হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ২৭৬-৩৭৭) (ক)

হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ২৭৬-৩৭৭) (ক)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাহিলিয়াতের সমস্ত প্রকার মূর্খতা, অশালীন ও মন্দতা থেকে সম্পূর্ণরূপে পুতঃপবিত্র ও মাহফুয ছিলেন।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت جابر بن عبد الله رضى الله تعالى عنه- ان النبى صلى الله عليه وسلم كان ينقل الحجارة للكعبة وعليه إزار فقال له العباس عمه- يا ابن اخى لو حللت ازارك فجعلته على منكبيك يقيك الحجارة فحله فجعله على منكبيه فسقط مغشيا عليه فما رؤى بعد ذلك اليوم عريانا.
অর্থ: হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নিশ্চয়ই কা’বা শরীফ পুনঃনির্মানের জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও পাথর খন্ড বহন করে আনছিলেন। আর উনার শরীর মুবারকে তখন চাদর মুবারক ছিলো। উনার সম্মানিত পিতৃব্য সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হে আমার সম্মানিত ভাতিজা! আপনার যদি চাদর মুবারক শরীর মুবারক থেকে খুলে কাঁধ মুবারকে বেঁধে নেন তাহলে পাথরের ঘর্ষণ থেকে আপনার কাঁধ মুবারক নিরাপদ হয়ে যাবে। স্বীয় পিতৃব্য উনার কথায় তিনি চাদর মুবারক খোলার ও কাঁধ মুবারকে বাঁধার পূর্বেই তিনি অচেতন হয়ে যমীনে পড়ে গেলেন। এ ঘটনার পর থেকে উনাকে কখনও শরীর মুবারক উন্মুক্ত অবস্থায় দেখা যায়নি। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এর অনেকেই অপব্যাখ্যা করে থাকে যে, ازار দ্বারা লুঙ্গি উদ্দেশ্য। মূলতঃ এখানে ازار দ্বারা চাদর মুবারক উদ্দেশ্য। কেননা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন পুতঃপবিত্র, সমস্ত অপছন্দনীয় বিষয় থেকেও মাহফুজ। আর তিনি হচ্ছেন اسوة حسنة‘উসওয়াতুন হাসানা’। উনার মধ্যে সারা মাখলুকাতের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة
নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য তোমাদের যিনি রসূল উনার মধ্যে সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ১১)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টির সূচনা থেকেই গোটা মাখলুকাতের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে প্রেরণ করেছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, সমস্ত গাউস, কুতুব, অলী, আবদাল সকলেই উনার অনুসরণের মোহতাজ এমনকি সমস্ত সৃষ্টিকুলরাও উনার অনুসরণ করে পেয়েছে অশেষ রহমত, বরকত ও ফযীলত। সুবহানাল্লাহ!
তাই উনার লিবাস বা পোষাক মুবারক সম্পর্কে অপব্যাখ্যা করা চরম জিহালতী ও নিফাকীর কারণ।
হাদীছ শরীফ-এ আরো রয়েছে,
وأخرج حضرت ابن سعد رحمة الله عليه، و حضرت ابن عدى رحمة الله عليه، و حضرت الحاكم رحمة الله عليه وصححه، وأبوحضرت نعيم رحمة الله عليه من طريق حضرت عكرمة رحمة الله عليه، عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال- كان ابو طالب يعالحج زمزم، وكان النبى صلى الله عليه وسلم ينقل الحجارة وهو غلام فأخذ إزاره واتقى به الحجارة فغشى عليه، فلما أفاقا سأله أبو طالب فقال اتانى ات عليه ثياب بيض فقال لى استتر فكان اول شئ رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم من النبوة ان قيل له استتر وهو غلام قال فما رؤيت عورته من يومئذ.
অর্থ: হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবূ নুয়াইম রহমতুল্লাহি উনারা হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সনদসহকারে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণনা করেন। আবূ ত্বলিব তিনি যমযম কুপ মেরামত করছিলেন আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাথর বহন করে আনছিলেন। তখন উনার আনুষ্ঠানিক বয়স মুবারক ছিলো খুবই অল্প। তিনি উনার শরীর মুবারকের চাদর মুবারক-এর সাহায্যে পাথরের ঘর্ষন থেকে কাঁধের হিফাযত করার পূর্বেই তিনি অচেতন হয়ে যমীনে পড়ে গেলেন। তিনি সুস্থ হলে আবূ ত্বলিব তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাওয়াবে বললেন, এক সাদা পোশাকধারী ব্যক্তি আমার নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আপনার শরীর মুবারক ঢেকে নিন। সুবহানাল্লাহ! আর এটা হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুবুওওয়াত শরীফ-এর প্রথম নিদর্শনের বহিঃপ্রকাশ তিনি দেখিয়েছিলেন যে, উনাকে উনার শরীর মুবারক আবৃত করতে আহ্বান করা হলো। সেদিন থেকে উনার আওরাত বা শরীর মুবারক দেখা যায়নি।” সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৪৯ পৃষ্ঠা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ)
হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আয়েশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি কখনও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওরাত মুবারক দেখিনি।” সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই ছিলো বেমেছাল শরাফত তথা লেবাস মুবারক পড়ার তারতীব। অথচ অন্যদিকে জাহিলিয়াতের যুগেই মানুষ পোশাক-পরিচ্ছদ খুবই কম পড়তো। সে সময় ছিলো চরম লজ্জাহীনতা, বেহায়াপনা। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসেই লজ্জাহীনতা মুলক পোশাককে ধ্বংস করে দিয়ে মুসলমানকে দান করলেন সুন্নতী লিবাস মুবারক এবং এর তারতীব শিক্ষা দিলেন যে, শরীরকে খোলা রাখা এটা সুন্নতের খিলাফ। সুবহানাল্লাহ! বেহায়া-বেপর্দা হওয়া নাজায়িয হারাম।
মূলতঃ গান-বাজনা, খেল-তামাশা ও খারাপ কৌতুক, গল্প-গুজব ইত্যাদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিন্দু থেকে বিন্দুমাত্র উনাকে স্পর্শ করতে পারেনি। আর একমাত্র তিনিই এই সব হারাম নাজায়িয, কুফরী, শিরকী ইত্যাদি মিটিয়ে দিয়েছেন। উনার আগমনের ফলে জ্বীন ইনসান ইসলাহপ্রাপ্ত হয়েছে। এজন্য হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
بعثت لكسر المز امير والاصنام
অর্থ: “আমি বাদ্য যন্ত্র ও মূর্তি ধ্বংস করার জন্য প্রেরীত হয়েছি।”
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ করেন,
استماع الملاهى معصية جلوس عليها فسق و تلذذ بها من الكفر
অর্থ: “গান শোনা গুনাহের কাজ, গানের মজলিসে বসা ফাসেকী এবং গানের সাধ গ্রহণ করা কুফরী।”
অর্থাৎ গান-বাজনা শুনা এবং এই সংশ্লিষ্ট ছবি, মূর্তি, গায়িকা, নায়িকা, বাদ্য ও বেহায়াপনা ইত্যাদি সবকিছুই হারাম নাজায়িয ক্ষেত্র বিশেষে কুফরী।
আরো হাদীছ শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
الغناء ينبت النفاق فى القلب كما ينبت الماء الزرع
অর্থ: “পানি যেমন যমীনে ঘাস উৎপন্ন করে, গান-বাজনা তদ্রƒপ অন্তরে মুনাফেকী পয়দা করে।” (বায়হাক্বী ফী শুয়াইবিল ঈমান)
অসংখ্য হাদীছ শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া মহান আল্লাহ পাক তিনিও কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেছেন,
و من الناس من يشترى لهو الحديث ليضل عن سبيل الله بغير علم و يتخذها هزوا اولئك لهم عذاب مهين-
অর্থ: মানুষের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে। যারা لهو الحديث (লাহওয়াল হাদীছ) খরীদ করে থাকে। যেনো বিনা ইলমে মানুষদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার পথ থেকে বিভ্রান্ত করে এবং হাসি ঠাট্টারূপে ব্যবহার করে। তাদের জন্য অপমানজনক শাস্তি রয়েছে।
অনুসরণীয় মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনার এ আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত لهو الحديث দ্বারা গান-বাজনাকে সাব্যস্থ করেছেন।
যেমন বিখ্যাত মুফাসসীর আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘তাফসীরে ইবনে কাসীরের’ ৮ম খন্ড ৩, ৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন।
قال حضرت ابن مسعود رضى الله تعالى عنه فى فوله تعالى ومن الناس من يشترى اهو الحديث ---- قال هو والله الغناء ---- وكذا قال حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه و حضرت جابر رضى الله تعالى عنه و حضرت عكرمة رضى الله تعالى عنه و حضرت سعيد بن جبير رضى الله تعالى عنه و حضرت مجاهد رحمة الله عليه و حضرت مكحول رحمة الله عليه و حضرت عمر بن شعيب رحمة الله عليه و حضرت على بن بذيمة رحمة الله عليه و قال حضرت حسن البصرى رحمة الله عليه نزلت هذه الاية فى الغناء والمزامير-
অর্থ: “বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু لهو الحديث -এর ব্যাখ্যায় বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! لهو الحديث হচ্ছে গান-বাজনা বা সঙ্গিত।”
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সায়ীদ বিন যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মাকহুল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর ইবনে শুয়াইব রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আলী ইবনে বুযাইমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা এর ব্যাখ্যা করেছেন। আর বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উক্ত আয়াত শরীফ গান ও বাদ্য সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।
এ ছাড়াও তাফসীরে কুরতুবী, ত্ববারী, দুররে মানছুর, রুহুল মায়ানী, মাদারেক, কাশশাফ, মায়ালিম, ছায়লবী ও ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আদাবুল মুফরাদ কিতাবে لهو الحديث অর্থ- ‘গান-বাজনা, বাদ্য যন্ত্র’। বলে উল্লেখ করেছেন। অনুরূপ সূরা নজম ও বনী ইসরায়ীলেও গান-বাজনা হারাম হওয়ার ব্যাপারে আয়াত শরীফ রয়েছে। অতএব কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়েছে যে, গান-বাজনা, বাদ্য যন্ত্র ইত্যাদি সম্পূর্ণই হারাম ও আযাব-গযবের কারণ।
কাজেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কুফর, বিদয়াত, বেশরাহ, হারাম, নাজায়িয, গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি ধ্বংস করার জন্যই প্রেরণ করেন। অতএব আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জাহিলিয়াতের কোন প্রকার মুর্খতা, মন্দতার কোন কিছুই স্পর্শ করতে পারেনি। আর আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ সমস্ত খারাবী স্পর্শ করেছে ইত্যাদি চিন্তা ফিকির করাটাও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
واخرج حضرت أبو نعيم رحمة الله عليه، عن حضرت عائشة عليها السلام قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم. سمعت حضرت زيد بن عمروبن نفيل رضى الله تعالى عنه يعيب أكل ما ذبح لغير الله فما ذقت شيئا ذبح على النصب حتى اكرمنى الله برسالته.
অর্থ: “হযরত আবূ নুইয়াম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমি যখন আমর ইবনে নুফাইল সম্পর্কে শুনেছি যে, সে মহান আল্লাহ পাক ছাড়া অন্য কারও নামে যবেহকৃত পশুর গোশত খেতে নিন্দা করতো না। এ কারণেই আমি এ ধরনের পশুর গোশত কখনও খাইনি। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার রিসালত তথা নুবুওওয়াতকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন।”
অন্য হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে,
وأخرج حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه وحضرت ابن عساكر رحمة الله عليه، عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قيل للنبى صلى الله عليه وسلم- هل عبدت وثنا قط؟ قال لا قالوا- فهل شربت خمرا قط؟ قال- لا وما زلت أعرف ان الذى هم عليه كفر وما كنت أدرى ما الكتاب ولا الايمان.
অর্থ: হযরত আবূ নুয়াইম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কখনও কি প্রতিমার ইবাদত করেছেন? তিনি জাওয়াবে বললেন, কখনো না। তারা আবার বললো, আপনি কি কখনো মদ্যপান করেছেন? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাওয়াব দিলেন, না কখনো পান করিনি। এ সমস্ত কাজ যে খারাপ, মন্দ বা গর্হিত তা আমি পূর্ব থেকে জানতাম। অথচ আমি এগুলো জাহিরীভাবে পূর্ববর্তী কিতাবেও পড়িনি এবং এ সম্পর্কে আমাকে কেউ বিশ্বাসও দেয়নি। ” (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৫০ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে,
وأخرج حضرت ابن سعد رحمة الله عليه وحضرت أبو نعيم رحمة الله عليه وحضرت ابن عساكر رحمة الله عليه من حضرت طريق عكرمة رضى الله تعالى عنه، عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال حدثتنى حضرت أم ايمن رضى الله تعالى عنه قالت- كان بوانة صنما يحضره قريش يوم فى السنة، وكان أبو طالب يحضره مع قومه، وكان يكلم رسول الله صلى الله عليه وسلم ان يحضر ذلك العيد مع قومه فيأبى حتى رأيت أبا طالب غضب عليه، ورأيت عماته غضبن عليه يومئذ أشد الغضب وجعلن يقلن- إنا نخاف عليك مما تصنع من اجتناب الهتنا وجعلن يقلن يا محمد صلى الله عليه وسلم- ما تريد ان تحضر لقومك عيدا ولا تكثر لهم جمعا فلم يزالوابه حتى ذهب فغاب عنهم ما شاء الله ثم رجع إلينا مرعوبا فزعا فقلن عماته- ما دهاك؟ قال- إنى أخشى ان يكون بى لمم. فقلن- ما كان الله ليبتليك بالشيطان وفيك من خصال الخير ما فيك فما الذى رأيت؟ قال- إنى كلما دنوت من صنم منها تمثل لى رجل أبيض طويل يصيح بى وراءك يا محمد صلى الله عليه وسلم لا تمسه. قالت- فما عاد الى عيد لهم حتى تنبىء.
অর্থ: হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ নুয়াইম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে তিনি হযরত উম্মু আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বুওয়ানা নামক এক মূর্তির নিকট কুরাইশ কাফিররা বৎসরে একবার একত্রিত হতো, আবূ ত্বলিবও উনার কাওম বা সম্প্রদায়ের সাথে এই মূর্তির কাছে জমায়েত হতেন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও ক্বওমের সাথে সেখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলতেন। আর আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা অস্বীকার করতেন। এই অস্বীকৃতির কারণে একবার আবূ ত্বলিব তিনি উনার উপর গোসসাও করলেন। উনার ফুফীগণ উনারাও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর অসন্তুষ্ট হলেন। উনাদের কেউ কেউ বললেন, এই উপস্যদের প্রতি আপনার অনীহা দেখে আমাদের ভয় হচ্ছে উপাস্য আপনার কোন ক্ষতি করে বসে কিনা। এরপর উনারা পীড়াপীড়ি করতে থাকলে তিনি সেখান থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। কিছুদিন তিনি গায়িব থাকলেন তাদের মধ্য থেকে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেভাবে চান। হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, এরপর তিনি আমাদের নিকট ফিরে এলেন। কিন্তু তখন তিনি খুবই চিন্তিত অবস্থায় ছিলেন। ফুফীগণ জিজ্ঞাসা করলেন বাবা! আপনার কি হয়েছে? তিনি বললেন, আমি আমার ব্যাপারে ফিকির করছি, মূর্তির উপাসনা করা থেকে। ফুফীগণ বললেন, মহান আল্লাহ পাক আপনাকে ওই সমস্ত শয়তানের সাথে জড়িত না হওয়ার আশঙ্কা করি। আর আপনার মধ্যে যে উত্তম ছীফত বা গুনগুলো রয়েছে তার একমাত্র হক্বদার আপনিই। আপনি আর কি দেখেছেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি যখন কোন এক মূর্তির পার্শ্ব দিয়ে চলছিলাম তখন দেখতে পেলাম একজন সাদা পোশাক পরিহিত দীর্ঘ দেহী ব্যক্তি আমার নজরে পড়লো। সে আমাকে মিষ্টি ভাষায় বললো, হে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি এর নিকটবর্তী হবেন না এবং স্পর্শও করবেন না। হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, এরপর থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আর কখনো মূর্তির ধারে কাছেও যেতেন না। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুবুওওয়াত শরীফকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করলেন। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৫১ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে,
وأخرج حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه، عن حضرت عائشة عليها السلام قالت- قال النبى صلى الله عليه وسلم. مر على حضرت جبرئيل عليه السلام و حضرت ميكائيل عليه السلام وأنا بين النائم واليقظان بين الركن وزمزم، فقال أحدهما للاخر هو هو قال- نعم، ونعم المرء هو لولا أنه يمسح الأوثان. قال النبى صلى الله عليه وسلم فما مسحتهن حتى اكرمنى الله بالنبوة.
অর্থ: হযরত আবূ নুয়াইম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন। আমি একদা রুকন ও যমযম শরীফ-এর মধ্যস্থলে আধা জাগ্রত ও আধা নিদ্রিত অবস্থায় ছিলাম। দেখতে পেলাম আমার খিদমতে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ও হযরত মীকাইল আলাইহিস সালাম উনারা আগমন করলেন। এবং একজন অপরজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কি সেই ব্যক্তি যিনি হচ্ছেন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি? ইনি হচ্ছেন সমস্ত মাখলুকাতে সর্বোশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আর তিনি কখনই মূর্তিকে স্পর্শ করবেন না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক তিনি আমার নুবুওওয়াত শরীফ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করার পূর্বে (ও পরে) আমি কখনও মূর্তি বা প্রতিমাকে স্পর্শ করিনি।” (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৫১ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে,
أخرج حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه وحضرت ابن عساكر رحمة الله عليه من طريق حضرت عطاء بن أبى رباح رحمة الله عليه، عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان النبى صلى الله عليه وسلم قام مع بنى عمه عند اساف فرفع رسول الله صلى الله عليه وسلم بصره إلى ظهر الكعبة ساعة ثم انصرف فقال له بنوعمه- مالك يا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم؟ قال- نهيت ان اقوم عند هذا الصنم.
অর্থ: হযরত আবূ নুয়াইম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত আত্বা ইবনে আবী রুবাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে এবং তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণনা করেন। একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার চাচার সঙ্গে আসাফ মূর্তির নিকট দাঁড়িয়েছিলেন। তখন আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দৃষ্টি মুবারক ছিলো পবিত্র কা’বা শরীফ-এর দিকে। তিনি কিছু সময় কা’বা শরীফ-এর দিকে দৃষ্টি মুবারক নিবন্ধ রেখে চলে আসলেন। উনার চাচাতো ভাইগণ জিজ্ঞাসা করলেন যে, আপনার কি হয়েছে, হে আমাদের প্রিয় ভাই! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাওয়াব দিলেন যে, আমাকে মূর্তির নিকটে দাঁড়াতে নিষেধ করা হয়েছে।” (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৫১ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,
حضرت أبو نعيم رحمة الله عليه وحضرت البيهقى رحمة الله عليه، عن حضرت زيد بن حارثة رضى الله تعالى عنه قال كان صنم من نحاس يقال له (اساف) أو (نائلة) يتمسح به المشركون إذا طافوا فطاف رسول الله صلى الله عليه وسلم وطفت معه، فلما مررت مسحت به فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم. لا تمسه قال حضرت زيد رضى الله تعالى عنه- فطفنا به ثم قلت فى نفسى لأمسنه حتى انظر ما يكون، فمسحته، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ألم تنه قال حضرت زيد رضى الله تعالى عنه- فوالذى اكرمه وانزل عليه الكتاب ما استلمت صنما حتى اكرمه الله تعالى بالذى أكرمه وأنزل عليه.
অর্থ: হযরত আবূ নুয়াইম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একটি তা¤্র নির্মিত মূর্তিকে আসাফ বা নায়িলা বলা হতো। মুশরিকরা যখন তাওয়াফ করতো তখন এই মূর্তিটি স্পর্শ করতো। একদা আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ করলেন এবং আমিও উনার সঙ্গে তাওয়াফ করলাম। আমি যখন মূর্তিটির নিকটবর্তী হলাম, তখন সেটি স্পর্শ করলাম, ইহা দেখে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এটি স্পর্শ করো না। হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি মনে মনে বললাম, কি হয় সেটা দেখার জন্য আবার তাওয়াফ করে ওই মূর্তিটিকে স্পর্শ করবো। সে মোতাবিক আবার যখন মূর্তিটিকে স্পর্শ করলাম, তখন আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে নিষেধ করিনি এই মূর্তিটিকে স্পর্শ করতে? হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা চাইলাম এবং আর্জি করলাম, সেই মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যিনি আপনাকে বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা হাদিয়া করেছেন এবং আপনার উপর সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব (কুরআন শরীফ) নাযিল করেছেন। আর আমি ইতিপূর্বে কখনও মূর্তিকে স্পর্শ করিনি। ‘ইনশাআল্লাহ’ ভবিষ্যতেও কখনো করবো না।” (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ, ১৫১ ও ১৫২ পৃষ্ঠা)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনও মূর্তিকে স্পর্শ করেননি এবং কেউ যখন মূর্তির নিকটবর্তী বা সেগুলো স্পর্শ করতো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। সুবহানাল্লাহ!
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে,
أخرج حضرت احمد رحمة الله عليه، عن حضرت عروة بن الزبير رحمة الله عليه قال- حدثتنى جار لخديجة بنت خويلد عليها السلام قال- سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول لخديجد عليها السلام. أى حضرت خديجة عليها السلام والله لا اعبد اللات أبدا والله لا اعبد العزى أبدا.
অর্থ: ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত উরওয়াহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে, তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদিজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার এক প্রতিবেশী উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদিজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে লক্ষ করে বলতে শুনেছি যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি কখনও লাতের ইবাদত করিনি। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি কখনো উযযারও ইবাদত করবো না।” (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৫২ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে,
عن حضرت جابر بن عبد الله رضى الله تعالى عنه قال كان النبى صلى الله عليه وسلم يشهد مع المشركين مشاهدهم، فسمع ملكين خلفه واحدهما يقول لصاحبه اذهب بنا حتى نقوم خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم قال كيف نقوم خلفه وانما عهده باستلام الاصنام قبيل، فلم يعد بعد ذلك يشهد مع المشركين مشاهدهم.
অর্থ: হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো কখনো কোন কারণবশতঃ আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের পূর্বে মুশরিকদের সাথে তাদের মাজলিসে যোগদান করেছিলেন। একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুনতে পেলেন যে, উনার পিছনে দু’জন ফেরেশতা দাঁড়িয়ে একে অপরকে বলছে, আমার সাথে চলুন যেনো আমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকি, উনার খিদমতের জন্য। অপরজন জবাবে বললো, উনার ইচ্ছা যদি হয় মূর্তিকে স্পর্শ করা বা চুম্বন করার কাছাকাছি তখন উনার পিছনে দাঁড়ানো এটা কিরূপ সম্ভবপর হতে পারে। এই ঘটনার পর থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আর কখনো মুশরিকদের যে কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাননি।” (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৫২ পৃষ্ঠা)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন যিনি হচ্ছেন কুল-কায়িনাতের সমস্ত মাখলুকাতের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। তিনি মুশরিকদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার হিকমত হচ্ছে, হক্বকে সর্বত্রই প্রকাশ করা। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মূর্তিকে স্পর্শ করবেন এবং তাকে চুম্বন করবেন এটা কখনও হতে পারে না। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো সমস্ত মূর্তি, প্রতিমা, গান-বাজনা, কুফরী, শিরকী ইত্যাদি ধ্বংস করে মানুষকে মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফাত মুহব্বত ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি রেজামন্দী শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রেরীত হয়েছেন। কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে বিশুদ্ধ আক্বীদা রাখা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয ওয়াজিব।
মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন
انا اعطينا كالكوثر
নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার দান (হাদিয়া) করেছি।” (সূরা কাওছার-১) ‘কাওছার’ শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে ‘হাউযে কাওছার’। আরেকটি অর্থ হচ্ছে خير كثير ‘খইরে কাছীর’। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবচেয়ে ভালো ও শ্রেষ্ঠ বিষয়গুলো হাদিয়া করেছেন। আর যে বিষয়গুলো মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে সেগুলোও সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে। সুবহানাল্লাহ!
মূলত: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন ‘নূরে মুজাসসাম’। উনার জিসিম মুবারক-এর সমস্ত কিছুই ছিলো ‘নূর মুবারক’। সুবহানাল্লাহ! উনার রক্ত মুবারক, ইস্তিঞ্জা মুবারক, ঘাম মুবারক ইত্যাদি সব কিছুই ছিলো নূর। যারা এই সম্মানিত বিষয়গুলো পান করেছেন সকলেই সম্মানিত হয়েছেন এবং জান্নাতী হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুফরী, শিরকী, জাহিলীয়াতের অজ্ঞতা মুর্খতা ইত্যাদি উনাকে বিন্দু থেকে বিন্দু মাত্র স্পর্শ করতে পারেনি। আর কাফির মুশরিকরা উনার সংস্পর্শে ও উনার ছোহবতে এসে পবিত্রতা লাভ করেছেন। উনার উছীলায় মূর্তি, গান-বাজনা, বেহায়াপনা, লজ্জাহীনতা, অশালীনতা, অশ্লীলতা ইত্যাদি সমস্ত প্রকার কুফর, হারাম-নাজায়িয মিটে গেছে এবং জ্বীন ও ইনসান পবিত্রতা লাভ করেছেন। মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নৈকট্য সন্তুষ্টি হাছীল করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
لقد من الله على المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم يتلوا عليهم ايته و يزكيهم و يعلمهم الكتاب و الحكمة و ان كانوا من قبل لفى ضلل مبين-
অর্থ: “মু’মিনগণদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার ইহসান যে, তাদের মধ্য থেকে তাদের জন্য একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার আয়াত শরীফসমূহ তিলাওয়াত করে শুনাবেন। তাদেরকে তাযকিয়া (পরিশুদ্ধ) করবেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন। যদিও তারা পূর্বে হিদায়েত প্রাপ্ত ছিলো না।” (সূরা আলে ইমরান : আয়াত শরীফ ১৬৪)
অনুরূপ সূরা বাকারা ১৫১ নং আয়াত শরীফ-এ এবং সূরা জুমুয়ার ২নং আয়াত শরীফ-এ উপরোক্ত আয়াত শরীফ উল্লেখ রয়েছে।
অর্থাৎ, অত্র আয়াত শরীফ-এ রসূল বলতে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উদ্দেশ্য। মূলত, তিনি যমীনে আগমন করে একদিকে মুসলমানদেরকে আয়াত শরীফ সমূহ তিলাওয়াত করে শুনিয়েছেন তথা ইলম শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাদেরকে তাযকীয়া বা পরিশুদ্ধ করেছেন তথা সমস্ত প্রকার কুফরী, শিরিক, বিদয়াত, বেশরা, বেয়াপনা, জাহিলিয়াতের যত খরাবী, মন্দতা, অশ্লীলতা ইত্যাদি থেকে মুক্ত করে তাদেরকে পুত:পবিত্র করবেন। তাদেরকে পরিশুদ্ধ ও ইছলাহ করবেন জাহির এবং বাতিল উভয় দিক দিয়ে। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন, গোটা সৃষ্টির মধ্যে পুতঃপবিত্রতায় সবচেয়ে উচ্চে। আর মাখলুকাতের মধ্যে যে যত বেশি উনার সাথে তায়াল্লুক সম্পর্ক মুহব্বত বেশি রেখেছেন ওই মাখলুকও তত বেমেছাল পবিত্রতা লাভ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

0 Comments: