হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৭৫১-৯২৪) (ঠ)


পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ফাযায়িল-ফযীলত :
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
المسجد الذى اسس على التقوى مسجدى هذا
অর্থ: “তাক্বওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত মসজিদ হলো আমার এই মসজিদ তথা পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ।”
উল্লেখ্য যে, হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় তাক্বওয়ার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ বিষয়ে দু’ব্যক্তি উনাদের মাঝে মতপার্থক্য দেখা দেয়। উনাদের একজন বললেন, তা হলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মসজিদ (পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ)।
অপর ব্যক্তি তিনি বললেন, তাহলো পবিত্র মসজিদে কু’বা শরীফ। উভয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ গিয়ে এ ব্যাপারে জানার বাসনা করলেন, তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তা হলো আমার এ পবিত্র মসজিদ (পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ)। সুবহানাল্লাহ!
বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা জানা যায় যে, পবিত্র মসজিদে তাক্বওয়া হলো পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত যায়িদ ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সায়ীদ ইবনে মুসাইয়াব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা এ মতই পোষণ করেন।
পবিত্র বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لاتشد الرحال الا الى ثلاثة مساجد مسجدى هذا و المسجد الحرام و مسجد بيت المقدس
অর্থ: “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, তিন মসজিদ ব্যতিত অপর কোনো মসজিদের উদ্দেশ্যে ছফর করা যাবে না। এক. আমার এ মসজিদ (পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ), দুই. পবিত্র মসজিদুল হারাম (কা’বা শরীফ), তিন. বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফ।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
“কারণ ইহা (পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ) অনেক অনেক মর্যাদাপূর্ণ।”
পবিত্র বুখারী শরীফ ও পবিত্র মুসলিম শরীফ উনাদের মাঝে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ما بين بيتى و منبرى روضة من رياض الجنة- و منبرى على حوضى-
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার পবিত্র গৃহ মুবারক আর আমার পবিত্র মিম্বর শরীফ উনাদের মধ্যস্থলে রয়েছে পবিত্র জান্নাতের অন্যতম মুবারক বাগান আর আমার পবিত্র মিম্বর শরীফ হচ্ছে আমার হাউদ্ব (হাউজে কাউছার) উনার উপর।”
পক্ষান্তরে হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং উনার সঙ্গী-সাথীগণ এ মত পোষণ করেন যে, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মসজিদ অর্থাৎ পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ পবিত্র হারাম শরীফ উনার থেকে শ্রেষ্ঠতম। সুবহানাল্লাহ!
কারণ পবিত্র হারাম শরীফ নির্মাণ করেছেন হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম আর পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ তৈরি করেছেন স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! আর এটা সুস্পষ্ট যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার তুলনায় অনেক অনেক শ্রেষ্ঠ। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যখন পবিত্র মদীনা শরীফ গেলেন তখন অনেকে অসুস্থ হয়ে গেলেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت عائشة عليها السلام أنها قالت لما قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم المدينة وعك حضرت أبو بكر عليه السلام و حضرت بلال رضى الله تعالى عنه، قالت: فدخلت عليهما فقلت: يا أبه كيف تجدك؟ ويا حضرت بلال رضى الله تعالى عنه كيف تجدك ؟ قالت وكان حضرت أبو بكر عليه السلام إذا أخذته الحمى يقول:
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ নিলেন তখন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম ও হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা জ্বরে আক্রান্ত হলে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি উনাদের নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন আব্বাজান! আপনাদের কেমন লাগছে? হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আপনি যেমন বোধ করছেন? হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি জ্বরে আক্রান্ত হলে বলতেন,
كل امرئ مصبح في أهله+
والموت أدنى من شراك نعله
“প্রতিটি ব্যক্তি তার পরিজনের মধ্যে সকালে শয্যা ত্যাগ করে আর মৃত্যু তো তার স্যান্ডেলের ফিতার চেয়েও নিকটবর্তী।”
وكان حضرت بلال رضى الله تعالى عنه إذا أقلع عنه الحمى يرفع عقيرته ويقول
আর হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জ্বর সেরে গেলে ঘাড় মুবারক সোজা করে বলতেন,
ألا ليت شعري هل أبيتن ليلة +
بواد وحولي اذخر وجليل
“হায়! আমি যদি রাত্রি যাপন করতে পারতাম (পবিত্র মক্কা শরীফ) উনার উপত্যকায় আর চারদিকে থাকতো ইযখির ও জালীল ঘাসের সমারোহ।”
وهل أردن يوما مياه مجنة +
وهل يبدون لي شامة وطفيل
“কোনো দিন যদি তারা পান করতে পারতো মাজান্না কুয়ার পানি। যদি প্রকাশ পেতো আমার জন্য শামা ও তাফীল (পবর্ত)।
قالت حضرت عائشة عليها السلام فجئت رسول الله صلى الله عليه وسلم فأخبرته فقال
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র খিদমত শরীফ-এ হাযির হয়ে উনাকে উক্ত বিষয় অবহিত করলে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اللهم حبب إلينا المدينة كحبنا مكة أو أشد وصححها وبارك لنا في صاعها ومدها، وانقل حماها فاجعلها بالجحفة
“হে মহান আল্লাহ পাক! পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মতো পবিত্র মদীনা শরীফ উনাকেও আমাদের জন্য প্রিয় (ভূমি) করে দিন বা তার চেয়েও বেশি এবং পবিত্র মদীনা শরীফ উনাকে আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর নিবাসে পরিণত করে দিন এবং পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সা’ ও মুদ-এ অর্থাৎ মাপে ওজনে পণ্য কেনাবেচায় আমাদের বরকত দান করুন। আর পবিত্র মদীনা শরীফ উনার জ্বরকে স্থানান্তর করুন জুহফা অঞ্চলে।”
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি আরো বলেন, অতঃপর আমি হযরত আমীর ইবনে ফুহায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করি, হে হযরত আমীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! কেমন লাগছে? তিনি জবাবে বললেন,
لقد وجدت الموت قبل ذوقه +
إن الجبان حتفه من فوقه
অর্থ: “মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করার আগেই আমি মৃত্যু যাতনা ভোগ করছি। আর মুত্তাকী উনাদের মৃত্যু আসে উনার উপর থেকে।
كل امرئ مجاهد بطوقه +
كالثور يحمي جلده بروقه
“প্রতিটি ব্যক্তি চেষ্টা কোশেশ করে তার হিম্মত অনুযায়ী। যেমন ষাঁড় নিজেকে প্রতিরোধ করে তার শিং দ্বারা।”
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت على عليه السلام قال ماكتبنا عن رسول الله صلى الله عليه وسلم الا القران وما فى هذه الصحيفة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المدينة حرام مابين عير الى ثور فمن احدث فيها حدثا او اوى محدثا فعليه لعنة الله والملئكة والناس اجمعين لايقبل منه صرف ولا عدل
অর্থ: হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এবং এ ছহীফা বা কাগজ মুবারক-এ যা আছে তা ব্যতীত আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে আর আমি কিছু লিখে নেইনি। তিনি বলেন ইহাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,  পবিত্র মদীনা শরীফ (হারাম বা সম্মানিত) আইর হতে সাওর পর্যন্ত। যে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে কোনো অসৎ প্রথা (বিদয়াত) সৃষ্টি করবে অথবা অসৎ প্রথা সৃষ্টিকারীকে আশ্রয় দিবে, তাহার উপর মহান আল্লাহ পাক ও হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং সমস্ত মানুষ সকলের লা’নত (অভিসম্পাত)। ওই ব্যক্তির কোনো ফরয বা নফল তথা কোনো ইবাদতই কবুল করা হবে না। (মুত্তাফাকুন আলাইহি, মিশকাত শরীফ)
অর্থাৎ ‘আইর’ পবিত্র মদীনা শরীফ উনার একদিকের একটি পর্বত বিশেষ। ‘সাওর’ ইহা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার উহুদ পর্বতের নিকটে একটি ছোট পর্বত। (মিরকাত শরীফ)
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت سعد رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انى احرم مابين لابتى المدينة ان يقطع عضاهها او يقتل صيدها وقال المدينة خير لهم لو كانوا يعلمون ان يقطع عضاهها او يقتل صيدها وقال المدينة خير لهم لو كانوا يعلمون لايدعها احد رغبة عنها الا ابدل الله فيها من هو خير منه ولا يثبت احد على لاوائها وجهدها الا كنت له شفيعا او شهيدا يوم القيمة
অর্থ: হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন আমি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দুই প্রান্তের  মধ্যবর্তী স্থান মুবারককে হারাম করছি, উনার বৃক্ষ মুবারক কাটা বা ছেদন করা যাবে না এবং উনার শিকার ধরা যাবে না।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র মদীনা শরীফ তাদের জন্য কল্যাণকর যদি তারা বুঝতো। যে ব্যক্তি অনাগ্রহে পবিত্র মদীনা শরীফ ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলো ওই ব্যক্তির পরিবর্তে মহান আল্লাহ পাক তিনি উত্তম ব্যক্তিকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে স্থান দিবেন এবং যে উহার মধ্যে অভাব ও দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধারণ করে ইস্তিকামত থাকবে ক্বিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশকারী বা সাক্ষী হবো। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ ২৩৯ পৃষ্ঠা)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت  ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال كان الناس اذا راوا اول الثمرة جاءوا به الى النبى صلى الله عليه وسلم فاذا اخذه قال اللهم بارك لنا فى ثمرنا وبارك لنا فى مدينتنا وبارك لنا فى صاعنا وبرك لنا فى مدنا اللهم ان حضرت ابراهيم عليه السلام عبدك وخليلك ونبيك وانى عبدك ونبيك وانه دعاك لمكة وانا ادعوك للمدينة بمثل مادعاك لمكة ومثله معه ثم قال يدعو اصغر وليد له فيعطيه ذلك الثمر
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা মুবারক করেন, যখন লোকজন প্রথম ফল-ফলাদি লাভ করতেন উহা আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হাদিয়াস্বরূপ নিয়ে আসতেন। তখন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উহা গ্রহণ করতেন এবং বলতেন ইয়া বারী ইলাহী! আমাদের ফল ফসলে বরকত দিন। আমাদের এই শহর (পবিত্র মদীনা শরীফ) উনাতে বরকত দিন, আমাদের আড়িতে বরকত দিন এবং আমাদের সেরিতে বরকত দিন। হে মহান আল্লাহ পাক! নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আপনার রসূল আলাইহিস সালাম, আপনার খলীল (বন্ধু), এবং আপনার নবী এবং আমিও আপনার হাবীব, নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নিশ্চয়ই তিনি (হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম) আপনার নিকট পবিত্র মক্কা শরীফ উনার জন্য দোয়া করেছেন আর আমি আপনার নিকট পবিত্র মদীনা শরীফ উনার জন্য দোয়া করছি যেরূপ দোয়া তিনি আপনার নিকট পবিত্র মক্কা শরীফ উনার জন্য করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অতপর হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এরপর আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপন আহাল তথা আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে কনিষ্ঠ আহাল আলাইহিস সালাম উনাকে ডাকতেন এবং উনাকে ওই ফল দিয়ে দিতেন। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ ২৩৯ পৃষ্ঠা)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت جابر بن سمرة رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان الله سمى المدينة طابة.
অর্থ: হযরত জাবির ইবনে সামুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নাম মুবারক রেখেছেন ত্ববা বা পবিত্র”। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ ২৩৯ পৃষ্ঠা)
আরো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাঝে বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لاتقوم الساعة حتى تنفى المدينة شرارها كما ينفى الكير خبث الحديد.
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন ক্বিয়ামত ক্বায়িম ততদিন পর্যন্ত হবে না, যতদিন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্য থেকে খারাপ লোকদেরকে দূর করে দিবেন; যেভাবে হাঁপর দূর করে দেয় লোহার খাদকে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ ২৩৯ পৃষ্ঠা)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت  ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم على انقاب المدينة ملئكة لايدخلها الطاعون ولا الدجال.
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দ্বারসমূহে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা পাহারায় রয়েছেন। সুতরাং উহাতে প্রবেশ করতে পারবে না মহামারী ও দাজ্জাল।” (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت سعد رضى الله تعالى عنه قال قال وسول الله صلى الله عليه لايكيد اهل المدينة احد الا انماع كما ينماع الملح فى الماء.
অর্থ: হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যে কেউ পবিত্র মদীনাবাসী উনাদের সাথে প্রতারণা করবে সে গলে যাবে, যেভাবে নিমক বালবন পানিতে গলে যায়। (মুত্তাফাকুন আলাইহি, মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم كان اذا قدم من سفر فنظر الى جدرات المدينة اوضع راحلته وان كان على دابة حركها من حبها.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন কোনো সফর মুবারক থেকে আগমন কালে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার প্রাচীর মুবারক দেখতেন, তখন আপন সাওয়ারী উটকে তাড়া করতেন আর যদি তিনি ঘোড়া বা খচ্চরে থাকতেন তাহলে উহাকে নাড়া দিতেন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মুহব্বতের কারণে। (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم طلع له احد فقال هذا جبل يحبنا ونحبه اللهم ان حضرت ابراهيم عليه السلام حرم مكة وانى احرم مابين لابتيها.
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একদা পবিত্র ওহুদ পাহাড় দৃষ্টিগোচর হলো। তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন এই পাহাড় আমাদেরকে মুহব্বত করে আর আমরাও উহাকে মুহব্বত করি। ইয়া মহান আল্লাহ পাক! হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনাকে পবিত্র তথা সম্মানিত করেছেন আর আমি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দুই প্রান্তের মধ্যস্থলকে সম্মানিত করলাম। সুবহানাল্লাহ! (মুত্তাফাকুন আলাইহি, মিশকাত শরীফ)
হাদীস শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت سليمان بن ابى عبد الله رحمة الله عليه قال رأيت حضرت سعد بن ابى وقاص رضى الله تعالى عنه اخذ رجلا يصيد فى حرم المدينة الذى حرم رسول الله صلى الله عليه وسلم فسلبه ثيابه فجاء مواليه فكلموه فيه فقال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم حرم هذا الحرم وقال من اخذ احدا يصيد فيه فليسلبه فلا ارد عليكم طعمة اطعمنيها رسول الله صلى الله عليه وسلم ولكن ان شئتم دفعت اليكم ثمنه
অর্থ: হযরত সুলাইমান ইবনে আবু আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হযরত সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখেছি তিনি এক ব্যক্তির জিনিসপত্র কেড়ে নিলেন কারণ ওই ব্যক্তি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার হেরেম শরীফ উনার মধ্যে শিকার করতেছিলো; যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হারাম করে দিয়েছেন। অতপর ওই ব্যক্তির মনিবগণ এসে হযরত সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করলেন।
জবাবে তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই পবিত্র হেরেম শরীফ উনাকে হারাম করেছেন এবং তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যে এমন ব্যক্তিকে ধরবে যে উহার মধ্যে শিকার করতে ছিলো ওই ব্যক্তি যেনো তার জিনিসপত্র ও অস্ত্র কেড়ে নেয়। সুতারাং আমি আপনাদেরকে এ  শিকারকৃত খাদ্য দিতে পারি না, যা আখিরী নবী  নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তিনি আমাকে খাইতে দিয়েছেন। হ্যাঁ, যদি আপনারা চান তাহলে আমি আপনাদেরকে এর মূল্য বা হাদিয়া দিতে পারি। (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت صالح رحمة الله عليه مولى لسعد رضى الله تعالى عنه ان حضرت سعدا رضى الله تعالى عنه وجد عبيدا من عبيد المدينة يقطعون من شجر المدينة فاخذ متاعهم وقال يعنى لمواليهم سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم ينهى ان يقطع من شجر المدينة شىء وقال من قطع منه شيئا فلمن اخذه سلبه.
অর্থ: হযরত ছালিহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এক আযাদকৃত গোলাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার কতক গোলামকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার কোনো গাছ কাটতে দেখলে তাদের আসবাবপত্র বা জিনিসপত্র নিয়ে নিলেন এবং তাদের মনিবগণকে বললেন, (যখন তারা- উহা ফেরত চাইলো) আমি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার  যে কোনো গাছ কাটতে নিষেধ করতে শুনেছি এবং বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার কোনো গাছ কাটবে তাকে যে ধরতে পারবে ওই ব্যক্তি যেন তার আসবাবপত্র তথা সব কিছু কেড়ে নেয়। (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من استطاع ان يموت بالمدينة فليمت بها فانى اشفع لمن يموت بها-
অর্থ: হযরত ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ইন্তেকাল করতে সক্ষম, সে যেন উনার মধ্যে ইন্তেকাল করে। কেননা, যে ব্যক্তি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ইন্তেকাল করবে আমি তার জন্য (বিশেষভাবে) সুপারিশ করবো।” সুবহানাল্লাহ! (আহমদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

0 Comments: