সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক

পরিচিতি মুবারক:

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার নাম মুবারক হযরত রায়হানা বিনতে শামউন বিন যায়িদ আলাইহাস সালাম। তিনি ইয়াহুদী সম্প্রদায়ভূক্ত ছিলেন। তিনি পিতার দিক থেকে বনু নাদ্বীর গোত্রের এবং আহালের দিক থেকে বনু কুরায়জা গোত্রের মহিলা ছিলেন। বনু কুরায়জা গোত্রের আল-হাকাম ছিল উনার আহাল (ইছাবা, যারক্বানী)। 
ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা মতে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার পিতৃকূলের নসব মুবারক হলো: হযরত রায়হানা আলাইহাস সালাম বিনতে যায়দ ইবনে ’আমর ইবনে খুনাফা: ইবনে শামউন ইবনে যায়দ। তবে অধিকাংশ লোক আহালের দিকটাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। সেজন্য উনাকে বনু কুরাইজা গোত্রের মহিলা বলেছেন (তাবাকাত)। সুবহানাল্লাহ!

বিলাদত শরীফ:

সম্মানিত নবুওয়ত মুবারক প্রকাশের ১৯ বছর পূর্বে পবিত্র মাহে রবিউল আউয়াল শরীফ উনার ২৮ তারিখ, ইয়াওমুছ ছুলাছা শরীফ (মঙ্গলবার) সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি বিলাদতি শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! (দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)

ইসলাম গ্রহণ ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবতে আযীম শরীফ:

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠানের কয়েকটি বর্ণনা সীরত গ্রন্থগুলিতে উল্লেখ আছে।
বনু কুরায়জা গোত্র বিশ্বাসঘাতকতা করলে, অন্যান্যদের ন্যায় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার আহাল, আল-হাকামও অভিযুক্ত হয়ে নিহত হয় এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আত-তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম যুদ্ধ বন্দিনী হয়ে পড়েন। পরে তিনি স্বেচ্ছায় দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ! ইহা হচ্ছে জমহুর সীরত গ্রন্থকারদের বর্ণনা।
বনু কুরায়জা ইহুদি গোত্রের বিশ^াসঘাতকতার কারণে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার আহাল ও অন্যান্য যারা নিহত হয়েছিল তার প্রেক্ষাপট এই যে, পবিত্র মদীনা শরীফে তিনটি ইহুদি গোত্র বাস করত। তন্মধ্যে তাদের বৃহত্তম গোত্র ছিল বনু কুরাইজা। এই গোত্র ছিল চরম বদ ও দুর্মুখো। আর এ কারণে খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে শায়েস্তাও করেন কঠোরভাবে। ঐ সময় ইহুদিরা মুসলমানদেরকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে। প্রাথমিক পর্যায়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহুদীদের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। তাতে তাদের জান-মাল ও ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্রমে তারা বিদ্রোহী হয়ে উঠে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সাথে নতুন চুক্তি সম্পাদনে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু বনু নাদ্বীর তাতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পক্ষান্তরে বনু কুরাইজা নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় তাদেরকে দেশে থাকার নিরাপত্তা দেয়া হয়, মুসলিম শরীফে তাদের ঘটনা সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণিত আছে। 
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলতেন, বনু নাদ্বীর ও বনু কুরাইজার ইহুদীগণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যুদ্ধ করে। তিনি বনু নাদ্বীরকে দেশ থেকে বের করে দেন। আর বনু কুরাইজাকে দেশে থাকার অনুমতি বহাল রাখেন। এক্ষেত্রে বনু কুরাইজার চুক্তি নবায়নে একটি কূট উদ্দেশ্যও ছিল। তা হলো- পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে সুযোগ বুঝে মুসলমানদেরকে আক্রমণ করা। খন্দকের জিহাদে তারা এই সুযোগ প্রয়োগ করেছিল। 
মোট কথা বনু নাদ্বীর দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তাদের প্রধান নেতা হুয়াই বিন আখত্বাব, আবু রাফে’, সালাম ইবনে আবিল হুকায়ক প্রমূখ খায়বারে গিয়ে বসতি স্থাপন করে এবং তথাকার নেতৃত্ব লাভ করে। খন্দকের জিহাদ ছিল তাদের চেষ্টার ফল। তারা কুরায়শ, বনু সুলায়ম, গাতফান, বনু আসাদ, আশজা’, ফাযারা, বনু মুররা প্রভৃতি আরবের সকল গোত্রগুলিতে যাতায়াত করে তাদেরকে ক্ষিপ্ত করে তোলে এবং একযোগে পবিত্র মদীনা শরীফ আক্রমণে উদ্ধুদ্ধ করে। ফলে বিভিন্ন গোত্রের ১০ হাজার আরব মুসলমানদের উপর একযোগে আক্রমণ পরিচালনা করে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, পবিত্র মদীনা শরীফে বসে আত্মরক্ষা করা সম্ভব হবে না। সুতরাং পবিত্র মদীনা শরীফে নারী ও শিশুদেরকে রেখে সকল পুরুষ সামনে অগ্রসর হয়ে সালা’ পর্বতের নিকট সমবেত হন। সালা’ পর্বত পশ্চাতে রেখে সম্মুখ দিকে খন্দক/পরীখা খনন করা হয় এবং এই পরীখার ঘেরাওয়ের মধ্যে সকলে অবস্থান গ্রহণ করেন। কাফির বাহিনী এসে খন্দক/পরীখা ঘেরাও করে।
বনু কুরাইজা তখন পর্যন্ত মুসলমানদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল। ঠিক সে সময় সংবাদ পাওয়া গেল যে, বনু কুরাইজা প্রকাশ্যে চুক্তি ভঙ্গ করেছে। হুয়াই বিন আখত্বাবের প্ররোচনায় তারা বিদ্রোহ করেছে। সে তাদেরকে আশ^াস দিয়েছে যে, যদি কুরাইশরা পিছু হটে যায়, তাহলে আমি তোমাদের সাথে বসতি স্থাপন করব। এ সংবাদে মুসলমানগণ পবিত্র মদিনা শরীফ হিফাজতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তা করেন। কারণ পবিত্র মদীনা শরীফে নারীকূল, শিশু ও সব মালামাল ছিল এবং হযরত ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সেখানে খলীফা করে সেখানে রেখে আসা হয়েছে। তাদেরকে রক্ষা করার কোন উপায় ছিল না। পুরুষগণ খন্দক/পরীখার মধ্যে আবদ্ধ, আর বনু কুরাইজার আবাসভূমি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অদূরেই ছিল। যে কোন মূহূর্তে তাদের পক্ষ থেকে আক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম সংবাদ যাচাইয়ের জন্য হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত হাওয়াত বিন যুবায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমূখ কতিপয় ছাহাবীকে প্রেরণ করেন। উনারা এসে সংবাদ সত্য বলে অবহিত করেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু হারিছার কতিপয় সাহসী নওজোয়ানকে পবিত্র মদীনা শরীফে প্রেরণ করেন, এরপরেও মুসলমানগণ আরো বিশেষ ব্যবস্থার গ্রহণ করেন। দীর্ঘ এক মাস পর্যন্ত কাফিররা মুসলমানদের অবরোধ করে রাখে। অবশেষে খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে গায়েবী মদদ এসে যায়। এক শীতের রাত্রে প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া এসে কাফিরদের তাঁবু উড়িয়ে নেয়। তাদের হাড়ি, পাতিল, আগুন আর কিছুই স্থির থাকল না, সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়। অতঃপর হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখন পর্যন্ত তিনি মুসলমান হননি) উনার নির্দেশে কাফিরগণ তৎক্ষণাৎ খন্দকের জিহাদের স্থান পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সকাল বেলা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল মুসলমানদেরকে নিয়ে খন্দক প্রান্তর ত্যাগ করেন এবং পবিত্র মদীনা শরীফে এসে পৌঁছেন (সীরতে ইবনে হিশাম)।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খন্দকের জিহাদ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে গিয়ে তখনও যুদ্ধের অস্ত্রসস্ত্র খোলেননি, এমতাবস্থায় হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এসে উপস্থিত হন। উনার মাথায় ছিল রেশমী পাগড়ী। তিনি বললেন: ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনি কি হাতিয়ার রেখে দিয়েছেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: হাঁ। হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন: কিন্তু ফেরেশতাগণ এখনও অস্ত্র রাখেননি। আমি এই মাত্র শত্রুদের ধাওয়া করে আসলাম। খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক আপনাকে বনু কুরাইজার উপর হামলা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তাদের কাপিয়ে দিতে যাচ্ছি। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশে ঘোষক এইরূপ ঘোষণা করল: তোমরা যারা বাধ্য, অনুগত, তারা বনু কুরাইজার বসতিতে গিয়েই আছরের নামায আদায় করবে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে পতাকা নিয়ে সবার আগেই পাঠিয়ে দেন। অতঃপর মুসলিম বাহিনীর অগ্রগামী সৈন্যগণ যখন বনু কুরাইজার দুর্গের নিকটে উপস্থিত হন, তখন তারা প্রকাশ্যেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গালমন্দ করতে শুরু করে। অতঃপর তাদেরকে অবরোধ করা হয়। (সীরাতুন্নবী, ইবনে হিশাম)। 
দীর্ঘ ২৫ দিন অবরোধের পর তারা আবেদন জানায় যে, হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যে ফয়ছালা করবেন, তাই তারা মেনে নিবে (সীরাতুন্নবী, ইবনে হিশাম)। হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার বংশ বনু কুরাইজার মিত্র ছিলেন। তাদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত ছিল। আরবদের মধ্যে এই সম্পর্ক বংশসূত্রের সম্পর্ক থেকেও বড় বিবেচিত হতো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের আবেদন মঞ্জুর করলেন। হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এ ব্যাপারে রায় দেন যে, বনু কুরাইজার যুদ্ধক্ষম ব্যক্তিদেরকে হত্যা করা হোক। মহিলা ও শিশুদেরকে বন্দী করে রাখা হোক এবং তাদের মাল-সামানা গণিমত হিসাবে নিয়ে নেয়া হোক। এ রায় ছিল তাওরাত শরীফ উনার নির্দেশ অনুযায়ী। সুবহানাল্লাহ!
বহু হাদীছ শরীফে উল্লেখ হয়েছে, হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন এ রায় দেন, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আপনি তো আসমানী ফায়সালাই করেছেন। ইহুদীদেরকে এ রায় শুনানোর পর তাদের মুখ থেকে যেসব কথা বেরিয়েছিল, তা থেকে স্পষ্টত বোঝা যায় যে, তারা এ রায়কে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের অনুরূপই মনে করেছিল। সুবহানাল্লাহ!
ইহুদী বনু কুরাইজা গোত্রের প্রতি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনেক ইহসান করেন। তাদেরকে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেন। তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। তাদের জান-মালের নিরাপত্তার অঙ্গীকার প্রদান করেন। বনু কুরাইজা সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে বনু নাদ্বীর অপেক্ষা নীচে ছিল। যেমন, বনু নাদ্বীর গোত্রের কোন লোক যদি বনু কুরাইজার কোন লোককে হত্যা করত, তবে তাকে অর্ধেক রক্তপণ দিতে হতো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের উপর এ ইহসান করেন যে, রক্তপণ আদায়ের ক্ষেত্রে বনু কুরাইজাকে সমমর্যাদা প্রদান করা হয়। ফলে বনু নাদ্বীরকে পরিপূর্ণ রক্তপণ আদায়ে বাধ্য করেন। এ সবের পরেও বনু কুরাইজা চুক্তি ভঙ্গ করে খন্দকের জিহাদে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। খন্দকের জিহাদের সময় হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম ও অন্যান্য মুসলিম মহিলাকে যে দুর্গে রাখা হয়েছিল, দুর্বৃত্ত বনু কুরাইজা সে দুর্গ আক্রমনে উদ্যত হয়েছিল। নাউযুবিল্লাহ!
হুয়াই বিন আখত্বাবকে বিদ্রোহ করার দরুণ দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সে সব আরব গোত্রকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল এবং তারই প্রত্যক্ষ কারসাজিতে খন্দকের জিহাদ সংগঠিত হয়েছিল। বনু কুরাইজা তাকে সাথে নিয়ে এসেছিল। সুতরাং এসব অবস্থার প্রেক্ষিতে বনু কুরাইজার সাথে কঠোর ফায়সালা ছাড়া আর অন্য কিছুই সম্ভব ছিল না।
অনেক মুনাফিকরা অপপ্রচার করে যে, হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জিহাদে আহত হয়েছিলেন, সেজন্য তিনি বনু কুরাইজার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে এরূপ কঠোর ফয়ছালা দিয়েছিলেন। ইহা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ তিনি খন্দকের জিহাদে আহত হয়েছিলেন, বনু কুরাইজার কেউ উনাকে আহত করেনি। বনু কুরাইজা ছিল উনার মিত্র গোত্র। কাজেই তিনি পবিত্র তাওরাত শরীফ অনুযায়ী চুক্তিভঙ্গের শাস্তির রায় ন্যায়-সঙ্গতভাবেই দিয়েছিলেন, কোনরূপ শত্রুতার বশবর্তী হয়ে রায় দেননি। 
নিহতদের সংখ্যা ঐতিহাসিকগণ ৬ শত বলে উল্লেখ করেছেন। তবে বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের বর্ণনায় জানা যায় যে, এরা ছিল ৪ শত জন। এদের মধ্যে একজন ছিল মহিলা। তাকে কেছাছের জন্য হত্যা করা হয়েছিল। সে দুর্গের উপর থেকে পাথর নিক্ষেপে একজন মুসলমানকে হত্যা করেছিল। এই ছিল বনু কুরাইজা গোত্রের যুদ্ধক্ষম ব্যক্তিদের নিহত হওয়া, তাদের নারী ও শিশুদের বন্দী হওয়া এবং তাদের পরিত্যক্ত সম্পদ গণিমত হিসাবে মুসলমানদের অধিকারে আসার প্রেক্ষাপট। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নবী, শিবলী নুমানী)।
এক বর্ণনায় উল্লেখ আছে যে, একবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় পেছন থেকে আওয়াজ শুনতে পেয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ছালাবা ইবনে শুবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উম্মুল মু’মিনীন, হযরত আত তাসিয়া আলাইহাস সালাম উনার ইসলাম গ্রহণের সুসংবাদ নিয়ে আসছেন। একটু পরে ঠিকই উক্ত ছাহাবী পবিত্র দরবার শরীফে এসে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়া আলাইহাস সালাম উনার ইসলাম গ্রহণের সুসংবাদ দিলেন। সুবহানাল্লাহ! (উসুদুল গাবা, ইছাবা)। 
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত খুশী হন এবং উনাকে আযাদ করে উনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব দেন। অতঃপর উনার সাথে উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয় ৬ষ্ঠ হিজরী সনের পবিত্র মাহে মুহররমুল হারাম শরীফ উনার ২৩ তারিখ, পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ। সুবহানাল্লাহ! ( দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)। 
সীরাত গ্রন্থসমূহে এ বিষয়ে অনেক এলোমেলো বর্ণনাও রয়েছে। বলা হয়েছে যে, উনাকে আযাদ হওয়ার স্বাধীনতা প্রদান করলে তিনি উক্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বন্দীদশাকেই স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেন, যা সম্পূর্ণ অসম্ভব এবং উনার শানের সম্পূর্ণ খেলাফ। সীরত গ্রন্থসমূহের মধ্যে তাবাকাতে ইবনে সা’দ, মুসা ইবনে উকবার মাগাযী প্রথম দিকের মৌলিক সীরতের কিতাব। পরবর্তী সীরত লেখকগণ এসব কিতাব অনেক ক্ষেত্রে অনুসরণ করেছেন। মুসলমানদের বাগদাদ ও স্পেনের গ্রন্থাগারগুলি কাফিরগণ ধ্বংস করে দেয়ার পর এই কিতাবসমূহ দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়। তাবাকাতে ইবনে সা’দ ইউরোপে পাওয়া যায়। এসব কিতাবের তথ্যবলী ইউরোপীয় কাফিরগণ যে সংযোজন বা বিয়োজন করেনি তা কে বলবে? সেজন্য কোন সীরত গ্রন্থের বর্ণনা যদি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের খেলাফ কিছু বর্ণিত পাওয়া যায় তবে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। (আছাহহুস সিয়ার)। 
একটি বর্ণনায় এরূপ উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন যে, বন্দীদের বিচার শেষে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার নিকট তাশরীফ এনে বললেন: আপনি যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গ্রহণ করেন, তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের জন্য আপনাকে গ্রহণ করবেন। আমি বললাম: আমি মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গ্রহণ করলাম। আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে আযাদ করে দেন এবং অন্যান্য উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ন্যায় ১২ উকিয়া স্বর্ণ মোহর ধার্য করে আমার সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার ব্যবস্থা করেন এবং আমার উপর পর্দা পালনের আহকাম জারি করেন। সুবহানাল্লাহ! (তাবাকাত, ইছাবা)। 
কাজেই এসব বর্ণনার পরিপন্থী ভিন্ন ধরণের বর্ণনা সমূহ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়া আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠানের সময় উনার বয়স মুবারক ছিলেন ৩৬ বছর ৯ মাস ২৫ দিন। সুবহানাল্লাহ! (দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়া আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, বনু কুরাইজার জিহাদের পর ইহুদিদের মনোনিত বিচারক হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার রায় অনুযায়ী প্রায় ৪০০ বা ৬০০ যুদ্ধক্ষম ইহুদী নিহত হয়। এতে বহু সংখ্যক ইহুদী নারী বিধবা হয়ে পড়ে। উনারা মুসলমানদের মধ্যে সামাজিকভাবে আত্মসম্মান নিয়ে মর্যাদা সহকারে যাতে বসবাস করতে পারেন, এর প্রয়োজন দেখা দেয়। সাধারণত বিধবা বিবাহে লোক আগ্রহী হয়না, একটি সংসারে নতুন করে ফিৎনা সৃষ্টি করতে কেউ চায় না। তাছাড়া উনারা ছিলেন একটি ভিন্ন কওমের নারী। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফে আনয়ন করে উম্মুল মু’মিনীন হিসাবে মর্যাদা দান করেন। সাথে সাথে পবিত্র সুন্নতের অনুসরণে অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও আশ্রয়হীনা বিধবা নারীগণকে বিনা দ্বিধায় শাদী মুবারক করে আশ্রয় দান করেন। সুবহানাল্লাহ!

বিছাল শরীফ:

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জ হতে প্রত্যাবর্তন করার পর হিজরী ১১ সনে পবিত্র মাহে মুহররমুল হারাম শরীফ উনার ৫ তারিখ, পবিত্র ইয়াওমুল খামীস তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! জান্নাতুল বাকীতে উনার দাফন মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। তখন উনার বয়স মুবারক হয়েছিলেন ৪১ বছর ৯ মাস ৭ দিন। সুবহানাল্লাহ! (দৈনিক আল-ইহসান শরীফ, ইছাবা)।

ফযীলত ও মর্যাদা:

উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত-তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারকে উনার উপস্থিতিতে তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তিনি নিজে উনার জানাযা মুবারক পড়েন এবং দাফন মুবারক সম্পন্ন করেন। সুবহানাল্লাহ! (সূত্র: সীরত গ্রন্থাবলী)
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আজওয়াজুম মুতাহারাত পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অর্ন্তভুক্ত। আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা মর্তবা সম্পর্কে খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-

إنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا -

(হে নবী পরিবার! খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করতে) অর্থাৎ আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করেই তিনি সৃষ্টি করেছেন। উনারা নিজেরা শুধু পবিত্রই নন, বরং উনারা পবিত্রতা দানকারী। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা মর্তবার দিক থেকে সর্বপ্রথম হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত আব্বা আলাইহিস সালাম এবং মহাসম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম, উনারা হচ্ছেন সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ উনাদের মূল। অতঃপর হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা, অতঃপর হযরত আবনাউ রসুলিল্লাহ এবং বানাতে রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মর্যাদা এবং অতঃপর অন্যান্য আওলাদে রসুল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্তবা মর্যাদা। সুবহানাল্লাহ!
উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অপরিসীম মর্যাদা মর্তবার বিষয়ে খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালাম মজীদে ইরশাদ মুবারকে করেছেন:
لستن كاحد من النساء -
অর্থ: উনারা অন্য কোন নারীর মত নন। অর্থ্যাৎ উনাদের কোন মেছাল নেই, উনারা বেমেছাল। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন:
اَلنَّبِـىُّ اَوْلـٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَاَزْوَاجُه اُمَّهٰتُهُمْ.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মু’মিনদের নিকট তাদের জানের চেয়েও অধিক প্রিয়, আর উনার মহা-সম্মানিতা আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত (হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম) উনারা হচ্ছেন সমস্ত মু’মিন উনাদের মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহিন্নাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! (সুরা আহযাব শরীফ, আয়াত শরীফ ৬)।
তাহলে উম্মাহাতুল মু’মিনীন উনার অর্থ হচ্ছেন সমস্ত মু’মিন উনাদের মহাসম্মানিতা মাতাগণ। সুবহানাল্লাহ! এই সম্মানিত লক্বব মুবারক উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনিই দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সৃষ্টির শুরু থেকে এ পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়াতে এসেছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়ার যমিনে আসবেন, (শুধু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যতীত) উনাদের প্রত্যেকেরই মহা-সম্মানিতা মাতা হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ!
সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে তা’যীম, তাকরীম করা ও মুহব্বত করা উম্মতের জন্য ফরয-ওয়াজিব। যেমন খালিক, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন:
قُل لا أسْألُكُمْ عَلَيْهِ أجْرًا إلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبَى - 
অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মতদেরকে বলুন, আমি তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাই না, আর তোমাদের পক্ষে বিনিময় দেয়া সম্ভবপরও নয়। বরং এইরূপ কল্পনা করাও কুফরী হবে। তবে যেহেতু তোমাদেরকে ফায়দা হাসিল করতে হবে, সেজন্য তোমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, যাঁরা আমার আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম করা (পবিত্র সূরা শু’রা শরীফ, আয়াত শরীফ ২৩)।
পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা মর্তবা সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন:
ألاَ إنَّ مَثَلَ أهْلِ بَيْتِىْ فِيْكُمْ مَثَلُ سَفِيْنَةِ نُوْحٍ عليه السلام مَنْ رَكِبَهَا نَجَا وَ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْهَا هَلَكَ - 
অর্থ: সাবধান! নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হলেন হযরত নুহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতীর ন্যায়। যে তাতে আরোহণ করেছে, সে রক্ষা পেয়েছে। আর যে তা হতে পশ্চাতে থেকেছে, সে ধ্বংস হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে:
الجَنّةُ تَحْتَ أقْدَامِ الْأُمُّهَاتِ - 
অর্থাৎ সম্মানিত জান্নাত সম্মানিতা মাতা উনাদের পায়ের নিচে। সুবহানাল্লাহ!
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সকলই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একই সম্মানিত জান্নাত মুবারকে একই সাথে অবস্থান মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! এ থেকে বুঝা যায়, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়েল ফযীলত, বুযুর্গী সম্মান কত বে-মেছাল, যা তামাম কায়েনাতবাসীর চিন্তা ও ফিকিরের উর্ধ্বে।
বর্তমানে কোন কোন নামধারী মুসলমান যেমন কোন কোন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সমালোচনা করে থাকে, তেমন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরও শান মান নিয়েও ক্বীল-ক্বাল করে থাকে। তাদের পরিণতি অত্যন্ত খারাপ, যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে:
عن حضرت عويـمر بن ساعدة رضى الله تعالى عنه انه صلى الله عليه و سلم قال ان الله اختارنى واختار لى اصحابا فجعل لى منهم وزراء وانصارا واصهارا فمن سبهم فعليه لعنة الله والـملئكة والناس اجـمعين ولايقبل الله منهم صرفا وعدلا
অর্থ: হযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত: নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক আমাকে এবং আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খেদমতকারী এবং বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়বর্গ নিযুক্ত করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি উনাদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত এবং সমস্ত ফেরেস্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও সমস্ত মানুষ সকলেরই লা’নত। আর মহান আল্লাহ পাক তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না (তাবারানী শরীফ, হাকিম শরীফ)।
এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনায় হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা বিশেষভাবে শামিল রয়েছেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম রসুল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মনোনীত করেছেন এবং সেই সাথে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাহিন্নাস সালাম উনাদেরকেও বিশেষভাবে মনোনীত করেছেন উনার মুবারক খেদমতের আঞ্জাম দেয়ার জন্য।
কাজেই উনাদের শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা উপলব্ধি করা সমস্ত জিন-ইনসানের জন্য ফরয-ওয়াজিব। উনাদের প্রতি মুহব্বত ও সু-ধারণা পোষণ করাই হচ্ছে ঈমান। আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করা, উনাদের সমালোচনা করা সুস্পষ্ট কুফরী, কাফির ও চির-জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
সূত্র: তাবাকাত, উসুদুল গাবা, ইছাবা, যারক্বানী, সীরতে ইবনে হিশাম, সীরতুন নবী (শিবলী নুমানী), দৈনিক আল-ইহসান শরীফ।

0 Comments: