হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১০৬০-১২৭৯) (ড)


পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
 إِن تَسْتَفْتِحُوا فَقَدْ جَاءَكُمُ الْفَتْحُ ۖ وَإِن تَنتَهُوا فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَإِن تَعُودُوا نَعُدْ وَلَن تُغْنِيَ عَنكُمْ فِئَتُكُمْ شَيْئًا وَلَوْ كَثُرَتْ وَأَنَّ اللَّـهَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ
 অর্থ: “আপনারা যখন বিজয় চেয়েছিলেন নিশ্চয়ই তখন আপনারা বিজয় লাভ করেছেন, আর যদি আপনারা বিরত হন, তবে তা আপনাদের জন্য কল্যাণকর। যদি তোমরা পুনরায় করো তাহলে আমি পুনরায় তোমাদেরকে শাস্তি দিবো এবং তোমাদের দল সংখ্যায় অধিক হলেও তা তোমাদের কোনো কাজে আসবে না। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈমানদার উনাদের সাথে রয়েছেন।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১৯)
 উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলা হয়, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন জিহাদের ময়দানে অবতীর্ণ হয়ে দেখলাম আমার দু’পাশের দু’জন সহযোদ্ধাই কিশোর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমাআমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম পূর্ণ যুবক অথবা বয়স্ক মুসলিম যোদ্ধা আমার পাশে যদি থাকতেন তাহলে কতই না উত্তম হতো! হঠাৎ ডান পাশের যিনি কিশোর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এগিয়ে এসে আমাকে বললেন, হে চাচাজান! আপনি কি আবু জাহিলকে চিনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। কিন্তু আপনি তার কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন? কিশোর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন- সেই আবূ জাহিল নাকি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে এবং উনাকে মন্দ বলে। নাউযূবিল্লাহ! উনারা উভয়ে পৃথকভাবে এসে আমাকে এ কথা বললেন। আমি আশ্চার্য হলাম! এমন সময় কাট্টা কাফির আবূ জাহিল সে আমাদের সম্মুখে এগিয়ে এলো। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কিশোর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদেরকে বললাম, হে ভাতীজাদ্বয়! সামনে দেখুন ওই লোকটি আবূ জাহিল। আমার কথা শোন মাত্র উনারা দু’জনেই আবূ জাহিলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং অল্পক্ষণের মধ্যে তাকে ক্বতল করে ফেললেন। তারপর উনারা ছুটে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আবূ জাহিলের নিহিত হওয়ার বিষয়টি জানালেন। সুবহানাল্লাহ! এই কিশোর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের নাম মুবারক হযরত মুয়াজ ও মুয়াব্বায বিন আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা। পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে আবূ জাহিলের যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধের পোশাক উভয়কে গনিমতের মাল হিসেবে দিয়েছিলেন। জিহাদের শেষ প্রান্তে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তরবারি দ্বারা এই কাফির আবূ জাহিলের মাথা দেহ থেকে আলাদা করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নিয়ে এসেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عن حضرت  رفاعة بن رافع رضى الله تعالى عنه. قال لما رأى إبليس ما فعل الملائكة بالمشركين يوم بدر أشفق أن يخلص إليه، فتشبث به الحارث بن هشام وهو يظن أنه سراقة بن مالك، فوكز في صدر الحارث ثم خرج هاربا حتى ألقى نفسه في البحر ورفع يديه فقال: اللهم إني أسألك نظرتك إياي وخاف أن يخلص القتل إليه. وأقبل أبو جهل فقال: يا معشر الناس لا يهولنكم خذلان سراقة بن مالك فإنه كان على ميعاد من حضرت محمد صلى الله عليه و سلم، ولا يهولنكم قتل شيبة وعتبة والوليد فإنهم قد عجلوا، فوللات والعزى لا نرجع حتى نفرقهم بالجبال، فلا ألفين رجلا منكم قتل رجلا ولكن خذوهم أخذا حتى تعرفوهم سوء صنيعهم من مفارقتهم إياكم ورغبتهم عن اللات والعزى. ثم قال أبو جهل متمثلا: ما تنقم الحرب الشموس مني * بازل عامين حديث سني لمثل هذا ولدتني أمي
  অর্থ: “হযরত রিফায়া ইবনে রফী’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন ইবলীস যখন কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের কঠোর ভূমিকা প্রত্যক্ষ করলো তখন সে আশঙ্কা করলো যে, সেও ধারা পড়ে যাবে। হারিছ ইবনে হিশাম সে ইবলীসকে সূরাকা ইবনে মালিক মনে করে জড়িয়ে ধরে। ইবলীস তখন হারিছের বুকে ঘুষি বা লাথি মেরে দৌড়ে পালিয়ে যায়। সে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দু’হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করে ‘হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকার যে অবকাশ দিয়েছিলেন, সে অবকাশের আমি প্রার্থনা করছি। ইবলিস ভয় পায় এবং তাকে যেন হত্যা না করা হয় এজন্য সে প্রার্থনাও করে। নাউযূবিল্লাহ! তখন এরূপ অবস্থা দেখে কাট্টা কাফির আবূ জাহিল সবাইকে সম্বোধন করে বললো হে কুরাইশ কাফির বাহিনী! সূরাকা ইবনে মালিকের কাপুরুষতা যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে। কেননা সে ছিলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গোয়েন্দা। নাউযূবিল্লাহ! অথচ ইবলিস ছিলো কাফির-মুশরিকদের পরামর্শদাতা। আর শায়বা, উতবা ও ওয়ালীদের  নিহত হওয়া যেন তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা না আনে। কেননা, তারা খুব তাড়াহুড়া করে ফেলেছিলো। লাত ও উযযার ক্বসম! যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা উনাদের বিচ্ছিন্ন করে পাহাড়ে-পর্বতে ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য না করতে পারবো, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ফিরে যাবো না। তোমরা কোনো শত্রুকে ধরেই হত্যা করে ফেলো না, বরং উনাদেরকে শক্তভাবে পাকড়াও করবে। তারপর আমাদের রক্ত স¤পর্ক নষ্ট করা ও লাত-উযযা থেকে বিমুখ হওয়ার অপরাধের স্বীকৃতি আদায় করার পর উনাদেরকে শহীদ করবে। নাউযূবিল্লাহ! এ সময় কাট্টা কাফির আবু জাহিল সে নিম্নোক্ত কবিতা আবৃতি করে
ما تنقم الحرب الشموس مني * بازل عامين حديث سني لمثل هذا ولدتني أمي
অর্থ: “প্রচন্ড গ্রীষ্মে সংঘটিত যুদ্ধও আমার  থেকে বদলা নিতে সক্ষম হয় না। কেননা আমি দু’বছর বয়সের জওয়ান উটের ন্যায় শক্তিশালী। এ জাতীয় দুঃসাহসী কাজের জন্যেই আমার মা আমাকে ভূমিষ্ট করেছে।” নাউযুবিল্লাহ! (জামিউল আহাদীছ, দালায়িলুন নবুওয়াহ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়)
 বিশিষ্ট ঐতিহাসিক হযরত ওয়াক্বীদি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, (তিনি তখনো দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি।) সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন যখন উভয় পক্ষ পরস্পর মুখোমুখি হই এবং জিহাদে অবতীর্ণ হই, তখন হঠাৎ একটা আওয়াজ শুনাতে পাই। তা যেন আকাশ থেকে পৃথিবীতে কিছু একটা পড়েছে। তামার পাত্রে পাথরের টুকরা পড়লে যেরূপ আওয়াজ হয়, ওই আওয়াজটি ছিলো অনেকটা সে রকম। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক মুঠো বালু হাত মুবারকে নিয়ে আমাদের দিকে নিক্ষেপ করলেন। ফলে আমাদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে।” সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরাত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে, “সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক মুঠো কংকর উনার সম্মানিত হাত মুবারক উনার মধ্যে নেন এবং তাঁবু মুবারক থেকে বেরিয়ে শত্রুদের সামনে উপস্থিত হয়ে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
شاهت الوجوه
(অর্থ: ওদের চেহারা বিকৃত হোক) এই বাক্য মুবারক বলে তিনি শত্রুদের দিকে নিক্ষেপ করলেন। অতপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নির্দেশ মুবারক দেন আপনারা শত্রুদের উপর আক্রমণ করুন। কাফির-মুশরিকদের পরাজয় সুনিশ্চিত। অবশেষে কাফির-মুশরিকদের অনেক নেতা জিহাদে নিহত হয় এবং অনেকে বন্দি হয়। ”(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, “সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে কিছু কংকর আনতে বললেন, তিনি তখন কিছু কংকর আনলেন। সেই কংকরগুলো ধুলাবালি লেগে ছিলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেগুলো উনার পূত-পবিত্র হাত মুবারকে নিয়ে শত্রুদের দিকে নিক্ষেপ করেন। দেখা গেলো এমন কোনো কাফির-মুশরিক ছিলো না যে, তাদের দুই চোখে ওই ধুলা বালি লাগেনি। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ উপস্থিত সমস্ত কাফির-মুশরিকদের চোখে সেই কংকর প্রবেশ করেছিলো, তাদের চেহারা বিকৃত হয়েছিলো এবং তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছিলো। সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন,
 فَلَمْ تَقْتُلُوهُمْ وَلَـٰكِنَّ اللَّـهَ قَتَلَهُمْ ۚ وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ وَلَـٰكِنَّ اللَّـهَ رَمَىٰ
 অর্থ: “আপনারা তাদেরকে হত্যা করেননি, মূলত মহান আল্লাহ পাক তিনিই তাদেরকে হত্যা করেছেন এবং আপনি যখন ধুলো-বালি নিক্ষেপ করেছিলেন তখন আপনি তা নিক্ষপ করেননি বরং তা মহান আল্লাহ পাক তিনিই নিক্ষেপ করেছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১৭)
 অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন কাফির-মুশরিকদের উদ্দেশ্য করে ধুলো-বালি নিক্ষেপ করলেন তখন দেখা গেলো সেই ধুলো-বালি সমস্ত কাফির-মুশরিকদের চোখে গিয়ে পৌঁছলো। যখন তাদের চোখে মুখে এসব ধুলো-বালি পড়লো, তখন তাদের চেহারা বিকৃত হলো এবং তারা অপ্রস্তুত হলো, দিক-বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকলো, তারা জ্ঞান শূন্য হয়ে গেলো ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লো। পরিশেষে এই সমস্ত কাফির-মুশরিকরা পরাজিত ও লাঞ্ছিত হলো। সুুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! 


হযরত উক্কাশা ইবনে মিহসান ইবনে হিরছান আল আসাদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঘটনা:
 হযরত উক্কাশা ইবনে মিহসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন সম্মানিত বদরী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে দোয়া মুবারক ও সুসংবাদ মুবারক পেয়েছেন।
 এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه وقاتل حضرت عكاشة ابن محصن بن حرثان الأسدي رضى الله تعالى عنه يوم بدر بسيفه حتى انقطع في يده فأتى رسول الله صلى الله عليه وسلم فأعطاه جذلا من حطب فقال قاتل بهذا يا حضرت عكاشة رضى الله تعالى عنه فلما أخذه من رسول الله صلى الله عليه وسلم هزه فعاد سيفا في يده طويل القامة شديد المتن أبيض الحديدة فقاتل به حتى فتح الله تعالى على المسلمين وكان ذلك السيف يسمى العون ثم لم يزل عنده يشهد به المشاهد مع رسول الله صلى الله عليه وسلم .
 অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত উক্কাশা ইবনে মিহসান ইবনে হিরছান আল আসাদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন জিহাদ করতে করতে উনার হাতের  তরবারি মুবারক ভেঙ্গে যায়। তখন তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে চলে আসলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে একখ- কাঠ বা গাছের শেকড় দিয়ে বললেন, আপনি যান এটি দিয়ে জিহাদ করুন। অতপর তিনি সেটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক থেকে নিয়ে যেই নাড়া দিলেন অমনি তা একটি চকচকে ধারলো লম্বা তরবারিতে পরিণত হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! মুসলমান উনাদের পরিপূর্ণ বিজয় না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেই তরবারি মুবারক দিয়ে জিহাদ মুবারক করতে থাকলেন। এই তরবারি মুবারক দিয়ে হযরত উক্কাশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে বহু জিহাদ মুবারকে অংশগ্রহণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী, দালায়িলুন নবুওয়াহ, আর রহীকুল মাখতূম, আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, সীরাতুন নবী- ইবনে হিশাম)

 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত উক্কাশা ইবনে মিহসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমার উম্মত থেকে সত্তর হাজার লোক ক্বিয়ামতের দিন উজ্জ্বল চাঁদের মতো নূরানীময় চেহারা নিয়ে সম্মানিত বেহেশতে প্রবেশ করবেন। তখন হযরত উক্কাশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি দুয়া মুবারক করুন যেন মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকেও উনাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি উনাদের মধ্যে একজন। অথবা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দোয়া মুবারক করেছেন, ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি হযরত উক্কাশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এ সমস্ত নূরানীময় চেহারা বিশিষ্ট বেহেস্তীগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। এ কথা শুনে জনৈক আনছারী সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার জন্যেও মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দুয়া মুবারক করুন- যেন তিনি আমাকেও উনাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার আগে হযরত উক্কাশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ সম্মান হাছিল করেছেন এবং উনার জন্য প্রথম দোয়া মুবারক করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
আর একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আরবের শ্রেষ্ঠ ঘোড়া সাওয়ারী যোদ্ধা আমাদের কাছে রয়েছেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সেই লোকটি কে? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হযরত উক্কাশা ইবনে মিহসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। সুবহানাল্লাহ! এ সময় হযরত উক্কাশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সগোত্রীয় ছাহাবী হযরত দ্বিয়ার ইবনে আযওয়ার আসাদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই ব্যক্তিতো আমাদের গোত্রের লোক। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তিনি আপনাদের নন: বরং মৈত্রী সূত্রে তিনি আমাদের লোক। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসনাদুল বাযযার, আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারানী, সুনানুদ দারিমী, ফায়দ্বুল বারী, সীরাতুন নবী- ইবনে হিশাম)  

  কাফির উমাইয়া ইবনে খালফের হত্যার ঘটনা:
 প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরাত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে, “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমাইয়া ইবনে খালফ পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে আমার বন্ধু ছিলো। আমি মুসলমান হওয়ার পর যখন আমার আগের নাম আব্দে আমরের পরিবর্তে আব্দুর রহমান রাখা হলো তখন উমাইয়া আমাকে বললো, আপনি আপনার বাপ-মায়ের রাখা নামটি বাদ দিলেন? আমি বললাম, হ্যাঁ, বাদ দিয়েছি। উমাইয়া বললো, আমি রহমানকে চিনি না। কাজেই আপনি আপনার এমন একটা নাম রাখুন, যে নামে আমি আপনাকে ডাকতে পারিআপনার অবস্থা এই যে, আমি যদি আপনাকে আগের নাম আব্দে আমর ধরে ডাকি তবে সে ডাকে আপনি সাড়া দেন না। আর আমার অবস্থা এই যে, আপনাকে আমি এমন নামে ডাকতে প্রস্তুত নই, যে নামের সাথে আমার পরিচয় নেই। হযরত আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, উমাইয়া ইবনে খালফ আমাকে আব্দে আমর বলে ডাকতো  সে যখন আমাকে এই নামে ডাকতো তখন তার ডাকে আমি সাড়া দিতাম না। আমি তাকে বললাম- হে আবূ আলী! তোমার পছন্দমতো একটি নাম নির্ধারণ করে নাও, যা দ্বারা আমাকে ডাকতে পারো। তখন সে বললো, তাহলে আপনার নাম হলো আব্দে ইলাহ। তখন আমি বললাম ঠিক আছে। এরপর আমি যখনই তার পাশ দিয়ে যেতাম তখন  সে আমাকে হে আব্দে ইলাহ! বলে ডাকতো। আমি তার ডাকে সাড়া দিতাম এবং তার সাথে কথা বলতাম। সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন আমি যখন তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন সে তার ছেলে আলী ইবনে উমাইয়ার হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো। এ সময় আমার সঙ্গে কয়েকটি লৌহবর্ম ছিলো যা আমি নিহত শত্রুর থেকে পেয়েছিলাম। এগুলো নিয়ে যাওয়ার সময় সে আমাকে দেখে আব্দে আমর বলে ডাক দেয়। আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম না। এরপর সে আমাকে আবদে ইলাহ বলে ডাক দিলে আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম। তখন সে আমাকে বললো আপনি আমার ব্যাপারে কি চিন্তা করেছেন? আপনার সঙ্গে যে বর্মগুলো আছে তার চাইতে আমি আপনার কাছে উত্তম না? আমি বললাম, হ্যাঁ। হযরত আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এতো খুশির কথা। তখন তিনি বর্ম ফেলে দিয়ে উমাইয়া ও তার ছেলেকে বন্দি করলেন। তখন উমাইয়া বললো, আজকের দিনের মতো আর কোনদিন আমি আপনাকে দেখিনি। আপনার কি দুগ্ধবতী উটের প্রয়োজন নেই? হযরত আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এরপর আমি ওদের দুজনকে নিয়ে চললাম।” 
 অন্য এক বর্ণনায় আরো উল্লেখ রয়েছে, “এ সময় উমাইয়া ইবনে খালফ সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনাকে  দেখে জিজ্ঞেস করলো, ওই ব্যক্তি কে? যিনি উনার বক্ষ মুবারকে উটপাখির পালক লাগিয়ে রেখেছেন? হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ওই ব্যক্তি হলেন সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি। তখন সে বললো তিনিতো সেই ব্যক্তি যিনি আমাদের অনেক ক্ষতি করেছেন। নাউযূবিল্লাহ! হযরত আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন- মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এরপর আমি তাদের উভয়কে বন্দি করে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন হঠাৎ হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাকে আমার সাথে দেখলেন। আর এ ছিলো সেই ব্যক্তি যে হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করার জন্য বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতো। উনাকে মরুভূমিতে নিয়ে যেত এবং তপ্ত বালুর উপর শুইয়ে বুকের উপর পাথর চাপা দিয়ে রেখে বলতো আপনি এ অবস্থায় থাকবেন, নয়, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দ্বীন ত্যাগ করবেন। নাউযূবিল্লাহ! এ সময় সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আহাদ আহাদ বলতেন। সুবহানাল্লাহ! যখন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উমাইয়া ইবনে খালফকে দেখলেন, তখন তিনি বলে উঠলেন- এইতো কুফরীর মূল হোতা উমাইয়া ইবনে খালফ। এ হলো আমাদের চিরশত্রু কাট্টা কাফির। তাকে কতল করুন। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি বললাম- হে হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি আমার বন্দিদ্বয় সম্পর্কে একটু ধৈর্য ধরুন। তখন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরো বললেন- এতো কুফরীর মূল নায়ক। সে কঠিন সাজা পাওয়ার উপযুক্ত। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এরপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তাদের দু’জনকে ঘিরে ফেললেন। আমি উমাইয়াকে বাঁচাবার চেষ্টা করছিলাম। ইতোমধ্যে একজন মুজাহিদ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার তরবারি বের করে উমাইয়ার ছেলের পায়ে আঘাত করলেন এতে সে পড়ে গেলো। তা দেখে উমাইয়া এমন জোরে চিৎকার দিলো যে, আমি এমন চিৎকার আর কখনো শুনিনি। আমি বললাম, উমাইয়া তুমি নিজের চিন্তা করো তোমার আজ নিস্তার নেই। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারবো না। অবশেষে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তাদের উভয়কে তরবারির আঘাতে টুকরো টুকরো করে ফেললেন। পরে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলতেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর রহমত করুন। আমি বর্ম ফেলে দিয়ে যাকে গ্রেফতার করেছিলাম, সেই কাফিরকে হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হত্যা করেছেন। সুবহানাল্লাহ!” (মুসনাদ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আওয়াফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সীরাতুন নবী- ইবনে হিশাম, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক্ব, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
কাট্টা কাফির আবূ জাহিলের নিহিত হওয়ার ঘটনা:
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
 إِن تَسْتَفْتِحُوا فَقَدْ جَاءَكُمُ الْفَتْحُ ۖ وَإِن تَنتَهُوا فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَإِن تَعُودُوا نَعُدْ وَلَن تُغْنِيَ عَنكُمْ فِئَتُكُمْ شَيْئًا وَلَوْ كَثُرَتْ وَأَنَّ اللَّـهَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ
 অর্থ: “আপনারা যখন বিজয় চেয়েছিলেন নিশ্চয়ই তখন আপনারা বিজয় লাভ করেছেন, আর যদি আপনারা বিরত হন, তবে তা আপনাদের জন্য কল্যাণকর। যদি তোমরা পুনরায় করো তাহলে আমি পুনরায় তোমাদেরকে শাস্তি দিবো এবং তোমাদের দল সংখ্যায় অধিক হলেও তা তোমাদের কোনো কাজে আসবে না। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈমানদার উনাদের সাথে রয়েছেন।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১৯)
 উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলা হয়, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সম্মানিত বদর জিহাদ উনার দিন জিহাদের ময়দানে অবতীর্ণ হয়ে দেখলাম আমার দু’পাশের দু’জন সহযোদ্ধাই কিশোর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা। আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম পূর্ণ যুবক অথবা বয়স্ক মুসলিম যোদ্ধা আমার পাশে যদি থাকতেন তাহলে কতই না উত্তম হতো! হঠাৎ ডান পাশের যিনি কিশোর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এগিয়ে এসে আমাকে বললেন, হে চাচাজান! আপনি কি আবু জাহিলকে চিনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। কিন্তু আপনি তার কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন? তিনি বললেন আমি আমার সম্মানিত মাতা উনার কাছে ওয়াদা করেছি যে, আমি শহীদ হলেও আবূ জেহেলকে অবশ্যই হত্যা করবো। কিশোর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরো বললেন- সেই আবূ জাহিল তো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে এবং উনাকে মন্দ বলে থাকে। নাউযূবিল্লাহ! এভাবে দু’পাশের উভয় কিশোর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনারা পৃথকভাবে এসে আমাকে একই কথা বললেন। আমি আশ্চার্য হলাম! এমন সময় কাট্টা কাফির আবূ জাহিল সে আমাদের সম্মুখে এগিয়ে এলো। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি কিশোর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদেরকে বললাম, হে ভাতীজাদ্বয়! সামনে দেখুন ওই লোকটি আবূ জাহিল। আমার কথা শোন মাত্র উনারা দু’জনেই আবূ জাহিলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং অল্পক্ষণের মধ্যে তাকে ক্বতল করে ফেললেন। তারপর উনারা ছুটে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আবূ জাহিলের নিহিত হওয়ার বিষয়টি জানালেন। সুবহানাল্লাহ! এই কিশোর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের নাম মুবারক হযরত মুয়াজ ও মুয়াব্বায বিন আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা। পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে আবূ জাহিলের যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধের পোশাক উভয়কে গনিমতের মাল হিসেবে দিয়েছিলেন। জিহাদের শেষ প্রান্তে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তরবারি দ্বারা এই কাফির আবূ জাহিলের মাথা দেহ থেকে আলাদা করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নিয়ে এসেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
  অন্যত্র বর্ণিত রয়েছে, সাাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছিলো কাট্টা কাফির আবূ জাহিল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নবুওওয়াত মুবারক প্রকাশ উনার পর থেকে এই কাট্টা কাফির আবূ জাহিল ও তার দলবল তারা সর্বক্ষণ উনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য ব্যস্ত থাকতো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পথ চলতেন অথবা তিনি কোথাও অবস্থান মুবারক করতেন তখন তারা বিভিন্ন রকম চূ-চেরা, গালি-গালাজ ইত্যাদি করতো। সবসময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ধৈর্য ধারণ করতেন এবং তাদের হিদায়েতের জন্য দোয়া মুবারক করতেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নেয়ার পর আবূ জাহিল ও তার দলবল তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে লাগলো। একদিকে মদীনা শরীফ উনার ইহুদীদের মাধ্যমে আবার কখনো মুনাফিকদের মাধ্যমে সর্বশেষে সম্মানিত বদর জিহাদের মাধ্যমে। কাট্টা কাফির আবূ জাহিল ও তার দলেরা  ষড়যন্ত্র শুরু করলো। দেখা গেলো বদর জিহাদে আবূ জাহিলসহ সর্বমোট ১১ জন কাফির নেতা নিহত হলো। এবং আবূ জাহিল খুবই নিকৃষ্টভাবে নিহিত হলো।
কাট্টা কাফির আবূ জাহিলের নিহিত হওয়ার সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বর্ণনা করেন। যখন পবিত্র সূরা “আর রহমান শরীফ” নাযিল হলো, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! আপনাদের মধ্যে এমন কে আছেন যে, এই পবিত্র সূরা আর রহমান শরীফ” পবিত্র কা’বা শরীফ উনার মধ্যে গিয়ে তিলাওয়াত করে আসতে পারবেন? বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তিলাওয়াত করতে পারবো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ঠিক আছে আপনি তাহলে তিলওয়াত মুবারক করে আসুন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার মধ্যে গিয়ে পবিত্র সূরা আর রহমান শরীফ তিলওয়াত করতে লাগলেন। সুবহানাল্লাহ! উনার পবিত্র কুরআন শরীফ তিলওয়াত শুনে কোথা থেকে আবু জাহিল এসে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কান মুবারকে জোরে আঘাত করলো। এতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কান মুবারক নষ্ট হয়ে গেল। নাউযুবিল্লাহ!
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাঁদতে কাঁদতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে এসে উপস্থিত হলেন। ঠিক এই সময়ে অন্যদিক থেকে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনিও হাসতে হাসতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে হাযির হলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাঁদছেন আর আপনি হাসছেন, কি কারণ? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বেয়াদবী ক্ষমা চাই পরে এর জবাব দিবো। অতপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি অন্যান্য বিষয় আলোচনা মুবারক করে বিদায় নিয়ে চলে  গেলেন। সুবহানাল্লাহ! যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে হিজরত মুবারক করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। দ্বিতীয় হিজরী ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ সংঘটিত হলো। এই সম্মানিত বদর জিহাদে মক্কার কাফির-মুশরিকরা চরমভাবে পরাজিত হয়। কাফির-মুশরিকদের ৭০ জন নিহিত ও ৭০ জন বন্দি হলো। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার ১৪ জন কাফির নেতার মধ্যে ১১ জন নেতাই নিহিত হলো। এই জিহাদে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও ছিলেন। সম্মানিত বদর জিহাদের শেষ মুহূর্তে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মনে একটা আরজু রয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, কি আরজু? তিনি বললেন, আমি সরাসরি কোনো কাফির-মুশরিককে হত্যা করতে পারিনি। তাই দয়া করে আপনি যদি আমাকে অনুমতি দিতেন তা হলে আমি জিহাদের ময়দান একটু ঘুরে আসতাম।  হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন একথা বললেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত বদর জিহাদ উনার ময়দান ঘুরে দেখতে লাগলেন। এক পর্যায় তিনি জিহাদ উনার ময়দানের এক প্রান্তে কাট্ট কাফির আবূ জাহিলকে দেখতে পেলেন যে, সে মাটিতে পড়ে মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। 
তিনি বলেন, যখন আমি আবূ জাহিলের সামনে গেলাম সে আমাকে চিনতে পারলো। তখন কাট্টা কাফির আবূ জাহিল সে আমাকে দেখে বললে, আপনি কি আমার গর্দান কাটার জন্য এসেছেন? হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, হে আবূ জাহিল! তুমি ঠিকই বলেছো, আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য এসেছি। কাট্টা কাফির আবূ জাহিল ছিল চরম বেয়াদব। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবচেয়ে সবচেয়ে বড় দুশমন, মুসলমান উনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। এই কাট্টা কাফির সে তার মৃত্যু অবস্থায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললো,  আপনি আমার গর্দান কাটার সময় একটু বড় করে কাটবেন। যেন লোকজন বুঝতে পারে যে এটা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবচেয়ে বড় শত্রু আবূ জাহিলের মাথা। নাউযূবিল্লাহ! হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিলম্ব না করে কাট্টা কাফির আবূ জাহিলের মাথাটা কেটে ফেললেনকাট্টা কাফির আবূ জাহিলের মাথাটা ছিলো অনেক বড় । মাথাটা বেশি বড় ও ওজন হওয়ার কারণে উঠায়ে নেয়া কঠিন ছিলো। মানুষ যেমন বাজার থেকে বড় মাছ নিয়ে আসার সময় মাছের কানের ভিতর রশি দিয়ে ঝুলিয়ে নিয়ে যায়, অনুরূপভাবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ঠিক আবূ জাহিলের এক কান দিয়ে রশি ঢুকিয়ে তরবারী দিয়ে খোচা দিয়ে অপর কানের ছিদ্র দিয়ে বের করে মাথাটা ঝুলিয়ে ছেচড়াতে ছেচড়াতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে নিয়ে আসলেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিা ওয়া সাল্লাম! আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু কাট্টা কাফির আবূ জাহিলের গর্দান কেটে নিয়ে এসেছি। ঠিক সেই মুহূর্তে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হাসতে হাসতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আপনি সব কিছুই জানেন- সেই পবিত্র মক্কা শরীফ উনার ঘটনা। তা হলো একদা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি  কাঁদতে কাঁদতে এসেছিলেন, আর আমি ওই মুহূর্তে হাসতে হাসতে আপনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত হয়েছিলাম। আপনি ইরশাদ মুবারক করছিলেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম!  হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাঁদছেন আর আপনি হাসছেন, তার কি কারণ? আমি বলেছিলাম- ইয়া রসুলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি এর জবাব পরে দিবো। আজকে তার জাওয়াব দেয়ার জন্য এসেছি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা আর রহমান শরীফ পবিত্র কা’বা শরীফে তিলওয়াত করার কারণে আবূ জাহিল উনার একটা কান নষ্ট করে দিয়েছিল। মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলা মুবারকে কানের বদলে কান দিয়েছেন; সাথে সাথে অতিরিক্ত মাথাটাও দিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কান মুবারকে আঘাত করে কাট্টা কাফির আবূ জাহিল উনার কান মুবারক নষ্ট করে দিয়েছিলো। মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত বদর জিহাদের দিন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে একটা কানের বদলে দিগুণ কান ও একটা মাথাও দিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! (প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থসমূহ)
 উল্লেখ্য যে, কাট্টা কাফির আবূ জাহিল একজন বড় নামকরা পালওয়ান ছিলো। সে এক হাজার পালওয়ান বা যোদ্ধার সমপরিমাণ শক্তি রাখতো। অথচ দু’জন কিশোর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনারা তাকে ধরাশায়ী করেছিলেন। বাজপাখি যেভাবে চড়ূই পাখিকে শিকার করে সেভাবে উনারা দু’জনেই আবূ জাহিলকে ধরাশায়ী করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! জিহাদ করতে করতে একপর্যায়ে হযরত মুয়াজ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারক কেটে যায় এবং তা  ঝুলতে থাকে, তিনি এ অবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে হাযির হলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মুয়াজ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারক যথাস্থানে লাগিয়ে দিলেন। দেখা গেলো উনার হাত মুবারক পূর্বের থেকে আরো শক্তিশালী হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!  
 স্মরনীয় যে, হযরত মুয়াজ এবং মুয়াব্বায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের যিনি মা ছিলেন, তিনি ছিলেন একজন সম্মানিতা মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাদের অন্তর্ভূক্ত। তিনি বীরমাতা। তিনি বনূ নাজ্জার গোত্রের ছিলেন। তিনি হযরত আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নামে পরিচিত ছিলেন। হযরত আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার সাত জন সন্তান ছিলেন। উনাদের মধ্যে হযরত মুয়াজ এবং মুয়াব্বায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের দু’জনকে বলেছিলেন আপনাদেরকে অবশ্যই সম্মানিত বদর জিহাদে যেতে হবে। তবে শর্ত হলো আপনারা অবশ্যই কাট্টা কাফির আবূ জাহিলকে ক্বতল করবেন। যদি আপনারা তাকে হত্যা করতে না পারেন, তাহলে আপনাদের সাথে  আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সুবহানাল্লাহ! কেননা কাট্টা কাফির আবূ জাহিল সে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে অনেক কষ্ট দিয়েছে, যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। কাজেই আপনারা ওয়াদা দিন যে, আপনারা আবূ জাহিলকে হত্যা করবেন। অন্যত্র উল্লেখ রয়েছে, হযরত আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার অন্যান্য যারা সন্তান ছিলেন উনারাও অত্যন্ত বীর মুজাহিদ ও বদরী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত মুয়াজ ও মুয়াব্বায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনারা উনাদের সম্মানিতা মাতা উনার কাছ থেকে বেমেছাল ঈমানদীপ্ত তা’লীম মুবারক পেয়েছেন বলেই কাট্টা কাফির আবূ জাহিলকে হত্যা করা সহজ ও সম্ভব হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (সীরতে ইবনে হিশাম)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, “হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত মুয়াওয়াজ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের আঘাতের পর আবূ জাহিল পরিপূর্ণভাবে মারা যায়নি। তার শ্বাস-প্রশ্বাস তখনো অবশিষ্ট ছিলো। বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবূ জাহিলকে নিহতদের মধ্যে সন্ধান করার জন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নির্দেশ মুবারক দিলেন তখন এ কথা মুবারকও বলে দিয়েছিলেন যে, আবূ জাহিলকে সনাক্ত করতে যদি আপনাদের অসুবিধা হয় তাহলে আপনারা তার হাঁটুতে একটা পুরাতন যখমের চিহ্ন দেখবেন। ঘটনা হচ্ছে, বাল্যকালে আমি এবং আবূ জাহিল একদিন আব্দুল্লাহ ইবনে জাদয়ানের বৈঠকখানায় কোনো একটি বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করতে থাকি। একপর্যায় সে আমার সম্পর্কে এলোমেলো কথা বলে। কথার একপর্যায় তাকে ধাক্কা দিলে সে উভয় হাঁটুর উপুড় হয়ে পড়ে যায় এবং তার এক হাঁটুর চামড়া ছিঁড়ে যায়। সেই যখমের চিহ্ন তার হাটুতে আজ পর্যন্ত রয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি বদর প্রান্তে আবূ জাহিলকে দেখে চিনলাম। তখনো তার প্রাণ শেষ হয়ে যায়নি। আমি তার ঘারের উপর পা রাখলাম। আমি তাকে সম্বোধন করে বললাম, হে মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন! মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে লাঞ্ছিত করেছেন। কাট্টা কাফিল আবূ জাহিল বলল, আপনারা একজন নেতৃস্থানীয় লোককে হত্যা করছেন  এতে লাঞ্ছনার কি রয়েছে? সে আরো জিজ্ঞেস করলো আজকের জয় কোন দলের? আমি বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের।” সুবহানাল্লাহ!
 অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন আবূ জাহিলকে হত্যা করে তার মাথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে নিয়ে আসলেন তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞেস মুবারক করলেন, এটা কার মাথা? তিনি বললেন কাট্টা কাফির আবূ জাহিলের মাথা। তার কথা-বার্তাও আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছে দিলাম। তিনি তাকবীর ধ্বনি মুবারক দিলেন এবং বললেন, এ ছিলো আমার এবং আমার উম্মতের মাঝে ফিরাউন। যার অপকর্ম ও ফিতনা সাইয়্যিদুনা হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সময়ের ফিরউনের অপকর্ম ও ফিতনা থেকে অনেক বেশি। ফিরাউন সে তার মৃত্যুকালে কালিমা পড়তে চেয়েছিলো কিন্তু এ উম্মতের ফিরাউন সে তার মৃত্যু কালেও কুফরী ও অহংকারের বাক্য উচ্চারণ করেছে। এই কাট্টা কাফির আবূ জাহিল মূলত কুফরী ও অপকর্মে সমস্ত উম্মত অপেক্ষা অগ্রগামী। মৃত্যুকালে তার জ্ঞান চক্ষু খুলেনি। মৃত্যু যন্ত্রণায় তার কুফরী ও অহংকারে কাঁপন ধরেনি, বরং মৃত্যুর সময় তার কুফরী ও অহংকার বৃদ্ধি পেয়েছিলো । নাউযূবিল্লাহ!
 উল্লেখ্য যে, আবূ জাহিলের প্রকৃত নাম ছিলো আবুল হাকাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে আবু জাহিল বলে সম্বোধন করেছিলেন। তখন থেকে সে আবূ জাহিল বা মূর্খের পিতা নামে মাশহুর। যতদিন সে জীবিত ছিলো তার থেকে সর্বপ্রকার মূর্খতা ও কুফরীর জন্ম নিয়েছিলো। নাউযূবিল্লাহ!  (সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) 

0 Comments: