাত্র তার সাথে ওয়াদা করার কারণে।”
অর্থাৎ প্রথমতঃ হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম উনার চাচার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, তিনি তার জন্য ইস্তিগফার করবেন। উনার চাচা যেন তওবা করে, শির্‌কী ছেড়ে ঈমান গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যান সেজন্য দোয়া করবেন।

আর পরবর্তী “সূরা তওবা”-এর ১১৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ সেই ওয়াদা পালনার্থে এবং মুশরিকদের জন্য দোয়া করা নিষেধ হওয়ার পূর্বে হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম উনার চাচার জন্য দোয়া করেছিলেন।
যেমন, এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে এসেছে, “নিশ্চয়ই হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম-এর এ ইস্তিগফার কামনা করাটা ছিল মুশরিকদের জন্য দোয়া করা নিষেধ হওয়ার পূর্বের। যেমন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নিষেধ হওয়ার পূর্বে) উনার চাচা আবূ তালিবকে বলেছিলেন, আল্লাহ্‌ পাক-এর কসম! অবশ্যই আমি আপনার তওবা নছীব হওয়ার জন্য দোয়া করব।” (মাযহারী, ৬/১০০)
এছাড়া হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা আবূ তালিব-এর জন্য, হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম উনার চাচা আযর-এর জন্য সরাসরি দোয়া করেননি; বরং তাদের ইস্তিগফার কামনা করেছেন। অর্থাৎ আযর ও আবু তালিব-এর যেন তওবা নছীব হয়, তারা যেন ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়, ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয় সেজন্য দোয়া করেছেন। আর তাও ছিল মুশরিকদের জন্য দোয়া নিষেধ সংক্রান্ত বিধান (আয়াত) নাযিল হওয়ার পূর্বে।
আর চাচা হিসেবে আবূ তালিব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এবং আযর হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম-এর অনেক খিদমত করেছে। তার বিনিময় স্বরূপ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম তাদের ইস্তিগফার (তওবা কবুল হওয়ার দোয়া) কামনা করেছেন।
এ সম্পর্কে তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে, “হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম উনার চাচার জন্যে ইস্তিগ্‌ফার করেন। অর্থাৎ আযরের জন্যে ইস্তিগফার করেন। আযর ছিল হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম-উনার চাচা। আর হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম ছিলেন হযরত তারিখ আলাইহিস্‌ সালাম-উনার ছেলে।” (মাযহারী, ৪/৩০৮)
আল্লাহ্‌ পাক-এর নবী হযরত ইব্‌রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম-এর পিতা হাক্বীক্বী পরহিযগার, মুত্তাক্বী, পরিপূর্ণ ঈমানদার ও মুসলমান ছিলেন। উনার নাম মুবারক ছিল হযরত তারিখ আলাইহিস্‌ সালাম। আর আযর নামক ব্যক্তি ছিল উনার চাচা।
পূর্ববর্তী সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্‌ সালামগণের পূর্বপুরুষগণ এবং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্‌ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বপুরুষ হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালাম থেকে শুরু করে হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্‌ সালাম পর্যন্ত সকলেই ছিলেন পুত-পবিত্র, পূর্ণ ধার্মিক ও পরিপূর্ণ মুসলমান। এটাই ছহীহ আক্বীদা। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা। আমাদের সকলকে এ আক্বীদাই পোষণ করতে হবে।

0 Comments: