হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৭৫১-৯২৪) (গ)


‘দারুন নাদওয়া’য় কাফির মুশরিকদের বৈঠক

কুরাইশ কাফির মুশরিকরা যখন দেখলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ধীরে ধীরে হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে চলে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রায় সমস্ত হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হিজরত করেছেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হয়তো অতিসত্বর হিজরত করবেন ভেবে কাফির মুশরিক তথা বিধর্মীরা পরামর্শের জন্য ‘দারুন নাদওয়া’য় সমবেত হয়।
এ প্রসঙ্গে ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ ২য় জিলদ ১৭৫ ও ১৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه وأقام رسول الله صلى الله عليه وسلم بمكة بعد أصحابه من المهاجرين ينتظر أن يؤذن له فى الهجرة ولم يتخلف معه بمكة إلا من حبس أوفتن، إلا حضرت على بن أبى طالب عليه السلام وحضرت أبو بكر بن أبى قحافة عليه السلام وكان حضرت أبو بكر عليه السلام كثيرا ما يستأذن رسول الله صلى الله عليه فى الهجرة فيقول له. لا تعجل لعل الله يجعل لك صاحبا.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হিজরতের পর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে হিজরত করার জন্যে অনুমতির অপেক্ষায় পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করছিলেন এবং আটকে পড়া বা নির্যাতনগ্রস্ত বা যুলুমগ্রস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ছাড়া উনার পিছনে আর কেউ থেকে যাননি। যাঁরা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে থেকে যান উনাদের মধ্যে হযরত আলী ইবনে আবূ ত্বালিব আলাইহিস সালাম এবং হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব ইবনে কুহাফাহ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন। আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হিযরতের জন্য প্রায়ই অনুমতি চাইতেন। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতেন, “আপনি তাড়াহুড়া করবেন না, অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক আপনাকে একজন সঙ্গী দান করবেন।”
فيطمع حضرت أبوبكر عليه السلام أن يكونه. فلما رأت قريش أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قد صار له شيعة وأصحاب من غيرهم بغير بلدهم ورأوا خروج أصحابه من المهاجرين اليهم عرفوا أنهم قد نزلوا دارا وأصابوا منهم منعة، فحذروا خروج رسول الله صلى الله عليه وسلم اليهم وعرفوا أنه قد أجمع لحربهم، فاجتمعوا له فى دار الندوة وهى دار قصى بن كلاب التى كانت قريش لا تقضى أمارا إلا فيها يتشاورون فيما يصنعون فى أمر رسول الله صلى الله عليه وسلم حين خافوه.
এ সময় হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গী হওয়ার আকাঙ্খা পোষণ করতেন। কুরাইশ কাফির মুশরিকরা যখন দেখলো যে, পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বাহিরে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গী-সাথী এবং সমর্থক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি দল সৃষ্টি হয়ে গেছে এবং হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হিযরত করে মদীনা শরীফ উনার মধ্যে হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিকট গমন করেছেন। উনারা এমন এক স্থান মুবারকে হিযরত করেছেন যেখানে উনারা নিরাপদ স্থান করে নিয়েছেন, তখন কাফির মুশরিকদের আশঙ্কা জাগলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হয়তো তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের আয়োজন সম্পন্ন করেছেন।
তখন তারা উনার প্রসঙ্গ (আলোচনা করার জন্য) ‘দারুন নাদওয়া’য় সমবেত হয়। আর এ ‘দারুন নাদওয়া’ ছিলো কুসাই ইবনে কিলাব-এর গৃহে। কুরাইশ কাফিররা পরামর্শের জন্যে এখানে সমবেত হতো এবং সেখানে পরামর্শক্রমে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতো। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপারে তারা শঙ্কিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার নিমিত্তে ‘দারুন নাদওয়া’য় সমবেত হওয়া ঠিক করে।
عن حضرت عبد الله بن عباس رضى الله تعالى عنه. قال لما اجتمعوا لذلك واتعدوا أن يدخلوا فى دار الندوة ليتشاوروا فيها فى أمر رسول الله صلى الله عليه وسلم، غدوا فى اليوم الذى اتعدوا له وكان ذلك اليوم يسمى يوم الزحمة، فاعترضهم ابليس لعنه الله فى صورة شيخ جليل عليه بتلة فوقف على باب الدار فلما رأوه واقفا على بابها قالوا من الشيخ؟ قال شيخ من أهل نجد سمع بالذى اتعدتم له فحضر معكم ليسمع ما تقولون وعسى أن لا يعدمكم منه رأيا ونصحا. قالوا أجل فادخل، فدخل معهم وقد اجتمع فيها اشراف قريش عتبة وشيبة وأبو سفيان وطعيمة بن عدى وجبير بن مطعم بن عدى والحارث بن عامر بن نوفل والنضر بن الحارث وأبو البخترى بن هشام وزمعة بن الاسود وحكيم بن حزام وأبوجهل بن هشام ونبيه ومنبه ابنا الحجاج وأمية بن خلف ومن كان منهم وغيرهم ممن لا يعد من قريش،
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরাইশ কাফিররা যখন এ বিষয়ে একমত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা ও পরামর্শের দিনক্ষণ নির্ধারণ করে এবং ‘দারুন নাদওয়ায়’ একত্রিত হওয়া সাব্যস্ত হয় এবং তারা এ দিনটার নামকরণ করে ‘ইয়াওমুয যাহমা’ তথা ভিড়ের দিন। এ দিন সকালে অভিশপ্ত ইবলিস একজন প্রবীণের বেশ ভূষা ধারণ করে উক্ত পরামর্শ গৃহের দরজায় এসে দাঁড়ায়। তাকে দরজায় দেখে লোকেরা তার সম্পর্কে জানতে চায়। সে বলে, নজদীর একজন শায়েখ। তোমাদের কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে পেরে তোমরা কি আলোচনা করো তা শোনার জন্য উপস্থিত হয়েছি। হতে পারে উত্তম প্রস্তাব আর হিতকর মতামত দান থেকে তোমাদেরকে সে বঞ্চিত করবে না। তার বক্তব্য শুনে সকলে বললো, ঠিক আছে, দয়া করে ভিতরে এসে বসো। শায়েখ নজদী ভেতরে প্রবেশ করে তাদের সঙ্গে বসে। কুরাইশ কাফির নেতৃবৃন্দের মধ্যে যারা এ সমাবেশে সমবেত হয় তাদের মধ্যে ছিলো উতবা, শায়বা, হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখনও তিনি মুসলমান হননি), তুয়ায়মা ইবনে আদী এবং জুবায়র ইবনে মুতঈম ইবনে আদী, হারিছ ইবনে আমীর ইবনে নাওফিল, নদ্বর ইবনে হারিছ, আবুল বুখতারী ইবনে হিশাম, যামআ ইবনে আসওয়াদ, হাকীম ইবনে হিযাম, আবূ জাহল ইবনে হিশাম, হাজ্জাজের দু’পুত্র নাবীহ ও মুনাব্বিহ, উমাইয়া ইবনে খলফ প্রমুখ। কুরাইশ কাফির-মুশরিকদের বাইরেও আরো অনেকেই এ পরামর্শসভায় উপস্থিত ছিলো। যাদের সংখ্যা অনেক।
فقال بعضهم لبعض إن هذا الرجل قد كان من أمره ما قد رأيتم وإننا والله ما نأمنه على الوثوب علينا بمن قد اتبعه من غيرنا، فاجمعوا فيه رأيا، قال فتشاوروا ثم قال قائل منهم- قيل إنه أبو البخترى بن هشام- احبسوه فى الحديد وأغلقوا عليه بابا ثم تربصوا به ما أصاب اشباهه من الشعراء الذين كانوا قبله زهيرا والنابغة ومن مضى منهم من هذا الموت حتى يصيبه ما أصابهم. فقال الشيخ النجدى لا والله ما هذا لكم برأى والله لئن حبستموه كما تقولون ليخرجن أمره من وراه الباب هذا الذى أغلقتم دونه الى أصحابه، فلأوشكما أن يثبوا عليكم فينتزعوه من أيديكم ثم يكاثروكم به حتى يغلبوكم على أمركم، ما هذا لكم برأى.
পরামর্শ সভায় উপস্থিত লোকজন একে অপরকে বলে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাজ তো তোমরা দেখতেই পাচ্ছো। আমাদের বাদে উনার অন্য অনুসারী উনাদের নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালাবার ব্যাপারে উনার সম্পর্কে তো আমরা নিরাপদ নই। কাজেই উনার ব্যাপারে তোমরা ঐকমত্যে উপনীত হও।
বর্ণনাকারী হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এরপর তারা পরস্পর পরামর্শ করে। তাদের মধ্যে একজন বক্তা কথিত আছে যে, সে ছিলো আবুল বুখতারী ইবনে হিশাম। সে বলে, লোহার শিকলে উনাকে বেঁধে ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখতে হবে। এরপর লক্ষ্য রাখতে হবে যে, উনার পূর্বে উনার মতো কবি, যথা যুহায়র, নাবিগা প্রমুখের কি পরিণতি হয়েছিলো, উনাকেও যাতে তাদের মতো পরিণতি বরণ করতে হয় এবং তিনিও যেনো তাদের মতো ইন্তিকাল বরণ করেন, সে দিকেই সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নাঊযুবিল্লাহ!
তার বক্তব্য শ্রবণ করে শায়েখ নজদী বলে উঠে, না, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এটা তো কোনো যুক্তিসঙ্গত অভিমত হলো না। (আমি তো তোমাদের নিকট থেকে এমন হাস্যস্পদ পরামর্শ আশা করিনি)। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তোমাদের কথা মতো তোমরা উনাকে আটক করলে, উনার ইরশাদ মুবারক বাইরে ছড়িয়ে পড়বে। উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কাছে পৌঁছে যাবে এবং অবিলম্বে উনারা তোমাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে উনাকে তোমাদের হাত থেকে নিয়ে যাবেন। আর এভাবে দিন দিন উনাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, শেষ পর্যন্ত উনারা তোমাদের উপর বিজয় লাভ করবেন। কাজেই তোমাদের পক্ষ থেকে এটা তো কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত হলো না।
فتشاوروا ثم قال قائل منهم نخرجه من بين أظهرنا فننفيه من بلادنا فاذا خرج عنا فو الله ما نبالى أين ذهب ولا حيث وقع، إذا غاب عنا وفرغنا منه فأصلحنا أمرنا وأمرنا وألفتنا كما كانت. قال الشيخ النجدى لا والله ما هذا لكم برأى ألم تروا حسن حديثه وحلاوة منطقه وغلبته على قلوب الرجال بما يأتى به؟ والله لو فعلتم ذلك ما أمنت أن يحل على حى من العرب فيغلب عليهم بذلك من قوله وحديثه حتى يتابعوه عليه، ثم يسير بهم اليكم حتى يطأكم بهم فيأخذ أمركم من أيديكم، ثم يفعل بكم ما أراد، أديروا فيه رأيا غير هذا.
শায়েখ নাজদীর এ বক্তব্য শুনে তারা পুনরায় পরামর্শ করতে বসে। একজন বললো, আমাদের মধ্য থেকে উনাকে বহিষ্কার করতে হবে, নির্বাসনে পাঠাতে হবে, দেশ থেকে নির্বাসিত করার পর তিনি কোথায় গেলেন বা কি করলেন, তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা থাকবে না। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম করে বলছি, তিনি আমাদের থেকে হিযরত করে দূরে চলে গেলে আমরা উনার থেকে মুক্ত হলাম আর আমরা নির্বিবাদে আমাদের কাজ করে যেতে পারবো। আগে যা করতাম তাই করবো।
শায়েখ নাজদী বললো, তোমাদের জন্য এটা তো কোনো অভিমত হলো না। তোমরা দেখতে পাচ্ছো না- উনার কথা মুবারক কতো চমৎকার, বক্তব্য মুবারক কতো মিষ্টি এবং সুন্দরতম। কিভাবে তিনি কথা মুবারক দ্বারা মানুষের মন জয় করে নেন। তোমরা উনাকে বহিষ্কার করলে আরবের কোনো না কোনো গোত্র উনার খিদমতের আঞ্জাম দিবেন। নিজের কথা আর বচন মুবারক দ্বারা তিনি তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করবেন। শেষ পর্যন্ত লোকজন উনার অনুসারী হয়ে যাবেন। শেষ পর্যন্ত তিনি উনার অনুসারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিয়ে তোমাদের উপর আক্রমণ চালাবেন। তোমাদের হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে নিবেন। এরপর তোমাদের সঙ্গে যথেচ্ছা আচরণ করবেন। কাজেই উনার সম্পর্কে তোমরা অন্য কোনো চিন্তা করতে পারো। নাঊযুবিল্লাহ!
فقال أبو جهل بن هشام والله إن لى فيه رأيا ما أرا كم وقعتم عليه بعد. قالوا وما هو يا أبا الحكم؟ قال أرى أن نأخذ من كل قبيلة فتى شابا جليدا نسيبا وسيطا فينا ثم نعطى كل فتى منهم سيفا صارما، ثم يعمدوا اليه فيضربوه بها ضربة رجل واحد فيقتاوه فنستريح منه، فانهم إذا فعلوا ذلك تفرق دمه فى القبائل جميعها، فلم يقدر بنو عبد مناف على حرب قومهم جميعا. فرضوا منا بالعقل فعقلناه لهم، قال يقول الشيخ النجدى القول ما قال الرجل هذا الرأى ولا رأى غيره فتفوق القوم على ذلك وهم مجمعون له. فأتى حضرت جبرائيل عليه السلام رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال له لا تبت هذه الليلة على فراشك الذى كنت تبيت عليه.
তখন আবূ জাহল ইবনে হিশাম বলে উঠলো, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম করে বলছি উনার সম্পর্কে আমার অভিমত হলো, আমি মনে করি, আমি যা ভাবছি তোমরা (অনেক) পরেও তা ভাবতে পারবে না। লোকজন বলে উঠলো, হে আবুল হাকাম! কি তোমার সে ভিন্নমত? সে বললো, আমি মনে করি যে, আমরা প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন তাগড়া সম্ভ্রান্ত যুবক বাছাই করে নিবো। সে যুবক হবে সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদার অধিকারী। আমরা প্রতিটি যুবকের হাতে তুলে দিবো একটি করে নাঙ্গা তরবারী। এক ব্যক্তির মতো তারা সকালে একযোগে উনার উপর আঘাত হানবে। উনি শহীদ হবেন। নাঊযুবিল্লাহ! এভাবে আমরা উনার থেকে শান্তি আর মুক্তি লাভ করবো। নাঊযুবিল্লাহ! যুবকরা যখন এ কাজটি করবে, তখন উনার খুন মুবারক সকল গোত্রের মধ্যে বিভক্ত ও বণ্টিত হবে। আর বনু আবদে মানাফ উনার কাওমের সকল গোত্রের সঙ্গে যুদ্ধ করতে সক্ষম হবে না। ফলে উনারা আমাদের নিকট থেকে রক্তপণ গ্রহণ করতে রাযী হয়ে যাবেন। আমরা অনায়াসেই সে রক্তপণ পরিশোধ করবো। নাঊযুবিল্লাহ!
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, শায়েখ নাজদী বলে যে, এ ব্যক্তি যা বললো এটাই তো সঠিক কথা। এটাই হলো অভিমতের মতো অভিমত। আর কোনো কথা আর কোনো অভিমত দরকার হয় না। এ ব্যাপারে সকলে একমত হয়ে বৈঠক সমাপ্ত করে এবং সকলে নিজ নিজ ঘরে ফিরে যায়। ইতোমধ্যে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আগমন করেন এবং উনাকে বিনীতভাবে বলেন, যে শয্যায় আপনি ঘুমাতেন আজ রাতে সে শয্যায় আপনি ঘুমাবেন না।
قال فلما كانت عتمة من الليل اجتمعوا على بابه يرصدونه حتى ينام فيثبون عليه، فلما رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم مكانهم قال لعلى حضرت بن أبى طالب عليه السلام ثم على فراشى وتسج ببردى هذا الحضرمى الاخضر، فنم فيه فانه لن يخلص اليك شئ تكرهه منهم. وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم ينام فى برده ذلك إذا نام.
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, রাত গভীর হলে তারা সকলে উনার হুযরা শরীফ উনার দরজা মুবারকে সমবেত হয়ে অপেক্ষায় থাকে, তিনি ঘুম থেকে উঠলে তারা উনার উপর সকলে মিলে হামলা চালাবে। নাঊযুবিল্লাহ! তাদের উপস্থিতি জানতে পেরে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী ইবনে আবূ ত্বালীব আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, আমার এই সবুজ হাযরামী চাদর মুবারক গায়ে দিয়ে আপনি আমার শয্যায় শুয়ে পড়েন। এ চাদর মুবারক গায়ে দিয়ে ঘুমালে তাদের পক্ষ থেকে আপনাকে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে না আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাধারণত এ চাদর মুবারক গায়ে দিয়েই ঘুমাতেন। সুবহানাল্লাহ!
আরো বর্ণিত রয়েছে,
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه لما اجتمعوا له وفيهم أبو جهل قال- وهم على بابه- إن حضرت محمدا صلى الله عليه وسلم يزعم أنكم إن تابعتموه على أمره كنتم ملوك العرب والعجم، ثم بعثتم من بعد موتكم، فجعلت لكم جنان كجنان الاردن، وإن لم تفعلوا كان فيكم ذبح ثم بعثتم بعد موتكم، ثم جعلت لكم نار تحرقون فيها. قال فخرج رسول الله صلى الله عليه وسلم فأخذ حفنة من تراب فى يده ثم قال نعم أنا أقول ذلك أنت أحدهم،
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কুরাইশ কাফিরেরা যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুযরা শরীফ উনার দরজা মুবারক-এ জমায়েত হলো, তখন তাদের মধ্যে কাট্টা কাফির আবূ জাহলও ছিলো। তারা সকলেই দরজা মুবারক উনার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। আবূ জাহল বললো, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইরশাদ মুবারক- তোমরা উনার অনুসরণ করলে তোমরা আরব আজমের বাদশাহ বনে যাবে, ইন্তিকালের পর পুনরুজ্জীবিত হবে এবং তোমাদের জন্যে জর্দানের উদ্যান বানানো হবে। আর তা না করলে তোমরা ধ্বংস হবে, যবাই হবে, মৃত্যুর পর আবার জীবিত হবে এবং তোমাদের জন্যে আগুন সৃষ্টি করা হবে এবং তাতে তোমাদেরকে দগ্ধীভূত করা হবে।
বর্ণনাকারী হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফ থেকে বের হন, এক মুঠো ধুলো হাত মুবারক-এ নিয়ে এবং বললেন, হ্যাঁ, আমি এ কথা বলি, আর তুমিও তাদের একজন।
وأخذ الله على أبصارهم عنه فلا يرونه فجعل ينثر ذلك التراب على رؤسهم وهو يتلو هذه الا يات (يس والقران الحكيم إنك لمن المرسلين على صراط مستقيم) الى قوله (وجعلنا من بين أيديهم سدا ومن خلفهم سدا فأغشيناهم فهم لا يبصرون) ولم يبق منهم رجل الا وقد وضع على رأسه ترابا
মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের চোখে আবরণ সৃষ্টি করেন, তারা উনাকে দেখতে পায়নি। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার নিম্নোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করতে করতে তাদের দিকে ধুলো ছিটাতে ছিটাতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বের হয়ে যান।
يس -وَالْقُرْآنِ الْحَكِيمِ- إِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ- عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ  -تَنزِيلَ الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ- لِتُنذِرَ قَوْمًا مَّا أُنذِرَ آبَاؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُونَ- لَقَدْ حَقَّ الْقَوْلُ عَلَى أَكْثَرِهِمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ - إِنَّا جَعَلْنَا فِي أَعْنَاقِهِمْ أَغْلاَلاً فَهِيَ إِلَى الأَذْقَانِ فَهُم مُّقْمَحُونَ- وَجَعَلْنَا مِن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ سَدًّا وَمِنْ خَلْفِهِمْ سَدًّا فَأَغْشَيْنَاهُمْ فَهُمْ لاَ يُبْصِرُونَ
অর্থ: ইয়াসীন, ক্বসম প্রজ্ঞাময় পবিত্র কুরআন শরীফ উনার! আপনি নিশ্চয়ই রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। আপনি সরল সঠিক পথে সুপ্রতিষ্ঠিত। পবিত্র কুরআন শরীফ অবতীর্ণ পরাক্রমশালী পরম দয়ালু মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট থেকে। যাতে আপনি সতর্ক করেন এমন এক সম্প্রদায়কে যাদের পিতৃপুরুষদেরকে সতর্ক করা হয়নি, যার ফলে তারা গাফিল। তাদের অধিকাংশরাই জনে সে কালাম শরীফ অবধারিত হয়েছে। সুতরাং ওরা ঈমান আনবে না। আমি তাদের গলদেশে বেড়ি পড়িয়েছি চিবুক পর্যন্ত। ফলে ওরা ঊর্ধ্বামুখী হয়ে গেছে। আমি তাদের সম্মুখে প্রাচীর ও পশ্চাতে প্রাচীর স্থাপন করেছি এবং ওদেরকে আবৃত করেছি। ফলে তারা দেখতে পায় না। (পবিত্র সূরা ইয়াসীন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৯)
তাদের প্রত্যেকের মাথার উপর মাটি নিক্ষেপ করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেখানে যাওয়ার ইচ্ছা মুবারক করেছিলেন সেখানে তিনি চলে গেলেন। তাদের মধ্যে একজন লোকও ছিলো না- যার মাথায় ধুলো লাগেনি।
ثم انصرف الى حيث أراد أن يذهب فأتاهم ات ممن لم يكن معهم فقال ما تنتظون ههنا؟ قالوا حضرت محمدا صلى الله عليه وسلم، فقال خيبكم الله، قد والله خرج عليكم حضرت محمد صلى الله عليه وسلم ثم ما ترك منكم رجلا الا وقد وضع على رأسه ترابا، وانطلق الحاجته! أفما ترون ما بكم؟ قال فوضع كل رجل منهم يده على رأسه فاذا عليه تراب، ثم جعلوا يتطلعون فيرون عليا على الفراش متسجيا ببرد رسول الله صلى الله عليه وسلم فيقولون والله إن هذا لحضرت محمد صلى الله عليه وسلم نائما عليه برده، فلم يبرحوا كذلك حتى أصبحوا فقام على عن الفراش فقالوا والله لقد كان صدقنا الذى كان حدثنا.
এরপর তাদের সঙ্গে ছিলো এমন এক আগন্তুক সে আগমন করে জিজ্ঞাসা করলো, তোমরা এখানে কিসের জন্যে অপেক্ষা করছো? তারা বললো: আমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যে অপেক্ষা করছি। লোকটি বললো, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে ব্যর্থ করেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তিনি তো তোমাদের প্রত্যেকের মাথায় মাটি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেছেন। তিনি তো বেরিয়ে গেছেন উনার প্রয়োজনে। তোমরা কি দেখতে পাচ্ছো না তোমাদের উপর কি আছে।
উল্লেখ্য যে, এদিকে যখন ‘দারুন নাদওয়া’ বৈঠক শেষ হলো। ওদিকে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার একখানা পবিত্র আয়াত শরীফ নিয়ে হাজির হলেন।
وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُواْ لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللّهُ وَاللّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
অর্থ : আপনি স্মরণ করুন, কাফিরেরা আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আপনাকে বন্দী করার জন্যে, আপনাকে শহীদ করার জন্যে অথবা আপনাকে নির্বাসিত করার জন্যে এবং তারা ষড়যন্ত্র করে আর মহান আল্লাহ পাক তিনি হিকমত করেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বোত্তম হিকমতওয়ালা। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ- ৩০)
উক্ত আয়াত শরীফ মক্কার কাফির মুশরিকদের সম্পর্কে নাযিল হয়। যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলো। নাঊযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
أَمْ يَقُولُونَ شَاعِرٌ نَّتَرَبَّصُ بِهِ رَيْبَ الْمَنُونِ- قُلْ تَرَبَّصُوا فَإِنِّي مَعَكُم مِّنَ الْمُتَرَبِّصِينَ
অর্থ : “ওরা কি বলতে চায় যে, তিনি একজন কবি? আমরা উনার বিছাল শরীফ উনার প্রতীক্ষা করছি। হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, তোমরা প্রতীক্ষা করো, আমি তোমাদের সঙ্গে প্রতীক্ষার অন্তর্ভুক্ত আছি।” (পবিত্র সূরা তুর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ মুবারক ৩০-৩১) (চলবে ইনশাআল্লাহ)


0 Comments: