হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৭৫১-৯২৪) (ট)


প্রথম পবিত্র জুমুয়া শরীফ উনার নামায ও খুতবা মুবারক
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে দিন উনার উটনী বা কাসওয়া মুবারক-এ চড়ে পবিত্র কুবা থেকে রওয়ানা হলেন, সে দিনটি ছিলো পবিত্র জুমুয়া উনার দিন। বনূ সালিম ইবনে আওফ গোত্রে পৌঁছতে দুপুর গড়িয়ে যায়। তাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে প্রথম জুমুয়া উনার নামায মুবারক আদায় করেন। এদিনই ছিলো মুসলমান উনাদের প্রথম জুমুয়ার নামায।
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ২১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে বনু সালিম আমর ইবনে আওফ মহল্লায় প্রথম পবিত্র জুমুয়া উনার নামাযে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে খুতবা মুবারক দান করেন, তা ছিলো নিম্নরুপ-
الحمد لله أحمده واستعينه، وأستغفره واستهديه، وأومن به ولا أكفره، وأعادي من يكفره وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأن حضرت محمدا عبده ورسوله صلى الله عليه و سلم أرسله بالهدى ودين الحق والنور والموعظة على فترة من الرسل، وقلة من العلم، وضلالة من الناس، وانقطاع من الزمان، ودنو من الساعة، وقرب من الاجل. من يطع الله ورسوله صلى الله عليه و سلم فقد رشد، ومن يعصهما فقد غوى وفرط وضل ضلالا بعيدا،
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার। আমি উনার প্রশংসা করছি, উনার নিকট সাহায্য চাচ্ছি উনার নিকট ইস্তিগফার করছি এবং উনার নিকট হিদায়েত কামনা করছি। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান এনেছি। উনার প্রতি কুফরী করি না, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে কুফরী করে আমি তার সঙ্গে মুহব্বত রাখি না, তাকে শত্রু মনে করি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, উনার কোনো শরীক নেই, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করেছেন হিদায়েত ও নূর আর সত্য দ্বীন ইসলাম উনাকে সহকারে নছীহত নিয়ে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমনের বিরতির পর। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে প্রেরণ করেছেন ইলমের স্বল্পতা, মানুষের গুমরাহী সময়ের ব্যবধান ক্বিয়ামতের নৈকট্য আর মৃত্যু ঘনিয়ে আসার পর। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আনুগত্য করে সে নিশ্চিত সঠিক পথের তথা হিদায়েত লাভ করবে আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাফরমানী করবে, সে তো নিশ্চিত বিপদগামী হবে, স্থানচ্যুত হবে এবং গুমরাহীর অতল তলে নিমজ্জিত হবে। 
وأوصيكم بتقوى الله فإنه خير ما أوصى به المسلم المسلم أن يحضه على الآخرة، وأن يأمره بتقوى الله، فاحذروا ما حذركم الله من نفسه، ولا أفضل من ذلك نصيحة، ولا أفضل من ذلك ذكرا. وإنه تقوى لمن عمل به على وجل ومخافة [ من ربه] وعون صدق على ما تبتغون من أمر الآخرة، ومن يصلح الذي بينه وبين الله من أمر السر والعلانية لا ينوي بذلك إلا وجه الله يكن له ذكرا في عاجل أمره وذخرا فيما بعد الموت، حين يفتقر المرء إلى ما قدم، وما كان من سوى ذلك يود لو أن بينه وبينه أمدا بعيدا، ويحذركم الله نفسه والله رؤوف بالعباد.
আমি আপনাদেরকে নির্দেশ করছি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে চলার। কারণ একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে যে বিষয় নির্দেশ বা ওয়াসীয়ত করতে পারেন তন্মধ্যে তাকওয়া হলো সর্বোত্তম। একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে আখিরাতের জন্য উদ্বুদ্ধ করবেন। মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে চলার হুকুম করবেন। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদেরকে নিজেদের ব্যাপারে যে সতর্ক করেছেন আপনারা সে ব্যাপারে সতর্ক হোন। এর চেয়ে উত্তম নছীহত মুবারক নেই, নেই এর চেয়ে কোনো উত্তম উপদেশ মুবারক। মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে ভীত হয়ে আমল করাই হলো তাকওয়া। যে ব্যক্তি উনার নিজের এবং মহান আল্লাহ পাক উনার মধ্যকার গোপন এবং প্রকাশ্য বিষয় সংশোধন করে নিয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে কার্যসম্পাদন করে এ ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কিছু কামনা করে না, তার পরিণাম তার মৃত্যু পরবর্তী জীবন হবে তার জন্য যিকির ও সঞ্চয়স্বরূপ। তখন মানুষ যা অগ্রে প্রেরণ করেছে তার মুখাপেক্ষী হবে, হবে সে কাঙ্গাল। আর যে কাজ হবে এর বিপরীত, সেজন্য সে ব্যক্তি কামনা করবে যে, যদি তার এবং সে কর্মের মধ্যে দীর্ঘ ব্যবধান সৃষ্টি হতো। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদেরকে সাবধান করেছেন উনার নিজের ব্যাপারে। আর বান্দাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি অতিশয় দয়ালু।
والذي صدق قوله، وأنجز وعده، لاخلف لذلك فإنه يقول تعالى: (ما يبدل القول لدي وما أنا بظلام للعبيد) واتقوا الله في عاجل أمركم وآجله في السر والعلانية فإنه: (من يتق الله يكفر عنه سيئاته ويعظم له أجرا) (ومن يتق الله فقد فاز فوزا عظيما)
আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালাম সত্য করে দেখান, পুরণ করেন  উনার ওয়াদা-অঙ্গীকার। এর কোনো খিলাফ তিনি করেন না, করেন না ব্যতিক্রম। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
مَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ وَمَا أَنَا بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ
অর্থ: “আমার কথায় কোনো রদবদল হয় না, কোনো হেরফের হয় না এবং আমি বান্দাদের প্রতি অবিচার করি না।” (পবিত্র সূরা ক্বফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)
ইহকাল আর পরকালের সব ক্ষেত্রে গোপন আর প্রকাশ্যে কেবল মহান আল্লাহ পাক উনাকেই ভয় করে চলবেন। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُعْظِمْ لَهُ أَجْرًا
অর্থ: “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে চলবে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঐ ব্যক্তির পাপরাশি মোচন করবেন এবং তাকে দেবেন মহা পুরস্কার। (পবিত্র সূরা ত্বলাক শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَن يُطِعْ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا
অর্থ: “আর যারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য করবে, তারা মহা সাফল্য অর্জন করবে।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭১)
وإن تقوى الله توقي مقته، وتوقي عقوبته، وتوقي سخطه. وإن تقوى الله تبيض الوجه، وترضي الرب، وترفع الدرجة، خذوا بحظكم ولا تفرطوا في جنب الله قد علمكم الله كتابه، ونهج لكم سبيله ليعلم الذين صدقوا وليعلم الكاذبين فاحسنوا كما أحسن الله إليكم، وعادوا أعداءه وجاهدوا في الله حق جهاده هو اجتباكم وسماكم المسلمين ليهلك من هلك عن بينة ويحيى من حي عن بينة ولا قوة إلا بالله، فأكثروا ذكر الله واعملوا لما بعد الموت فإنه من أصلح ما بينه وبين الله يكفه ما بينه وبين الناس ذلك بأن الله يقضي على الناس ولا يقضون عليه، ويملك من الناس ولا يملكون منه، الله أكبر ولا قوة إلا بالله العلي العظيم
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার ভয় উনার গোসসা থেকে রক্ষা করে, উনার শাস্তি থেকে রক্ষা করে, মহান আল্লাহ পাক উনার বিরাগভাজন হওয়া থেকেও রক্ষা করে। আর মহান আল্লাহ পাক উনার ভয় চেহারাকে উজ্জ্বল করে, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি আকর্ষণ করে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করে। আপনারা নিজেদের অংশ গ্রহণ করুন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রতি কর্তব্যে শৈথিল্য করেন না। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি তো তোমাদেরকে উনার কিতাব শিক্ষা দিয়েছেন, তোমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন উনার পথ, যাতে করে তিনি (প্রকাশ্যে) জানতে পারেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী। সুতরাং অন্যদের প্রতি আপনারা অনুগ্রহ করুন, যেমনটি মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার প্রতি করেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন বা শত্রুদের সঙ্গে আপনারাও শত্রুতা করুন। আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার পথে জিহাদ করবেন যেভাবে জিহাদ করা উচিত। তিনি আপনাদেরকে বাছাই করে নিয়েছেন এবং আপনাদের মুসলমান নামকরণ করেছেন। তাতে যারা ধ্বংস হওয়ার তারা যেন সত্য -অসত্য স্পষ্ট হওয়ার পর ধ্বংস হয়, আর যাদের বেঁচে থাকার, তারা যেন সত্য-অসত্য স্পষ্ট হওয়ার পর বেঁচে থাকে। আর মহান আল্লাহ পাক উনার সাহায্য ছাড়া কারো কোনো কিছু করার শক্তি নেই। আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার বেশি বেশি যিকির বা স্মরণ করবেন এবং ইন্তিকালের পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করবেন। কারণ কেউ তার এবং মহান আল্লাহ পাক উনার মধ্যের সম্পর্ক সুন্দর আর সংশোধন করলে তার এবং মানুষের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট হবে। আর এটা এইজন্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষের বিচার ফায়ছালা করেন। মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনার বিচার করতে পারে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষের মালিক, মানুষের কোনো আধিপত্য নেই। আল্লাহু আকবার। মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও সুমহান, মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোনো শক্তি নেই।

হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবূল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে প্রথম যে খুতবা মুবারক পেশ করেন, তাতে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সুমহান প্রশংসা মুবারক করার পর ইরশাদ মুবারক করেন,
أما بعد أيها الناس فقدموا لانفسكم، تعلمن والله ليصعقن أحدكم، ثم ليدعن غنمه ليس لها راع، ثم ليقولن له ربه - ليس له ترجمان ولا حاجب يحجبه دونه - ألم يأتك رسولي فبلغك، وآتيتك مالا، وأفضلت عليك، فما قدمت لنفسك ؟ فينظر يمينا وشمالا فلا يرى شيئا، ثم ينظر قدامه فلا يرى غير جهنم، فمن استطاع أن يقي وجهه من النار ولو بشق تمرة فليفعل، ومن لم يجد فبكلمة طيبة فإن بها تجزى الحسنة عشر أمثالها إلى سبعمائة ضعف والسلام على رسول الله صلى الله عليه و سلم ورحمة الله وبركاته
অর্থ: “অতঃপর হে লোক সকল! আপনারা নিজেদের জন্য নেক আমল অগ্রে প্রেরণ করুন। আপনারা অবশ্যই জানতে পারবেন। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনাদের মধ্যে প্রত্যেকেই বেহুঁশ হয়ে পড়বে এবং তার বকরী পাল রাখালহীন অবস্থায় ছেড়ে চলে যাবে, এরপর তার রব খালিক্ব মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করবেন, তখন কিন্তু কোনো দোভাষী থাকবে না। থাকবে না কোনো প্রহরী- যে উভয়ের মধ্যে অন্তরায় হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, তোমার নিকট আমার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আগমন করে কি আমার বাণী পৌঁছাননি? আমি তোমাকে ধন-সম্পদে ধন্য করেছিলাম এবং তোমার উপর ফদ্বল বা করুণারাজি বর্ষণ করেছিলাম। তুমি নিজের জন্য অগ্রে কি প্রেরণ করেছো? তখন সে বান্দা ডানে-বাঁয়ে দৃষ্টিপাত করবে কিন্তু কিছুই দেখতে পাবে না। এরপর সে সম্মুখে দৃষ্টিপাত করবে জাহান্নাম ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না।
কেউ যদি একটুকরা খেজুরের বিনিময় তার চেহারাকে তথা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়, তবে তার তাই করা উচিত। আর কেউ তা না পারলে সুন্দর সুন্দর পবিত্র কথা দ্বারা তা করবে। কারণ এতেই নেকীর পুরস্কার দেয়া হবে একে দশগুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত ও উনার বরকত।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া শরীফ, বাইহাক্বী শরীফ)
অপর এক খুতবা মুবারক উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
أن الحمد لله أحمده واستعينه، نعوذ بالله من شرور أنفسنا وسيئات أعمالنا، من يهده الله فلا مضل له، ومن يضلل فلا هادي له.وأشهد أن لا إله إلا الله (وحده لا شريك له)، إن أحسن الحديث كتاب الله، قد أفلح من زينه الله في قلبه وأدخله في الاسلام بعد الكفر واختاره على ما سواه من أحاديث الناس، إنه أحسن الحديث وأبلغه، أحبوا من أحب الله،
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। আমি উনার প্রশংসা করছি এবং উনার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি। আমাদের তথা উম্মতের নফসের অনিষ্টতা আর আমলের ত্রুটি থেকে আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে হিদায়েত দান করেন তথা মহান আল্লাহ উনার নিকট যাঁরা হিদায়েত চায়, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাঁকে হিদায়েত দান করেন। আর যে ব্যক্তি গুমরাহীর উপর দৃঢ় থাকে, সে হিদায়েত লাভ করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই (তিনি এক উনার কোন শরীক নেই)। মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম শরীফ নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সুন্দরতম কথা মুবারক। অবশ্যই ওই ব্যক্তি কামিয়াবী অর্জন করেছেন যাঁর ক্বলব বা অন্তরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সুসজ্জিত বা সুশোভিত করেছেন এবং তিনি উনাকে কুফরী থেকে বের করে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে প্রবেশ করিয়েছেন এবং অন্যান্য জিন-ইনসান মানুষের থেকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে বাছাই করে নিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম বা কথা মুবারক নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সুন্দরতম কালাম এবং সবচেয়ে গাম্ভীর্যপূর্ণ ও মর্মস্পর্শী কালাম পাক। মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁদের মুহব্বত করেন আপনারাও উনাদেরকে মুহব্বত করবেন।
أحبوا الله من كل قلوبكم (ولا تملوا كلام الله وذكره ولا تقسى عنه قلوبكم) فإنه من يختار الله ويصطفي فقد سماه خيرته من الاعمال، وخيرته من العباد، والصالح من الحديث ومن كل ما أوتي الناس من الحلال والحرام فاعبدوا الله ولا تشركوا به شيئا واتقوه حق تقاته، واصدقوا الله صالح ما تقولون بأفواهكم وتحابوا بروح الله بينكم إن الله يغضب أن ينكث عهده والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته
তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বান্তঃকরণে মুহব্বত করবে। (মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম আর উনার যিকির সম্পর্কে তোমরা অলসতা বা ক্লান্তি বোধ করো না। এ ব্যাপারে তোমাদের অন্তর যেন কঠিন ও কঠোর না হয়।) কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে মনোনীত করেছেন আর উনার উত্তম নামকরণ করেন এবং উত্তম বান্দাদের মধ্যে উনাকেও স্থান দান করেন, উনাকে সর্বত্তোম কালাম এবং আর হালাল হারাম-এর ইলম দান করেন। সুতরাং তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং উনার সাথে কোনো কিছুকেই শরীক করবে না। আর তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, ভয় করার মতো। আর তোমরা মুখে যা বলবে মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক সম্পর্কে তা হক্ব হিসেবে জানবে। আর মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার জন্য নিজেদের মধ্যে মুহব্বত বিনিময় করবে। মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা মহান আল্লাহ পাক উনাকে গোসসা করে তোলে। “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।”

0 Comments: