হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৫১ -২৭৫) (চ)

হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৫১ -২৭৫) (চ)


স্বীয় মাতা উনার সঙ্গে মদীনা শরীফ-এ আগমন
এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস
সালাম উনার বিছাল শরীফ
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা দুধমাতা সাইয়্যিদুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার নিকট থেকে স্বীয় মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার কাছে আসার পর মাত্র কয়েক দিন বাড়িতে অবস্থান করেন।
তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক বয়স মুবারক চলছিলো ৪/৫ বছর। একদা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি উনার প্রিয় সন্তান সাইয়্যিদুনা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সঙ্গে নিয়ে মদীনা শরীফ-এ আগমন করেন।
হযরত ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা মাতা উনার সাথে উনার সম্মানিত নানাজান সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম উনার বাড়িতে তাশরীফ নেন। হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার খাদিমা তিনিও উনাদের সঙ্গে ছিলেন। ওই সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বয়স মুবারক ছিলো ছয় বছর। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ও উনার সম্মানিতা মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম উনার বাড়িতে প্রায় একমাস অবস্থান করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত মা আমিনা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পিতাজান। সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার রওজা শরীফ যিয়ারত করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি যিয়ারতকালে অনেক কান্নাকাটি করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও উনার সম্মানিত পিতাজান উনার জন্য অনেক কান্না করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যতদিন মদীনা শরীফ-এ ছিলেন প্রায় সময়ই উনার সম্মানিত আব্বাজান হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার রওজা শরীফ যিয়ারত করেছেন।
হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, যখন আমরা মদীনা শরীফ-এ অবস্থান করছিলাম তখন দু’জন ইহুদী একদা আমার নিকট এসে বলল, হযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে আসুন, আমরা উনাকে দেখতে চাই। আমরা উনাকে দেখতে এসেছি। তারা যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখলো, দেখার পর তারা একে অপরকে বলতে লাগলো এই সন্তানই হচ্ছেন এই উম্মতের নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর এই মদীনা শরীফ-ই হচ্ছে উনার হিজরত স্থল। উনাকে কেন্দ্র করে অনেক যুদ্ধ জিহাদ সংঘটিত হবে।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি তাদের এরূপ কথা শুনে চিন্তিত হলেন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে মক্কা শরীফ-এর দিকে রওয়ানা দিলেন। এই ফেরার পথেই সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করলেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
উল্লেখ্য যে, তখন মক্কা শরীফ থেকে মদীনা শরীফ-এর মধ্যবর্তী রাস্তার দূরত্ব প্রায় দুইশত সত্তুর মাইল। যখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম ও উনার সন্তান নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা মদীনা শরীফ থেকে মক্কা শরীফ ফিরছিলেন তখন সুদীর্ঘ পথ-এর মাঝামাঝি স্থানে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। যেহেতু দীর্ঘ পথের একদিকে প্রখর রৌদ্র, অন্যদিকে খরতপ্ত বালুকারাশি এরই মধ্যে উনাদের মুবারক ছফর। চতুর্দিকে উত্তপ্ত বালু আর বালু, বিশাল মরুভূমি, কোথাও পানি ও ছায়া পাওয়া যাচ্ছিলো না। সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার খাদিমা হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি উনাদের খিদমত করেই যাচ্ছেন। তিনি দেখলেন, একদিকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার বিদায়ক্ষণ, অন্যদিকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখা-শুনা করা। দেখতে দেখতে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করলেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনারা উভয়ে মাটি খুঁড়ে সুন্দর করে রওজা শরীফ খনন করলেন অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনাকে রওজা শরীফ-এ রাখলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মাতা উনার বিছাল শরীফ-এ অনেক কান্না করলেন।
স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ নেয়ার পূর্বে উনার পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন। ছয় বছর বয়স মুবারক-এ মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনিও বিছাল শরীফ লাভ করেন। এখন যমীনে পিতা ও মাতা উনারা কেউ থাকলেন না। মহান আল্লাহ পাক উনার কী হিকমত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক অল্প বয়স মুবারকেই তিনি দুনিয়াবী দৃষ্টিতে ইয়াতীম হয়ে গেলেন। হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার কাফন-দাফন মুবারক শেষ করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে রওয়ানা দিলেন। অনেক কষ্ট করে মক্কা শরীফ-এ পৌঁছলেন।
হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার নিকট বুঝিয়ে দিলেন এবং সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফ-এর কথা শুনে অনেক চিন্তিত হলেন এবং কাঁদলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনেক সান্তনা দিলেন এবং উনাকে বুক মুবারকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে লাগলেন। সুবহানাল্লাহ!
হাদীছ শরীফ-এর এক বর্ণনায় এসেছে,
اخرج حضرت ابن سعد رحمة الله عليه، عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما، وعن حضرت الزهرى رحمة الله عليه، وعن حضرت عاصم بن عمر بن قتادة رحمة الله عليه دخل حديث بعضهم فى بعض قالوا لما بلغ رسول الله صلى الله عليه وسلم ست سنين خرجت به امه الى اخواله بنى عدى بن النجار بالمدينة تزورهم ومعه حضرت ام ايمن رضى الله تعالى عنها، فنزلت به فى دار النابغة، فاقامت به عندهم شهرا، فكان رسول الله صلى الله عليه وسلم يذكر امورا كانت فى مقامه ذلك، ونظر الى الدار فقال: ها هنا نزلت بى امى واحسنت العوم فى بئر بنى عدى بن النجار، وكان قوم من اليهود يختلفون ينظرون اليه قالت: ام ايمن فسمعت احدهم يقول: هو نبى هذه الامة وهذه دار هجرته، فوعيت ذلك كله من كلامهم، ثم رجعت به امه الى مكة، فلما كانت بالابواء توفيت.
অর্থ: হযরত সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন এবং হযরত যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আছিম ইবনে আমর ইবনে কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বয়স মুবারক যখন ছয় বছর তখন উনার সম্মানিতা মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি উনাকে নিয়ে মদীনা শরীফ-এ বনী আদী ইবনে নাজ্জার-এর কাছে তাশরীফ আনলেন। উনার সঙ্গে হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনিও ছিলেন। যিনি হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার খাদিমা ছিলেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম স্বীয় পুত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে নাবিগার ঘরে পৌঁছলেন। অর্থাৎ উনার সম্মানিত পিতা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম উনার বাড়িতে পৌঁছলেন এবং সেখানে উনারা একমাস অবস্থান করলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই সময়ের সমস্ত ঘটনাই জানেন এবং বলতে পারতেন। (যেহেতু তিনি সৃষ্টির শুরু থেকে আখির পর্যন্ত সমস্ত ইলমই রাখেন।) পরবর্তীতে তিনি এই হুজরা শরীফ-এর দিকে তাকিয়ে বলতেন, আমার সম্মানিতা মাতা তিনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন। আমি বনী আদী-এর এই পুকুরে সাঁতার কাটতাম। ইহুদীরা তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকাতো। হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, আমি এক ইহুদীকে বলতে শুনলাম, সে বলতেছে, এই সন্তানই হচ্ছেন এই উম্মতের নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার হিজরত স্থান হচ্ছে, এই মদীনা শরীফ। আমি এই ঘটনাসমূহ আমার মনের ভিতর সংরক্ষণ করে রেখেছিলাম। এরপর উনার সম্মানিতা মাতা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে মক্কা শরীফ-এর দিকে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে আবওয়া নামক স্থানে উনার সম্মানিতা মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করলেন। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৩৪ ও ১৩৫ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো উল্লেখ রয়েছে-
واخرج حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه من طريق حضرت الواقدى رحمة الله عليه عن شيوخه مثله، وزاد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فنظرت الى رجل من اليهود يختلف ينظر الى فقال لى يا غلام ما اسمك؟ قلت احمد صلى الله عليه وسلم ونظر الى ظهرى فاسمه يقول هذا نبى هذه الامة، ثم راح الى اخوالى، فاخبرهم فاخبروا امى فخافت على وخرجنا من المدينة.
অর্থ: হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ওয়াক্বিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ওস্তাদগণ উনাদের থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে উনার রেওয়ায়াতে এই বিষয় বস্তুর উপর জোর দেয়া হয়েছে যে, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি এক ইহুদীকে আমার দিকে গভীরভাবে দৃষ্টি করতে দেখলাম। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, হে সম্মানিত সন্তান! আপনার নাম মুবারক কি? আমি বললাম, ‘আহমদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর সে আমার পিঠ মুবারক-এর দিকে লক্ষ্য করে বলল, ইনি এই উম্মতের নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর আমি আমার সম্মানিত মামার নিকট গিয়ে এ কথা বললাম। তিনি আমার সম্মানিত মাতা উনাকে সমস্ত ঘটনা জানালেন। তিনি আমার সম্পর্কে চিন্তিত হলেন এবং আমরা সকলেই মদীনা শরীফ থেকে মক্কা শরীফ-এ ফিরে এলাম। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৩৫ পৃষ্ঠা)
কুরআন শরীফ-এ উল্লেখ আছে,
وعلمناه من لدنا علما
অর্থ: আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আর আমি আমার তরফ থেকে উনাকে অর্থাৎ আমার ওলী উনাকে গইবের ইলম দান করেছি। (সূরা কাহাফ : আয়াত শরীফ ৬৫)
খইরুল উম্মাহাত, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন উনার যামানায় মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীতা লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ এবং ইলমে গইব তথা অদৃশ্য ইলমের অধিকারিণী। তাই তিনি ইলমে গইব তথা ঐশীজ্ঞান ইলহাম-ইলক্বার মাধ্যমেই স্বীয় আওলাদ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে বাস্তব সত্য বাণীগুলি উনার কবিতার ভাষায় ব্যক্ত করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এমনকি বর্ণিত না’ত শরীফখানাও ইলহামী-গইবী ইলমে পরিপূর্ণ। যার বাস্তবতা পরবর্তীতে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুবুওওয়াতী ও রিসালতী গোটা যিন্দিগী মুবারকে আমরা লক্ষ্য করি। যেখানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি ইলমে গইবের জ্ঞানে জ্ঞানী ছিলেন সেখানে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে পরিপূর্ণভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত ইলমে গইবের অধিকারী তথা ‘মুত্তালা আলাল গইব’ তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
উল্লেখ্য, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি যখন বিছাল শরীফ লাভ করেন তার অল্পক্ষণ পূর্বে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, ফযীলত তিনি বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি সবচেয়ে অধিক জানেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে। তিনি উনার সন্তান উনাকে সবচেয়ে বেশি মুহব্বত করতেন যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সস্মানিতা শ্রদ্ধেয়া আম্মাজান খইরুল উম্মাহাত, তাহিরাহ, তইয়্যিবাহ, মুনাওওয়ারাহ, যাকিইয়্যাহ হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি আপন আওলাদ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে প্রশংসামূলক যে না’ত শরীফ বা ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করেছিলেন তা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুবারক না’ত শরীফ হিসেবে গণ্য ও পরিচিত। যা ১০ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ আল্লামা হযরত ইমাম আবুল ফদ্বল আব্দুর রহমান আবূ বকর জালালুদ্দীন সুয়ূতী শাফিয়ী আশয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত মুবারক- ৯১১) উনার ‘আল খছায়িছুল কুবরা- বাবুন মা ওয়াক্বায়া ইনদা ওয়াফাতি উম্মিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিনাল আইয়াত’ ১ম খন্ড ১৩৫-১৩৬ পৃষ্ঠা এবং ‘কিতাবুল আযীম ওয়াস সুন্নাহ’ কিতাবে সংকলন করেছেন।
নিম্নোক্ত মুবারক না’ত শরীফ বা ক্বাছীদা শরীফ উল্লেখ পূর্বক তার সহজ অনুবাদ ও শাব্দিক অর্থ উল্লেখ করা হলো-
اخرخ حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه من طريق حضرت الزهرى رحمة الله عليه عن حضرت ام سماعة بنت ابى رهم رحمة الله عليها عن أمها قالت: شهدت امنة ام رسول الله صلى الله عليه و سلم في علتها التى ماتت فيها وحضرت محمد صلى الله عليه و سلم غلام يقع له خمس سنين عند راسها فنظرت إلى وجهه ثم قالت:
بارك فيك الله من غلام
يا ابن الذى من حومة الحمام
نجا بعون الملك المنعام
فودى غداة الضرب بالسهام
بمائة من ابل سوام
ان صح ما ابصرت فى الـمنام
فانت مبعوث الى الانام
من عند ذى الجلال والاكرام
تبعث فى الحل و فى الحرام
تبعث با لتحقيق والاسلام
دين ابيك البر ابراهام
فالله انهاك عن الاصنام
ان لا تواليها مع الاقوام
ثم قالت:
كل حى ميت وكل جديد بال
وكل كبير يفنى وانا ميتة وذكرى باق
وقد تركت خيرا وولدت طهرا
ثم ماتت فكنا نسمع نوح الجن عليها فحفظنا من ذلك:
نبكى الفتاة البرة اللامينة
ذات الجمال العفة الرزينة
زوجة عبد الله والقرينة
ام نبى الله ذى السكينة
وصاحب المنبر بالمدينة
صارت لدى حفرتها رهينة
(كفاية الطالب اللبيب فى خصائص الحبيب الـمعروف الخصائص الكبرى للسيوطى رحمة الله عليه باب ما وقع عند وفاة امه صلى الله عليه وسلم من الايات الجلد ۱ الصفحة ۱۳۶-۱۳۵)
অর্থ: হযরত আবূ নুয়াইম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত তাবিয়ী ইমাম ইবনু শিহাব যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হযরত উম্মু সামায়াহ বিনতু আবী রহম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার মাতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন : আমি সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফ-এর সময় উনার নিকটে উপস্থিত ছিলাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বয়স মুবারক তখন ছিলো পাঁচ বছর (কিন্তু মশহূর বর্ণনা মতে ৬ বছর)। তিনি উনার মায়ের মাথা মুবারকের পাশেই বসা ছিলেন। আর এমতাবস্থায় উনার মা সাইয়্যিদুনা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরানী চেহারা মুবারকের দিকে তাকিয়ে না’ত শরীফ পাঠ করছিলেন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুবারক না’ত শরীফখানা হলো-

۱. بارك فيك الله من غلام
يا ابن الذى من حومة الحمام
۲. نجا بعون الملك المنعام
فودى غداة الضرب بالسهام
۳. بمائة من ابل سوام
ان صح ما ابصرت فى المنام
۴. فانت مبعوث الى الانام
من عند ذى الجلال والاكرام
۵. تبعث فى الحل و فى الحرام
تبعث با لتحقيق والاسلام
۶. دين ابيك البر ابراهام
فالله انهاك عن الاصنام
۷. ان لا تواليها مع الاقوام
ان لا تواليها مع الاقوام
۸. كل حى ميت  وكل جديد بال
وكل كبير يفنى  وانا ميتة وذكرى باق
۹. وقد تركت خيرا  وولدت طهرا
وقد تركت خيرا  وولدت طهرا

১. হে আমার যোগ্য পুত্র, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে বরকতময় করে সৃষ্টি করেছেন। হে আমার যোগ্য পুত্র আমার বিদায়ের সময় আমি তা বলে যাচ্ছি।
শাব্দিক অর্থঃ الله - আল্লাহ পাক, بارك - বরকতময় করেছেন, غلام - আমার পুত্র, حومة - ইন্তিকালের সময়, বিদায়ের মুহূর্ত, মউতকালীন অবস্থা, الحمام - আমার ইন্তিকাল বা বিদায়।
২. নিয়ামতের মালিক বা অনুগ্রহকারী আল্লাহ পাক তিনি উনার অনুগ্রহে লটারীর সময় উটের বিনিময়ে আমার জীবন সঙ্গী (অর্থাৎ আপনার পিতা) বেঁচে যান।
শাব্দিক অর্থঃ
 نجا  নাজাত পেয়েছেন, বেঁচে গিয়েছেন, عون  অনুগ্রহ, দয়া, রহমত, সাহায্য, الملك  সবকিছুর অধিপতি মহান  আল্লাহ পাক, মালিক, المنعام  নিয়ামতের মালিক, নিয়ামত দানকারী, অনুগ্রহকারী فودى  আমার জীবন সঙ্গী বা স্বামী, দিক, পক্ষ, দল, বাহিনী غداة  সময়, সকাল, ভোর الضرب  লটারী, ভাগ্য, প্রহার, উদাহরণ (এ শব্দটি অবস্থার চাহিদানুযায়ী অনেক অর্থ প্রদান করে) السهام  উট।
৩. একশত তরুতাজা উটের বিনিময়ে (আপনার পিতা) বেঁচে যান। আর আমি যা স্বপ্নে দেখেছি নিশ্চয়ই তা সত্য। তা হলো-
শাব্দিক অর্থঃ مائة  একশত, ১০০, ১শ’ ابل  উট سوام  তরুতাজা, হৃষ্টপুষ্ট, সুস্থ্য, রোগহীন ان নিশ্চয়ই, অবশ্যই صح  সত্য, মিথ্যা নয় ما  যা, যা কিছু ابصرت  আমি দেখেছি فى  মধ্যে, ভিতরে المنام  স্বপ্নে, ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে।
৪. আপনি সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রূপে প্রেরিত হয়েছেন। মহা সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকেই প্রেরিত হয়েছেন।
শাব্দিক অর্থঃ انت - আপনি, مبعوث - নবী ও রসূল রূপে প্রেরীত, الانام - সৃষ্টিজগত, মানবজাতি ও জিন জাতি, عند - পক্ষ থেকে ذى - অধিকারী, الجلال والاكرام - মহিমা, মহত্ত্ব, বড়ত্ব, মর্যাদা, সম্মান।
৫. আপনাকে নবী ও রসূলরূপে পাঠানো হয়েছে মদীনা শরীফ, মক্কা শরীফ ও সারা দুনিয়াবাসীদের মধ্যে। আপনাকে নবী ও রসূল রূপে পাঠানো হয়েছে হক্ব এবং দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
শাব্দিক অর্থঃ تبعث - আপনাকে নবী-রসূল ও রহমত স্বরূপ পাঠানো হয়েছে, الحل - মক্কা শরীফ-এর এক বিশেষ স্থান  الحرام - মদীনা শরীফ ও মক্কা শরীফ, التحقيق - হক্ব, সত্য দ্বীনالاسلام - দ্বীন ইসলাম, শরীয়ত।
৬. আপনি আপনার পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার সত্য দ্বীন নিয়ে এসেছেন (যা মূলত আপনার থেকেই উনাকে দান করা হয়েছিলো)। আর মহান আল্লাহ পাক আপনার সম্মান-মর্যাদার কারণেই আপনার উম্মতদেরকে মূর্তিপূজা থেকে রক্ষা করবেন।
শাব্দিক অর্থঃ دين - দ্বীন ইসলাম। ابيك - আপনার পিতা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম। البر - সত্য, ন্যায়, সঠিক। ابراهام - হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম। انهاك - আপনার দ্বারা ধ্বংস করবেন, নিশ্চিহ্ন করবেন। اصنام - মূর্তিসমূহ, মূর্তিপূজা, প্রাণীর ছবি, ভাস্কর্য।
৭. যেনো মূর্তি-ভাস্কর্যের অনুশীলন সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা যমীনে কেউ না করে। যদিও মুশরিক সম্প্রদায় পূর্ব থেকে তার অনুশীলন করে আসছে।
শাব্দিক অর্থ: ان لا توالى- যেনো অনুশীলন না করে, যেনো সমর্থন না করে, যেনো পৃষ্ঠপোষকতা না করে। ها-উহার অর্থাৎ মূর্তি ও ভাস্কর্যের। مع- যদিও, সত্ত্বেও, সঙ্গে, সাথে, সহিত, সহকারে, সহযোগে। الاقوام- সম্প্রদায়, জাতি, দল, গোত্র (এখানে মুশরিক সম্প্রদায় উদ্দেশ্য)।
৮. প্রতিটি প্রাণীর একদিন মউত হবে। তেমনি প্রতিটি নতুন বস্তু পুরাতন হবে।
প্রত্যেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা একদিন ইন্তিকাল করবেন। আর আমিও বিদায় গ্রহণ করে চলে যাচ্ছি। কিন্তু আমার প্রশংসনীয় আলোচনা অনন্তকাল ধরে অবশিষ্ট থাকবে।
শাব্দিক অর্থঃ كل - প্রত্যেক, সকল, সব, সমস্ত। حى - প্রাণী, জীবনধারী। ميت - মউত, বিছাল, বিদায়, ইন্তিকাল, পূর্ণতা, মৃত্যু। جديد - নতুন, নব, নবীন, কচি। بال - পুরাতন, ফ্যাকাশে, ধ্বংস।
كل - প্রত্যেক, كبير  - বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, বড়, বয়সি, শায়খ। يفنى - ধ্বংস হবে, ফানা হবে। انا - আমি। ميتة - বিদায়, বিছাল, ওফাত, ইন্তিকাল। ذكرى - আমার আলোচনা, আমার স্বরণ। باق - অবশিষ্ট, চলমান, অব্যাহত।
৯. কারণ আমি মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বশ্রেষ্ঠ হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে রেখে যাচ্ছি। আমি আপনাকে পূতঃপবিত্র হিসেবে আগমন করতে সাহায্য করেছি।
শাব্দিক অর্থঃ تركت - আমি রেখে গেলাম। خيرا - কল্যাণময়, বরকতপূর্ণ, রহমতময়। ولدت - আমি আগমনে সাহায্য করেছি। طهرا - পাক-পবিত্র, পুতঃ পবিত্র, পবিত্রম।
বর্ণনাকারী বলেন, যখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করলেন, তখন আমরা মুসলমান জিনদের ক্রন্দন বা আর্তনাদ শুনতে পেলাম। তাই আমরা উনাদের থেকেও না’ত শরীফ মুখস্ত করে নিলাম।
মুসলমান জিনদের পঠিত না’ত শরীফ হলো-
۱. نبكى الفتاة البرة اللامينة
ذات الجمال العفة الرزينة
۲. زوجة عبد الله والقرينة
ام نبى الله ذى السكينة
۳. وصاحب المنبر بالمدينة
صارت لدى حفرتها رهينة
১. আমরা নেককার সৎকর্মপরায়না সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনাহ আলাইহাস সালাম উনার জন্য ক্রন্দন করছি। যিনি সৌন্দর্যের অধিকারিণী পবিত্রা ও জ্ঞানী!
শাব্দিক অর্থঃ نبكى  আমরা ক্রন্দন করছি الفتاة  মধ্যবয়স্কা, যুবতী البرة সৎকর্মপরায়না, সতী-সাধ্বী, পুণ্যময়ী الامينة  সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা উনার নাম মুবারক, বিশ্বাসী, মুত্তাক্বী, আমনতদারিণী, শান্তিময়ী ذات  অধিকারীনী الجمال  সৌন্দর্য্য, সুন্দর العفة  পবিত্রা, নির্দোষ, সংযমী, চারিত্রিকভাবে নিষ্কলুষ الرزينة  জ্ঞানী, বিচক্ষণ, মেধাবী, গম্ভীর, চিন্তাশীল।
২. যিনি হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়া ও জীবন সঙ্গিনী। প্রশান্তির অধিকারী মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা।
শাব্দিক অর্থঃ زوجة  আহলিয়াহ, যাওজাহ, স্ত্রী।
 عبد الله  সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা উনার নাম মুবারক, মহানআল্লাহ পাক উনার প্রিয় আব্দ القرينة  সঙ্গীনি, সাথী, স্ত্রী ام  মাতা, মা, আম্মা ذى  মালিক, অধিকারী  السكينة প্রশান্তি, শান্তি, দয়া, মায়া, অনুগ্রহ, রহমত।
৩. এমন নবীজি যিনি মদীনা শরীফ-এর মিম্বরের অধিপতি। উনার মাতা এখন উনার নির্জন রওজা শরীফ-এ যাওয়ার নিকটে উপনীত।
শাব্দিক অর্থঃ    - صاحبঅধিকারী, মালিক, অধিপতি - المنبر খুতবাহ দেয়ার স্থান, নছীহতের স্থান - المدينة      মদীনা শরীফ, পবিত্র শহর, পবিত্র স্থান   - صارت  উপনীত হয়েছেন  - لدى  নিকটে, কাছে, কাছাকাছি  حفرتها - সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনাহ আলাইহাস সালাম উনার রওযা শরীফ, উনার মাজার শরীফ, - رهينة নির্জন, একাকী।
চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়, হযরত আমিনা ত্বাহিরাহ, ত্বাইয়িবাহ আলাইহাস সালাম তিনি নিজের মর্যাদার কারণ ও ওসীলা হিসেবে আপন আওলাদ সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উল্লেখ করলেন। মূলত: সমস্ত নিয়ামত, রহমত, বরকতের উৎস তিনিই। তিনি যে বস্তুকে বা বিষয়কে ছোহবত দিয়েছেন এবং যে জিনিস বা বস্তু উনার ছোহবত অর্জন করেছে সে বিষয় বা বস্তু বরকতময় রহমতপূর্ণ হয়ে গেছে। তেমনিভাবে ১২ রবীউল আউয়াল শরীফ ও সোমবার শরীফ তারিখ ও বার হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছে উনার বরকতী ছোহবতের কারণেই। সুবহানাল্লাহ।
সর্বশ্রেষ্ঠ ক্বাছীদাহ শরীফ থেকে শিক্ষা নিয়ে বিশ্ববাসীকে আক্বীদাহ, আমল ও ইখলাছ অর্জনের জন্য বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, আওলাদুর রসূল, মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা যিল্লুহুল আলী উনার নিকট বাইয়াত হওয়া জরুরী। আল্লাহ পাক প্রত্যেককে কবূল করুন। আমীন।

0 Comments: