হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১২৮০-১৪০৩) (ক)


(১২৮০-১৪০৩)
সম্মানিত বানূ সুলাইমের জিহাদ:
প্রসিদ্ধ সীরত গ্রন্থ ও তারিখ সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
 فَلَمّا قَدِمَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الْمَدِينَةَ لَمْ يَقُمْ بِهَا إلّا سَبْعَ لَيَالٍ حَتّى غَزَا بِنَفْسِهِ يُرِيدُ بَنِي سُلَيْمٍ-
 অর্থ: (হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত বদর জিহাদ হতে ফিরে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণের সাত রাত্রি অবস্থান মুবারক না করতেই স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বানী সুলাইমের সাথে জিহাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।” (দালায়িলুন নবুওওয়াহ, সীরাতে ইবনে ইসহাক্ব, সীরাতুন নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত সিবায়া ইবনে উরফুতা আল গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বা হযরত ইবনে উম্মু মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার প্রতিনিধি হিসাবে খিদমত মুবারকের সুযোগ দান করেন।
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (বানূ সুলাইমের) কুদর নামক একটি প্রস্রবণে পৌছলেন এবং সেখানে তিনি তিনদিন অবস্থান মুবারক করে পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে আসেন। এই জিহাদে কোন প্রকার শত্রুর মোকাবিলা তথা কোন সংঘর্ষ হয়নি। অতঃপর নূরে  মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র শাওওয়াল শরীফের অবশিষ্ট দিনগুলো ও পবিত্র যিলক্বদ মাস পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! এ সময় তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কুরাইশদের বন্দীদের পক্ষ থেকে ফিদইয়া বা মুক্তিপণ নিয়ে তাদের অনেককে মুক্ত করে দেন। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ)
সম্মানিত সাবীক জিহাদ:
 হযরত আবূ মুহম্মদ আব্দুল মালিক ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আবূ সুফিয়ান ইবনে হারব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র যিলহাজ্জ মাসে সাবীকের যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বাহির হন। হযরত মুহম্মদ ইবনে জা’ফর ইবনে যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও হযরত ইয়াযীদ ইবনে রূমান রহমতুল্লাহি আলাইহি  তিনি এবং আরও কিছু বর্ণনাকারী উনারা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে কা’ব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে  বর্ণনা করেন। আর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে কা’ব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম আলিম। যখন হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে অবস্থান করছিলেন (তিনি তখন সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেননি)। বিপরীতে পবিত্র মক্কার কাফির মুশরিকদের পরাজিত ব্যক্তিবর্গ যখন বদর জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করল, তখন হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মানত করলেন যে, মুসলিম কাফিলার সাথে যুদ্ধ না করা পর্যন্ত তিনি জানাবাতের গোসল কালে মাথায় পানি ব্যবহার করবেন না। এ কথা বলে তিনি উনার ক্বসম পুরা করার লক্ষ্যে মক্কার কুরাইশদের মধ্য থেকে দু’শ সৈন্য দল নিয়ে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হলেন এবং নজদের পথ ধরে একটি নহরের উপরাংশে এক পাহাড়ের কাছে অবতরণ করলেন। পাহাড়টির নাম ছায়িব। আর তা পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে এক রাবীদ (মানযিল) কিংবা তার কাছাকাছি দূরত্বে ছিল। তারপর তারা রাতের বেলায় বানূ নযীরের কাছে পৌছে এবং হুয়াই ইবনে আখতাব নামক এক ব্যক্তির ঘরে এসে দরজায় আঘাত করল। সে ভয় পেয়ে দরজা খুলতে অস্বীকার করলো। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেখান থেকে ফিরে সাললাম ইবনে মিশকামের কাছে পৌছেন। সে সময় বানূ নাযীরের সরদার ও কোষাধ্যক্ষ ছিল সাললাম ইবনে মিশকাম। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তার কাছে এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলে সে অনুমতি দিলো এবং আপ্যায়ন করাল, পানাহার করাল, লোকদের গোপন তথ্য জানিয়ে দিল। এরপর হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি রাতের শেষাংশে বেরিয়ে সাথীদের কাছে পৌছেন এবং কতক ব্যক্তিকে তারা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দিকে পাঠালো। তারা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার কাছে এলো, সে স্থানের নাম উরায়েজ। সেখানে এসে খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দিল এবং সেখানে জনৈক আনসার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এবং উনার এক মিত্রকে পেল, যারা ঐ বাগানেই ছিলেন উনাদের উভয়কে তারা শহীদ করে ফেললো। এরপর তারা সেখান থেকে পালিয়ে গেল।
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উক্ত সংবাদ পেয়ে জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার কাফিলার সন্ধানে বের হলেন। এ সময় পবিত্র মদীনা শরীফের দায়িত্বশীল হিসাবে হযরত বাশীর ইবনে আব্দুল মুনযির উরফে আবূ লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নিযুক্ত করেন।  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে খুজতে খুজতে কারকারাতুল ক্বদর নামক এলাকায় পৌছেন কিন্তু কাফির মুশরিকরা ইতোপূর্বে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার হযরত ছাহাবয়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা দেখতে পেলেন তারা পলায়ন কালে বোঝা হালকা করার উদ্দেশ্যে কিছু আসবাবপত্র ক্ষেত খামারে ফেলে গেছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করছিলেন, তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরয করলেন ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি অনুমতি মুবারক দিলে এই সম্পদগুলো আমরা গ্রহণ করতে পারি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা নেয়ার অনুমতি প্রদান করলেন। সুবহানাল্লাহ!
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাকে হযরত আবূ উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ তথ্য মুবারক শুনিয়েছেন যে, সাবীক জিহাদকে এ নামকরণের কারণ হচ্ছে কাফির মুশরিকরা যে সব সম্পদ রেখে গিয়েছিল তার অধিকাংশই ছিল ছাতু। এ জিহাদে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ছাতুর বস্তা গণিমত হিসাবে লাভ করেছিলেন। এখান থেকেই এ জিহাদের নামকরণ হয় “গাযওয়ায়ে সাবীক” (আর সাবীক অর্থ ছাতু)।
কাট্টা কাফির আবু আফক ইহুদীকে হত্যা:
 আবূ আফাক ছিলো ইহুদী। তার বয়স ছিলো একশত কুড়ি বছর। সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে কটুক্তি মুলক কবিতা রচনা করতো এবং লোকদেরকে উনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতো ও শত্রুতা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করত। নাউযূবিল্লাহ! যখন তার এই পশুর থেকেও নিকৃষ্টতম আচরণের মাত্রা ছড়িয়ে পড়লো। একপর্যায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে এই অবমাননা মুলক আচরণের খবর পেীঁছল তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
مَنْ لِي بِهَذَا الْخَبِيثِ
 অর্থ: “কে আছ যে আমার সন্তুষ্টি মুবারক উনার লক্ষ্যে এই খবীছকে হত্যা করবে?” (রওদ্বুল উনূফে ফি শরহে গরীবিস সীর, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, সীরাতে ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক শুনে হযরত সালিম ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আগে থেকেই মানত করেছি যে, আবূ আফককে হত্যা করবো আর না হয় আমি নিজেই শহীদ হব। নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত সালিম ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এই আর্র্জি মুবারকের কথা শুনে খুবই খুশি মুবারক প্রকাশ করলেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুমতি মুবারক লাভ করার সাথে সাথে তরবারি নিয়ে রওয়ানা দিলেন। সে সময় গরমের রাত ছিল, আবূ আফক ইহুদী ছিল আলস্যের নিদ্রায় বিভোর। হযরত সালিম ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তার বাড়িতে পেীঁছে তাকে পেয়ে গেলেন এবং তরবারি দ্বারা তার কলিজা বরাবর জোরে চাপ দিলেন যে, তরবারি তার পিছন পর্যন্ত পৌঁছে গেল। এই কাফির আবূ আফাক জোরে একটা চিৎকার দিল। আশ-পাশের লোকজন দৌড়ে এলো, কিন্তু ততক্ষণে কাজ শেষ হয়ে গেছে। অর্থাৎ সে নিহত হয়েছে।
  উল্লেখ্য যে, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাট্টা কাফির আবূ আফাক ইহুদীকে উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার লক্ষ্যে হযরত সালিম ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পাঠালেন। হযরত সালিম ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তার বাড়িতে পৌঁছে তাকে হত্যা করলেন তখন তিনি এই কবিতার পংক্তি আবৃত্তি করছিলেন।
  تُكَذّبُ دِينَ اللّهِ وَالْمَرْءَ حَضْرَتْ أَحْمَدَا صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ-
 لَعَمْرُ الّذِي أَمْنَاكَ أَنّ بِئْسَ مَا يُمْنِي حَبَاك حَنِيفٌ آخِرَ اللّيْلِ طَعْنَةً
 অর্থ: “ (হে আবূ আফাক!) তুমি অস্বীকার করেছ মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীয়্যিন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করছ তথা উনার শান মুবারকে কটূক্তি করছ। নাউযূবিল্লাহ!
 ক্বসম!  তোমার জনকের। নিতান্তই মন্দ ভাবে সে তোমাকে জন্ম দিয়েছে। নাউযূবিল্লাহ! একনিষ্ঠ একজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তোমাকে শরবিদ্ধ করছেন, তিনি বললেন, বুড়ো বয়সে এই উপহার তথা তোমার জন্য ইহকাল পরকালে লাঞ্চনা ও কঠিন আযাব গযব”। নাউযূবিল্লাহ!
 স্মরণীয় যে, হযরত সালিম ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সম্মানিত আকাবায় তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারকের লক্ষে তিনি অত্যাধিক কাঁদতেন। কান্না মুবারকের চিহ্ন উনার চেহারায় বিদ্যমান ছিল। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত বানূ কায়নুকার জিহাদ:
বানূ কায়নুকা ছিল হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ভ্রাতৃ সম্পর্কীয় গোত্র। তারা নিজেদেরকে অত্যন্ত শক্তিশালী ও সাহসী মনে করতো।
 পবিত্র শাওওয়াল শরীফের পনের বা ষোল তারিখ ইয়াওমুস সাবতিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা ইহুদীদের বাজারে তাশরিফ মুবারক গ্রহণ করেন এবং তাদেরকে একত্রিত করে ইরশাদ মুবারক করলেন,
 يَا مَعْشَرَ يَهُودَ احْذَرُوا مِنْ اللّهِ مِثْلَ مَا نَزَلَ بِقُرَيْشِ مِنْ النّقْمَةِ وَأَسْلِمُوا ، فَإِنّكُمْ قَدْ عَرَفْتُمْ أَنّي نَبِيّ مُرْسَلٌ تَجِدُونَ ذَلِكَ فِي كِتَابِكُمْ وَعَهْدِ اللّهِ إلَيْكُمْ- قَالُوا  يَا مُحَمّدُ إنّك تَرَى أَنّا قَوْمُك لَا يَغُرّنّكَ أَنّك لَقِيت قَوْمًا لَا عِلْمَ لَهُمْ بِالْحَرْبِ فَأَصْبَحْت مِنْهُمْ فُرْصَةً إنّا وَاَللّهِ لَئِنْ حَارَبْنَاك لَتَعْلَمَنّ أَنّا نَحْنُ النّاسَ-
 অর্থ: “ হে ইহুদী সম্প্রদায়! মহান আল্লাহ পাক উনাকে তোমরা ভয় কর, যেন কুরাইশ কাফির মুশরিকদের মত তোমাদের উপরও কঠিন শাস্তি না আসে। আর তোমরা সব ছেড়ে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করো। নিশ্চয়ই তোমাদের জানা রয়েছে, আমি তোমাদের কাছে প্রেরিত রসূল তথা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর আমার প্রেরণের সুসংবাদ বা প্রমাণ তোমরা তোমাদের কিতাবে পেয়েছ ও পাবে। এ ব্যাপারে স্বয়ং খলিক মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের কাছ থেকে ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি  নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
 তখন তারা বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি ভেবেছেন আমরাও আপনার সম্প্রদায়ের মত। আপনি এটা মনে করবেন না। আপনি (সম্মানিত বদর জিহাদে) এমন সম্পদায়ের সাথে মুকাবিলা করেছেন যাদের যুদ্ধ সম্পর্কে আদৌ জ্ঞান নেই। যার কারণে আপনারা তাদের উপর আক্রমন করেন তাদেরকে পরাজিত করেছেন। আর আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম করছি। যদি আমরা আপনার সাথে যুদ্ধ করি তবে বুঝিয়ে দিবো আমরা কেমন পুরুষ।” নাউযূবিল্লাহ! (সীরাতে ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল কামিলু ফিত্ তারীখ(
 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তিনি বলেন, নিম্নোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ইহুদীদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে,
 قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوا سَتُغْلَبُونَ وَتُحْشَرُونَ إِلَىٰ جَهَنَّمَ ۚ وَبِئْسَ الْمِهَادُ- قَدْ كَانَ لَكُمْ آيَةٌ فِي فِئَتَيْنِ الْتَقَتَا ۖ فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ وَأُخْرَىٰ كَافِرَةٌ يَرَوْنَهُم مِّثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ ۚ وَاللَّـهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهِ مَن يَشَاءُ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّأُولِي الْأَبْصَارِ-
 অর্থ: “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি তাদেরকে বলে দিন, যারা কুফরী করে তোমরা অতীশীঘ্রই পরাভূত হবে এবং তোমাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হবে। আর তা কতই না নিকৃষ্ট আবাস্থল। দু’টি দলের পরস্পর সম্মুখীন হওয়ার মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে সম্মানিত বদরী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এবং কুরাইশ কাফির মুশরিকরা) একদল মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের জন্য জিহাদ করেছিলেন, অপরদিকে কাফির মুশরিক যারা ছিল তারা (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) উনাদেরকে চোখ দিয়ে দ্বিগুণ দেখছিল। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা নিজ সাহায্য তথা গায়েবী মদদ দ্বারা সাহায্য করেন, এর মাঝে অর্ন্তদৃষ্টিসম্পন্ন  তথা জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নছীহত বা শিক্ষা। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১২-১৩)
 অর্থাৎ সম্মানিত বদর জিহাদে মক্কার কাফির মুশরিকরা যখন লাঞ্চিত ও পরাজিত হলো তখন পবিত্র মদীনা শরীফের ইহুদীরা তারা বলতে লাগলো মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই সম্মানিত আখীরি নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, যার সুসংবাদ সাইয়্যিদুনা হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি দিয়েছেন। উনার প্রতি ঈমান এনে উনাকে অনুসরণ করাই উত্তম। আবার ইহুদীদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, এতো তাড়াতাড়ি কেনো? আরো দু’ একটি ঘটনা দেখে নাও। পরবর্তীতে ইহুদীরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতা করে ধ্বংস হয়ে যায়। নাউযূবিল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে
 عَنْ حَضْرَتْ أَبِي عَوْنٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهَ قَالَ كَانَ مِنْ أَمْرِ بَنِي قَيْنُقَاعَ أَنّ امْرَأَةً مِنْ الْعَرَبِ قَدِمَتْ بِجَلَبِ لَهَا ، فَبَاعَتْهُ بِسُوقِ بَنِي قَيْنُقَاعَ وَجَلَسَتْ إلَى صَائِغٍ بِهَا ، فَجَعَلُوا يُرِيدُونَهَا عَلَى كُشْفِ وَجْهِهَا ، فَأَبَتْ فَعَمِدَ الصّائِغُ إلَى طَرَفِ ثَوْبِهَا فَعَقَدَهُ إلَى ظَهْرِهَا ، فَلَمّا قَامَتْ انْكَشَفَتْ سَوْءَتُهَا ، فَضَحِكُوا بِهَا ، فَصَاحَتْ . فَوَثَبَ رَجُلٌ مِنْ الْمُسْلِمِينَ عَلَى الصّائِغ فَقَتَلَهُ وَكَانَ يَهُودِيّا ، وَشَدّتْ الْيَهُودُ عَلَى الْمُسْلِمِ فَقَتَلُوهُ فَاسْتَصْرَخَ أَهْلُ الْمُسْلِمِ الْمُسْلِمِينَ عَلَى الْيَهُودِ ، فَغَضِبَ الْمُسْلِمُونَ فَوَقَعَ الشّرّ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ بَنِي قَيْنُقَاعَ
 অর্থ: “ হযরত আবূ আউন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বানূ কাইনুকার ঘটনা সম্পর্কে বলেন, আরবের জনৈক মহিলা কিছু পণ্য নিয়ে একদা বানূ কাইনুকার বাজারে তা বিক্রি করলো। তারপর সেখান থেকে এক ইহুদী স্বর্ণকারের কাছে যেয়ে বসে পড়লো। ইহুদী সে স্বর্ণকার মহিলাকে তার চেহারা খুলতে বলল। মহিলা তাতে অসম্মত হলেন, স্বর্ণকার মহিলার কাপড়ের এক কোণ তার পিছনের দিকে বেঁধে দিল। ফলে মহিলা উঠার সময় তার কাপড় উঠে গেল। এ অবস্থা দেখে ইহুদীটি  হাসতে লাগলো। সাথে সাথে মহিলাটি চীৎকার করে উঠলো। তখন জনৈক হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ অবস্থা দেখে ইহুদী স্বর্ণকারকে হত্যা করে ফেললেন। যখন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই স্বর্ণকার ইহুদীকে হত্যা করে ফেলনে তখন অন্যান্য ইহুদীরা সেই হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর আক্রমন করে উনাকে শহীদ করে ফেলল। নাউযূবিল্লাহ! উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আত্মীয়- স্বজন উনারা ইহুদীদের বিরুদ্ধে মুকাবিলা করার জন্য অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কাছে সাহায্য চাইলেন। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এর প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিলেন। এখান থেকেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও বানূ কাইনুকার মাঝে জিহাদের সূত্রপাত ঘটে।” (যা হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন।) (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, রওদ্বুল উনূফ, তারিখুল ইসলাম লিইমামি যাহাবী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে ইহুদীরা বিভিন্ন রকম অবমাননাকর কথা ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে, পাশাপাশি যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ইহুদীদের ষড়যন্ত্রের ও যুদ্ধের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে পারলেন তখন উনারাও জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। হযরত আসিম ইবনে আমর ইবনে কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইহুদীদের ষড়যন্ত্র মূলক কার্যকলাপ দেখে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। পরিশেষে ইহুদীরা সাময়িক ভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফায়সালা মুবারক মেনে নিতে রাজি হয়। তখন মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূল সে ইহুদীদের পক্ষ নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কথা বলল। সে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দয়া করে আমার মিত্রদের প্রতি অনুগ্রহ করুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন জবাব দিলেন না। সে আবার বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মিত্রদের প্রতি অনুগ্রহ, দয়া ও ইহসান করুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্য দিকে মুখ মুবারক ফিরিয়ে নিলেন। এবার সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ক্বমীছ বা কোর্তা মুবারক উনার পকেট মুবারকে হাত ঢুকিয়ে দিল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে উবাই বিন সুলূল! তুমি আমার সম্মানিত কোর্তা মুবারক ছেড়ে দাও। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুবই গোসসা মুবারক করলেন। উনার নূরুল মুনাওওয়ার ও নূরুর রহমত মুবারকে গোস্সায় নূর মুবারক চমকাচ্ছিল। তিনি আবারও বললেন, তুমি আমার কোর্তা মুবারক ছেড়ে দাও। কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল বলল, না আমার মিত্রদের প্রতি যতক্ষণ উদার ও সহজ সিন্ধান্ত না দেবেন ততক্ষণ কোর্তা মুবারক ছেড়ে দিব না। নাউযূবিল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, বানী কাইনুকা তারা সংখ্যায় ছিল ৭০০ জন। তারমধ্যে চার শ’ জন নিরস্ত্র আর তিন শ’ জন বর্ম পরিহিত। কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল সে বলল, এই ইহুদীরা সাদা কালো সকল মানুষদের আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করেছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি কি এক ভোরেই তাদের সকলকে ধ্বংস ও নির্মূল করে দিতে চান? মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি কিন্তু তাতে বড় বিপদের আশংকা করছি।
فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ " هُمْ لَك " .
 অর্থ: “অতপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “(হে উবাই বিন সুলূল!) তবে তাদের ব্যাপারে তোমার উপরই ছেড়ে দিলাম।” (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, তারিখুল ইসলাম লিল ইমামিয যাহাবী, তারিখে আবিল ফাদা)
 স্মরণীয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র হিজরত মুবারক করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছিলেন তখন বানী কাইনুকা, বানী কুরাইযা ও বানী নাযীর ইহুদী গোত্রদের সাথে এ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিলো যে, আমরা তোমাদের সাথে জিহাদ করবো না এবং তোমরা কোন শত্রুকে আমাদের বিরুদ্ধে সাহায্য করবে না। অথচ এই বানী কাইনুকা তারা সর্বপ্রথম সন্ধি ভঙ্গ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রূঢ় জবাব দেয় এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সংকল্প গ্রহণ করে। নাউযূবিল্লাহ!
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বানূ কাইনুকার এই জিহাদের সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার খিদমত মুবারকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন হযরত আবূ লুবাবা বাশীর ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে। বানূ কাইনুকা তারা পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে দূরবর্তী স্থানে অবস্থান করতো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে ইহুদীদের কেল্লায় তাশরিফ মুবারক গ্রহণ করে তাদেরকে অবরুদ্ধ করেন। এই বানী কাইনুকার ইহুদীদের অবরুদ্ধের ১৫ দিন পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে পানি পান করার অনুমতি দান করেন। 
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে জানিয়েছেন হযরত উবাদা ইবনে ওয়ালীদ ইবনে উবাদা ইবনে সামিত রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে। তিনি বলেন, বানূ কাইনুকা গোত্র যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিল তখন মুনাফিক উবাই বিন সুলূল তাদের পক্ষে কথা বলার দায়িত্ব নিল এবং সে তাদের পক্ষ অবলম্বন করল। হযরত উবাদা ইবনে সামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসেন। আর ইহুদী গোত্র কাইনুকা এর মৈত্রীচুক্তি ছিলো বানূ আওফ গোত্রের হযরত উবাদা ইবনে সামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে। মুনাফিক উবাই বিন সুলূল সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হয়ে ওই চুক্তি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলো এবং সে তাদের সাথে সম্পর্ক বর্জন করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম উনার পক্ষ অবলম্বন করল। মুনাফিক বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত ছাহাবয়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে রয়েছি। সাথে সাথে আরো বলল, এসব ইহুদী কাফিরদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি ও বন্ধুত্ব আমি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।
এ সম্পর্কে প্রসিদ্ধ তারিখ ও গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে,
  لَمَّا حَارَبَتْ بَنُو قَيْنُقَاعٍ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , تَشَبَّثَ بِأَمْرِهِمْ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُبَيٍّ , وَقَامَ دُونَهُمْ . ومَشَى عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَكَانَ أَحَدَ بَنِي عَوْفِ بْنِ الْخَزْرَجِ مَنْ لَهُ حِلْفُهُمْ مِثْلُ الَّذِي لَهُمْ مِنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أُبَيٍّ , فَخَلَعَهُمْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَتَبْرَأَ إِلَى اللَّهِ وَإِلَى رَسُولِهِ مِنْ حِلْفِهِمْ , وَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَبْرَأُ إِلَى اللَّهِ وَإِلَى رَسُولِهِ مِنْ حِلْفِهِمْ وَأَتَوَلَّى اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالْمُؤْمِنِينَ , وَأَبْرَأُ مِنْ حِلْفِ الْكُفَّارِ وَوَلاَيَتِهِمْ-
 অর্থ: (হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) বানূ কাইনুকা যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সম্মুখীন হলো, তখন উবাই বিন সুলূল ইহুদীদের ব্যাপারে মাথা ঘামাতে লাগলো এবং তাদের পক্ষ হয়ে দাঁড়ালো। বর্ননাকারী বলেন, হযরত উবাদা ইবনে সামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আসলেন। আর তিনি ছিলেন বানূ আওফ ইবনে খাযরাজ গোত্রের একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, অনুরূপ ভাবে মুনাফিক উবাই বিন সুলূলও ছিলো সেই গোত্রের। বানূ কাইনুকার সাথে হযরত উবাদা ইবনে সামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মিত্রতার সেই সম্পর্ক ছিলো। হযরত উবাদা ইবনে সামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গিয়ে তাদের মিত্রতার সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেললেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হয়ে তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে মুহব্বত করি।  আমি এসব কাফির মুশরিকদের বন্ধুত্ব ও মিত্রতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, মুখতাসারু তারিখে দামেশক, রওদ্বুল উনূফ ফি গারীবিস সীর)
 প্রসিদ্ধ তাফসীর, তারিখ ও সীরত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে, মুনাফিক উবাই বিন সুলূলকে লক্ষ্য করে এই পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে,
 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّـهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ- فَتَرَى الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ يُسَارِعُونَ فِيهِمْ يَقُولُونَ نَخْشَىٰ أَن تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ ۚ فَعَسَى اللَّـهُ أَن يَأْتِيَ بِالْفَتْحِ أَوْ أَمْرٍ مِّنْ عِندِهِ فَيُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا أَسَرُّوا فِي أَنفُسِهِمْ نَادِمِينَ- وَيَقُولُ الَّذِينَ آمَنُوا أَهَـٰؤُلَاءِ الَّذِينَ أَقْسَمُوا بِاللَّـهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ ۙ إِنَّهُمْ لَمَعَكُمْ ۚ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَأَصْبَحُوا خَاسِرِينَ- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّـهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّـهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّـهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ- إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّـهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ- وَمَن يَتَوَلَّ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّـهِ هُمُ الْغَالِبُونَ-
 অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে অবশ্যই তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না অর্থাৎ তারা হিদায়েত লাভের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে, আর যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে আপনি তাদেরকে শীঘ্রই তাদের সাথে মিলিত হতে দেখবেন, এই বলে আমাদের আশংকা হয় আমাদের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটবে।  অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার বিজয় অথবা উনার নিকট থেকে এমন কিছু দিবেন যাতে তারা তাদের অন্তরে যা গোপন রেখেছিল তার জন্যে লজ্জিত বা অনুতপ্ত হবে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলবেন, এরাই কি তারা যারা মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক দৃঢ়ভাবে শপথ করেছিল যে, তারা আপনাদের সঙ্গে রয়েছে? তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়েছে। ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হে ঈমানদারগণ! আপনাদের মধ্যে কেউ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম হতে ফিরে গেলে মহান আল্লাহ পাক তিনি এমন এক সম্প্রদায়কে আনবেন যাদেরকে তিনি মুহব্বত করবেন এবং যারা উনাকে মুহব্বত করবেন, উনারা মু’মিন উনাদের প্রতি কোমল দয়াশীল বা হবেন ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবেন। উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার পথে জিহাদ করবেন এবং নিন্দুকের নিন্দায় পরওয়া করবেন না। ইহা মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তিনি উনাকেই দান করেন এবং আল্লাহ পাক তিনি প্রাচুর্যময় ও প্রজ্ঞাময়। আপনাদের মুহব্বততো মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উনার জন্যে এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা  আনহুম উনাদের জন্যে যারা বিনীত ভাবে ছলাত আদায় করেন এবং যাকাত আদায় ও প্রদান করেন। কেউ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং যারা মু’মিন উনাদেরকে ইতেয়াত ও মুহাব্বত করেন। আর নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার দলই বিজয়ী হবেন। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৫১-৫৭)
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইহুদী খ্রিস্টান তথা সমস্ত কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীন ও মুনাফিকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। আর ইহুদী-নাছারা ও সমস্ত কাফির-মুশরিকরা একে অপরের বন্ধু। অর্থাৎ মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করার ব্যপারে তারা একে অপরের একই মত ও পথের অনুসারী। কাজেই মুসলমানদের মধ্য থেকে কেউ তাদের সাথে বন্ধুত্বকে গ্রহণ করলে সে হবে তাদেরই একজন। অর্থাৎ কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল সে ইহুদীদের পক্ষ অবলম্বন করে সেও ইহুদীদের মতো কাফির এবং সে কাট্টা মুনাফিক রূপে পরিনত হয়েছে। এভাবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ও ইমাম, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আখাছছুল খাছ আহলে বাইতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছাহিবে সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মত পথ বাদ দিয়ে ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের সাথে মিল রাখবে বা তাদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করবে সে ব্যক্তি কাট্টা কাফির, মুরতাদ ও মুনাফিক হবে। (তাফসীরে মাযহারী)
 অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিলের পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
  يَا أبَا الْحَبَّابِ مَا نَفَسْتَ الْيَهُوْدَ عَلَى حَضْرَتْ عُبَادَةِ بْنِ الصَّامِتِ رَضِىَ اللهُ تَعَالىَ عَنْهُ فَهُوَ لَكَ دَوْنَهُ- 
  অর্থ: “হে আবুল হাব্বাব! ইহুদীদের বন্ধুত্ব থেকে তোমরা যা অতিরিক্ত গ্রহণ করেছ তা তোমাদের জন্য রইলো। হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এর মধ্যে নেই। কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল বলল, তবে তাই হবে।”
 অর্থাৎ হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ভিতরে কাফির-মুশরিকদের মুহব্বত ও বন্ধুত্ব ছিলো না কারণ তিনি ছিলেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভূক্ত। আর উবাই বিন সুলূল ছিলো মুনাফিকদের অন্তর্ভূক্ত, তাই সে চু- চেরা কিলকাল করতে লাগলো ও ইহুদীদের সাথে বন্ধুত্বে অটল থাকলো। নাউযূবিল্লাহ!
মূূলত কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীন, ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধদের সাথে মুহব্বত রাখা হারাম নাজায়িয ও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কাফির-মুশরিকদের সাথে মুহব্বত ও বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও নিষেধ করেছেন। কাজেই কোন মুসলমানদের জন্য জায়িয নেই কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা, হিন্দু- বৌদ্ধ, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের সাথে মুহব্বত ও বন্ধুত্ব রাখা। আর সমস্ত মুসলমানদের জন্য ফরয সব কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের শত্রু মনে করা।

0 Comments: