হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৭৫১-৯২৪) (খ)


فكلماه وقالا له إن أمك قد نذرت أن لا يمس رأسها مشط حتى تراك، ولا تستظل من شمس حتى تراك، فرق لهفقلت له إنه والله إن يريدك القوم الا ليفتنوك عن دينك فاحذرهم، فوالله لو قد اذى أمك القمل لامتشطت، ولو قد اشتد عليها حر مكة لاستظلت. قال فقال أبر قسم أمى ولى هنالك مال فاخذه قال قلت والله إنك لتعلم أنى لمن أكثر قريش مالا، فلك نصف مالى ولا تذهب معهما. قال فابى على الا أن يخرج معهما، فلما أبى إلا ذلك قلت أما إذ فعلت ما فعلت فخذ ناقتى هذه فانها ناقة تجيبة ذلول فالزم ظهرها، فان رابك من أمر القوم ريب فانج عليها. فخرج عليها معهما حتى إذا كانوا ببعض الطريق قال له أبو جهل يا أخى والله لقد استغلظت بعيرى هذا أفلا تعقبنى على ناقتك هذه قال بلى.
এরা দু’জন হযরত আইয়্যাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট আগমন করে উনার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে উনাকে জানায় যে, আপনার মা মানত করেছে যে, আপনাকে না দেখে সে মাথার চুল আঁচড়াবে না। সে আরো মানত করেছে যে, আপনাকে না দেখা পর্যন্ত সে কোনো ছায়ায় বসবে না। এসব শুনে উনার অন্তর বিগলিত হলো। আমি উনাকে বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এরা আসলে আপনাকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার থেকে বিচ্যুত করতে চায়। কাজেই তাদের ব্যাপারে আপনি সতর্ক থাকবেন। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম করে বলছি। উকুন আপনার মাকে উত্যক্ত করলে সে অবশ্যই চিরুনী ব্যবহার করবে। আর পবিত্র মক্কা শরীফ উনার উষ্ণতা তীব্র আকার ধারণ করলে সে অবশ্যই ছায়ায় যাবে। হযরত আইয়্যাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি আমার মায়ের ক্বসম পূর্ণ করবো এবং পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে আমার যে ধন-সম্পদ রয়েছে তাও নিয়ে আসবো। তিনি বললেন, আমি উনাকে বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনি তো ভালো করে জানেন যে, আমি কুরাইশদের মধ্যে সর্বাধিক ধনী ব্যক্তি। আমার অর্ধেক সম্পদ আপনাকে দান করবো। তবুও আপনি তাদের সঙ্গে যাবেন না। তিনি বলেন, ফলে তিনি তাদের সঙ্গে বের হতে অস্বীকার করেন। তিনি যখন এটা অর্থাৎ পবিত্র মক্কা শরীফ ফিরে যাওয়া ছাড়া সবই অস্বীকার করলেন, তখন আমি উনাকে বললাম যে, আপনি যখন যা করার তাই করবেন আরো বললেন, আমার এ উটনীটি গ্রহণ করুন। এটি উচ্চ বংশজাত এবং অনুগত উটনী। আপনি তার পিঠে চড়বেন আর এদের কোনো বিষয় আপনাকে সন্দেহে ফেললে তার পিঠে চড়ে আপনি ফিরে আসবেন। ফলে উটনীর পিঠে চড়ে তিনি তাদের উভয়ের সঙ্গে বের হলেন, পথিমধ্যে আবু জাহল উনাকে বলে যে, ভাই মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি মনে করি আমার উটনীটি বেশ অবসন্ন হয়ে পড়েছে। আপনি কি আমাকে আপনার উটনীর পিঠে বসতে দেবেন! হযরত আইয়্যাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হ্যাঁ।
فاناخ وأناخا ليتحول عليها، فلما استووا بالأرض عدوا عليه فأوثقاه رباطا. ثم دخلا به مكة وفتناه فافتتن. قال حضرت عمر عليه السلام فكنا نقول لا يقبل الله ممن افتتن توبة. وكانوا يقولون ذلك لانفسهم حتى قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم المدينة وأنزل الله (قل ياعبادى الذين أسرفوا على أنفسهم لا تقنطوا من رحمة الله إن الله يغفر الذنوب جميعا إنه هو الغفور الرحيم، وأنيبوا إلى ربكم وأسلموا له من قبل أن يأتيكم العذاب ثم لا تنصرون، واتبعوا أحسن ما أنزل اليكم من ربكم من قبل أن يأتيكم العذاب بغتة وأنتم لا تشعرون)
অবশ্যই অবশ্যই তিনি উটনী বসালেন আর তারা দু’জনও উটনী বসালো। তারা সকলে মাটিতে নামতে দু’জন ছুটে এসে উনাকে কষে বেঁধে ফেলে এবং পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে পৌঁছে  উনার প্রতি নির্যাতন চালায়। হযরত উমর ফারূক আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমরা বলতাম, যে ব্যক্তি পরীক্ষায় পড়েছে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে ক্ষমা করবেন। আর তারাও নিজেদের জন্যে এ কথা বলতো। এ সময় মদীনা শরীফ উনার মধ্যে আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে আগমন করেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিম্নোক্ত  পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন।
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ- وَأَنِيبُوا إِلَى رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ- وَاتَّبِعُوا أَحْسَنَ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ العَذَابُ بَغْتَةً وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
অর্থ:- হে আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, হে আমার (মহান আল্লাহ পাক উনার) বান্দাগণ তোমরা যারা নিজেদের উপর যুলুম বা অবিচার করেছো মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে নিরাশ হবে না। মহান আল্লাহ পাক সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনিতো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তোমরা তোমাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনার অভিমুখী হও এবং উনার কাছে আত্মসমর্পণ করো তোমাদের নিকট আযাব আসার পূর্বে। তারপরে তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না। তোমাদের প্রতি তোমাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট থেকে উত্তম যা কিছু নাযিল করা হয়েছে, তোমরা তার অনুসরণ করো- তোমাদের উপর আতর্কিতভাবে তোমাদের অজ্ঞাতসারে আযাব আসার পূর্বে।” (পবিত্র সূরা যুমার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৩-৫৫)
قال حضرت عمر عليه السلام وكتبتها وبعثت بها إلى حضرت هشام بن العاص رضى الله تعالى عنه. قال حضرت هشام رضى الله تعالى عنه فلما أتشنى جعلت اقرأها بذى طوى أصعد بها وأصوب ولا أفهمها حتى قلت اللهم فهمنيها، فألقى الله فى قلبى أنها إنما أنزات فينا وفيما كنا نقول فى أنفسنا، ويقال فينا، قال فرجعت إلى بعيرى فجلست عليه فلحقت برسول الله صلى الله عليه وسلم بالمدينة. وذكر حضرت ابن هشام رحمة الله عليه أن الذى قدم بهشام بن العاص رضى الله تعالى عنه، و حضرت عياش ابن أبى ربيعة رضى الله تعالى عنه إلى المدينة؛ حضرت الوليد بن المغيرة رضى الله تعالى عنه سرقهما من مكة وقدم بها يحملهما على بعيره وهو ماش معهما، فعثر فدميت أصبعه فقال : هل أنت إلا أصبع دميتوفى سبيل الله ما لقيت
হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি উপরোক্ত আয়াত শরীফ লিপিবদ্ধ করে হযরত হিশাম ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনার নিকট প্রেরণ করি। হযরত হিশাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন যে, লিপিটি আমার নিকট পৌঁছলে আমি ‘যীতুয়া’ উপত্যকায় উঠতে উঠতে ও নামতে নামতে তা পাঠ করতে থাকি। কিন্তু তার মর্ম উদ্ধার করতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত আমি দুআ করি, হে বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আমার নিকট পবিত্র আয়াত শরীফখানা নাযিলের মর্ম স্পষ্ট করে দিন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার অন্তরে এ ভাবের উদয় ঘটান যে, এটি তো আমাদের প্রসঙ্গেই নাযিল হয়েছে। আমরা নিজেদের সম্পর্কে যা বলাবলি করতাম এবং আমাদের সম্পর্কে লোকেরা যা বলাবলি করতো, সে প্রসঙ্গেই পবিত্র আয়াত শরীফগুলো নাযিল হয়েছে। হযরত হিশাম ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি আমার উটের নিকট ফিরে এলাম এবং তার পিঠে সাওয়ার হয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে গিয়ে আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে মিলিত হলাম। হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন যে, হযরত ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত হিশাম ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আইয়্যাশ ইবনে আবু রবীআ  রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে নিয়ে আসেন। উনাাদের দু’জনকে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে গোপনে নিজের উটের উপর সাওয়ার করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে নিয়ে আসেন আর তিনি নিজে তাদের সঙ্গে পায়ে হেঁটে আসেন। পথে পা ফসকে গিয়ে উনার আঙ্গুল মুবারক যখম হলে তিনি বলেন,
هل أنت إلا أصبع دميتوفى سبيل الله ما لقيت
তুমি তো একটা আঙ্গুল বৈ কিছু নও। রক্তাপ্লুত হয়েছো। আর যা কষ্ট করলে তা তো করলে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায়।”
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ১৭৩  পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
اخرج البخارى عن حضرت البراء بن عازب رضى الله تعالى عنه. قال أول من قدم علينا حضرت مصعب بن عمير رضى الله تعالى عنه و حضرت ابن أم مكتوم رضى الله تعالى عنه، ثم قدم علينا حضرت عمار رضى الله تعالى عنه و حضرت بلال رضى الله تعالى عنه. وحدثنى حضرت محمد بن بشار رضى الله تعالى عنه عن حضرت البراء بن عازب رضى الله تعالى عنه. قال أول من قدم علينا حضرت مصعب بن عمير رضى الله تعالى عنه و حضرت ابن أم مكتوم رضى الله تعالى عنه وكانا يقرئان الناس، فقدم حضرت بلال رضى الله تعالى عنه و حضرت سعد رضى الله تعالى عنه و حضرت عمار بن ياسر رضى الله تعالى عنه ، ثم قدم حضرت عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه فى عشرين نفرا من أصحاب النبى صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, সর্বপ্রথম আমাদের নিকট আগমন করেন হযরত মুছআব ইবনে উমায়ির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তারপর হযরত ইবনে উম্মে মাকতুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অতঃপর হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আগমন করেন। হযরত মুহম্মদ ইবনে বাশ্শর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত বারা’ ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সর্বপ্রথম আমাদের নিকট আগমন করেন, হযরত মুছআব ইবনে উমায়ির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইবনে উম্মে মাকতুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনারা দু’জনে মানুষগণকে পবিত্র কুরআন মাজীদ শিখাতেন। এরপর আগমন করেন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এরপর আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ২০ জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি দল নিয়ে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি আগমন করেন।”
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه ولما قدم حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام المدينة هو ومن لحق به من أهله وقومه وأخوه حضرت زيد ابن الخطاب  و حضرت عمرو رضى الله تعالى عنه و حضرت عبد الله رضى الله تعالى عنه ابنا حضرت سراقة بن المعتمر رضى الله تعالى عنه و حضرت خنيس بن حذافة السهمى رضى الله تعالى عنه زوج ابنته حضرت حفصة رضى الله تعالى عنها و ابن عمه حضرت سعيد بن زيد بن عمرو بن نفيل رضى الله تعالى عنه و حضرت واقد بن عبد الله التميمى رضى الله تعالى عنه حليف لهم و حضرت خولى بن أبى خولى رضى الله تعالى عنها و حضرت مالك بن أبى خولى رضى الله تعالى عنه حليفان لهم من بنى عجل وبنو البكير إياس و حضرت خالد رضى الله تعالى عنه و حضرت عاقل رضى الله تعالى عنه و حضرت عامر رضى الله تعالى عنه وحلفاؤهم من بنى سعد بن ليث، فنزلوا على حضرت رفاعة بن عبد المنذر بن زنير رضى الله تعالى عنه فى بنى عمرو بن عوف بقباء.
অর্থ : “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত উমর ইবনে খত্তাব আলাইহিস সালাম এবং উনার সঙ্গী-সাথীদের মধ্যে ছিলেন উনার ভাই হযরত যায়িদ ইবনে খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা দু’জন ছিলেন হযরত সুরাকা ইবনে মু’তামির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পুত্র, হযরত উমর আলাইহিস সালাম উনার কন্য উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম উনার ছহিবুল মুকাররম হযরত খুনায়স ইবনে হুযাফা আস সাহমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার চাচাতো ভাই হযরত সায়ীদ ইবনে যায়িদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়ল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উনাদের মিত্র হযরত ওয়াকিদ ইবনে আব্দুল্লাহ তামীমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, বনূ আজল এবং বনূ বুকায়র থেকে উনাদের মিত্রদ্বয় হযরত খাওলা ইবনে আবূ খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত মালিক ইবনে আবূ খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং বনূ সাআদ ইবনে লায়ছ থেকে উনাদের মিত্র হযরত ইয়াস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আকিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উনারা কুবায় বনূ আমর ইবনে আওফ উনার শাখা গোত্র হযরত রিফাআ ইবনে আব্দুল মুনাযির ইবনে যিন্নীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে অবস্থান করেন।”
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه ثم تتابع المهاجرون رضى الله تعالى عنهم فنزل حضرت طلحة بن عبيد الله رضى الله تعالى عنه و حضرت صهيب بن سنان رضى الله تعالى عنه على حضرت خبيب بن إساف رضى الله تعالى عنه أخى بلحارث بن الخزرج بالسنح ويقال بن نزل حضرت طلحة رضى الله تعالى عنه على حضرت اسعد ابن زرارة رضى الله تعالى عنه.
অর্থ : “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এরপর এক এক করে হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আগমন ধারা অব্যাহত থাকে। হযরত ত্বলহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সুহায়ব ইবনে সিনান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা হযরত খুবাইব ইবনে ইসাফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, যিনি হযরত হারিছ ইবনে খাযরাজ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ভাই, উনার বাড়িতে অবস্থান করেন। আর উনার বাড়ি হচ্ছে সুনাহ নামক স্থানে। কেউ কেউ বলেন, হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত আসয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে অবস্থান করেন।
قال حضرت ابن هشام رحمة الله عليه وذكر لى عن حضرت ابى عثمان النهدى رحمة الله عليه أنه قال بلغنى أن حضرت صهيبا رضى الله تعالى عنه حين أراد الهجرة قال له كفار قريش أتيتنا صعلوكا حقيرا فكثر مالك عندنا وبلغت الذى بلغت، ثم تريد أن تخرج بمالك ونفسك والله لا يكون ذلك. فقال لهم حضرت صهيب رضى الله تعالى عنه أرأيتم إن جعلت لكم مالى أنخلون سبيلى؟ قالوا نعم! قال فانى قد جعلت لكم مالى. فبلغ ذلك رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال ربح حضرت صهيب رضى الله تعالى عنه، ربح حضرت صهيب رضى الله تعالى عنه،
অর্থ : “হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আবূ উছমান নাহদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে আমি জানতে পেরেছি যে, হযরত সুহায়ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হিজরতের ইচ্ছা পোষণ করলে কুরাইশ কাফির-মুশরিকরা উনাকে বলে, আপনি তো আমাদের কাছে এসেছিলেন নিঃস্ব, হীন ও তুচ্ছ অবস্থায়। এরপর আপনার ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে এখন তো আপনি বেশ মর্যাদাসম্পন্ন। আর এখন আপনি এখান থেকে হিজরত করে চলে যেতে চান আপনার জান ও মাল নিয়ে। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তা হতে পারে না। তখন হযরত সুহায়ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাদেরকে বললেন, কি বলো, আমি আমার সম্পদ তোমাদের হাতে তুলে দিলে তোমরা কি আমার পথ ছেড়ে দিবে? তারা বললো, হ্যাঁ, অবশ্যই। তখন হযরত সুহায়ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি আমার সমস্ত সম্পদ তোমাদের হাতে অর্পণ করলাম। এ সংবাদ আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন,
 ربح حضرت صهيب رضى الله تعالى عنه، ربح حضرت صهيب رضى الله تعالى عنه،
অর্থ : “হযরত সুহায়ব রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু তিনি লাভবান হয়েছেন, লাভবান হয়েছেন।”
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه ونزل حضرت حمزة بن عبد المطلب رضى الله تعالى عنه و حضرت زيد بن حارثة رضى الله تعالى عنه و حضرت أبو مرثد كناز بن الحصين رضى الله تعالى عنه وابنه حضرت مرثد الغنويان رضى الله تعالى عنه حليفا حضرت حمزة رضى الله تعالى عنه، و حضرت أنسة رضى الله تعالى عنه و حضرت أبو كبشة رضى الله تعالى عنه موليا رسول الله صلى الله عليه وسلم على حضرت كلثوم بن الهدم رضى الله تعالى عنه أخى بنى عمرو بن عوف بقباء، وقيل على حضرت سعد بن خيثمة رضى الله تعالى عنه، وقيل بل نزل حضرت حمزة رضى الله تعالى عنه على حضرت أسعد بن زرارة رضى الله تعالى عنه.
অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ মারছাদ কুনায ইবনে হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার পুত্র হযরত মারছাদ আল গানবিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মিত্র। আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযাদকৃত গোলাম হযরত আনিসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবূ কাবশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা কুবার বনূ আমর ইবনে আওফ গোত্রের পল্লিতে হযরত কুলছুম ইবনে হিদাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে অবস্থান করেন। আবার কেউ কেউ বলেন, হযরত সা’দ ইবনে খায়সাম রদ্বিয়াল্লাহু  তায়ালা আনহু উনার গৃহে অবস্থান করেন। আরো বলা হয়ে থাকে যে, হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত বনু নাজ্জারের হযরত আসয়াদ ইবনে যিরারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে উঠেছিলেন।
قال ونزل حضرت عبيدة بن الحارث رضى الله تعالى عنه وأخواه حضرت الطفيل رضى الله تعالى عنه و حضرت حصين رضى الله تعالى عنه و حضرت مسطح بن أثاثة رضى الله تعالى عنه و حضرت سويبط بن سعد ابن حريملة رضى الله تعالى عنه أخو بنى عبد الدار و حضرت طليب بن عمير رضى الله تعالى عنه أخو بنى عبد بن قصى و حضرت خباب مولى عتبة بن غزوان رضى الله تعالى عنه على حضرت عبد الله بن سلمة رضى الله تعالى عنه أخى بلعجلان بقباء
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত উবায়দা ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দু’ভাই হযরত তুফায়িল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মিসত্বাহ ইবনে উছাছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং বনূ আবদুদদা-এর হযরত সুয়াইবিত ইবনে সা’দ ইবনে হুরায়মালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং বনূ আবদ ইবনে কুসাই-এর হযরত ত্বুলায়িব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উতবা ইবনে গাযওয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আযাদকৃত গোলাম হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, কুবায় বলআজালান গোত্রের হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হযরত সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে অবস্থান করেন। 
ونزل حضرت عبد الرحمن بن عوف رضى الله تعالى عنه فى رجال من المهاجرين على حضرت سعد بن الربيع رضى الله تعالى عنه، ونزل حضرت الزبير بن العوام رضى الله تعالى عنه و حضرت أبو سبرة بن أبى رهم رضى الله تعالى عنه على حضرت منذر بن محمد بن عقبة بن أحيحة بن الجلاح رضى الله تعالى عنه بالعصبة دار بنى جحجبى ونزل حضرت مصعب بن عمير رضى الله تعالى عنه على حضرت سعد بن معاذ رضى الله تعالى عنه ، ونزل حضرت أبو حذيفة بن عتبة رضى الله تعالى عنه و حضرت سالم رضى الله تعالى عنه مولاه على حضرت سلمة رضى الله تعالى عنها.
আর একদল হযরত মুহাজির ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমসহ হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অবস্থান করেন হযরত সা’দ ইবনে রবী’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে। আর হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবূ সুবরা ইবনে আবূ রাহাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অবস্থান করেন হযরত মুনযির ইবনে মুহম্মদ ইবনে উকবা ইবনে উহাইহা ইবনে জাল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাড়ীতে উসবা নামক স্থানে ইবনে জাহজাবানী গোত্রের পল্লিতে। আর হযরত মুসআব ইবনে উমায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অবস্থান করেন হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে। আর হযরত আবূ হুযায়ফা ইবনে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার আযাদকৃত গোলাম হযরত সালিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অবস্থান করেন হযরত সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে।
ونزل حضرت عتبة بن غزوان رضى الله تعالى عنه على حضرت عباد بن بشر وقش رضى الله تعالى عنه فى بنى عبد الاشهل، ونزل حضرت عثمان بن عفان رضى الله تعالى عنه على حضرت أوس بن ثابت بن المنذر رضى الله تعالى عنه أخى حضرت حسان بن ثابت رضى الله تعالى عنه فى دار بنى النجار. قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه ونزل العزاب من المهاجرين على حضرت سعد بن خيثمة رضى الله تعالى عنه وذلك أنه كان عزبا
আর হযরত উতবা ইবনে গাযওয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অবস্থান করেন বনূ আব্দুল আশহালে হযরত উব্বাদ ইবনে বাশার ইবনে ওয়াক্কাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে। আর হযরত উছমান ইবনে আফ্ফান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অবস্থান করেন বনূ নাজ্জার মহল্লায় হযরত হাসসান ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ভাই হযরত আওস ইবনে ছাবিত ইবনে মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একদল অবিবাহিত হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবস্থান করেন। হযরত সা’দ ইবনে খায়ছামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে। কারণ তিনি নিজেও ছিলেন অবিবাহিত।
وقال حضرت يعقوب بن سفيان رحمة الله عليه حدثنى حضرت احمد بن أبى بكر رحمة الله عليه عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه أنه. قال قدمنا مكة فنزلنا العصبة، حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام و حضرت أبو عبيدة بن الجراح رضى الله تعالى عنه و حضرت سالم رضى الله تعالى عنه مولى أبى حذيفة. فكان يؤمهم حضرت سالم رضى الله تعالى عنه مولى أبى حذيفة لانه كان أكثرهم قرانا.
হযরত ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত আহমদ ইবনে আবু বকর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। আর তিনি হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে উপস্থিত হয়ে আমরা আসবা অঞ্চলে অবস্থান করি (আমাদের মধ্যে ছিলেন) হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম, হযরত আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আবূ হুযায়ফা উনার আযাদকৃত গোলাম হযরত সালিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আবূ হুযায়ফা উনার আযাদকৃত গোলাম হযরত সালিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাদের ইমামতি করতেন। কারণ উনাদের মধ্যে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতে বেশি পারঙ্গম ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
পরিশেষে আমরা যা বুঝতে পারলাম তা হলো- হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে যখন তাশরীফ আনলেন। তখন হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনাদের জান-মাল, বাসস্থান, জায়গা-জমি সব দিয়েছেন। এমনকি একাধিক আহলিয়া যাঁদের ছিলেন উনারা উনাদের আহলিয়াকে ছেড়ে দিয়ে হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে নিকাহ মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! এই ছিলো হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সুমহান চরিত্র মুবারক। সুবহানাল্লাহ

0 Comments: