১৮৯ নং- সুওয়াল: মাসিক আল জামিয়ার আগষ্ট-৯৪ সংখ্যায় নিম্মোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়- জামিয়ার প্রশ্ন : রাজারবাগের ..... (হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা) তিনি জাওয়াহিরুল ফিকাহ্ উনার ১ম খন্ড-২০২ পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি দিয়ে দলীল পেশ করেছেন যে, পায়ে চুম্বন করা সুন্নত। আশা করি এ ব্যাপারে শরীয়তের দৃষ্টিতে সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন।


সুওয়াল: মাসিক আল জামিয়ার আগষ্ট-৯৪ সংখ্যায় নিম্মোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-
জামিয়ার প্রশ্ন : রাজারবাগের ..... (হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা) তিনি জাওয়াহিরুল ফিকাহ্ উনার ১ম খন্ড-২০২ পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি দিয়ে দলীল পেশ করেছেন যে, পায়ে চুম্বন করা সুন্নত। আশা করি এ ব্যাপারে শরীয়তের দৃষ্টিতে সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন।
জামিয়ার উত্তর : পায়ে চুম্বন বা কদমবুচির ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে উভয় প্রকার মোটামুটি দলীল পাওয়া যায়। তবে ফতওয়াযেহেতু স্থান কাল পাত্র ভেদে পার্থক্য হয়ে থাকে, তাই বর্তমান দ্বীনী অজ্ঞতা ও মুর্খতার যুগে সার্বিক বিবেচনায় কদমবুচি না করা বা করতে না দেওয়াই ইসলামী আইনের চূড়ান্ত ফয়সালা বা ফত্ওয়া।
          উল্লেখ্য যে, কদমবুচি ইত্যাদি জায়েযের জন্য উক্ত পীর সাহেব ক্বিবলা যে কিতাবের হাওলা দিয়েছেন, সেই কিতাবেই উহা নাজায়েয ও মাকরূহ হওয়ার কারণগুলো উল্লেখিত হয়েছে। (জওয়াহিরুল ফিকাহ্ উনার ১৯৯-২০০ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য) যা বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ বাস্তব ও প্রযোজ্য হওয়ার দাবী রাখে।
          এখন আমার সুওয়াল হলো- উপরোক্ত পত্রিকার জাওয়াব ঠিক হয়েছে কিনা এবং আপনাদের মাসিক আল বাইয়িনাত পত্রিকায় কদম বূছী সম্পর্কে শুধু একটি কিতাবের দলীলই কি পেশ করা হয়েছে? আর জাওয়াহিরুল ফিক্বাহে কি সত্যই কদমবূছী নাজায়েয বলা হয়েছে? সঠিক উত্তরদানে আজ্ঞা হয়।
জাওয়াব : তথাকথিত মাসিক আল জামিয়া কর্তৃপক্ষ তাদের উক্ত বক্তব্যে মূলতঃ প্রতারনারই আশ্রয় নিয়েছে। কেননা তাদের উক্ত বক্তব্য দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে, আল বাইয়্যিনাত পত্রিকা কর্তৃপক্ষ কদমবূছী সুন্নত হওয়া প্রসঙ্গে শুধুমাত্র জাওয়াহিরুল ফিক্বাহের দলীলই পেশ করেছেন। অথচ আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১২তম সংখ্যায় কদমবূছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয়ে উক্ত কিতাব ছাড়াও পবিত্র হাদীছ শরীফ ও তার শরাহ্, ফতওয়া ও ফিক্বাহের নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ববিখ্যাত কিতাব হতে ১১৭ খানা দলীল দ্বারা ফতওয়া দেওয়া হয়েছে। যেমন- বুখারী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী শরীফ, নাসাঈ শরীফ, মুস্তাদরেকে হাকিম, বায়হাক্বী শরীফ, তিবরানী শরীফ, ওমদাতুল ক্বারী, ফতহুল বারী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী শরহে তিরমিযী, মিরকাত শরহে মিশকাত, বযলুল মাযহুদ শরহে আবূ দাউদ, আশয়্যাতুল লোময়াত, মাবছূত, বাদায়েউস সুনায়ে, কাজ্বীখান, তাতারখানিয়া, মুহিত্ব ইত্যাদি আরো অনেক কিতাবসমূহ।
এখানে আরো উল্লেখ্য যে, তথাকথিত আল জামিয়া কর্তৃপক্ষ যে সিলসিলার অনুসারী, তাদের সে সিলসিলাভূক্ত কিতাব ইম্দাদুল ফতওয়া, ইমদাদুল আহ্কাম, ফতওয়ায়ে রশীদিয়া, মাওয়ায়েজে আশ্রাফিয়া, আহসানুল ফতওয়া, ফতওয়ায়ে মাহমুদীয়া ইত্যাদিতেও কদমবূছী করা জায়েয ও সুন্নত বলা হয়েছে।
অতএব, এটা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, কদমবূছী সম্পর্কে আল জামিয়ারউক্ত বক্তব্য স্ববিরোধীতারই শামিল। আর তাদের মত যারা নিজেদের সিলসিলার ফতওয়ার বিরুদ্ধে ফতওয়া দেয়, তাদের হিদায়েতের জন্যই আমাদের ফতওয়াগুলোতে সেই সিলসিলাভূক্ত কিতাবের হাওলা দেয়া হয়ে থাকে। নচেৎ তাদের উক্ত কিতাবের হাওলা দেয়া আমাদের মোটেও প্রয়োজন ছিলনা। কারণ আমাদের প্রতিটি ফতওয়ার স্বপক্ষে তাদের কিতাব ছাড়াও অন্যান্য অসংখ্য দলীল পেশ করা হয় এবং আরো দলীল আমাদের নিকট মওজুদ আছে, যা প্রয়োজনে অবশ্যই পেশ করা যাবে (ইনশাআল্লাহ)।  
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকাতে কদমবূছী সুন্নত হওয়া সম্পর্কে শুধুমাত্র একটি মাত্র কিতাবের হাওলা দেয়া হয়নি। বরং এ ক্ষেত্রে তথাকথিত আল জামিয়া কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষদের ধোকা দেয়ার জন্যই এ প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে।
          তথাকথিত আল জামিয়া কর্তৃপক্ষ আরো লিখেছে- জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ” কিতাব উনার ১৯৯-২০০ পৃষ্ঠায় কদমবুছী নাজায়েয ও মাকরূহ্ হওয়ার কারণগুলো বর্ণিত হয়েছে-আর এ সূত্র ধরেই তারা সুন্নত কদমবূছীকে নাজায়েয প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে।
          হক্বপন্থী পাঠকবৃন্দ! উক্ত কিতাবের উক্ত পৃষ্ঠায় কারণগুলো বর্ণিত হয়েছে ঠিক, তাই বলে উক্ত কারণ বা বক্তব্য দ্বারা মূল কদমবূছী কখনো নাজায়েয প্রমাণিত হয়না। বরং কারণগুলো উল্লেখ করার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো- কদমবূছীর সময় যেন কোন নাজায়েয কাজ সংঘঠিত না হয়। আর এ কারণগুলো শুধুমাত্র কদমবূছীর জন্যই বলা হয়নি বরং মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বার ক্ষেত্রেও বলা হয়েছে। তবে কি তাদের নিকট মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করাও নাজায়েয ও মাকরূহ্?
          এবার উক্ত কিতাবে বর্ণিত কারণগুলো বিশ্লেষণ করা যাক-
(১) সিজদার নিয়তে মাথা ঝুকানোঃ-  মহান আল্লাহ পাক ব্যতীত কাউকে সিজদা করা জায়েয নেই বরং সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী।
তবে কদমবূছী করার সময় অনিচ্ছা সত্বেও যদি মাথা কিছুটা নিচু হয়ে যায়, তবে তাতে দোষ হবেনা। এটা জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ্তেও উল্লেখ রয়েছে এবং এ ব্যাপারে আমাদের ফতওয়ায় দলীল ভিত্তিক বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
(২) তাকাব্বুরী পয়দা হওয়াঃ- যাকে কদমবূছী করা হবে, তার মধ্যে যেন তাকাব্বুরী পয়দা না হয়। কদমবূছী মূলতঃ দ্বীনদার, পরহেযগার, বুযুর্গ আলেম বা সম্মানিত ব্যক্তিকেই করার ইজাযত রয়েছে। অতএব, যিনি উক্ত গুণে গুণান্বিত, উনার মধ্যে তাকাব্বুরী পয়দা হবে কি করে? তবে যে দুনিয়াদার আলেম নামধারী, তার মধ্যে তাকাব্বুরী পয়দা হওয়া স্বাভাবিক, তাই তাকে কদমবূছী করা নাজায়েয হবে। কারণ সে সম্মানের উপযুক্ত নয়। আর কার মধ্যে তাকাব্বুরী পয়দা হলো, কার মধ্যে হলো না, সেটা সাধারণ মানুষের পক্ষে বুঝা কখনো সম্ভব নয়, তাই আমভাবে কদমবূছীকে নাজায়েয বলা যাবে না।
(৩) কদমবূছী করার সময় কাউকে কষ্ট দেয়াঃ- এখানে কষ্ট বলতে এটাই বুঝানো হয়েছে যে, কাউকে ঠেলে বা উপর দিয়ে গিয়ে কদমবূছী করা। এরূপ কষ্ট দেওয়া নাজায়েয, তাই বলে কদমবূছী নাজায়েয হতে পারেনা।
(৪) রসম (রেওয়াজ) করে নেয়া, অর্থাৎ আবশ্যকীয় মনে করাঃ- এখানে আবশ্যকীয় বা জরুরী বলতে ফরজ, ওয়াজিব বা সুন্নতে মুয়াক্বাদা মনে করাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কদমবূছী করাকে ফরজ, ওয়াজিব মনে করা যাবেনা। কেননা সুন্নতকে ফরজ-ওয়াজিব মনে করা হারাম। সুতরাং যে ব্যক্তি কদমবূছীকে ফরজের ন্যায় মনে করবে, তার আক্বীদাকে সংশোধন করতে হবে। কেননা আমাদের নিকট গ্রহণযোগ্য উসূল হলো- মুস্তাহাব বা সুন্নতে যায়েদার মধ্যে বিদয়াত বা নাজায়েয কাজ প্রবেশ করলে বিদয়াত ও নাজায়েয কাজকে দূর করে দিতে হবে এবং মুস্তাহাবকে তার স্থানে বহাল রাখতে হবে। অতএব, কদমবূছীকে ফরজ-ওয়াজিব বলা হয়নি বরং সকল কিতাবেই সুন্নত বলা হয়েছে। এবং যার ইচ্ছে, সে সুন্নত পালনের লক্ষ্যে কদমবূছী করে, আর যার ইচ্ছে সে করেনা, তাই বলে তাকে তিরস্কার বা তাকীদ দেয়া হয়না।
          তাছাড়া যিনি হক্বানী আলেম, আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের দরবার শরীফ-এ ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ কাজ সংঘঠিত হওয়া অসম্ভব। কেননা, তিনি উনার মুরীদ, মুতাক্বেদ ও অনুসারীগণকে অবশ্যই উল্লেখিত নাজায়েয ও ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ কাজ হতে বিরত রাখবেন এবং কদমবূছী করার সঠিক পদ্ধতি শিক্ষা দিবেন। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, উক্ত কিতাবে কারণগুলো উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো- নাজায়েয বা ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ কাজগুলো জানিয়ে দেওয়া। এরূপ অনেক কারণ বা ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ কাজের কথা আমাদের ফতওয়াতেও উল্লেখ রয়েছে।
          মূলতঃ জাওয়াহিরুল ফিক্বাহের বক্তব্য কখনোই মূল কদমবূছী বা দাস্তবূছীর বিপক্ষে নয়। বরং উক্ত কিতাবে এটাকে সুন্নত প্রমাণ করা হয়েছে এবং কদমবূছী সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনার পর নিম্মোক্ত সিদ্ধান্ত পেশ করা হয়েছে-
پس مختصر با بھی ھے کہ سنت رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم اور تعامل صحابہ مین اسکی جوحد منقول ھے اسکو اسی حدپر رکھا جائے. تو بلاشبہ دست بوسی قدم بوسی معانقہ جواھر الفقہ ج1 صفہ 202)
অর্থঃ- সুতরাং সংক্ষিপ্ত কথা হলো যে,  পবিত্র হাদীছ শরীফ ও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের আমলের দ্বারা এর (অর্থাৎ কদমবূছীর) যেই সীমা বর্ণনা করা হয়েছে, আমাদের এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। তবে নিঃসন্দেহে দাস্তবূছী (হাত চুম্বন) কদমবূছী (পা চুম্বন), মোয়ানেকা, মোসাফাহা সবই জায়েয বরং সুন্নত ও মুস্তাহাবের অন্তর্ভূক্ত। (জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ্ জিঃ ১ পৃঃ ২০২)
          অতএব, যে কদমবূছী অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম প্রমাণিত, তা বিনা দলীলে শুধুমাত্র দ্বীনী মূর্খতার অজুহাতে নাজায়েয প্রমাণ করার চেষ্টা করা, তাদের জিহালতকে আরো পরিস্ফুটিত করে তোলে। এটাও জেনে রাখা উচিত যে, আল জামিয়া কর্তৃপক্ষ দ্বীনের ব্যাপারে মূর্খ হলেও সাধারণ মুসলমান দ্বীনের ব্যাপারে ততটা মূর্খ নয়। কাজেই এ ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণ নিশ্চিত থাকতে পারে।
          তথাকথিত আল জামিয়া কর্তৃপক্ষ আরো লিখেছে- কদমবূছীর ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে উভয় প্রকার মোটামুটি দলীল পাওয়া যায় ---।
হ্যাঁ, কদমবূছীর বিপক্ষেও দলীল থাকতে পারে, তবে বিপক্ষে দলীল থাকলেই যে তা গ্রহণযোগ্য হবে তা নয়, বরং পক্ষে-বিপক্ষে যখন দলীল পেশ করা হবে, তখন যার দলীলের সংখ্যা বেশী ও অধীক নির্ভরযোগ্য, তারটাই গ্রহণ করতে হবে। সঙ্গত কারণেই বলতে হয়, তথাকথিত আল জামিয়া কর্তৃপক্ষ যদি কদমবূছীকে নাজায়িয প্রমাণ করতে চায়, তবে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে, আমরা সুন্নত প্রমাণে যে দলীলসমূহ পেশ করেছি, তার চেয়েও বেশী সংখ্যক ও অধিক নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল পেশ করা। নতুবা তাদের ফতওয়া মোটেও গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
هاتوابرهانكم انكنتم صادقين.
অর্থঃ- যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে দলীল পেশ কর।
          এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, কদমবূছী, দাস্তবূছী ইত্যাদি জায়েয ও সুন্নত হওয়ার স্বপক্ষে আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকাতে বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব হতে সর্বমোট ১১৭টি দলীল পেশ করা হয়েছে।
          সুতরাং বিস্তারিত জানতে হলে- হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও বর্তমান মিথ্যাচারিতার যুগে সত্যের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকার ৩য় বর্ষ ৫ম ও ৬ষ্ট অর্থাৎ ১২তম সংখ্যার কদমবূছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপড়ে দেখুন।
আবা-১৭

লিংক - কদম বুছি ফতোয়া - https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_641.html

0 Comments: