১৮৮ নং- সুওয়াল : হক পয়গাম সেপ্টেম্বর-১৯৯৪ সংখ্যায় প্রাণীর ছবি সংক্রান্ত বিষয়ে জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ ৩য় জিঃ পৃঃ-২৩৩, ইমদাদুল মুফতীয়ীন পৃঃ ৯৯৩ উনার দলীল দিয়ে যা লেখা হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিষয়গুলো হলো- তারা লিখেছে- (১) জায়েয (প্রাণহীন) জিনিষের ছবি তুলতে গিয়ে যদি প্রাণীর ছবি অনিচ্ছাকৃতভাবে এসে যায়, যেমন- মসজিদের ছবি তুলতে গিয়ে ২/৪জন মুসল্লীর ছবিও এসে গেলো, সেক্ষেত্রে প্রাণীর ছবি তোলার গুণাহ্ হবেনা। (২) তবে যেসব ছবির মাথা কাটা বা মুছা কিংবা মাথা ও চেহারার অঙ্গসমূহ অস্পষ্ট অথবা ছবি মাথার পিছন দিক থেকে নেয়া হয়েছে, সেসব ছবি ব্যবহার করা বা ঘরে রাখা জায়েয আছে। (৩) অস্পষ্ট ছবির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- অনেক ছোট ছবি বা অস্পষ্ট ছবি যা যমীনের উপরে রাখা থাকলে মধ্যম ধরণের চোখের জ্যোতিসম্পন্ন লোক দাড়ানো অবস্থায় তার চেহারার অঙ্গসমূহ (তথা চোখ, নাক, কান ইত্যাদি স্পষ্টতঃ দেখতে পায়না, উহাকেই অস্পষ্ট ছবি বলা হয়) উপরোল্লিখিত কারণসমূহের অজুহাতে তাদের আগষ্ট-১৯৯৪ সীরাত সংখ্যার প্রচ্ছদ ও পোষ্টারে মানুষের ছবি ছাপানো জায়েয ও শরীয়তসম্মত বলা হয়েছে।


সুওয়াল : হক পয়গাম সেপ্টেম্বর-১৯৯৪ সংখ্যায় প্রাণীর ছবি সংক্রান্ত বিষয়ে জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ ৩য় জিঃ পৃঃ-২৩৩, ইমদাদুল মুফতীয়ীন পৃঃ ৯৯৩ উনার দলীল দিয়ে যা লেখা হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিষয়গুলো হলো- তারা লিখেছে-
(১) জায়েয (প্রাণহীন) জিনিষের ছবি তুলতে গিয়ে যদি প্রাণীর ছবি অনিচ্ছাকৃতভাবে এসে যায়, যেমন- মসজিদের ছবি তুলতে গিয়ে ২/৪জন মুসল্লীর ছবিও এসে গেলো, সেক্ষেত্রে প্রাণীর ছবি তোলার গুণাহ্ হবেনা।
(২) তবে যেসব ছবির মাথা কাটা বা মুছা কিংবা মাথা ও চেহারার অঙ্গসমূহ অস্পষ্ট অথবা ছবি মাথার পিছন দিক থেকে নেয়া হয়েছে, সেসব ছবি ব্যবহার করা বা ঘরে রাখা জায়েয আছে।
(৩) অস্পষ্ট ছবির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- অনেক ছোট ছবি বা অস্পষ্ট ছবি যা যমীনের উপরে রাখা থাকলে মধ্যম ধরণের চোখের জ্যোতিসম্পন্ন লোক দাড়ানো অবস্থায় তার চেহারার অঙ্গসমূহ (তথা চোখ, নাক, কান ইত্যাদি স্পষ্টতঃ দেখতে পায়না, উহাকেই অস্পষ্ট ছবি বলা হয়)   
উপরোল্লিখিত কারণসমূহের  অজুহাতে তাদের আগষ্ট-১৯৯৪ সীরাত সংখ্যার প্রচ্ছদ ও পোষ্টারে মানুষের ছবি ছাপানো জায়েয ও শরীয়তসম্মত বলা হয়েছে।
          এখন প্রশ্ন হলো- তাদের উক্ত পত্রিকার প্রচ্ছদ ও পোষ্টারে মানুষের ছবি ছাপানো জায়েয হয়েছে কি? এবং উল্লেখিত কিতাবদ্বয়ে সত্যিই কি উক্ত কারণগুলো বর্ণিত হয়েছে? আর প্রাণীর ছবি সম্পর্কে তাদের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব : প্রথমত: তাদের দেওয়া প্রাণীর ছবি সম্পর্কিত বক্তব্য দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, তাদের সীরাত সংখ্যায় প্রচ্ছদ ও পোষ্টারে মানুষের ছবি দেওয়া হারাম হয়েছে। কারণ, তারা বলেছে- শরীয়তসম্মত কারণ না থাকলে, প্রাণীর ছবি তোলা নাজায়েয ও হারাম, চাই সে ছবি স্পষ্ট হোক বা অস্পষ্ট হোক, সর্বাবস্থায়ই হারাম। আর তারাই স্বীকার করেছে, উক্ত মানুষের ছবিগুলো তারা নিজ হাতে তুলেছে এবং তাদের উক্ত ছবিগুলো অস্পষ্ট। কাজেই তাদের উক্ত ছবি তোলা ও ছাপানো সম্পূর্ণ হারাম হয়েছে। কারণ উক্ত ছবিগুলো  তোলার ব্যাপারে তারা শরীয়তসম্মত কোন ওজর পেশ করতে পারবে না।
দ্বিতীয়তঃ উক্ত কারণগুলোর সবগুলো উক্ত কিতাবদ্বয়ে উল্লেখ নেই, আর যেগুলো উল্লেখ রয়েছে, তার মধ্যে কিছু কিছু বক্তব্যের  মনগড়া ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং ব্যাখ্যাতে কিছু কারচুপিও  করা হয়েছে আর কিছু কিছু বক্তব্য বাদ দেয়া হয়েছে, যেমন- প্রানহীন বস্তুর ছবি তোলার সময় অনিচ্ছাসত্বে প্রাণীর ছবি এসে যাওয়া সম্পর্কে জাওয়াহিরুল ফিক্বাহে উল্লেখ করা হয়-

بیان مذکور سے ثابت ھوتاھے کہ ذی روح کی تصویر بنانا مطلقا ناجائز ہے خواہ قلم سے ھو یا الات فوطو وپر یس و غیرہ سے لکن ان الات جدیدہ کے بارہ مین اس جگہ ایک  نیا سوال پیدا ھوتا ھے. وہ یہ کہ ذی روح کی تصویر بنانا کبھی تو بالقصد و الاختیار ھوتاھے اور کبھی بلاقصد یا تبعا بھی انالات مین ذی روح کی تصویر اجاتی ھے. مثلا کسی مکان یا باغ یا بازار یا محا1 جنگ و غیرہ کا فوطو لیناھے اور  وھان پر کثرت امد و رفت کی بنا پر تمام انسانون اور جاتورون کو علیحدہ کرنا اختیار مین نھین ھوتا تو مکان یا بازار کی تصویر کے ذیل مین تبعا کچھ انسانون اور جانورون کی تصویر بھی اجاتی ھے یا کسی نے احطیاط بھی کی اور سب کر علیحدہ بھی کردیا یا اسے وقت فوطولیا جب کہ کوئی ذی روح سامنے نہ تھا لیکن عین فوطولینے وقت کوئی انسان یا جانور سامنے اگیا توان صورتون مین ذی روح کی تصویر بلاقصد وارادہ تبعا چھپ جاتی ھے تو کیایہ بھی ناجئز ھوگا یا اس مین شرعا کوئی سھولت کی جاوے گی؟
کتب حنفیہ مین باوجد پوری تلاش و تغتیش کے خاص اس بارہ مین کوئی جزیہ نھین ملا.
لیکن قواعد کلیہ سے اسکا جواز معلوم ھوتاھے............ اور سیدی حکیم الامت تھا نوی رح نے قرما یا کہ یہ جواز باین معنی ھے کہ تصویر کشی کا گناہ نہ ھوگا لیکن بعموم حدیث و لاتمثالا الاطمستہ اسکا ابقاء جائز نہ ھوگا. (جواھر الفقہ ج3 صفہ 226)
অর্থঃ- উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, প্রাণীর ছবি তোলা নাজায়েয, চাই কলমের দ্বারা  হোক অথবা ক্যামেরা, প্রেসের মাধ্যমে হোক। কিন্তু বর্তমান নতুন যন্ত্রের (ক্যামেরার) ব্যাপারে একটি নতুন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়, প্রশ্নটা হলো- প্রাণীর ছবি তোলা কখনো ইচ্ছাকৃত হয়, আবার কখনো অনিচ্ছাকৃতভাবে ক্যামেরায় প্রাণীর ছবি এসে যায়। যেমন- কোন স্থানের বা বাগান অথবা বাজার ইত্যাদির ছবি তোলার সময় লোকজনের অতিমাত্রায় আসা-যাওয়ার কারণে এবং তাদেরকে সেখান থেকে পৃথক করা সম্ভব না হওয়াতে উক্ত স্থানের ছবি তোলার সময় প্রাণীর ছবি এসে যাওয়া অথবা কেউ সাবধানতা অবলম্বন করে এবং সবাইকে সেখান থেকে পৃথক করে অথবা এমন সময় ছবি তুলছিল, যখন কোন প্রাণী তার সামনে ছিলনা কিন্তু ছবি তোলার সময় হঠাৎ কোন প্রাণী সামনে এসে যায় এবং তা ক্যামেরায় উঠে যায়। তবে কি এটাও নাজায়েয হবে অথবা এর মধ্যে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন প্রকার নমনীয়তা রয়েছে কি? হানাফী মায্হাবের কিতাবসমূহে সম্পূর্ণরূপে তালাশ করা সত্বেও এ ব্যাপারে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি, তবে কায়দায়ে কুল্লিয়া দ্বারা এটা জায়েয প্রমাণিত হয় .......... এবং আমার শায়খ হাকীমুল উম্মত থানবী সাহেব বলেন, এটা এ অর্থে জায়েয যে, উক্ত অনিচ্ছাকৃত ছবি হঠাৎ উঠে যাওয়ার কারণে তার গুণাহ্ হবেনা কিন্তু ছবি সংক্রান্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দৃষ্টিতে ঐ ছবিও অবশিষ্ট রাখা জায়েয নয়। (জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ্ ৩য় জিঃ পৃঃ-২২৬)
          এখানে থানবী সাহেবের শেষোক্ত কথাটি  তারা গোপন করেছে, কারণ একথা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, তারা উক্ত মানুষের ছবি মিটায়ে না দিয়ে, তা প্রচ্ছদ ও পোষ্টারে ছাপিয়ে বিলকুল হারাম ও নাজায়েয কাজ করেছে। নিজেদের এ দোষকে ধামাচাপা দেওযার জন্যই  ইবারতের উক্ত বক্তব্যটি বাদ দেয়া হয়েছে।
          মূলতঃ উক্ত ইবারতে দুটি অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে-
(১) কোন স্থান বা মসজিদ ইত্যাদির ছবি তোলার সময় যদি উক্ত স্থানে অধিক লোকজনের আসা-যাওয়া থাকে, যেখান থেকে ঐ সকল লোকজনকে সরিয়ে দেয়া কখনো সম্ভব নয়।
          এ প্রসঙ্গে বলতে হয়, যদি এরূপ অবস্থা হয়, তবে উক্ত স্থানের ছবি তোলা কোন মতেই জায়েয হবেনা। কারণ উক্ত স্থান বা মসজিদের ছবি তোলা ফরজ-ওয়াজিব করা হয়নি বরং হারাম কাজ হতে বিরত থাকাই ফরজ-ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত। কেননা প্রাণীর ছবিসহ উক্ত স্থানের ছবি তোলা, ইচ্ছাকৃত ছবি তোলার অন্তর্ভূক্তই হবে। কারণ উক্ত ছবি তোলার জন্য কাউকে বাধ্য করা হয়নি এবং সে উক্ত ছবি তোলার ব্যাপারে ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মাজুরও নয়। কেননা এ হুকুম শুধু তাদের জন্যই প্রযোজ্য, যারা ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মাজুর। তাই উক্ত অবস্থায় প্রাণীর ছবি তোলা অবশ্যই কবীরা গুণাহর অন্তর্ভূক্ত হবে।
আর হক পয়গাম পত্রিকায় দেয়া মানুষের  ছবিগুলো এ পর্যায়েরই অন্তর্ভূক্ত। কারণ হক পয়গাম কর্তৃপক্ষের জন্য উক্ত মসজিদ ও পাহাড়ের ছবিগুলো তোলা ফরজ ওয়াজিব ছিলনা এবং তারা এ ছবিগুলো তোলার ব্যাপারে ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মাজুরও নয়।
(২) যেখানে কোন প্রাণী ছিলনা কিন্তু উক্ত স্থান বা মসজিদের ছবি তোলার সময় হঠাৎ করে কোন প্রাণী সামনে এসে যাওয়া এবং তা ক্যামেরায় উঠে যাওয়া।
          হ্যাঁ, এ অবস্থায় প্রাণীর ছবি উঠে যাওয়ার গুণাহ্ হবেনা, তবে উক্ত প্রাণীর ছবি মিটিয়ে দিতে হবে। কেননা তা অবশিষ্ট রাখা জায়েয নয়, যেটা থানবী সাহেবের শেষোক্ত বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, হক পয়গামের উক্ত মানুষের ছবিগুলো- পাহাড় বা মসজিদের ছবি তোলার সময় হঠাৎ উঠে যায়নি বরং উক্ত মানুষগুলো উক্ত স্থানে অর্থাৎ মসজিদ ও পাহাড়ে পূর্ব হতেই উপস্থিত ছিল এবং তা দেখে শুনেই তোলা হয়েছে। অতএব প্রমাণিত হয় যে, উক্ত ছবিগুলো তারা ইচ্ছাকৃত ভাবেই তুলেছে। কাজেই হক পয়গাম কর্তৃপক্ষ, প্রচ্ছদ ও পোষ্টারে উক্ত মানুষের ছবিগুলো ছাপিয়ে স্পষ্ট নাজায়েয ও হারাম  কাজ করেছে।
তৃতীয়তঃ তারা বলেছে- যে ছবির মাথা কাটা বা মুছা কিংবা মাথা ও চেহারার অঙ্গসমূহ অস্পষ্ট অথবা মাথার পিছন দিক থেকে ছবি নেয়া হয়েছে, তা ব্যবহার করা ও ঘরে রাখা জায়েয।
          এটার হুকুম হলো- যে ছবির মাথা কেটে ফেলা বা মুছে ফেলার কারণে তা গাছের মত বুঝা যায়, মানুষের মত বুঝা যায়না, তা প্রাণীর ছবির অন্তর্ভূক্ত নয়, তা ঘরে রাখা জায়েয। কিন্তু মাথা কাটার পরও যদি তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো বুঝা যায় অর্থাৎ মানুষ হিসাবে বুঝা যায়, তবে সেটাও প্রাণীর ছবির অন্তর্ভূক্ত, তা ঘরে রাখাও নাজায়েয।
          আর পিছন দিক থেকে ছবি তুললে, সে ছবি ঘরে রাখা জায়েয, এরূপ কোন বর্ণনা উক্ত কিতাবদ্বয়ে উল্লেখ নেই। এক্ষেত্রে তারা সাধারণ মুসলমানদেরকে ধোকা দেওয়ার জন্যে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। যেহেতু তাদের প্রচ্ছদ ও পোষ্টারের কোন কোন মানুষের ছবি পিছন দিক থেকে নেওয়া হয়েছে।
          মূলতঃ পিছন দিক থেকে প্রাণীর ছবি উঠালেও তা হারাম হবে এবং সেটা যদি স্পষ্ট হয়, তবে তা ঘরে রাখা, ব্যবহার করাও নাজায়েয ও হারাম।
চতুর্থতঃ বলা হয়েছে- যেটা জমিনে রেখে দাঁড়িয়ে মধ্যম ধরণের চোখের জ্যোতিসম্পন্ন লোক তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চেহারা, নাক, কান ইত্যাদি দেখতে পায়না, তা অস্পষ্ট ছবি।
          মূলতঃ এরূপ অস্পষ্ট ছবি তোলাও হারাম। আর এটা বলা হয়েছে- নামায মাকরূহ্ হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে অর্থাৎ এ ধরণের প্রাণীর ছবি কোন ঘরে থাকলে, সে ঘরে নামায পড়া মাকরূহ্ নয়। তাই বলে ঐ ছবি তোলা বা প্রচ্ছদ পোষ্টারে ছাপানো জায়েয নয় বরং উক্ত অস্পষ্ট ছবি তোলাও হারাম ও নাজায়েয।
          তাছাড়া উক্ত জাওয়াহিরুল ফিক্বাহর ২৩৭ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে-          
جن تصاویر کے استعمال کو جائز لکھا گیا ھے اولی اور افضل یھی ھے کہ ان سے بھی تابمقدور اجتناب کیا جائے.
অর্থঃ- যে সকল ছবি ব্যবহার করা জায়েয বলা হয়েছে, (যেমন- মাথা কাটা, অস্পষ্ট ইত্যাদি) যথাসম্ভব সেগুলো থেকেও বেঁচে থাকা উচিত।
          অতএব, যদি এটাই হয়ে থাকে, তবে মাওলানা নামধারী ঐ সকল ব্যক্তিবর্গ কি করে একটি ইসলামী পত্রিকায় মানুষের ছবি ছাপালো এবং তা নিজ হাতে তুলে আনলো? তাদের কি জানা নেই যে,
حسنة الابرار سيئة المقربين.
অর্থাৎ-সাধারণ লোকের জন্য কোন কাজ জায়েয হলেও, খাছ লোকের জন্য সেটা করা গুণাহ্।
          কারণ মানুষ তাকে অনুসরণ করবে, কেননা এটাই স্বাভাবিক যে, কোন আলেম যদি অস্পষ্ট ছবিও তোলে, তবে সাধারণ লোক স্পষ্ট ছবি তুলতেও দ্বিধাবোধ করবে না। আর তাই শায়খ সাদী  রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন- বাদশা যদি ডিম চুরি করে, তবে প্রজারা মুরগী চুরি করবে।এ জন্যেই আলেম বা  হাদী উনাদের জন্য কোন কোন কাজ জায়েয থাকা সত্ত্বেও সাধারণ লোকের হিদায়েতের জন্য তা পরিত্যাগ করতে হয়। যেমন- এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়, হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি  ইরশাদ মুবরক করেন-
خذوا نصف الدينكم من هذه الحميره.
অর্থঃ- আমার পর তোমরা অর্ধেক দ্বীন শিক্ষা লাভ করবে, হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার থেকে।
          নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর যেহেতু হযরত সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি হাদী হবেন, তাই হযরত সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি বলেন,
হে ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! মহিলাদের                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                           জন্য কয়েকটি জিনিস ব্যবহার করা জায়েয হলেও আপনার জন্য সেগুলো ব্যবহার করা জায়েয নয়। (১) রেশমী কাপড় পরিধান করা। (২) লাল রং উনার কাপড় পরিধান করা। (৩) স্বর্ণের অলংকার ব্যবহার করা। কারণ আপনি আমার পরে হাদী হবেন।তখন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ্  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি না হয় রেশমী ও লাল রং উনার কাপড় পরিধান নাই করলাম, কিন্তু আমি যে মহিলা আমার যে অলংকার ব্যবহার করতে হবে।তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যদি অলংকার ব্যবহার করতেই হয়, তবে রূপার অলংকার ব্যবহার করবেন।হযরত আয়েশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, “আমি কি সে রূপার অলংকারগুলো স্বর্ণের পানিতে রং করে নিব?” নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যদি রং করতেই হয়, তবে জাফরানের পানিতে রং করে নিবেন।
          অতএব উল্লেখিত ঘটনা দ্বারা বুঝা গেল যে, যিনি হাদী, আলেম, মুহাদ্দিস, মুফতী উনাদেরকে হারাম ও নাজায়েয কাজ থেকে তো বেঁচে থাকতে হবেই বরং স্থানবিশেষে মোবাহ কাজও তরক করতে হবে। যেমন- হযরত সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার জন্য রেশমী ও লাল রং উনার কাপড় পরিধান করা এবং স্বর্ণের অলংকার ব্যবহার করা জায়েয থাকা সত্ত্বেও, হাদী হওয়ার কারণে তা পরিধান ও ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। অবশ্য যারা সব সময় হারাম ও নাজায়িয কাজে মশগুল থাকে, আর অপরকে করতে উৎসাহিত করে, তারা হাদী হওয়ার উপযুক্ত নয় এবং তাদের অনুসরণ করাও জায়িয নয়।
          মুলকথা হলো- (১) প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা রাখা মতলক্বান্ হারাম ও নাজায়েয। (২) অস্পষ্ট ছবি ঘরে থাকলে নামায মাকরূহ্ হবে না কিন্তু অস্পষ্ট ছবি তোলাও হারাম। আর তা ব্যবহার করা বা ঘরে না রাখাই তাক্বওয়া বা আফজল। আর যিনি প্রকৃত পক্ষেই হাদী, তিনি শুধু ফতওয়াই অনুসরণ করবেন না বরং তাক্বওয়ার উপরও আমল করবেন। যেমন- ইমাম আযম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাক্বওয়া সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে, ইমামে আযম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বৃষ্টির কারণে কর্দমাক্ত হয়ে যাওয়া রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হেঁটে যাওয়ার সময় ওনার পরিধেয় কাপড়ে কিছু কাঁদা লেগে যায় এবং নামাযের সময় হলে তিনি তা ধুয়ে নামায আদায় করেন। নামায শেষে একজন ব্যক্তি উনাকে জিজ্ঞাসা করলে- হুযূর! আপনিই ফতওয়া দিয়ে থাকেন যে, রাস্তায় চলার সময় যদি বৃষ্টিজনিত কারণে কোথাও কাঁদা লেগে যায়, তবে সে কাঁদাসহ নামায পড়লে নামায আদায় হয়ে যাবে। অথচ আপনি আপনার ফতওয়ার বিপরীতে কাপড় ধুয়ে নামায আদায় করলেন, এটার কারণ কি? তখন ইমাম আযম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উক্ত কর্দমাক্ত কাপড়সহ নামায পড়া জায়েয হওয়া সেটা আমার ফতওয়া, আর কাপড়ের উক্ত কাঁদা ধুয়ে  নামায পড়া, এটা আমার তাক্বওয়া।
(৩) জাওয়াহিরুল ফিক্বাহে বর্ণিত অনিচ্ছাকৃত ছবি তোলার দুটি অবস্থার মধ্যে, প্রথম অবস্থায় শরীয়তসম্মত ওজর ব্যতীত প্রাণীর ছবিসহ কোন স্থান বা মসজিদের ছবি তোলা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয। 
          আর দ্বিতীয় অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রাণীর ছবি উঠে যাওয়ায় গুণাহ্ হবে না (অর্থাৎ জায়েয জিনিসের ছবি তুলতে গিয়ে হঠাৎ কোন প্রাণী সামনে এসে যাওয়ার কারণে তার ছবি উঠে যাওয়া), তবে উক্ত ছবিও অবশিষ্ট রাখা জায়েয নয় বরং তা মিটায়ে দেয়া ওয়াজিব।
          সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, হক পয়গামের প্রচ্ছদ ও পোষ্টারে মানুষের ছবি ছাপানো স্পষ্ট হারাম হয়েছে এবং প্রাণীর ছবি তা স্পষ্ট হোক, আর অস্পষ্ট হোক, সেটা তোলা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয। আর স্পষ্ট হলে, ঘরে রাখা ও ব্যবহার করা নাজায়েয ও হারাম এবং অস্পষ্ট প্রাণীর ছবিও ঘরে রাখা তাক্বওয়ার খেলাফ। 
          অতএব, হক পয়গাম কর্তৃপক্ষ- তাদের উক্ত মানুষের ছবিগুলো জায়েয ও শরীয়তসম্মত হয়েছে বলার কারণে, তাদের উপর হারামকে হালাল বলার হুকুম বর্তাবে।
          ছবি সম্পর্কে দলীল-আদিল্লাসহ বিস্তারিতভাবে জানতে হলে- মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংখ্যা পড়ে দেখুন। সেখানে ৩৫৩টি অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে ফতওয়া দেওয়া হয়েছে যে, “প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, দেখা ইত্যাদি সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয।
আবা-১৭

0 Comments: