রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি-৪৯

রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি-৪৯
সুমহান বিশেষ নাত শরীফ প্রকাশের উদ্যোগ ও প্রচারের গুরুত্ব
যেহেতু সঙ্গীত সম্মানিত ইসলাম উনার মাঝে নিষিদ্ধ কিন্তু হামদ শরীফ, নাত শরীফ শোনা সুন্নত এবং জায়িয তাই মানুষের জন্য, সমাজের জন্য, জাতির জন্য, দেশের জন্য রহমত, বরকত, কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসার জন্য পনেরো শতকের সম্মানিত মুজাদ্দিদ হযরত মুজাদ্দিদে আযম আলাইহিস সালাম তিনি নাতু উম্মু রাসূলিনা সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমান উনার ব্যাপক প্রচারের লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করেন। সুবহানা মামদুহ হযরত মুরশিদ কিবলা আলাইহিস সালাম। আমরা সে বিষয়েই সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ্‌।
নাত শরীফ কি?
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত নিয়ে লিখিত কবিতাই মূলত নাত-এ রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নাত শরীফ লিখেছেন হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, হযরত আউলিয়া ক্বিরামগণ এবং অনেক পরহেজগার মুমিন মুমিনাগণ।
বিশেষ নাত শরীফ কি?
বিশেষ নাত শরীফ মূলত নাত শরীফ অর্থাৎ লিখিত হয়েছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মান প্রকাশের উদ্দেশ্যে। তবে তা রচনা করেছেন যিনি খাইরুল উম্মাহাত, ত্বহিরা, ত্বইয়্যিবাহ, মুনাওওয়ারাহ, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি আলাল আ'লামীন হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম যিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মাতা। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মনোননীতা লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ এবং ইলমে গাইব তথা অদৃশ্যে ইলম উনার অধিকারীনি ছিলেন।মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত ইলমে গাইব উনার মাধ্যমে রচনা করেন বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন বিশেষ নাত শরীফ।
কি রয়েছে এই বিশেষ নাত শরীফ উনার মধ্যেঃ
সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি আলাল আ'লামীন হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি ইলমে গাইব তথা ইলহাম-ইলকা উনার মাধ্যমে স্বীয় আওলাদ পাক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান সম্পর্কে উনার সুমহান জীবন মুবারক প্রসঙ্গে বাণীগুলো আগাম কবিতার ভাষায় ব্যক্ত করেছিলেন। যার বাস্তবতা পরবর্তিতে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং উনার সমগ্র যিন্দিগী মুবারকে আমরা লক্ষ্য করি। তিনি উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করার কয়েকদিন পূর্বে (আবৃত্তি) করেছিলেন। যা আল্লামা হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতি শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবুল আ’যীম ওয়াস সুন্নাহ কিতাবে সঙ্কলন করেছেন।” এই নাত শরীফ মূলত ইলমে গায়িব উনার সূস্পষ্ট দলীল।
এই বিশেষ নাত শরীফ যখন পাঠ করা হয় তখন নিসবত হয় খাইরাতুল উম্মাহাত, ত্বহিরা, ত্বইয়্যিবাহ, হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার সঙ্গে এবং খাছ করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে।
এই সুমহান নাত শরীফ লিখিত হয়েছে ১৫০০শ বছর আগে। কিতাবে সঙ্কলনের দিক থেকে আমরা দেখতে পাই হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবুল আ’যীম ওয়াস সুন্নাহ” কিতাবে সঙ্কলনে করেছেন তাও সঙ্কলন হয়েছে ৮৪৯-৯১১ হিজরি সালে। তখন থেকে কিতাবে রয়েছে কিন্তু এই বিশেষ নাত শরীফ পাঠ করে, পাঠের মাধ্যমে রহমত, বরকত হাছিল করার বিষয়টি, নিসবত হাছিলের বিষয়টি যিনি সর্বকালের, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ছাড়া কেউ তা উপলব্ধি করতে পারেনি এবং এই নাত শরীফ পাঠের কোন আয়োজন হয়নি। তিনি সর্বপ্রথম ব্যাপকভাবে এই বিশেষ নাত শরীফ পাঠের এবং শোনার সুযোগ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়। আরবীতে লিখা বিশেষ নাত শরীফ হয়তো সকলের উপলব্ধির গভীরে পৌছেনা তাই তিনি এই নাত শরীফ উনার কাব্যানুবাদ বাংলা এবং ইংরেজী উভয় ভাষায় রচিত হবার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন অর্থাৎ পৃথিবীর যে কোন ভাষা-ভাষী মানুষ তা অনুবাদ করে নিয়ে পাঠ করতে পারে তার দিগন্ত উম্মোচন করেছেন।
যদি বিশেষ নাত শরীফ সর্বত্র প্রচলিত হয় তবে তা হবে মানুষের জন্য হবে আরও কল্যাণকর।কারণ বিশেষ নাত শরীফ পাঠের মাধ্যমে
১। আল্লাহ পাক উনার রহমত বর্ষিত হয়।
২। মহান আল্লাহ পাক উনার স্বরণ হয়।
৩। ইলমে গায়িবের বিষয়ে মানুষের মধ্যে ফিকির তৈরী হয়।
৪। সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি আলাল আ'লামীন হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্মরণ হয়।
৫। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে নিসবত তৈরি হয়।
৬। আমাদের অস্তিত্বের কথা স্বরণ হয়।
৭। (فليفرحوا) ফাল-ইয়াফরাহু অর্থাৎ খুশী প্রকাশ করা হয় আর আমাদের স্মরণ হয় সর্বপ্রথম খুশি প্রকাশ করেছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মাতা ।
আমাদের যে অনন্তকালের সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ পালন , খুশী প্রকাশ করা তা এই পবিত্র বিশেষ নাত শরীফ উনার মাধ্যমেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
এখন এই সূক্ষ্ম বিষয়ের প্রচলনকারী যিনি, তিনি হচ্ছেন যামানার ইমাম ও মুস্তাহিদ মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। আমরা বলেছি এই নাত শরীফ আগেও ছিল কিন্তু প্রচলিত ছিলোনা। একটি বিষয় সত্য, কেউ চাইলেই তা প্রচলন করতে পারবে না। যিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে গভীরভাবে নিসবত যুক্ত উনি ছাড়া এই বিষয়ের ফিকির কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়। সবার দ্বারা সব কাজ হয়নি,হয়না আর হবেও না। কোন কিছু জারী করার জন্য বা জারী রাখার জন্য মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবিব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কাছে কবুলকৃত হতে হয় । কিয়ামত পর্যন্ত বিশেষ নাত শরীফ পাঠের এই প্রচলন জারী থাকবে। ইনশাআল্লাহ!
যদি দাড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত পাঠ করতে হয় দেশের সম্মানের জন্য,তাহলে বিশেষ নাত শরীফ শুনতে হবে, পাঠ করতে হবে কতটা আদবের সঙ্গে তা বলার আর অপেক্ষাই রাখে না। তাই সুন্নতি জামে মাসজিদে প্রতিদিন বাদঃ ইশার নামাজ আদায়ের পর এই বিশেষ নাত শরীফ আরবীতে পাঠ করা হয় এবং পাঠের পূর্বে একটি ঘোষণাও দেয়া হয় যাতে যারা কাছে বা দূরে থেকে শুনবেন উনারা যেন পরিপূর্ণ আদব উনার সাথে তা শুনেন এবং প্রয়োজনে তা সাথে সাথে পাঠ করেন। আর যারা পবিত্র দরবার শরীফে বিশেষভাবে মাসজিদে অবস্থান করেন উনারা দাঁড়িয়ে এই বিশেষ নাত শরীফ শুনে থাকেন। সুনহানাল্লাহ। এই বিশেষ নাত শরীফ উনার সার্বিক প্রচলনে মূলত মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার অত্যন্ত গভীর, হিকমতপূর্ণ, সূক্ষ্ম তাজদীদ মুবারক উনার অন্তর্ভূক্ত।
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার তাজদীদী কাজ উনার মধ্যে শরীক করে নেন। আদবের সঙ্গে আমল করার তওফীক দান করেন এবং যিনি আমাদের ঈমান বাঁচানোর উদ্দেশ্যে তা জারী করছেন উনার গোলামীতে আজীবন থাকার তাওফীক দান করেন। আমিন।

0 Comments: