হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৭৫১-৯২৪) (ঝ)


বর্ণিত রয়েছে, বনূ নাজ্জারের বালিকাগণ উনাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে উচ্চ কণ্ঠে বলেন, আমরা নাজ্জার বংশের বালিকা। উনারা বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কতই না আমাদের উত্তম প্রতিবেশী।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গৃহ  মুবারক থেকে বের হয়ে উনাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কি আমাকে মুহব্বত করেন? উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরা অবশ্যই আপনাকে মুহব্বত করি। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একে একে তিন বার বললেন,
انا والله احبكم
অর্থাৎ- মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমিও আপনাদের কে মুহব্বত করি।” সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া শরীফ, ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা ১৯৬-২০০)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত আবূ আইউব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহাল পরিবার উনাদের সঙ্গে পরামর্শ করলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তা শুনতে পান। তখন তিনি নিজের খেজুর বাগানে পরিবারের লোকজনের জন্য খেজুর চয়ন করছিলেন। খেজুর চয়ন রেখে দিয়ে যাতে চয়ন করছিলেন সেই পাত্রটি সঙ্গে নিয়ে তিনি চলে আসলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের কথা মুবারক শুনে উনার বাড়িতে ফিরে যান। আর এদিকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, কার ঘর আমাদের সবচাইতে কাছে? হযরত আবূ আইউব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমার ঘর। এটিই হচ্ছে আমার হুযরা শরীফ আর এটি আমার হুজরা শরীফ উনার দরজা মুবারক। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনি যান এবং আমাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করুন। তিনি হুযরা শরীফ উনার মধ্যে গিয়ে সমস্ত আয়োজন করে ফিরে এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি সমস্ত ব্যবস্থা করে এসেছি। দয়া করে আপনারা দু’জন চলুন এবং বিশ্রাম নিন! মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুযরা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ নিলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার খিদমত মুবারক-এ হাযির হয়ে বললেন,
اشهد انك حضرت نبى الله صلى الله عليه و سلم حقا و انك جئت بحق
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার সত্য নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আপনি আগমন করেছেন হক্ব বা সত্যসহ।” সুবহানাল্লাহ!
قال حضرت ابن إسحاق رحمة الله عليه حدثني حضرت يزيد بن أبي حبيب رحمة الله عليه عن حضرت مرثد بن عبد الله اليزني رحمة الله عليه عن حضرت أبي رهم السماعي رحمة الله عليه حدثني حضرت أبو أيوب رضى الله تعالى عنه. قال: لما نزل علي رسول الله صلى الله عليه وسلم في بيتي نزل في السفل، وأنا وأم أيوب في العلو، فقلت له بأبي أنت وأمي يا رسول الله صلى الله عليه و سلم، إني أكره وأعظم أن أكون فوقك وتكون تحتي، فأظهر أنت فكن في العلو وننزل نحن فنكون في السفل، فقال: "يا حضرت أبا أيوب رضى الله تعالى عنه إن أرفق بنا وبمن يغشانا أن أكون في سفل البيت" فكان رسول الله صلى الله عليه وسلم في سفله وكنا فوقه في المسكن. فلقد انكسر حب لنا فيه ماء، فقمت أنا و حضرت أم أيوب رضى الله تعالى عنها بقطيفة لنا، مالنا لحاف غيرها ننشف بها الماء تخوفا أن يقطر على رسول الله صلى الله عليه وسلم منه شئ فيؤذيه،
অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত ইয়াযীদ ইবনে আবূ হাবীব রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বর্ণনা করেন হযরত মারছাদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল ইয়াযানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত আবু রাহম আস সামায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত আবু আইয়ুব আনছারী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন আমার হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ মুবারক নিলেন তখন তিনি নিচ তলা মুবারক-এ অবস্থান করতেন। আমি এবং হযরত উম্মে আইয়ুব রদি¦য়াল্লাহু তায়ালা আনহা (অর্থাৎ আমার আহলিয়া) আমরা অবস্থান করি উপর তলা মুবারক-এ। তখন আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আমি উপর তলায় থাকবো আর আপনি থাকবেন নিচতলায়, এটা আমার নিকট অসহ্য এবং জঘন্য বেয়াদবী। তাই আমি চাই যে, দয়া করে আপনি উপরে অবস্থান করুন আর আমি নীচে অবস্থান করি। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত আবূ আইয়ূব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আমি হুজরা শরীফ-এর নিচতলায় অবস্থান করলে তা হবে আমি এবং যারা আমার নিকট আসা যাওয়া করছেন উনাদের জন্য সুবিধাজনক। তাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হুজরা শরীফ উনার নিচতলা মুবারক-এ অবস্থান করলেন, আর আমরা অবস্থান করতে থাকি উপর তলায়। একদিন একটা বড় পানির পাত্র ভেঙ্গে গেলো যাতে পানি ছিলো । তখন আমি এবং হযরত উম্মু আইযূব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আমরা একটা চাদর বা কম্বল নিয়ে দাঁড়াই। আর আমাদের ঘরে কেবল একটা চাদর ছিলো যাতে চাদর পানি চুষে নেয়, যেনো নিচ তলায় পানি যেয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে পতিত হয়ে উনাকে কষ্ট না দেয়।
قال وكنا نصنع له العشاء ثم نبعث إليه فإذا رد علينا فضلة تيممت أنا و حضرت أم أيوب رضى الله تعالى عنها موضع يده فأكلنا منه نبتغي بذلك البركة، حتى بعثنا إليه ليلة بعشائه وقد جعلنا له فيه بصلا - أو ثوما - فرده رسول الله صلى الله عليه وسلم فلم أر ليده فيه أثرا،
বর্ণনাকারী হযরত আবূ আইয়ুব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য রাত্রের খাবার মুবারক পাকাতাম এবং উনার খিদমতে পেশ করতাম। তিনি খাবার মুবারক খেয়ে বাড়তি অংশ ফেরত পাঠালে বরকত লাভের আশায় আমি এবং হযরত উম্মু আইয়ুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা খুঁজতাম কোথায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক পড়েছে। যেখানে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক পড়েছে বরকতের আশায় আমরা সেখান থেকে খেতাম। এক রাত্রিতে আমরা উনার জন্য খাবার মুবারক পাঠালাম তাতে ছিলো কাঁচা রসূন বা পিঁয়াজ। ফলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাবার মুবারক ফেরত পাঠালেন। আমরা তাতে উনার হাত মুবারক দেয়ার কোনো চিহ্ন মুবারক দেখতে পেলাম না।
قال فجئته فزعا فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم بأبي أنت وأمي رددت عشاءك ولم أر فيه موضع يدك ؟ فقال: "إني وجدت فيه ريح هذه الشجرة، وأنا رجل أناجي فأما أنتم فكلوه "قال فأكلناه ولم نصنع له تلك الشجرة بعد
বর্ণনাকারী ছাহাবী হযরত আইয়ুব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি ব্যাকুল হয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ছুটে আসি এবং আরজি পেশ করি ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। দয়া করে বলুন, কি জন্য আপনি রাতের খাবার ফেরত দিয়েছেন? তাতে আপনার হাত মুবারক রাখার চিহ্ন মুবারক পাইনি। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- আমি খাদ্যে কাঁচা পিঁয়াজ বা রসুনের গন্ধ পেয়েছি। আমি তো এমন এক রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি সঙ্গোপনে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সঙ্গে কথা বলি। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা তা খেয়ে নাও। বর্ণনাকারী ছাহাবী হযরত আবূ আইয়ুব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা সেই খাদ্য মুবারক আহার করি, কিন্তু পরবর্তীতে আমরা উনার খাদ্য মুবারক-এ কাঁচা পিঁয়াজ-রসুন ব্যবহার করিনি।
عن حضرت زيد بن ثابت رضى الله تعالى عنه قال أول هدية أهديت إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم حين نزل دار حضرت أبي أيوب رضى الله تعالى عنه أنا جئت بها، قصعة فيها خبز مثرود بلبن وسمن، فقلت أرسلت بهذه القصعة أمي، فقال: "بارك الله فيك" ودعا أصحابه فأكلوا، ثم جاءت قصعة حضرت سعد بن عبادة رضى الله تعالى عنه ثريد وعراق لحم، وما كانت من ليلة إلا وعلى باب رسول الله صلى الله عليه وسلم الثلاث والاربعة يحملون الطعام يتناوبون، وكان مقامه في دار حضرت أبي أيوب رضى الله تعالى عنه سبعة أشهر
অর্থ: “হযরত যায়িদ ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবূ আইয়ুব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হুযরা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থানকালে সর্বপ্রথম উনার খিদমত শরীফ-এ যে হাদিয়া মুবারক পেশ করা হতো, তা আমি বহন করে আনতাম। তা ছিলো একটা পেয়ালায় কিছু রুটি এবং দুধ ও ঘি দ্বারা তৈরি করা ছারীদ মুবারক। আমি বলি, আমার আম্মা এ পেয়ালা প্রেরণ করেছেন। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
بارك الله فيك
“মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে বরকত দান করুন।” এ বলে তিনি উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ডাকলেন। উনারা সকলেই খাদ্য মুবারক খেলেন। এরপর আসেন হযরত সাআদ ইবনে উবাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছারীদ মুবারক আর গোশতের শুরুয়া ভর্তি পেয়ালা মুবারক। এমন কোনো রাত ছিলো না, যে রাতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুযরা শরীফ উনার দরজা মুবারক-এ হাদিয়ার খাদ্যবাহী তিন চারজন একের পর এক উপস্থিত থাকতেন না। অর্থাৎ সর্বদাই ৩/৪ জন করে ব্যক্তি উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মেহমানদারী করার জন্য খাদ্য নিয়ে উপস্থিত হতেন। হযরত আবূ আইয়ুব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাত মাস অবস্থান করেন।
و قال بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم - وهو نازل في دار حضرت أبي أيوب رضى الله تعالى عنه - مولاه حضرت زيد بن حارثة رضى الله تعالى عنه و حضرت أبا رافع رضى الله تعالى عنه ومعهما بعيران وخمس مائة درهم ليجئا بفاطمة عليها السلام و حضرت أم كلثوم عليها السلام ابنتي رسول الله صلى الله عليه و سلم، و حضرت سودة بنت زمعة عليها السلام زوجته، و حضرت أسامة بن زيد رضى الله تعالى عنه، وكانت رقية قد هاجرت مع زوجها حضرت عثمان عليه السلام، و حضرت زينب عليها السلام عند زوجها بمكة حضرت أبي العاص بن الربيع رضى الله تعالى عنه، وجاءت معهم أم أيمن امرأة حضرت زيد بن حارثة رضى الله تعالى عنه وخرج معهم حضرت عبد الله بن أبي بكر رضى الله تعالى عنه بعيال حضرت أبي بكر عليه السلام وفيهم حضرت عائشة أم المؤمنين عليها السلام ولم يدخل بها رسول الله صلى الله عليه و سلم.
বর্ণনাকারী বলেন, হযরত আবূ আইয়ুব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থানকালেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আযাদকৃত গোলাম হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবূ রাফি’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে দুটি উট এবং পাঁচশত দিরহামসহ পবিত্র মক্কা শরীফ-এ প্রেরণ করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা মেয়েদ্বয় হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম আর হযরত উম্মু কুলছুম আলাইহাস সালাম, উম্মুল মু’মিনীন হযরত সাওদা বিনতে যামআ আলাইহাস সালাম এবং হযরত উসামা ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে নিয়ে আসার জন্যে। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কন্যা হযরত রুকাইয়া আলাইহিস সালাম তিনি উনার ছাহিব হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে হিজরত মুবারক করেন। আর হযরত যয়নাব আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার ছহিব হযরত আবুল আস ইবনে রবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে। উনাদের সঙ্গে আগমন করেন হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া হযরত উম্মু আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। উনাদের সঙ্গে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার পরিবার পরিজন উনারাও বের হন অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাদের সঙ্গে হযরত উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনিও সঙ্গে ছিলেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখনো হযরত উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে ঘরে তুলে নেননি।
সাইয়্যিদুল আনাম, আঁক্বায়ে নামদার, ছাহিবে কলম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বাদশাহ হযরত আসআদ বিন কারব তুব্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ১৪০০ বৎসর আগের চিঠি
هو الذى ارسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الدين كله وكفى بالله شهيدا
অর্থ: “সেই মহান আল্লাহ্ পাক যিনি পূর্ববর্তী ওহী মুবারক দ্বারা নাযিলকৃত সমস্ত দ্বীন এবং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে মানবরচিত সমস্ত মতবাদ রদ করে এবং তাদের উপর প্রাধান্য দিয়ে উনার রাসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সত্য দ্বীন ও হেদায়েতসহ পাঠিয়েছেন, উনার স্বাক্ষী হিসেবে মহান আল্লাহ্ পাক তিনিই যথেষ্ট।” সূরা তওবা শরীফ : আয়াত শরীফ- ৩৩
মূলত, মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এই ধরা পৃষ্ঠে প্রেরণের সুসংবাদ পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাবসমূহে উল্লেখ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
“তাফরিহুল আজকিয়া ফি আহ্ওয়ালিল আম্বিয়া” নামক কিতাব উনার ২য় খ- ১১০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যে, ইয়েমেনের বাদশাহ্ হযরত আসআদ বিন র্কাব তুব্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইরাক ও সিরিয়া জয় করার উদ্দেশ্যে বের হলে পথিমধ্যে তিনি আমিয়া শহরে (যা বর্তমানে পবিত্র মদিনা শরীফ নামে পরিচিত) সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সেটি দখল করে নেন এবং উনার পুত্রকে সেখানকার অধিকর্তা নিয়োগ করে দেশে ফিরে যান, কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই হযরত আসআদ বিন র্কাব তুব্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পুত্রকে কে বা কারা হত্য করে। পুত্র হত্যার সংবাদে তিনি এতোই প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠেন যে, আমিয়া নগরী উনাকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে সমূলে উচ্ছেদ তথা ধ্বংস করার অভিপ্রায় নিয়ে পুনরায় আমিয়াতে (পবিত্র মদীনা শরীফ) আসেন এবং উনার নিদের্শ মুতাবিক সেনাবাহিনী ধ্বংসলীলা শুরু করে, কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো উনার সেনাবাহিনী প্রত্যহ যেটুকু ধ্বংস করে, পরবর্তী দিন দেখা যায় তা পূনরায় পুর্বাবস্থায় ফিরে আসে।
ফলশ্রুতিতে হযরত আসআদ বিন র্কাব তুব্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ঘটনার মর্ম জানার জন্য উনার বন্দীকৃত লোকজনের মধ্যে যে সমস্ত তাওরাতপন্থী ইহুদী আলিম ছিলেন তাদের নিকট এই অত্যাশ্চর্য ঘটনার কারণ জিজ্ঞেস করায় তারা বাদশাহ্ হযরত আসআদ বিন র্কাব তুব্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলেন যে, আপনি আপনার ইচ্ছানুযায়ী সবকিছু করতে পারলেও এই শহরের বিন্দুমাত্র ক্ষতি সাধন করতে পারবেন না। কেননা আখিরী যামানার প্রতিশ্রুত নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ভবিষ্যতে এ শহরের আতিথ্য গ্রহণ করবেন। তখন হযরত আসআদ বিন র্কাব তুব্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইহুদীদের এ কথার সত্যতার প্রমাণ কোথায় রয়েছে তা জানতে চাইলে তারা তাদের প্রতি নাযিলকৃত পবিত্র তাওরাত কিতাবের কথা বলেন, এবং সত্যতা যাচাইয়ের প্রেক্ষিতে পবিত্র তাওরাত কিতাবসহ দু’জন পবিত্র তাওরাতপন্থীকে অগ্নিকু-ে প্রবেশ করার নির্দেশ দেয়া হলে দেখা গেল যে, তাওরাতপন্থী দু’ব্যক্তি কিতাবসহ সেই জ্বলন্ত অগ্নিকু- থেকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় বের হয়ে আসেন। সুবহানাল্লাহ! অথচ হযরত আসআদ বিন র্কাব তুব্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন উনার দুই অগ্নিপূজক অনুচরকে তাদের অগ্নিদেবের মূর্তিসহ অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করতে বললেন তখন দেখা গেলো যে, তারা অগ্নিকু-ে প্রবেশ করার পূর্বেই তাদের সমস্ত শরীর ঝলসে গেল। নাঊযুবিল্লাহ!
এসব ঘটনা অবলোকন করে হযরত আসআদ বিন র্কাব তুব্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্পূর্ণ অন্য মানুষে পরিণত হন এবং পবিত্র মদীনা শরীফ ধ্বংসের ব্যর্থ কোশেশের জন্যে তীব্র অনুশোচনায় পাপ খ-ানোর নিমিত্তে উনার বন্দিকৃতদের মধ্যে থেকে পবিত্র তাওরাত কিতাবের উপর পান্ডিত্যের অধিকারী চারশত ইহুদি আলিমকে মুক্তি দিয়ে তাদেরকে আমিয়া নগরী (পবিত্র মদীনা শরীফ)-এ স্থায়ীভাবে বসবাস করার বন্দোবস্ত করে দেন।
তাদের মধ্যকার প্রধান ব্যক্তিত্ব হযরত শাহাউল নামক আলেম উনার কাছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ লেখা একটি চিঠি দেন এবং বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি উনার হায়াত মোবারকে এ শহরে আগমন করেন তবে তিনিই যেনো এই চিঠি উনার হাত মুবারক-এ দেন। যদি উনার হায়াত মুবারক-এ না আসেন তবে যেন চিঠিটি ইন্তেকালের পূর্বে উনার পুত্রের নিকট দিয়ে যান, এভাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন না ঘটা পর্যন্ত যেন বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে। বাদশাহ্ হযরত আসআদ বিন র্কাব তুব্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলে দেন যে, তিনি যে বাড়িটি নির্মাণ করেছেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য, সে বাড়িতে আপাততঃ হযরত শাহাউল তিনি অবস্থান করবেন। পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন এ শহরে তাশরীফ আনবেন তখন যেন তিনি ওই বাড়িতেই অবস্থান করেন এবং এজন্য তিনি যেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুরোধ করেন।
৬২২ ঈসায়ী সনে হজ্জ মৌসূমে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে ৭৩ জন মুসলমান উনাদের একটি কাফিলা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ তাশরীফ মুবারক নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে পবিত্র মদীনাবাসী উনাদের একটি আমন্ত্রণনামা পেশ করেন।
উক্ত প্রতিনিধি দলে হযরত আবু লাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নামে এক যুবক ছিলেন, যিনি ছিলেন সেই হযরত শাহাউল যার নিকট সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে লিখিত বাদশাহ্ হযরত আসআদ বিন র্কাব তুব্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চিঠিও অর্পিত ছিলো, উনার বংশধর হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পুত্র হযরত আবু লাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন উক্ত প্রতিনিধি দলের সাথে যাচ্ছিলেন তখন হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অত্যন্ত গোপনে উনার পুত্র উনার হাত মুবারক-এ চিঠিখানা দিয়ে বললেন যে, তিনি যেনো চিঠিখানার কথা গোপন রাখেন এবং যদি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চিঠিখানার কথা জিজ্ঞেস না করেন তবে যেন এ ব্যাপারে কিছু বলা না হয় এবং চিঠিখানা ফেরত নিয়ে আসেন। অথচ দেখা গেলো উক্ত প্রতিনিধি দলটি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আসলে তিনি হযরত আবু লাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দিকে আঙ্গুল মুবারক দিয়ে নিদের্শ করে বললেন, আপনার  নামতো হযরত আবু লাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আপনার কাছে বাদশাহ্ হযরত আসআদ বিন র্কাব তুব্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক আমার জন্য লিখিত পত্রখানি লুকায়িত আছে। উহা বের করুন। এ কথায় উপস্থিত সকলেই আশ্চর্যান্বিত হলেন। অতঃপর হযরত আবু লাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি চিঠিখানা বের করে নিজেই উচ্চস্বরে জনসম্মুখে পড়ে শুনালেন। চিঠিখানা পড়ে সকলেই অবহিত হলেন যে, এটি প্রায় ১৪০০ বৎসর পূর্বে লেখা।
চিঠিখানা ছিলো এই-
ইয়া সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি দুরূদ ও সালাম উনার পর আমি এই মর্মে ঘোষনা করছি যে, আমি আপনার এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনার কর্তৃক আপনার প্রতি যাবতীয় বিষয়ের উপর ঈমান আনলাম। আমি আরাে ঘোষণা করছি, আমি আপনার দ্বীন ধর্মান্তরিত হলাম, অর্থাৎ আপনার পবিত্র পবিত্র দ্বীনে ইসলাম উনাকে গ্রহণ করলাম এবং আপনার সৃষ্টিকর্তা উনার উপর পবিত্র ঈমান আনলাম এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিকট হতে আপনার জন্য পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে যে সমস্ত আইন বলবৎ রবে তাও মেনে নিলাম। আমি প্রার্থনা (আরজি) করছি, শেষ বিচারের দিন আপনি যেন আমাকে শাফায়াত দান করেন এবং ওই দিন যেনো আমাকে ভুলে না যান। আমি আপনার প্রথম উম্মত ও অনুসারী হলাম। আপনার নিকট আমার দাবি আরো জোরদার করার লক্ষ্যে, আমি আপনার পূর্বপুরুষ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার ধর্মে দীক্ষিত হলাম এবং সেই ধর্মানুযায়ী আমি বর্তমান জীবনযাপন করছি।”
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মদীনা শরীফ হিযরত করেন তখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সমস্ত মুসলমানই উনাদের নিজ নিজ বাড়িতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবস্থান নিতে অনুরোধ জানান, এতে করে সকলের মন রক্ষা করা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমার উটনী সেচ্ছায় যে বাড়ির সম্মুখে অবস্থান নিবে সে বাড়িতেই আমি অবস্থান নিবো। আর উটনীটি ছিলো মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আদিষ্ট।
দেখা গেলো উটটি উনার নিজের ইচ্ছায় হযরত আবু লাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাড়ির সম্মুখে বসে পড়লো যা কিনা বাদশাহ হযরত আসআদ বিন র্কাব তুব্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ১৪০০ বৎসর পূর্বে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বসবাসের জন্য বিশেষভাবে নির্মাণ করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ذلك فضل الله يوتيه من يشاء والله ذوالفضل العظيم
অর্থ: “ইহা মহান আল্লাহ পাক উনার ফদ্বল বা অনুগ্রহ; তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি সুমহান অনুগ্রশীল।” পবিত্র সুরা হাদীদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ- ২১
অধিকন্তু ইয়ামেনের বাদশাহ হযরত তুব্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন পবিত্র মদীনা শরীফ অতিক্রম করেছিলেন তখন উনার সহগামী ছিলেন পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার চারশত বিশিষ্ট আলিম। এছাড়া অন্যান্য সকল আলিমগণই এ দাবি করেন যে, উনাদেরকে এ পবিত্র যমীনে থাকার অনুমতি দেয়া হোক। বাদশাহ সেখানে উনাদের অবস্থানের অনুমতি দান করেন এবং প্রত্যেকের জন্য পৃথক পৃথক একটি করে ঘর তৈরি করে দেন। প্রত্যেককে নিকাহ করিয়ে দেন এবং সবাইকে প্রচুর ধন-সম্পদ হাদিয়া করেন। এছাড়া তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ একটি পত্র লিখেন। যাতে স্বীয় আনুগত্য ও উনার দীদার মুবারক-এর প্রবল আকাঙ্খা প্রকাশ করেছেন।
পত্রের সার সংক্ষেপ ছিলো এরূপ-
شهد على حضرت احمد صلى الله عليه وسلم + رسول من الله بارى النسم-
فلومد عمرى الى عمره + لكنت وزيرا له ابن عم
وجاهدت بالسيف اعداءه + وفرجت عن صدره كل هم
অর্থ: “আমি হযরত তুব্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি এ কথা মুবারক উনার উপর সাক্ষ্য দিচ্ছি এবং ঈমান আনছি যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে মনোনীত রসূল বা হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং কায়িনাতের মাঝে তিনি সবচেয়ে সম্মানিত। (সুবহানাল্লাহ)। যদি আমার বয়স ওই পর্যন্ত পৌঁছে তাহলে আমি অবশ্যই উনার খিদমত করতাম এবং উনার চাচাতো ভাইয়ের ন্যায় উনার খিদমত মুবারক-এর আঞ্জাম দিতাম। আমি উনার শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করতাম এবং উনার দুঃখ পেরেশানী দূর করতাম।”
হযরত আসআদ বিন কারব তুব্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ওই পত্রটি মোহরাঙ্কিত করেন এবং জনৈক আলিম উনার নিকট সোপর্দ করে বলেন, যদি আপনি ওই শেষ যামানার নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পান তাহলে আমার এ নিবেদন উনার নিকট পেশ করবেন। অন্যথায় আপনার সন্তানদের নিকট তা সোপর্দ করে এ অসীয়তই করবেন যা আমি আপনাকে করেছি।
হযরত আবূ আইয়ুব আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ওই আলিম উনারই বংশধরদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং উক্ত গৃহ মুবারক ঠিক ওই গৃহ মুবারক ছিলো যা ইয়ামেনের বাদশাহ তুব্বা কেবল ওই উদ্দেশ্যেই নির্মাণ করেছিলেন যে, যখন শেষ যামানায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরত মুবারক করে এখানে তাশরীফ নিবেন তখন ওই গৃহ মুবারক-এ অবস্থান করবেন। কাজেই দেখা গিয়েছিলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উটনী মুবারক ওই বাড়ি মুবারক-এর দরজায় এসে থামলো। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ যে স্থান মুবারক-এ নির্মিত হয়েছে, সে স্থান মুবারক ছিলো খেজুর শুকানোর খলা। দু’জন ইয়াতীম ছেলে ছিলেন এ স্থান মুবারক-এর মালিক, যাঁরা ছিলেন হযরত আসয়াদ ইবনে যুরারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতিপালনাধীন। আর ইয়াতীম সন্তানদ্বয়ের নাম ছিলো হযরত সাহল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের নিকট মূল্য জানতে চাইলে উনারা বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা মূল্য গ্রহণ করবো না; বরং জায়গাটি আপনাকে হাদিয়া করলাম। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এর মূল্য পরিশোধ করে তথায় পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ নির্মাণ করেন। রাবী বলেন, সকলের সঙ্গে মাটি মুবারক বহনকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাঠ করলেন,
هذ الحمال لاحمال خيبر- هذا ابر ربنا واطهر
এ বোঝা খায়বারের বোঝা নয়, হে বারী তায়ালা মহান আল্লাহ পাক! এটি অনেক কল্যাণময়, অনেক পবিত্র।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বললেন,
لاهم ان الاجر اجر الاخرة- فارحم الانصار والمهاجرة

হে মহান আল্লাহ পাক! আখিরাতের পুরস্কারই তো প্রকৃত পুরস্কার। তাই রহম করুন হযরত আনছার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে।

0 Comments: