হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৫১ -২৭৫) (ছ)

হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৫১ -২৭৫) (ছ)

স্বীয় মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফ
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه بعد ذكر رجوعه عليه الصلاة والسلام الى امه حضرت آمنة عليها السلام بعد رضاعة حضرت حليمة عليها السلام له فكان رسول الله صلى الله عليه وسلم مع امه حضرت آمنة عليها السلام بنت وهب عليه السلام، وجده حضرت عبد المطلب عليه السلام فى كلاءة الله وحفظه، ينبته الله نباتا حسنا لما يريد به من كرامته فلما بلغ ست سنين توفيت امه آمنة عليها السلام بنت وهب عليه السلام.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা দুধমাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাতুস সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার বাড়ি থেকে ফিরে স্বীয় মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট আসেন এবং সম্মানিতা মাতা উনার নিকট অবস্থান করতে থাকেন। অতঃপর উনার দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার হিফাযতে আদর-সোহাগে বসবাস করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বত্তোমভাবে লালন-পালন করতে থাকেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক বয়স মুবারক যখন ৬ বছরে উপনীত হলো তখন উনার সম্মানিতা মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৭৭৯ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার হিফাযতে অবস্থান করতে থাকেন। তবে পরবর্তীতে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রওযা শরীফ যিয়ারত করেছেন। প্রতিবারে তিনি সম্মানিতা মাতা উনার মুহব্বতে অনেক কাঁদতেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে,
وروى حضرت مسلم رحمة الله عليه عن حضرت ابى بكر بن ابى شيبة رحمة الله عليه عن حضرت محمد بن عبيد رحمة الله عليه عن حضرت يزيد بن كيسان رحمة الله عليه عن حضرت ابى حازم رحمة الله عليه عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال زار النبى صلى الله عليه وسلم قبر امه فبكى وابكى من حوله ثم قال: استأذنت ربى فى زيارة قبر امى فأذن لى واستأذنته فى الاستغفار لها فلم يأذن لى، فزوروا القبور تذكركم الموت.
অর্থ: হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আবু বকর ইবনে আবু শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত মুহম্মদ ইবনে উবাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত ইয়াযীদ ইবনে কীসান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত আবু হাযিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রওজা শরীফ যিয়ারত করেন। তিনি নিজে অনেক কান্নাকাটি করেন এবং আশেপাশের সমস্ত লোকজন তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কাঁদান। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি আমার রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আমার মাতা উনার রওজা শরীফ যিয়ারত-এর অনুমতি চাই, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে যিয়ারতের অনুমতি দেন।
কিন্তু আমার সম্মানিত মাতা উনার জন্য ইস্তেগফার করার অনুমতি চাইলে আমার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে তা অনুমতি দেননি। অর্থাৎ উনার জন্যই ইস্তিগফার করার প্রয়োজন নেই। কারণ, তিনি পূর্ব থেকেই মকবুল ও মাহফুজ। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর (মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন) তোমরা সকলেই কবর যিয়ারত করবে কেননা কবর যিয়ারত তোমাদেরকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিবে। সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ২৮০ পৃষ্ঠা)
স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফ-এ গোটা কায়িনাতবাসী শোকাহত হয়েছিলো। জ্বিন-ইনসান তথা সমস্ত মাখলুক কেঁদেছে। সুবহানাল্লাহ! বিছাল শরীফ-এর পর তিনি স্বীয় রব মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক দিদারে চলে যান তবে যমীন মাঝে রেখে গেলেন কায়িনাতবাসীর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ হাদিয়া, সমস্ত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসুল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সবচেয়ে প্রিয় হাবীব, পুতঃপবিত্র সন্তান নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে। সুবহানাল্লাহ! আর সেই সম্মানিতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত মা আমিনা আলাইহাস সালাম উনার প্রতি পরিশেষে জানাই বেশুমার ছলাত ও সালাম।
الصلوة السلام عليك يا سيدتنا حضرت امنة عليها السلام وعلى اهل بيتها الكريم والعظيم

নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার খিদমত করাকালীন ঘটনা
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর উনার খাদিমা হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি খুবই আদব ও যত্নের সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দ্রুত মক্কা শরীফ-এ পৌঁছান এবং উনার দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার নিকট সোপর্দ করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি সমস্ত ঘটনা শুনে অনেক কাঁদলেন এবং দুঃখ প্রকাশ করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুকে তুলে নিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিনি সব সময় সঙ্গে রাখতেন। উঠা-বসা, চলা-ফিরা, খাওয়া-দাওয়া অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা তিনি উনার দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে অবস্থান করতে লাগলেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,
اخرج حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه، و حضرت البيهقى رحمة الله عليه، و حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه من طريقه قال حدثنى حضرت العباس بن عبد الله ابن معبد رحمة الله عليه، عن بعض اهله قال كان يوضع لعبد المطلب عليه السلام فراش فى ظل الكعبة، وكان لا يجلس عليه احد من بنيه اجلالا له، وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم يأتى حتى يجلس عليه، فيذهب اعمامه يؤخرونه، فيقول جده دعوا ابنى فيمسح على ظهره، ويقول ان لا بنى هذا لشأنا، فتوفى حضرت عبد المطلب عليه السلام، والنبى صلى الله عليه وسلم ابن ثمان سنين واوصى به ابا طالب.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মা’বাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি উনার আহাল বা পরিবারের একজন থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার জন্য পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ছায়া মুবারকে ফরাশ বিছানো হতো যার উপর তিনি বসতেন। তিনি ছাড়া কেউ এর উপর বসতো না। এমনকি উনার পুত্রগণও উনার সম্মানের খাতিরে তাতে বসতেন না। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই আসন মুবারকে বসতেন। চাচাদের মধ্যে কেউ উনাকে সেই আসন মুবারক-এ বসতে নিষেধ করলে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বলতেন, আমার পৌত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমার ফরাশে বসতে নিষেধ করোনা। এরপর সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিঠ মুবারক-এ হাত বুলাতেন এবং বলতেন, আমার এই সম্মানিত সন্তানের অনেক সুমহান শান-মান প্রকাশ পাবে। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি যখন বিছাল শরীফ লাভ করলেন, তখন উনার বয়স মুবারক ছিলো আট বছর। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে স্বীয় ছেলে আবূ ত্বলিবকে ওয়াছীয়ত করে যান উনার খিদমত করার ব্যাপারে। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৩৮ পৃষ্ঠা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,
واخرج حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه من طريق حضرت عطاء رحمة الله عليه، عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه مثله، وزاد دعوا ابنى يجلس عليه، فانه يحس من نفسه بشىء، وارجو انه يبلغه من الشرف ما لم يبلغ عربى قبله ولا بعده.
অর্থ: হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে এমনিভাবে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি নি¤œাক্ত বাক্যগুলো সংযোজন করে রিওয়ায়েত করেছেন, “আমার পৌত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ ফরাশে (বিছানায়) বসতে দাও। আর তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুউচ্চ সম্মান-মর্যাদা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ছিলেন। আমি আশা করি তথা আমি জানি, আমার আদরের দুলাল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এমন ফযীলত, সম্মান-ইজ্জত ও গৌরব প্রকাশ পাবে যা আরবগণ উনাদের পূর্বে ও পরে এরকম সম্মান-মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি, পারবেও না। সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৩৮ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
واخرج حضرت ابن سعد رحمة الله عليه، و حضرت ابن عساكر رحمة الله عليه، عن حضرت الزهرى رحمة الله عليه، ومجاهد وحضرت نافع بن جبير رحمة الله عليه قالوا كان النبى صلى الله عليه وسلم يجلس على فراش جده، فيذهب اعمامه ليؤخروه فيقول حضرت عبد المطلب عليه السلام: دعوا ابنى انه ليؤنس ملكا وقال قوم من بنى مدلج لعبد المطلب عليه السلام: احتفظ به، فانا لم نر قدما اشبه بالقدم التى فى المقام منه، وقال حضرت عبد المطلب عليه السلام لأم ايمن رضى الله تعالى عنها يا بركة لا تغفلى عنه، فان اهل الكتاب يزعمون ان ابنى نبى هذه الامة.
অর্থ: হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত যুহরী, মুজাহিদ ও না’ফে ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের থেকে বর্ণনা করেন। উনারা বলেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার বিছানা মুবারক-এ বসে যেতেন। উনার চাচারা উনাকে সরাতে চাইলে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বলতেন, আমার প্রিয় সন্তান তথা পৌত্র উনাকে আমার বিছানায় থাকতে দাও। কারণ উনার সম্মান-ইজ্জত অনেক অনেক এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের থেকেও আমার পৌত্র হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা অনেক অনেক বেশি। সুবহানাল্লাহ! বনী মুদাল্লাজ-এর কিছু লোকজন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে বললো, এই সম্মানিত সন্তান উনার হিফাযত করবেন। কেননা উনার ক্বদম মুবারক-এর মতো আমরা কারও ক্বদম দেখিনি। যে ক্বদম মুবারক-এর সাদৃশ্য, ক্বদম মুবারক-এর ছাপ মাক্বামে ইবরাহীম-এ রয়েছে। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে উদ্দেশ্য করে বলতেন, হে বারাকাহ! আপনি কখনো আমার পৌত্র হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতের ব্যাপারে গাফিল থাকবেন না। কেননা আহলে কিতাবীদের ধারণা নিশ্চয়ই আমার এই সন্তান তথা আমার পৌত্র তিনি এই উম্মতের নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৩৮ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
واخرج حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه من طريق حضرت الواقدى رحمة الله عليه، عن شيوخه قالوا بينا حضرت عبد المطلب عليه السلام يوما فى الحجر وعنده اسقف نجران، وكان صديقا له وهو يحادثه ويقول انا نجد صفة نبى بقى من ولد حضرت اسماعيل عليه السلام. هذا البلد مولده من صفته كذا وكذا، واتى رسول الله صلى الله عليه وسلم فنظر اليه الاسقف والى عينيه، والى ظهره، والى قدميه، فقال هو هذا اما هذا منك؟ قال ابنى قال الاسقف لا ما نجد اباه حيا قال هو ابن ابنى وقد مات ابوه وامه حبلى به. قال صدقت قال حضرت عبد المطلب عليه السلام لبنيه تحفظوا بابن اخيكم الا تسمعون ما يقال فيه.
অর্থ: হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে এবং তিনি স্বীয় উস্তাদগণ উনাদের থেকে বর্ণনা করেন যে, উনারা বলেছেন, একবার সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি হাজরে আসওয়াদ-এর নিকট অবস্থান করছিলেন। উনার সঙ্গে ছিলো নজরানের এক পাদ্রী উনার বন্ধু ছিলো, সেই পাদ্রীর সঙ্গে তিনি আলাপ-আলোচনা করছিলেন। এক পর্যায়ে সেই পাদ্রী বললো, সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনার বংশ মুবারকের মধ্যে যে নবী অবশিষ্ট আছেন, আমরা উনার ছীফত ও গুণাবলী সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। এই শহর তথা মক্কা শরীফ উনার বিলাদত শরীফ-এর স্থান এবং উনার এই ছীফত বা গুণ মুবারক। একটু পরেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই স্থানে তাশরিফ নিলেন। ওই পাদ্রী উনাকে দেখলো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চক্ষু মুবারক, পৃষ্ঠ মুবারক এবং ক্বদম মুবারক দেখে পাদ্রী বললো, ইনি সেই নবী, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। পাদ্রী বললো, এই সন্তান আপনার কি হন? সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমার সম্মানিত পুত্র। পাদ্রী বললো, না উনার পিতা তিনি জীবিত নেই। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইনি হচ্ছেন আমার পৌত্র। তিনি যখন উনার সম্মানিতা মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহিস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ ছিলেন তখন উনার পিতা তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন। পাদ্রী এবার বললো, আপনি সত্যিই বলেছেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি উনার স্বীয় পুত্রদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের ভ্রাতুস্পুত্র উনাকে সদা-সর্বদা হিফাযত করবে উনার খিদমতের আঞ্জাম দিবে। এখন তোমরা শুনছোতো উনার সম্পর্কে কি বলা হচ্ছে। সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৩৮ ও ১৩৯ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে,
وأخرج حضرت البيهقي رحمة الله عليه وحضرت أبو نعيم رحمة الله عليه وحضرت ابن عساكر رحمة الله عليه من طريق حضرت عفير بن زرعة بن سيف بن ذي يزن رحمة الله عليه، عن أبيه قال : لما ظهر سيف بن ذى يزن على الحبشة، وذلك بعد مولد النبى صلى الله عليه وسلم بسنتين أتاه وفود العرب لتهنيه، وأتاه وفد قريش منهم حضرت عبد المطلب عليه السلام، فقال له سيف : يا حضرت عبد المطلب عليه السلام إنى مفض إليك من سر علمي أمرا لو غيرك يكون لم أبح له به، ولكنى رأيتك معدنه فأطلعتك طلعه، فليكن عندك مخبيا حتى يأذن الله فيه، إنى اجد في الكتاب المكنون، والعلم المخزون، الذى أدخرناه لأنفسنا. واحتجبناه دون غيرنا، خيرا عظيما، وخطرا جسيما، فيه شرف الحياة، وفضيلة الوفاة، للناس عامة، ولرهطك كافة، ولك خاصة،
অর্থ: হযরত বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত আফীর ইবনে যারয়াহ ইবনে সায়িফ ইবনে যু ইয়াযিন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর দু’বছর পর সায়িফ ইবনে যু ইয়াযিন তিনি আবিসিনিয়া জয় করেন, তাকে মুবারকবাদ জানানোর জন্য কুরাইশদের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে আগমন করেন। তাদের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনিও ছিলেন। সায়িফ বললেন, হে আমাদের সাইয়্যিদ হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম! আমি আমার জ্ঞান থেকে আপনাকে একটি গোপন কথা বলছি, যা আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বলতাম না। আমার বিশ্বাস আপনি এই গোপন কথার যথার্থ আমানতদার প্রমাণিত হবেন, যা আমি আপনাকে বলবো। দয়া করে আপনি একথাটি সদাসর্বদা গোপন রাখবেন মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ আশা পর্যন্ত। বাদশাহ সায়িফ বললেন, আমাদের নিকট যে আসমানী কিতাব রয়েছে তাতে পেয়েছি এক সুমহান সংরক্ষিত ইলম ভান্ডার। তা হচ্ছে, এক সুমহান কল্যাণ আমাদের মাঝে আগমন করবেন যিনি আমাদেরকেসহ সমস্ত মাখলুকাতকে উনার রহম দ্বারা আচ্ছাদিত করবেন। যিনি হচ্ছেন খইরে আযীম তথা খইরে কাছীর সমস্ত ভালাইয়ের ভালাই। সুবহানাল্লাহ! উনার শরীর মুবারক হচ্ছে কোমল বা খুবই সুন্দর। আর উনার হায়াত মুবারক হচ্ছে সর্বোত্তম এবং উনার ওফাত বা বিছাল শরীফ হচ্ছে সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ। আর তিনি সমস্ত মানুষের জন্য। সমস্ত দল তথা সারা কায়িনাতবাসীর জন্য তিনি প্রেরিত। যা শুধুমাত্র উনার জন্য খাছ।
فقال حضرت عبد المطلب عليه السلام ما هو؟ قال، إذا ولد بتهامة، غلام بين كتفيه شامة، كانت له الإمامة، ولكم به الزعامة، إلى يوم القيامة، ثم قال هذا حينه الذى يولد فيه أو قد ولد إسمه حضرت محمد صلى الله عليه وسلم يموت ابوه وامه، ويكفله جده وعمه، وقد ولدناه مرارا، والله باعثه جهارا، وجاعل له منا أنصارا، يعزبهم أولياءه، ويذل بهم اعداءه، ويصرف بهم الناس عن عرض، ويستفتح بهم كرائم أهل الأرض، يعبد الرحمن، ويدحر الشيطان، ويحمد النيران، ويكسر الأوثان، قوله فصل، وحكمه عدل، يأمر بالمعروف ويفعله، وينهى عن المنكر ويبطله، والبيت ذى الحجب، والعلامات على النقب، انك جده يا حضرت عبد المطلب عليه السلام غير كذب، فهل أحسست بشئ مما ذكرت لك؟ قال نعم-
ইহা শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তা কী? যু-ইয়াযিন বললেন, পবিত্র মক্কা শরীফ-এর যমীনে তথা এই ভূখ-ে একজন সুমহান সন্তান আগমন করবেন, উনার উভয় কাঁধ মুবারক-এর মাঝখানে একখানা মহরে নুবুওওয়াত থাকবে। আর তিনিই সৃষ্টির শুরু থেকে সকলের ইমাম ও সাইয়্যিদ এবং তিনি সমস্ত কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বের অধিকারী ক্বিয়ামত তথা আবাদুল আবাদ পর্যন্ত। অতঃপর তিনি বললেন, এটা হচ্ছে উনার বিলাদত শরীফ-এর সময় অথবা উনার বিলাদত শরীফ হয়ে গেছে। আর উনার নাম মুবারক হবে হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার সম্মানিত পিতা তিনি উনার বিলাদত শরীফ-এর পূর্বেই বিছাল শরীফ লাভ করবেন এবং উনার সম্মানিতা মাতা তিনিও উনাকে অল্প বয়স মুবারক-এ যমীনে রেখে বিদায় গ্রহণ করবেন। আর উনার সম্মানিত পিতামহ (দাদা) সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম ও উনার চাচা আবূ ত্বলিব উনারা উভয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লালন-পালন বা খিদমতের আঞ্জাম দিবেন।
অতঃপর তিনি আরো বললেন, নিশ্চয়ই সেই সম্মানিত নবী ও রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইতোঃপূর্বে আমাদের মাঝে বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! অতিসত্বর তিনি নিজেকে প্রকাশ করবেন। আর তিনি  আমাদের করবেন উনার খাদিম বা ছাহাবী। উনার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার উসীলায় সম্মান, ইজ্জত লাভ করবেন এবং উনার শত্রুরা লাঞ্চিত হবে। আর উনার ছাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিয়ে তিনি গোটা জাহানে বিজয়ের পতাকা উড্ডীয়ন করবেন। তিনি দয়ালু আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী করবেন এবং শয়তানকে লাঞ্ছিত, পদদলিত করবেন।
অগ্নি উপসনাকে মূলোৎপাটন করবেন এবং মূর্তিসমূহকে ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন করবেন ও ধ্বংস করবেন। উনার কথা মুবারক চুড়ান্ত ফায়ছালাকারী এবং উনার নির্দেশ ন্যায়ভিত্তিক হবে। তিনি নেক কাজের আদেশ-নির্দেশ করবেন এবং নিজে তা পরিপূর্ণভাবে করবেন। মন্দ তথা সমস্ত খারাবি বা পাপ থেকে উম্মাহকে নিষেধ করবেন এবং তা খতম করবেন। পর্দা বিশিষ্ট ঘরের কসম! আপনার নূরানী চেহারা মুবারক দেখে বলা যাচ্ছে, আপনি নিঃসন্দেহে উনার সম্মানিত পিতামহ বা দাদা। হে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম! এটা মিথ্যা নয়। আপনি কী কোনো কিছু মনে করছেন এ সম্পর্কে যা আমি আপনার খিদমতে পেশ করলাম? সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হ্যাঁ। হে বাদশাহ! আপনি সত্যি কথাই বলেছেন।
أيما الملك إنه كان لى ابن وكنت به معجبا وعليه رفيقا وإنى زوجته كريمة من كرائم قومى حضرت امنة بنت وهب عليها السلام، فجاءت بغلام فسميته حضرت محمدا صلى الله عليه وسلم مات أبوه وأمه، وكفلته أنا وعمه، فقال له سيف إن الذى قلت لك كما قلت فاحفظه واحذر عليه اليهود فإنهم له اعداء، ولن يحبعل الله لهم عليه سبيلا، ولولا أنى أعلم ان الموت مجتاحى قبل مبعثه لسرت بخيلى ورجلى حتى أصيريشرب دار ملكى، فإنى اجد فى الكتاب الناطق والعلم السابق ان بيشرب استحكام امره وأهل نصره وموضع قبره.
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তাহলে শুনুন, আমার একজন ছেলে সন্তান ছিলেন। যিনি ছিলেন অনেক অনেক মর্যাদাবান ও সম্মানিত। যিনি ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার রফীক বা হাবীব। যিনি হচ্ছেন যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং উনার আহলিয়া তথা ছাহিবা তিনিও ছিলেন খুবই সম্মানিতা এবং উনার ক্বাওম বা সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক অনেক মর্যাদার অধিকারী। যিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা বিনতে ওয়াহহাব আলাইহাস সালাম। উনার রেহেম শরীফ থেকে একজন সুমহান সন্তান বিলাদত শরীফ লাভ করেন যার নাম মুবারক আমি রেখেছি ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনারা উভয়ে ইতঃপূর্বে বিছাল শরীফ লাভ করেছেন এবং উনার চাচাসহ আমরা উনার লালন-পালন বা খিদমত করি। এটা শুনে সায়িফ সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমিতো তাই বলেছি। আপনি উনার হিফাযত তথা উনার যথাযথ খিদমত করবেন এবং ইহুদীদের কুদৃষ্টি থেকে উনাকে হিফাযতে রাখবেন। কারণ ইহুদীরা উনার সবচেয়ে বড় শত্রু। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি ইহুদী তথা উনার শত্রুদের কখনও সফলতা দিবেন না। যদি আমি না জানতাম যে, উনার প্রকাশের পূর্বে আমার ইন্তিকাল আমাকে খতম করে দিবে তবে আমি আমার পদাতিক ও অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে মদীনা শরীফ-এ পৌঁছে যেতাম। সেখানে হিজরত করে উনার খিদমত করতাম। আর তিনি সারা বিশ্বে ইসলামের পতাকা উড্ডয়ন করবেন। উনার ছাহাবীগণ উনার খিদমতে নিজেকে ফানা করে দিবেন এবং সেই মদীনা শরীফ-এই তিনি বিছাল শরীফ লাভ করবেন। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৩৯ ও ১৪০ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
اخرج حضرت البخارى رحمة الله عليه فى تاريخه، و حضرت ابن سعد رحمة الله عليه، و حضرت أبو يعلى رحمة الله عليه، و حضرت الطبرانى رحمة الله عليه، و حضرت ابن عدى رحمة الله عليه، و حضرت الحاكم رحمة الله عليه وصححه، و حضرت البيهقى رحمة الله عليه، و حضرت أبو نعيم رحمة الله عليه، و حضرت ابن مندة رحمة الله عليه من طريق حضرت كندير بن سعيد رحمة الله عليه عن أبيه قال حججت فى الجاهلية فرأيت رجلا يطوف بالبيت وهو يقول-
* رد إلى راكبى محمدا صلى الله عليه وسلم +
يارب رده واصطنع عندى يدا-
قلت من هذا؟ قالوا هذا حضرت عبد المطلب عليه السلام بعث بابن له فى طلب إبل له ولم يبعثه فى حاجة قط إلا انجح فيها، وقد أبطأ عليه، فلم يلبث حتى جاء النبى صلى الله عليه وسلم والإبل.

অর্থ: হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় তারিখ বা ইতিহাস গ্রন্থে হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ ইয়ালা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইবনে মানদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের থেকে বর্ণনা করেন, উনারা হযরত কুযাইর ইবনে সায়ীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি একবার ‘জাহিলিয়াতের যুগে মক্কা শরীফ-এ হজ্জ করতে গেলাম। আমি এক ব্যাক্তিকে দেখতে লাগলাম যে, তিনি বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফরত অবস্থায় বলছেন, হে আমার আদরের দুলাল মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি দয়া করে আমার উটটি এনে দিন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মুনাজাত করলেন, “হে বারে ইলাহী! আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ফিরিয়ে আনুন এবং আমার ওপর রহম করুন।”
আমি জিজ্ঞাসা করলাম লোকটি কে? লোকজন বললেন, ইনি হচ্ছেন আমাদের সাইয়্যিদ হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম। তিনি আপন পৌত্র উনাকে হারিয়ে যাওয়া উটের খোঁজে প্রেরণ করেছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় পৌত্র উনাকে যে কাজেই পাঠান, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরিপূর্ণভাবে তাতে কামিয়াব হয়ে ফিরে আসতেন। সুবহানাল্লাহ!
একটু পরেই দেখা গেলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উট নিয়ে ফিরে আসলেন। সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৩৮ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার কোনো সময় যদি উট বা অন্য কিছু হারিয়ে যেতো তাহলে উনার ছেলে-সন্তান উনাদের বলে পাঠাতেন তা খোঁজার জন্য। কিন্তু যখন উনার সন্তানগণ তা খুঁজে পেতেন না পরিশেষে উনার চোখের মণি, কলিজার টুকরা, আদরের দুলাল প্রিয় পৌত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সেই উট বা অন্য কিছু খোঁজার জন্য পাঠাতেন। কিন্তু তিনি সামান্য সময়ের মধ্যে তা ফিরিয়ে নিয়ে আসতেন। সুবহানাল্লাহ! যা ছিলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনন্য মু’জিযা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার ছানা-ছিফত বেমেছাল। কারণ তিনি হচ্ছেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতামহ তথা দাদাজান। সুবহানাল্লাহ! আর উনার বেমেছাল শান ও মর্যাদা অবলোকন করে মক্কাবাসীগণ উনাকে একবাক্যে সম্বোধন করতেন ‘শাবিয়াতুল হামদ’। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
اخرج حضرت ابن سعد رحمة الله عليه، وحضرت ابن ابى الدنيا رحمة الله عليه، و حضرت البيهقى رحمة الله عليه، و حضرت الطبرانى رحمة الله عليه، و حضرت أبو نعيم رحمة الله عليه، و حضرت ابن عساكر رحمة الله عليه من طرق، عن حضرت مخرمة بن نوفل رحمة الله عليه، عن حضرت امه رقيقة بنت صيفى رضى الله تعالى عنها، وكانت لدة حضرت عبد المطلب عليه السلام قالت تتابعت على قريش سنون جدبة أقحلت الجلد وأدقت العظم، فبينا أنا نائمة أو مهومة إذا هاتف يصرخ بصوت صحل يقول يا معشر قريش إن هذا النبى صلى الله عليه وسلم المبعوث منكم قد أظلكم ايامه، وهذا أبان مخرجه فحى هلا بالحياء والخصب، ألا فانظروا رجلا منكم وسيطا عظاما جسام أبيض بضا أوطف الأهداب، سهل الخدين، أشم العرنين له فخر يكظم عليه، وسنة يهدى اليه فليخلص هو وولده وولد ولده، وليهبط اليه من كل بطن رجل، فليشنوا من الماء وليمسوا من الطيب، ثم ليستلموا الركن وليطوفوا بالبيت سبعا، ثم ليرتقوا أبا قبيس فليستسق الرجل،
অর্থ: হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে আবুদ দুনিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ত্বিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত মাখরামা ইবনে নাওফিল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে; তিনি উনার মাতা হযরত রুকাইয়া বিনতে ছীফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (যিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার জমজ ভাগিনী) উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, কুরাইশগণ উনারা অনেক বছর ধরে অনাবৃষ্টিতে অবস্থান করছিলেন। ফলে সাময়িক দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে ‘মানুষ জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে পড়েন এবং অনেকেরই শরীর শুকিয়ে যায়। একদিন আমি নিদ্রিত অবস্থায় উচ্চস্বরে একটি গায়েবী আওয়াজ শুনতে পেলাম। বলা হচ্ছে, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! যে নবী হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাদের মাঝে তাশরীফ আনবেন তিনি ইতোপূর্বেই যমীনে আগমন করেছেন। অতিসত্বর তিনি নিজেকে প্রকাশ করবেন।
কাজেই, আপনারা জীবন ও সজীবতা বা সত্যের দিকে এগিয়ে আসুন এবং নিজেদের মধ্যে এমন একজন সুমহান ব্যক্তি তালাশ করুন যিনি সবচেয়ে মর্যাদাশীল, শানদার বংশের অধিকারী, যিনি সর্বোচ্চ মর্যাদাবান। উনার জিসিম মুবারক-এর ত্বক খুবই কোমল ও শুভ্র বর্ণ, উনার পলক খুবই ঘন, উনার গাল মুবারক সমতল, খুবই সুন্দর নাক মুবারক বিশিষ্ট, যিনি নিজের বেমেছাল মর্যাদাকে গোপন রাখেন। সুবহানাল্লাহ!
তিনি জিন-ইনসানকে সর্বশ্রেষ্ঠ সর্বোত্তম আদর্শের দিকে আহ্বান করবেন। তিনি উনার সন্তান ও সম্মানিত পৌত্র এবং প্রত্যেক গোত্র থেকে বাছাই করে সকলকে সমবেত করে নিজেদের উপর পানি ঢেলে উত্তমভাবে পাক-পবিত্র করে নিবেন। সুগন্ধি মাখবেন, রুকন চুম্বন করবেন এবং বাইতুল্লাহ শরীফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। অতঃপর আবু কুবাইস পাহাড়ে আরোহন করবেন এবং মানুষকে পানি পান করাবেন।
وليؤمن القوم فغثتم ما شئتم إذا قالت فأصبحت مذعورة قد اقشعر جلدى ووله عقلى، واقتصصت رؤياى فقمت فى شعاب مكة فما بقى تها أبطحى إلا قالوا هذا شيبة الحمد وتتامت إليه رجالات قريش، وهبط إليه من كل بطن رجل، فشنوا من الماء ومسوا من الطيب واستلموا وطافوا، ثم ارتقوا أبا قبيس حتى إذا استووا بذروة الجبل قام حضرت عبد المطلب عليه السلام ومعه رسول الله صلى الله عليه وسلم غلام قد أيفع، أو كرب، فقال حضرت عبد المطلب عليه السلام اللهم ساد الخلة، وكاشف الكربة، انت عالم غير معلم، ومسؤول غير مبخل، وهذه عبداؤك وإماؤك بعذرات حرمك يعنى أفنية حرمك يشكون إليك سنتهم، أذهبت الخف والظلف، اللهم فامطرن غيثا مغدقا، ومريعا فما راموا حتى انفجرت السماء بمائها، والط الوادى بشجيجه، فلسمعت شيخان قريش يقولون لعبد المطلب عليه السلام هنيئا يا ابا الطحاء هنيئا.
আর উপরোক্ত ব্যক্তি হবেন স্বীয় কওমের সাইয়্যিদ। এরপর অজ¯্র ধারায় বৃষ্টিপাত হবে। হযরত রুকাইয়া রদ্বিযাল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, এ স্বপ্ন দেখার পর আমি ভীত, বিহ্বল ও কম্পমান হয়ে উঠে বসলাম। আমি আমার স্বপ্ন সকলকে শুনালাম এবং এক একটি গিরিপথে দ-ায়মান হলাম। সকলেই ‘শিবাতুল হামদ’ বলে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে ব্যক্তি আমার সামনে উপস্থিত হলেন। উনারা সকলেই উনাদের পায়ে পানি ঢাললেন, সুগন্ধি মাখলেন, রুকন চুম্বন করলেন এবং বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করলেন। অতঃপর আবূ কুবাইস পাহাড়ে আরোহণ করে পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে গেলেন। এরপর সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করতে লাগলেন, সেখানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও অবস্থান করছিলেন। তিনি তখন আনুষ্ঠানিক কিশোর বয়স মুবারক-এর ছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি দোয়া করলেন। “হে বারে ইলাহী! মহান আল্লাহ পাক আপনি আমাদের ক্ষুধা মিটিয়ে দিন। সমস্ত কষ্ট দূর করে দিন। হে বারে ইলাহী! আপনি সমস্ত কিছুই জানেন, আপনার অজানা কিছুই নেই। আপনার নিকট আমাদের আর্জি হচ্ছে, আপনার এই সমস্ত বান্দা ও বান্দীগণ আপনার হেরেম শরীফ-এ সমবেত হয়েছে আপনার নিকট অনাবৃষ্টি দূর করার জন্য। যে অনাবৃষ্টির ফলে সমস্ত জীব-জন্তু, পশু পাল, গৃহ পর্যন্ত খতম হয়ে গেছে। হে বারে ইলাহী! আপনি বৃষ্টি বর্ষণ করুন।” আমীন।
দেখা গেলো সমবেত সকলই উক্ত স্থান মুবারক থেকে ঘরে ফিরার পূর্বেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গেলো। অধিক বৃষ্টির ফলে নালা, খাল-বিল ভরে গেলো। তখন দু’জন কুরাইশ তথা গোত্রের সমস্ত লোকজন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে মুবারকবাদ জানালেন। সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ, ১৩৬ ও ১৩৭ পৃষ্ঠা)
স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত পিতামহ সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার তত্ত্বাবধানে অবস্থান করেন দু’বছর। বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতামহ উনার বিছাল শরীফ-এর সময় বয়স মুবারক ছিলো ৮২ থেকে ১২০ বছর। উনাকে ‘জহুন’ নামক স্থানে দাফন করা হয়। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার চাচা আবু ত্বালিব উনার তত্ত্বাবধানে সোপর্দ করেন; যেহেতু আবু ত্বালিব ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সহোদর ভাই। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহি সালাম তিনি আবু তালিব উনাকে ওছীয়ত করেন যে, তিনি যেনো উনার ভাতিজা সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যথাযথ খিদমত করেন, উনাকে সবচেয়ে বেশি মুহব্বত করেন ইত্যাদি ইত্যাদি। (সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উয়ূনুল আসার)
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে দাফন করার জন্য কবর মুবারক-এ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। তখন উনার খাদিমা সাইয়্যিদুনা হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি কাঁদতে কাঁদতে উনার পিছনে পিছনে যাচ্ছিলেন। (তাবাকাতে ইবনে সা’দ)
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসলে তিনি একদিন হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে ডেকে বললেন, হে বারাকাত! আমার এই সন্তান উনার যথাযথভাবে খিদমতের আঞ্জাম দিবে। উনার খিদমত করতে বিন্দুমাত্র যেনো ত্রুটি না হয়, ভুল না হয়। কেননা আমি আহলে কিতাবীদের বলতে শুনেছি যে, আমার এই সম্মানিত সন্তান তিনি আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, নূর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত করে যাচ্ছিলেন যা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার আদেশ ও ওছীয়ত মুবারক ছিলো। এজন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মাতা উনার ওছীয়ত অনুযায়ী হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে তিনি মা বলে সম্বোধন করতেন এবং বলতেন আমার মাতা উনার বিছাল শরীফ-এর পর হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি আমার মা।” সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপভাবে হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনিও ওছীয়ত করেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতের ব্যাপারে।
এজন্য পরবর্তীকালে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার সঙ্গে নিজ পালক পুত্র হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকাহ (বিবাহ) দেন। সে ঘরেই হযরত উসামা ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উসামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আপন নাতি তুল্য আদর করতেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় পৌত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যথাযথ খিদমত করেছেন এবং উনাকে সদাসর্বদা নিজ দায়িত্বে বা হিফাযতে রাখতেন যাতে করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কেউ কষ্ট দিতে না পারে উনার কোনো ক্ষতি করতে না পারে। তিনি তা শেষ পর্যন্ত করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

0 Comments: