হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৫১ -২৭৫) (ঘ)

হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৫১ -২৭৫) (ঘ)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার প্রথম সম্মানিতা দুধমাতা সাইয়্যিদাতুনা
হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে আগমনের পর উনার যিনি সম্মানিতা মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার দুধ মুবারক পান করেন ২/৩ দিন। এরপর মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতৃব্য আবূ লাহাব সে সম্মানিত ভাতিজার বিলাদত শরীফ-এ খুশি হয়ে স্বীয় বাঁদী সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতের জন্য আযাদ (মুক্ত করে দেয়। সেই হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম উনার দুধ মুবারক পান করেন আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কয়েক দিন। অতঃপর বনী সা’দ গোত্রের সম্মানিতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমা সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার দুধ মুবারক পান করেন দীর্ঘ কয়েক বৎসর। সুবহানাল্লাহ!
বিশ্বখ্যাত ও সুপ্রসিদ্ধ কিতাব ‘মাদারিজুন নুবুওওয়াত’-এ উল্লেখ রয়েছে, ‘আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বপ্রথম দুগ্ধ মুবারক পান করান আবূ লাহাবের বাঁদী হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম। যে রাত্রি মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে আগমন করলেন সেই রাত্রি মুবারকে যখন হযরত ছ্ওুয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি স্বীয় মনিব আবূ লাহাবকে এই শুভ সংবাদ দিয়েছিলেন যে, আপনার ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার একজন সন্তান যমীনে তাশরীফ নিয়েছেন। এই মুবারক সংবাদ শুনে আবূ লাহাব খুশি হয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতের লক্ষ্যে তার বাঁদী হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ (মুক্ত) করে দেয়।
আবূ লাহাব বললো, আপনি যান আমার সম্মানিত ভাতিজাকে দুধ পান করান। আর আপনি এখন থেকে আযাদ বা স্বাধীন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর শুভ সংবাদ শুনে খুশি প্রকাশ করার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি আবূ লাহাবের জাহান্নামের শাস্তি লাঘব করে দেন। প্রতি সোমবার শরীফ তাকে আজাব থেকে নিষ্কৃতি দেয়া হয়। যা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর দিনে আনন্দ বা খুশি প্রকাশ করা ও সম্পদ ব্যয় করা কায়িনাতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কাজ। আবূ লাহাব সে কাফির ছিল। কুরআন শরীফ-এ তাকে তিরস্কার করা হয়েছে। তার সম্পর্কে সূরা লাহাব নাযিল হয়েছে। তারপরও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে পুরস্কৃত করলেন।
‘ছহীহ বুখারী শরীফ’-এর দ্বিতীয় খ-ের ৭৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
قال عروة وثويبة مولاة لابى لهب كان ابو لهب اعتقها فارضعت النبى صلى الله عليه وسلم فلما مات ابو لهب اريه بعض اهله بشر حيبة قال له ماذا لقيت قال ابو لهب لم الق بعد كم غير انى سقيت فى هذه بعتاقتى ثويبة.
অর্থ: হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন আবূ লাহাবের বাঁদী এবং আবূ লাহাব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এ খুশি হয়ে উনার খিদমত করার জন্য ওই বাঁদীকে আযাদ করে দিয়েছিল। এরপর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিনি দুধ পান করান। অতঃপর আবূ লাহাব যখন মারা গেলো (কিছুদিন পর) তার পরিবারের একজন অর্থাৎ তার ভাই হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, আবূ লাহাব সে ভীষণ কষ্টের মধ্যে নিপতীত আছে। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার সাথে কিরূপ ব্যবহার করা হয়েছে।’ আবূ লাহাব উত্তরে বললো, ‘যখন থেকে আপনাদের কাছ থেকে দূরে রয়েছি তখন থেকেই ভীষণ কষ্টে আছি। তবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তথা খুশিতে আত্মহারা হয়ে বাঁদী হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম উনাকে দু’আঙুলের ইশারায় আযাদ করার কারণে সেই দু’আঙ্গুল হতে সুমিষ্ট ঠা-া ও সুশীতল পানি পান করতে পারছি।’ (উমদাতুল ক্বারী ২০ খ-, ৯৩ পৃষ্ঠা)
আল্লামা হযরত ইবনু কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থের ১ম খ-ের ৩৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
قال للعباس انه ليخفف على فى مثل يوم الاثنين قالوا لانه لما بشرته ثويبة بميلاد ابن اخيه محمد بن عبد الله اعتقها من ساعته فجوزى بذلك لذلك.
অর্থ: আবূ লাহাব হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললো, (হে ভাই!) অবশ্যই এ কঠিন আযাব সোমবার শরীফ-এর দিন লাঘব করা হয়, আল্লামা হযরত সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যরা বলেন, হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি আবূ লাহাবকে তার ভাতিজা হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার “নূরী আওলাদ” নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর সুসংবাদ দেন তৎক্ষণাৎ সে খুশিতে উনাকে মুক্ত করে দেয়। এই কারণেই আযাব লাঘব হয়ে থাকে। (‘মাছাবাতা বিস সুন্নাহ’ ১ম/৮৩ পৃষ্ঠা।)
এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ আছে যা বিশ্বখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা হযরত ইয়াকুব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘তারিখী ইয়াকুবী’ গ্রন্থের ১ম খ-, ৩৬২ পৃষ্ঠায় লিখেন-
قال النبى صلى الله عليه وسلم رأيت ابا لهب فى النار يصيح العطش العطش فيسقى من الماء فى نقر ابهامه فقلت بم هذا فقال بعتقى ثويبة لانها ارضعتك
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি আবু লাহাবকে দেখেছি জাহান্নামের আগুনে নিমজ্জিত অবস্থায় চিৎকার করে বলছে, পানি দাও! পানি দাও!! অতঃপর তার বৃদ্ধাঙুলীর গিরা দিয়ে পানি পান করানো হচ্ছে। আমি বললাম, কি কারণে এ পানি পাচ্ছো? আবু লাহাব বললো, আপনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম উনাকে মুক্ত করার কারণে এই ফায়দা পাচ্ছি। কেননা তিনি আপনাকে দুধ মুবারক পান করিয়েছেন।”
এ প্রসঙ্গে ‘মাওলাহিবুল লাদুননিয়া’ কিতাবের বিখ্যাত শরাহ ‘শরহুয যারকানী’ কিতাবের ১ম খ-ের ২৬১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قال ابن الجزرى فاذا كان هذا الكافر الذى نزل القران بذمه جوزى فى النار بفرحه ليلة مولد النبى صلى الله عليه وسلم به فما حال المسلم الموحد من امته عليه السلام يسر بمولده ويبذل ما تصل اليه قدرته فى محبته صلى الله عليه وسلم لعمرى انما يكون جزاؤه من الله الكريم ان يدخل بفضله العميم جنات النعيم.
অর্থ: হযরত ইবনুল জাওজী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “আবু লাহাবের মতো কাট্টা কাফির যার নিন্দায় কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ ও সূরা পর্যন্ত নাযিল হয়েছে, তাকে যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর রাত্রিতে আনন্দিত হয়ে খুশি প্রকাশ করার কারণে জাহান্নামেও পুরস্কার দেয়া হয়ে থাকে তবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের কোনো মুসলমান যদি ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তার সাধ্যানুযায়ী টাকা-পয়সা ইত্যাদি খরচ করে তাহলে তাদের অবস্থা কিরূপ হবে? নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা উনার ফযল ও করমে অবশ্যই অবশ্যই তাকে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।”  সুবহানাল্লাহ!  (মাছাহবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খ-, ৮৩ পৃষ্ঠা)
স্মরণীয় যে, মুজাদ্দিদে আ’যম, গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত, মুহইস সুন্নাহ, মাহিউল বিদয়াত, রঈসুল মুহাদ্দিসীন ওয়াল মুফাসসিরীন ওয়াল ফুকাহা, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, আবূ লাহাব সে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে নবী-রসূল, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কারণে সে খুশি প্রকাশ করেনি, সে খুশি প্রকাশ করেছে স্বীয় ভাতিজা হিসেবে উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে। আর ভাতিজা হিসেবে খুশি প্রকাশ করার ফলে কাট্টা কাফির হওয়া সত্বেও সে বিলাদত শরীফ-এর দিন ‘ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম’ পবিত্র সোমবার শরীফ দিনটিতে তার দু অঙ্গুলের ভিতর থেকে এক অমীয় মিষ্টি পানি প্রবাহিত করানো হয়। যার কারণে এক সপ্তাহের আযাব কিছু মনে হয়না। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, আবূ লাহাব কাট্টা কাফির হয়েও সে বিলাদত শরীফ-এর দিন খুশি প্রকাশ করার কারণে যদি এতোবড় নিয়ামত লাভ করতে পারে তাহলে যারা উম্মতে হাবীবী যারা মুসলমান তারা যদি ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করে, ওই দিনে খুশি প্রকাশ করে এ উপলক্ষে হাদিয়া ও দান-খয়রাত করে তাহলে সে কত বেশি ফযীলত, নিয়ামত, বরকত ও রহমত লাভ করবে সেটা চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়।
এজন্য কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
فكر ساعة خير من عبادة ستون سنة
“কিছুক্ষণ সময় ফিকির করা ষাট বৎসর নফল ইবাদত থেকে উত্তম।”
কাজেই উম্মত ও বান্দার জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা, সারা কায়িনাতব্যাপী ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেয়া।
‘মাদারেজুন নুবুওওয়াত’ কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি ছাহাবীগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দুধ মুবারক পান করানোর কারণে তিনি উনাকে যথাযথভাবে শ্রদ্ধা ও সম্মান করতেন। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুধ মাতা হযরত সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম উনার জন্য মদীনা শরীফ থেকে খাদ্য, কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য সামগ্রী মক্কা শরীফ-এ হাদিয়া পাঠাতেন। হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফ হয়েছিলো খায়বার যুদ্ধের বৎসর অর্থাৎ সপ্তম হিজরীতে। মক্কা শরীফ বিজয়ের দিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় প্রথম দুধ মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম এবং দুধভাই হযরত মাসরূহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের খোঁজ করছিলেন। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলা হলো, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন। এমনকি উনার নিকট আত্মীয়-স্বজন কেউ যমীনে অবশিষ্ট নেই। (রওজাতুল আহবার, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
আরো উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেও দুধ পান করিয়েছেন। এই সম্পর্কের দিক দিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার দুগ্ধ সম্পর্কীয় ভাই।
‘সীরত ইবনে হিশাম’-এ ১ম খ- ১৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
و ارضعته امه سبعة ايام ثم ثويبة اياما- و هى ارضعت قبله حضرت حمزة بن عبد المطلب رضى الله تعالى عنه و بهذا ثبت الاخوة الرضاعية بينهما- .... و هو صلى الله عليه و سلم كان يكرمها بحكم الرضاعة و يبعث من المدينة صلة و كسوة اليها-
অর্থ: “আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার আম্মা সাইয়্যিদাতুনা হযরত মা আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি ৭ দিন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি কয়েকদিন দুগ্ধ পান করিয়েছেন। এর পূর্বে হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত সাইয়্যিদুনা আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পুত্র হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দুধ পান করিয়েছেন।” (সীরতে ইবনে হিশাম, ১ম খ- ১৫০ পৃষ্ঠা)
এই জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার সম্মানিত চাচা হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনারা উভয়েই পরস্পর দুধ ভাই ছিলেন। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার প্রথম দুধ মাতা হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম উনাকে খুবই সম্মান করতেন। মদীনা শরীফ থেকে প্রায়ই পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য ইত্যাদি হাদিয়া পাঠাতেন।” সুবহানাল্লাহ! (নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে, ‘হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দুধ মুবারক পান করিয়েছেন। উনার পূর্বে হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দুধ পান করিয়েছেন। এজন্য হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুধ ভাই। আরো বর্ণিত রয়েছে, হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত আবূ সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেও দুধ পান করিয়েছেন। (যারকানী ১ম খ- ১৩৭ পৃষ্ঠা, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
ছহীহ বুখারী শরীফ-এ উম্মুল মু’মিনীন, হযরত উম্মে হাবীবা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আরয করলাম যে, আমি শুনেছি, ‘হে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কী হযরত আবূ সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কন্যা হযরত দুররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে নিকাহ করার ইচ্ছা করেছেন?’ এই কথা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আশ্চর্য হয়ে বললেন, “হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম উনার কন্যার সাথে যে আমার তত্ত্বাবধানে আছে। যদি হযরত দুররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার রাবীবাহ (অর্থাৎ আপন আহলিয়ার ওই কন্যা সন্তানকে বলা হয় যে যে আহলিয়ার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত) নাও হতো তবুও তিনি আমার জন্য বৈধ হতেন না। কেননা তিনি আমার দুধ সম্পর্কীয় ভ্রাতুষ্পুত্রী। আমাকে ও তার পিতা হযরত আবূ সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম দুধ পান করিয়েছেন।” (ছহীহ বুখারী, কিতাবুন নিকাহ ২য় খ- ২৭৩ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আর্জি করলেন, যদি আপনি হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কন্যাকে নিকাহ করতেন, তা হলে কেমন হতো? এর জবাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করলেন, হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কন্যা আমার দুধ সম্পর্কীয় ভ্রাতুষ্পুত্রী।
স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রথম দুধমাতা ছিলেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি। কাজেই, উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত বেমেছাল। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তিনি ছিলেন সম্মানিত দুধ মাতা। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক স্পর্শ পেয়ে মাটি যদি আরশে আযীম, আসমান যমীন তথা সমস্ত কিছু থেকে ফযীলত পূর্ণ হয়ে থাকে। তাহলে উনাকে যিনি দুধ মুবারক পান করালেন, উনার সরাসরি খিদমত করলেন, তাহলে উনার কত বেমেছাল ফযীলত হবে, মর্যাদা হবে সেটা চিন্তা ফিকিরের বিষয়।
অতএব, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছুওয়াইবা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন পূতপবিত্র, বেমেছাল সম্মানীত ও মর্যাদার অধিকারী।

পিতামহ সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য দুধ মাতা তালাশ করেন
আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর পর পিতামহ সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম স্বীয় পৌত্রকে কোল মুবারক-এ নিয়ে পবিত্র কা’বা শরীফ-এ প্রবেশ করেন এবং তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করেন।
বর্ণিত রয়েছে, ‘সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি এই সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার হিফাযতে ন্যস্ত করে বললেন, “মহান বারী তায়ালা উনারই সমস্ত প্রশংসা ও ছানা ছিফত। যিনি আমাকে এই সম্মানিত সন্তান যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনাকে হাদিয়া করেছেন। এই সম্মানিত সন্তান তথা আল্লাহ পাক উনার হাবীব দোলনায় অবস্থানকালীন সময়ও তিনি সকলের সাইয়্যিদ। উনাকে এই পবিত্র ঘর বাইতুল্লাহ শরীফ-এর আশ্রয়ে ন্যস্ত করছি। সকল হিংসুক ও শত্রুর আক্রোশ থেকে উনার নিরাপত্তা কামনা করছি।” (রওযুল উনফ)
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় পৌত্র উনাকে কোলে নিয়ে পবিত্র কা’বা শরীফ থেকে বের হন এবং উনাকে মা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট অর্পন করেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য একজন দুধ মাতার সন্ধান করতে থাকেন।
উল্লেখ্য যে, তৎকালীন আরবের অভিজাত পরিবারে দুধ মায়ের কাছে শিশু সন্তানকে লালন-পালনের দায়িত্ব অর্পণের যে নিয়ম চালু ছিলো তার পিছনে ঐতিহাসিকগণ একাধিক কারণ বর্ণনা করেছেন। প্রথমত এতে আহলিয়া তথা স্ত্রীগণ তাদের স্বামীদের জন্য অধিকতর নিবেদিত হতে পারতো। দ্বিতীয়ত এতে শিশুরা শহরের বাইরে বেদুঈনদের সাথে থেকে বিশুদ্ধ ভাষা শিখতে পারতো এবং সুঠাম দেহ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবার সুযোগ পেতো।
বর্ণিত রয়েছে, ‘খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সবল ও সুস্থ দেহ লাভের জন্য শহরের বাইরে অবস্থানের উপদেশ দিতেন।’
আর আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অত্যন্ত শুদ্ধভাষী বলে প্রশংসা করতেন তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলতেন, একে তো আমি সম্মানিত কুরাইশ বংশের। পাশাপাশি আমি সম্মানিত এজন্য যে, বনু সা’দ গোত্রের কন্যা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালিমা সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার দুধ মুবারক খেয়ে লালিত-পালিত হয়েছি। কাজেই আমার শুদ্ধভাষী হতে বাধা কোথায়। তবে এটি একটা মেছাল মাত্র। মূলকথা হলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত নিয়ামত হাদিয়া করেছেন তথা সমস্ত ইলম দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, উমাইয়া শাসক আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান স্বীয় পুত্র সুলাইমানের শুদ্ধভাষী হওয়ার জন্য গর্ববোধ করতেন। আর ওয়ালীদের অশুদ্ধভাষী হওয়ার জন্য আফসোস করতেন এবং বলতেন, ওয়ালীদকে বেশি ¯œহ করে মায়ের কাছে রেখে তার ক্ষতি করেছি। অথচ তার অন্যান্য ভাই সুলায়মান প্রমুখ গ্রামে বাস করে শুদ্ধ আরবী ও উত্তম চালচলন রপ্ত করেছিলো। (শরহে মাওয়াহিব, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বিতীয় সম্মানিতা দুধমাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস্ সা’দিয়া আলাইহাস সালাম
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম যখন তিনি শিশু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য একজন দুধমাতা খুঁজছিলেন। কয়েকদিনের মধ্যে দেখা গেলো তায়েফের একদল মহিলা মক্কা শরীফ-এ প্রবেশ করে। তাদের উদ্দেশ্য মক্কা শরীফ থেকে শিশু ছেলে-মেয়েদের নিয়ে লালন-পালন করা এবং এর বিনিময় কিছু অর্থ কামাই করা।
দেখা গেলো সেই মহিলারা শহরে প্রবেশ করেই একেকজন একেক শিশুকে নিয়ে বাড়ির দিকে পথ ধরলেন। তবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস্ সাদিয়া আলাইহাস সালাম এবং উনার স্বামী উনারাও একজন সন্তান খোঁজ করছিলেন। উনাদের উদ্দেশ্য ছিলো মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আর্জি ছিলো যে, এমন একজন সন্তান মহান আল্লাহ পাক তিনি যেনো উনাদেরকে দান করেন যাঁর উসীলায় উনারা রহমতপ্রাপ্ত হন। ইতমিনানপ্রাপ্ত হন এবং আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত হন। আর এদিকে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনিও একজন ত্বহিরা বা পবিত্রা, সৎ ও ধৈর্যশীলা দুধমাতা খোঁজ করছিলেন। হযরত হালীমাতুস্ সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি যখন হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক এবং পবিত্র কা’বা শরীফ-এর যিনি দেখা-শুনার দায়িত্বে রয়েছেন উনার কথা শুনলেন।
যিনি উনার পৌত্র হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জন্য একজন দুধমাতা খোঁজ করছেন। এই মুবারক সংবাদ শুনে হযরত হালিমাতুস্ সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি উনার স্বামীকে নিয়ে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার বাড়িতে তাশরীফ নিলেন। হযরত হালিমাতুস্ সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি এসে সন্তান লালন পালনের কথা বললেন, হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সাল্লাম তিনি উনাদের কথা শুনে উনার পছন্দ হলো এবং তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করলেন। কারণ হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি এমনই একজন দুধমাতা খুঁজছিলেন। যিনি হবেন সম্ভ্রান্তশালী, পূত-পবিত্র, মহান আল্লাহ পাক-এ বিশ্বাসী, সৎ ধৈর্যশীল ও সর্বাধিক মিষ্টিভাষী। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে,
حضرت حليمة سعدية عليها السلام
এখানে حليمة শব্দ মুবারক-এর শাব্দিক অর্থ- সর্বাধিক নেককার, সুশীলা সম্মানিতা ও ধৈর্যশীলা আর سعدية শব্দ মুবারকের অর্থ হচ্ছে নেক বখত নেককার।
আর হযরত হালীমাতুস্ সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার পরিচয় হচ্ছে- তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা দুধমাতা।
কাজেই সাইয়্যিদুনা হযরত হালীমাতুস্ সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার নাম মুবারক প্রমাণ করে তিনি ধৈর্য সহিষ্ণুতা ও সর্বাধিক সম্মানিতা। আর তিনি যেহেতু বনী সা’দ ইবনে বকর গোত্রের ছিলেন, তাই উনাকে বলা হয় সাদীয়া। বিশেষ করে বনী সা’দ গোত্রের ব্যক্তিগণ ছিলেন মিষ্টভাষী। ফাসাহাত ও বালাগাতে সবচেয়ে বেশি পারদর্শী। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “আমি আরবী তথা সারা কায়িনাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফসীহ (বিশুদ্ধভাষী) কারণ আমি কুরাইশ গোত্রে আগমন করেছি এবং আমি লালিত-পালিত হয়েছি বনী সা’দ গোত্রে।” (মাদারিজুন নুবুওওয়াত)
বিশ্ব বিখ্যাত সীরাত গ্রন্থের কিতাব ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’-এর ২য় খ-ের ২৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুধমাতা হিসেবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমা বিনতে আবী যুওয়াইব আলাইহাস সালাম উনাকে নির্ধারণ করা হয়। সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার পিতার নাম মুবারক আবূ যুওয়াইব। উনার পুরো নাম মুবারক আব্দুল্লাহ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার বংশ তালিকা হচ্ছে, হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া বিনতে আব্দুল্লাহ ইবনে শাজনাহ ইবনে জাবির ইবনে রিযাম ইবনে নাছিরা ইবনে সা’দ ইবনে বকর ইবনে হাওয়াযিন ইবনে মানছুর ইবনে ইকরামা ইবনে হাফসা ইবনে কায়িস আইলান ইবনে হযরত মুদ্বার আলাইহিস সালাম।
হযরত ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দুধ পিতা তথা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার ছাহিব (স্বামী) ছিলেন হযরত হারিছ ইবনে আব্দুল উজ্জা ইবনে রিফায়া ইবনে মিলান ইবনে নাসিরা ইবনে সা’দ ইবনে বকর ইবনে হাওয়াযিন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের দু’বছর পর তিনি মক্কা শরীফ-এ আগমন করেন এবং ইসলাম কবুল করেন। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুধ ভাই ও বোনগণের সংখ্যা ছিলেন ৩ জন। যথা-
এক. সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা।
দুই. আনীসা বিনতে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
তিন. হুযাফাহ বিনতে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা।
হযরত হুযাফাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার অপর নাম শায়মা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। ঐতিহাসিকগণ বলেন, হযরত শায়মা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি উনার সম্মানিতা মায়ের সঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লালন-পালন তথা খিদমতের আঞ্জাম দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি হাওয়াজিন গোত্রের সম্মানিতা মহিলা। তৎকালীন যুগের প্রথা অনুযায়ী বেদুঈন গোত্রের মহিলারা বছরে দু’বার শহরে আগমন করতেন। শহরের অভিজাত মহিলারা স্বীয় দুগ্ধপোষ্য শিশুদের উনাদের দায়িত্বে অর্পণ করতো। এই নিয়ম অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর কয়েকদিন পর হাওয়াজিন গোত্রের কতিপয় মহিলাগণ ছেলের সন্ধানে মক্কা শরীফ-এ আগমন করেন। যাদের মধ্যে সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন অন্যতম, সর্বশ্রেষ্ঠা ও সবচেয়ে সম্মানিতা। উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টি লগ্ন থেকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য দুধ মাতা হিসেবে মনোনীত করে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতের জন্য হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহিস সালাম উনাকে প্রেরণ করেন এবং তিনি যথাযথভাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে নিজেকে বিলায়ে দেন। ইনশাআল্লাহ! নি¤œ আমরা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমা সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার দুগ্ধ মুবারক পান করানো এবং তদসম্পর্কীয় আলোচনা করবো।

0 Comments: