হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৭৫১-৯২৪) (ঢ)


উক্ত নাম মুবারকগুলো পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বিশেষ নাম মুবারক। মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূর, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ফাযায়িল-ফযীলত বেমেছালভাবে সমুন্নত করেছেন, যা বলার অপেক্ষাই রাখে না।
পবিত্র মদীনা শরীফ হচ্ছে বেমেছাল পূন্যবান, দানশীল। সারা জগৎ উনার মাধ্যমেই খাইর বরকত লাভ করে থাকে। শান্তি ও নিরাপদ স্থান মুবারক হচ্ছে এই পবিত্র মদীনা শরীফ। এই পবিত্র স্থান মুবারক পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার কেন্দ্র, পবিত্র ঈমান, আক্বীদাহ উনাদের কেন্দ্র এবং বিজয় লাভের স্থান মুবারক, কারণ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এই পবিত্র মদীনা শরীফ উনার থেকেই কাফির, মুশরিক, বদদ্বীনের মূলোৎপাটন করে সারাবিশ্বকে বিজয় করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এই পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরত মুবারক করেছেন। যা পবিত্র ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয়। এই পবিত্র মদীনা শরীফ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সুউচ্চ কুব্বা বা মিনার অর্থাৎ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার প্রসারের কেন্দ্র এই পবিত্র মদীনা শরীফ সারা কায়িনাত মাঝে মিনারের মতোই সুউচ্চভাবে দ-ায়মান। সুবহানাল্লাহ!
৩৭। شافية (শাফিয়া) ইহাও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার একখানা বিশেষ নাম মুবারক।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মাটি মুবারক সর্বরোগের জন্য পবিত্র শিফা।” “এমনকি এখানকার মেওয়া ভক্ষনের দ্বারা কুষ্ঠ ও শ্বেত কুষ্ঠের মতো দুরারোগ্য রোগ পর্যন্ত সেরে যায়।” যা পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেই বর্ণিত রয়েছে।
“আসমায়ুল মাদীনা” নামক গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, প্রাচীন যুগের কোনো আলিম বলেন, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকলে জ্বরাক্রান্ত ব্যক্তির জন্য বিশেষ ফলদায়ক। যে কোনো ব্যক্তি যদি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে উপস্থিত হয় তবে তার অভ্যন্তরীন সমস্ত রোগ এবং গুনাহ বিদুরিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
৩৮। عاصمة (আছিমাহ) পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নাম মুবারক উনাদের মধ্যে ইহা একটি বিশেষ নাম মুবারক। হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে আগমনের ফলে কাফির, মুশরিকদের যুলুম-নির্যাতন থেকে হিফাযত হয়েছেন।
কাজেই যে সমস্ত ব্যক্তিগণ পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করেন অথবা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে আগমনের ইচ্ছা পোষণ করেন ওই সমস্ত লোকজন সমুদয় আপদ-বিপদ থেকে মুক্তি পান। সুবহানাল্লাহ!
৩৯। معصومة (মা’ছূমা) নামেও পবিত্র মদীনা শরীফ উনাকে ডাকা হয়। প্রাচীনকালে যেমন হযরত মুসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনাদের উম্মত বা সঙ্গী-সাথীগণ অহংকারী এবং জালিমদের হাত থেকে পরিত্রাণ পেয়েছেন। আর আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র উসীলা মুবারকে পবিত্র মদীনা শরীফ দাজ্জাল এবং মহামারী রোগ থেকে হিফাযত রয়েছেন এবং থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!
৪০। غلبة (গালাবা) ইহা একটি প্রাচীন নাম মুবারক। জাহেলিয়া যুগেও এ নাম মুবারক পবিত্র মদীনা শরীফ উনাকে ডাকা হতো। যেমন- ইয়াছরিব নামে ডাকা হতো যা পরবর্তীতে নিষিদ্ধ হয়। যে কোনো ব্যক্তি যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে আগমণ করেছেন, তিনি প্রভাবশালী এবং বিখ্যাত হয়েছেন। যেমন ইহুদীরা ‘আমালিকা’ নামক বিখ্যাত জাতির উপর, আউস খাজরাজ এবং আনসার গোত্র ইহুদীদের উপর, হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা আউস এবং খাজরাজ গোত্রের উপর এবং আজমীগণ মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
৪১। فاضحة (ফাদ্বিহা) যে কোনো অসৎ প্রকৃতির লোক এখানে আসলে তা গোপন থাকে না। তার আসল আখলাক বা স্বভাব ও প্রকৃতি প্রকাশ পেয়ে যেতো। অবশেষে সে লাঞ্ছিত ও বেইজ্জত হতো।
৪২। مؤمنة (মু’মিনা) এই পবিত্র শহর উনার একটি নাম মুবারক। এ নাম মুবারকে অভিহিত হওয়ার কারণ, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ঈমানদারগণ উনারা শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ লাভ করেছেন। আর এখান থেকেই পবিত্র ঈমান ও পবিত্র ইসলাম উনার আহকাম জারি হয়েছে। আরেকটি অর্থ হচ্ছে- বরকত, রহমত, পারস্পরিক মায়া মুহব্বত, মমতা এবং বাদশাহী জীবনযাপন যা মু’মিনের নিদর্শন, যা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে।
আর বাস্তব ক্ষেত্রে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ‘মু’মিন’ অর্থও হয়ে থাকে। অর্থাৎ পবিত্র মদীনা শরীফ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঈমান এনেছেন। এ জন্য পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নাম মুবারক মু’মিনা। যেমন প্রস্তুর খন্ড উনার হাত মুবারকে তাসবীহ পাঠ করেছে, পাথর কথা বলেছে, উহুদ পাহার উনাকে মুহব্বত করেছে। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
والذى نفسى بيده تربتها المؤمنة
অর্থ: “যে সুমহান সত্ত্বা মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতী হাত মুবারকে আমার প্রাণ মুবারক উনার ক্বসম! নিশ্চয়ই পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মাটি মুবারক মু’মিন।” অপর এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নাম মুবারক মু’মিনাহ বলে উল্লেখ আছে।”
৪৩। مباركة (মুবারাকা) ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্নিত রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ এবং তথাকার সব বস্তু এমনকি صاع ছা’ এবং مد মুদ যা দ্বারা মাপ এবং ওজন দেয়া হয় এর জন্যও বরকতের দোয়া মুবারক করেছেন এবং তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, হে বারে ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে যতো বরকত দান করেছেন এর থেকেও অধিক বরকত দান করুন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে। সুবহানাল্লাহ!
৪৪। محبورة (মাহবুরা) ইহা حبر শব্দ থেকে নির্গত। যার অর্থ খুশী অথবা حبرة থেকে নির্গত যার অর্থ নিয়ামত। محبار (মিহবারুন) ওই যমীনকে বলা হয়, যাতে উর্বর শক্তি খুব বেশি এবং সবকিছু দ্রুত গজিয়ে উঠে। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ইহা একটি বিশেষ বৈশিষ্ট। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ সমস্ত বরকত রহমত বিদ্যমান। সুবহানাল্লাহ!
৪৫। محروسة (মাহরুসা)
৪৬। محفوظة (মাহফুজা)
৪৭। محفوفة (মাহফুফা)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, “পবিত্র মদীনা শরীফ উনার প্রত্যেক দুই গলি মুবারকের মাঝখানে এক একজন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নিযুক্ত রয়েছেন। যাঁরা এ পবিত্র নগরী উনাকে হিফাজত করতে খিদমতের আঞ্জাম দেন।
কাজেই পূর্বোল্লিখিত নাম মুবারক দ্বারা সুস্পষ্ট যে, পবিত্র মদীনা শরীফ উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে হিফাযত করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
৪৮। مرحومة (মারহুমা) مرزوقة (মারযুকা)
পবিত্র মদীনা শরীফ উনাকে এ দু’নাম মুবারকে অভিহিত করার কারণ হচ্ছে- এই পবিত্র শহর উনার মধ্যে রহমাতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ নিয়েছেন এবং অবস্থান করতেছেন। বিশেষ করে মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ রহমত নাযিলের স্থান মুবারক ইহা আর এই পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মাধ্যমে উনার উসীলায় সারা কায়িনাত জাহেরী ও বাতেনী রিযিক লাভ করে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
৪৯। مسكينة (মিসকীনা) এ নাম মুবারক পবিত্র মদীনা শরীফ উনার এক সুমহান খুছূছিয়াত প্রকাশ করে। হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
يا طيبة يا طابة يا مسكينة لا تقبلى الكنوز

অর্থ: “হে ত্বীবাহ, হে ত্ববা, হে মিসকীনাহ! আপনি (দুনিয়াবী) ধন সম্পদ গ্রহণ করেন না বরং নিজের বড়ত্ব, ধনী, ব্যক্তিত্ব ও গণীত্বের উপর দায়িম-ক্বায়িম থাকেন। বস্তুত এ সম্বোধন পবিত্র মদীনাবাসী উনাদেরকে করা হয়েছে অর্থাৎ মদীনাবাসীগণ উনারা সদা-সর্বদা ধন-সম্পদ ও বেমেছাল সম্মান মর্যাদায় অবস্থানের মাধ্যমে জীবন যাপন করে থাকেন। কখনো উনারা বিত্তবান, ধনী দুনিয়াদার লোকদের প্রতি ঝুঁকে পড়েন না। সুবহানাল্লাহ!
اللهم احينى مسكينا وامتنى مسكينا واحشرنى فى زمرة المساكين
অর্থ: হে বারে ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আমাকে আপনার মুখাপেক্ষীরূপে জীবিত রাখুন এবং আপনার মুখাপেক্ষীরূপে পবিত্র বিছাল শরীফ দিন। আর আপনার মুখাপেক্ষী ব্যক্তি উনাদের সাথে আমার হাশর-নাশর করুন। অর্থাৎ আপনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূত-পবিত্র শহর মুবারক উনার বসবাসকারী উনাদের সাথে আমার হাশর দান করুন। আমীন!
৫০। مسلمة (মুসলিমা) ইহা মু’মিনা-এর অর্থের অনুরূপ। কেননা পবিত্র ঈমান ও পবিত্র ইসলাম একই বস্তু। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, পবিত্র ঈমান উনার ক্ষেত্রে অন্তরের স্বীকার বা বিশ্বাসের গুরুত্ব সর্বাধিক। আর পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ক্ষেত্রে স্বীকারোক্তি এবং আমলের গুরুত্ব সর্বাদিক।
৫১। مطيبة (মুতাইয়িবা), مقدسة (মুকাদ্দাসা) বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন তথা সর্বদিক দিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ পূত-পবিত্র, পাক-ছাফ বিধায় এ নাম মুবারকে অভিহিত করা হয়েছে।
৫২। مقر (মুকাররুন) পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اللهم اجعلنا قرارا وارزقنا حسنا
অর্থ: “হে বারে ইলাহী মহান আল্লাহ পাক!আমাদেরকে শান্তি হাদিয়া করুন, যাতে (আমরা এখানে সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারি) এবং উত্তম রিযিক হাদিয়া করুন।
৫৩। مكنية (মাকনীয়া) মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র মদীনা শরীফ সম্মানিত ও মর্যাদাশীল।
৫৪। ناجية (নাজিয়া) ইহা নাজাত শব্দ থেকে নির্গত। যার অর্থ মুক্তিদাতা অথবা ناجاه (নাজাহ) অর্থ সন্তুষ্ট করা অথবা نجو (নাজউন) অর্থ সুউচ্চ স্থান মুবারক।
৫৫। مدينة মদীনা) এ পবিত্র নগরীর অসংখ্য, অগনীত নাম মুবারকসমূহের মধ্যে এ নাম মুবারকই সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। ‘মদীনা’ শব্দ মুবারকের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- কতগুলো একত্রিত ঘর মুবারক, কতগুলো হুজরা মুবারক। দালানের অধিক্য হেতু ইহা قربة অতিক্রম করে নগরের পর্যায় পৌঁছে যাওয়ায় উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ বলা হয়। সুবহানাল্লাহ!
৫৬। سيد البلدان আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
ياطيبة يا سيد البلدان
“হে পুতঃপবিত্র ত্বইয়্যিবা হে শহরসমূহ উনাদের সাইয়্যিদ।
উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত নাম মুবারক ছাড়াও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার আরো অসংখ্য অগণিত ছিফতী নাম মুবারক রয়েছে। ‘ইনশাআল্লাহ’ প্রয়োজন হলে উল্লেখ করা যাবে।
স্মরণীয় যে, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ফাযায়িল ফযীলত বেমেছাল থেকে বেমেছালতম। তবুও আমরা সর্বকালের, সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার অশেষ ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ, করম ও রহম উনার ফলে উনার পুতঃপবিত্র জবান মুবারক থেকে বর্ণিত সামান্য কিছু বর্ণনা মুবারক উপস্থাপন করছি। বাহরুল উলুম, রইসুল মুহাদ্দিসীন ওয়াল মুফাসসিরীন ওয়াল ফুকাহা, হাক্বীমুল হাদীছ, সুলতানুল আউলিয়া, জামিউল আলক্বাব, মুজাদ্দিদে আ’যম, ফক্বীহে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার কায়িনাতের সমস্ত ইলম মুবারক রয়েছে। মূলত তিনি খাছ ইলমে লাদুন্নী উনার পরিপূর্ণ অধিকারী অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে পরিপূর্ণভাবে ইলহামপ্রাপ্ত হয়ে আলোচনা মুবারক করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! উনার পুতঃপবিত্র ক্বদম মুবারকে জাহির বাতিন আক্বীদা ও আমলী তথা সমস্ত বেয়াদবী গোস্তাখী থেকে ক্ষমা চাইছি। এই অধমকে ক্ষমা করে দিন।
আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সমস্ত কিছুই পুতঃপবিত্র। যেমন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মাটি মুবারক এবং ফল মুবারক উনাদের মধ্যে ‘শিফা’ এবং রোগমুক্তির ছিফত মুবারক রেখেছেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, “পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ধুলো-বালি মুবারক উনাদের মধ্যে প্রত্যেক রোগের শিফা রয়েছে।”
কোনো কোনো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মাটি মুবারক কুষ্ট ও সাদা কুষ্ট রোগের ঔষধ বলেও উল্লেখ রয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনায় দেখা যায় পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মাটি মুবারকে সমস্ত রোগের ঔষধ রয়েছে। উহা ‘সুআইব’ নামক বিশেষ স্থান মুবারকের মাটি, যাকে وادى البطحان (ওয়াদিয়ে বুতহান) বলা হয়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোনো কোনো হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে জ্বরের জন্য ঔষধস্বরূপ এ মাটি মুবারক ব্যবহার করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মাটি মুবারক “খাকে শিফা”। এ সম্পর্কে একটি ওয়াকীয়া উল্লেখ করা হয়- হযরত শায়েখ মুজাদ্দেদুদ্দীন ফিরোজ আবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মাটি মুবারক সম্পর্কে আমি নিজেই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আমার একজন গোলাম পূর্ণ এক বৎসর জ্বরাক্রান্ত ছিলো। আমি নিজেই তাকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মাটি মুবারক পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করানোর ফলে সে ওই দিনই আরোগ্য লাভ করে।
হযরত শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি নিজেও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মাটি মুবারক উনার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এক সময় আমি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থানরত অবস্থায় কোনো কারণ বশতঃ আমার পা মুবারক ফুলে গিয়েছিলো। চিকিৎসকরা ইহা দুরারোগ্য ব্যাধি বলে অভিমত দেয়। যখন তারা অক্ষমতা প্রকাশ করলো তখন আমি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মাটি মুবারক ব্যবহার আরম্ভ করে দিলাম। অতি অল্প দিনের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে অতি সহজেই আরোগ্য দান করলেন। সুবহানাল্লাহ! কাজেই পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মাটি মুবারক উনার ছানা-ছিফত মুবারক বেমেছালতম।
এছাড়া পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ফল-ফলাদি মুবারক উনাদের ছানা-ছিফত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাঝে বর্ণিত রয়েছে। যেমন পবিত্র বুখারী শরীফ ও পবিত্র মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে যে,
من تصبح بسبع تمرات عجوة لم تضره ذلك سم ولا سحر
অর্থ: “যে ব্যক্তি (পবিত্র মদীনা শরীফ উনার) আজওয়া নামক সাতটি খোরমা মুবারক দিয়ে নাস্তা করবে, কোনো প্রকারের বিষ ও যাদু তার উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।”
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি دوار (দাওয়ার) নামক দুরারোগ্য রোগে (যেমন মাথা ঘোরা) আজওয়া খোরমা খাওয়ার পরামর্শ দিতেন। আজওয়া পবিত্র মদীনা শরীফ উনার এক প্রকার উৎকৃষ্ট খেজুর মুবারক। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাসিন্দাগণ উনারা এই প্রকার খেজুর মুবারক সম্পর্কে বিশেষভাবে ওয়াকিফহাল। বর্ণিত রয়েছে যে, এই খেজুর মুবারক উনার মূল বৃক্ষ স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ হস্ত মুবারকে রোপন করেছিলেন।
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে এতো অধিক প্রকারের খেজুর ছিলো যার সংখ্যা বর্ণনা করা দুঃসাধ্য। ‘তারীখে কবীর’ নামক গ্রন্থে ১১৯ প্রকার খেজুরের কথা উল্লেখ রয়েছে। উক্ত প্রকারের খেজুরের মধ্যে صيحانى (ছাইহানী) নামক খেজুরও অন্যতম।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه كنت مع النبي صلى الله عليه وسلم في بعض حيطان المدينة ويد علي في يده فمررنا بنخل فصاح النجل هذا محمد سيد الأنبياء وهذا علي سيد الأولياء أبو الأئمة الطاهرين ثم مررنا بنخل فصاح هذا محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم وهذا علي سيف الله
অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার (হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম) হাত মুবারক ধরে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার কোনো এক বাগানের দিকে তাশরীফ নিচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি খেজুর গাছ থেকে আওয়াজ শুনা গেলো যে, ইনি সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাইয়্যিদ। আর ইনি সমস্ত হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সাইয়্যিদ এবং সম্মানিত ইমামদ্বয় (সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাদের সম্মানিত পিতা হযরত কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম।
অতঃপর যখন উনারা অপর একটি খেজুর গাছ মুবারকের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন সেই গাছ থেকে আওয়াজ এলো, ইনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর ইনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম- যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার তরবারী।” এ কারণে এই খেজুর বৃক্ষের নাম রাখা হয়, “ছাইহানী”। কেননা আরবী অভিধানে صيح শব্দের অর্থ আওয়াজ।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ، قال : كان أحب التمر إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم العجوة
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় খেজুর ছিলো আজওয়া।” (আখলাকুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুহব্বত করার কারণেই আজওয়া উল্লেখিত গুণে গুনান্বিত।
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ফযীলত হচ্ছে- এ পবিত্র নগরীতে মসজিদুন নববী শরীফ বিদ্যমান যা সর্বশ্রেষ্ঠ মসজিদ। এ পবিত্র স্থান মুবারকে ‘মসজিদে কু’বা’ রয়েছে যা দ্বীন ইসলাম উনার সর্বপ্রথম মসজিদ। সর্বশ্রেষ্ঠ ফযীলতের বিষয় হচ্ছে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং পূতঃপবিত্র রওজা শরীফ উনার মাঝে শায়িত রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! এখানে আরো মসজিদুন নববী শরীফ উনার মিম্বর শরীফ উনার মাঝখানে বেহেশতের বাগানসমূহ থেকে একটি বেমেছাল বাগান মুবারক রয়েছে। পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ বেহেশতের বাগানের তুলনায় অনেক সুমহান। সুবহানাল্লাহ! এই পাক যমীন মুবারকে বেহেশতের একটি পাহাড় আছে, যাকে ‘জাবালে উহুদ’ বলা হয়। স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই পাহাড় মুবারককে মুহব্বত করেছেন এবং ওই পাহাড় উনাকে মুহব্বত করেছেন।
‘জান্নাতুল বাকী’ যেখানে হাজার হাজার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শায়িত রয়েছেন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা শুয়ে রয়েছেন। তার পাশাপাশি হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও ‘জান্নাতুল বাকী’তে শুয়ে রয়েছেন। এছাড়াও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অনেক পুতঃপবিত্র স্থান মুবারক রয়েছে অর্থাৎ সমগ্র পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মর্যাদা-মর্তবা বেমেছাল যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।
স্মরণীয় যে, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার একটি বিশেষ ফযীলত হচ্ছে পবিত্র শরীয়ত উনার কোনো কারণ ব্যতীত এ পবিত্র স্থান মুবারক ছেড়ে বাইরে গমন করা গুনাহ এবং যে ব্যক্তি পবিত্র মদীনা শরীফ ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় তার উপর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এ কারণেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র হজ্জ উনার আহকাম সম্পন্ন করে তাড়াতাড়ি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ফিরে আসতেন এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করতেন না। অদ্যবধি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাসিন্দাগণ উনাদের মধ্যে কিছুটা এ নিয়ম চালু রয়েছে। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার আকর্ষণে মুগ্ধ কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হতে শুনা যায়।
যার অর্থ, “আপনার পুতঃপবিত্র দরবার শরীফ ছাড়া আশিকদের ধৈর্য্যধারণ করা অসম্ভব। যদিও বেহেশতে অবস্থান করার সুযোগ লাভ হয়।”
উল্লেখ্য যে, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ফযীলতের মধ্যে একটি অন্যতম ফযীলত হচ্ছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদের বিশেষভাবে তা’যীম, তাকরীম ও সম্মান করার নির্দেশ দিয়েছেন। উনাদেরকে কষ্ট দেয়া ও ভীতি প্রদর্শন করা থেকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
        পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت معقل بن يسار رضي الله تعالى عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: الـمدينة مهاجري، فيها مضجعي وفيها مبعثي، حقيقٌ على أمتي حفظ جيرانـي ما اجتنبوا الكبائر، من حفظهم كنت له شهيداً أو شفيعاً يوم القيامة، ومن لـم يـحفظهم سقي من طينة الـخبال
অর্থ: “হযরত মুয়াক্কাল ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, পবিত্র মদীনা শরীফ আমার হিজরত মুবারকের স্থান। তথায় আমার শয়ন কক্ষ তথা পবিত্র হুজরা শরীফ রয়েছে। (মূলত এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওজা শরীফ পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে।) এখান থেকেই আমি ক্বিয়ামতের দিন হাশর ময়দানে উঠবো। দিবা-রাত্রি সত্তর হাজার রহমতের হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম তথায় হাজির থাকেন। আমার পবিত্র আহাল-ইয়াল তথা হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের তা’যীম তাকরীম বা খিদমত করা আমার উম্মতের দায়িত্ব ও কর্তব্য; যদি উনারা কুফরী শিরকী না করেন। যে ব্যক্তি আমার পবিত্র আহাল ইয়াল উনাদের খিদমত করবে ক্বিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবো এবং তার জন্য সুপারিশ করবো। আর যে ব্যক্তি আমার পবিত্র আহাল বা হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খিদমতের প্রতি লক্ষ্য রাখবে না তাকে ‘তীনতুল খিবাল’ থেকে পান করানো হবে।” (তারিখু ইবনে আবি খায়ছামাহ, আদদুররাতুছ ছামীনাহ ফী আখবারিল মাদীনা, আল কামিলু ফী দ্বুউফায়ির রিজাল, মাওয়াফিকু লিল মাত্ববু’)
‘তীনতুল খিবাল’ হলো দোযখের একটি হাউজের নাম, যথায় দোযখবাসীদের পুঁজ ও রক্ত জমা করে রাখা হবে। আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তার থেকে পরিত্রাণ চাচ্ছি।

        “মুসলিম শরীফ” উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
لاَ يُرِيدُ أَحَدٌ أَهْلَ الْمَدِينَةِ بِسُوءٍ إِلاَّ أَذَابَهُ اللَّهُ فِى النَّارِ ذَوْبَ الرَّصَاصِ أَوْ ذَوْبَ الْمِلْحِ فِى الْمَاءِ
অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র মদীনাবাসী উনাদের প্রতি কোনো খারাবী করার ইচ্ছা করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে এভাবে আগুনে বিগলিত করবেন যেভাবে শিখা আগুনে বিগলিত হয় অথবা লবন পানিতে গলে যায়।”
অন্য বর্ণনায় এসেছে, “যে ব্যক্তি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাসিন্দা উনাদেরকে কষ্ট দেয়ার প্রয়াসী হবে অথবা উনাদের সাথে জিহাদ করার উদ্যোগ নিবে সে অল্প সময়ের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে। ইহাই তাক্বদীরে ইলাহী।”
        হযরত সায়ীদ ইবনে মুসাইয়্যিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত যে, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পৌঁছে দু’হাত মুবারক তুলে দোয়া করলেন।
اللهم من ارادنى واهل بلدى بسوء فعجل هلاكه
অর্থ: “হে বারে ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আমার অথবা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাসিন্দাগণ উনাদের প্রতি খারাপ আচরণের ইচ্ছা করবে আপনি তাকে সত্তর ধ্বংস করে দিন।” (খুলাছাতুল ওয়াফা বি আখবারী দারিল মুছত্বফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
        হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী জালিম কোনো একজন ব্যক্তি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে আসে। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ওই সময় পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করছিলেন। বার্ধক্য হেতু উনার চক্ষু মুবারকের জ্যোতি কমে গিয়েছিলো। লোকেরা উনাকে পরামর্শ দিলো যে, এই সময় কিছুদিনের জন্য এই জালিম থেকে দূরে সরে থাকলে ভালো হয়। তিনি নিজকে ফেৎনা থেকে মুক্ত রাখার জন্য নিজের দু’ছেলে উনাদের কাঁধের উপর হাত রেখে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাহিরে চলে গেলেন। উনার দৃষ্টিশক্তির ক্ষীনতার কারণে তিনি যখন একস্থানে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান তখন তিনি বললেন ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ভীতি প্রদর্শন করতে চাচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ!
        উনার একজন পুত্র সন্তান বললেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কিভাবে ভীত প্রদর্শন করতে পারবে সে। কারণ তিনি তো হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, উনার হাত মুবারকে সমস্ত শক্তি, ক্ষমতা রয়েছে।
হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জবাবে বললেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি যে,
من أخاف أهل المدينة ظلما أخافه الله وعليه لعنة الله والملائكة والناس أجمعين
অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীকে অন্যায়ভাবে ভীত সন্ত্রস্ত করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে ভীত সন্ত্রস্ত করবেন। আর তার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার সকল ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম এবং সমস্ত মানুষের পক্ষ থেকে লা’নত বর্ষিত হবে।”
        অপর এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
لا يقبل الله من صرفاً ولا عدلاً
অর্থ: “তার কোনো আমল ফরয হোক বা নফল হোক কবুল করা হবে না।” নাঊযুবিল্লাহ!
পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ উনার মধ্যে ৮টি উসত্বওয়ানাহ বা থাম মুবারক (স্তম্ভ মুবারক) রয়েছে যেগুলোর মর্যাদা-মর্তবা বেমেছাল এই উছত্বওয়ানাহ বা স্তম্ভ মুবারক উনাদের বরকত সম্পর্কে বর্ণনা করার অবকাশ রাখে না

প্রথম উসত্বওয়ানাহ বা স্তম্ভ মুবারক : এই উসত্বওয়ানাহ বা স্তম্ভ মুবারকটি পবিত্র মেহরাব উনার সংলগ্ন এবং যিনি ইমাম উনার দাঁড়ানোর ডান পার্শ্বে অবস্থিত। পবিত্র মিম্বর শরীফ তৈরীর পূর্বে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই স্থান মুবারকে খুৎবা মুবারক দিতেন। এই পবিত্র কাঠখ- মুবারক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিচ্ছেদের কারণে ক্রন্দন করেছিলেন তা এই স্থান মুবারকে ছিলো। এই পবিত্র স্তম্ভটিকে اسطوانة مخلق (উসত্বওয়ানাতু মুখাল্লাক্ব) বলা হয়। এর মধ্যে খুলুক নামক খোশবু লাগানো হয়েছিলো। তাই উসত্বওয়ানাতু মুখাল্লাক্ব বলে অভিহিত হয়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোনো কোনো হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এই স্থান মুবারকে ছলাত আদায় করেছেন।
দ্বিতীয় উসত্বওয়ানাহ বা স্তম্ভ মুবারক:
এই اسطوانة حضرت عائشة صديقة عليها السلام নামে অভিহিত। ইহাকে اسطوانة القرع এবং اسطوانة المهاجرين ও বলা হয়। ইহা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফ ও পবিত্র মিম্বর শরীফ উনাদের মধ্যকার তৃতীয় স্তম্ভ মুবারক। পবিত্র ক্বিবলা পরিবর্তনের পর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই উসত্বওয়ানাহ বা স্তম্ভ মুবারকে ছলাত মুবারক আদায় করেছেন। বিশিষ্ট হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ যেমন হযরত ছিদ্দিক্বে আকবর আলাইহিস সালাম, হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম প্রমুখ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এ স্তম্ভের দিকেই ছলাত আদায় করতেন এবং সেখানেই উনারা একত্রিত হতেন।
‘তবরানী’ গ্রন্থকার উম্মুল মু’মিনীন, হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন। এ স্থান মুবারকের সম্মুখভাগে এমন একটি স্থান মুবারক রয়েছে, যদি মানুষ এর মর্যাদা-মর্তবা অবহিত হতো তবে লটারী ছাড়া কেউ সেখানে ছলাত আদায় করতে সক্ষম হতো না। যখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি এই পবিত্র হাদীছ শরীফ মুবারক বর্ণনা করেন তখন উনার ছেলে তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করেন, পবিত্র স্থানটি কোথায়? উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি স্থান মুবারকটি নিরূপন করলেন না। যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সেখান থেকে সরে আসলেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার ভগ্নিপুত্র হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেখানে উপস্থিত রয়ে গেলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ওই দলটি এ অপেক্ষায় রইলেন যে, উনার কাছ থেকে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করবেন। উনারা পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ উনার মধ্যে বসে রইলেন। উনাদের বিশ্বাস যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাদেরকে বিষয়টি জানাবেন। অল্পক্ষণ পর তিনিও বের হয়ে আসলেন এবং সে স্থান মুবারক উনার সন্নিকটে ডান পার্শ্ব মুবারকে ছলাত আদায় করতে লাগলেন। এতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বুঝতে পারলেন এটিই সেই স্তান মুবারক। যার সুসংবাদ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রদান করেছেন। এই স্থান মুবারক উনার নিকটে ইস্তেগফার দোয়া করা সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত।
তৃতীয় উসত্বওয়ানাহ বা স্তম্ভ মুবারক:
اسطوانة توبة নামে পরিচিত। এটি আবু লুবাবাহ স্তম্ভও বলা হয়। ইহা পবিত্র হুজরা শরীফ থেকে দ্বিতীয় এবং পবিত্র মিম্বর শরীফ থেকে চতুর্থ স্তম্ভ মুবারক। এ স্তম্ভ মুবারক উম্মুল মু’মিনীন, হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফ উনার দিকে অবস্থিত। হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আনছার গোত্রের একজন ব্যক্তি। তিনি নিজেকে এ স্তম্ভ মুবারক উনার সাথে বেঁধে রেখেছিলেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার তাওবা কবুল করেছিলেন। ঘটনাটি হলো হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে ইহুদী গোত্রের বনী কুরাইজার চুক্তি সম্পাদিত ছিলো। যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে অবরোধ করলেন, তখন হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পরামর্শ অনুযায়ী তারা কিল্লা থেকে অবতরণ করলো। তাদের সন্তানাদী সকলেই হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পা মুবারক জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করতে থাকে। যাতে তিনি তাদেরকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত শরীফ-এ নিয়ে যান এবং তাদের জন্য সুপারিশ করে তাদের ওজর আপত্তি পেশ করেন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের জন্য তা করবো। কিন্তু তিনি তাদের প্রতি ইঙ্গিত দিলেন যার অর্থ হলো তোমাদের জন্য হত্যা অবধারিত। অর্থাৎ তিনি নিজের হস্ত মুবারক দ্বারা গলার প্রতি ইঙ্গিত করলেন। কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারলেন যে, এতে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি খিয়ানত হয়েছে। এ কারণে তিনি নিজেকে এ স্তম্ভ মুবারকের সাথে জিঞ্জির দ্বারা বেঁধে নিলেন।
১০ দিনের বেশি সময় তিনি এ অবস্থায় অতিবাহিত করেন এবং কেঁদে কেঁদে বুক ভাসান। কেবল মাত্র ছলাত ও অযু ইস্তিঞ্জার সময় উনার পুত্র এসে বাঁধন খুলে দিতেন। অতিরিক্ত ক্ষুধা ও ক্রন্দনের কারণে উনার শ্রবণশক্তি লোপ পেয়েছিলো এবং দৃষ্টি শক্তিও উনার যায় যায় প্রায়। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
يا ايها الذين امنوا لاتخونوا الله ورسوله
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে খিয়ানত করো না।”
হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ক্বসম করেছিলেন যতদিন পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজ হস্ত মুবারক দ্বারা উনার বাঁধন খুলে না দেবেন ততদিন পর্যন্ত আমি বন্ধন মুক্ত হবো না। এবং খাওয়া-দাওয়াও করবো না। ইনশাআল্লাহ এ অবস্থায় বিছাল শরীফ লাভ করবো অথবা আমার অপরাধ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি প্রথমে আমার নিকট আসতেন, আমি উনাকে ক্ষমা করে দিতাম। কিন্তু যখন তিনি নিজকে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে বেঁধে দিয়েছেন; যতক্ষণ পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ওহী মুবারক না আসবে ততক্ষন আমি বন্ধন মুক্ত করে দিবো না। একদিন সকাল বেলা হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার হুজরা মুবারকে উনার তাওবা কবুলের পবিত্র আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে এসে উনাকে বন্ধন মুবারক মুক্ত করলেন।

অতঃপর হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অঙ্গীকারাবদ্ধ হলেন যে, তিনি আর কখনো বনু কুরাইজাতে গমন করবেন না। কেননা সেখানে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে খিয়ানত সংঘটিত হয়েছে।
হযরত মুহম্মদ ইবনে কা’ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে হযরত যুবালা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ স্তম্ভ মুবারক উনার নিকট ছলাত মুবারক আদায় করতেন এবং বাদ ফজর এ স্থান মুবারকে তাশরীফ মুবারক নিতেন। সুবহানাল্লাহ!
চতুর্থ উসত্বওয়ানাহ বা স্তম্ভ মুবারক :
 اسطوانة السرير(উসত্বওয়ানাতুস সারীর) এটি পবিত্র জানালা মুবারক উনার সন্নিকটে উসত্বওয়ানাহ তাওবা উনার পূর্ব দিকে অবস্থিত। কখনো কখনো বিছানা মুবারক এখানে রাখা হতো। আবার কখনো এখান থেকে দুরে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ উনার মধ্যে ইতিকাফ মুবারকে বসতেন এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি চিরুনী মুবারক দিয়ে উনার মাথার চুল মুবারক আঁচড়িয়ে দিতেন। খেঁজুর গাছের শাখার নির্মিত উনার একখানী চকি মুবারক ছিলো। উহা কখনো পবিত্র ইতিকাফ গ্রহণের স্থান মুবারকে আবার কখনো স্তম্ভ মুবারকও বাতির মাঝখানে পেতে রাখা হতো। রাত্রি বেলায় প্রায়ই ওই চৌকি মুবারকে বিশ্রাম মুবারক নিতেন এবং দিনের বেলায় নিচে রাখতেন।
পঞ্চম উসত্বওয়ানাহ বা স্তম্ভ :
اسطوانة محرس
(উসত্বওয়ানাতু মুহাররাস ) ইহাকে
اسطوانة حضرت على بن ابى طالب عليه السلام
(উসত্বওয়ানাতু হযরত আলী ইবনে আবী ত্বলিব আলাইহিস সালাম) ও বলা হয়। কেননা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি প্রায় এ স্থান মুবারকে ছলাত আদায় করতেন এবং এখানে বসে রাত্রিতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাহাড়া দিতেন। হযরত ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন যে, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার বসবার স্থান মুবারক ওই দরজা মুবারকের সম্মুখভাগেই ছিলো যে দরজা মুবারক দিয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ থেকে মসজিদুন নববী শরীফ উনার মধ্যে গমনাগমন করতেন।
ষষ্ঠ উসত্বওয়ানা বা স্তম্ভ মুবারক:
اسطوانة الوفود (উসত্বওয়ানাতুল উফুদ) ইহা উসত্বওয়াতুল মুহাররাসের পশ্চাতে অবস্থিত। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণের জন্য যখন বিভিন্ন গোত্রপতী বিভিন্ন দেশ ও বিভিন্ন এলাকার লোকজন এবং দূতগণ পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে আসতেন তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এখন তাশরিফ মুবারক নিয়ে তাদেরকে দিদার মুবারক দানে ধন্য করতেন।
আর ওই সময় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পার্শ্ব মুবারকে বসে যেতেন।

0 Comments: