হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৭৫১-৯২৪) (ছ)


فقال له حضرت سعد رضى الله تعالى عنه هذا الغامر من ركوبة وبه لصان من أسلم يقال لهما المهانان. فانشئت أخذنا عليهما، فقال النبى صلى الله عليه وسلم خذبنا عليهما قال حضرت سعد رضى الله تعالى عنه فخرجنا حتى إذا أشرفنا إذا أحدهما يقول لصاحبه. هذا اليمانى. فدعاهما رسول الله صلى الله عليه وسلم فعرض عليهما الاسلام فأسلما، ثم سألهما عن اسمائهما فقالا نحن المهانان. فقال بل أنها المكرمان وأمرهما أن يفدما عليه المدينة
এখন হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে বলেন, রাকুবা উপত্যকার এই বিরাম প্রান্তরে আসলাম গোত্রের দু’জন অপহরণকারী রয়েছে। তাদেরকে মুহানান বলা হয়। আপনি চাইলে আমরা তাদেরকে পাকড়াও করে আনতে পারি। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, না, তাদেরকে পাকড়াও করে আনার দরকার নেই। বরং আমাদেরকেই তাদের কাছে নিয়ে চলুন। হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এরপর আমরা বের হলাম। আমরা কিছুদুর এগিয়ে গেলে তাদের একজন তার সঙ্গীকে বলে এই যে ইয়ামানী! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দু’জনকে ডেকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দিকে দাওয়াত দেন। উনারা ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর উনাদের নাম জিজ্ঞাসা করলে উনার বলেন আমরা হলাম মুহানান। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
بل انتما المكرمان
না, আপনারা মুহানন নন বরং আপনারা তো ‘মুকরামান’ তথা সম্মানীত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনারা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে গিয়ে সাক্ষাত মুবারক করতে পারেন।”
বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বের হলাম। আমরা যখন কুবার নিকটে উপস্থিত হই, তখন বনূ আমর ইবনে আওফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ মুবারক করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আবূ উমামা আসআদ ইবনে যুবায়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কোথায়? হযরত সা’দ ইবনে খায়ছামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি তো আমার আগে পৌঁছেছেন। আমি কি এ সংবাদ দেবো না।
স্মরণীয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেদিন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্য হতে রওয়ানা মুবারক দিয়েছেন সেই দিন মুবারক-এর কথা পবিত্র মদীনা শরীফবাসী উনাদের কারো কাছে অজানা নেই। কবি বলেন,
তাই যেথায় যাই আমি, দেখি খুশি
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পথে পথে
ঈদে মশগুল, লোক কতো শত শত
ধরে চলেছেন হাতে হাতে।

ঘনিয়ে আসে দিন হাবীবুল্লাহ আসবেন,
থাকবেনই এই পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে,
খুশিতে সবাই তাকবীর দেয়,
শুকরিয়া কহে মহানন্দে সবে।

প্রভাত এসে উঁকি দিয়ে চায় দরজায়,
বসুধায় নবীজি এলেন কি রাতে?
অরুন রবি নবীজিকে দেখিতে আসে
সোনালি কিরণের আঁখি পেতে।
এদিকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীগণ উনারা সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এখনো তাশরীফ আনেননি? উনারা বলছেন, পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ১৩ মঞ্জিল তথা তেরো দিনের পথ অর্থাৎ ২০৮ মাইল দূরে এটা সবার জানা। ক’দিন কয় ঘণ্টায় এখানে পৌঁছা সম্ভব, তা সবার নখের পিঠে হিসেব করা। কিন্তু এ কি! তেরো দিন তো পার হয়ে গেলো। তবুও আমাদের প্রাণের আক্বা, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসে পৌঁছলেন না। হায়! কতো শত্রু কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা যে উনাকে পিছন মুবারক থেকে ধাওয়া করেছে। উনাদের অন্তর ফেঁটে যাচ্ছে কান্নায়। উনারা সকলেই ভেঙে পড়ার মতো। পবিত্র কা’বা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার লোকজন উনাদের কারো দেহ যেন বিছানায় যাচ্ছে না। উনারা ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ গিয়ে উঠেছেন পাহাড়ের চূঁড়ায়, দূরে দৃষ্টি ফেলে দেখেন কোনো কাফিলা আসছে কিনা। কেউ কেউ পবিত্র মক্কা শরীফ উনার পথে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসছেন কিনা দেখতে। কিন্তু কেউ দেখছেন না। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। উনাদের সব আশা ও আনন্দ ভয় ও দুর্ভাবনায় অসহন বোধ হচ্ছে। আজ আসবেন কাল আসবেন করে পবিত্র কাবা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফবাসীগণ উনারা নিত্যদিন নব নব সাজে বাড়ি ঘর সাজাচ্ছেন। এক একটা দিন নৈরাশ্যের আঘাত দিয়ে গত হয়ে যাচ্ছে। এদিকে বিলম্বের কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো সোজা পথে আসছেন না। বহুদূর পথ ঘুরে আসছেন। এরই মধ্যে একদিন রব (আওয়াজ) উঠে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওই দিন পবিত্র কা’বা শরীফ উনার পথ ধরে তাশরীফ আনছেন।
কবি বলেন-
সাজ সাজ রব পড়ে যায় ঘরে ঘরে,
এই খবরের সাথে সাথে
আশা আর ভাষা, হাসি আর খুশি
ফুটে সে পবিত্র কো’বা শরীফ উনার পথে পথে।

কচি শিশুরাও ছুটে, হাত ধরাধরি করেন,
বারণ মানে না কোনো মতে;
যারা ইহুদী, নাছারা কিংবা পৌত্তলিক
তারাও ছুটে অপার খুশিতে।

রমনীগণ সবে রমনীয় বেশে বসে থাকেন
উঠে এসে স্বীয় ছাদের পর;
গাছের আগায় উঠে বসেছেন প্রৌঢ়গণ,
নীচে পড়ে আছে শূন্য ঘর।

যুবকগণ চলেন সামরিক সাঝে সারি সারি,
বলেন, আমরা মুসলিম
নবীজিকে আনবো শাহানশাহর মতো শওকাতে।

বৃদ্ধগণ বলেন, আসসালামু আলাইকুম
দেখেছেন যাঁরা জিসম নবীজির তারা মজনু
দেখেনি যারা, উনারও আরো অধীর মনের
উনারা মানাতে চান আরো কতোক্ষণ
বারে বারে বলি আল্লাহু আকবার তাকবীর।

কত লোক দলে দলে পবিত্র কো’বা ছেড়ে চলেন
মরু ময়দান মাঝে বহু দূর।
পেছনের দল আগে বেড়ে যায় আরো
নবীজি উনার প্রেমে এমনি ভুর।

সহসা দূর দিগ¦লয়ে সঙ্গে  সাগরকে মায়াবী তরঙ্গ ভেলার মতো ভেসে উঠে হযরত বারিদা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারকের উড্ডীয়মান সাদা নিশানখানী। অমনি সবাই ওই যে, ওই যে বলে সামনের দিকে দৌড়াতে থাকেন।
কবি বলেন,
সবার দৃষ্টি সূচাল হয় মরীচিকা ভেদি,
ওই যে দূরে নিশান দুলে;
সে কাফিলার ধূলি হাত তুলি ডাকে
যেন সবে এসো, এসো এসো বলে।

তাই কারো পানে কেউ চায় না গৌন সয় না।
ছুটে চলেন আকুল প্রাণে জানাতে তসলিম,
সহ¯্র সালাম এসো প্রিয়।
ধন্য হই মোরা দো’জাহান।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাফিলা মুবারক দৃষ্টি পথে এসে যায়। উনার জন্যে উম্মতের ও উম্মতের জন্যে উনার প্রিয় সাগরের জোয়ার আসে।

উম্মতের নবী দেখিছেন সবি তাই আহা
মমতায় উনার চক্ষু মুবারক বেয়ে ছুটে তপ্ত পানি।
তাড়া দেন কোছওয়ারে, যাও তুমি শ্রীঘ্র করে
নইলে সাতরে যাবো আমি মরু সাগরখানি।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক কাফিলা থেকে যায় আগত হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকলকে সালাম জানান। কুশল জিজ্ঞেস করেন। আনন্দ ও উনাদের মমতায় কেঁদে ফেলেন। সবাই আনন্দাশ্রু মুছতে মুছতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাফিলা মুবারক উনার ডানে, বামে ও আগে-পিছে থেকে চলতে থাকেন। মুহূর্তে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে আকাশ-পাতাল কাঁপিয়ে তোলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে কাফিলা মুবারক পবিত্র কো’বা শরীফ পৌঁছে যান।
বর্ণিত রয়েছে,
قال حضرت محمد بن اسحاق رحمة الله عليه فنزل رسول الله صلى الله عليه وسلم- فيما يذ كرون يعنى حين نزل- بقباء على حضرت كلثوم ابن الهدم رضى الله تعالى عنها أخى بنى عمرو بن عوف ثم أحد بنى عبيد، ويقال بل نزل على حضرت سعد بن خيثمة رضى الله تعالى عنه، ويقول من يذكرأنه نزل على حضرت كلثوم بن الهدم رضى الله تعالى عنها إنما كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا خرج من منزل لكثوم بن الهدم رضى الله تعالى عنها جلس للناس فى بيت حضرت سعد بن خيثمة رضى الله تعالى عنه، وذلك أنه كان عزبا لا أهل له، وكان يقال لبيته بيت العزاب. ونزل حضرت أبوبكر عليه السلام على حضرت خبيب بن إساف رضى الله تعالى عنه أحد بنى الحارث بن الخزرج بالسنح وقيل على حضرت خارجة بن زيد أبى زهير رضى الله تعالى عنه أخى بنى الحارث بن الخزرج.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বপ্রথম কো’বায় হযরত কুলছুম ইবনে হিদম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার গৃহে তাশরীফ নেন। হযরত কুলছুম ইবনে হিদম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা- যিনি বনু আমর ইবনে আওফের লোক এবং এটা হচ্ছে বনূ উবাইদের শাখা গোত্র। যাঁরা বলেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কুলছুম ইবনে হিদম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার গৃহে অবস্থান করেন, উনারা (এর ব্যাখ্যা হিসেবে এ কথাও) বলেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কুলছুম ইবনে হিদম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার গৃহ মুবারক থেকে বের হয়ে লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ দানের জন্য হযরত সা’দ ইবনে খাইছাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহ মুবারক-এ তাশরীফ নিতেন। আর এটা এজন্য যে, হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন অবিবাহিত। উনার পরিবার পরিজন ছিলেন না। আর এ কারণে উনার গৃহ মুবারককে বলা হলো অবিবাহিত উনাদের নিবাস। আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি অবস্থান করেন বনূ হারিছ ইবনে খাযরাজের অন্যতম সদস্য হযরত খুবাইব ইবনে ইসাফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহ মুবারক-এ ‘সুনহ’ নামক স্থানে। আবার কারো কারো মতে, তিনি অবস্থান করেন বনূ হারিছ ইবনে খাযরাজের হযরত খারিজা ইবনে যায়িদ ইবনে আবূ যুহাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহ মুবারক-এ।
আরো বর্ণিত রয়েছে,
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه وأقام حضرت على بن أبى طالب عليه السلام بمكة ثلاث ليال وأيامها حتى أدى عن رسول الله صلى الله عليه وسلم الودائع التى كانت عنده، ثم لحق برسول الله صلى الله عليه وسلم فنزل معه على حضرت كلثوم بن الهدم رضى الله تعالى عنها فكان حضرت على ابن أبى طالب عليه السلام إنما كانت اقامته بقباء ليلة أو ليلتين. يقول كانت بقباء امرأة لا زوج لها مسلمة، فرأيت انسانا يأتيها من جوف الليل فيضرب عليها بابها فتخرج اليه فيعطيها شيئا معه فتأخذه،
অর্থ: “হযরত ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আলী ইবনে আবূ ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি মক্কা শরীফ উনার মধ্যে তিন রাত তিনদিন অবস্থান করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে যেসব আমানত উনার উপর ন্যস্ত ছিলো। সে সব ফেরত দেয়া পর্যন্ত। এরপর তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে এসে মিলিত হন এবং উনার সঙ্গে হযরত কুলছুম ইবনে হিদম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহ মুবারকে অবস্থান করেন। কাজেই হযরত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুবায় একরাত বা দু’রাত অবস্থান করেন। হযরত আলী কারমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন যে, কো’বায় এক মহিলা ছিলেন, উনার স্বামী ছিলেন না। মহিলাটি ছিলেন মুসলমান। আমি দেখতে পাই যে, রাত্রিবেলা একজন পুরুষ আগমন করে মুসলমান মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার দরজা মুবারক-এ আঘাত করতেন। মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বেরিয়ে এলে পুরুষ ব্যক্তি উনাকে কিছু একটা দিতেন। আর মহিলা ছাহাবী তিনি তা গ্রহণ করতেন।
فاستربت بشأنه فقلت لها يا أمة الله من هذا الذى يضرب عليك بابك كل ليلة فتخرجين اليه فيعطيك شيئا لا أدرى ما هو؟ وأنت امرأت مسلمة لا زوج لك؟ قالت هذا حضرت سهل بن حنيف رضى الله تعالى عنه، وقد عرف أنى امرأة لا أحد لى فاذا أمسى عدا على أوثان قومه فكسرها ثم جاءنى بها فقال احتطبى بهذا، فكان حضرت على عليه السلام يأثر ذلك من شأن حضرت سهل بن حنيف رضى الله تعالى عنه حين هلك عنده بالعراق.
পুরুষ ব্যক্তি উনার সম্পর্কে আমার খারাপ ধারণা জন্মে। আমি ওই মহিলা ব্যক্তিকে বললাম, হে মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দি! এ লোকটি কে? যিনি প্রতি রাতে আপনার গৃহের দরজায় করাঘাত করেন আর আপনি লোকটির নিকট বের হয়ে আসেন। আর লোকটি আপনাকে কিছু একটা জিনিস দেন। জানি না, তা কি জিনিস? আপনি তো একজন মুসলমান মহিলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! আপনার আহাল বা স্বামী কি নেই? মহিলা ছাহাবী তিনি বললেন, এ পুরুষ ব্যক্তি তিনি হলেন হযরত সাহল ইবনে হানীফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! তিনি জানেন যে, আমি এমন এক নারী যার কেউ নেই। সন্ধ্যায় তিনি গোত্রের মূর্তিগুলোর উপর আঘাত হেনে সেগুলো ভেঙে ফেলেন এবং মূর্তি ভাঙা কাষ্ঠগুলো আমার কাছে নিয়ে আসেন। যাতে সে কাষ্ঠগুলো আমি জ্বালানিরূপে ব্যবহার করতে পারি।
হযরত সাহল ইবনে হানীফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইরাকে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার নিকট পবিত্র বিছাল শরীফ লাভকালে তিনি এ গোপন তথ্যটি প্রকাশ করেন।”
বর্ণিত রয়েছে, হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুবায় বনূ আমর ইবনে আওফ উনার গৃহে অবস্থান করেন ৪ দিন এবং সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এরপর জুমুয়ার নামায আদায় করেন। অনেকে এ ব্যাপারে মতামত পোষণ করেছেন- কেউ বলেন ১৮ দিন, আবার কেউ, ১০ রাত্রি আবার কেউ বলেন ২২ রাত্রি মুবারক আবার কেউ বলেন ১৪ রাত্রি। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ১৯৭ পৃষ্ঠা)

0 Comments: