হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৭৫১-৯২৪) (ঙ)


وقال حضرت ابن هشام رحمة الله عليه وحدثنى بعض أهل العلم أن حضرت الحسن بن أبى الحسن البصرىرحمة الله عليه. قال انتهى رسول الله صلى الله عليه وسلم و حضرت أبو بكر عليه السلام إلى الغار ليلا، فدخل حضرت أبو بكر عليه السلام قبل رسول الله صلى الله عليه وسلم فلمس الغار لينظر أفيه سبع أو حية، يقى رسول الله صلى الله عليه وسلم بنفسه. وهذا فيه انقطاع من طرفيه.
অর্থ : “হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কোনো এক ব্যক্তি আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনারা রাত্রিবেলা গুহার মুখে আসেন। প্রথমে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি গুহার ভিতর প্রবেশ করেন- সেখানে সাপ বিচ্ছু অন্য কিছু আছে কিনা তা দেখার জন্য। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একাকি গুহার বাইরে অবস্থান করছিলেন।” সুবহানাল্লাহ!
আরো উল্লেখ রয়েছে,
فجعل حضرت أبو بكر عليه السلام يكون أمام النبى صلى الله عليه وسلم مرة، وخلفه مرة. فسأله النبى صلى الله عليه وسلم. ذلك فقال : إذا كنت خلفك خشيت أن تؤتى من أمامك، وإذا كنت أمامك خشيت أن تؤتى من خلفك- حتى إذا انتهى إلى الغار من ذالك فقال : إذا كنت خلفك خشيت أن تؤتى من أمامك، وإذا كنت أمامك خشيت أن تؤتى من خلفك- حتى إذا انتهى إلى الغار من ثور قال حضرت أبو بكر عليه السلام : كما أنت هتى أدخل يدى فاحسه وأقصه فان كانت فيه دابة أصابتنى قبلك- قال حضرت نافع رحمة الله عليه : فبلغنى أنه كان فى الغار جحر فألقم أبو بكر عليه السلام رجله ذلك الجحر تخوفا أن يخرج منه دابة أوشئ يؤذى رسول الله صلى الله عليه و سلم، وهذا مرسل-
অর্থ: হিজরত মুবারকের পথে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি কখনও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে আবার কখনো পিছনে থাকতেন। এ সম্পর্কে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যখন পিছনে থাকি, তখন আশঙ্কা জাগে না জানি সম্মুখ থেকে কোনো শত্রু আসে, আবার আমি যখন সামনে থাকি, তখন আশঙ্কা হয় না জানি পিছন থেকে কোনো শত্রু আসে কি না। গুহায় প্রবেশ করে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আপনি দয়া করে একটু অপেক্ষা করুন, আমি ছিদ্রপথে হাত রেখে দেখি, যদি কোনো সাপ-বিচ্ছু থেকে থাকে, তাহলে আগে আমাকে দংশন করুক। হযরত নাফি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, গর্তে একটি ছিদ্র ছিলো। ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে কোনো সাপ-বিচ্ছু বা অন্য কিছু বের হয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয় কিনা সে আশঙ্কায় হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ছিদ্রের মুখে উনার পা মুবারক রেখে তা বন্ধ করে দেন। এ বর্ণনাটি মুরসাল সনদে বর্ণিত হয়েছে।
حضرت أنس بن مالك رضى الله تعالى عنه، أمر الله شجرة فخرجت فى وجه النبى صلى الله عليه وسلم تستره، وأن الله بعث العنكبوت فنسجت ما بينهما قسترت وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم و امر الله حما حمامتين وحشبتين فاقبلتا يدفان حتى وقعتا بين الغنكبوت وبين الشجرة وأقبلت فتيان قريش من كل بطن منهم رجل، معهم عصيهم وقسيهم وهراواتهم، حتى إذا كانوا من رسول الله صلى الله عليه وسلم قدر مائتى ذراع قال الدليلوهو سراقة بن مالك بن جعشم المدلجىهذا الحجر ثم لا أدرى أين وضع رجله.
অর্থ : “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, গুহার রজনীতে মহান আল্লাহ পাক তিনি বৃক্ষকে নির্দেশ দান করলে বৃক্ষ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে বের হয়ে উনাকে আচ্ছন্ন করে নেয় আর মহান আল্লাহ পাক তিনি মাকড়সাকে নির্দেশ দিলেন মাকড়সা উভয়ের মধ্যস্থলে জাল বিস্তার করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক আচ্ছাদিত করে নেয় এবং দুটি বুনো কবুতরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ দান করলেন কবুতর দুটি পাখা ঝাপটাতে ঝাপটাতে মাকড়সার জাল এবং বৃক্ষের মধ্যস্থলে এসে বসে। আর কুরাইশের প্রতিটি গোত্রের যুবক কাফির মুশরিকরা এগিয়ে আসে। তাদের হাতে লাঠি, ধনুক আর ডা-া। তারা যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে দুইশ হাত পরিমাণ দূরে তখন তাদের পথপ্রদর্শক সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জু’শাম মুদলিজী বললো, এ পাথর পর্যন্ত তো বুঝা যাচ্ছে (যার উপর পদচিহ্ন মুবারক রয়েছেন) তবে এরপর কোথায় উনার পা মুবারক পড়েছেন আমি জানি না।
فقال الفتيان أنت لم تخطئ منذ الليلة. حتى إذا أصبحن قال انظروا فى الغار، فاستبقه القوم حتى إذا كانوا من النبى صلى الله عليه وسلم قدر خمسين ذراعا، فاذا الحمامتان ترجع فقالوا ما ردك أن تنظر فى الغار؟ قال رأيت حمامتين وحشيتين بفم الغار، فعرفت أن ليس فيه أحد. فسمعها النبى صلى الله عليه وسلم فعرف أن الله قد درأ عنهما بهما، فسمت عليهماأى برك عليهماوأحدرهما الله إلى الحرم فأفرخا كما ترى
তখন কুরাইশি কাফির যুবকরা বলে, তুমি রাত্রি বলে ভুল করনি তো? ভোর হলে তাদের পথপ্রদর্শক বলে গুহায় দৃষ্টি দিয়ে দেখি। লোকেরা গুহা দেখার জন্যে ছুটে আসে। যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যখানে আনুমানিক ৫০ হাত দূরত্ব বাকী, তখন কবুতর দুটি ডাক দিয়ে উঠে। তখন তারা বললো, কিসে তোমাকে বারণ করছে? সে বললো, আমি গুহার মুখে দুটি বুনো কবুতর দেখতে পাচ্ছি। তাই আমি বুঝতে পারি যে, গুহার ভিতরে কেউ নেই। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একথা শুনতে পান এবং দেখতে পান যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের দু’জনকে হিফাযত করেছেন। কবুতর দুটিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি বরকত দান করেন এবং হেরেম শরীফ উনার মধ্যে উনাদেরকে স্থান দান করেন আর সেখানে উনারা বাচ্চা দেন, যেমন আপনি দেখতে পাচ্ছেন।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ১৮১ ও ১৮২ পৃষ্ঠা, ইবনে আসাকির)
আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت الحسن البصرى رحمة الله عليه. قال انطلق حضرت النبى صلى الله عليه وسلم و حضرت ابو بكر عليه السلام الى الغار، وجاءت قريش يطلبون النبى صلى الله عليه وسلم، وكانوا اذا رأوا على باب الغار نسج العنكبوت قالوا لم يدخل احد، وكان النبى صلى الله عليه وسلم قائما يصلى و حضرت أبو بكر يرتقب، فقال أبو بكر للنبى صلى الله عليه وسلم هؤلاء قومك يطلبونك، أما والله ما على نفسى أئل ولكن مخافة أن أرى فيك ماأكره. فقال له النبى صلى الله عليه وسلم يا حضرت أبا بكر عليه السلام لاتخف إن الله معنا.
অর্থ: “হযরত হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনারা গুহা পর্যন্ত হেঁটে যান। ওদিকে কুরাইশ কাফির মুশরিকরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খুঁজতে খুঁজতে সাওর গুহার নিকট পৌঁছে। কিন্তু তারা গুহার মুখে মাকড়সার জাল দেখে বললো, এখানে তো কেউ প্রবেশ করেননি। এসময় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামায আদায় করছিলেন আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে পাহাড়া দিচ্ছিলেন। এ সময় হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, আপনার স্বজাতির লোকজন, আমাদেরকে খুঁজছে। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমার নিজের ব্যপারে আমার কোনো চিন্তা নেই তবে আপনার কোনো কষ্ট হোক তা আমি বরদাশত করতে পারবো না। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
يا حضرت ابا بكر عليه السلام لاتخف ان الله معنا
“হে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম! আপনার কোনো ভয় নেই। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
إِلاَّ تَنصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللّهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِينَ كَفَرُواْ ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لاَ تَحْزَنْ إِنَّ اللّهَ مَعَنَا فَأَنزَلَ اللّهُ سَكِينَتَهُ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهُ بِجُنُودٍ لَّمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِينَ كَفَرُواْ السُّفْلَى وَكَلِمَةُ اللّهِ هِيَ الْعُلْيَا وَاللّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
অর্থ: “তোমরা যদি উনার খিদমত না করো তবে জেনে রাখো মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে সাহায্য করেছেন যখন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারকে কাফের মুশরিকদের অপরাধের শাস্তি এবং তাদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে হিজরতের জন্য বের হয়েছিলেন এবং তিনি ছিলেন দু’জনের দ্বিতীয়জন। যখন উনারা গুহার মধ্যে অবস্থান করেছিলেন, তিনি তখন উনার সঙ্গীকে বলেছিলেন, চিন্তিত হবেন না। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার উপর স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং উনার খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দেন এমন এক সৈন্যবাহিনী দ্বারা যাঁদেরকে তোমরা দেখনি এবং তিনি কাফিরদের কথাকে হেয় প্রতিপন্ন করেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম বা কথাই সব কিছুর উপরে এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি মহা পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)
উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে যারা জিহাদে গমন না করে পিছনে থেকে ছিলো তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, الاتنصروه
যদি তোমরা উনার খিদমত মুবারক না করো। তাতে অসুবিধা নেই। তাহলে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে সাহায্য করবেন, উনাকে শক্তি যোগাবেন এবং উনাকে বিজয়ী ও সফলকাম করবেন যেমন তিনি উনাকে সাহায্য করেছিলেন,
اذ اخرجه الذين كفروا
অর্থাৎ মক্কাবাসী কাফির মুশরিকদের অপরাধের শাস্তি এবং তাদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে তিনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক-এ পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফ যাচ্ছিলেন তখন গুহায় হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ছাড়া কেউই ছিলেন না। এ কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
ثانى اثنين اذهما فى الغار
“দু’জনের দ্বিতীয়জন যখন উনারা উভয়ে ছিলেন গুহার মধ্যে।”
অর্থাৎ উনারা গুহায় অবস্থান করছিলেন এবং তাতে তিনদিন থাকেন অন্যদিকে কাফির নেতারা ঘোষণা করে উনাদের দু’জন বা একজনকে এনে দিতে পারলে একশ উট পুরস্কৃত করা হবে। নাঊযুবিল্লাহ! উনাদের ক্বদম মুবারক উনার চিহ্ন মুবারক অনুসন্ধানে লোকজন বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু তারা তা মিলাতে সক্ষম হয়নি, বরং বিষয়টি তাদের নিকট সন্দেহজনক হয়ে উঠে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ১৮১, ১৮২ পৃষ্ঠা)
আরো বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت أنس بن مالك رضى الله تعالى عنه أن حضرت أبا بكر عليه السلام حدثه. قال قلت للنبى صلى الله عليه وسلم ونحن فى الغار. لو ان أحدهم نظر إلى قدميه لابصرنا تحت قدميه؟ فقال يا حضرت أبا بكر عليه السلام ما ظنك باثنين الله ثالثهما وقد ذكر بعض أهل السير أن حضرت أبا بكر عليه السلام لما قال ذلك قال النبى صلى الله عليه وسلم لوجاؤنا من ههنا لذهبنا من هنا. فنظر الصديق إلى الغار قد انفرج من الجانب الاخر، وإذا البحر قد اتصل به، وسفينة مشدودة إلى جانبه. وهذا ليس بمنكر من حيث القدرة العظيمة،
অর্থ: হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বরাতে বর্ণনা করে বলেছেন, পবিত্র গুহায় মুবারক উনার মধ্যে অবস্থানকালে আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললাম, কাফির মুশরিক তাদের কেউ নিজের পায়ের দিকে তাকালেই আমাদের অবশ্যই দেখতে পাবে। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
ياحضرت ابا بكر عليه السلام ما ظنك باثنين الله ثالثهما
“হে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম! উনাদের দু’জন সম্পর্কে আপনার কি ধারণা যাঁদের তৃতীয়জন হলেন মহান আল্লাহ পাক। (পবিত্র বুখারী শরীফ, পবিত্র মুসলিম শরীফ)
কোনো কোনো মহান সীরাত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত কথা মুবারক বললেন তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তারা এদিক থেকে আসলে আমরা অবশ্যই ঐদিকে চলে যেতাম। তখন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র গুহা উনার দিকে তাকিয়ে দেখেন যে, একদিক থেকে তা ফাঁক হয়ে গেছে। আর সমুদ্র তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আর অপর প্রান্তে কিস্তি বা নৌকা বাঁধা আছে। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত আর বিশাল ক্ষমতার কাছে এটা অসম্ভব, অবাস্তব এবং অগ্রাহ্য নয়। সুবহানাল্লাহ!
হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিছনে পিছনে যান। এ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে,
قال حضرت ابن شهاب رحمة الله عليه فأخبرنى حضرت عبد الرحمن بن مالك المدلجى رضى الله تعالى عنه وهو ابن أخى سراقة أن أباه أخبره انه سمع حضرت سراقة بن مالك ابن جعشم رضى الله تعالى عنه. يقول جاءنا رسل كفار قريش يجعلون فى رسول الله صلى الله عليه وسلم و حضرت أبى بكر عليه السلام دية كل واحد منهما لمن قتله أوأسره، فبينما أنا جالس فى مجلس من مجالس قومى بنى مدلج إذ أقبل رجل منهم حتى قام علينا ونحن جلوس. فقال حضرت ياسراقة  إنى رايت انفا أسودة بالساحل أراها حضرت محمدا صلى الله عليه و سلم وأصحابه.
অর্থ: “হযরত শিহাব যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার নিকট সংবাদ দিয়েছেন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে মালিক মুদলিজী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং তিনি হচ্ছেন আমার ভাই হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছেলে। নিশ্চয়ই উনার পিতা উনাকে সংবাদ দিয়েছেন, নিশ্চয়ই তিনি শ্রবণ করেছেন হযরত সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জু’শাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে। তিনি আমাদের নিকট বলেন, কুরাইশ কাফির মুশরিকদের দূত এসে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ বা বন্দি করার পুরস্কারের ঘোষণা দেয়। তিনি বলেন, আমার স্বগোত্র বনী মুদলিজের একটি মাজলিসে আমি উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় তাদের এক ব্যক্তি আমাদের দিকে এগিয়ে এসে সম্মুখে দাঁড়ায়। আমরা তখন উপবিষ্ট ছিলাম। লোকটি বললো, হে হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমি সবেমাত্র উপকূলীয় পথে কিছু লোক দেখে এসেছি, আমার ধারণা উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার সঙ্গী হবেন। 
قال حضرت سراقة رضى الله تعالى عنه فعرفت أنهم هم فقلت له إنهم ليسوابهم، ولكنك رأيت فلانا وفلانا انطلقوا بأعيننا، ثم لبثت فى المجلس ساعة ثم قمت فدخلت فأمرت جاريتى أن تخرج بفرسى وهى من وراء أكمة فتحبسها على، وأخذت رمحى فخرجت من ظر البيت فخططت بزجه الأرض وخفضت عاليه، حتى أتيت فرسى فركبتها فدفعتها ففرتبى حتى دنوت منهم، فعثرت بى فرسى فخررت عنها فقمت فأهويت يدى الى كنانتى فاستخرجت منها الازلام فاشتقسمت بها أضرهم أملا، فخرج الذى أكره، فركبت فرسى وعصبت لازلام فجعل فرسى يقرب بى حتى اذا سمعت قراءة رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو لا يلتفت
হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি বুঝতে পারলাম যে, উনারা আসলেই উনারা। কিন্তু আমি তাদেরকে বললাম যে, না উনারা নন। তুমি হয়তো অমুককে দেখে থাকবে যে আমাদের সম্মুখ দিয়ে একটু আগে চলে গেছে। এরপর আমি মজলিসে কিছু সময় অবস্থান করি, তারপর উঠে দাঁড়াই এবং গৃহে প্রবেশ করি। আমি আমার ঘোড়া বের করার জন্য আমার বাঁদীকে নির্দেশ দিলাম। আমি তাকে টিলার পেছনে ঘোড়া নিয়ে আমার অপেক্ষায় থাকতে বলি এবং আমি বর্শা নিয়ে ঘরের পিছন দিক দিয়ে বেরিয়ে পড়ি। আমার ঘোড়ার নিকট আসি এবং তার উপর সাওয়ার হই। তাকে ছুটাই আর সে ছুটে যায়। আমাকে নিয়ে ছুটতে ছুটতে ঘোড়াটি হোঁচট খায় এবং আমি তার পিঠ থেকে নিচে পড়ে যাই। আমি উঠে দাঁড়াই এবং তূনের প্রতি হাত বাড়াই এবং তা থেকে ভাগ্য গণনার তীর বের করে তার সাহায্যে ভাগ্য পরীক্ষা করি। উনাদের ক্ষতি করবো কিনা তা জানার চেষ্টা করি। যা আমি পছন্দ করি না তাই বের হলো। ভাগ্য পরীক্ষার তীরের বিরোধিতা করে আমি ঘোড়ায় সাওয়ার হই, ঘোড়া আমাকে কাছাকাছি নিয়ে যায়। এমনকি আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জবান মুবারক থেকে পবিত্র তিলাওয়াত মুবারক উনার আওয়াজ মুবারক শুনতে পাই। কোনো দিকে উনার লক্ষ্য নেই। 
حضرت أبو بكر عليه السلام يكثر الا لتفات ساخت يدا فرسى فى الأرض حتى بلغتا الركبتين، فخررت عنها فأهويت، ثم زجرنها فنهضت، فلم تكد تخرج يديها، فلما استوت قائمة إذا لأثر يديها غبار ساطع فى السماء مثل الدخان، فاستقسمت الازلام فخرج الذى أكره؛ فناديتهم بالأ مان فوقفوا فركبت فرسى حتى جئتهم ووقع فى نفسى حين لقيت ما لقيت من الحبس عنهم أن سيظهر أمر رسول الله صلى الله عليه وسلم. فقلت له إن قومك قد جعلوا فيك الدية، وأخبرتهم أخبار ما يريد الناس بهم، وعرضت عليهم الزاد والمتاع. فلم يردانى ولم يسألانى إلا أن قالا اخف عنا. فسألته أن يكتب لى كتاب أمن فأمر عامر ابن فهيرة فكتب لى رقعة من أدم. ثم مضى رسول الله صلى الله عليه وسلم.
আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি তখন এদিকে তাকাচ্ছিলেন। আমার ঘোড়ার দু’পা মাটিতে আটকে পড়ে হাঁটু পর্যন্ত দেবে যায়। আমি ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যাই। আমি উঠে দাঁড়াই, ঘোড়াকে শাসাই। সেও উঠে কিন্তু সামনের পা দুটি মাটি থেকে বের করতে পারলো না। সে যখন সোজা হয়ে দাঁড়ালো, তখন তার সামনের দু’পায়ের নিচ থেকে ধুলা উড়ে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আবার আমি তীর দ্বারা ভাগ্য পরীক্ষা করলাম। এবারও তা-ই বের হলো, যা আমার অপছন্দ। হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি তা দেখেই আঁচ করতে পারলাম যে, উনাকে আমার কবল থেকে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে এটা একান্তই সত্য। উনারা দাঁড়ালেন আমি ঘোড়ায় সাওয়ার হয়ে উনাদের নিকট পৌঁছি। মাটিতে আটকা পড়ে আমার যে দশা হয় তাতে মনে এমন ভাবের উদয় হয় যে, অবিলম্বে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বীন ইসলাম জয়যুক্ত হবে। তখন আমি উনাকে বললাম, আপনার জাতি আপনাকে দেখিয়ে দেয়ার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। উনাদেরকে নিয়ে লোকেরা যা করতে চায়, সে সম্পর্কে আমি উনাদেরকে অবহিত করলাম এবং আমি উনাদেরকে পথের সম্বল আর সামগ্রী দানের প্রস্তাব পেশ করলাম। উনারা আমাকে কোনো জবাব দিলেন না। কোনো কথা আমার নিকট জিজ্ঞাসাও করলেন না। কেবল এটুকুই বললেন যে, আমাদের বিষয়টি গোপন রাখবে। আমাকে নিরাপত্তা পত্র লিখে দেয়ার জন্য আমি আবেদন জানালে তিনি হযরত আমির ইবনে ফুহায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেন। তিনি আমাকে চামড়ায় নিরাপত্তা পত্র লিখে দেন। এরপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মুখে অগ্রসর হন।
আরো বর্ণিত রয়েছে, “হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন ফিরে আসেন (এ অনুসন্ধানী অভিযান থেকে) তখন সন্ধানকারীদলের কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে বলতেন, এদিকে এ পর্যন্ত থেমে যাও। অর্থাৎ এদিকে গিয়ে লাভ হবে না, কেউ নেই। যখন প্রকাশ পেলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিশ্চিত পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পৌঁছেছেন। তখন তিনি লোকদের নিকট সেসব ঘটনা প্রকাশ করতে শুরু করলেন, যা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন এবং উনার মাধ্যমে এসব ঘটনা মুবারক ছড়িয়ে পড়ে। তখন কুরাইশ কাফির সরদাররা উনার পক্ষ থেকে অনিষ্টের আশঙ্কা করে।
তারা এ আশঙ্কা করে যে, এটা তাদের অনেকের ইসলাম গ্রহণের কারণ হয়ে যেতে পারে। আর হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন মুদলিজ গোত্রের সরদার। তখন অভিশপ্ত আবূ জাহল বনূ মুদলিজ গোত্রের নিকট নিম্নোক্ত কবিতাটি লিখে পাঠায়।
بنى مدلج انى اخاف سفيهكم- سراقة مستغو لنصر حضرت محمد صلى الله عليه وسلم عليكم به الا يفرق جمعكم- فيصبح شتى بعد عزو سودد
অর্থাৎ বনী মুদলিজ গোত্রের লোকজন! তোমাদের নির্বোধ হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে আমার ভয় হয়, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাহায্য বা উনার খিদমত করে তিনি তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করবেন। নাঊযুবিল্লাহ!
তোমাদের উচিত উনাকে প্রতিহত করা, যাতে করে তিনি কোনো ফাটল ধরাতে না পারেন তোমাদের ঐক্যে। ফলে মর্যাদা আর কর্তৃত্বের পর তোমরা হয়ে পড়বে শতধা বিভক্ত। কাট্টা কাফির আবু জাহিলের জবাবে হযরত সুরাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিচের কবিতাটি লিখে পাঠান।
ابا حكم و الله لوكنت شاهدا- لامر جوادى اذ تسوخ قوائمه-
“হে আবুল হাকাম (আবূ জাহিল)! তুমি যদি দেখতে আমার ঘোড়ার পা যখন দেবে যায় মাটিতে”
عجبت و لم تشكك بان حضرت محمدا صلى الله عليه وسلم - رسول و برهان فمن ذا يقاو مه-
“তবে তুমি অবাক হতে। সন্দেহ করতে না যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সুস্পষ্ট প্রমাণ, কে আছে উনার মুকাবিলা করতে পারে?”
عليك فكف القوم عنه فاننى اخال لنا يوما ستبدو معالمه
“তোমাদের কর্তব্য হলো- লোকদেরকে উনার দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া। আমার আকাঙ্খা একদিন উনার পবিত্র দ্বীনের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ পাবে।”
بامر تود النصر فيه فانهم- و ان جميع الناس طرا مسالمه
“যাতে তুমিও উনার খিদমত বা গোলামী করতে আকাঙ্খী হবে, কারণ তারা এবং সকল মানুষ উনার সঙ্গে সন্ধি করতে উদগ্রীব হবে।”
অন্যত্র উল্লেখ রয়েছে,
فقال حضرت أبو بكر عليه السلام خرجنا فادلجنا فاحثثنا يومنا وليلتنا حتى أظهرنا وقام قائم الظهيرة، فضربت بصرى هل أرى ظلا نأوى اليه، فاذا أنا بصخرة فأهويت اليها فاذا بقية ظلها، فسويته لرسول الله صلى الله عليه وسلم وفرشت له فروة وقلت اضطجع يارسول الله صلى الله عليه وسلم فاضطجع، ثم خرجت أنظر هل أرى أحدا من الطلب فاذا أنا براعى غنم، فقلت لمن أنت ياغلام؟ فقال لرجل من قريش- فسماه فعرفته
অর্থ: “হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমরা বের হই রাত্রির শেষ প্রহরে। দিবা-রাত্রি ছফর করতে থাকি। শেষ পর্যন্ত বেলা ঠিক দুপুরে আমি চোখ খুলে চতুর্দিকে তাকালাম এই আশায় যেনো আমরা কোনো ছায়ায় অবস্থান করতে পারি। হঠাৎ আমাদের সামনে একটা বড় পাথর পড়ে, এগিয়ে গিয়ে দেখি সামান্য ছায়া। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য আমি জায়গাটি সমান করে উনার জন্য চাদর মুবারক বিছাই এবং বলি ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বিশ্রাম নিন। তিনি বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এরপর আমি বের হই সন্ধানরত কাউকে দেখতে পাই কিনা, লক্ষ্য করতে থাকি। এ সময় একজন মেষ পালক দেখতে পাই। তাকে জিজ্ঞাসা করি, তুমি কার মেষ পালক হে বালক? সে বললো এক কুরাইশ ব্যক্তির। সে মালিকের নাম বলে, আমি তাকে চিনতে পারি।
فقلت هل فى غنمك من لبن؟ قال نعم! قلت هل أنت حالب لى؟ قال نعم! فأمرته فاعتقل شاة منها ثم أمرته فنفض ضرعها من الغبار، ثم أمرته فنفض كفيه من الغبار، ومعى إداوة على فمها خرقة فحلب لى كثبة من اللبن فصببت على القدح حتى برد أسفله ثم أتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم فوافيته وقد استيقظ، فقلت اشرب يا رسول الله صلى الله عليه وسلم فشرب حتى رضيت، ثم قلت هل ان الرحيل؟ فارتحلنا والقوم يطلبوننا فلم يدركنا أحد منهم إلا سراقة بن مالك بن جعشم على فرس له،
আমি তাকে বলি- তোমার মেষ পালের মধ্যে কি দুধের মেষ আছে? সে বললো, হ্যাঁ, আছে! আমি বলি- তুমি কি আমার জন্য দুধ দোহন করবে? সে বললো, হ্যাঁ! এরপর আমি তাকে নির্দেশ দিলে সে একটি ছাগল নিয়ে আসে। আবার তাকে নির্দেশ দিলে সে ওলান ধুলা বালি মুক্ত করে। আবার নির্দেশ দিলে সে ধুলা বালি থেকে হাত পরিষ্কার করে। আমার সঙ্গে একটা পাত্র ছিলো। পাত্রের মুখে ছিলো একটা কাপড়ের টুকরা। সে আমার জন্য সামান্য পরিমাণ দুধ দোহন করে। আমি দুধ পেয়ালায় ঢালি, তার নিচের অংশ ঠা-া হয়। এরপর আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আগমন করি এবং উনাকে দুধ মুবারক দিয়ে দেই। এসময় তিনি বিছানা মুবারক থেকে উঠলেন। আমি আরজু করি, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে পান করুন। তিনি পান করলেন, আমি তাতে খুশি হলাম। এরপর বললাম, প্রস্থান করার সময় হয়েছে কি? তারপর আমরা রওয়ানা হলাম। আর কুরাইশ কাফির মুশরিকরা তখনো আমাদেরকে খুঁজছিলো। কিন্তু হযরত সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জুশাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছাড়া কেউ আমাদের সন্ধান পায়নি।
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া উনার ২য় জিলদ ১৮৯, ১৯০ ও ১৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে যে,
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه ولما خرج بهما دليلهما عبد الله بن أرقد سلك بهما أسفل مكة، ثم مضى بهما على الساحل حتى عارض الطريق أسفل من عفان، ثم سلك بهما على أسفل أمج، ثم استجاز بهما حتى عارض الطريق بعد أن أجاز قديدا، ثم أجاز بهما من مكانه ذلك فسلك بهما الخرار ثم أجاز بهما ثنية المرة، ثم سلك بهما لقفا، ثم أجاز بهما مدلجة لقف، ثم استبطن بهما مدلجة مجاج ثم سلك بهما مرجح مجاج، ثم تبطن بهما مرجح من ذى العضوين، ثم بطن ذى كشد، ثم اخذ بهما على الجداجد، ثم على الاجرد، ثم سلك بهما ذاسلم من بطن أعداء مدلجة تعهن، ثم على العبابيد، ثم أجاز بهما القاحة
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনাদের পথ-প্রদর্শক আব্দুল্লাহ ইবনে আরকাদ যখন উনাদের উভয়কে নিয়ে বের হন, তখন উনারা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার নিম্নাঞ্চল দিয়ে পথ চলেন। এরপর উনাদেরকে নিয়ে উপকূলীয় অঞ্চল দিয়ে আড়াআড়িভাবে উসফানের নি¤œাঞ্চল দিয়ে পথ চলতে থাকেন। এরপর আমাজ এবং কুদাইদ অঞ্চল অতিক্রম করার পর উনাদেরকে নিয়ে অগ্রসর হন। এরপর উনাদেরকে নিয়ে সে স্থান থেকে খারার বা হারার-এর পথ হয়ে ছানিয়া আল মুররা অতিক্রম করেন। সেখান থেকে উনাদেরকে নিয়ে যান লাকফা অঞ্চলে। সেখান থেকে উনাদেরকে নিয়ে অতিক্রম করেন মাদলাজা লাকফা। সেখান থেকে মাদলাজা মাজাজ। এরপর উনাদেরকে নিয়ে গমন করেন মারজাহ মাজাজ। সেখান থেকে উনাদেরকে নিয়ে যান যুল আদ্বওয়াইন মারজাহ। এরপর যী কাশাদ প্রান্তরে। এরপর উনাদেরকে নিয়ে যান জাদাজিদ-এর উপর দিয়ে। এরপর আজরাদ-এর উপর দিয়ে। এরপর উনাদেরকে নিয়ে চলেন আ’দা প্রান্তর ও যাসালম হয়ে তি’হিন-এর মাদলাজায়। এরপর আবাবীদ হয়ে উনাদেরকে নিয়ে অতিক্রম করেন আল কাহা অঞ্চল।

0 Comments: