হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৫১ -২৭৫) (ক)

হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৫১ -২৭৫) (ক)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার বিলাদত শরীফ-এর
মুবারক তারিখ ও বার
মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন.انا اعطينا كالكوثر
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাউছার অর্থাৎ সমস্ত ভালাই হাদিয়া করেছি।” (সূরা কাওছার : আয়াত শরীফ-১)
হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন, কাউছার শব্দের লক্ষ কোটি অর্থ রয়েছে। তন্মধ্যে দুটি অর্থ প্রধান। এক. ‘কাউছার’ শব্দের অর্থ হাউজে কাওছার। হাশরের দিনে যে ব্যক্তি এই হাউজে কাওছারের পানি পান করবে ওই ব্যক্তির আর কোনো পিপাসা লাগবে না। দুই. কাওছারের প্রধানতম অর্থটি হচ্ছে ‘খইরে কাছীর’ অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথার তালু মুবারক হতে ক্বদম মুবারক-এর তলা পর্যন্ত সমস্ত কিছুই ছিলো পূত-পবিত্র তথা পবিত্র থেকে পবিত্রতম। দ্বিতীয়তঃ উনার সংস্পর্শে যে সমস্ত বিষয় বস্তুগুলো উনার সঙ্গে নিসবত প্রাপ্ত হয়েছে তায়াল্লুক যুক্ত হয়েছে ওই সমস্ত বিষয় তথা বস্তুগুলো কায়িনাতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম সম্মানিত বেমেছাল ফযীলতপ্রাপ্ত। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে দিন ও রাত্রি মুবারক-এ যমীনে তাশরীফ নিয়েছেন যে তারিখে বা যে বার শরীফ-এ বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন সেই সময়, দিন, বার, তারিখ ও মাসের ফযীলত বাকি সমস্ত সময়, দিন, বার, তারিখ ও মাসের থেকে অনেক অনেক বেমেছাল সম্মানিত ও ফযীলত প্রাপ্ত।
বিশেষভাবে স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর তারিখ নিয়ে অনেক বদ মাযহাব, বদ আক্বীদা ও কাফির মুশরিকরা মতানৈক্য করে থাকে। অথচ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস দ্বারাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর তারিখ রয়েছে।
আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
يا ايها الذين امنوا اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم فان تنازعتم فى شىء فردوه الى الله والرسول .
অর্র্থ: “হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ পাক- উনার ইতায়াত করো এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার ইতায়াত করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমরউনাদের ইতায়াত করো। অতঃপর যখন কোন বিষয়ে উলিল আমরগণ উনাদের মাঝে ইখতিলাফ দেখতে পাবে, তখন (সে বিষয়টি ফায়সালার জন্য) তোমরা আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করো, অর্র্থাৎ যে উলিল-আমরের কুরআন-সুন্নাহর দলীল বেশি হবে- উনারটিই গ্রহণ করো।” সুবহানাল্লাহ! (সূরা নিসা : আয়াত শরীফ- ৫৯)
 প্রকাশ থাকে যে, ইখতিলাফ বা মতভেদ দু’রকমের হয়ে থাকে।
(১) শুধু হক্বের জন্য হক্ব তালাশীগণের ইখতিলাফ।  যেমন- ঈমানের শর্ত হিসেবে কেউ উল্লেখ করেছেন-
التصديق بالجنان والاقرار باللسان .
অর্র্থ: “অন্তরে বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতি।”
 আবার কেউ উল্লিখিত দুটি শর্তের সাথে তৃতীয় শর্ত হিসেবে-
والعمل بالاركان .
অর্র্থ: “ফরযসমূহ  আমল  করা”- উল্লেখ করেছেন।
অনুরূপ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি প্রায় প্রতিটি বিষয় বা আমলের ক্ষেত্রে মাসয়ালা-মাসায়িল, হুকুম-আহকাম বর্ণনার ব্যাপারে ইখতিলাফ পরিলক্ষিত হয়।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
اختلاف العلماء رحمة .
অর্র্থ: “হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ উনাদের ইখতিলাফ রহমতের কারণ।”
যেমন, হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ উনারা ইখতিলাফ করে হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী, হাম্বলী- ৪টি মাযহাবকেই হক্ব বলে স্বীকার করে নিয়েছেন এবং এর উপরই উম্মতের ইজমা বা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
(২) হক্ব তালাশীগণ উনাদের সাথে নাহক্বপন্থীদের ইখতিলাফ বা মতবিরোধ। যেমন- হক্বপন্থীদের আক্বীদা হলো- আল্লাহ পাক এক এবং অদ্বিতীয়। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শেষ নবী ও রসূল। তিনি নূরের সৃষ্টি। তিনি ইলমে গইবের অধিকারী ইত্যাদি। কিন্তু এসবের বিপরীত হলো বাতিলপন্থীদের আক্বীদা। যেমন- তাদের কারো আক্বীদা হলো, আল্লাহ পাক তিনজন অর্র্থাৎ তারা ত্রিত্ববাদ বা তিন খোদায় বিশ্বাসী। নাঊযুবিল্লাহ! কারো আক্বীদা হলো- আল্লাহ পাক উনার হাবীব শেষ নবী ও রসূল নন। নাঊযুবিল্লাহ। কারো আক্বীদা হলো, তিনি নূরের সৃষ্টি নন। নাঊযুবিল্লাহ! তিনি ইলমে গইবের অধিকারী নন। নাঊযুবিল্লাহ! ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় যদি পালন করা ঠিক না হয় তাহলে কি আল্লাহ পাক, আল্লাহ পাক উনার হাবীব, ঈমান, ইসলাম সব বাদ দিতে হবে? কস্মিনকালেও নয়। বরং আল্লাহ পাক তিনি যে নির্দেশ দিয়েছেন, সে নির্দেশ অনুযায়ী যেখানে মতভেদ হবে সেখানে যে উলিল আমরের স্বপক্ষে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর দলীল বেশি হবে, উনারটিই গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি বলবে মতভেদপূর্ণ বিষয় পালন করা ঠিক নয়, সে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে মুরতাদ ও কাফিরের অন্তর্ভুক্ত। আর কোন বিষয়ে যখন একাধিক মত থাকবে, তখন যে মতটি অত্যধিক ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য হবে, তা আমল করতে হবে। মতভেদ আছে বলে মূল বিষয়টির আমলই ছেড়ে দিতে হবে- এ বক্তব্য চরম শ্রেণীর জাহিলদের উক্তি বৈ কিছুই নয়। এ বক্তব্যও কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর সম্পূর্ণ বিপরীত ও কুফরীর শামিল।
স্মরণীয় যে, ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর দিন। এটাই সবচেয়ে ছহীহ ও মশহূর মত।
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাফিয হযরত আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন-
عن عفان عن سعيد بن مينا عن جابر وابن عباس رضى الله تعالى عنهما قالا ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول .
অর্র্থ: “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ‘হস্তী বাহিনী বর্ষের ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ-এর সোমবার শরীফ হয়েছিল।” (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
উক্ত হাদীছ শরীফ বর্ণনার সনদের মধ্যে প্রথম বর্ণনাকারী হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণ উনারা বলেছেন, “তিনি একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ইমাম, প্রবল স্মরণশক্তি ও দৃঢ়প্রত্যয় সম্পন্ন ব্যক্তি।” (খুলাছাতুত তাহযীব)
“দ্বিতীয় বর্ণনাকারী হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনিও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।” (খুলাছাহ,তাক্বরীব)
আর তৃতীয় হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এ দু’জন উচ্চ পর্যায়ের ফক্বীহ ছাহাবী উনাদের বিশুদ্ধ সনদ সহকারে বর্ণিত বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, “১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ-এর দিবস।” এ ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার উপরই ইমামগণের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সীরাত-ই-হালবিয়াহ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব, মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ইত্যাদি)
এই ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সোমবার পবিত্র দিনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত-এর প্রকাশ করা হয়েছে এবং এই পবিত্র দিনেই তিনি হিজরত শরীফ করেছেন এবং তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত বিশুদ্ধ বর্ণনা মুতাবিক ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ-এর মুবারক দিবস। এটাই ছহীহ ও মশহূর মত। এর বিপরীতে যেসব মত ঐতিহাসিকগণ থেকে বর্ণিত রয়েছে তা অনুমান ভিত্তিক ও দুর্বল। অতএব, তা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর সঠিক তারিখ ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সম্পর্কে যারা চু-চেরা করে থাকে তারা দু’দিক থেকে কাফির।
প্রথমত, তারা হাদীছ শরীফ-এর বর্ণনা অস্বীকার করার কারণে কাফির।
দ্বিতীয়ত, কালামুল্লাহ শরীফ-এ বর্ণিত ‘নাসী’কে স্বীকার করে নেয়ার কারণে তারা কাফির। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
انما النسىء زيادة فى الكفر يضل به الذين كفروا يحلونه عاما ويحرمونه عاما ليواطؤوا عدة ما حرم الله فيحلوا ما حرم الله .
অর্র্থ: “নিশ্চয়ই নাসী তথা মাসকে আগে-পিছে করা কুফরীকে বৃদ্ধি করে থাকে। এর দ্বারা কাফিরেরা গুমরাহীতে নিপতিত হয়। তারা (ছফর মাসকে) এক বছর হালাল করে নেয় এবং আরেক বছর হারাম করে নেয়, যাতে আল্লাহ পাক উনার হারামকৃত মাসগুলোর গণনা পূর্ণ করতে পারে।” (সূরা তওবা, আয়াত শরীফ/৩৭)
অর্র্থাৎ, জাহিলিয়াতের যুগে কাফির, মুশরিকরা ছফর মাসকে অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করতো। তাই তারা নিজেদের খেয়াল-খুশি মুতাবিক এ মাসটিকে আগে-পিছে করতো। আরেকটি কারণ হলো, যখন তারা যুদ্ধ-বিগ্রহ করার প্রয়োজন মনে করতো বা যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো, তখন তারা ছফর মাসকে আগে পিছে করে হারাম মাসের সংখ্যা নিরূপণ করতো, যা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী। (তাফসীরে দুররে মানছূর)
এছাড়াও কাফির, মুশরিকরা তাদের নিজেদের স্বার্থে দুনিয়াবী ফায়দা লাভের জন্য বছরকে বারো মাসে গণনা না করে কোনো কোনো বছর দশ মাস থেকে সতের মাস পর্যন্ত গণনা করতো, যা নাসী হিসেবে মশহুর। এর কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ-এর তারিখ ও দিন কস্মিনকালেও মিলানো সম্ভব নয়। কারণ বিলাদত শরীফ থেকে বিদায় হজ্জ পর্যন্ত প্রায় তেষট্টি (৬৩) বছর। এই তেষট্টি বছর যাবৎ কাফির, মুশরিকরা নাসী করেছে। আর এই জন্যই বিদায় হজ্জের সময় খুতবায় নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাস, তারিখ, দিন, স্থান সমস্ত কিছু নতুন করে ফায়ছালা করেছেন, যা বিদায় হজ্জের খুতবায় বর্ণিত রয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى بكرة رضى الله تعالى عنه قال خطبنا النبى صلى الله عليه وسلم يوم النحر قال ان الزمان قد استدار كهيئته يوم خلق الله السموات والارض السنة انثى عشر شهرا منها اربعة حرم ثلث متواليات ذو القعدة وذوالحجة والمحرم ورجب مضر الذى بين جمادى وشعبان وقال اى شهر هذا قلنا الله ورسوله اعلم فسكت حتى ظننا  انه سيسميه بغير اسمه قال اليس ذا الحجة قلنا بلى قال اى بلد هذا قلنا الله ورسوله اعلم فسكت حتى ظننا انه سيسميه بغير اسمه  قال اليس البلدة قلنا بلى قال فاى يوم هذا قلنا الله ورسوله اعلم فسكت حتى ظننا انه سيسميه بغير اسمه قال اليس يوم النحر قلنا بلى قال فان دماءكم واموالكم واعراضكم عليكم حرام كحرمة يومكم هذا فى بلدكم هذا فى شهركم هذا وستلقون ربكم فيسئلكم عن اعمالكم الا فلا ترجعوا بعدى ضلالا يضرب بعضكم رقاب بعض الا هل بلغت قالوا نعم قال اللهم اشهد فليبلغ الشاهد الغائب فرب مبلغ اوعى من سامع .
অর্র্থ: “হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরবানীর দিনে (দশই যিলহজ্জ) আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দান করলেন এবং বললেন, বছর ঘুরে এসেছে তার গঠন অনুযায়ী, যেদিন আল্লাহ তায়ালা তিনি আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন। বছর বার মাসে। তার মধ্যে চারটি মাস হারাম বা সম্মানিত। তিনটি পর পর এক সাথে- যিলক্বদ, যিলহজ্জ ও মুহররম এবং চতুর্থ মাস মুদ্বার গোত্রের রজব মাস, যা জুমাদাল উখরা ও শা’বানের মধ্যখানে অবস্থিত। অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এটি কোন মাস? আমরা বললাম, “আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই অধিক অবগত।” অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন, যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য নাম করবেন। তৎপর বললেন, “এটি কি যিলহজ্জ নয়?” আমরা বললাম, “হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!” অতঃপর তিনি বললেন, “এটি কোন শহর?” আমরা বললাম, “আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই অধিক অবগত।” অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য নাম করবেন। তৎপর বললেন, “এটি কি পবিত্র মক্কা শহর নয়?” আমরা বললাম, “হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!” অতঃপর তিনি বললেন, “এটি কোন দিন?” আমরা বললাম, “আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই অধিক অবগত।” অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন, যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য নাম করবেন। তৎপর বললেন, “এটি কি কুরবানীর দিন নয়?” আমরা বললাম, “হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” তখন তিনি বললেন, “তোমাদের জীবন, সম্পদ ও সম্মান তোমাদের জন্য পবিত্র, যেমন তোমাদের এই মাস, এই শহর ও এই দিন পবিত্র। তোমরা শীঘ্রই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট পৌঁছবে আর তিনি তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। সাবধান! আমার পর তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে একে অন্যের জীবননাশ করো না। আমি কি তোমাদেরকে (মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বিধান) পৌঁছাইনি? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ পাক! আপনি সাক্ষী থাকুন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তি যেনো অনুপস্থিত ব্যক্তিকে এটা পৌঁছিয়ে দেয়। কেননা, অনেক এমন ব্যক্তি যাকে পরে পৌঁছানো হয়, সে আসল শ্রোতা অপেক্ষা অধিক উপলব্ধিকারী ও হিফাযতকারী। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
অতএব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ-এর সঠিক তারিখ ১২ রবীউল আউয়াল শরীফ ব্যতীত অন্য যেসব তারিখ ঐতিহাসিকগণ থেকে বর্ণিত রয়েছে, তা কাফিরদের নাসী তথা মাস, দিন, তারিখ পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বর্ণিত রয়েছে। ফলে তা মানা বা গ্রহণ করা বা স্বীকার করা প্রত্যেকটিই কুফরীর সামিল। বিশিষ্ট তাফসীরকারক হযরত ইবনে কাছির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও বলেছেন, ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সোমবার এটাই প্রসিদ্ধ ও মাশহুর ও গ্রহণযোগ্য মত। (বেদায়া-নেহায়া ২য় খ-, ২৬০ পৃষ্ঠা)
আরো হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম তথা পবিত্র সোমবার শরীফ সুবহে ছাদিকের সময় বিলাদত শরীফ লাভ করেন।” (খছায়িছুল কুবরা) অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর সময়টি ছিলো রাত্রিও না দিনও না। বরং উভয়ের মাঝামাঝি। কারণ রাত্রি চেয়েছিলো যাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন তার মধ্যে হয় অনুরূপ দিনও চেয়েছিলো যেনো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন দিনে হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি উভয়ের আরজি পূরণ করলেন এবং রাত্রি ও দিনের মাঝ সময় অর্থাৎ সুবহে ছাদিকের সময় আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর অনুষ্ঠান হয়। উনার মুবারক তাশরীফে সারা আলম আলোকিত হয়।
সুপ্রসিদ্ধ কিতাব ‘নূরে মুহম্মদী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এ উল্লেখ রয়েছে,
اعلموا ان الجمهور من اهل السير و التواريخ اتفقوا على ان تولده صلى الله عليه و سلم- كان فى عام الفيل بعد اربعين يوما من واقعته اوخمس و خمسين يوما- و هذا القول اصح الاقوال رواية و نقلا- و كان ذلك ليلة الثانى عشر يوم الاثنين من الربيع الاول- على ماهو اشهر و اكثر سماعا- و على هذا عمل اهل مكة في زيارتهم موضع ولادته الشريعة ندبا- و قراءة المولد و الاتيان بادابه و اوضاعه كان فى هذه الليلة بينهم اكثر عملا-
অর্থ: স্মরণ রাখতে হবে যে, সমস্ত ইমাম মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম সীরাত গ্রন্থাকার ও ঐতিহাসিকগণ উনারা এই কথার উপর একমত যে, হাতিওয়ালা বা আবরাহ ও তার দলবল ধ্বংস হওয়ার চল্লিশ দিন অথবা পঞ্চান্ন দিন পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ আনেন। এটাই সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত। আর সেই রাত্রি মুবারক ছিলো ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার শরীফ সুবহে ছাদিকের সময়। আর এই মতটিই সুপ্রসিদ্ধ ও জনশ্রুতি অত্যধিক। উপরন্তু এই মুবারক তারিখ মক্কাবাসী উনাদের নিকট বিশেষ প্রচলিত। উনারা উক্ত ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ-এ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ-এর স্থান মুবারক যিয়ারত করতেন এবং সেই রাত্রি মুবারক-এ মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করা ও এটার আদব রক্ষা করা উনাদের নিকট একটি সর্বোত্তম প্রিয় ও অত্যধিক সুপ্রচলিত আমল ছিলো। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ হচ্ছে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম বা পবিত্র সোমবার শরীফ ছুবহে ছাদিকের সময়। যে দিনটি হচ্ছে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এই ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ-এ খুশি প্রকাশ করা সারা কায়িনাতবাসীর জন্য ফরয-ওয়াজিব।  মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহম, করম দয়া, ইহসান যে, যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, গাউছুল আ’যম, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আওলাদে রসূল ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি এই পবিত্র ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ তথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ৪৫ দিন ব্যাপী খুশি প্রকাশের নিমিত্ত ওয়াজ শরীফ, ক্বাছীদা শরীফ, মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ ও দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করে যাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ!  ইনশাআল্লাহ সামনে আরো দীর্ঘদিনব্যাপী সারা পৃথিবীব্যাপী ব্যাপক খুশি প্রকাশ করা হবে ও মাহফিলের ব্যবস্থা করা হবে। মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নিকট তাওফীক কামনা করছি। 

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর মহিমান্বিত দিনটিই সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে মহান ও সবচেয়ে বড় ঈদের দিন
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
ورفعنا لك ذكرك.
অর্থ: “আমি আপনার সুমহান মর্যাদাকে বুলন্দ করেছি।” (সূরা ইনশিরাহ : আয়াত শরীফ: ৪)
এ আয়াত শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা বুলন্দির কোনো সীমা নির্ধারণ করেননি। কাজেই কোনো মাখলুকাতের জন্যই সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা-মর্তবার সীমা নির্ধারণ করা তো জায়িয নেই। বরং মর্যাদা-মর্তবার সীমা নির্ধারণের চিন্তা করাটা চরম বেয়াদবীর অন্তর্ভুক্ত।
মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক স্থান ও শান-মান। এক কথায় তিনি শুধু আল্লাহ পাক নন, এছাড়া সমস্ত মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী হচ্ছেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি হাবীব হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমগ্র কায়িনাত সৃষ্টির পূর্বে, উনার মহান রুবুবিয়াত প্রকাশের জন্য সৃষ্টি করে উনার মহান কুদরত-এর মধ্যে রাখেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করার পর উনার কপাল মুবারক-এ দীর্ঘ সময়ব্যাপী জান্নাতের মধ্যে রাখেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইচ্ছা করলে আবাদুল আবাদ পর্যন্ত উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজের কাছে রেখে দিতে পারতেন অথবা জান্নাতের মধ্যেও রেখে দিতে পারতেন। আরহামুর রাহিমীন মহান রব্বুল আলামীন তিনি অত্যন্ত দয়া করে, ইহসান করে উনার প্রিয়তম হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মানবজাতির মধ্যে পাঠিয়ে মানবজাতিকে কায়িনাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যমীনে ও মানবজাতির মধ্যে বিলাদত শরীফ দান করেছেন আর যেই দিন মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আগমন করেছেন সেই মহিমান্বিত দিনটি সারা কায়িনাতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে মহান ও সবচেয়ে বড় ঈদের দিন তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মিলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে সমস্ত মাখলুকাতের কাছে মশহুর বা প্রসিদ্ধ। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে ঈদ বা খুুশি প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যা মাখলুকাতের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
يايها الناس قد جاءتكم موعظة من ربكم وشفاء لما فى الصدور وهدى ورحمة للمؤمنين. قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
অর্থ: “হে মানবজাতি! অবশ্যই তোমাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এসেছেন মহান নছীহতকারী, তোমাদের অন্তরের সকল ব্যাধিসমূহ দূরকারী, কুল-কায়িনাতের মহান হিদায়েত দানকারী ও ঈমানদারদের জন্য মহান রহমতস্বরূপ (হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ইহসান ও রহমত (হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে) উনার জন্য ঈদ উদযাপন বা খুশি প্রকাশ করো। এই খুশি প্রকাশ করাটা (তোমরা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য) যা কিছু সঞ্চয় বা জমা করে থাকো তা হতে সর্বোত্তম।” (সূরা ইউনুস : আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি মানবজাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সারা কায়িনাতের সর্বোত্তম ও সবচেয়ে মহান নিয়ামত। তিনি হচ্ছেন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!
সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং সমস্ত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সকলেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে মুবারক তাশরীফ বা আগমন তথা বিলাদত শরীফ-এর ফাযায়িল-ফযীলত বর্ণনা করেছেন। উনারা প্রত্যেকেই আলাদাভাবে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং উম্মত ও বান্দাকে তা করতে আদেশ ও নির্দেশ করেছেন। ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে মহান ও সবচেয়ে বড় ঈদ বা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর এই বিষয় উনারা সম্যক অবগত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক তিনি মাসসমূহের মধ্যে রবীউল আউয়াল শরীফকে, তারিখসমূহের মধ্যে ১২ই শরীফকে এবং দিনসমূহের মধ্যে সোমবার শরীফকে উনার প্রিয়তম হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর জন্য পছন্দ করেছেন। তাই উক্ত মুবারক মাস, মুবারক তারিখ, ও মুবারক দিনটি আল্লাহ পাক উনার নিকট যেরূপ সবচেয়ে প্রিয়, পবিত্র, শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত তদ্রƒপ বান্দা ও উম্মতের জন্যও তা সবচেয়ে প্রিয়, পবিত্র, শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। আর এ কারণে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ মুবারক দিনটি বান্দা ও উম্মতের জন্য সবচেয়ে খুশির, সবচেয়ে আনন্দের, সবচেয়ে মহান ও সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদের দিন হিসেবে সাব্যস্ত ও গণ্য হয়েছে। কারণ এ মুবারক দিনটিতে যদি উনার বিলাদত শরীফ তথা শুভাগমন না হতো তাহলে শবে ক্বদর, শবে বরাত, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, জুমুয়া, আরাফাহ ইত্যাদি ফযীলতপূর্ণ কোনো দিন-রাতেরই আগমন ঘটতো  না। শুধু তাই নয় কুরআন শরীফ নাযিল হতো না, দ্বীন ইসলাম আসতো না, কোনো মু’মিন-মুসলমান এবং কোনো বান্দা-উম্মতেরও অস্তিত্ব থাকতো না। ফলে শরীয়ত এ মুবারক দিনটিকে নির্ধারণ করেছে সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে মহান ও সবচেয়ে বড় ঈদের দিন হিসেবে যাকে আরবীতে ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদুল ঈদিল আ’যম ও সাইয়্যিদুল ঈদিল আকবর বলা হয় এবং এ ঈদ পালন করাকে ফরযে আইন সাব্যস্ত করেছে।
খালিক্ব, মালিক, রব আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি কুরআন শরীফ-এর একাধিক আয়াত শরীফ-এর মাধ্যমে এবং কুল-কায়িনাতের যিনি নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসংখ্য হাদীছ শরীফ-এর মাধ্যমে বান্দা ও উম্মতকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যমীনে আগমন বা বিলাদত শরীফ, বিছাল শরীফ এবং উনাদের বিশেষ ঘটনা অর্থাৎ উনাদের মুবারক শান বা বৈশিষ্ট্য প্রকাশার্থে যেসব ঘটনা যে দিনগুলিতে সংঘটিত হয়েছে সে দিনগুলি রহমত, বরকত, সাকীনা নাযিল ও হাছিলের দিন এবং সে দিনগুলি ঈদ বা খুশি প্রকাশের দিন।
ইসলামী শরীয়তে মুসলমানদের জন্য অনেক ঈদ রয়েছে। যা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস দ্বারা প্রমাণিত। সে সমস্ত ঈদের দিন অপেক্ষা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঈদ বা খুশির দিনটি হচ্ছে সমস্ত ঈদের সাইয়্যিদ তথা সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ।
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা এবং ক্বিয়াস। এসব দ্বারা শরীয়তের ফায়সালা করা হয়। কোন বিষয় শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত আর কোন বিষয় শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত নয় সেটা ফায়সালা করা হয়ে থাকে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের মাধ্যমে। এখন অনেক বদ মাযহাব, বদ আক্বীদার লোক রয়েছে যারা ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ ও সবচেয়ে বড় ঈদ ইত্যাদি সম্পর্কে চু-চেরা করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে নেফাকী, গালিজ ও অন্তরে কুফরী থাকার কারণে বাতিল ৭২ ফিরক্বা তথা ওহাবী, খারেজী, রাফেজী, মুতাজিলা এ ধরনের বদ আক্বীদা সম্পন্ন লোকেরা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধিতা করে থাকে। এই সমস্ত বাতিল ফিরক্বার লোকগুলো বলে থাকে, শরীয়তে দুটি ঈদ- ব্যতীত আর কোনো ঈদ নেই। তাহলে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসলো কোথা থেকে? প্রকৃতপক্ষে এরা শরীয়ত সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ। কারণ শরীয়তের যে দুটি ঈদ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা যা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত অনুরূপভাবে অন্যান্য যে সমস্ত ঈদগুলো রয়েছে সেটাও কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস দ্বারা ছাবিত বা প্রমাণিত।
যে দুটি ঈদকে বাতিল ফিরক্বা ও গোমরাহ দলগুলো স্বীকার করে থাকে তা হচ্ছে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। এই সমস্ত ওহাবী, খারেজী, রাফেজী, বাতিল ফিরক্বাগুলোর এই ইলমটা নেই যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর দিনটি যে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা তথা সমস্ত ঈদ থেকেও সর্বশ্রেষ্ঠ সেই ঈদটি সমস্ত মাখলুকাতের ঈদ। গোটা মাখলুকাতের জন্য ফরয-ওয়াজিব এই দিনটিতে খুশি প্রকাশ করা।
ইনশাআল্লাহ! আমরা এ সম্পর্কে দলীলভিত্তিক আলোচনা করার কোশেশ করবো।
ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা আসলো কোথা থেকে? মূলত এই ঈদ দুটি স্বয়ং যিনি আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের জন্য দিয়েছেন।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه قال قدم النبى صلى الله عليه وسلم المدينة ولهم يومان يلعبون فيهما فقال ما هدان اليومان قالوا كنا نلعب فيهما فى الجاهلية فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم قد ابدلكم الله بهما خيرا منهما يوم الاضحى و يوم الفطر-
অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন (মক্কা শরীফ থেকে) হিজরত করে মদীনা শরীফ-এ তাশরীফ আনেন। মদীনা শরীফ-এর যারা অধিবাসী ছিলেন তারা সেখানে দু’দিন খেলাধুলা করতেন। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এই দু’দিন কি? মদীনা শরীফ-এর অধিবাসীগণ উনারা জবাবে বললেন, এই দু’দিন আমরা আইয়্যামে জাহিলিয়াত থেকে খেলাধুলা করে আসতেছি। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের এ দু’দিন বাদ দিয়া অর্থাৎ খেল-তামাশার এই দু’দিন পাল্টিয়ে এর চাইতে উত্তম দু’টা দিন দান করবেন তা হচ্ছে কুরবানীর দিন ও ফিতরের দিন।” (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুটি দিন ঈদুল আযহা, ঈদুল ফিতর ঈদের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিলেন যে, এই দিন খেল-তামাশা না করে যেনো বান্দা ও উম্মত ঈদ করে, খুশি করে। এখন হাদীছ শরীফ দ্বারাই রোযার ঈদ ও কুরবানীর ঈদ সাব্যস্ত হয়েছে, তা নির্দিষ্ট হয়েছে।
এই দু’ঈদের পক্ষে কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারা দলীল দেয়া হয়ে থাকে, ইমাম-মুজতাহিদ যারা অতীত হয়েছেন উনারা দলীল পেশ করেছেন। যেমন রোযার ঈদের দলীল উনারা পেশ করেছেন, সূরা আ’লা-এর ১৪, ১৫ নম্বর আয়াত শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, قد افلح من تزكى وذكر اسم ربه فصلى
অর্থ: “নিশ্চয়ই ওই ব্যক্তি কামিয়াবী হাছিল করেছেন, যে নিজেকে ইছলাহ করেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করেছেন অতঃপর নামায পড়েছেন।”
এ আয়াত শরীফ يوم الفطر ঈদুল ফিতর বা রোযার ঈদের নামাযের দলীল। অথচ এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে মক্কা শরীফ-এ। তবে তারতীবের দিক থেকে অর্থাৎ নুযূলের তারতীবের দিক থেকে ‘সূরা আ’লা’ হচ্ছে অষ্টম। মক্কা শরীফ-এ নাযিল হয়েছে কিন্তু হুকুমটা জারি হয়েছে মদীনা শরীফ-এ। কে জারি করছেন? আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জারি করলেন। ঠক একইভাবে আমরা দেখতে পাই কুরবানীর ঈদের দলীল ইমাম-মুজতাহিদ উনারা সূরা কাওছার-এর আয়াত শরীফ-এর দ্বারা দলীল দিয়েছেন।
فصل لربك وانحر
অর্থ: “অতঃপর নামায পড়–ন এবং রব তায়ালা উনার জন্য কুরবানী করুন।” (সূরা কাওছার : আয়াত শরীফ-২ )
এই সূরা কাওছারও মক্কা শরীফ-এ নাযিল হয়েছে। নুযূলের তারতীবের দিক থেকে এটা হচ্ছে পনের নম্বর। কিন্তু হুকুম মক্কা শরীফ-এ জারি হয়নি। মদীনা শরীফ-এ হিজরতের পর হুকুমটা জারি হয়েছে। এখন তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে রোযার ঈদ ও কুরবানীর ঈদ এ দু’ঈদ মূলত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতদেরকে দিলেন।
قد ابدلكم الله بهما خيرا منهما
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের জন্য এ দুটা দিন পাল্টিয়ে উত্তম দু’টা দিন দান করবেন।” একটা রোযার ঈদ আর একটা কুরবানীর ঈদ।
কিন্তু আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রোযার ঈদ ও কুরবানীর ঈদ নির্দিষ্ট করে দেয়ার অর্থ মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দিষ্ট করে দেয়া। কারণ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী ছাড়া কোনো কিছুই বলেন না ও করেন না। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী ছাড়া কোনো কথা বলেন না।” (সূরা নজম : আয়াত শরীফ ৩, ৪) অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বলাটাই মহান আল্লাহ পাক উনার বলা। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাছ করে দুটা ঈদ দিয়েছেন খুশি প্রকাশ করার জন্য। তা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা নামে মশহুর রয়েছে। এখন এই যে দু’ঈদ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দিলেন, এই দু’ঈদ ব্যতীত আরো একটা ঈদ রয়েছে যে ঈদের দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা থেকে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাময়।
স্মরণীয় যে, ছিহাহ ছিত্তাহ বা বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাযাহ শরীফ, নাসায়ী শরীফ এছাড়াও মুয়াত্তা মালিক, মুয়াত্তা মুহম্মদসহ আরো বড় বড় মশহুর ছহীহ হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহ পাক উনার প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, উনার যমীনে আগমন ও বিছাল শরীফ জুমুয়ার দিন সম্পন্ন হয়েছে। যার কারণে এ জুমুয়ার দিনটিকে স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে ঈদের দিন বলে ঘোষণা করেছেন এবং এ দিনকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ দিনটিকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক সম্মানিত দিন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি এদিনটিকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এ দুটি ঈদের দিন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন।
‘মুরসাল সনদে’ হযরত উবাইদ বিন সাব্বাক রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি তাবিয়ী ছিলেন, তিনি বর্ণনা করেছেন। আর মুত্তাসিল সনদেও তা বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت عبيد بن السباق رحمة الله عليه مرسلا وعن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه متصلا قالا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فى جمعة من الجمع يامعشر المسلمين ان هذا يوم جعله الله عيدا فاغسلوا ومن كان عنده طيب فلا يضره ان يمس منه وعليكم بالسواك .
অর্র্থ: “হযরত উবাইদ বিন সাব্বাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুরসাল সূত্রে আর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মুত্তাসিল সূত্রে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক জুমুআর দিনে বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায়! এটি এমন একটি দিন, যে দিনটিকে আল্লাহ পাক তিনি ঈদস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন। তোমরা এদিন গোসল করো, যাদের নিকট সুগন্ধি রয়েছে তারা সুগন্ধি মাখো এবং তোমাদের জন্য এদিন মেসওয়াক করাও জরুরী।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাযাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহে ইবনে মাযাহ, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তালিকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, মিরযাতুল মানাজীহ ইত্যাদি।) অর্র্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি জুমুআর দিনটিকে মু’মিন-মুসলমানের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, হাদীছ শরীফ-এ এই জুমুআর দিনটিকে আল্লাহ পাক উনার নিকট ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও মহান বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই জুমুআর দিনে আল্লাহ পাক উনার প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি যমীনে আগমন করেছেন এবং এই দিনে তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت ابى لبابة بن عبد المنذر رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الجمعة سيد الايام واعظمها عند الله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر فيه خمس خلال خلق الله فيه حضرت ادم عليه السلام واهبط الله فيه حضرت ادم عليه السلام الى الاوض وفيه توفى الله حضرت ادم عليه السلام وفيه ساعة لايسأل العبد فيها شيأ الا اعطاه ما لايسأل حراما وفيه تقوم الساعة ما من ملك مقرب ولا سماء ولا ارض  ولا رياح ولا جبال ولا بحر الا هو مشفق من يوم الجمعة .
অর্র্থ: “হযরত আবূ লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, জুমুআর দিন সকল দিনের সাইয়্যিদ এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে, (১) এ দিনে আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে উনাকে বিছাল শরীফ দান করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়টিতে বান্দা আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন, যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশতা নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুআর দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
স্মরণীয় যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, যমীনে আগমন ও বিদায়ের কারণে জুমুয়ার দিন যদি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত হয় তাহলে যিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করা না হলে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেসহ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সৃষ্টি করা হতো না এবং উনাদের বিশেষ কোন ঘটনাও সংঘটিত হতো না, শুধু তাই নয়, আসমান-যমীন, লওহো-কলম, আরশ-কুরসী, জিন-ইনসান, ফেরেশতা, বেহেশত-দোযখ, এক কথায় কায়িনাতের কোনো কিছুই সৃষ্টি করা হতো না উনার যমীনে আগমন তথা বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিন ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ কতো মহান, কতো বড় খুশি বা ঈদের দিন হবে তা ফিকির করতে হবে।
‘বুখারী শরীফ’-এ হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। একবার কিছু ইহুদী আসলো। এসে বললো, “হে হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! হে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন! আপনাদের কুরআন শরীফ-এ এমন একখানা আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে তা এতো গুরুত্বপূর্ণ যে, সেটা যদি ইহুদীদের তাওরাত শরীফ-এ নাযিল হতো, তাহলে সেই দিনটাকে ইহুদী সম্প্রদায় ঈদের দিন বা খুশির দিন হিসেবে ঘোষণা দিতো।”
এটা যখন ইহুদী সম্প্রদায় খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললো, তখন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “হে ইহুদী সম্পদ্রায়! তোমরা কোন আয়াত শরীফ-এর কথা বলতেছ?”
ইহুদী সম্প্রদায় বললো, “হে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! সেটা হচ্ছে ‘সূরা মায়িদা’-এর তিন নম্বর আয়াত শরীফ যে আয়াত শরীফ-এ আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
البوم اكمت لكم دينكم واتممت عليكم نعمتى و رضيت لكم الاسلام دينا
অর্থ: “আজকে তোমাদের দ্বীনকে আমি কামিল করে দিলাম। আমার নিয়ামত তোমাদের জন্য তামাম করে দিলাম বা পরিপূর্ণ করে দিলাম। এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম এবং এর মধ্যে আমি সন্তুষ্ট রইলাম।” সুবহানাল্লাহ!
আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “ইসলামকে পরিপূর্ণ করা হলো, নিয়ামত পরিপূর্ণ করা হলো, এটা মনোনীত করা হলো এবং এতে সন্তুষ্টি দেয়া হলো।” এ আয়াত শরীফ যদি নাযিল হতো ইহুদীদের মধ্যে তাওরাত শরীফ-এ, তাহলে তারা বললো, তারা ঈদের দিন ঘোষণা করতো।
যখন একথা তারা বললো, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “হে ইহুদী সম্প্রদায়! তোমাদের কি জানা রয়েছে, এ আয়াত শরীফ কবে নাযিল হয়েছে?”
ইহুদী সম্প্রদায় বললো, “হে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আসলে সেটা আমাদের জানা নেই।” 
ইহুদীদের সেটা জানা ছিল না। কোন দিন, কবে, কোথায় এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে।
তিনি তখন বললেন, “দেখ, এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি, হজ্জের সময়। তিনি তো হজ্জ করেছেন একবার যা বিদায় হজ্জ নামে মশহুর। সেই বিদায় হজ্জের সময় আরাফার ময়দানে বাদ আছর। তখন আরাফার দিন ছিল শুক্রবার। সেই শুক্রবার দিন বা’দ আছর আরাফার ময়দানে এই আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে।”
হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন যে, “দেখ, মুসলমানদের জন্য এই দুটা দিনই হচ্ছে ঈদ বা খুশির দিন। কাজেই, মুসলমানদেরকে এ আয়াত শরীফ যেদিন নাযিল হয়েছে সেই দিনটাকে আলাদাভাবে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করতে হবে না।” সুবহানাল্লাহ! যখন এটা বলা হলো তখন ইহুদীরা বুঝলো। অতঃপর তারা চলে গেল।
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه انه قرأ اليوم اكمت لكم دينكم الاية و عنده يهودى فقال لونزلت هذه الاية علينا لاتحذنا ها عيدا فقال حضرت ابن عباس رصى الله تعالى عنه فانها نزلت فى يوم عيد ين فى يوم جمعة ويوم عرفة-
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা
اليوم اكملت لكم دينكم (الاخر)
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম।” এ আয়াত শরীফটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তখন উনার নিকট এক ইহুদী ছিলো সে বলে উঠলো, “যদি এই আয়াত শরীফ আমাদের ধর্মে নাযিল হতো তাহলে আমরা সেই দিনটিকে ‘ঈদ’ বলে ঘোষণা করতাম যে দিন এ আয়াত শরীফ নাযিল হতো।
এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘এ আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যে দিন এক সাথে দু’ঈদ ছিলো। এক. জুমুয়ার দিন এবং দুই. আরাফার দিন।” (তিরমিযী শরীফ)
উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠলো যে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ছাড়াও আরো অনেক ঈদ রয়েছে। তন্মধ্যে জুমুয়ার দিন ও আরাফার দিনও ঈদ বা খুশির দিন। যে দিনসমূহে মুসলমান খুশি প্রকাশ করে থাকেন। তবে সমস্ত ঈদের সাইয়্যিদ ও সমস্ত শ্রেষ্ঠতম ঈদেরও সাইয়্যিদ হচ্ছে সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবার পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন সমস্ত সৃষ্টি থেকে শ্রেষ্ঠতম মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত অনুরূপভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর দিন, মাস বারও অন্যান্য সমস্ত দিন, মাস বার ও সময় থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ফযীলতপূর্ণ সবচেয়ে বড় খুশী বা ঈদের। সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত ঈদসমূহ ছাড়াও কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ তথা শরীয়তে আরো অনেক ঈদ রয়েছে, যেমন- কুরআন শরীফ-এ সূরা মারইয়াম-এর মধ্যে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম- উনাদের বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর মুবারক দিনে উনাদের প্রতি আল্লাহ পাক-উনার পক্ষ থেকে সালাম অর্র্থাৎ খাছ রহমত, বরকত, সাকীনা নাযিলের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
وسلم عليه يوم ولد ويوم يموت ويوم يبعث حيا .
অর্র্থ: “উনার প্রতি সালাম (শান্তি) যেদিন তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ লাভ করবেন এবং যেদিন তিনি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন।” (সূরা মারইয়াম : আয়াত শরীফ ১৫)
অনুরূপ হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে উনার নিজের বক্তব্য কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
والسلم على يوم ولدت ويوم اموت ويوم ابعث حيا-
অর্র্থ: “আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি বিলাদত শরীফ লাভ করি, যেদিন আমি বিছাল শরীফ লাভ করি এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব।” (সূরা মারইয়াম : আয়াত শরীফ ৩৩)
এছাড়া, ‘সূরা মায়িদা’-এর মধ্যে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার প্রতি আসমানী (বেহেশতী) খাদ্যের এক খাঞ্চা নাযিলের দিনটিকে উনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল উম্মতদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
যেমন কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি দোয়া করেছিলেন-
اللهم ربنا انزل علينا مائدة من السماء تكون لنا عيدا لاولنا واخرنا واية منك وارزقنا وانت خير الرازقين. قال الله انى منزلها عليكم فمن يكفر بعد منكم فانى اعذبه عذابا لا اعذبه احدا من العالمين .
অর্র্থ: “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশতী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি, অর্র্থাৎ খাদ্যসহ খাঞ্চাটি যেদিন নাযিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চাকে এবং তা নাযিলের দিনটিকে ঈদ বা খুশির দিন হিসেবে পালন করবে না বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিব, যে শাস্তি সারা কায়িনাতের অপর কাউকে দিব না।” (সূরা মায়িদা : আয়াত শরীফ- ১১৪, ১১৫)
এখন ফিকিরের বিষয় যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম উনাদের বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিন যদি ঈদ ও রহমত, বরকত, সাকীনা নাযিলের দিন হয় এমনকি সামান্য এক খাদ্যের খাঞ্চা নাযিলের দিন যদি, ঈদ তথা খুশির দিন হয়, তাহলে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুন নাবিইয়ীন, নবী আলাইহিস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিস সালাম উনাদের রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিন ঈদ বা খুশির দিন হবে না কেন? হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করা না হলে তো হযরত আদম আলাইহিস সালামসহ কোন নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সৃষ্টি করা হতো না। শুধু তাই নয়, আসমান-যমীন, লওহো, কলম, আরশ-কুরসী, জিন-ইনসান, ফেরেশতা, জান্নাত-জাহান্নাম এক কথায় কায়িনাতের কোন কিছুই সৃষ্টি করা হত না।
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,
عن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما افترى ادم الخطيئة قال يارب اسألك بحق محمد لما غفرت لى فقال الله يا ادم وكيف عرفت محمدا ولم اخلقه؟ قال يا رب لما خلقتنى بيدك ونفخت فى من روحك رفعت رأسى فرأيت على قوائم العرش مكتوبا لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم فعلمت أنك لم تضف الى اسمك الا احب الخلق اليك فقال الله صدقت يا ادم انه لاحب الخلق الى ادعنى بحقه فقد غفرت لك ولو لا محمد ما خلقتك. هذا حديث صحيح الاسناد .
অর্র্থ: “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া ক্ববুলের সময় হলো, তখন তিনি দোয়া করলেন, হে আমার রব! আমি আপনার কাছে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলায় প্রার্থনা করছি। অতএব আমার দোয়া ক্ববুল করুন। আল্লাহ তায়ালা তিনি বলেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম! আপনি কিভাবে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চিনলেন, এখনো তো উনাকে যমীনে প্রেরণ করিনি। জাওয়াবে হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে আমার রব! আপনি যখন আমাকে আপনার কুদরতী হাত মুবারক-এ তৈরি করে আমার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেন, তখন আমি আমার মাথা উত্তোলন করে আরশের খুঁটিসমূহে লিখিত দেখতে পাই-لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم .
(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আল্লাহ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ বা মাবূদ নেই, সাইয়্যিদুনা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক উনার রসূল।’ তখন আমি বুঝতে পারলাম, আপনার নাম মুবারক-এর সাথে যাঁর নাম মুবারক সংযুক্ত আছে, তিনি সৃষ্টির মধ্যে আপনার সবচেয়ে মুহব্বতের হবেন। আল্লাহ পাক তিনি বলেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম! আপনি সত্য কথাই বলেছেন। কারণ তিনি সৃষ্টির মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে মুহব্বতের। হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আয় আল্লাহ পাক! উনার উসীলায় আমার প্রার্থনা কবুল করুন। আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আমি আপনার দোয়া কবুল করলাম। যদি আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি না হতেন, তাহলে আমি আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না। সুবহানাল্লাহ! এ হাদীছ শরীফ খানার সনদ ছহীহ তথা বিশুদ্ধ।
 (আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪র্থ খ- ১৫৮৩ পৃষ্ঠা, আছ ছহীহাহ ১ম খ- ৮৮ পৃষ্ঠা, মুখতাছারুল মুস্তাদরাক ২য় খ- ১০৬৯ পৃষ্ঠা, আত তাওয়াসসুল ১১৫ পৃষ্ঠা, তাফসীরুদ দুররিল মানছূর লিস সুয়ূত্বী ১ম খ- ৫৮ পৃষ্ঠা, কানযুল উম্মাল ১১ খ- ৪৫৫ পৃষ্ঠা)
এখন কথা হচ্ছে, যাঁর উসীলায় হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি সৃষ্টি হলেন, সেই হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার কারণে যদি জুমুয়ার দিন ঈদের দিন হয়। ঈদুল আযহা ঈদুল ফিতর থেকে শ্রেষ্ঠপূর্ণ হয়ে থাকে তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর মুবারক দিন ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সোমবার শরীফ কতটুকু মর্যাদাপূর্ণ, সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ হবে। তা ফিকির করতে হবে।
মূলত পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছে সাইয়্যিদুল আই’য়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর তথা সর্বশ্রেষ্ঠ সবচেয়ে মহান সবচেয়ে বড় ঈদের দিন। সুবহানাল্লাহ!
আরো উল্লেখ্য যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার উক্ত দোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক তিনি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করেছিলেন। আর খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিলের দিনটিকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার উম্মতদেরকে নিয়ে ঈদ বা খুশির দিনরূপে পালন করেছিলেন।
এখন সামান্য খাদ্যসহ এক খাঞ্চা নাযিলের দিনটি যদি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং উনার উম্মতের জন্য খুশির দিন হয়ে যায় এবং সে দিনটিকে খুশির দিন হিসেবে পালন না করলে কঠিন শাস্তির যোগ্য হয়, তাহলে যিনি সৃষ্টির মূল, যিনি সারা আলমের জন্য রহমত, যাকে সৃষ্টি না করলে কোা কিছুই সৃষ্টি করা হত না উনার বিলাদত শরীফ-এর দিনটিকে কিরূপ খুশির দিন হিসেবে পালন করা উচিত এবং সেদিন উপলক্ষে যদি কেউ খুশি প্রকাশ না করে তাহলে সে কত কঠিন শাস্তির যোগ্য হবে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কোন লোকের সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সে খুশি হয়, বিবাহ-শাদীতে খুশি হয়, চাকরি পেলে খুশি হয়, ব্যবসায় লাভ হলে খুশি হয়, বিপদ থেকে বেঁচে গেলে খুশি হয়, সুন্দর করে ঘর-বাড়ি করতে পারলে খুশি হয়, জায়গা-জমি কিনতে পারলে খুশি হয়, কোন মর্যাদা কিংবা পদ লাভ করলে খুশি হয়, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে খুশি হয়, বিশেষ করে মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার যেদিন ফল প্রকাশ হয় সেদিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রী ও তার অভিভাবক, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন খুশি হয়ে মিষ্টি কিনে বিতরণ করে থাকে ও খেয়ে থাকে। দুনিয়াবী ক্ষণস্থায়ী সামান্য নিয়ামত লাভে খুশি প্রকাশের দৃষ্টান্ত যদি এই হয়, তাহলে যিনি আগমন না করলে কুল-কায়িনাতের কোন কিছুই সৃষ্টি হত না, সৃষ্টি হত না কোন পিতা-মাতার, না কোন সন্তানের সেক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমন বা বিলাদত শরীফ-এর দিন উপলক্ষে কত বেশি খুশি প্রকাশ করতে হবে, মিষ্টি দিয়ে, মাল দিয়ে, না জান দিয়ে তা ফিকির করতে হবে।
কারণ হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
لايؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من والده و ولده والناس اجمعين وفى رواية من ماله و نفسه
অর্থ: “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সমস্ত মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি মুহব্বত না করবে।” অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তার মাল ও জান অপেক্ষা বেশি মুহব্বত না করবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
এ হাদীছ শরীফ থেকে সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয় যে, মানুষের জীবনে যত রকম খুশি প্রকাশের বিষয় রয়েছে সমস্ত খুশির বিষয় থেকে লক্ষ-কোটি গুণ বেশি খুশি প্রকাশের উপলক্ষ হলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভাগমন বা বিলাদত শরীফ-এর দিনটি।
তাই, শরীয়ত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর মহিমান্বিত দিনটিকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম ও সাইয়্যিদে ঈদে আকবর বলে ঘোষণা করেছে এবং এ ঈদ পালন বা উদযাপন করাকে বান্দা-বান্দী ও উম্মত এবং সমস্ত কায়েনাতের জন্য ফরযে আইন করে দিয়েছে।
বিশ্ব সমাদৃত ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আ’লাম’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, যখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর পবিত্র দিনটি  আগমন করল। শরীয়তে সূর্যাস্তের পর তারিখ পরিবর্তন হয় অর্থাৎ আগে রাত পরে দিন এসে থাকে। সে পবিত্র রাতটির অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে স্বয়ং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, ‘এটা ছিল চন্দ্রের আলোয় আলোকিত রাত। চারপাশে কোন প্রকার অন্ধকার ছিল না। সে সময় হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সন্তান উনাদের নিয়ে হারাম শরীফ-এর দিকে যান বাইতুল্লাহ শরীফ-এর ভাঙা দেওয়াল মেরামত করার জন্য। ফলে সে সময় আমার নিকট কোন নারী বা পুরুষ কেউই ছিলেন না। আমার নিঃসঙ্গতার জন্য কান্না পাচ্ছিল। হায়! কোন মহিলাই আমার খিদমতে নেই। আমার জন্য কোন একান্ত সাথীও নেই, যিনি আমাকে সান্ত¡না দিবেন। কোন দাসীও নেই, যে আমার মনোবল অটুট রাখবে।’ অতঃপর তিনি বলেন, ‘আমি তাকালাম বসত বাড়ির এক কোণায়। সহসাই তা উন্মোচিত হল এবং চারজন সুউচ্চ মহিলা বের হয়ে এলেন।’
উক্ত চারজন মহীয়সী এমন উজ্জ্বল ছিলেন যেন উনারা চন্দ্র। উনাদের চারদিকে আলো আর আলো। আবদে মানাফ বংশের সাথে সাদৃশ্য রাখেন উনারা। অতঃপর উনাদের প্রথমজন এগিয়ে এলেন এবং তিনি বললেন, ‘হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনার মতো কে আছেন? আপনি যে রবীয়া ও মুদ্বার গোত্রের সাইয়্যিদ উনাকে রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন।’ অতঃপর তিনি আমার ডান দিকে বসলেন। তখন আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি কে?’ তিনি বললেন, ‘আমি হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম। মানবজাতির মাতা।’ অতঃপর দ্বিতীয়জন এগিয়ে এলেন। তিনি বললেন, ‘হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনার মত কে আছেন? আপনি তো রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন পূতপবিত্র জ্ঞান-ভা-ারের রহস্য উনাকে, রতœরাজির সাগর উনাকে, নূরের ঝলক উনাকে, সুস্পষ্ট তত্ত্বজ্ঞানী উনাকে।’ অতঃপর তিনি বাম দিকে উপবেশন করলেন। তখন আমি উনাকে বললাম, ‘আপনি কে?’ তিনি বললেন, ‘আমি হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়া হযরত সাররাহ আলাইহাস সালাম।’ অতঃপর তৃতীয়জন এগিয়ে এলেন এবং বললেন, ‘হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনারতো কোন তুলনাই হয় না। আপনি যে চির প্রত্যাশার হাবীব, হাবীবে খোদা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন, যিনি প্রশংসা ও ছানা-ছিফতের লক্ষ্যস্থল।’ অতঃপর তিনি আমার পিঠের দিকে বসলেন। আমি বললাম, ‘আপনি কে?’ তিনি বললেন, ‘আমি হযরত আছিয়াহ বিনতে মুসাহিম আলাইহাস সালাম।’ এরপর চতুর্থজন এগিয়ে এলেন। তিনি অন্যদের তুলনায় বেশি উজ্জ্বলতার অধিকারিণী ছিলেন। তিনি বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনার সমকক্ষ কেউই নেই। আপনি রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন অকাট্য দলীলের অধিকারী সত্তা যিনি উনাকে, যিনি মু’জিযা, আয়াত ও দালায়িলের অধিকারী। যিনি যমীন ও আসমানবাসীদের সাইয়্যিদ। উনার উপর আল্লাহ পাক উনার সর্বোত্তম ছলাত এবং পরিপূর্ণ সালাম।’ তারপর তিনি আমার নিকটে বসলেন আর আমাকে বললেন, ‘হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনি আমার উপর হেলান দিন। আমার উপর পূর্ণ আস্থা রাখুন।’ আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম। ‘আপনি কে?’ তিনি বললেন, ‘আমি হযরত র্মাইয়াম বিনতে ইমরান আলাইহাস সালাম। আমরা আপনার সেবিকা এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গ্রহণকারিণী।’
হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, উনাদের উপস্থিতিতে আমার একাকীত্ব দূর হল। আর আমি দেখতে লাগলাম, দীর্ঘ বাহুবিশিষ্ট জনেরা আমার নিকট দলে দলে আসছেন। আমি আমার গৃহের দিকে তাকালাম, এখানে নানান ভাষায় বৈচিত্র্যপূর্ণ দুর্বোধ্য কথা আমি শুনতে পেলাম। আমি সে সময় লক্ষ্য করলাম, দলে দলে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার ডানে-বামে উড়তেছেন। তখন আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে আদেশ করলেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! রূহসমূহকে ‘শারাবান তহূরা’ পাত্রের নিকট শ্রেণীবদ্ধ করুন। হে হযরত রিদ্বওয়ান আলাইহিস সালাম! জান্নাতের নবোদ্ভিন্না যুবতীগণ উনাদেরকে নতুন সাজে সজ্জিত করুন। আর পবিত্র মেশকের সুগন্ধি ছড়িয়ে দিন। সারা মাখলূক্বাতের যিনি শ্রেষ্ঠতম রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আবির্ভাব উপলক্ষে। হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! বিছিয়ে দিন নৈকট্য ও মিলনের জায়নামায সেই মহানতম রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য, যিনি অধিকারী নূরের, উচ্চ মর্যাদার এবং মহা মিলনের। হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! দোযখের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশ্তা হযরত মালিক আলাইহিস সালাম উনাকে আদেশ করুন তিনি যেনো দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করেন। জান্নাতের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতা হযরত রিদ্বওয়ান আলাইহিস সালাম উনাকে বলুন, তিনি যেন জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করেন। হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! হযরত রিদ্বওয়ান আলাইহিস সালাম উনার অনুরূপ পোশাক পরিধান করুন এবং যমীনের বুকে গমন করুন সুসজ্জিত হয়ে কাছের ও দূরের সকল ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সহকারে। অতঃপর আসমান-যমীনের চারপাশে ঘোষণা দিন, সময় ঘনিয়ে এসেছে, মুহিব ও মাহবূবের মিলনের, ত্বালিব ও মাত্বলূবের সাক্ষাতের। অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার সাথে উনার হাবীবে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে মি’রাজ হবে তার সময় নিকটবর্তী হল উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ-এর মাধ্যমে।” সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হুকুম বাস্তবায়ন করলেন, যেমনটি আল্লাহ পাক জাল্লা শানূহূ তিনি হুকুম করলেন। এক জামায়াত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মক্কা শরীফ-এর পাহাড়ে দায়িত্ব দিলেন। উনারা হারাম শরীফ-এর দিকে নজর রাখলেন। উনাদের পাখাসমূহ যেন সুগন্ধিযুক্ত সাদা মেঘের টুকরা। তখন পাখিসমূহ তাসবীহ পাঠ করতে লাগলো এবং উন্মুক্ত প্রান্তরে বনের পশুগুলো সহানুভূতির ডাক, আশার ডাক দিতে লাগল। এ সবকিছুই সেই মহান মালিক জলীল জাব্বার আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার আদেশ মুতাবিক হল।
হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক তিনি আমার চোখের পর্দা অপসারিত করলেন। আমি দেখতে পেলাম, শাম দেশের বছরা নগরীর প্রাসাদসমূহ। আমি দেখলাম, তিনটি পতাকা। একটি পতাকা পূর্ব প্রান্তে, আরেকটি পতাকা পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয়টি কা’বা শরীফ-এর ছাদে। আমি আরো দেখলাম, পাখিদের একটি দল, যে পাখিদের চক্ষুগুলো স্বর্ণাভ, ডানাগুলো বৈচিত্র্যময় রঙ-বেরঙের ফুলের মতো। সেগুলো আমার কক্ষে প্রবেশ করলো মণিমুক্তার মতো। এরপর উক্ত পাখিগুলো আমার চারপাশে আল্লাহ পাক-উনার ছানা-ছিফত করতে লাগল। আমি উম্মীলিত রইলাম এ অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার নিকট দলে দলে আসতে লাগলেন। আর উনাদের হাতে ছিল ‘আগরদান’ স্বর্ণাভ ও রৌপ্য নির্মিত। আর উনারা সুগন্ধি ধূম্র ছড়াচ্ছিলেন। সেই সাথে উনারা উচ্চকণ্ঠে মহাসম্মানিত ও মর্যাদাবান নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করছিলেন। উনাদের কণ্ঠে সৌজন্যতার ও মহানুভবতার ভাব স্পষ্ট ছিল।
হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, চন্দ্র আমার মাথার উপর চলে এলো, তাঁবু মাথার উপর থাকার মতো। আর তারকারাজি আমার মাথার উপর সদৃশ মোমবাতির ন্যায়। সে অবস্থায় আমার নিকট ছিলো দুধের ন্যায় শুভ্র সুগন্ধিময় পানীয়, যা ছিলো মধুর চেয়ে মিষ্ট এবং বরফের চেয়ে বেশি ঠা-া। তখন আমার খুব পিপাসা লাগছিল। আমি তা গ্রহণ করলাম ও পান করলাম। এর চেয়ে অধিক কোন সুপেয় পানীয় আগে কখনো পান করিনি। অতঃপর আমা হতে প্রকাশিত হলো এক মহিমান্বিত নূর।
উক্ত বর্ণনা থেকে প্রতিভাত হলো, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ কালে স্বয়ং খালিক্ব, মালিক, রব আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি খুশি প্রকাশ করেন এবং উনার হুকুম বা নির্দেশে খুশি প্রকাশ করেছিলেন ফেরেশতাকুল আলাইহিমুস সালাম, খুশি প্রকাশ করেছিলেন জান্নাতের অধিবাসীগণ, এমনকি খুশি প্রকাশ করেছিলো বনের পশু-পাখিরাও। খুশি প্রকাশ করে ছানা-ছিফত বর্ণনা করেছিলেন এবং পাঠ করেছিলেন ছলাত-সালাম ও তাসবীহ তাহলীল। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, বান্দা-বান্দী ও উম্মতের প্রতিও আল্লাহ পাক উনার সে একই নির্দেশ হলো যে, তারা যেনো হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে।
যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ ফরমান,
قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون .
অর্র্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় অনুগ্রহ ও রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সে কারণে তারা যেনো খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসবকিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (সূরা ইউনুস : আয়াত শরীফ ৫৮)
এ হুকুম বা নির্দেশের কারণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তাবারুকের ব্যবস্থাসহ মাহফিলের আয়োজন করেন এবং স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই মাহফিলে উপস্থিত হয়ে রহমত, মাগফিরাত, নাজাত ও শাফায়াতের সুসংবাদ প্রদান করেন। সুবহানাল্লাহ!
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه  مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لا بنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك .
অর্র্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার সন্তান-সন্ততি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে সমবেত করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস, এই দিবস অর্র্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন তখন সমবেত সবাই দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে মাহফিল করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তিনি আপনাদের জন্য রহমতের দরজা উš§ুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতা আপনাদের জন্য মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনাদের মতো এরূপ কাজ করবে, আপনাদের মতো তারাও রহমত ও মাগফিরাত এবং নাজাত লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى .
অর্র্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার নিজ গৃহে ছাহাবীগণ উনাদেরকে সমবেত করে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে ছলাত-সালাম (দুরূদ শরীফ) পাঠ করছিলেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন তখন সমবেত সবাই দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে মাহফিল করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর)

সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবার পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা মুসলমানসহ সমস্ত কুল-কায়িনাতের জন্য ফরয আইন
‘ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ শব্দ মুবারক-এর শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ-
عيد‘ঈদ’ অর্র্থ খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা। আর ميلاد‘মীলাদ’ অর্র্থ জন্মের সময় বা দিন। النبى (আন নাবিইয়্যু) শব্দ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়।
কাজেই আভিধানিক অর্থে عيد ميلاد النبى (ঈদু মীলাদিন নাবিইয়ি) বলতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর দিন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করাকেই বুঝায়।
আর পারিভাষিক অর্থে ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর দিবস উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা, উনার ছানা-ছিফত, ফাযায়িল-ফযীলত, শান-মান বর্ণনা করা, উনার প্রতি ছলাত-সালাম ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা, উনার পূত-পবিত্রতম জীবনী মুবারক-এর সামগ্রিক বিষয়ের আলোচনাকে বুঝায়।
স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই সুমহান বিলাদত শরীফ-এর দিন তথা পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ বা খুশি প্রকাশ করতে নির্দেশ করেছেন। জিন-ইনসান ও কুল-কায়িনাতের সকলের জন্য যা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। এই পবিত্র দিন তথা ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ ইয়ামুল ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার শরীফ-এ খুশি প্রকাশ করা। সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ পালন করা। মূলত এই ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ-এ খুশি প্রকাশ করা শরীয়তের নির্দেশ তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। যেমন-
বান্দা-বান্দী ও উম্মতের জন্য ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা ফরয হওয়ার প্রমাণ:
ঊছুলে ফিক্বাহর সমস্ত কিতাবেই উল্লেখ আছে যে, الامر للوجوب অর্থাৎ আদেশসূচক বাক্য দ্বারা সাধারণত ফরয-ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়ে থাকে। যেমন কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, اقيموا الصلوة অর্থাৎ “তোমরা নামায আদায় করো।” কুরআন শরীফ-এর এ নির্দেশসূচক বাক্য দ্বারাই নামায ফরয সাব্যস্ত হয়েছে। অনুরূপ হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছেواعفوا للحى  অর্থাৎ “তোমরা (পুরুষরা) দাড়ি লম্বা করো।” হাদীছ শরীফ-এর এ নির্দেশসূচক বাক্য দ্বারাই কমপক্ষে এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয-ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়েছে।
ঠিক একইভাবে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা অর্থাৎ ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম সোমবার শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে ঈদ করা তথা খুশি প্রকাশ করা বান্দা-বান্দী ও উম্মতের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এ ব্যাপারেও কুরআন শরীফ-এ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বহু স্থানে আদেশ-নির্দেশ রয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
اذكروا نعمة الله عليكم
অর্থাৎ “তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্মরণ করো।” (সূরা আলে ইমরান : আয়াত শরীফ ১০৩)
এ আয়াত শরীফ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক প্রদত্ত নিয়ামত স্মরণ করা, নিয়ামতের আলোচনা করা, নিয়ামত প্রাপ্তি উপলক্ষে নিয়ামত প্রাপ্তির দিন ঈদ বা খুশি প্রকাশ করা ফরয সাব্যস্ত হয়। অর্থাৎ নিয়ামত প্রাপ্তি উপলক্ষে নিয়ামত প্রাপ্তির দিনে নিয়ামতকে স্মরণ করে ঈদ বা খুশি প্রকাশ করা ফরয। আর সে নিয়ামতকে ভুলে যাওয়া বা খুশি প্রকাশ না করা কঠিন শাস্তির কারণ। এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, শাস্তি থেকে বেঁচে থাকাও বান্দা-বান্দী ও উম্মতের জন্য ফরয।
এ বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাবে ইরশাদ করেন,
قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاء تَكُونُ لَنَا عِيداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ. قَالَ اللّهُ إِنِّي مُنَزِّلُهَا عَلَيْكُمْ فَمَن يَكْفُرْ بَعْدُ مِنكُمْ فَإِنِّي أُعَذِّبُهُ عَذَابًا لاَّ أُعَذِّبُهُ أَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِينَ.
অর্র্থ: “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশতী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি অর্র্থাৎ খাদ্যসহ খাঞ্চাটি যেদিন নাযিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চাকে এবং তা নাযিলের দিনটিকে ঈদ তথা খুশির দিন হিসেবে পালন করবে না বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিবো, যে শাস্তি সারা কায়িনাতের অপর কাউকে দিবো না।”  (সূরা মায়িদাহ : আয়াত শরীফ ১১৪)
এ আয়াত শরীফ দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হল যে, নিয়ামত প্রাপ্তির দিনটি পূর্ববর্তী-পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ বা খুশির দিন। যা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। আরো প্রমাণিত হয় যে, নিয়ামত প্রাপ্তি উপলক্ষে নিয়ামত প্রাপ্তির দিনে যারা ঈদ বা খুশি প্রকাশ করবেনা তারা কঠিন আযাব বা শাস্তির সম্মুখীন হবে। অর্থাৎ এ আয়াত শরীফ দ্বারাও মহান আল্লাহ পাক তিনি নিয়ামত প্রাপ্তি উপলক্ষে নিয়ামত প্রাপ্তির দিনে খুশি প্রকাশ করাকে ফরয করে দিয়েছেন।
এখন কথা হলো- সাধারণভাবে কোনো নিয়ামত প্রাপ্তির কারণে নিয়ামত প্রাপ্তির দিন ঈদ বা খুশি করা যদি ফরয হয়, আর হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উম্মতের জন্য আসমান থেকে খাদ্য বা নিয়ামত নাযিল হওয়ার কারণে সে দিনটি যদি পূর্ববর্তী-পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ বা খুশির দিন হয় এবং সে ঈদকে অস্বীকারকারী বা সে ঈদ না পালনকারী যদি কঠিন আযাব বা শাস্তির উপযুক্ত হয়; তবে যিনি কুল-কায়িনাতের জন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত অর্থাৎ নিয়ামতে কুবরা আলাল আলামীন তিনি যেদিন যে সময়ে পৃথিবীতে তাশরীফ আনলেন বা বিলাদত শরীফ লাভ করলেন। সে দিনটি কেনো পূর্ববর্তী-পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ বা খুশির দিন হবে না? সেদিন যারা ঈদ বা খুশি প্রকাশ করবেনা তারা কেনো কঠিন আযাব বা শাস্তির উপযুক্ত হবে না?

0 Comments: