হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৫০-৯৩)

 হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৫০-৯৩)


খাইরু খালক্বিল্লাহ, খাইরুল আলামীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নসবনামা মুবারক।
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات.
অর্থ: “আমি সব সময় পবিত্র পুরুষগণের পৃষ্ঠমুবারক হতে পবিত্রা নারীগণের রেহেম শরীফ-এ স্থানান্তরিত হয়ে আসতেছিলেন।”
(তাহক্বীকুল মাকাম আল কিফাইয়াতিল আওয়াম)
আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নসব মুবারক কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ সর্বোত্তম নসব মুবারক। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা ও পিতামহ আলাইহিমুস সালাম উনার এবং মাতা ও মাতামহ আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকলেই ছিলেন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম বা খাঁটি ঈমানদার। উনাদের মধ্যে কেউই ফাসিক, কাফির ছিলেন না। উনারা সকলেই পুতঃপবিত্র ছিলেন।
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আল্লাহ পাক আমাকে সব সময় এমন পবিত্র পৃষ্ঠমুবারক হতে পবিত্র রেহেম শরীফ-এ স্থানান্তরিত করতেছিলেন যা পূর্ব হতেই পবিত্র, সুসজ্জিত এবং মনোনীত ছিলো। (সুবহানাল্লাহ)। যখন দু’টি শাখা বের হতো তখন আমি এই দু’টি শাখার সর্বোত্তম শাখায় থাকতাম।” (বারাহীনুল ক্বাতইয়্যাহ, মাওয়াহিবুল লাদুননিয়া- ১/১৩, সীরাতুল হালবিয়া- ১/৩১)
সম্মানিত পিতার দিক থেকে-
১। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
২। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ পাক উনার নিকট অতি প্রিয় নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান।” আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা সেই প্রিয় নামেরই অধিকারী ছিলেন। (সীরাতুল হালাবিয়া ১/৯)
৩। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম। তিনি উনার সম্প্রদায়ের সাইয়্যিদ বা সরদার ছিলেন। (রওদুল উনফ ১/২৩) তিনি সেই ব্যক্তি যিনি জাহিলী যুগেই নিজের জন্য শরাবকে হারাম করেছেন। তিনি ছিলেন মুজতাজাবুত দাওয়াত। কুরাইশদের সহনশীল ধৈর্য্যশীল এবং সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তিগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। মানুষ উনার দানশীলতার জন্য উনাকে “ফাইয়াজ” লক্ববে অবহিত করতেন।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৯)
৪। সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম।
৫। সাইয়্যিদুনা হযরত আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম। উনার নাম মুগীরা। তিনি অতি সুন্দর সীরত-ছূরত মুবারকের অধিকারী ছিলেন। সেই সৌন্দর্য্যরে কারণে উনাকে ‘উপত্যকার চাঁদ’ লক্ববে সম্বোধন করা হতো।”
(সীরাতুল হালাবিয়া- ১/১৩ রওদুল উনফ ১/২৫, তারিখতু তাবারী ১/২৩৭)
মূলতঃ সেই পবিত্র নসব নামা মুবারকের সকলেরই আকৃতি-প্রকৃতি, সীরত-ছূরত ছিলো অতি উজ্জ্বল এবং সৌন্দর্যময়। আর তার কারণ ছিলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ মুবারক বা নূর মুবারকের অবস্থান।
৬। সাইয়্যিদুনা হযরত কুসাই আলাইহিস সালাম।
৭। সাইয়্যিদুনা হযরত কিলাব আলাইহিস সালাম।
৮। সাইয়্যিদুনা হযরত মুররা আলাইহিস সালাম।
৯। সাইয়্যিদুনা হযরত কা’ব আলাইহিস সালাম।
১০। সাইয়্যিদুনা হযরত লুয়াই আলাইহিস সালাম।
১১। সাইয়্যিদুনা হযরত গালিব আলাইহিস সালাম।
১২। সাইয়্যিদুনা হযরত ফিহির আলাইহিস সালাম।
১৩। সাইয়্যিদুনা হযরত মালিক আলাইহিস সালাম।
১৪। সাইয়্যিদুনা হযরত নযর আলাইহিস সালাম।
১৫। সাইয়্যিদুনা হযরত কিনানাহ আলাইহিস সালাম।
১৬। সাইয়্যিদুনা হযরত খুযাইমাহ আলাইহিস সালাম।
১৭। সাইয়্যিদুনা হযরত মাদরিকাহ আলাইহিস সালাম। উনার নাম মুবারক আমর। এই কারণে উনাকে মাদরিকাহ বলা হয় যে, তিনি সেই যুগের সমস্ত সম্মান-ইজ্জত ও গৌরবের অধিকারী ছিলেন। উনার মধ্যে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারকের এমন উজ্জলভাবে প্রকাশ ঘটেছিল যা সবাই দেখতে পেতেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৭ রওদুল উনফ ১/৩০)
১৮। সাইয়্যিদুনা হযরত ইলিয়াস আলাইহিস সালাম। তিনি ছিলেন উনার সম্প্রদায়ের সাইয়্যিদ।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা ইলিয়াস আলাইহিস সালাম উনাকে গালি দিওনা। কারণ, তিনি ছিলেন প্রকৃত মু’মিন। তিনিই উনার পিঠ মুবারকের মধ্যে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তালবিয়া (যা হজ্জের মধ্যে পড়া হয়) পাঠ শুনতে পেতেন।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৭, রওদুল উনফ- ১/৩০)
১৯। সাইয়্যিদুনা হযরত মুদ্বার আলাইহিস সালাম। উনার কণ্ঠস্বর মুবারক ছিলো অত্যন্ত সুন্দর।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা মুদ্বার আলাইহিস সালাম উনাকে গালি দিওনা, মন্দ বলিও না। কারণ তিনি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৭ রওদুল উনফ ১/৩০)
২০। সাইয়্যিদুনা হযরত নিযার আলাইহিস সালাম। তিনি স্বীয় চোখের সামনে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক দেখতে পেতেন।” সর্ব প্রথম আরবী ভাষায় বিশুদ্ধ কিতাব তিনিই রচনা করেন। (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৮)
২১। সাইয়্যিদুনা হযরত মা’য়াদ আলাইহিস সালাম। তিনি যুদ্ধ প্রিয় ছিলেন। এমন কোন যুদ্ধ নেই যে, তিনি বিজয়ী হননি। (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৮)
২২। সাইয়্যিদুনা হযরত আদনান আলাইহিস সালাম।
২৩। সাইয়্যিদুনা হযরত আদদ আলাইহিস সালাম।
২৪। সাইয়্যিদুনা হযরত মা’কুম আলাইহিস সালাম।
২৫। সাইয়্যিদুনা হযরত নাহুর আলাইহিস সালাম।
২৬। সাইয়্যিদুনা হযরত তারিহ আলাইহিস সালাম।
২৭। সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়ারিব আলাইহিস সালাম।
২৮। সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়াশযুব আলাইহিস সালাম।
২৯। সাইয়্যিদুনা হযরত নাবিত আলাইহিস সালাম।
৩০। সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম।
তিনি আল্লাহ পাক উনার জলিলুল ক্বদর রসূল। সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
انا ابن الذ بحين
অর্থ: “আমি দুই যবেহের সন্তান”। হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম এবং উনার সম্মানিত পিতা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাদেরকে বুঝিয়েছেন। উনারা দু’জন যবেহ হননি এবং হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে আগুন পোড়াতে পারেনি। কারণ উনাদের পিঠ মুবারকে অবস্থান নিয়েছিলেন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক।
৩১। সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। তিনি মুসলিম মিল্লাতের পিতা। আল্লাহ পাক উনার জলিলুল ক্বদর রসূল।
৩২। সাইয়্যিদুনা হযরত তারিখ আলাইহিস সালাম। কেউ কেউ বলে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতার নাম ছিল আযর। (নাউযুবিল্লাহ) এটা কুফরী আক্বীদা। কারণ আযর কাফির ছিলো।
মূলত তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ও অশুদ্ধ এবং কাট্টা কুফরী। কারণ সীরাতুল হালাবিয়াসহ অন্যান্য সীরাত গ্রন্থে উল্লেখ আছে-
اجمع اهل الكتاب على ان ازر كان عمه والعرب سمى العم ابا كما تسمى الخالة اما فقد حكى الله عن يعقوب عليه السلام انه قال ابائى ابراهيم واسماعيل ومعلوم ان اسماعيل انما هوعمه.
অর্থাৎ আহলে কিতাবগণের ইজমা হয়েছে যে, আযর ছিল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা। আরবরা সাধারণত চাচাকে বাবা বলে সম্বোধন করতেন। যেমন খালাকে মা বলে সম্বোধন করতেন। আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম উনার ঘটনা উল্লেখ করেছেন সেখানে তিনি বলেছেন, “আমার পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং ইসমাঈল আলাইহিস সালাম।” আর ইহা সর্বজন বিদিত যে, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন উনার চাচা। (সীরাতুল হালাবিয়া-১/৪৫)
৩৩। সাইয়্যিদুনা হযরত নাহুর আলাইহিস সালাম।
৩৪। সাইয়্যিদুনা হযরত আরগুবী আলাইহিস সালাম।
৩৫। সাইয়্যিদুনা হযরত সারিহ আলাইহিস সালাম।
৩৬। সাইয়্যিদুনা হযরত ফালিহ আলাইহিস সালাম।
৩৭। সাইয়্যিদুনা হযরত আবির আলাইহিস সালাম।
৩৮। সাইয়্যিদুনা হযরত শালিখ আলাইহিস সালাম।
৩৯। সাইয়্যিদুনা হযরত আরফাখশাজ আলাইহিস সালাম।
৪০। সাইয়্যিদুনা হযরত সাম আলাইহিস সালাম।
৪১। সাইয়্যিদুনা হযরত নূহ আলাইহিস সালাম।
তিনি আল্লাহ পাক-এর জলিলুর ক্বদর রসূল।
 ৪২। সাইয়্যিদুনা হযরত লামক আলাইহিস সালাম।
৪৩। সাইয়্যিদুনা হযরত মাতুশালাখ আলাইহিস সালাম।
৪৪। সাইয়্যিদুনা হযরত আখনুখ আলাইহিস সালাম। যিনি হযরত ইদরীস আলাইহিস সালাম নামে মাশহুর। (তারিখুত তাবারী ১/৫১৮)
৪৫। সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়ারদ আলাইহিস সালাম।
৪৬। সাইয়্যিদুনা হযরত মাহলাইল আলাইহিস সালাম।
৪৭। সাইয়্যিদুনা হযরত কাইনান আলাইহিস সালাম।
৪৮। সাইয়্যিদুনা হযরত আনুশ আলাইহিস সালাম।
৪৯। সাইয়্যিদুনা হযরত শীছ আলাইহিস সালাম। তিনিও আল্লাহ পাক উনার রসূল ছিলেন। উনার উপর ৫০ খানা সহীফা নাযিল হয়েছিল।
৫০। সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম আলাইহিস সালাম। তিনি সর্বপ্রথম নবী ও রসূল।
(দালায়িলুন নবুওওয়াত লিল বাইহাক্বী ১/১৭৯- সীরাতু ইবনে হিশাম- ১/১-২, সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৯, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, তারিখুত তাবারী ১/৪৯৭ রাওদুল উনফ ১/২৩ শরহুল আল্লামাতিয যারকানী ১/৩৫ ইত্যাদি)
সম্মানিতা মাতার দিক থেকে-
১। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
২। সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম। যিনি আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আম্মাজান। যিনি হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ মাতা।
হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন কুরাইশ বংশের সবচেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্ভ্রান্ত। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
৩। হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার পিতা ছিলেন সাইয়্যিদুনা ওয়াহাব আলাইহিস সালাম।
৪। সাইয়্যিদুনা হযরত আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম।
৫। সাইয়্যিদুনা হযরত যুহরা আলাইহিস সালাম।
৬। সাইয়্যিদুনা হযরত কিলাব আলাইহিস সালাম।
৭। সাইয়্যিদুনা হযরত মুররা আলাইহিস সালাম।
৮। সাইয়্যিদুনা হযরত কা’ব আলাইহিস সালাম।
৯। সাইয়্যিদুনা হযরত লুয়াই আলাইহিস সালাম।
১০। সাইয়্যিদুনা হযরত গালিব আলাইহিস সালাম।
১১। সাইয়্যিদুনা হযরত ফিহির আলাইহিস সালাম।
১২। সাইয়্যিদুনা হযরত মালিক আলাইহিস সালাম।
১৩। সাইয়্যিদুনা হযরত নযর আলাইহিস সালাম।
১৪। সাইয়্যিদুনা হযরত কিনানাহ আলাইহিস সালাম।
১৫। সাইয়্যিদুনা হযরত খুযাইমাহ আলাইহিস সালাম।
১৬। সাইয়্যিদুনা হযরত মাদরিকাহ আলাইহিস সালাম। উনার নাম মুবারক আমর। এই কারণে উনাকে মাদরিকাহ বলা হয় যে, তিনি সেই যুগের সমস্ত সম্মান-ইজ্জত ও গৌরবের অধিকারী ছিলেন। উনার মধ্যে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারকের এমন উজ্জলভাবে প্রকাশ ঘটেছিল যা সবাই দেখতে পেতেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৭ রওদুল উনফ ১/৩০)
১৭। সাইয়্যিদুনা হযরত ইলিয়াস আলাইহিস সালাম। তিনি ছিলেন উনার সম্প্রদায়ের সাইয়্যিদ।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা ইলিয়াস আলাইহিস সালাম উনাকে গালি দিওনা। কারণ, তিনি ছিলেন প্রকৃত মু’মিন। তিনিই উনার পিঠ মুবারকের মধ্যে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তালবিয়া (যা হজ্জের মধ্যে পড়া হয়) পাঠ শুনতে পেতেন।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৭, রওদুল উনফ- ১/৩০)
১৮। সাইয়্যিদুনা হযরত মুদ্বার আলাইহিস সালাম। উনার কণ্ঠস্বর মুবারক ছিলো অত্যন্ত সুন্দর।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা মুদ্বার আলাইহিস সালাম উনাকে গালি দিওনা, মন্দ বলিও না। কারণ তিনি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৭ রওদুল উনফ ১/৩০)
১৯। সাইয়্যিদুনা হযরত নিযার আলাইহিস সালাম। তিনি স্বীয় চোখের সামনে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক দেখতে পেতেন।” সর্ব প্রথম আরবী ভাষায় বিশুদ্ধ কিতাব তিনিই রচনা করেন। (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৮)
২০। সাইয়্যিদুনা হযরত মা’য়াদ আলাইহিস সালাম। তিনি যুদ্ধ প্রিয় ছিলেন। এমন কোন যুদ্ধ নেই যে, তিনি বিজয়ী হননি। (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৮)
২১। সাইয়্যিদুনা হযরত আদনান আলাইহিস সালাম।
২২। সাইয়্যিদুনা হযরত আদদ আলাইহিস সালাম।
২৩। সাইয়্যিদুনা হযরত মা’কুম আলাইহিস সালাম।
২৪। সাইয়্যিদুনা হযরত নাহুর আলাইহিস সালাম।
২৫। সাইয়্যিদুনা হযরত তারিহ আলাইহিস সালাম।
২৬। সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়ারিব আলাইহিস সালাম।
২৭। সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়াশযুব আলাইহিস সালাম।
২৮। সাইয়্যিদুনা হযরত নাবিত আলাইহিস সালাম।
২৯। সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম।
তিনি আল্লাহ পাক উনার জলিলুল ক্বদর রসূল। সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
انا ابن الذ بحين
অর্থ: “আমি দুই যবেহের সন্তান”। হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম এবং উনার সম্মানিত পিতা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাদেরকে বুঝিয়েছেন। উনারা দু’জন যবেহ হননি এবং হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে আগুন পোড়াতে পারেনি। কারণ উনাদের পিঠ মুবারকে অবস্থান নিয়েছিলেন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক।
৩০। সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। তিনি মুসলিম মিল্লাতের পিতা। আল্লাহ পাক উনার জলিলুল ক্বদর রসূল।
৩১। সাইয়্যিদুনা হযরত তারিখ আলাইহিস সালাম। কেউ কেউ বলে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতার নাম ছিল আযর। (নাউযুবিল্লাহ) এটা কুফরী আক্বীদা। কারণ আযর কাফির ছিলো।
মূলত তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ও অশুদ্ধ এবং কাট্টা কুফরী। কারণ সীরাতুল হালাবিয়াসহ অন্যান্য সীরাত গ্রন্থে উল্লেখ আছে-
اجمع اهل الكتاب على ان ازر كان عمه والعرب سمى العم ابا كما تسمى الخالة اما فقد حكى الله عن يعقوب عليه السلام انه قال ابائى ابراهيم واسماعيل ومعلوم ان اسماعيل انما هوعمه.
অর্থাৎ আহলে কিতাবগণের ইজমা হয়েছে যে, আযর ছিল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা। আরবরা সাধারণত চাচাকে বাবা বলে সম্বোধন করতেন। যেমন খালাকে মা বলে সম্বোধন করতেন। আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম উনার ঘটনা উল্লেখ করেছেন সেখানে তিনি বলেছেন, “আমার পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং ইসমাঈল আলাইহিস সালাম।” আর ইহা সর্বজন বিদিত যে, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন উনার চাচা। (সীরাতুল হালাবিয়া-১/৪৫)
৩২। সাইয়্যিদুনা হযরত নাহুর আলাইহিস সালাম।
৩৩। সাইয়্যিদুনা হযরত আরগুবী আলাইহিস সালাম।
৩৪। সাইয়্যিদুনা হযরত সারিহ আলাইহিস সালাম।
৩৫। সাইয়্যিদুনা হযরত ফালিহ আলাইহিস সালাম।
৩৬। সাইয়্যিদুনা হযরত আবির আলাইহিস সালাম।
৩৭। সাইয়্যিদুনা হযরত শালিখ আলাইহিস সালাম।
৩৮। সাইয়্যিদুনা হযরত আরফাখশাজ আলাইহিস সালাম।
৩৯। সাইয়্যিদুনা হযরত সাম আলাইহিস সালাম।
৪০। সাইয়্যিদুনা হযরত নূহ আলাইহিস সালাম।
তিনি আল্লাহ পাক-এর জলিলুর ক্বদর রসূল।
৪১। সাইয়্যিদুনা হযরত লামক আলাইহিস সালাম।
৪২। সাইয়্যিদুনা হযরত মাতুশালাখ আলাইহিস সালাম।
৪৩। সাইয়্যিদুনা হযরত আখনুখ আলাইহিস সালাম। যিনি হযরত ইদরীস আলাইহিস সালাম নামে মাশহুর। (তারিখুত তাবারী ১/৫১৮)
৪৪। সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়ারদ আলাইহিস সালাম।
৪৫। সাইয়্যিদুনা হযরত মাহলাইল আলাইহিস সালাম।
৪৬। সাইয়্যিদুনা হযরত কাইনান আলাইহিস সালাম।
৪৭। সাইয়্যিদুনা হযরত আনুশ আলাইহিস সালাম।
৪৮। সাইয়্যিদুনা হযরত শীছ আলাইহিস সালাম। তিনিও আল্লাহ পাক উনার রসূল ছিলেন। উনার উপর ৫০ খানা সহীফা নাযিল হয়েছিল।
৪৯। সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম আলাইহিস সালাম। তিনি সর্বপ্রথম নবী ও রসূল।
(দালায়িলুন নবুওওয়াত লিল বাইহাক্বী, সীরাতু ইবনে হিশাম- ১/১-২, সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৯, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, তারিখুত তাবারী ১/৪৯৭ রাওদুল উনফ ১/২৩ শরহুল আল্লামাতিয যারকানী ১/৩৫ ইত্যাদি)

খাইরু খলকিল্লাহ, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক ধারণ করার কারণেই উনার পূর্বপুরুষগণের বেমেছাল মর্যাদা ও মর্তবা
কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
الله اعلم حيث يجعل رسلته
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বাধিক জ্ঞাত আছেন রিসালত কাকে দেয়া আবশ্যক।” (সূরা আনয়াম : আয়াত শরীফ ১২৪)
নবুওওয়াত ও রিসালত সাধনা লব্ধ কোন বিষয় নয়। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার একান্ত ফযল ও করম। তিনি যাঁকে ইচ্ছা উনাকেই তা হাদিয়া করেন, খাছভাবে মনোনিত করেন।
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একলক্ষ চব্বিশ হাজারমতান্তরে দু’লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি শুধু আল্লাহ পাক নন। এছাড়া যতো মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়ীল-ফযীলত ও মাক্বামাত রয়েছে সব কিছুই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া করেছেন। তিনি সমস্ত নিয়ামত, ফযীলত-এর অধিকারী।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূরে মুবারক সৃষ্টি করেন।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
اول ما خلق الله نورى
 “মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন।” তবে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বশেষে দুনিয়াতে তাশরীফ এনেছেন।
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
انا خاتم النبيين لا نبى بعدى
 “আমি নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে সর্বশেষ। আমার পরে কোন নবী আলাইহিমুস সালাম নেই।”
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করে নূরে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার পেশানী মুবারকে স্থান করেন। সেই নূর মুবারক স্থান করার কারণে তিনি বেমেছাল সম্মানিত ও মর্যাদাবান হলেন আর সেই সম্মানের কারণে ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো, উনার যেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সিজদা করেন।
হাদীছ শরীফ-এর বিশুদ্ধ কিতাব ‘মুসতাদরেকে হাকিম এ উল্লেখ আছে যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি পৃথিবীতে এসে দোয়া করলেন।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন প্রথম মানব, প্রথম নবী, প্রথম রসূল হিসেবে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে যমীনে প্রেরণ করেন, তখন তিনি দু’শ থেকে তিনশত বছর যাবত কান্নাকাটি করার পরে বলেছেন-
يا رب اغفرلى بحق محمد صلى الله عليه وسلم. قال الله تعالى يا ادم كيف عرفت محمدا صلى الله عليه وسلم. قال لانك لما خلقتنى بيدك ونفخت فى من روحك فرفعت رأسى فرأيت على قوام العرش مكتوبا لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم. فعلمت انك لم تضف الى اسمك الا احب الخلق اليك. قال الله تعالى صدقت يا ادم لولا محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم ما خلقتك.
অর্থঃ হে আল্লাহ পাক! আপনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওসীলায় আমার দুয়া কবুল করুন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম! আপনি কিভাবে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চিনেছেন?” উত্তরে হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ পাক! আপনি যখন আমাকে কুদরতী হাত মুবারকে তৈরী করে আমার মধ্যে রূহ মুবারক ফূঁকে দিলেন, তখন আমি মাথা উত্তোলন করে দেখলাম আপনার আরশে মুয়াল্লার সাথে লিখা রয়েছে-
لا اله الا الله محمد رسول الله.
উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
 তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, আপনার নাম মুবারকের সাথে যাঁর নাম মুবারক লিখা রয়েছে, তিনি আপনার সবচেয়ে বেশী খাছ ও প্রিয় হবেন। তাই আমি উনার ওসীলা দিয়ে আপনার নিকট দুয়া করলাম।”
তখন আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বলেন, “আপনি সত্যই বলেছেন। যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি না করতাম, তবে আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না।” (মুস্তাদরিকে হাকিম)
হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি নিজ পুত্র হযরত শীছ আলাইহিস সালাম উনাকে ওছীয়ত করেছেন যে-
ان لايوضع هذا النور الا فى المطهرات من النساء
অর্থ: “এই পবিত্র নূর মুবারককে পবিত্রা নারী ব্যতীত অন্য কারো নিকট যেন আমানত রাখা না হয়।” (সীরাতুল হালাবিয়া ১/৪৭, মাওলিছুল মুনাবী)
আর বংশানুক্রমে এই ওছীয়ত চলে আসছিলো। যাঁদের ঔরস মুবারকে উনার নূর মুবারক বা ওজুদ মুবারক স্থানান্তারিত হয়েছিলো উনাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ পাক উনার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম রূপে মনোনীত ছিলেন।
আবার কেউ কেউ সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে মনোনীত ছিলেন। উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন নিজ নিজ যুগের বেমেছাল ও তুলনাহীন ব্যক্তিত্ব খাঁটি ঈমানদার, আদর্শ ও অনুসরণীয় ব্যক্তি তথা ওলীআল্লাহ। গোটা কায়িনাতের সেই বিষয় জানা সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলো। এমনকি কাফির মুশরিকরাও সাম্মক অবহিত ছিলো।

তাহক্বীকুল মাক্বাম আলা কিফাইয়াতিল আওয়াম’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবীইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
لم ازل انقل م اصلاب الطاهرين الى ارحام الطهرات
অর্থ: “আমি সবসময় পবিত্র পুরুষগণ উনাদের হতে এবং পবিত্র নারীগণ উনাদের রেহেম শরীফ-এ স্থানান্তরিত হয়ে আসছিলাম।”
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা অধিকাংশ ইমাম মুজতাহিদ ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা দলীল পেশ করেছেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা ও পিতামহ আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং সম্মানিতা মাতা ও মাতামহ আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম পর্যন্ত কেউই কাফির, মুশরিক, পথভ্রষ্ট ছিলেন না। উনারা কেউ ছিলেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম আবার অনেকেই ছিলেন স্ব স্ব যুগের লক্ষস্থল ও খাঁটি ঈমানদার।
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এ ‘ত্বহারাত’ লফয বা শব্দের উল্লেখ রয়েছে। ‘ত্বহারাত’ শুধুমাত্র যারা মু’মিন, মুত্তাক্বীন ও নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কাফির, মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের ক্ষেত্রে ত্বহারাত প্রজোয্য নয়।
অনেক জাহিল, গ-মূর্খ ওহাবী, খারেজী, জামাতী ইত্যাদি ফিরক্বার লোকেরা বলে থাকে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ব পুরুষ হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিতা ছিলেন কাফির। নাঊযুবিল্লাহ!
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতার নাম মুবারক মূলত ছিলো হযরত তারিখ আলাইহিস সালাম। আযর নামক ব্যক্তি ছিলো হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা। যে ছিলো কাফির। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন-
واذ قال ابراهيم لابيه ازر اتتخذ اصناما الهة
অর্থ: “আর যখন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা আযরকে বললেন, আপনি কি মূর্তিকে ইলাহ (মা’বুদ) হিসেবে গ্রহণ করেছেন? (সূরা আনআম : আয়াত শরীফ- ৭৪)
এ আয়াত শরীফ-এ ابيه ازر -এর শাব্দিক অর্থ উনার পিতা আযর। কিন্তু ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের সর্বসম্মত মতে, এখানে ابيه (আবীহি) অর্থ উনার চাচা। অর্থাৎ আবুন শব্দের অর্থ পিতা না হয়ে এর অর্থ হবে চাচা। কারণ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর অনেক স্থানেই আবুন শব্দটি পিতা ব্যতীত অন্য অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে।
যেমন আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
ولابويه لكل واحد منهما السدس مما ترك ان كان له ولد.
অর্থ: পিতা-মাতা উভয়ের জন্যে রয়েছে মৃতের পরিত্যক্ত মালের এক ষষ্ঠমাংশ যদি মৃতের কোন পুত্র সন্তান থাকে। (সূরা নিসা : আয়াত শরীফ- ১১)
এ আয়াত শরীফ-এ পিতা ও মাতা উভয়ের ক্ষেত্রে ‘আবুন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন,
قالوا بل نتبع ما الفينا عليه اباءنا.
অর্থ: “কাফিররা বললো, বরং আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যার উপর পেয়েছি তারই অনুসরণ করবো।” (সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ- ১৭০)
এ আয়াত শরীফ-এ ও আরো অসংখ্য আয়াত শরীফ-এ পূর্বপুরুষদের ক্ষেত্রে আবুন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া সূরা আ’রাফ-এর ২৭ নম্বর আয়াত শরীফ-এابويه (আবওয়াইহি) দ্বারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাকে বুঝানো হয়েছে।
অনুরূপ ‘সূরা বাক্বারা’-এর ১৩৩ নম্বর আয়াত শরীফ-এ বলা হয়েছে-
نعبد الهك واله ابائك ابراهيم واسماعيل واسحاق.
অর্থ: “(হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদের কথা) আমরা আপনার ইলাহ ও আপনার পিতা (পূর্বপুরুষ) হযরত ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাক আলাইহিমুস সালাম উনাদের ইবাদত করবো।”
উল্লেখ যে, হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তিনি হলেন, হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম উনার চাচা।
কাজেই উক্ত আয়াত শরীফ-এ চাচার ক্ষেত্রেও ‘আবুন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
অনুরূপভাবে হাদীছ শরীফ-এরও বহু স্থানে চাচার ক্ষেত্রে আবুন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, ‘তাফসীরে কবীর’ ১৩-৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,
قال عليه الصلوة والسلام ردوا على ابى يعنى العم العباس.
অর্থ: “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমার চাচা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আমার নিকট ফিরিয়ে দাও।”
অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
ان ابى واباكم كلاهما فى النار.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমার চাচা (আবু তালিব) ও তোমাদের পিতা উভয়ই জাহান্নামী।”
উপরোক্ত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ‘আবুন’ শব্দটি পিতা ব্যতীত চাচা, দাদা, পূর্বপুরুষ ইত্যাদি অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
এ সম্পর্কে ‘তাফসীরে মাযহারী’ কিতাব-এর ৩য় খন্ডের ২৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে-
والعرب يطلقون الاب على العم.
অর্থ: “আরববাসীরা”الاب আল-আবু শব্দটি চাচার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেন।”
সুতরাং সূরা আনআম-এর ৭৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ابيه ازر (আবীহি আযার) এর অর্থ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা আযর, পিতা নয়।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
 عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان ابى ابراهيم عليه السلام لم يكن اسمه ازر وانما كان اسمه تارخ عليه السلام
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতার নাম আযর নয়। বরং উনার পিতার নাম মুবারক হলো হযরত তারিখ আলাইহিস সালাম।” (ইবনে আবি হাতিম, ইবনে কাছির- ৩/২৪৮)
ان والد ابراهيم عليه السلام ما كان مشركا وثبت ان ازر كان مشركا فوجب القطع بان والد ابراهيم كان انسانا اخر غير ازر.
অর্থ: “নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতা (হযরত তারিখ আলাইহিস সালাম) মুশরিক ছিলেন না। এবং আযর (উনার চাচা) মুশরিক ছিল। কেননা, অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতা অন্য একজন অর্থাৎ হযরত তারিখ আলাইহিস সালাম কিন্তু আযর নয়।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৯)
এ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
ان والد ابراهيم عليه السلام كان تارخ عليه السلام وازر كان عما له والعم قد يطلق عليه اسم الاب.
অর্থ: “নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতার নাম ছিলো হযরত তারিখ আলাইহিস সালাম। আর আযর ছিলো উনার চাচার নাম। তখন চাচাকেও সাধারণতঃ ‘আবুন’ (পিতা) বলা হতো। (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৮)
মূলতঃ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামসহ প্রত্যেক নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনার পিতা-মাতা বা পূর্বপুরুষ ছিলেন পরিপূর্ণ ঈমানদার, খালিছ মু’মিন। কেউই কাফির ছিলেন না।
এ সম্পর্কেও কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
ان اباء الانبياء ماكانوا كفارا ويدل عليه وجوه منها قوله وتقلبك فى الساجدين.
অর্থ: “নিশ্চয়ই সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পিতা বা পূর্বপুরুষ কেউই কাফির ছিলেন না।”
তার দলীল হচ্ছে আল্লাহ পাক উনার এ কালাম বা আয়াত শরীফ। আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
وتقلبك فى الساجدين.
অর্থ: “তিনি আপনাকে (হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদাকারীগণদের মধ্যে স্থানান্তরিত করেছেন।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৮)
প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহ পাক উনার জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات.
অর্থ: “আমি সর্বদা পুত-পবিত্র নারী ও পুরুষগণদের মাধ্যমেই স্থানান্তরিত হয়েছি।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৯)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে,
لم يلتق ابواى قط على سفاح.
অর্থ: “আমার পিতা-মাতা (পূর্বপুরুষ) কেউই কখনও কোন অন্যায় ও অশ্লীল কাজে জড়িত ছিলেন না।” (কানযুল উম্মাল, ইবনে আসাকীর বারাহিনে কাতিয়া, নশরুততিব)
উল্লেখ্য, অনেকে “সূরা মরিয়ম”-এর ৪৭ নম্বর আয়াত শরীফ ও সূরা তওবা-এর ১১৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এর বরাত দিয়ে বলে যে, “হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতার জন্য ইস্তিগফার করেছেন কাজেই উনার পিতা ঈমানদার ছিলেন না।” নাঊযুবিল্লা!
মূলতঃ যারা একথা বলবে তারা উক্ত আয়াত শরীফদ্বয় এর অর্থই বুঝেনি। কারণ “সূরা মরিয়ম”-এর ৪৭ নম্বর আয়াত শরীফ-এ আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
قال سلم عليك ساستغفرلك ربى.
অর্থ: “হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আপনার প্রতি (বিদায়কালীন) সালাম, অচিরেই আমি আমার প্রতিপালক-এর নিকট আপনার জন্য মাগফিরাত কামনা করবো।”
এবং ‘সূরা তওবা’-এর ১১৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
ماكان استغفار ابراهيم لابيه الا عن موعدة وعدها اياه.
অর্থ: “হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কর্তৃক স্বীয় চাচার মাগফিরাত কামনা করা ছিলো কেবল মাত্র তার সাথে ওয়াদা করার কারণে।” অর্থাৎ প্রথমতঃ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি উনার চাচার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, তিনি তার জন্য ইস্তিগফার করবেন। উনার চাচা যেন তওবা করে, শিরকী ছেড়ে ঈমান গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যান সেজন্য দোয়া করবেন।
আর পরবর্তী ‘সূরা তওবা”-এর ১১৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ সেই ওয়াদা পালনার্থে এবং মুশরিকদের জন্য দোয়া করা নিষেধ হওয়ার পূর্বে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচার জন্য দোয়া করেছিলেন।
যেমন, এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে এসেছে,
ان ذلك كان قبل النهى عن الاستغفار للمشرك وقد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعمه ابى طالب والله لا ستغفرن لك.
অর্থ: “নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার এ ইস্তিগফার কামনা করাটা ছিল মুশরিকদের জন্য দোয়া করা নিষেধ হওয়ার পূর্বের। যেমন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নিষেধ হওয়ার পূর্বে) উনার চাচা আবূ তালিবকে বলেছিলেন, আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! অবশ্যই আমি আপনার তওবা নছীব হওয়ার জন্য দোয়া করবো।” (মাযহারী- ৬/১০০)
এছাড়া হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা আযর-এর জন্য, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা আবূ তালিব-এর জন্য সরাসরি দোয়া করেননি; বরং তাদের ইস্তিগফার কামনা করেছেন। অর্থাৎ আযর ও আবূ তালিব-এর যেন তওবা নছীব হয়, তারা যেন ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়, ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয় সেজন্য দোয়া করেছেন। আর তাও ছিল মুশরিকদের জন্য দোয়া নিষেধ সংক্রান্ত বিধান (আয়াত শরীফ) নাযিল হওয়ার পূর্বে।
আর চাচা হিসেবে আযর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার এবং আবূ তালিব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনেক খিদমত করেছেন। তার বিনিময় স্বরূপ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ইস্তিগফার (তওবা কবুল হওয়ার দোয়া) কামনা করেছেন।
এ সম্পর্কে তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে,
وما كان استغفار ابراهيم لابيه يعنى ازر وكان عما لا براهيم عليه السلام وكان ابراهيم بن تارخ عليه السلام
অর্থ: “হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতার জন্যে ইস্তিগফার করেন। অর্থাৎ আযরের জন্যে ইস্তিগফার করেন। আযর ছিল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা। আর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ছিলেন হযরত তারিখ আলাইহিস সাল্লাম উনার ছেলে।” (মাযহারী, ৪/৩০৮)
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনায় এটাই ছাবিত হলো যে, আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতা হাক্বীক্বী পরহেযগার, মুত্তাক্বী, পরিপূর্ণ ঈমানদার ও মুসলমান ছিলেন। উনার নাম মুবারক ছিলো হযরত তারিখ আলাইহিস সালাম। আর আযর নামক ব্যক্তি ছিল উনার চাচা।
আরো প্রমাণিত হলো যে, পূর্ববর্তী সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিুমুস সালামগণের পূর্বপুরুষগণ এবং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকলেই ছিলেন পুত-পবিত্র, পূর্ণ ধার্মিক ও পরিপূর্ণ মুসলমান।
কাজেই “আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ব পুরুষ হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিতা হযরত তারিখ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন খাটি মুসলমান ও আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলী। সুবহানাল্লাহ! (মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১৪০ তম সংখ্যা, ৯৭-১০০ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে যারা যতো বেশি তায়াল্লুক বা সম্পর্ক তিনি ততো বেশি সম্মানিত, ফযীলতপূর্ণ ও মর্যাদাবান। এ সম্পর্কে বলতে হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওজা শরীফ-এর যে মাটি মুবারক উনার পবিত্র শরীর মুবারকের সাথে লেগে আছে সেই মাটি মুবারকের মর্যাদা মহান আল্লাহ পাক উনার আরশের চেয়েও লক্ষ কোটি গুন বেশি। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব, ‘রদ্দুল মুহতার (শামী)’ এর বাবুয যিয়ারহতে বর্ণিত আছে, “নিশ্চয়ই রওজা শরীফ এর যে মাটি মুবারক সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারকের সাথে লেগে রয়েছে তা যমীন ও আসমানের সমস্ত কিছু থেকে ফযীলতপূর্ণ। এমনকি সুমহান আরশে আ’যীমের থেকেও ফযীলতপূর্ণ।” সুবহানাল্লাহ!
তাহলে, যাঁদের মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে আগমন করলেন, এবং যাঁদের পৃষ্ঠ মুবারকে ও রেহেম শরীফ-এ মাসকা মাস, বছরকা বছর অবস্থান করলেন তাহলে উনাদের মর্যাদা-মর্তবা মতো বেমেছাল তা চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়। কাজেই, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষগণ সকলেই ছিলেন কায়িনাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্মাণিত ফযীলতপূর্ণ ও মর্যাদাবান। সুবহানাল্লাহ!

আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও সম্মানিত মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনারা এবং উনাদের থেকে শুরু করে হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনারা পর্যন্ত সকলেই ছিলেন পুতঃপবিত্র। অনেকে ছিলেন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, অনেকে খাঁটি মু’মিন, মুত্তাক্বী ও আল্লাহওয়ালা আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।
বাতিল ফিরক্বা, বদ মাযহাব ও বদ আক্বীদার লোকেরা বলে থাকে যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা ও মাতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ঈমানদার ছিলেন না। নাঊযুবিল্লাহ! আর ঈমান ব্যতীত কেউ জান্নাতে যেতে পারে না। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা ঈমানদার ছিলেন না- এ বক্তব্য কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সৃষ্টির মূল। তিনি আল্লাহ পাক উনার হাবীব ও মাহবূব। এখন উনার পিতা-মাতা আলাইহিমুস সালাম উনারা যদি ঈমানদার না হন বা জান্নাতে না যেতে পারেন তাহলে কোনো মাখলুকাতই জান্নাতে যেতে পারবে না। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات
অর্থ: আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “আমি সর্বদা পুত-পবিত্র নারী ও পুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমেই স্থানান্তরিত হয়েছি।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৯)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং তিনি ইরশাদ করলেন যে, উনার সম্মানিত পিতা-মাতা ও পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই ছিলেন পুতঃপবিত্র, খাটি ঈমানদার। সুবহানাল্লাহ!
আর মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ফিতরাত যুগের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং উনারা দ্বীনে হানীফ-এর উপর ক্বায়িম ছিলেন।
উল্লেখ যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকারের অনেক পূর্বে এবং হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার থেকে প্রায় পাঁচশত বছর পরে উনার পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা ইন্তিকাল করেন। যারা কোন নবীর আমল পাননি, যাঁদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেনি এবং যাঁরা দুই নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তবর্তীকালীন সময়ে বিছাল শরীফ লাভ করেন। এ সময়টাকে বলা হয় ফিতরাত-এর যুগ।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
ولولا ان تصيبهم مصيبة بما قدمت ايديهم فيقولوا ربنا لولا ارسلت الينا رسولا فنتبع ايتك ونكون من المؤمنين.
অর্থ: “যারা ফিতরাত যুগের তাদের কৃতকর্মের জন্য যখনই কোন মুছীবত আসতো তখন তারা বলতো, আল্লাহ তায়ালা তিনি কোন রসূল প্রেরণ করেননি, আমরা উনার নির্দশন বা আহকাম অনুসরণ করতাম ও ঈমানদার হতাম।” (সূরা ক্বছাছ : আয়াত শরীফ-৪৭)
এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুশরিকদের সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে বলেছেন, তারা জান্নাতবাসী। কেননা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ-এর ঘোষণানুযায়ী প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেনি তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না। (যদি তারা কুফরী ও শিরকী না করে থাকে)। আর যাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে, অথচ কুফরী ও শিরকী পরিত্যাগ করেনি তারা অবশ্যই জাহান্নামী। এতে কারো দ্বিমত নেই।
সুতরাং দুই নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তবর্তীকালীন সময়ে মৃত্যুবরণ ইন্তিকালকারীগণ আহলে ফিতরাত বিধায় তাদের হুকুম ব্যতিক্রম। অর্থাৎ তারা যদি শুধু শিরক ও কুফর থেকে মুক্ত থাকেন তাহলো তারা আযাব বা শান্তি থেকেও মুক্ত থাকবেন। (মাসালিকুল হুনাফা লিস সুয়ূতী)
যেমন ছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম। উনারা উভয়ে দ্বীনে হানীফে ক্বায়িম ছিলেন। উনারা কখনো তাওহীদবিরোধী কোন আমল করেছেন এমন কোন প্রমাণ আল্লাহ পাক উনার যমীনে কেউই পেশ করতে পারবে না। এ বিষয়ে সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা একমত।
হাদীছ শরীফ-এর কিতাব “ত্ববারানী শরীফ-এ” উল্লেখ আছে, নি¤œ বর্ণিত ব্যক্তিগণ আল্লাহ পাক উনার একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন এবং উনারা পাক নাপাকীরও বিশ্বাসী ছিলেন। যদি উনাদের কেউ নাপাক হতেন, তাহলে ওযূ-গোসল করে পবিত্র হতেন, এমনকি উনারা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার ধর্মের বিশ্বাসী হয়ে আমল করতেন। উনাদের নাম মুবারক হলো-
১। হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম, ২। হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম, ৩। হযরত আসওয়াদ বিন সারারা বিন মায়রুর আনছারী আলাইহিস সালাম, ৪। হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা আলাইহিস সালাম ও ৫। হযরত আবূ কাইস বিন সারমা আলাইহিস সালাম প্রমূখ।
উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মুশরিক ও কাফিররা কখনো উত্তম হতে পারে না, কেননা তাদেরকে কালামুল্লাহ শরীফ-এ নাপাক বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই সাধারণ মু’মিন ও মু’মিনাও তাদের থেকে উত্তম।
উল্লেখ্য, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবেন এমনকি স্বয়ং জান্নাতই উদগ্রীব হয়ে আছে উনারা কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবেন। উনারা জান্নাতে প্রবেশ করাটাই জান্নাতের সার্থকতা লাভের কারন।
যেহেতু উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘদিন উনাদের অবস্থান করেছেন। তাহলে উনাদের মর্যাদা-মর্তবা কত বেমেছাল তা সমস্ত মাখলুক্বাতের মধ্যে চিন্তা ও ফিকিরের ঊর্ধ্বে।
উনারা জান্নাতি কি না? এ প্রশ্ন উত্থাপন করাটাও বেয়াদবীর কারণ। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিস সালাম উনাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং অনেকে ছিলেন উনাদের যামানার লক্ষ্যস্থাল ওলীআল্লাহ বা খাটি মু’মিন মুত্তাক্বী।
এ প্রসঙ্গে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات على ان جميع ابائه وامهاته الى ادم وحواء عليهما السلام ليس فيهم كافر
অর্থ: “আমি সর্বদা পবিত্র জিসিম মুবারক হতে পবিত্রা রেহেম শরীফ-এ স্থানান্তরিত হয়েছি। আমার পূর্ববর্তী যতো পুরুষ ও মহিলা আলাইহিমুস সালাম উনারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনারা ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম পর্যন্ত অতীত হয়েছেন, উনাদের কেউই কাফির ছিলেন না।”
এ হাদীছ শরীফ-এই প্রমাণ করে যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ব পুরুষ আলাইহিস সালাম উনারা সকলেই ছিলেন যুগের সব চাইতে সম্ভ্রান্ত, মর্যাদাশীল ও আল্লাহ পাক উনার খাছ ও মকবূল বান্দাহর অন্তর্ভুক্ত। তিনি পবিত্র পুরুষ ও পবিত্রা মহিলা উনাদের মাধ্যমে বংশ পরস্পরায় এ যমীনে তাশরীফ এনেছেন। চাই পিতার দিক থেকে হোক কিংবা মাতার দিক থেকে হোক উনাদের কেউই মুশরিক বা কাফির ছিলেন না। এমন কি উনাদের মধ্যে কেউ চারিত্রিক দোষেও দোষী ছিলেন না। প্রত্যেকেই পবিত্র চরিত্র মুবারকের অধিকারী ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
لم يلتق ابواى قط على سفاح
অর্থ: “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিস সালাম উনারা কেউই চারিত্রিক দোষে দোষী ছিলেন না।”
অতএব, প্রমাণিত হয়, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ব পুরুষ আলাইহিস সালাম উনারা শুধু ঈমানদারই ছিলেন তা নয় বরং উনারা ছিলেন আল্লাহ পাক উনার খাছ মাহবুব বান্দা-বান্দীর অন্তর্ভুক্ত।
আর এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালাম পাক-এ ইরশাদ হয়েছে,
وتقلبك فى الساجدين
অর্থ: “আপনাকে দেখেন সিজদাকারীদের সাথে উঠতে বসতে।” (সূরা শুয়ারা : আয়াত শরীফ ২১৯)
তাফসীরে মাদারিক ও জামাল”- এর গ্রন্থকার এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুধু পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম নন বরং উনার সকল পূর্বপুরুষ উনাদেরকে আল্লাহ পাক উনার তাওহীদভুক্ত বলে ঘোষণা দেন। প্রকৃতপক্ষে উনার পূর্বপুরুষ আলাইহাস সালাম উনারা সকলেই ঈমানদার ও সর্বোৎকৃষ্ট ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিস সালাম উনারা যামানার শ্রেষ্ঠতম বান্দা-বান্দীদের মাধ্যমে যমীনে তাশরীফ এনেছেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, যে সমস্ত ওহাবী, খারিজী, রাফিজী, দেওবন্দী, তবলীগী তথা বদ মাযহাব ও বদ আক্বীদাভুক্ত লোকেরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিস সালাম উনাদের মর্যাদা-সম্মান সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে, উনাদের সম্পর্কে চু-চেরা কিল ও কাল করে মূলত তারা মুসলমান না এরা আসলে কাফির ও জাহান্নামী।
এজন্য কিতাবে এসেছে, “পাত্রে আছে যাহা ঢালিলে পরিবে তাহা”। অর্থাৎ এইসব বদ আক্বীদাযুক্ত বাতিল ফিরক্বার লোকদের দিলে নিফাক্বী রয়েছে, গালিজ রয়েছে এজন্য এরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ ও সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে অশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করে থাকে। এই সমস্ত বদ মাযহাব, বাতিল ফিরক্বার লোকদের হতে ঈমান আমল হিফাযত করে সঠিক ও ছহীহ আক্বীদা পোষণ করা ফরয-ওয়াজিব।
উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দেহস্থিত সবকিছুই পাক ও তা গলধঃকরণ নাযাত হাছিলের কারণ, তাহলে যাঁদের মাধ্যমে তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন উনাদের হুকুম কি? তা চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়।
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, উহুদের ময়দানে কিছু ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মুবারকের ক্ষতস্থান হতে নির্গত রক্ত মুবারক যাতে যমীনে না পড়তে পারে সেজন্য উনারা তা চুষে চুষে পান করেছিলেন। তিনি উনাদেরকে বললেন, আপনাদের জন্য জাহান্নামের আগুণ হারাম হয়ে গেলো। অর্থাৎ আপনারা নিশ্চিত জান্নাতী। এছাড়া যে সকল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার শরীর মুবারকে শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন উনাদের ক্ষেত্রেও তিনি উক্ত সুসংবাদ দান করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত হয়েছে, একবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসুস্থতার কারণে হুজরা শরীফ-এর ভিতর একটি গামলার মধ্যে ইস্তেঞ্জা (পেশাব) মুবারক করলেন। সকাল বেলা এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আসলে তিনি উনাকে উক্ত গামলাটি দিয়ে বললেন, আপনি এগুলো এমনস্থানে ফেলে দিয়ে আসুন যাতে কেউ মাড়াতে না পারে।
তখন সেই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উক্ত গামলাটি নিয়ে দূরবর্তী স্থানে গিয়ে একস্থানে রেখে চলে আসলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি তা কোথায় ফেলে আসলেন? তখন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি তা এমন স্থানে রেখে এসেছি যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউ মাড়াতে পারবেনা। ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন কথা বলছিলেন, উনার মুখ দিয়ে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিলো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি কি তা পান করে ফেলেছেন? ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তা রাখার জন্য আমার পেটের চাইতে উত্তম স্থান খুঁজে পাইনি, তাই তা পান করে ফেলেছি। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনার জন্য জাহান্নামের আগুন জন্য হারাম হয়ে গেলো। আর আপনি জান্নাতী। সুবহানাল্লাহ!
এখন কথা হলো, যে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রক্ত মুবারক, ইস্তিঞ্জা মুবারক স্বল্পকালীন, স্বল্প পরিমাণ পান করার কারণে কোন ব্যক্তির জন্য যদি জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় আর জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়, তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দীর্ঘ সময় যাঁর বা যাঁদের জিসিম মুবারক ও রেহেম শরীফ-এ অবস্থান করলেন, উনার পূর্বপুরুষ বা পিতা ও মাতা আলাইহিমুস সালাম উনারা জান্নাতী কিনা এ প্রশ্ন একমাত্র কাট্টা কাফির ব্যতিত আর কেউ করতে পারে না।
স্মরণীয় যে, সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা করেছেন যে, রওযা শরীফ-এর যে মাটি মুবারক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারক স্পর্শ করে আছে তা আরশে আযীম থেকেও বেশি মর্যাদাবান ও সম্মানিত।
তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে পিতা-মাতা ও পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনারা ধারণ করেছেন এবং যাঁদের শরীর মুবারকের স্পর্শে ছিলেন উনাদের ফযীলত কতো বেশি এবং উনারা কত বেশি সম্মানিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর বেহেশতে উনাদের সুউচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে কোন মাখলুকাতের পক্ষে কল্পনা করাও সম্ভব নয়।
একথা সুস্পষ্ট যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পিতা-মাতামহ অর্থাৎ ঊর্ধ্বতন পূর্ব পুরুষ আলাইহিমুস সালাম যাঁদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে যমীনে এসেছেন উনারা সকলেই উনাদের যামানায় আল্লাহ পাক উনার সবচেয়ে মকবুল বান্দা ছিলেন এবং মু’মিনে কামীল ছিলেন।
মিশকাত শরীফ-এ” কবর যিয়ারত অধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে। একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ পাক উনার দরবারে উনার আম্মা আলাইহাস সালাম উনার রওজা শরীফ যিয়ারত করার আকাঙ্খা করলে আল্লাহ পাক তিনি যিয়ারত করার অনুমতি প্রদান করেন। কারণ হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি ঈমানদার ছিলেন বলেই এ অনুমতি লাভ করেছিলেন। কারণ কাফিরদের কবর যিয়ারত করা নিষেধ। তবে উনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে মহান আল্লাহ তিনি তা রহিত করে দেন। কারণ ক্ষমা প্রার্থনা ওই ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যে পাপী। আর হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন নিঃসন্দেহে খালিছ ঈমানদার।
কারো শিশু সন্তান মারা গেলে আমরা তার জানাযার নামাযে ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া ইস্তিগফার কোনটাই করিনা। কারন সে নিষ্পাপ ও বেগুনাহ অবস্থায় মারা গেছে। তাই তার জন্য দোয়া ইস্তিগফার করার প্রয়োজন নেই। এই নীতিমালার ভিত্তিতেই হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রওজা শরীফ যিয়ারত করা হয়েছিলো কিন্তু দোয়া ত্যাগ করা হয়েছিলো।
বনী ইসরাইল-এর এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক চুম্বন করার কারণে উনাকে জান্নাত দেয়া হলো, উনার জন্য জাহান্নাম হারাম করা হলো। শুধু তাই নয় উনার মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য আল্লাহ পাক তিনি জলীলুল কদর নবী ও রসূল হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনাকে উনার গোসল, কাফন ও দাফন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। অর্থাৎ তিনি জান্নাতী হয়েছিলেন। তাহলে যিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মাসের পর মাস রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন ও যিনি সরাসরি চুম্বন করেছেন, তাহলে উনার ফাযায়িল-ফযীলত ও মর্যাদা কতো বেমেছাল সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা-মাতার নাম মুবারক সম্পর্কে বলা হয় হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম। “আব্দ” অর্থ: ‘আনুগত্য স্বীকারকারী’ আর এর সাথে আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক যুক্ত হয়ে আব্দুল্লাহ নাম হয়েছে। অর্থাৎ তিনি আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য স্বীকার করতেন। তেমনিভাবে হযরত ‘আমিনা’ আলাইহাস সালাম শব্দটির অর্থ হলো, ‘ঈমান আনয়নকারিনী’। অর্থাৎ তিনি আল্লাহ পাক উনার বান্দী ছিলেন ঈমান এনেছিলেন।সুবহানাল্লাহ!
এতে বুঝা গেলো, আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে ঈমানদার তো অবশ্যই বরং আখাচ্ছুল খাছ বান্দা ও বান্দী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।
আর এটাই স্বাভাবিক। কারণ আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন-
الطيبت للطيبين والطيبون للطيبت
অর্থ: “সচ্চারিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য ও সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্র নারীদের জন্য।” (সূরা নূর : আয়াত শরীফ ২৬)
তাছাড়া প্রত্যেক নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পিতা-মাতা ও পূর্বপুরুষ ও পূর্বমাতা আলাইহিমুস সালাম সকলেই খাটি ঈমানদার ছিলেন। উনাদের কেউই কাফির, মুশরিক ছিলেন না।
এ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে-
فالاية دالة على ان جميع اباء محمد صلى الله عليه وسلم كانوا مسلمين وحينئذ يجب القطع بان والد ابراهيم عليه السلام كان مسلما.
অর্থ: “উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই ছাবিত যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ সকলেই পরিপূর্ণ মুসলমান ছিলেন। আর অকাট্যরূপে এটাও প্রমাণিত বা সাব্যস্ত যে, নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতা-মাতা সকলেই মুসলমান ছিলেন।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৮)
এ হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় কিতাবে বর্ণিত হয়েছে-
فلا يمكن ان يكون كافر لى سلسلة ابائه صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম সিলসিলার মধ্যে কেউই কাফির হওয়া সম্ভব নয়।” (তাফসীরে মাযহারী ৪র্থ খ- ৩০৮ পৃষ্ঠা)
এ সম্পর্কে কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-
ان احدا من اجداده ما كان من المشركين
অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনারা কেউই মুশরিক ছিলেন না।” (তাফসীরে কবীর- ১৩ খ- ৩৯ পৃষ্ঠা)
অতএব, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা ও ফতওয়া হলো- আখিরী রসূল, খাতামুল আম্বিয়া, ছাহিবে মীছাক্ব, উসওয়ায়ে হাসানা, ছাহিবে আছালিবে ত্বাহিরীনা ওয়া আরহামি ত্বাহিরা, ছাহিবে আসমাউল হুসনা, ছাহিবে আলক্বাব, ছাহিবে ইক্বরা, সাইয়্যিদুল খালায়িক্ব, রউফুর রহীম, ছাহিবে ছলাত ও সালাম, ছাহিবে বাশীর ওয়া নাজীর, ছাহিবে লাওলাক, ফখরে বাহর ওয়া বার সাইয়্যিদুল আম্বিয়া, সরওয়ারে কাওনাইন, সিরাজাম মুনীরা, ফখরে কায়িনাত, আল আমীন, সাইয়্যিদুল আলম, ইমামুন নাবিইয়ীন, শাফিউল উমাম, হুব্বুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, সাইয়্যিদুল জিন্নে ওয়াল ইনস, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা-মাতা এবং পূর্বপুরুষগণ উনারা জান্নাতী তো অবশ্যই এমনকি উনারা জান্নাতে প্রবেশ করলে জান্নাত সম্মানিত হবে। জান্নাতের ফযীলত বৃদ্ধি পাবে।
বিশেষ করে আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনাদের থেকে শুরু করে হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদের পর্যন্ত পূর্বপুরুষ ও পূর্বমাতা সকলেই ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে সম্মানিত ও পছন্দনীয়। উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওজুদ মুবারক নূর মুবারক অর্থাৎ ধারণ করার জন্যই খাছভাবে সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন কারো মতো নন, তিনি সারা সৃষ্টির মাঝে একক। উনার মেছাল কোন কিছুই নেই। অনুরূপভাবে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ধারণ করার কারণে উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম ও পূর্বমাতা আলাইহিন্নাস সালাম উনারা কায়িনাতের সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাবান। সুবহানাল্লাহ!
আন নূর, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশগত বেমেছাল পবিত্রতা
وتقلبك فى الساجدين.
অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনার স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয়টিও ছিলো সিজদাকারী আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে।” (সুরা শুয়ারা : আয়াত শরীফ ২১৯)
আলোচ্য আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে আল্লামা ইমাম ইবনে হিববান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
لازال نوره صلى الله عليه وسلم ينقل من ساجد الى ساجد.
 “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূর মুবারক সিজদাকারী আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছিলো” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৪৫)
উক্ত আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-
ان اباء النبى صلى الله عليه وسلم كانوا مؤمنين.

অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই মু’মিন মুসলমান ছিলেন।”
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
نبى الى نبى حتى اخرجتك نبيا وفى رواية اخرى مازال النبى صلى الله عليه وسلم يتقلب فى اصلاب الانبياء حتى ولدته امه.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি হাদীছে কুদসী শরীফ-এইরশাদ করেন, (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমি আপনার অজুদ মুবারককে নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত করে নবী হিসেবে আপনার প্রকাশ ঘটিয়েছি।”
অপর রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে উনার আম্মা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফ-এ তাশরীফ আনেন।” (বাযযার শরীফ, তিবরানী শরীফ, খাসায়িসুল কুবরা- ১/৩৮, দালায়িলুল নুবুওয়াত ১/১৬৬, সীরাতুল হালবিয়া ১/৪৪, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, শরহু আল্লামাতিয যুরকানী ১/১২৮)
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমার পূর্বপুরুষ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে আমার সম্মানিত পিতা পর্যন্ত সকলেরই সুন্নতী নিকাহ বা বিবাহ হয়েছে তাদের মধ্যে কেউ ব্যভিচারী ছিলেন না।” (ত্ববারানী শরীফ, খছায়িছূল কুবরা)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ما ولدنى من سفاح الجاهلية وما ولدنى الا نكاح كنكاح الا سلام.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমার বংশের কারো জাহিলিয়া যুগের কোনো অবৈধ বিবাহ হয়নি। বরং সকলের নিকাহ বা বিবাহই ইসলামী পদ্ধতিতে হয়েছে।”
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “আমার বংশ মুবারক-এর সকলেই ছিলেন পুত ও পবিত্র।”
অন্য হাদীছ শরীফ-এ এসেছে-
عن على ابن ابى طالب رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال خرجت من نكاح ولم اخرج من سفاح من لدن ادم عليه السلام الى ان ولدنى ابى وامى ولم يصبنى من سفاح الجاهلية شىء.
অর্থ: “হযরত আলী ইবনে আবি ত্বলিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে আমার পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের মাধ্যমে আমার বিলাদত শরীফ পর্যন্ত সকলেরই বিলাদত শরীফ হয়েছে ছহীহ নিকাহ বা বিবাহ মুবারক-এর মাধ্যমে। যাতে জাহিলীয়া যুগের কোন অপকর্ম স্পর্শ করেনি।” (ত্ববরানী, আনূ নায়ীম, ইবনে আসাক্বীর, খছায়িছূল কুবরা)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يلتق ابواى قط على سفاح لم يزل الله ينقلنى من الاصلاب الطيبة الى الارحام الطاهرة مصفى مهذبا لاتتشعب شعبتان الا كنت فى خيرهما.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম (পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম) উনারা কেউই কখনো কোন অন্যায় ও অশ্লীল কাজে জড়িত ছিলেন না। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সর্বদা পবিত্র জিসিম মুবারক থেকে পবিত্র রেহেম শরীফ-এ স্থানান্তরিত করতে থাকেন। যেখানেই পরিবার বা বংশ মুবারক-এর দু’টি শাখা মুবারক-এর উদ্ভব হয়েছে, সেখানেই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সর্বোত্তম শাখায় রেখেছেন।” (খাছায়িছুল কুবরা, কানযুল উম্মাল, ইবনে আসাকীর বারাহিনে কাতিয়া, নাশরুততিব)
আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
خير العرب مضر، وخير مضر بنو عبد مناف، وخير بنى عبد مناف بنو هاشم، وخير بنى هاشم بنو عبد المطلب، والله ما افترق فرقتان منذ خلق الله ادم عليه وسلم الا كنت فى خيرهما.
অর্থ: “আরববাসীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ গোত্র হচ্ছে ‘মুদ্বার’। মুদ্বার গোত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন আবদে মানাফ। আবদে মানাফ-এর সন্তানদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন বনু হাশিম এবং বনু হাশিম-এর মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছেন হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সন্তান-সন্ততি। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত যেখানেই বংশ মুবারক-এর বিভক্তি করেছেন, আমাকে তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ শাখায় রেখেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছূল কুবরা)
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
وتقلبك فى الساجدين
অর্থ: “তিনি (আল্লাহ পাক) আপনাকে সিজদাকারী আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে স্থানান্তরিত করেছেন।” (সূরা শুয়ারা : আয়াত শরীফ- ২১৯)
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে বলেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জিসিম মুবারক-এ স্থানান্তর করতে থাকেন অতঃপর হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ পাঠান।” (ত্ববারানী, বাযযার, আবূ নায়ীম, খছায়িছূল কুবরা)
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
عن واثلة بن الاسقع رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله اصطفى من ولد ابراهيم اسماعيل واصطفى من ولد اسماعيل بنى كنانة، واصطفى من بنى كنانة قريشا، واصطفى من قريش بنى هاشم، واصطفانى من بنى هاشم.
অর্থ: “হযরত ওয়াছিলা ইবনে আসকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদের মধ্য থেকে হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে মনোনীত করেন। অতঃপর হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদের মধ্য থেকে বনী কিনানাহকে। বনী কিনানাহ থেকে কুরাইশ গোত্রকে, কুরাইশ গোত্র থেকে বনী হাশিমকে। বনী হাশিম গোত্র থেকে আমাকে মনোনীত করেন।” সুবহানাল্লাহ! (খাছায়িছুল কুবরা)
 হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে, হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন আমাকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেন তখন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোন গোত্র সৃষ্টি করেন, তখন আমার গোত্রকে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে সৃষ্টি করেন। যখন তিনি রূহ সৃষ্টি করেন, তখন আমাকে সর্বোত্তম রূহ মুবারক হিসেবে সৃষ্টি করেন। এরপর যখন আহল বা পরিবার সৃষ্টি করেন, তখন আমার আহল বা পরিবারকে সর্বোত্তম হিসেবে সৃষ্টি করেন। কাজেই, আমি সবকিছুর শ্রেষ্ঠ। আহল বা পরিবারের দিক দিয়েও এবং রূহ মুবারক-এর দিক দিয়েও।” (তিরমিযী, বাইহাক্বী, আবূ নায়ীম)
হাদীছ শরীফ-এর আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ان الله خلق الخلق فاختار من الخلق بنى ادم عليه السلام، واختار من بين ادم العرب، واختار من العرب مضر، واختار من مضر قريشا، واختار من قريش بنى هاشم، واختارنى من بنى هاشم فانا من خيار الى خيار.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন মাখলূক সৃষ্টি করেন তখন সব মাখলুকের মধ্যে বনী আদম উনাদেরকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে মনোনীত করেন। বনী আদমের মধ্যে আরবকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে পছন্দ করেন। আরবের মধ্যে মুদ্বারকে, মুদ্বারের মধ্যে কুরাইশকে, কুরাইশ-এর মধ্যে বনী হাশিমকে এবং বনী হাশিম-এর মধ্যে আমাকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে মনোনীত করেন। নিশ্চয়ই আমি সর্বোত্তমের মধ্যে সর্বোত্তম। সুবহানাল্লাহ!
(বায়হাক্বী শরীফ, ত্ববরানী শরীফ, খাছায়িছুল কুবরা, আবূ নায়ীম)
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ان الله قسم الخلق قسمين فجعلنى فى خيرهما قسما، ثم جعل القسمين ثلاثا فجعلنى فى خيرها ثلثا، ثم جعل الاثلاث قبائل فجعلنى فى خير ها قبيلة، ثم جعل القبائل بيوتا فجعلنى فى خيرها بيتا فذلك قوله تعالى :(انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهركم تطهيرا).
অর্থাৎ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি গোটা সৃষ্টিকে দু’ভাগে বিভক্ত করেন, আমাকে এতদুভয়ের সর্বোত্তম ভাগে রেখেছেন। অতঃপর উভয়ভাগকে তিন ভাগে বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম ভাগে রেখেছেন। এরপর প্রত্যেক ভাগকে গোত্রে বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম গোত্রে রেখেছেন। এরপর গোত্রকে আহল বা পরিবারে বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম আহল বা পরিবারে রেখেছেন আর এ কারণেই ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদেরকে অর্থাৎ আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদের পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন
انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهركم تطهيرا.
অর্থ: “হে (আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার) আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম! আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে (সর্বপ্রকার) অপবিত্রতা, অশালীনতা দূর করতে। তিনি আপনাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান। (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ- ৩৩,) (বাইহাক্বী, ত্ববারানী শরীফ, আবূ নায়ীম, খাছায়িছুল কুবরা)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এর অর্থ এটা নয় যে, আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে কোন প্রকার অপবিত্রতা রয়েছে যা থেকে উনাদেরকে পবিত্র করতে হবে। বরং অর্থ হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার ভাষায় কুরআন শরীফ-এর মধ্যে উনাদের পবিত্রতার বিষয়টি অর্থাৎ উনাদেরকে যে পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন সে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন। যেমন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নবী হিসেবে সৃষ্টি হওয়ার পরও উনাকে চল্লিশ বছর বয়স মুবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে নবী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয় যেমন, উনার গোত্র মুবারক উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনারা অর্থাৎ এক কথায় উনার সাথে নিসবত বা সম্পর্কযুক্ত সমস্তকিছুই শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে। সুবহানাল্লাহ!
ইমাম বাইহাক্বী ও ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে একখানা হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখনই মানুষের মধ্যে দু’টি ফিরক্বা বা দল হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সর্বোত্তম ফিরক্বা বা দলে রেখেছেন। আমি আমার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের থেকে বিলাদত শরীফ লাভ করেছি। আর আমার বংশ মুবারকে জাহিলী যুগের কোন ব্যভিচার ছিলো না। হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার থেকে আমার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা পর্যন্ত আমার বংশ মুবারকে সকলেই ছহীহ নিকাহ বা বিবাহের মাধ্যমে আগমন করেছেন। কোথাও বিন্দুমাত্র কোন ব্যভিচার ছিলো না। আমি যেমন তোমাদের সকলের চেয়ে সর্বোত্তম, সর্বশ্রেষ্ঠ, এবং আমার সম্মানিত পিতা তিনিও ছিলেন সর্বোত্তম। সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছূল কুবরা, বাইহাক্বী, ইবনে আসাকীর)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ এসেছে-
عن محمد بن على ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ان الله اختار فاختار العرب ، ثم اختار منهم كنانة هم اختار منهم قريشا، ثم اختار منهم بنى هاشم، ثم اختارني من بني هاشم.
অর্থ: “হযরত মুহম্মদ ইবনে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি গোটা সৃষ্টির মধ্যে আরবকে মনোনিত করেন, আরবের মধ্যে কিনানাকে, কিনানার মধ্যে কুরাইশকে, কুরাইশ-এর মধ্যে বনী হাশিমকে এবং বনী হাশিম-এর মধ্যে আমাকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে মনোনিত করেন।” (বাইহাক্বী, খছায়িছূল কুবরা)
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশ মুবারকই ছিলো সর্বশ্রেষ্ঠ। উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টি লগ্ন থেকে খাছভাবে মনোনীত করে রেখেছিলেন। উনাদের মতো এতো শ্রেষ্ঠময় মর্যাদাপূর্ণ কেউ নেই। আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে খাছভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতের বা উনাকে ধারণ করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠময় গোটা সৃষ্টিতে কেউ নেই।
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
عن عائشة عليها السلام قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لي جبريل عليه السلام قلبت الأرض مشارقها ومغاربها فلم أجد رجلا أفضل من محمد صلى الله عليه وسلم، ولم اجد بني أب افضل من بني هاشم.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বলেছেন, আমি পূর্ব পশ্চিম সর্বত্রই ছফর বা প্রদক্ষিন করেছি কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠতম কোন লোককে পাইনি এবং আমি বনী হাশিম-এর চেয়ে উত্তম কাউকেও পাইনি।” (বাইহাক্বী, তিবরানী, আনু নায়ীম, খাছায়িছুল কুবরা)
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি একদিন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যখন কুরাইশগণ পরস্পর মিলিত হয় তখন তারা একজন অন্যজনের সাথে হাস্যজ্জ্বল চেহারা নিয়ে সাক্ষাত করে। আর যখন আমাদের সাথে সাক্ষাত হয় তখন তাদের চেহারা এমন সঙ্কুচিত হয় যে, তাদেরকে চেনা যায়না।
এটা শুনে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত গোস্বা করলেন। অতঃপর বললেন, ‘ওই আল্লাহ পাক উনার কসম! যার কুদরতী হাতে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রাণ। কোন ব্যক্তির অন্তরে ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমান প্রবেশ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে পূর্ণরূপে মুহব্বত করবে।”
অতঃপর আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যখন কুরাইশরা পরস্পর বসে উনাদের বংশধরদের নিয়ে আলোচনা করে তখন আপনার সম্পর্কে বলে যে, আপনি নাকি অনুর্বর যমীনে উৎপাদিত খেজুর। নাউযুবিল্লাহ!
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি যেদিন সমস্ত মাখলুকাত সৃষ্টি করলেন সেদিন আমাকে সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। অতঃপর যখন তাদেরকে বিভক্ত করলেন তখন আমাকে সর্বোত্তম ভাগে মনোনীত করলেন। যখন তাদেরকে গোত্রে বিভক্ত করলেন তখন আমাকে সর্বোত্তম গোত্রে পাঠালেন। তারপর যখন পরিবার সৃষ্টি করলেন তখন আমাকে সর্বশ্রেষ্ঠ পরিবারে পাঠালেন। কাজেই আমি বংশগতভাবে তোমাদের থেকে শ্রেষ্ঠ এবং পরিবারের দিক থেকেও তোমাদের থেকে সর্বোত্তম।’ (ইবনে মাজাহ-১১, তিরমিযী শরীফ, কিতাবুল মানাকির, দালায়িলুন নুবুওয়াত, ১/১৬৮)
অপর বর্ণনায় এসেছে,
قانا خيركم نفسا وخيركم ابا.
অর্থঃ- “আমি ব্যক্তি হিসেবে বা আত্মার দিক দিয়ে তোমাদের সকলের চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং মাতা-পিতার দিক দিয়ে সকলের থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ।” (বিদায়া ওয়ান নিহায়া, মাওয়াহিবুল লাদুননিয়া, দালায়িলুন নুবওওয়াত- ১/১৭৫)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বলেছেন যে, আমি পূর্ব-পশ্চিম ঘুরে দেখেছি কিন্তু আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কাউকে পাইনি এবং বনি হাশিমের চেয়েও সর্বোত্তম কাউকে পাইনি।” (বাইহাক্বী শরীফ, তিবরানী শরীফ, খাসায়িসুল কুবরা- ১/৩৮, সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৪১)
রঈসুল মুফাসসিরীন, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আবুল বাশার হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টির দু’হাজার বছর পূর্বে ‘কুরাইশ’ আল্লাহ পাক উনার সামনে একটি নূরের আকারে ছিলো। এই নূর যখন তাসবীহ পাঠ করতেন তখন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও সেই নূরের সাথে সাথে তাসবীহ পাঠ করতেন। আল্লাহ তায়ালা তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করে এই নূর মুবারক উনার জিসিম মুবারকে রেখে দিলেন।
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, এরপর আল্লাহ পাক তিনি আমাকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার জিসিম মুবারকের মাধ্যমে পৃথিবীতে পাঠালেন। তারপর হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার জিসিম মুবারকে স্থানান্তরিত করলেন। এমনিভাবে আল্লাহ পাক তিনি আমাকে অতি সম্মানিত বান্দা আলাইহিমুস সালাম উনাদের জিসিম মুবারক এবং পবিত্রা নারী আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের রেহেম শরীফ-এ স্থানান্তরিত করতে থাকেন। অবশেষে আমার পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের ঘরে তাশরীফ নিয়েছি। আমার পূর্ব-পুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কেউই কখনও চারিত্রিক দোষে দোষী ছিলেন না।”(খাছায়িসুল কুবরা- ১/৩৯, সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৪৬, নাসীমুর রিয়াদ শরহে শিফা- ২/১৪৪)
আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্রতা সম্পর্কে হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেন-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما ولدتنبى بغى قط منذ خرجت من صلب ادم عليه السلام ولم تزل تنازعنى الأمم كابرا عن كابر حتى خرجت من أفضل حيين من العرب هاشم وزهرة.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আমার বংশ মুবারক-এ কোথাও কোন ব্যভিচার হয়নি। সমস্ত উম্মাহ আমার সম্পর্কে পরস্পর আলোচনা করেছে। অবশেষে আমি দু’টি সর্বশ্রেষ্ঠ গোত্র বনী হাশিম ও বনী যাহরা-এর মধ্যে আগমন করি। (ইবনে আসাকির, খাছায়িছুল কুবরা)
কাজেই, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে আগমন করেছেন। অতঃপর তিনি আরো বলেন, আমি বংশ মর্যাদায় সর্বোৎকৃষ্ট।
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে, হযরত ইবনে আবী উমর আদনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, “হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি সৃষ্টির দু’হাজার বছর পূর্বে কুরাইশ মহান আল্লাহ পাক উনার সামনে একটি নূর মুবারক এর আকৃতিতে ছিলেন। এই নূর মুবারক যখন তাসবীহ পাঠ করতেন তখন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও সাথে সাথে তাসবীহ পাঠ করতেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করে এই নূর মুবারক উনার মধ্যে রেখে দিলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে আমাকে যমীনে প্রেরণ করলেন। অতঃপর হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে স্থানান্তর করলেন। এমনিভাবে আল্লাহ পাক আমাকে হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে স্থানান্তর করেন। এভাবে আমাকে আমার সম্মাণীত পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনাদের জিসিম মুবারক-এ এবং সম্মাণিতা পূর্বমাতা আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের রেহেম শরীফ-এ স্থানান্তর করতে থাকেন। অবশেষে আমার সম্মানিত পিতা ও মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের মাধ্যমে আমি বিলাদত শরীফ লাভ করি। আর আমার সম্মানিত পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে কেউই কখনো ব্যভিচারের ভিত্তিতে মিলিত হননি। সুবহানাল্লাহ! (খাছায়িছুল কুবরা)
এ হাদীছ শরীফ-এর সমর্থনে আরো একখানা হাদীছ শরীফ রয়েছে, যা হযরত তিবরানী ও হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা বর্ণনা করেন,
عن خريم بن أوس رضى الله تعالى عنه قال هاجرت الى رسول الله صلى الله عليه وسلم منصرفه من تبوك، فسمعت العباس يقول يارسول الله صلى الله عليه وسلم انى أريد أن امتدحك. قال: قل لايفضض الله فاك فقال:
من قبلها طبت فى الظلال وفى- مستودع حيث يخصف الورق
ثم هبطت البلاد لا بشر- أنت ولا مضغة ولا علق
بل نطفة تركب السفين وقد- ألجم نسرأ وأهله الغرق
تنقل من صالب الى رحم- اذا مضى عالم بدا طبق
وردت نارا الخليل مستترا- في صلبه أنت كيف يحترق
حتى احتوى بيتك المحيمن من خندف علياء تحتها النطق
وانت لما ولدت اشر قت ال- أرض وضاءت بنورك الأفق.
فتحن فى ذلك الضياء وى- النور وسبل الرشاد تخترق
অর্থ: হযরত খারীম ইবনে আউস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন তাবুক জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন, তখন আমি উনার ছোহবত মুবারকে গেলাম। এ সময় হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার ছানা-ছিফত করতে চাই। তিনি বললেন, বলুন, আল্লাহ পাক আপনার মুখ মুবারককে হিফাযত করুন। অতঃপর তিনি বললেন: ১। (দুনিয়াতে আসার) আগে আপনি ছায়ায় দিনাতিপাত করতেন এবং এমন সুমহান স্থানে (জান্নাতে) অবস্থান করতেন, যেখানে পাতা মিলিত করা হয়। (হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে)
২। অতঃপর আপনি যমীনে (হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে) তাশরীফ নিলেন। তখন আপনার মানুষের আকৃতি ছিলো না, না ছিলেন নূরী গোশত পিন্ড, না নূরী জমাট রক্ত খন্ড।
৩। আপনি সেই নূর মুবারক যা নৌকায় আরোহণ করেছিলেন এবং নসর (প্রতিমা) ও নসর পুজারীদেরকে ওই পানি গ্রাস করেছিলো। (হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে)।
৪। আপনি এমনিভাবে জিসিম মুবারক থেকে রেহেম শরীফ-এ স্থানান্তরিত হতে থাকেন এবং যা শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হয়েছিলো।
৫। হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখন আগুনে অবস্থান করেন, তখন আপনি উনার জিসিম মুবারক-এ ছিলেন। এমতাবস্থায় অগ্নির কি সাধ্য ছিলো যে, হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে স্পর্শ বা পোড়াতে পারে।
৬। অবশেষে আপনার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। আপনার রূহ মুবারক খন্দকের উচ্চস্থানকে ঘিরে নিলো, যার নিচে অন্যান্য পাহাড়ের মধ্যবর্তী অংশ আছে।
৭। আপনি যখন যমীনে তাশরীফ নিলেন তখন সারা পৃথিবী আপনার নূর মুবারকে আলোকিত হয়ে গেলো।
৮। এখন আমরা সেই মহান নূর মুবারক উনার ছোহবতে আছি। আমাদের সম্মুখে হিদায়েতের পথ উন্মুক্ত। সুবহানাল্লাহ! (খাছায়িছুল কুবরা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عله وسلم قال لما خلق الله ادم عليه السلام اراه بنيه، فجعل يرى فضائل بعضهم على بعض، فرأى نورأ ساطعا فى أسفلهم، فقال يارب من هذا؟ قال هذا ابنك أحمد صلى الله عله وسلم وهو اول وهو اخر وهوأول شأفع.
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করলেন, তখন উনাকে উনার সন্তান-সন্ততিকে দেখালেন। হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি উনাদের মর্যাদা একজনের উপর অন্যজনকে দেখতে লাগলেন। অবশেষে তিনি একখানা মুবারক উজ্জ্বল নূর মুবারক দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন হে বারে ইলাহী! ইনি কে? মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, ইনি আপনার সন্তান আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি প্রথম এবং তিনিই শেষ, তিনি সর্বপ্রথম সুপারিশকারী। সুবহানাল্লাহ! (বাইহাক্বী শরীফ, ইবনে আসাকির, খছায়িছূল কুবরা)
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,
ولذلك سأل هرقل أبا سفيأن عليه السلام كيف نسبه فيكم؟ قال هوفينا ذو نسب. قال هرقل وكذلك الرسل تبعث فى نسب قومها.
অর্থ: হিরাক্লিয়াস যখন আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, আপনাদের মধ্যে উনার বংশ মর্যাদা কিরূপ? হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বংশের দিক দিয়ে সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন। হিরাক্লিয়াস বললো, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম আপন সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে বংশ মর্যাদায় সর্বোচ্চ মর্যাদাবান হয়ে থাকেন। (খাছায়িছুল কুবরা, আবূ নায়ীম)
স্মরণীয় যে, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, সুলত্বনুল আউলিয়া, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত সাইয়্যিদুনা মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ মুবারক যাঁদের মাধ্যম হয়ে স্থানান্তরিত হয়ে দুনিয়াতে তাশরীফ এনেছেন উনারা অনেকেই ছিলেন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম। আর যাঁরা নবী-রসূল ছিলেন না উনারা ছিলেন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নায়িব বা স্থলাভিষিক্ত। সে যামানার আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ও সর্বশ্রেষ্ঠ বান্দা। সর্বশ্রেষ্ঠ পরহেযগার। সকল গুণে গুনান্বিত। আদর্শ ও অনুসরণীয় ব্যক্তি। এটাই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা বা বিশ্বাস। কাজেই, এর বিপরীত চিন্তা করাটা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।” উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “ইহুদীরা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু। অতঃপর মুশরিক।” (সূরা মায়িদা : আয়াত শরীফ ৮২)
ইহুদীরা শত্রুতাবশতঃ সব সময়ই কামনা করে, কি করে মুসলমানদের কাফির বানানো যায়। তাদের সেই অব্যাহত কোশেশ ও দুরভিসন্ধির একটি রূপ হচ্ছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম বংশের মধ্যে কলঙ্কের ছাপ অঙ্কন করা। নাঊযুবিল্লাহ! এ কাজটি তারা পূর্বেও করেছিলো, বর্তমানেও করছে, ভবিষ্যতেও করবে। তবে তাদের মতাদর্শের কিংবা সমমনাদের ছাড়া কাউকে সেই ষড়যন্ত্রের জালে আবদ্ধ করতে পারবেনা। কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই তাদের সেই জাওয়াব দিয়েছেন। স্বীয় পবিত্রতম বংশ মুবারকের মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার পরিচয় ও খুছুছিয়ত
কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, “পূর্ণিমার চাঁদের মতো শাইবাতুল হামদ (হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম) উনার পবিত্র চেহারা মুবারক অন্ধকার রাতকে আলোকিত করতো।” (যুরকানী)
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছিলেন সম্মানিত দাদাজান। উনার জিসিম মুবারকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক দীর্ঘ দিন অবস্থান করেছিলেন।
হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক ছিলো শাইবা। উনার এই নাম মুবারক-এর একটি কারণ হচ্ছে, উনার বিলাদত শরীফ-এর সময় থেকে মাথার চুল মুবারক ছিলো খুবই শুভ্র তথা অত্যাধিক সুগন্ধময়। ‘শাইবা’ ইসম বা শব্দের অর্থ শুভ্র, সুগন্ধ। এজন্য উনাকে শাইবা বলা হতো। উনাকে শাইবাতুল হামদাও বলা হতো। কারন উনার প্রতিটি আমল মুবারক ছিলো খুবই পছন্দনীয় ও সুন্দর। ফলে সকলেই উনার ছানাছিফত ও প্রশংসা করতো। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি সকলের ইমাম, আমীর বা খলীফা ছিলেন। উনাকে মক্কা শরীফ-এর অধিবাসীসহ সকলেই অনুসরণ ও অনুকরণ করতো। উনাকে সকলেই খুবই মুহব্বত করতো। উনার সম্মানিত পিতার নাম মুবারক ছিলো হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম এবং উনার মা ছিলেন আদী ইবনে নাজ্জার বংশীয় হযরত আমর আলাইহিমুস সালাম উনার মেয়ে হযরত সালমা আলাইহাস সালাম।
মাওয়াহিবুল লাদুন্নীয়া’ কিতাবের প্রণেতা তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার কুনিয়াতী নাম মুবারক ছিলো আবুল হারীছ। তিনি উনার জ্যোষ্ঠ ছেলের নাম মুবারক রেখেছিলেন হারীছ। আর আবুল হারীছ অর্থ হারীছের পিতা তথা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম। আর হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার মুবারক নামকরণের কয়েকটি কারণ বর্ণনা করা হয়। প্রথমতঃ হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম তিনি একসময় মদীনা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়ে সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
হযরত মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি একদা মদীনা শরীফ-এ তাশরীফ নেন এবং উনার ভাতিজা অর্থাৎ হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম উনার ছেলে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে দেখতে পেয়ে বলেন, ইনি কার সন্তান? দেখে মনে হয় যে ইনি আমাদেরই বংশধর। কারণ আমাদের নাক, মুখ-এর সাথে উনার নাক, মুখের সাদৃশ্য দেখা যায়। উনাকে বলা হলো ইনি হচ্ছেন আপনারই ভাই হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম উনার পুত্র। অতঃপর তিনি ভাতিজাকে উটের উপর উঠায়ে মক্কা শরীফ-এ নিয়ে আসেন। লোকেরা যদি জিজ্ঞাসা করতো ইনি কার সন্তান? তিনি বলতেন, (আবদী) অর্থাৎ আমার সন্তান। আর এজন্যই উনাকে আব্দুল মুত্তালিব বলা হয়। দ্বিতীয়ত হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি অল্প বয়স মুবারকে উনার পিতা বিছাল শরীফ লাভ করেন। ফলে চাচা মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে লালন-পালন করেন। অতএব আরবের চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী ঘনিষ্টজনের পালিত সন্তানেেক ‘আবদ’ বলা হতো। সুতরাং উনাকে আব্দুল মুত্তালিব বলা হতো। তবে এই নিয়ম সাধারন নিয়মের অন্তর্ভুক্ত ছিলো না। কেননা আরববাসীরা প্রাচীণ অভ্যাস অনুযায়ী ইয়াতীম, অনাথদের লালন-পালন করতো কিন্তু কেউই সেই পালিত সন্তানকে ‘আবদ’ বলতো না। (মাদারিজুন নুবুওওয়াত, রওযাতুল আহবার)
উল্লেখ যে, হযরত মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর মক্কাবাসীরা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার অনুসরণ অনুকরণ এবং উনাকেই ইমাম হিসেবে মানতেন। বর্ণিত রয়েছে কাবা শরীফ রক্ষণাবেক্ষণ এবং হাজিদের পানি পান করানো ইত্যাদির দায়িত্ব হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার উপর ন্যস্ত হয়। সমস্ত মক্কাবাসী ও হাজীগণ সকলেই উনার আনুগত্য স্বীকার করে উনার প্রতি বিশেষ সম্মান, শ্রদ্ধা, তা’যীম, তাকরীম করতো। সর্বদা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার জিসিম বা শরীর মুবারক থেকে মেশক আম্বর সুগন্ধির চেয়েও বেশি সুগন্ধি বিস্তার করতো। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার ললাট মুবারক সদা সর্বদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরে নূরদীপ্ত ছিলো। উনার পবিত্র চেহারা মুবারক নূরানীময় ছিলো এবং সর্বদা চমকাতো। মক্কাবাসীদের কোনো বিপদ আপদ আসলে বা কোন বিপদ আপদ দেখা দিলে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে নিয়ে মক্কা শরীফ-এর অদূরে ছাবীর পাহাড়ে গিয়ে উনার উছীলা দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মুনাজাত করতেন এবং অনাবৃষ্টির সময়ও উনার মাধ্যমে ইসতিসকা তথা বৃষ্টির জন্য দোয়া করতেন। উনার চেহারা মুবারকে অবস্থীত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক-এর উছীলায় মক্কাবাসীরা সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পেতেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত কা’বুল আহবার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। ‘নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার ললাট মুবারক-এর বেমেছাল উজ্জ্বলতা ছিলো। যা বর্ণনার উর্ধ্বে।
হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আবূ বকর ইবনে আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি স্বীয় পিতা এবং তিনিও উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ ত্বলিব তিনি বলেছেন হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন এক রাতে আমি বাইতুল্লাহ শরীফ-এ নিদ্রিত অবস্থায় একটি মুবারক স্বপ্ন দেখলাম। অতপর আমি কুরাইশ বংশের একজন তা’বীরবীদের কাছে স্বপ্ন বর্ণনা করলাম। স্বপ্নটি হলো, একটি বৃক্ষ উদগত হলো। দেখতে দেখতে তার শাখা প্রশাখা আকাশচুম্বি হয়ে গেলো এবং পূর্ব-পশ্চিম তথা সারা কায়িনাতে ছড়িয়ে পড়লো। এবং এই বৃক্ষ থেকে একটি নূর মুবারক নির্গত হলো। যার আলো সূর্য থেকে সত্তরগুন তথা তার থেকে কোটি কোটি গুন বেশি ছিলো। সকল আরব অনারব সেই নূর মুবারক-এর সামনে সিজদাবনত ছিলো। ওই নূর মুবারক আরো বড় হচ্ছিলো এবং আরো ছড়িয়ে যাচ্ছিলো। সেই মুবারক নূরটি কখনো প্রকাশ পেতো এবং কখনো গোপন হয়ে যেতো। একদল কুরাইশ এই বৃক্ষ শাখার নিকটবর্তী হলে একজন সুদর্শন যুবক তাদের কমর ভেঙ্গে দিতো। আমিও সেই বৃক্ষটির শাখা ধরার জন্য কোশেশ করলাম, কিন্তু আমি ধরতে পারলাম না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এটি কার অংশ? জাওয়াব এলো এটি উনাদের অংশ, যারা আপনার পূর্বে এটাকে ধারণ করেছে। এই স্বপ্ন মুবারক দেখে আমি ভীত হয়ে জেগে উঠলাম।
এই স্বপ্ন মুবারক শুনে ওই তা’বীরবীদ-এর মুখমন্ডল বিবর্ণ হয়ে গেলো। সে বললো, আপনার থেকে একজন সন্তান আগমন করবেন যিনি পূর্ব পশ্চিম তথা সারা কায়িনাতের নবী-রসূল হবেন এবং সমস্ত মানুষ তথা সারা মাখলুক উনার সামনে নত হয়ে যাবে।
হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, সেই শিশু আমার থেকেই আগমন করবেন। আবূ ত্বলিব এই ঘটনা সবাইকে শুনাতেন এবং বলতেন মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! সেই বৃক্ষ মুবারক হচ্ছেন আবুল ক্বসিম আল আমীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছূল কুবরা, মাদারিজুন নবুওওয়ত)
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। আমরা শীতকালে ইয়ামেনে পৌঁছলাম। সেখানে এক ইহুদী আলিমের সাথে সাক্ষাত হলো তখন এক ব্যক্তি আমাকে জিজ্ঞাসা করলো আপনি কে? আমি জাওয়াবে বললাম, আমি একজন কুরাইশী। ওই ব্যক্তি আবার জিজ্ঞাসা করলো কুরাইশের কোন পরিবার থেকে? আমি বললাম, আমি বনূ হাশীম থেকে। ওই ব্যক্তি বললো, আপনি আমাকে অনুমতি দিন আমি আপনার দেহ মুবারক দেখবো। আমি বললাম, হ্যাঁ! আমার! আওরাহ ছাড়া। সে মতে সে আমার নাক মুবারকের ছিদ্র দেখে বললো,
اشهد ان فى احدى يد يك ملكا، وفى الاخرى نبوة.
অর্থ: “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনার এক হাতে কর্তৃত্ব এবং অন্য হাত মুবারকে নুবুওওয়াত রয়েছে।”
সে বললো, আমার ধারণা ছিলো যে, এই নুবুওওয়াত ও কর্তৃত্ব বনূ যুহরার মধ্যে হবে। এখন এটা কিরূপ হলো?
পবিত্র যমযম কুপ ও সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার স্বপ্ন মুবারক
মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় বান্দী হযরত সাইয়্যিদাহ হাজেরা আলাইহিস সালাম উনার ঘরে হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন, তখন উনার ললাট মুবারকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দীপ্ত নূর মুবারক দেখা যাচ্ছিলো। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি উনার আহলিয়া হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম এবং উনার সম্মাণিত ছেলে হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনাদেরকে কা’বা শরীফ-এ রেখে আসলেন। এদিকে যখন উনাদের নিকটে যে খাদ্য ও পানিও ছিলো তা শেষ হয়ে গেলো। উনারা উভয়েই পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লেন। এরপর হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম তিনি কখনো সাফা পাহাড়ে কখনো মারওয়া পাহাড়ে উঠেন, উভয় পাহাড়ের মাঝখানে দাঁড়ান যাতে হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তিনি দৃষ্টির আড়ালে না পড়েন। হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম তিনি ফিরে এসে দেখতে পান হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনার পা মুবারক-এর আঘাতে যে অংশ গর্ত হয়েছে তা থেকে পানি বের হচ্ছে। হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম তিনি সেই পানি চতুর্দিক থেকে বন্ধ করতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন যমযম যমযম। অতপর উনারা সেই পানি পান করলেন।
এই পানি মুবারক-এর অনেক বৈশিষ্টের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এই যমযম-এর পানি দ্বারা পিপাসাও দুর করে ক্ষুধাও নিবারন করে। দুধের ন্যায় ইহা পান ও আহার উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ইহার স্বাদ উষ্ট্রীর দুধের ন্যায়। সুবহানাল্লাহ! হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম তিনি এবং উনার সন্তান হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনারা দীর্ঘদিন পর্যন্ত এভাবে দিন অতিবাহিত করেন। অতঃপর জুরহুম গোত্রের লোকেরা পানির সন্ধানে এখানে এসে পৌঁছলো এবং পানি পেয়ে এখানে বসতি স্থাপন করলো। পরবর্তীতে হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সেই গোত্রেই নিকাহ মুবারক করলেন।
তিনি নবী হিসেবে আমেলিকা, জুরহুম ও ইয়ামেনবাসীদের প্রতি প্রেরিত হয়েছেন। একশত ত্রিশ বছর বয়স মুবারকে হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন। (মাদারিজুন নুবুওওয়াত)
বর্ণিত আছে, হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর উনার বংশ পরস্পরই কাবা শরীফ-এর খিদমত করতে থাকেন। দীর্ঘকাল পর হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং বনী জুরহুমের মধ্যে মতানৈক্য ও বিবাদের সূচনা হয়। এই বিবাদ ফায়সালা করা সম্ভব হলো না। অবশেষে জুরহুম গোত্রের লোকেরা মক্কা শরীফ-এর কর্তৃত্ব কেড়ে নেয় এবং তাদের শাসকরা হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বংশধরের উপর অত্যাচার নিপীড়ন শুরু করে। এই যুলুমবাজ জুরহুম সম্প্রদায়ের অত্যাচারে হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বংশধরগণ মক্কা শরীফ থেকে হিজরত করে আরবের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসতি স্থাপন করেন। যখন বনী জুরহুমের অন্যায়, অত্যাচার, পাপচারিতা ও কা’বা শরীফ-এর অসম্মান করনের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন তাদের উপর খোদায়ী আযাব-গযব ও মহামারীতে তারা ধ্বংস হতে থাকে এবং এদিকে মক্কা শরীফ-এর চার পাশের সমস্ত আরব গোত্রসমূহ তাদের সাথে মুকাবিলার উদ্দেশ্যে দন্ডায়মান হয়। অবশেষে জুরহুমরা মক্কা শরীফ ত্যাগ করে পলায়ন করে। কিন্তু যখন তারা মক্কা শরীফ ত্যাগ করা শুরু করে, তখন কা’বা শরীফ-এ অবস্থিত হাজরে আসওয়াদসহ মূল্যবান দ্রব্যাদি পবিত্র যমযম কুপে নিক্ষেপ করে এবং যমযম কুপকে মাটি দ্বারা ভরাট করে, যার কারণে যমযম কুপের কোনো চিহ্ন থাকে না। বনী জুরহুম মক্কা শরীফ থেকে চলে যাওয়ার পর বনী ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনারা পুনরায় মক্কা শরীফ-এ ফিরে আসেন এবং বসতি স্থাপন করেন। কিন্তু যমযম কুপ নিশ্চিহ্ন রয়ে গেলো। যমযম কুপের প্রতি কেউ নজর দিলেন না। কালের আবর্তনে এর নাম নিশানা পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যায়।
কা’বা শরীফ-এর দেখাশুনা যখন হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি করতেন মহান আল্লাহ পাক তখন উনার উপর দয়া ইহসানে পবিত্র যমযম কুপ পুনরুদ্ধার করলেন।
এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “আমি হাতিমে ঘুমিয়ে ছিলাম এমন সময় দেখলাম এক আগন্তুক আমার নিকটে এলেন এবং স্বপ্নে আমাকে বললেন احفربرة অর্থ: কুপটি খনন করুন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কোন কুপটি? অতঃপর ওই লোকটি প্রশ্নের জওয়াব না দিয়ে চলে গেলেন। পরের দিন আবার ওই স্থানে ঘুমালাম, স্বপ্নে দেখলাম ওই ব্যক্তি এসে বললেন, احفرالمضنونةমাদ্বনূনাহ খনন করুন’। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, মাদ্বনূনাহ কি? কিন্তু লোকটিজাওয়াব না দিয়ে চলে গেলেন। তৃতীয় দিন পুনরায় একই জায়গায় ঘুমালাম। দেখলাম ওই ব্যক্তি এসে বললেন, احفرطيبةপবিত্র স্থান’ খনন করুন। আমি প্রশ্ন করলাম ‘ত্বইয়ীবাহ’ কি? কিন্তু লোকটি চলে গেলেন। চতুর্থ দিন ঠিক একই স্থানে ঘুমালাম, পুনরায় স্বপ্নে দেখতে লাগলাম ওই ব্যক্তি এসে বলছেন احفر زمزم ‘যমযম খনন করুন’। আমি প্রশ্ন করলাম যমযম কি? তিনি এবার জাওয়াব দিলেন,
لاتنزف ابدا ولاتزم تسقى الحجيج الاعظم.

অর্থ: “যমযম এটি একটি পবিত্র পানির কুপ মুবারক, যার পানি কখনো নষ্ট হয় না এবং কমেও না। অসংখ্য অগনিত হাজিদের পানির পিপাসা নিবৃত্ত করে।”
অতঃপর সেই স্থানটির কিছু নিদর্শন ও চিহ্ন বলে দিয়ে সেই স্থান খুঁড়তে বললেন। এভাবে বারবার স্বপ্নে দেখানো এবং নির্দশন দেখানোর ফলে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশদের সাথে পরামর্শ করলেন এবং তাদের স্বপ্নের কথা বললেন যে, তিনি এই স্থান খুঁড়তে চান। কুরাইশদের অনেকেই বিরোধীতা করে। কিন্তু হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি এই বিরোধীতার পরওয়া করেন না, বরং কোদাল ইত্যাদি নিয়ে নিজপুত্র হযরত হারিস আলাইহিস সালামসহ ওই স্থানে পৌঁছলেন এবং চিহ্নিত স্থান খুঁড়তে শুরু করলেন। তিনি নিজে খুঁড়ছিলেন এবং উনার ছেলে হারিস আলাইহিস সালাম তিনি মাটি তুলে ফেলছিলেন। তিনদিন খুঁড়ার পর এর চিহ্ন দেখা গেলো। হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি খুশিতে তাকবীর ধ্বনি দিলেন এবং বললেন,
هذا طوى اسماعيل عليه السلام.
অর্থ: এটি হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনার কুপ মুবারক।”
খছায়িছূল কুবরা’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, “হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি যখন কূপ খনন করছিলেন তখন কুরাইশরা বললো, হে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম আপনি কি করছেন? তিনি বললেন, আমাকে যমযম খনন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অতঃপর যখন যমযম-এর পানি বের হয়ে আসলো। তখন কুরাইশরা বললো আমাদের হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনার পানিতে আমাদেরও অংশ আছে। হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন এতে তোমাদের কোন অংশ নেই। একান্তভাবে এটা আমার। তখন কুরাইশরা বললো আচ্ছা আপনি এটার একটা ফায়ছালা করে দিন।
হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন ঠিক আছে, ফায়ছালা করা হবে। কুরাইশরা আরো বললো, আচ্ছা, আমরা আমাদের এবং আপনাদের মধ্যে বনী সা’দ ইবনে হুযায়ম-এর অতন্দ্রীয়কে সালিস মেনে নিবো। সে মতে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি কয়েকজন ছেলেকে নিয়ে এবং কুরাইশদের প্রত্যেক পরিবার থেকে কয়েক ব্যক্তি সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলেন। সিরিয়ার পথে বহুদুর বিস্তৃত ঘাস পানিহীন বিশাল মরুভূমি ছিলো। সেখানে পৌঁছার পর হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম ও উনার সঙ্গি সাথিদের পানি শেষ হয়ে গেলো। জীবন বিপন্ন দেখে উনারা কুরাইশ পক্ষের নিকট পানি চাইলেন। কুরাইশরা বললেন, আমরা তোমাদের পানি দিতে পারি না। কারণ আমরাও এরূপ পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে পারি। হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি সঙ্গিদের জিজ্ঞাসা করলেন এখন তোমাদের কি মত? তারা বললো আমরা আপনারই অনুসরণ করবো, কারণ আপনি সকলেরই মাথার তাজ, আমাদের আপনি রাহবার, পথ প্রদর্শক। হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, প্রত্যেকেই তার কবর খনন করবে কেউ মারা গেলে তার সঙ্গি সাথি তাকে কবরস্থ করবে। অবশেষে শেষ ব্যক্তি তার সঙ্গিকে কবরস্থ করবে। এক ব্যক্তির কবরবিহীন শুধু ইন্তিকাল। সকলের কবরবিহীন ইন্তিকালের চেয়ে অনেক উত্তম। সে মোতাবিক সকলেই কবর খনন করলেন। অতপর হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরাতো নিজেদেরকে মৃত্যুর হাতে সোপর্দ করেছি। এই অবস্থায় আমরা পানির খোঁজে বের হইনা কেন? ইনশাআল্লাহ আল্লাহ পাক তিনি আমাদের জন্য পানির ব্যবস্থা করে দিবেন।
হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি সঙ্গিসাথীদের বললেন, যাত্রা করো। সকলেই পুনরায় রওয়ানা হলেন। কিন্তু আল্লাহ পাক উনার কি কুদরত হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি উনার উষ্ট্রীর পিঠে বসতেই উষ্ট্রী হোচট খেলো এবং তার পায়ের নিচ থেকে সুমিষ্ট পানির ঝর্ণা বের হতে লাগলো। এরপর সকলেই আপন আপন উষ্ট্রী বসিয়ে দিলেন। উনারা নিজেরা পানি পান করলেন এবং জন্তুগুলোকেও পানি পান করালেন। অতপর কাফিলার সমস্ত সাথীদের ডেকে বললেন তোমরাও এসে যাও মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের জন্য পানি সৃষ্টি করেছেন। কুরাইশরাও আসলেন নিজেরাও পান করলেন জন্তুদেরকেও পান করালেন। অতপর কাফিলার সকলেই বলতে লাগলেন, হে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার পক্ষে ফায়ছালা দিয়েছেন। যে আল্লাহ পাক তিনি এই পানি বিহীন ময়দানে আমাদেরকে পানি পান করিয়েছেন, তিনিই আপনাকে যমযমও হাদিয়া করেছেন। কাজেই আমরা সকলেই ফিরে যাই। যমযম একমাত্র আপনার। আমরা এতে অংশীদার নই।
অতঃপর হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সাাম তিনি যমযম কুপের নিকটে কিছু হাউস নির্মাণ করলেন, যাতে হাজীদের পান করানোর জন্য পানি ভরে রাখা হতো। কিছু দুস্কৃতকারী অপকীর্তি শুরু করলো। তারা রাতে এসে হাউসগুলোতে ময়লা ফেলে যেতো, যখন প্রভাত হতো হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিসন সালাম তিনি সেগুলো পরিস্কার করতেন। অবশেষে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করলেন, যমযম কুপ এর পানি ও হাউস নোংড়াকারীদের বিরুদ্ধে, তখন স্বপ্ন যোগে উনাকে বলা হলো, যে আপনি দোয়া করুন,
اللهم انى لا احلها المغتسل ولكن هى لشارب حل.
অর্থ: “হে মহান আল্লাহ পাক আমি এ যমযমের পানিতে লোকদের গোসল করার অনুমতি দেইনি, শুধু পান করার অনুমতি দিয়েছি।”
সকালে উঠেই হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি এটা ঘোষণা করে দেন। অতপর যে এই হাউস নষ্ট করার ইচ্ছা করতো, সেই কঠিন অসুখে পতিত হতো। যখন বারবার এ ঘটনা ঘটতে থাকলো তখন দুস্কৃতকারীরা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার হাউজের বিরোধীতা করা ছেড়ে দিলো। (খছায়িছূল কুবরা, যুরকানী, ইবনে কাছীর আল, বিদায়ো ওয়ান নিহায়া, মাদারিজুন নবুওওয়াত)
হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার মান্নত
যমযম কুপ খননকালে একমাত্র হযরত হারিস আলাইহিস সালাম তিনি ছাড়া হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার আর কোন ছেলে মেয়ে ছিলেন না। এজন্য তিনি মান্নত করলেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আমাকে দশজন সন্তান হাদিয়া করেন তাহলে আমি উনাদের মধ্য থেকে একজন সন্তানকে আল্লাহ পাক উনার নামে কুরবানী করবো। ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহি সালাম উনার ইচ্ছা পূর্ণ করলেন এবং দশজন ছেলে সন্তান হাদিয়া করলেন উনারা প্রাপ্ত বয়স মুবারকে উপনীত হলেন, তখন তিনি একদিন কাবা শরীফ-এর সামনে শুয়ে ছিলেন এমতাবস্থায় স্বপ্নে দেখলেন উনাকে বলা হচ্ছে,
ياعبد المطلب اوف بنذرك لرب هذا البيت.
অর্থ: “হে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম! আপনি এই কা’বা শরীফ-এর মালিক উনার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে মান্নত পূর্ণ করুন।”
হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহি সালাম তিনি জাগ্রত হয়ে উনার সব ছেলে-সন্তানদের ডাকলেন এবং নিজের মান্নতের কথা এবং স্বপ্নের কথা উনাদেরকে বললেন। তখন উনার ছেলে সন্তান উনারা একবাক্যে বললেন,
اوف بند رك وافعل ما شئت.
অর্থ: “হে আমাদের পিতা, আপনি আপনার মান্নতকে পূর্ণ করুন। আপনি যা করতে চান তাই করুন।”
অতঃপর হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি উনার সব ছেলের নামে লটারী করলেন। দেখা গেলো হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক উঠলো যাঁকে তিনি সবচেয়ে বেশি মুহব্বত করতেন, সবচেয়ে বেশি আদর করতেন, যিনি সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিলেন সবার নিকটে। হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক ধরে কুরবানীর স্থানের দিকে নিয়ে চললেন। উনার হাত মুবারকে ছুরিও ছিলো। এ অবস্থা দেখে হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বোনেরা খুবই কান্নাকাটি শুরু করলেন। উনাদের এক বোন বললেন, হে আমাদের সম্মানিত পিতা! আপনি দশটি উট ও হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে লটারী করুন। যদি দশটি উটের পক্ষ্যে লটারী উঠে তা হলে দশটি উট কুরবানী করুন। আর আমাদের ভাইকে ছেড়ে দিন। সে সময় হত্যার বিনিময় হিসেবে দশটি উট নির্ধারণ করা হতো।
লটারী করা হলেও এতে হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারকই উঠলো। হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি দশটি দশটি করে উট বাড়িয়ে লটারী করতেই থাকলেন, কিন্তু প্রতিবারই হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারকই উঠতে থাকলো। এমনকি এভাবে যখন একশ উট পূর্ণ হলো, তখন হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পরিবর্তে উটের নাম উঠলো।
হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিসহ সকলেই আল্লাহ আকবার ধ্বনি ও শুকরিয়া আদায় করলেন। বোনগণ ভাইকে তুলে নিয়ে গেলেন। হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে একশত উট কুরবানী করলেন এবং উনার মান্নত পূর্ণ হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
আছহাবুল ফীল বা আবরাহা ও তার সৈন্য বাহিনীর ধ্বংসের ঘটনা
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর পঞ্চাশ দিন পূর্বে আছহাবুল ফীল বা আবরাহা ও তার সৈন্য বাহিনী খোদায়ী গযবে পরে ধ্বংস হওয়ার ঘটনা সংঘটিত হয়। কুরআন শরীফ-এ এ ঘটনার উপর ‘সূরা ফীল’ অবতীর্ণ হয়েছে।
 উল্লেখ্য যে, আরবের ইয়ামেন প্রদেশ মুশরিক ‘হিমইয়ারী’ রাজন্যবর্গের অধিকারভুক্ত ছিল। তাদের সর্বশেষ রাজা ছিলেন ‘যু-নওয়াস’। সে সময় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ই ছিলো সত্য ধর্মের দাবিদার। রাজা ‘যু-নওয়াস’ তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছিলো। সে একটি দীর্ঘ ও প্রশস্ত গর্ত খনন করে তা অগ্নিতে ভর্তি করে দিলো। অতঃপর যতো খ্রিস্টান পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে এক আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করতো, তাদেরকে সেই গর্তে নিক্ষেপ করে জ্বালিয়ে দিলো। এরূপ নির্যাতিতদের সংখ্যা ছিলো ২০.০০০ (বিশ হাজার)-এর কাছাকাছি। এই গর্তের কথাই ‘সূরা বুরূজে’ ‘আছহাবুল উখদূদ’-এর নামে ব্যক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে দু’ব্যক্তি কোনো রকম অত্যাচারীদের কবল থেকে পলায়ন করতে সক্ষম হয়। তারা সিরিয়ার রোমক শাসকের নিকট যেয়ে খ্রিস্টানদের প্রতি রাজা যু-নওয়াস-এর লোমহর্ষক অত্যাচারের কাহিনী বললো। রোমক শাসক ইয়ামেনের নিকটবর্তী আবিসিনিয়ার খ্রিস্টান বাদশাহর কাছে এর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য চিঠি পাঠালে। সে তার বিরাট সেনাবাহিনী, দুই সেনানায়ক আরবাত ও আবরাহার নেতৃত্বে রাজা ‘যু-নওয়াসে’র মোকাবিলায় পাঠালে। আবিসিনিয়ার সৈন্যদল ইয়ামেনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং সমগ্র ইয়ামেনকে হিমইয়ারীদের কবল থেকে মুক্ত করলো। রাজা ‘যু-নওয়াস পালিয়ে গেলো এবং সমুদ্রে ডুবে মৃত্যু বরণ করলো। এভাবে আরবাত ও আবরাহার মাধ্যমে ইয়ামেন আবিসিনিয়া বাদশার করতলগত হলো। অতঃপর আরবাত ও আবরাহার মধ্যে ক্ষমতার লড়াই হলো এবং আরবাত নিহত হলো। আবিসিনিয়ার বাদশাহ আবরাহাকে ইয়ামেনের শাসক নিযুক্ত করলো।
ইয়ামেন অধিকার করার পর আবরাহার ইচ্ছা হলো যে, সে তথায় এমন একটি বিশাল সুরম্য গীর্জা তৈরি করবে, যার নমুনা পৃথিবীতে নেই। এতে তার উদ্দেশ্যে ছিল এই যে, ইয়ামেনবাসীরা প্রতি বছর হজ্জ করার জন্য মক্কা শরীফ-এ যান এবং বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করেন। তারা এই গীর্জার মাহাত্ম্যও জাঁকজমকে আশেক হয়ে বাইতুল্লাহ শরীফ-এর পরিবর্তে এই গীর্জায় আসবে। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে সে এক বিরাট সুরম্য গীর্জা তৈরি করলো। নিচে দাঁড়িয়ে কেউ এই গীর্জার উচ্চতা মাপতে পারতো না। স্বর্ণ-রৌপ্য ও মূল্যবান হীরা, জহরত দ্বারা কারুকার্যখচিত এই গীর্জা তৈরি করার পর সে ঘোষণা করলো, এখন থেকে ইয়ামেনের কোন বাসিন্দা হজ্জের জন্য কা’বা শরীফ-এ যেতে পারবে না। এর পরিবর্তে তারা এই গীর্জার মধ্যে ইবাদত করবে। আদনান, কাহতান ও কুরাইশ গোত্রের মধ্যে এই ঘোষণার ফলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ তীব্রতর হয়ে উঠলো। সে মতে, তাদেরই কেউ রাতের অন্ধকারে গা-ঢাকা দিয়ে গীর্জায় ঢুকে ইস্তিঞ্জা করলো।
কোনো কোনো রেওয়ায়েতে আছে যে, তাদের এক যাযাবর গোত্র নিজেদের প্রয়োজনে গীর্জার পাশে আগুন জ্বালালো। সে আগুন গীর্জায় লেগে যায় এবং গীর্জার মারাত্মক ক্ষতি হয়। আবরাহাকে খবর দেয়া হলো যে, জনৈক কুরাইশী এই কাজ করেছে। তখন সে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ক্বসম করলো! আমি কুরাইশদের ক্বা’বা শরীফ নিশ্চিহ্ন না করে ক্ষান্ত হবো না। নাঊযুবিল্লাহ! অতঃপর সে এর প্রস্তুতি শুরু করলো এবং আবিসিনিয়ার বাদশার কাছে অনুমতি চাইলো। বাদশাহ কেবল অনুমতিই দিলো না বরং তার ‘মাহমূদ’ নামক খ্যাতনামা হাতিটিও আবরাহার সাহাযার্থে পাঠিয়ে দিলো। কোনো কোনো রেওয়ায়েতে আছে, এই হাতিটি এমন বিশাল আকৃতির ছিলো যে, এর সমতুল্য সচরাচর দেখা যেতো না। এ ছাড়া আরো আটটি হাতি এই বাহিনীর জন্য বাদশাহর পক্ষ থেকে পাঠানো হলো। এসব হাতি পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল ক্বা’বা শরীফ ধ্বংস করার কাজে ব্যবহার করা। পরিকল্পনা ছিলো এই যে, ক্বা’বা শরীফ-এর স্তম্ভে লোহার মজবুত ও লম্বা শিকল বেঁধে দেয়া হবে। অতঃপর সে সব শিকল হাতির গলায় বেঁধে হাঁকিয়ে দেয়া হবে। ফলে গোটা কা’বা শরীফ মাটিতে ধ্বসে পড়বে। নাঊযুবিল্লাহ!
এই আক্রমণের খবর আরবে ছড়িয়ে পড়লো। ফলে সমগ্র আরব মোকাবিলার জন্য তৈরি হয়ে গেলো। ইয়ামেনী আরবদের মধ্য থেকে ‘যুনকর’ নাকম এক ব্যক্তির নেতৃত্বে আরবরা আবরাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলো কিন্তু আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা ছিলো আবরাহার পরাজয় ও লাঞ্ছনা বিশ্ববাসীর জন্য একটা শিক্ষণীয় বিষয়রূপে তুলে ধরা। তাই আরবদের অনেকেই শহীদ হয়ে গেলেন। আবরাহা উনাদেরকে পরাজিত করে যুনকরকে বন্দী করলো। অতঃপর সে সামনে এগিয়ে ‘খাসআম’ গোত্রের কাছে উপনীত হলে গোত্র সরদার নুফায়েল ইবনে হাবীব তার মোকাবিলায় নামলেন। কিন্তু আবরাহার সৈন্যদল উনাকেও বন্দী করলো। তারপর এই বাহিনী তায়েফের নিকটবর্তী হলে তথাকার সাকীফ গোত্র আবরাহাকে বাঁধা দিলো না। কারণ তারা বিগত দু’টি যুদ্ধে আবরাহার যুলুম, নির্যাতনের ঘটনা সম্পর্কে জানতো। তারা আবরাহার সাথে সাক্ষাৎ করে এই মর্মে এক চুক্তি সম্পাদন করলো যে, তারা আবরাহার সামনে প্রতিরোধ সৃষ্টি করবে না। যদি তায়েফে নির্মিত তাদের ‘লাত’ নামক মূর্তির মন্দির অক্ষত থাকে। উপরন্তু তারা পথ প্রদর্শনের জন্য তাদের সরকার আবূ রেগালকেও আবরাহার সঙ্গে দিয়ে দেবে। আবরাহা এতে সম্মত হয়ে আবূ রেগালকে সাথে নিয়ে মক্কা শরীফ-এর অল্প দূরে ‘মাগমাস’ নামক স্থানে পৌঁছে গেলো। সেখানে কুরাইশ গোত্রের উট চারণভূমি অবস্থিত ছিলো। আবরাহা সর্বপ্রথম সেখানে হামলা চালিয়ে সমস্ত উট বন্দী করে নিয়ে গেলো। এতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতামহ- দাদা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার ২০০ (দুইশত) উট ছিলো। এখান থেকে আবরাহা বিশেষ দূত মারফত মক্কা শহরে কুরাইশ সরদারদের নিকট বলে পাঠালো যে, আমরা কুরাইশদের সাথে যুদ্ধ করতে চাই না। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে কা’বা শরীফ ধ্বংস করা। নাঊযুবিল্লাহ! এ লক্ষ্য অর্জনে বাধা না দিলে কুরাইশদের কোন ক্ষতি করা হবে না।
এই খবর যখন মক্কাবাসীদের কাছে পৌঁছলো তখন মক্কাবাসীগণ হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে এই ব্যাপারে অবহিত করলেন। তিনি বললেন, হে কুরাইশগণ! তোমরা ভীত হও না। এই ঘরের মালিক হচ্ছেন, মহান আল্লাহ পাক। তিনি এর হিফাযতকারী। হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি উটে আরোহন করে কুরাইশগণকে সঙ্গে নিয়ে ‘ছাবীর’ পাহাড়ে গেলেন। এই সময় হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার ললাট মুবারকে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক নবচন্দ্রের ন্যায় ঝলমল করতে ছিলো। উহার তীব্র আলোকচ্ছটা বিচ্ছুরিত হয়ে কা’বা শরীফ পর্যন্ত আলোকোজ্জ্বল করে ছিলো। হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি এই মুবারক নূর দেখে বললেন, হে কুরাইশ সন্তানগণ! এই ব্যাপারে তোমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এই মুবারক নূর তখনই দীপ্ত হয়, যখন আমাদের বিজয় ও সফলতা লাভ সুনিশ্চিত হয়ে থাকে। অতঃপর কুরাইশগণ ঘরে ফিরলেন। আবরাহা এক ব্যক্তিকে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সাথে আলাপ আলোচনা করার জন্য পাঠালো। সে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার চেহারা মুবারক-এর প্রতি দৃষ্টিপাত করতেই অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটাইয়া পড়লো। জ্ঞান ফিরে আসলে হযরত আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম মুবারকে ধরে বলতে লাগলো আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি কুরাইশ তথা সকলের সাইয়্যিদ। (মাদারিজুন নবুওওয়াত, খাছায়িছুল কুবরা)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবরাহার দূত যখন মক্কা শরীফ-এ এসে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে আবরাহার কথা জানালো তখন হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমরা আবরাহার সাথে যুদ্ধ করতে ইচ্ছা রাখি না।
তবে এ কথা বলে দিচ্ছি যে, এটা মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর, উনার খলীল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার হাতে তৈরি করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই এর রক্ষাকারী। আবরাহা আল্লাহ পাক উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাইলে করুক এবং দেখুক আল্লাহ পাক তিনি কি করতে পারেন। উক্ত দূত বললো, তাহলে আপনি আমার সাথে চলুন। আমি আবরাহার সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দেবো।
হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি কিছু কুরাইশগণ উনাদের নিয়ে আবরাহার কাছে গেলেন। আবরাহা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সুদর্শন নূরানীময় চেহারা মুবারক দেখে সিংহাসন ছেড়ে নিচে নেমে আসলো এবং হযরত আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে সিংহাসনে বসালো আর আবরাহা নিচে বসে পড়লো। হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি আবরাহাকে বললেন, আমার উটগুলো যে ধরে এনেছো তা ফেরত দিয়ে দাও। আবরাহা বললো, আমি প্রথম যখন আপনাকে দেখলাম তখন আমার মনে আপনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ জাগ্রত হয়েছিলো। কিন্তু আপনার কথাবার্তা শুনে তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলো। আপনি আমার কাছে কেবল দুইশত উটের কথাই বলছেন। আপনি কি জানেন না যে, আমি আপনাদের কা’বা শরীফ তথা আপনাদের দ্বীন ধর্মকে ধ্বংস ভূমিসাৎ করতে এসেছি? আপনি এ সম্পর্কে কোন কথাই বললেন না, আশ্চর্যের বিষয় বটে! হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি উটের মালিক, তাই উটের কথাই বললাম। আমি কা’বা শরীফ-এর মালিক নই। এর মালিক স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক। তিনি জানেন উনার এ ঘরকে কিভাবে হিফাযত করতে হবে। আবরাহা বললো, আপনার আল্লাহ পাক তিনি কা’বা শরীফকে আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন না। নাঊযুবিল্লাহ! হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তাহলে তুমি যা ইচ্ছা করো। কোন কোনো রেওয়ায়েতে আছে যে, হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গী কয়েকজন কুরাইশ আবরাহার কাছে এই প্রস্তাব রাখলেন যে, তুমি আল্লাহ পাক উনার ঘরকে হস্তক্ষেপ না করলে আমরা সমগ্র উপত্যকার এক তৃতীয়াংশ ফসল তোমাকে খেরাজ দান করবো কিন্তু আবরাহা এ প্রস্তাব মানতে চাইলো না। হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার উট নিয়ে শহরে ফিরে এলেন। অতঃপর তিনি বায়তুল্লাহ শরীফ-এর চৌকাঠ ধরে দোয়ায় মশগুল হলেন। কুরাইশ গোত্রের বহু লোকজন উনার সাথে উক্ত দোয়ায় শামিল হলেন। উনারা বললেন, হে আল্লাহ পাক! আপনিই আপনার ঘরের হিফাজতের ব্যবস্থা করুন।
কা’বা শরীফ-এর দরজায় উপস্থিত হয়ে মুনাজাতের মাধ্যমে সকলেই কান্নাকাটি শুরু করলেন আর এ কবিতার মাধ্যমে দোয়া করলেন-
اللهم ان المرء يمنع + رحله فامنع رحالك
وانصر على ال الصليب + وعابديه اليوم الك
لا يغلبن صليبهم + ومحالهم ابدا محالك
جروا جميع بلادهم + والفيل كى يسبوا عيالك
عمدوا حمال بليدهم + جهلا وما رقبوا جلالك
অর্থ: “হে আল্লাহ পাক! বান্দা তার জায়গার হিফাযত করে, আর আপনি নিজ ঘরের হিফাযত করুন। ক্রুশের অধিকারী এবং ক্রুশের উপসনাকারীদের মুকাবিলায় আপনার অনুসারীদের সাহায্য করুন।” ওদের ক্রুশ এবং ওদের প্রচেষ্টা আপনার ইচ্ছার উপর কখনো বিজয়ী হতে পারে না। সৈন্য-সামন্ত ও হাতি নিয়ে আবরাহা এসেছে আপনার প্রতিবেশীদের গ্রেফতার করতে। আপনার পবিত্র ঘর ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়ে জিহালতীর কারণে তারা এ সংকল্প করেছে, তারা আপনার বড়ত্ব ও শক্তির প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করছে না।”
হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি কা’বা শরীফ-এর গিলাফ ধরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উছীলায় দোয়া করলেন, হে বারে ইলাহী! আমি তো কা’বা শরীফ-এর মালিক না, আপনি মালিক। আমাকে দেখা শুনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, আমি দেখাশুনা করে রাখতে ছিলাম। এখন হঠাৎ করে আবরাহা এসেছে তার সৈন্য সামন্ত নিয়ে, হাতি-ঘোড়া নিয়ে, অস্ত্রপাতি নিয়ে। হে বারে ইলাহী! আমাদের সেই প্রস্তুতী নেই তার মোকাবেলা করার। হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি আরো বললেন, আমাদের প্রস্তুতি নেই হে বারে ইলাহী! কাজেই, আপনি কা’বা শরীফ-এর মালিক, আপনিই এর হিফাযতকারী। আপনিই হিফাযত করুন। (আমীন) (মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার মুকবুল মুনাজাত শরীফ, মাদারিযুন নবুওওয়াত, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
দোয়া করার পর হযরত আব্দুল মুত্তাবিল আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গী সাথীদেরকে সাথে নিয়ে পাহাড়ের উপর আরোহন করলেন। উনাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো যে, আবরাহা বাহিনীর উপর মহান আল্লাহ পাক উনার গযব পড়বে। ভোর বেলায় আবরাহা কাবা শরীফ আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিলো এবং মাহমূদ নামক প্রধান হাতিটিকে আগে চলার ব্যবস্থা করলো। বন্দী ‘নুফায়েল ইবনে হাবীব’ সামনে এগিয়ে হাতির কান ধরে বলতে লাগলেন, তুই যেখান থেকে এসেছিস সেখানেই নিরাপদে চলে যা। কারণ তুই এখন আল্লাহ পাক উনার সংরক্ষিত শহরে এসেছিস। অতঃপর তিনি হাতির কান ছেড়ে দিলেন। হাতি এ কথা শুনেই বসে পড়লো। চালকরা তাকে আপ্রাণ চেষ্টা সহকারে উঠাতে চাইলো কিন্তু সে আপন জায়গা থেকে এক বিন্দুও সরলো না। বড় বড় লৌহ শলাকা দ্বারা পিটানো হলো, নাকের ভিতরে লোহার শিক ঢুকিয়ে দেয়া হলো, কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। সে দাঁড়ালো না। তখন তারা তাকে ইয়ামেনের দিকে ফিরিয়ে দিতে চাইলো, সে তৎক্ষণাত উঠে দাঁড়ালো। অতঃপর সিরিয়ার দিকে চালাতে চাইলে চলতে লাগলো। এরপর পূর্ব দিকেও কিছু দূর চললো। এ সব দিকে চালানোর পর আবার যখন মক্কা শরীফ-এর দিকে চালানো হলো, তখন আগের মতোই বসে পড়লো। এখানে আল্লাহ পাক উনার কুদরতেরই এই লীলাখেলা চলছিলো।
অপর দিকে সাগরের দিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে এক ধরনের পাখি সারিবদ্ধভাবে উড়ে আসতে দেখা গেলো। এগুলোর প্রত্যেকটির কাছে ছোলা অথবা মসুরের সমান তিনটি করে কংকর ছিলো, একটি চঞ্চুতে ও দুটি দুই পায়ে। পাখিগুলো অদ্ভুত ধরনের ছিলো, যা ইতিপূর্বে কখনো দেখা যায়নি। দেখতে দেখতে সেগুলো আবরাহার বাহিনীর উপরিভাগ ছেয়ে ফেললো এবং বাহিনীর উপর কংকর নিক্ষেপ করতে লাগলো। প্রত্যেকটি কংকর ওই কাজ করলো, যা গুলি ও বোমা দ্বারাও করতে পারে না। কংকর যে ব্যক্তির উপর পড়ে, তাকে এপার-ওপার ছিদ্র করে মাটিতে পুঁতে যেত। এই আযাব দেখে সব হাতি ছুটাছুটি করতে লাগলো। আবরাহার বাহিনীর সবাই মুত্যৃমুখে পতিত হলো। কিছু সৈন্য বিভিন্ন দিকে পলায়ন করতে লাগলো পথিমধ্যে মাটিতে পড়ে পড়ে নিহত হলো। আবরাহাকে কঠোর শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্য ছিলো। তাই সে তাৎক্ষণিক মারা যায়নি, কিন্তু তার দেহে মারাত্মক বিষ সংক্রমিত হয়েছিলো। ফলে দেহের এক একটি গ্রন্থি পচে গলে খসে পড়তে লাগলো। এমতাবস্থাই সে ইয়ামেনের দিকে যাত্রা করলো। রাজধানী ‘সান-আয়’ পৌঁছার পর তার গোটা দেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সে মৃত্যুমুখে পতিত হলো। আবরাহার হাতি মাহমুদের সাথে দু’জন চালক মক্কা শরীফ-এই রয়ে গেলো। তারা অন্ধ ও বিকলাঙ্গ হয়ে গিয়েছিলো।
মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হযরত আয়েশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি এই দু’জন চালককে অন্ধ ও বিকলাঙ্গ অবস্থায় দেখেছি। হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার বোন হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি এই বিকলাঙ্গ অন্ধদ্বয়কে ভিক্ষা করতে দেখেছি। (মাদারিযুন নবুওওয়াত, সীরাতে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
স্মরণীয় য়ে, আবরাহা ও তার সৈন্য বাহিনীর ধ্বংসের ঘটনা মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
)بسم الله الرحمن الرحيم(
الم تر كيف فعل ربك باصحاب الفيلالم يجعل كيدهم فى تضليلوارسل عليهم طيرا ابابيلترميهم بحجارة من سجيلفجعلهم كعصف مأكول
অর্থ: “আপনি দেখেছেন কি আপনার রব হস্তীবাহিনীর সাথে বা হাতিওয়ালাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করলেন? তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ বা ব্যর্থ করে দেননি? এবং প্রেরণ করলেন তাদের উপর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উহারা তাদের উপর কঙ্করময় পাথর নিক্ষেপ করলো অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণের ন্যায় করলেন।” (সূরা ফীল)
হস্তীবাহিনীর আযাব-গযবের এই ঘটনা সমগ্র আরববাসীদের অন্তরে কুরাইশদের সম্মান-মর্যাদা আরো বাড়িয়ে দিলো। সমস্ত রাজা, বাদশা, আমীর, উমরা সবাই স্বীকার করতে লাগলো যে, হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম সত্যিই তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ব্যক্তি এবং ক্বাবা শরীফ মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর। এ ঘরের সম্মান-মর্যাদা নষ্টকরীদের জন্য খোদায়ী আযাব-গযব অবধারিত।
স্মরণীয় যে, এই আছহাবে ফীল-এর ঘটনা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ৫০ দিন পূর্বে সংঘটিত হয়েছিলো। যা মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান মু’যিযা শরীফ-এর অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার ঘর কা’বা শরীফকে সবসময়ই কুদরতীভাবে হিফাযত করেছেন, করেন ও করবেন। কাজেই, এই ঘর হিফাযত করার জন্য বান্দাদের কখনো চিন্তিত ও পেরেশান হওয়ার প্রয়োজন নেই।
অথচ আজকাল দেখা যাচ্ছে, সউদী ওহাবী সরকার ও উলামায়ে ছূ’, যারা ইহুদী-নাছারা, কাফির-মুশরিক, এক কথায় বেদ্বীনদের গোলাম তারা একত্রিত হয়ে কা’বা শরীফ হিফাযতের নাম দিয়ে মক্কা শরীফ-এর হেরেম শরীফ-এর ভিতরে অর্থাৎ কা’বা শরীফ, ছাফা, মারওয়া, মিনা, মুজদালিফা, আরাফা ইত্যাদি স্থানে প্রায় নয় হাজারেরও বেশি সিসিটিভি ফিট করেছে। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ হাজার হাজার হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, “ছবি তোলা, আঁকা হারাম।”
অতএব, সউদী সরকারের জন্য ফরয হলো, এই সমস্ত সিসিটিভিগুলো খুলে নেয়া। আর যদি না খুলে তাহলে দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানদের জন্য ফরয হলো, এর শক্ত প্রতিবাদ করা। যাতে সউদী সরকার খুলতে বাধ্য হয়। আর এ সমস্ত হারাম থেকে বেঁচে থাকতে হলে রূহানী কুওওয়াত হাছিল করতে হবে। আর রূহানী কুওওয়াত হাছিল করতে হলে হক্কানী-রব্বানী শায়খের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে ক্বলবী যিকির ও শায়খের ছোহবত ইখতিয়ারের মাধ্যমে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করতে হবে। (তরজমায়ে মুজাদ্দিদে আ’যম, তাফসীরে মাযহারী )

0 Comments: