হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১২৮০-১৪০৩) (খ)


এজন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ও ইমাম, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আখাছছুল খাছ আহলে বাইতে রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, জামিউল আলকাব ওয়া জামিউন নিছবত, ছহিবু সুলতানিন নাছীর, ইমামুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সমস্ত মুসলমানদের জন্য উনাদের সন্তানদের তিনটি বিষয় শিক্ষা দেয়া ফরয:
 ১. প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী সবাইকে আল্লাহওয়ালা ও আল্লাহওয়ালী হতে হবে।
২. আল্লাহওয়ালা ও আল্লাহওয়ালী হওয়ার জন্য তাকে একজন হক্কানী রব্বানী অলীআল্লাহ, মুজাদ্দিদ বা আখাছছুল খাছ আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনার কাছে যেতে হবে। উনার কাছে গিয়ে উনার হাত মুবারকে বাইয়াত হতে হবে এবং স্বীয় ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ছোহবত মুবারক ইখতিয়ারের মাধ্যমে হাক্বীক্বি কামিয়অবী হাছিল করা।
৩. অতঃপর নিজ সন্তানকে শত্রু চিনাতে হবে। সমস্ত কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, বেদ্বীন-বদদ্বীন তারা মুসলমানদের শত্রু। আর শত্রুর সাথে কোনরকম মুহব্বত রাখা যাবে না।
 এ সম্পর্কে একটি ওয়াকীয়া উল্লেখ করা হয়, কাদ্বী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একদা ইয়ামেনের গভর্নর হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নির্দেশ মুবারক দিলেন আপনি যা কিছু লেনদেন করেছেন তা লিখিত ভাবে উপস্থাপন করুন। হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উজীর ছিলো একজন খ্রিস্টান, সে নিখুঁতভাবে আয় ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এ লোকের স্মৃতিশক্তিতো প্রখর। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমার কোন চিঠি যখন আপনার কাছে যাবে তখন আপনি একে মসজিদের ভিতরেই চিঠি পড়তে দিবেন। হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, সেতো মসজিদে প্রবেশের যোগ্যতে রাখে না। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, কেনো? সে কি অপবিত্র? তিনি বললেন, সে একটা খ্রিস্টান। হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমার এই কথা শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে অনেক শক্ত কথা বললেন এবং আমার উরুদেশে প্রহার করলেন। তিনি বললেন, এই খ্রিস্টানকে বের করে দিন। অতঃপর তিনি উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ পাঠ করলেন । সুবাহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী)
পরবর্তী আয়াত শরীফ উনার মধ্যে, কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল ও তার সঙ্গী সাথীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, যে তাদের অন্তরে রয়েছে নেফাকী।  উবাই বিন সুলূল সে ছিলো কাট্টা মুনাফিক। সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে সামনে ভালো ভালো কথা বলতো কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার ভিতরটা খুবই খারাপ ও বদ ছিলো, তার অন্তরে নিফাকীতে পূর্ণ ছিলো এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধে সে সবসময় ষড়যন্ত্র করতো এবং চুপে চুপে ইহুদীদের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিলো।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বানূ কাইনুকার ইহুদীদেরকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। তবে তাদের সমস্ত ধন-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ মুবারক দান করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তাই করলেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ বানূ কাইনুকাকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বের করে দিলেন। হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আবেদন করলেন, ইহুদীদের অনেকের সঙ্গেই আমার হৃদ্যতা রয়েছে। কিন্তু আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে মুহব্বত করেছি এবং ঐ সকল প্রাক্তন বন্ধুদেরকে অস্বীকার করেছি। আমি তাদেরকে অপছন্দ করি।
 মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের পরিপূর্ণভাবে বিজয় মুবারক উনার ঘোষণা দিয়েছেন। বিপরীতে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুনাফিকদের গোপন চক্রান্তকে প্রকাশ করে দিয়েছেন। তাদেরকে অপদস্থ করেছেন। বানী কুরাইজাকে হত্যা করা হয়েছে এবং বানী নাজিরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এভাবে আরব দেশ থেকে ইহুদীদেরকে মূলোৎপাটন করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
أَخْرِجُوا الْمُشْرِكِينَ مِنْ جَزِيرَةِ الْعَرَبِ
 অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মুশরিক তথা ইহুদী-নাছারা, কাফির, বেদ্বীন-বদদ্বীনদেরকে পবিত্র আরব দেশ থেকে বের করে দাও”। (বুখারী শরীফ, মুসনাদে আহমদ, দালায়িলুন নবুওওয়াহ)
 উল্লেখ্য যে, মুসলমানগণ সব ক্ষেত্রেই বিজয় লাভ করলেন আর মুনাফিকরা পরাজিত হলো। আর মুনাফিকদের আচরন ছিলো মুসলমানদের বিপরীত। তাই বিজয়ের পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বিস্মিত হয়ে বললেন, এরাইতো সেই লোক যারা দৃঢ়ভাবে ক্বসম করে বলতো! আমরা আপনাদের সঙ্গেই আছি। এই সমস্ত লোক আরও বলতো আপনাদেরকে যদি বহিস্কার করা হয় তবে আমরাও আপনাদের সাথে থাকবো। আর আপনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হলে আমরা আপনাদেরকে সাহায্য করবো। এভাবে মুসলমানদেরকে মুনাফিকরা প্রতারনা মূলক অনেক রকম কথা-বার্তা বলতো। মুনাফিকদের অভ্যাস মুখে যা বলতো বাস্তবে তার বিপরীত করতো। নাউযূবিল্লাহ!
                       কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের হত্যার ঘটনা:
 কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ ছিলো বানূ তাই গোত্রের লোক। আর তার গোত্র ছিলো বানূ নাবহান গোত্রের শাখা গোত্র। কিন্তু তার মা ছিলো বানূ নাযীর গোত্রের।
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কা’ব ইবনে আশরাফের ঘটনা এই যে, সম্মানিত বদর জিহাদে অংশ গ্রহণকারী কাফির মুশরিকদের উপর যখন পরাজয় ও বিপর্যয় এসে পড়লো এবং হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নি¤œভূমিতে এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উচ্চভূমির লোকদের কাছে যখন সম্মানিত বদর জিহাদের বিজয়ের সুসংবাদ নিয়ে আগমন করলেন, যা স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বিজয়ের সুসংবাদ এবং কাফির মুশরিকদের মধ্যে যারা নিহত হয়েছিল তাদের সংবাদ নিয়ে পাঠিয়েছিলেন।
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগীস ইবনে আবূ বুরদা যাফারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ বকর ইবনে মুহম্মদ ইবনে আমর ইবনে হাযম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত আসিম ইবনে আমর ইবনে কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও হযরত সালিহ ইবনে আবূ উমামা ইবনে সাহল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। উনারা সকলেই নিজ নিজ বর্ণনার অংশ আমাকে শুনিয়েছেন। উনারা বলেন, কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ ছিলো বানূ তাঈ-এর শাখা বংশ, বানূ নাবহানের লোক। আর তার মা ছিলো বানূ নাযীরের লোক। এই কাট্টা কাফির উক্ত সংবাদ পেয়ে বলল, এ কথা কি সত্য? আপনাদের কি মনে হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকল লোকদেরকে হত্যা করেছেন? যাদের কথা উনারা দু’জন অর্থাৎ হযরত যায়িদ ইবনে  হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেছেন। উনারা উভয়েতো সম্মানিত আরবের অভিজাত পরিবারের লোক এবং সকল লোকদের সরদার। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যদি সত্যিই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে হত্যা করে থাকেন, তবে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ভূ-গর্ভই উত্তম। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দুশমন কা’ব ইবনে আশরাফ যখন এ সংবাদ সম্পর্কে নিশ্চিত হলো, তখন সে ঘর থেকে বেরিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফে গেল এবং আব্দুল মুত্তালিব ইবনে ওয়াদায়া ইবনে যুবাইরা সাহমীর ঘরে উঠলো। তার স্ত্রী আতিক্বা বিনতে আবূ আইস ইবনে উমাইয়া ইবনে আব্দে শামস ইবনে আব্দে মানাফ সে কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের সেবাযতœ ও সম্মান করলো। এরপর সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে লোকদেরকে প্ররোচিত করতে লাগলো এবং বিভিন্ন কবিতা শুনাতে লাগলো। (নাউযুবিল্লাহ)
 আর কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ বদরের যুদ্ধে নিহত কুরাইশ কাফির মুশরিকদের গর্তে পড়ে থাকা লাশসমূহের যেসমস্ত শোক গাঁথা পাঠ করেছিল। তা হলো,
 طَحَنَتْ رَحَى بَدْرٍ لِمَهْلِك أَهْلِهِ ... وَلِمِثْلِ بَدْرٍ تَسْتَهِلّ وَتَدْمَعُ
 বদরের যাঁতা বদরবাসী কাফির মুশরিকদেরকে ধ্বংস করার জন্য পিষে ফেলেছে। বদরের মত ঘটনার জন্যে চক্ষুগুলো অশ্রু ঝরা এবং মাথা পিটানো উচিত।
 قُتِلَتْ سَرَاةُ النّاسِ حَوْلَ حِيَاضِهِمْ ... لَا تَبْعُدُوا إنّ الْمُلُوكَ تُصَرّعُ
 লোকদের নেতারা নিজেদেরই হাউজের আশেপাশে নিহত হলো। তবে এতে অস্বাভাবিক কিছু মনে করো না, কেননা এ অবস্থায় বাদশাহও পরাস্ত হয়ে থাকে।
كَمْ قَدْ أُصِيبَ بِهِ مِنْ أَبْيَضَ مَاجِدٍ ... ذِي بَهْجَةٍ يَأْوِي إلَيْهِ الضّيّعُ
 কত যে সম্ভ্রান্ত, শুভ্র চেহারা বিশিষ্ট ও জাঁকজমকপূর্ণ ব্যক্তিরা বিপদগ্রস্ত হয়েছে, যাদের কাছে নিঃস্ব লোক আশ্রয় নিতো।
طَلْقُ الْيَدَيْنِ إذَا الْكَوَاكِبُ أَخْلَفَتْ ... حَمّالُ أَثْقَالٍ يَسُودُ وَيُرْبَعُ
 অনাবৃষ্টির সময় বা দুর্ভিক্ষে দু’হাতে দানকারী অন্যের বোঝা নিজের মাথায় বহনকারী নেতা, যারা খাজনা আদায় করে থাকে।
وَيَقُولُ أَقْوَامٌ أُسَرّ بِسَخَطِهِمْ ... إنّ ابْنَ الْأَشْرَفِ ظَلّ كَعْبًا يَجْزَعُ
 অনেকে বলে যে, তাদের ক্ষোভে আমি সন্তুুষ্ট নই তা মোটেই ঠিক নয় বরং কা’ব ইবনে আশরাফ ভীত-সম্ভ্রান্ত হয়ে পড়েছে।
صَدَقُوا فَلَيْتَ الْأَرْضُ سَاعَةَ قُتّلُوا ... ظَلّتْ تَسَوّخُ بِأَهْلِهَا وَتُصَدّعُ
 তারা ঠিকই বলেছে, কিন্তু যখন তারা নিহত হয়েছিল, তখন যমীন যদি তাদের লোকদের খসিয়ে দিত এবং টুকরা টুকরা হয়ে যেত, তবে কতই না ভালো হতো।
صَارَ الّذِي أَثَرَ الْحَدِيثَ بِطَعْنِهِ ... أَوْ عَاشَ أَعْمَى مُرْعَشًا لَا يَسْمَعُ
 একথা যে প্রচার করেছে, হায়! যদি সেই বর্শার লক্ষ্য হয়ে যেতো, কিংবা অন্ধ হয়ে বেঁচে থাকতো, বা বধির হয়ে যেতো, কিছুই শুনতে না পেতো, তবে কতই না ভালো হতো।
 نُبّئْت أَنّ بَنِي الْمُغِيرَةِ كُلّهُمْ ... خَشَعُوا الْقَتْلَ أَبِي الْحَكِيمِ وَجُدّعُوا
সংবাদ পেয়েছি যে, আবু জাহিলের নিহত হওয়ার কারণে গোটা মুগীরা বংশের নাক কাটা গিয়েছে, এরা অপদস্থ ও লাঞ্ছিত হয়েছে।
وَابْنَا رَبِيعَةَ عِنْدَهُ وَمُنَبّهٌ ... مَا نَالَ مِثْلَ الْمُهْلِكِينَ وَتُبّعُ
 এবং রবীয়ার উভয় ছেলে তার কাছে চলে গেছে, আর মুনাব্বিহও। এ নিহতরা (ছিলো এমন যে, কেউ) তাদের মত (মর্যাদা ও গুণ) অর্জন করেনি, আর না (ইয়ামানের বাদশা) তুব্বাও। নাউযূবিল্লাহ!
نُبّئْت أَنّ بَنِي الْمُغِيرَةِ كُلّهُمْ ... خَشَعُوا الْقَتْلَ أَبِي الْحَكِيمِ وَجُدّعُوا
 শুনতে পেলাম যে, তাদের মধ্যকার হারিছ ইবনে হিশাম লোকদের মাঝে সংকাজ করছে এবং লোকদের একত্রিত করছে।
لِيَزُورَ يَثْرِبَ بِالْجُمُوعِ وَإِنّمَا ... يَحْمَى عَلَى الْحَسَبِ الْكَرِيمِ الْأَرْوَعُ
 সৈন্যদের নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে মুকাবিলা করার উদ্দেশ্যে, আর (সত্য কথা এই যে,) অভিজাত, মহৎ লোকেরাই পিতৃপুরুষদের মর্যাদা রক্ষা করে থাকে। (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, মাগাযীয়ে ওয়াক্বীদি, রওদ্বুল উনূফ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত হাস্সান বিন সাবিত আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের কবিতার জবাবে বলেন,
 أَبَكَى لِكَعْبِ ثُمّ عُلّ بِعَبْرَةِ ... مِنْهُ وَعَاشٍ مُجَدّعًا لَا يَسْمَعُ
 কা’ব শোকগাঁথা পাঠ করেছে। এরপরও তাকে আবার অশ্রু ঝরাতে হয়েছে এবং সে এমন লাঞ্ছনায় জীবন যাপন করে যে, সে কিছুই শোনে না।
وَلَقَدْ رَأَيْت بِبَطْنِ بَدْرٍ مِنْهُمْ ... قَتْلَى تَسِحّ لَهَا الْعُيُونُ وَتَدْمَعُ
 আমি সম্মানিত বদর জিহাদের নি¤œভূমিতে তাদের এমন সব নিহতদের লাশ দেখেছি, যাদের জন্য চক্ষু ক্রন্দন করছে এবং অশ্রু ধারা ঝরছে।
فَأَبْكِي فَقَدْ أَبَكَيْت عَبْدًا رَاضِعًا ... شِبْهُ الْكُلَيْبِ إلَى الْكُلَيْبَةِ يَتْبَعُ
 তুমিতো ইতর গোলামদের বেশ কাঁদালে, এবার তুমি নিজেই কাঁদো। যেমন ছোট কুকুর ছোট কুকুরীর জন্য চীৎকার করে কেঁদো স্বরে ডাকে।
وَلَقَدْ شَفَى الرّحْمَنُ مِنّا سَيّدًا ... وَأَهَانَ قَوْمًا قَاتَلُوهُ وَصُرّعُوا
 আমার যিনি নবী ও রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্তর মুবারক মহান আল্লাহ পাক তিনি বিনয়ী করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর যারা উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি লাঞ্ছিত করেছেন এবং তারা পরাস্ত হয়েছে।
وَنَجَا وَأَفْلَتَ مِنْهُمْ مِنْ قَلْبِهِ ... شَغَفٌ يَظِلّ لِخَوْفِهِ يَتَصَدّعُ
 তাদের মধ্যে যারা বেঁচে গেছে বা পালিয়ে গেছে তারা অন্তর দগ্ধিভূত হচ্ছে, আর (আমাদের যিনি নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতমুন নাবীইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার) ভয়ে তাদের অন্তর বিদীর্ণ হচ্ছে। সুবাহানাল্লাহ!  (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, মাগাযীয়ে ওয়াক্বীদি, রওদ্বুল উনূফ)
 হযরত মায়মুনা ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কবিতা:
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, জনৈক মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের বিরুদ্ধে কবিতা রচনা করেছেন। আর এই মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ছিলেন, বানূ বালীর শাখা বানূ মুরাইদ গোত্রের। আর উনারা ছিলেন বানূ উমাইয়া ইবনে যায়িদের মিত্র। উনাদের জুআদারা বলা হতো। তিনি বলেন,
تَحَنّنّ هَذَا الْعَبْدَ كُلّ تَحَنّنٍ ... يُبْكَى عَلَى قَتْلَى وَلَيْسَ بِنَاصِبِ
 এই গোলাম নিহতদের উদ্দেশ্যে কৃত্রিম বিলাপ করেছে এবং অন্যদেরকেও কাঁদিয়েছে, অথচ প্রকৃত পক্ষ সে আদৌ চিন্তিত ও দুঃখিত নয়।
بَكَتْ عَيْنُ مَنْ يَبْكِي لِبَدْرِ وَأَهْلِهِ ... وَعُلّتْ بِمِثْلَيْهَا لُؤَيّ بْنُ غَالِبِ
 সম্মানিত বদর ও বদর জিহাদে অংশগ্রহনকারীদের যাদেরকে সে কাঁদিয়েছে, তাদের চক্ষু তো কেঁদেছে, কিন্তু লুয়াই ইবনে গালিবদের অশ্রুর দ্বিগুণ পান করানো হয়েছে।
فَلَيْتَ الّذِينَ ضُرّجُوا بِدِمَائِهِمْ ... يَرَى مَا بِهِمْ مَنْ كَانَ بَيْنَ الْأَخَاشِبِ
 হায়! যারা নিজ রক্তে রঞ্জিত হয়েছে, পবিত্র মক্কা শরীফ উনার দু’পাহাড়ের মধ্যবর্তী লোকেরা যদি তাদের দুরাবস্থা দেখতে পেত।
فَيَعْلَمُ حَقّا عَنْ يَقِينٍ وَيُبْصِرُوا ... مَجَرّهُمْ فَوْقَ اللّحَى وَالْحَوَاجِبِ.
 তবে তারাও নিশ্চিতভাবে জানতে সক্ষম হতো এবং তারা তাদের দাড়ি ও ভ্রুসমূহের উপর উপুড় অবস্থায় দেখতে পেতো।
 হযরত মাইমূনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার কবিতার জবাবে কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ বলে,
 أَلَا فَازْجُرُوا مِنْكُمْ سَفِيهًا لِتَسْلَمُوا ... عَنْ الْقَوْلِ يَأْنَى مِنْهُ غَيْرَ مُقَارِبِ
 শুনুন! আপন নির্বোধদের তিরস্কার করেন, যাতে এমন সব উক্তি থেকে বাঁচতে পারেন, যা অসঙ্গত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
 أَتَشْتُمُنِي إنْ كُنْت أَبْكِي بِعَبْرَةِ ... لِقَوْمِ أَتَانِي رَدّهُمْ غَيْرَ كَاذِبِ
 তিনি কি আমাকে এজন্য তিরস্কার করছেন যে, আমি ঐ সম্প্রদায়ের জন্য অশ্রু প্রবাহিত করছি, যাদের প্রতি আমার ভালোবাসা কৃত্রিম নয়?
 فَإِنّي لَبَاكٍ مَا بَقِيت وَذَاكِرٌ ... مَآثِرَ قَوْمٍ مَجْدُهُمْ بِالْجَبَاجِبِ
 আমি যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন কাঁদবই এবং তাদের গুনাবলী স্মরণ করবো, যাদের শান-শওকত পবিত্র মক্কা শরীফ উনার প্রতিটি স্থানে সুস্পষ্ট। নাউযূবিল্লাহ!
 فَحُقّ مُرَيْدٌ أَنْ تَجَدّ أُنُوفَهُمْ ... بِشَتْمِهِمْ حَيّ لُؤَيّ بْنِ غَالِبِ
 হায়ই ইবনে গালিবের দুই গোত্রকে তিরস্কার করার কারণে বানূ মুরাইদের নাক কান কাটা যাওয়াই সঙ্গত।
وَهَبْت نَصِيبِي مِنْ مُرَيْدٍ لِجَعْدَرٍ ... وَفَاءً وَبَيْتُ اللّهِ بَيْنَ الْأَخَاشِبِ
 মহান আল্লাহ পাক উনার ঐ ঘরের ক্বসম! যা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার পাহাড়ের মাঝে রয়েছেন। বিশ্বস্ততার সুবাদে বানূ মুরীদের প্রতিশোধ নেয়া আমাদের অধিকার, আমি বানূ জা’দারকে দিয়ে তা নিয়েছি। (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, রওদ্বুল উনূফ, আল মুফাছ্ছাল ফি তারিখে আরব ক্ববলাল ইসলাম)
 যখন কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিন্দা করে কবিতা রচনা করতো। সে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে ফিরে এসে পূর্বের ন্যায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বেমেছাল শান-মান সম্পর্কে চূ-চেরা, অবমাননাকর কথা-বার্তা বলতে লাগলো। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! পাশাপাশি অশোভণ ভাষা ও বেয়াদবীপূর্ণ কথা-বার্তাও বলতো। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! এবং হযরত মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের বিরুদ্ধে অশালীন অপবাদ আরোপ করতে লাগলো। নাউযূবিল্লাহ!  সে কবিতার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দিতে থাকে। নাউযূবিল্লাহ!
 তার এই অবমাননা মূলক কথা-বার্তা ও কাজে স্বয়ং আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসন্তুষ্টি মুবারক প্রকাশ করে ইরশাদ মুবারক করলেন,
مَنْ لِي بِابْنِ الأَشْرَفِ ؟
 অর্থ: “কা’ব ইবনে আশরাফকে আমার পক্ষ থেকে কে দমন করতে পারবেন?”
 বানূ আব্দুল আশহাল গোত্রের মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি এর জন্য প্রস্তুত আছি। আমি তাকে হত্যা করব। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, অবশ্যই আপনি তা করুন। হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ফিরে এসে তিনদিন পর্যন্ত এমন হয়ে গেলেন যে, কোন মতে জীবন বাঁচানোর মত সামান্য আহার পানি ছাড়া একেবারেই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিলেন। একথা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ডেকে জিজ্ঞাস করলেন। আপনি খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিলেন কেন? তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সামনে এই কথা বলে ফেলেছি সত্য, কিন্তু আপনার ক্বদম মুবারকে তা পূর্ণ করার তাওফীক কামনা করছি।
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি কোশেশ করুন মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে তাওফীক দান করবেন। ইনশাআল্লাহ! তিনি বললেন, এর জন্য আমাকে কিছু অসমীচীন কথা বলতে হতে পারে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার যা ভালো মনে হয়, তা আপনি বলতে পারেন।
 মোটকথা এই কাট্টা কাফিরকে হত্যা করার জন্য হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি, হযরত সিলকান ইবনে সাল্লাম ইবনে ওয়াকশ ওরফে আবূ নায়িলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, কা’ব ইবনে আশরাফের দু’জন দুধ ভাই। যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্র্ভূক্ত ছিলেন। উনারা হলেন, হযরত আব্বাদ ইবনে বিশর ইবনে ওয়াকশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত হারিছ ইবনে আওস ইবনে মুয়াজ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আরাকজন ছিলেন, হযরত আবূ আব্স ইবনে জাবর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তিনি বানূ হারিছা গোত্রের ছিলেন। উনারা মোট পাঁচ জন হযরত ছাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম একমত হলেন। তারপর মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুশমন কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের কাছে উনারা যাওয়ার পূর্বে হযরত সিলকান ইবনে সালামা ওরফে আবূ নায়িলা রদ্বিয়াল্লাহি তায়ালা আনহু উনাকে আগে পাঠালেন। তিনি কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের সাথে কাছে কিছুক্ষণ গল্প করলেন এবং তাকে কবিতা শুনাতে লাগলেন। হযরত আবূ নায়িলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কবিতা আবৃত্তি করার মাঝে বললেন, আরে বোকা ইবনে আশরাফ! আমি তোমার কাছে বিশেষ প্রয়োজনে এসেছিলাম, তা তোমাকে বলতে চাই। তবে আমার কথা যেন গোপন থাকে। সে বলল, ঠিক আছে তাই করব। তিনি বললেন, এই ব্যক্তির আগমন আমাদের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। গোটা আরব বিশ্ব আমাদের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা একই ধনুকে আমাদের উপর তীর নিক্ষেপ করছে, অর্থাৎ সকলে মিলে আমাদের বিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের পথ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। আমাদের সন্তান-সন্তুতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এক কথায় আমরা ও আমাদের সন্তান-সন্ততিরা বিপদগ্রস্ত।
কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ বলল, আমি আশরাফ তনয় আমি আপনাকে প্রথম থেকেই বলে আসছি হে সালামার পুত্র! আমি যা বলছি তাই ঘটবে। হযরত সিলকান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি চেয়েছিলাম, তুমি আমাদের কাছে কিছু খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করবে। আমরা তোমার কাছে কিছু বন্ধক রাখবো এবং তোমাকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিব। এ ব্যাপারে আমরা তোমার সাথে সদাচারণ করবো। সে বলল, আপনারা আপনাদের সন্তানদেরকে আমার কাছে বন্ধক রাখবেন কি? হযরত সিলকান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জবাবে বললেন, তুমি আমাদের অপমানিত করতে চাচ্ছো। আমার সাথে আমার অন্যান্য বন্ধুরাও রয়েছেন উনাদের মতও আমার মতের অনুরূপ। উনাদেরকে তোমার কাছে নিয়ে আসতে চাই, উনার হাতে তুমি কিছু শস্য বিক্রয় করো এবং কিছু দয়াও করো। আমরা তোমার কাছে এতগুলো হাতিয়ার বন্ধক রাখবো, যার দ্বারা শস্যের মূল্য পূর্ণ হতে পারে। হযরত সিলকান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ কৌশল এজন্য অবলম্বন করেছেন, যাতে তারা যখন অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আসবেন, তখন সে যেন সন্দেহ না করে। এরপর হযরত সিলকান রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু তিনি ফিরে গিয়ে সাথীদের কাছে সব বৃত্তান্ত শুনালেন এবং উনাদেরকে হাতিয়ার বা তরবারি নিয়ে আসতে বললাম। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে হাযির হলেন।
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, অনেকের মতে কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ বলেছিল, আপনারা কি আপনাদের আহলিয়াদেরকে আমার কাছে বন্ধক রাখবেন? হযরত সিলকান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমাদের আহলিয়াদের কিভাবে তোমার নিকট বন্ধক রাখতে পারি, তুমি হলে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সেরা যুবক এবং সব চাইতে বেশী সুগন্ধে ভূষিত। এরপর সে বলল, আপনারা আপনাদের সন্তানদের আমার কাছে বন্ধক রাখবেন কি?
“সীরাতুন্ নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ইবনে হিশাম” গ্রন্থের ২য় জিলদ ৪৬৬-৪৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে হযরত সাওর ইবনে যায়িদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের সাথে ‘বাকীউল গারাদান’ নামক স্থান পর্যন্ত রওয়ানা করিয়ে দেন এবং ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারকে রওয়ানা হউন। আয় বারী ইলাহী! আপনি উনাদেরকে সাহায্য করুন। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফ উনার মধ্যে ফিরে আসেন। সে রাত মুবারক ছিলো জ্যোৎস্নার রাত। উনারা সকলে কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের দুর্গে পৌঁছলেন। হযরত আবূ লাইলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাকে আওয়াজ দিলেন। সে সদ্য বিবাহিত ছিলো। আওয়াজ শুনতেই লেপের ভিতর থেকে বেরিয়ে পড়ল। তার স্ত্রী বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি উনার আওয়াজে অনিষ্টের ঘ্রাণ অনুভব করছি। বর্ণনাকারী বলেন, কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ বলল, নওজোয়ান তো সেই যে বর্শাবাজীর জন্য ডাকা হলেও প্রত্যাখ্যান করে না।
 এরপর  সে ঘর থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ উনাদের সাথে গল্প করলো। উনারাও তার সাথে গল্প করলেন। এরপর তিনি বললেন, হে আশরাফ তনয়! চলো শিবুল আজুয নামক স্থান পর্যন্ত যাই। বাকী রাতটা সেখানেই গল্প করে কাটিয়ে দেই। সে বলল, আপনাদের ইচ্ছা।  উনারা সকলে বেরিয়ে হাঁটতে লাগলেন। কিছুক্ষণ হাঁটার পর হযরত আবূ নায়িলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তার মাথার কানের কাছে হাত ঢুকিয়ে দিলেন, তারপর হাত শুঁকে বললেন, আজকের মত সুগন্ধে মোহিত এমন রাত আমি আর কখনো দেখিনি। তারপর আরও কিছুদূর এগিয়ে পুনরায় তাই করলেন, ফলে সে নিশ্চিন্ত হয়ে গেল। তারপর আরও কিছুদূর এগিয়ে পুনরায় তাই করলেন, ফলে সে নিশ্চিন্ত হয়ে গেল। তারপর আরও কিছুদূর এগিয়ে তার মাথার চুল ধরে বললেন, কতল করুন মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার এই দুশমনকে। সকলে মিলে তার উপর আক্রমণ করলেন। কিন্তু উনাদের তরবারিগুলো একটির উপর আরেকটি পড়ছিল, ফলে কোন কাজ হলো না। হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, যখন আমি লক্ষ্য করলাম। আমাদের তরবারিগুলো কোনই কাজে আসছে না, তখন আমার তরবারিতে রাখা ছুরিটির কথা মনে হলো, আমি তা বের করলাম। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুশমন কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ এমনভাবে চীৎকার করলো যে, আশেপাশের দুর্গগুলোর এমন কোন দুর্গ বাকী রইলো না যাতে অগ্নি প্রজ্বলিত হয়নি। আমি ছুরি তার নাভির নীচে চেপে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করলাম, দেখা গেলো আমার তরবারির তার নাভীর নীচ পর্যন্ত পৌঁছে গেল। তার মাথা কিংবা পায়ে আঘাত লাগলো। এ আঘাত ছিল আমাদের তরবারিরই।
এরপর আমরা রওয়ানা হয়ে বানূ উমাইয়া ইবনে যায়িদ, বানূ কুরাইযা ও বু’য়াছ এর এলাকাগুলো অতিক্রম করে ‘হাররাতুল উরাইজ’ নামক স্থান পর্যন্ত চলে এলাম। আমাদের সঙ্গী হযরত হারিছ ইবনে আওস রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পিছনে রয়ে গেলেন এবং রক্তক্ষরণের কারণে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়লেন। তাই আমরা উনার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। আমরা কিছু রাস্তা চলে এলাম তিনি আমাদের পদচিহ্নগুলো লক্ষ্য করে আমাদের পিছনে ধিরেধিরে পৌঁছে গেলেন। এরপর আমরা উনাকে উঠিয়ে নিলাম এবং রাতের শেষাংশে উনাকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত করলাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন দাঁড়িয়ে পবিত্র ছলাত বা নামায মুবারক আদায় করছিলেন। আমরা উনার খিদমত মুবারকে সালাম আরয করলে তিনি সালামের জাওয়াব দিয়ে সম্মানিত হুযরা শরীফ থেকে বেরিয়ে এলেন। আমরা উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুশমনকে হত্যা করার সংবাদ শুনালাম। নুরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের সাথী হযরত হারিছ ইবনে আওস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার যখমে উনার পবিত্র নূরুল বারাকাত মুবারক লাগিয়ে দিলেন। এরপর তিনি ফিরে গেলেন এবং আমরাও নিজ নিজ ঘরে ফিরে এলাম। সকালবেলা লক্ষ্য করলাম, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুশমনের উপর রাতে আমাদের এ আক্রমণের কারণে গোটা ইহুদী সম্প্রদায় আতংকিত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক ইহুদী নিজ জীবনের আশংকা করতে লাগলো। 
 অন্য এক বর্ণনায় এসেছে। হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে মুরসাল সনদে বর্ণিত রয়েছে। হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ উনার সাথিরা বলেছিলেন, আপনি জানেন, আমরা কতটা অস্ত্রের মুখাপেক্ষী এবং তা আমাদের কাছে কতটা প্রয়োজনীয়। কিন্তু এমতাবস্থায় আমরা আমাদের অস্ত্র আপনার কাছে বন্ধক রাখতে পারি। কিন্তু নিজেদের আহলিয়া ও কন্যা বন্ধক রাখা সম্পূর্ণ অসম্ভব। কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ তা মেনে নিল এবং সিন্ধান্ত হলো যে, রাত্রি বেলা এসে শস্য নিয়ে যাবেন ও অস্ত্র বন্ধক রেখে যাবেন।
ওয়াদা মাফিক উনারা রত্রিবেলা এসে উপস্থিত হলেন এবং কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফকে ডাকলেন। কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ সে তার ঘর থেকে বের হতে চাইল। তার স্ত্রী বলল, এ সময় কই যাচ্ছ? কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ বলল, হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং আমার দু’ভাই ও হযরত আবূ নায়িলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা এসেছেন, অপর কেউ নন, তুমি চিন্তা করো না। স্ত্রী বলল, এ আওয়াজ থেকে আমি রক্তের আভাস পাচ্ছি। কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ বলল, সম্ভ্রান্ত বংশের কাউকে যদি রাত্রিকালে বর্শাঘাত করার জন্যও ডাকা হয়, তবুও তার যাওয়া দরকার। হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গীদের বুঝালেন যে, কা’ব ইবনে আশরাফ এলে আমি তার চুলের ঘ্রাণ নিব। যখন দেখবেন যে, আমি মজবুতভাবে তার চুল ধরেছি, তখন দ্রুত তার মাথাটা কেটে ফেলবেন। কাজেই যখন কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ এলো তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত সুগন্ধি ছড়াচ্ছিল। হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আজকের মত এমন সুগন্ধি ঘ্রানতো আমি কখনো পাইনি। কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ বলল, আমার কাছে আরবের সর্বাপেক্ষা সুদর্শন, সুন্দরী এবং সবচেয়ে সুগন্ধিযুক্ত স্ত্রীলোক রয়েছে। হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন আমাকে কি আপনি আপনার সুগন্ধযুক্ত চুলের ঘ্রাণ নেয়ার অনুমতি দিবেন? কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ বলল, হ্যাঁ অনুমতি দিলাম। হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অগ্রসর হয়ে নিজেও তার চুল শুঁকলেন এবং সঙ্গীদেরও শোঁকালেন। কিছুক্ষণ পর মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন তুমি কি দ্বিতীয়বার আমাকে চুল শোঁকার অনুমতি দিবে? কাট্টা কাফির কা’ব বলল, আপনার ইচ্ছামত। হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উঠলেন এবং তার চুল শুঁকতে মনোযোগী হলেন। যখন মাথার চুল দৃঢ়ভাবে ধরলেন ও সঙ্গীদেরকে ইঙ্গিত দিলেন, উনারা সবাই তখন দ্রুত তার মাথা কেটে ফেলল এবং জলদি কাজ সমাপ্ত করলেন। (ফতহুল বারী)
আর শেষরাতে উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত হলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের দেখামাত্র ইরশাদ মুবারক করলেন,
أَفْلَحَتِ الْوُجُوهُ
 “ঐ চেহারা মুবারক সফল হয়েছেন।” উনারা জবাবে বললেন,
أَفْلَحَ وَجْهُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ
  “ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্ব প্রথম আপনার ‘নূরুর রহমত’ বা চেহারা মুবারকে খুশি মুবারক প্রকাশ পেয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!
 অতপর কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের কর্তিত মাথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে পেশ করলেন তিনি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করলেন। (সুনানুল কুবরা লিল-বাইহাক্বী, মা’রিফাতুস সুনানা, দালায়িলুন নাবুওয়াহ, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এরপর হযরত কা’ব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের সম্পর্কে এই কবিতা আবৃত্তি করেন,
 فَغُودِرَ مِنْهُمْ كَعْبٌ صَرِيعًا ... فَذَلّتْ بَعْدَ مَصْرَعِهِ النّضِيرُ
পরিশেষে তাদের মধ্যে কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফকে ধরাশায়ী করা হলো এবং তার ধরাশায়ী হওয়ার পর বানূ নাযীর লাঞ্ছিত হলো।
 عَلَى الْكَفّيْنِ ثُمّ وَقَدْ عَلَتْهُ ... بِأَيْدِينَا مُشْهَرَةٌ ذُكُورٌ
 সে সেখানে তার দু’হাতের উপর পড়েছিল এবং আমাদের হাতের তীক্ষè তরবারি তার উপর ছেয়ে ছিল।
بِأَمْرِ حَضْرَتْ مُحَمّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ إذْ دَسّ لَيْلًا ... إلَى كَعْبٍ أَخَا كَعْبٍ يَسِيرُ
   (সে সময়ের স্মরণ করুন!), যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারকে বানূ কা’বের এক ব্যক্তি রাতের বেলা গোপনে কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের দিকে যচ্ছিলেন।
فَمَا كَرِهَ فَأَنْزَلَهُ بِمَكْرِ ... وَمَحْمُودٌ أَخُو ثِقَةٍ جُسُورُ
 তিনি হিকমতের সাথে তাকে ঘর থেকে বের করে আনেন। আত্মনির্ভরশীল ও সাহসী ব্যক্তি প্রশংসার যোগ্য হয়ে থাকেন।
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এই কবিতাগুলো হযরত কা’ব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার একটি দীর্ঘ কবিতার অংশবিশেষ, যা বানূ নাযীরের জিহাদ সংক্রান্ত।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ ও সালাম ইবনে আবুল হাকীক- এদের হত্যাকা- প্রসঙ্গে হযরত হাস্সান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন,
 لِلّهِ دَرّ عِصَابَةٍ لَاقَيْتهمْ ... يَا ابْنَ الْحُقَيْق وَأَنْتَ يَا ابْنَ الْأَشْرَفِ
 হে ইবনে হাক্বীক্ব! আর হে ইবনে আশরাফ! তোমরা যাদের মুকাবিলা করেছো সেই সম্প্রদায়ের উত্তম প্রতিদান মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতী হাত মুবারকেই রয়েছে।
يَسْرُونَ بِالْبِيضِ الْخِفَافِ إلَيْكُمْ ... مَرَحًا كَأُسْدِ فِي عَرِينٍ مُغْرِفِ
 উনারা শুভ্র ঝলমলে হালকা তরবারি নিয়ে ঘন বনের সিংহের ন্যায় বীরত্বের সাথে তোমাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
حَتّى أَتَوْكُمْ فِي مَحِلّ بِلَادِكُمْ ... فَسَقَوْكُمْ حَتْفًا بِبِيضِ ذُفّفِ
এভাবে উনারা তোমাদের কাছে তোমাদের বসতিতে আসেন এবং শুভ্র ঝলমলে দ্রুত হত্যাকারী তরবারিসমূহ দ্বারা তোমাদেরকে মৃত্যুর পেয়ালা পান করান।
مُسْتَنْصِرِينَ لِنَصْرِ دِينِ نَبِيّهِمْ ... مُسْتَصْغَرِينَ لِكُلّ أَمْرٍ مُجْحِفِ
 উনারা উনাদের নবী ও রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করার লক্ষ্যে একে অপরের সাহায্য চাচ্ছিলেন এবং উনারা জান-মাল ধ্বংসকারী যে কোন আশংকাকে তুচ্ছ মনে করছিলেন। (রওদ্বুল উনূফ, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক)
 স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারকেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফকে হত্যা করলেন। এই কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ এতটা নাফরমান ও কাট্টা কাফির ছিলো যে, সে সবসময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করত এবং উনাকে কষ্ট দিতো। নাউযূবিল্লাহ! সে গায়ক-গায়িকাদের নিয়ে কবিতার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান মুবারক নিয়ে ব্যাঙ্গ করতো। মানুষদেরকে বিভ্রান্ত করতো। নাউযূবিল্লাহ! এমনকি একসময় হযরত মহিলা ছাহাবয়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের সম্পর্কে খারাপ ও বাজে কথা-বার্তা বলতে থাকলো। এছাড়াও পবিত্র মক্কার কাফির মুশরিকদরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সবসময় উস্কানি দিতো। নাউযূবিল্লাহ! তার এসব ঘৃন কথা-বার্তা, নর্তকীদের নিয়ে ব্যাঙ্গ করা ছিলো জঘন্যতম অপরাধ। যার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এই কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফকে মৃত্যুদন্ড দিলেন। সুবহানাল্লাহ!

0 Comments: