হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১০৬০-১২৭৯) (ম)


হযরত উবাইদা ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শোকগাঁথা:
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত উবাইদা ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন কাফির মুশরিকদের আঘাতে সম্মানিত বদর জিহাদের দিন শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন হযরত কা’ব ইবনে মালিক আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার শোক প্রকাশ করে এ কবিতা বলেন,
 أَيَا عَيْنُ جُودِي وَلَا تَبْخَلِي ... بِدَمْعِك حَقّا وَلَا تَنْزُرِي
 হে চক্ষু! তুমি অশ্রু ঝড়াও, উনার জন্য এটাই শোভনীয়। আর কার্পণ্য ও অবহেলা করো না এমন ব্যক্তিত্বের প্রতি, যার ইন্তেকাল আমাদের দুর্বল করে দিয়েছে।
عَلَى سَيّدٍ هَدّنَا هُلْكُهُ ... كَرِيمِ الْمَشَاهِدِ وَالْعُنْصُرِ
 বংশ ও জিহাদে কৃতিত্বের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র ও সভ্য।
 جَرِيءِ الْمَقْدِمِ شَاكِي السّلَاحِ ... كَرِيمِ النّثَا طَيّبِ الْمَكْسِرِ
 অগ্রগামী হওয়ার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বীর, ধারালো অস্ত্রবাহী প্রশংসনীয় যাচাই বাছাই করার পরও উত্তম প্রমাণিত তিনি।
 عُبَيْدَةَ أَمْسَى وَلَا نَرْتَجِيهِ ... لِعُرْفِ عَرَانَا وَلَا مُنْكِرِ
 হযরত উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর, তিনি এখন এমন হয়ে গেছেন যে, আমাদের উপর সচ্ছলতা বা দুরাবস্থা হলে উনার কাছ থেকে কিছুই আশা করতে পারি না।
 وَقَدْ كَانَ يَحْمِي غَدَاةَ الْقِتَا ... لِ حَامِيَةَ الْجَيْشِ بِالْمِبْتِرِ
 অথচ জিহাদের সকালে তিনি তরবারি নিয়ে সৈন্যদের সাহায্যে ব্যস্ত ছিলেন।

সম্মানিত বদর জিহাদ সম্পর্কে হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কবিতা:
 হযরত কা’ব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত বদর জিহাদ সম্পর্কে বলেছেন,
 أَلَا هَلْ أَتَى غَسّانَ فِي نَأْيِ دَارِهَا ... وَأَخْبَرُ شَيْءٍ بِالْأُمُورِ عَلِيمُهَا
 শোন! বানূ গাস্সানের ঘরবাড়ি দূরে হওয়ায় কি উনাদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছেছে? আর কোন বিষয়ের সংবাদ সেই উত্তমভাবে দিতে পারে, যে তা ভালভাবে জানে।
 بِأَنْ قَدْ رَمَتْنَا عَنْ قِسِيّ عَدَاوَةٍ ... مَعَدّ مَعًا جُهّالُهَا وَحَلِيمُهَا
 নিশ্চয়ই বানূ মা’য়াদ এর অজ্ঞ ও স্থূল উভয় প্রকার লোকেরা শত্রুতাবশত আমাদের তীরের নিশানা বানিয়েছে।
 لِأَنَا عَبَدْنَا اللّهَ لَمْ نَرْجُ غَيْرَهُ ... رَجَاءَ الْجِنَانِ إذْ أَتَانَا زَعِيمُهَا
 এ জন্য যে, যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীয়্যিন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের কাছে আগমন করলেন, আমরা জান্নাতের আশায় মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করি। তিনি ছাড়া আর কারও কাছে কোন কিছু আশা করি না।
হযরত উবাইদা ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শোকগাথা:
 نَبِيّ لَهُ فِي قَوْمِهِ إرْثُ عِزّةٍ ... وَأَعْرَاقُ صِدْقٍ هَذّبَتْهَا أُرُومُهَا
 তিনি এমন এক রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি তিনি আপন জাতির মাঝে উত্তরাধিকারী সূত্রে কায়িনাতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম মর্যাদা-মর্তবা মুবারক উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! তিনি সমস্ত নেকগুনের মালিক এবং বন্টনকারী। উনার পূর্ব সূত্র তথা পূর্ব বংশ পরাস্পরায় উনাকে সম্মানিত তথা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, নূর মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
 فَسَارُوا وَسِرْنَا فَالْتَقَيْنَا كَأَنّنَا ... أُسُودُ لِقَاءٍ لَا يُرْجَى كَلِيمُهَا
 অতপর যখন সম্মানিত বদর জিহাদের দিন তারাও এগিয়ে এল, আমরাও এগিয়ে গেলাম এবং পরস্পর এভাবে মুখোমুখি হলাম যেন মুকাবিলার জন্য এমন সিংহ যার থাবা থেকে বাঁচার আশা করা যায় না।
 ضَرَبْنَاهُمْ حَتّى هَوَى فِي مَكَرّنَا ... لِمَنْخِرِ سَوْءٍ مِنْ لُؤَيّ عَظِيمُهَا
 আমরা তাদের উপর তরবারির হামলা করলাম, আমাদের হামলায় লুয়াই বংশীয়রা উপুড় হয়ে জঘন্যভাবে গর্তে গিয়ে পড়ল।
 فَوَلّوْا وَدُسْنَاهُمْ بِبِيضِ صَوَارِمَ ... سَوَاءٌ عَلَيْنَا حِلْفُهَا وَصَمِيمُهَا
 ফলে তারা পিছু হটে পালায়ন করল। আর আমরা নয়ন ঝলসানো তরবারি দ্বারা তাদের পিষে ফেললাম। আমাদের জন্য তাদের মূল ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের মিত্ররা বরাবর ছিল।
 হযরত কা’ব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরোও বলেন,
 لَعَمْرُ أَبِيكُمَا يَا ابْنَيْ لُؤَيّ ... عَلَى زَهْوٍ لَدَيْكُمْ وَانْتِخَاءِ
 হে লুয়াই এর তনয়দ্বয়! তোমাদের পিতার ক্বসম!  তোমাদের ছিল আত্মম্ভরিতা ও অহংকার।


 হযরত উবাইদা ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শোকগাথা:

لَمَا حَامَتْ فَوَارِسُكُمْ بِبَدْرِ ... وَلَا صَبَرُوا بِهِ عِنْدَ اللّقَاءِ
 তোমাদের আশ্বারোহীরা সম্মানিত বদর জিহাদে তোমাদের কোনই হিফাযত করতে পারেনি, আর জিহাদের (বা মুকাবিলার) সময় তারা সেখানে অনড় বা অটল থাকতে পারেনি।
 وَرَدْنَاهُ بِنُورِ اللّهِ تَعَالَى يَجْلُو ... دُجَى الظّلْمَاءِ عَنّا وَالْغِطَاءِ
 আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নূর (তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে) নিয়ে সে স্থানে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাদের থেকে দূর করেছিলেন আমাদের থেকে অন্ধকার রাতের অন্ধকার আর পর্দা।
 رَسُولُ اللّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ يَقْدُمُنَا بِأَمْرِ ... مِنْ أَمْرِ اللّهِ أُحْكِمَ بِالْقَضَاءِ
 তিনি ছিলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ নির্দেশ মুবারকে আমাদেরকে তা’লীম দান করতেই সম্মুখে চলছিলেন। আর তিনিই সবকিছু স্বীয় ফয়সালার মাধ্যমে সূদৃঢ় করে দিয়েছেন।
 فَمَا ظَفَرَتْ فَوَارِسُكُمْ بِبَدْرِ ... وَمَا رَجَعُوا إلَيْكُمْ بِالسّوَاءِ
 সম্মানিত বদর জিহাদে তোমাদের আরোহীরা না জয়ী হয়েছে, আর না তোমাদের কাছে সুস্থ ভাবে ফিরে গেছে।
  فَلَا تَعْجَلْ أَبَا سُفْيَانَ وَارْقُبْ ... جِيَادَ الْخَيْلِ تَطْلُعُ مِنْ كَدَاءِ
 কাজেই, হে হযরত আবূ সুফইয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! (সম্মানিত বদর জিহাদের সময় তিনি তখনও উনার ঈমান প্রকাশ করেননি।) আপনি তাড়াহুড়া করবেন না, নিচু এলাকা থেকে উত্তম ঘোড়ায় চড়ে আসার অপেক্ষা করুন।
  بِنَصْرِ اللّهِ تَعَالَى  حَضْرَتْ رُوحُ الْقُدْسِ عَلَيْهِ السَّلَامِ فِيهَا ... وَ حَضْرَتْ مِيكَالُ عَلَيْهِ السَّلَامِ فَيَا طِيبَ الْمَلَاءِ
  আর মুসলমানদের দলে ছিলো মহান আল্লাহ পাক উনার বেমেছাল গায়েবী মদদ। হযরত রূহুল কুদুস আলাইহিস সালাম ও হযরত মিকাঈল আলাইহিস সালাম উনারা হযরত ফেরেস্থা আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাফিলা নিয়ে সাহায্যের জন্য নাযিল হয়েছিলেন, আর তা ছিল উত্তম দল। সুবহানাল্লাহ!


হযরত আতিকা আলাইহাস সালাম উনার কবিতা:
হযরত উমাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মাগাযী গ্রন্থে উল্লেখ করেন। হযরত আতিকা বিনতে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত বদর জিহাদ উনার পূর্বে যে একটি স্বপ্ন মুবারক দেখেছিলেন তা সম্মানিত বদর জিহাদের সাথে মিলে যাওয়ায় তিনি এই কবিতা মুবারক আবৃত্তি করেন,
 أَلَمْ تَكُنِ الرُّؤْيَا بِحَقٍّ وَعَابَكُمْ ..... بِتَصْدِيقِهَا قَلَّ مِنَ الْقَوْمِ هَارِبُ
 আমার স্বপ্ন কি বাস্তবে পরিণত হয়নি ( অবশ্যই তা বাস্তবে পরিনত হয়েছে) এবং তার সত্যতা কি তোমাদের সামনে আসেনি? যখন সম্প্রদায়ের একদল লোক পালায়ন করেছিল।
 رَأَى فَأَتَاكُمْ بِالْيَقِينِ الَّذِي رَأَى بِعَيْنَيْهِ مَا تُفْرَى السُّيُوفُ الْقَوَاضِبُ
 সে ব্যক্তি স্বচক্ষে দেখেছে যে, ধারল তরবারি কি ভাবে সঞ্চালিত হয়েছে, তখন তোমাদের কাছে আমার সে স্বপ্ন বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে।
 فَقُلْتُمْ وَلَمْ أَكْذِبْ كَذَبْتُ وإِنَّما يَكْذِبُنِي بِالصِّدْقِ مَنْ هُوَ كَاذِبُ
 আর আমি তোমাদের নিকট সত্য কথা বলেছিলাম, অথচ আমি কখনও মিথ্যা কথা বলিনা। আর আমাকে যে মিথ্যাবাদী অপবাদ দিয়েছিল মুলত সেই হলো চরম মিথ্যাবাদী।
 وَمَا فرَّ إلاَّ رهبَةَ الموتِ هَارِبَا ... حكيمٌ وقدْ أعيتْ عَلَيْهِ المَذَاهِبُ
 হাকিমতো এমনিতে পালায়নি বরং মৃত্যুর ভয়ে সে পালিয়েছে। অবশ্যই তার পালিয়ে যাওয়ার সকল পথই রুদ্ধ হয়েছিল।
 أقَامَتْ سُيُوْفُ الهِنْدِ دُوْنَ رُءُوْسَكُمْ * وَخَطِيْةَ فِيْهَا الشُّبَّا وَالتَّغَالُّبَ
 সেদিন তোমাদের মাথার উপর ছিল হিন্দের তরবারি এবং বাহরাইনের খত্বীয়া গোত্রের নির্মিত বর্শা। যা দেখতে চকমকে ও প্রতিপক্ষের উপর বিজয় নিশ্চিত করে।
 كَأنَ حَرِيْقُ النَّارِ لِمَعَ ظُبَاتِهَا * إذَا ما تَعَاطَتُهَا اللَّيُوْثَ الْمَشَاغِبَ
 সে তরবারি ধারাল অংশটি উজ্জ্বলতায় এমন ঝলমল করে যে, যদি কোন গর্জনকারী সিংহরূপ বীরের হাতে পড়ে, তবে তা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় মনে হয়। সুবহানাল্লাহ!
  ألَا بِأبِي يَوْمِ اللِّقَاءِ حَضْرَتْ مُحَمَّدا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ* إذَا عَضَّ مِنْ عَوْنٍ الْحُرُوْبِ الْغَوَارَبِ
 হায়! আমার পিতার ক্বসম! সেদিন কি অবস্থাই না হয়েছিল, যে দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কাফির মুশরিকরা মুখোমুখি জিহাদ সংঘটিত হয়। সে দিন জিহাদের সময় মক্কার কাফির মুশরিকদের গর্দানসমূহ কর্তিত হয়েছিল।
 مَرَّى بِالسُّيُوْفُ الْمَرْهَفَاتِ نُفُوْسَكُمْ * كَفَّاحَا كَمَا تَمَرَي السَّحَابُ الْجَنَائِبُ
 সেদিন সামনা-সামনি জিহাদে পাতলা ধারালো তরবারিগুলো তোমাদের উপর দিয়ে এমন ভাবে অতিক্রম করেছিল যেমন দক্ষিণের মেঘমালা আকাশ পথ অতিক্রম করে যায়।
 فَكُمْ بَرَدَتْ أسْيَافُهُ مِنْ مَلِيْكَةٍ * وَزَعْزَعَ وَرْدٌ بَعْدَ ذَلِكَ صَالِبٌ
 এরপর তার মধ্যে অনেক তরবারি কর্ম সম্পাদন করে শীতল হয়ে যায় এবং যে সেগুলোকে দৃঢ়তর করতেন, তিনি ওগুলো ওলট-পালট করে রেখে দেন।
 فَمَا بَالَ قَتْلَى فيْ الْقَلِيْبِ وَ مِثْلِهِمْ * لَدَىْ اِبْنِ أَخِيْ أَسْرِى لَهُ
 কি করুন অবস্থা আজ সে সব লোকদের, যাদের লাশ বদরের পুরাতন নোংরা কূপে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। আর তাদেরই বা কি দুর্দশা যারা যুদ্ধ করতে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট বন্দী অবস্থায় আছে।
 مَا يُضَارِبُ فَكَانُوْا نِسَاءِ أُمُّ أَتِىْ لِنُفُوْسِهِمْ * مِنِ اللهِ حِيْنَ سَاقَ وَالْحِيْنَ حَالِبٌ
 এরা কি দুর্বল নারী ছিল? নাকি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে মৃত্যু এসে তাদেরকে সেখানে হাঁকিয়ে নিয়ে গিয়েছিল? আর মৃত্যু তো একটা উছীলা হিসাবেই গণ্য হয়ে থাকে।
 فَكَيْفَ رَأىَ عِنْدَ اللِّقَاءِ حَضْرَتْ مُحَمَّدا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ * بَنُوْ عَمَّهُ وَ الْحَرْبُ فِيْهَا التِّجَارَب
 তাহলে জিহাদের ময়দানে মুকাবিলার সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচাত ভাইয়ের কি প্রকৃতিতে দেখেছিলেন? আর অভিজ্ঞতার পরীক্ষা জিহাদের ময়দানে হয়ে থাকে।
  أَلَمْ يَغْشِكُمْ ضَرْبًا يَحَارُ لِوَقْعِهِ * الْجِبَانَ وَتَبَدُوْ بِالنَّهَارِ الَكَوَاكِبِ
 তরবারির প্রচন্ড আঘাতে তোমাদেরকে কি এমন ভাবে সংকীর্ণ করে ফেলেনি, যা প্রত্যক্ষ করে কাপুরুষরা ঘাবড়ে যায় এবং দিনের বেলায়ই (তরবারির ঝিলিকে) চোখে আকাশের তারকা দেখতে পায়।
 حَلَفَتْ لَئِنْ عَادُوْا لِنَصْطَلَيْنَهُمْ * بِخَارَا تَرَدَى تَجُرَّ فِيْهَا الْمُقَانَبِ
 আমি ক্বসম করে বলছি! তারা যদি প্রত্যাবর্তন করে, তা হলে তুমি তাদেরকে সমূদ্রে নিক্ষেপ করবে, তারা সেখানে গিয়ে পড়বে। অশ্ববাহিনী যা পরীক্ষা করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
 كَأنَّ ضِيَاءُ الشَّمْسِ لِمَعَ ظَبَاتِهَا * لَهَا مِنْ شِعَاعِ النُّوْرِ قَرْنٍ وَاجِبٍ
 এ সম্মানিত জিহাদের ব্যবহৃত তরবারির উজ্জ্বলতা যেন সূর্যের কিরণ। সে তরবারির আলোর ছটায় যেন প্রভাতকালীন সূর্যের লালিমা প্রস্ফুটিত হচ্ছে।
 উমাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আতিক্বা আলাইহাস সালাম উনার আরো কবিতার পংক্তি কিতাবে উল্লেখ করেন,
 هَلَّا صَبَرْتُمْ لِلنَّبِي حَضْرَتْ مُحَمَّدا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ * بِبَدْرٍ وَ مِنْ يَغْشَى الْوَغَى حَقُّ صَابِرٍ
 সম্মানিত বদর জিহাদে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য কেন তোমরা ধৈর্য প্রদর্শন করনি। আর জিহাদে যে জড়িয়ে যায় ধৈর্যশীল হওয়া তার জন্যে অপরিহার্র্য।
وَ لَمْ تُرْجِعُوْا عَنْ مِرْهَفَاتِ كَأنَّهَا * حَرِيْقٌ بِأَيْدِي الْمُؤْمِنِيْنَ  بِوَاتَرٍ
 তোমরা সেই তীক্ষè ধারাল তরবারির আঘাত থেকে কেন ফিরে এলে না, যে তরবারি বহনকারী মু’মিন (বা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) উনাদের হাত মুবারকে ঝলসে উঠেছিল।
 وَ لَم ْتَصْبِرُوْا لِلْبَيْضِ حَتَّى أَخَذْتُمُوْا * قَلِيْلًا بِأَيْدِي الْمُؤمِنِيْنَ الْمَشَاعِرِ
 সেই শুভ্র তরবারির সামনে কেন তোমরা সহনশীল হতে পারলে না, যার ফলে চিহ্নিত স্বল্প সংখ্যক সম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের হাতে তোমরা বন্দী হয়ে গেল।
وَوَلِيُتِمُّوْا نَفَرًا وَمَا الْبَطَلُ الَّذِيْ * يُقَاتِلُ مِنْ وَقَعَ السِّلَاحُ بِنَافَرٍ
 আর তোমরা জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে এলে। সেই লোক কখনও বীর হতে পারে না, যে অস্ত্র নিয়ে লাড়াই করতে গিয়ে পলায়ন করে।
  أتَاكُمْ بِمَا جَاءَ النَّبِيُّوْنَ قَبْلَهُ * وَمَا اَبْنُ أخِيْ الْبِرَّ الصُدُوْقَ بِشَاعِرٍ
 নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিতো তোমাদের নিকট পবিত্র কুরআন শরীফ নিয়ে এসেছেন। যে আসমানী কিতাব নিয়ে এসেছিলেন পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! এবং তিনি জিন ইনসানকে নেককার ও সত্যবাদী হওয়ার তা’লীম দান করেন। আর তিনি কোন কবি নন। সুবহানাল্লাহ!
 سَيَكْفِىْ الَّذِىْ ضِيَعْتُمْ مِنْ نَبِيِّكُمْ * وَيَنْصُرُهُ الْحَيَانَ عَمْرٌو وَعَامِرٌ
 তোমরা তোমাদের হযরত নবী ও রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে কষ্ট দিয়েছে তারা অচিরেই এর প্রতিদান পাবে এবং বানূ আমর বানূ আমির উভয় গোত্রেই উনার খিদমত মুবারকে এগিয়ে আসবেন। (আর রাওদ্বুল উনুফ ফি শারহি গারীবিস সীর, আস সীরাতুন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে কাছীর, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, আইনুল আছার ফি ফুনুনিল মাগাযি)


 সম্মানিত ঐতিহাসিক বদর জিহাদ উনার গুরুত্ব ও ফলাফল:
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
 وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّـهُ بِبَدْرٍ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌ ۖ فَاتَّقُوا اللَّـهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ-
 অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদেরকে সাহায্য মুবারক করেছেন সম্মানিত বদর জিহাদে। অথচ আপনারা ছিলেন সল্পসংখ্যক। কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করুন অবশ্যই আপনারা শুকর গুজার (বান্দা-বান্দী) হবেন।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১২৩)
 অর্থাৎ সম্মানিত বদর জিহাদে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সংখ্যা ছিলেন কম। আর বিপরীতে কাফির মুশরিকদের সংখ্যা ছিলো বেশি। এই সম্মানিত জিহাদে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উছীলা মুবারকে কাফির মুশরিকদের উপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরা বিজয় মুবারক লাভ করেন। সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন, এই সম্মানিত বদর জিহাদে মুসলমানদেরকে বিজয় মুবারক দান করেছেন। কাজেই এই দিবস মুবারক সমস্ত জীন-ইনসান তথা কায়িনাতবাসীর কাছে স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক দিবস মুবারক বলে পরিচিত। সুবহানাল্লাহ! আর ইহা মহান আল্লাহ পাক উনার দিবস মুবারক তথা আইয়্যামুল্লাহ উনাদের অন্তর্ভূক্ত। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আর্জি এই দিবস মুবারক যেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ও ইমাম খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, মুহইউস সুন্নাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মা, কাইয়্যিমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলতানুন নাসীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলকাব ওয়া জামিউন নিছবত, আখাছছুল খাছ আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার আয়োজনে এবং উনার দিক নির্দেশনা মোতাবেক পালন করতে পারি। আমীন!
 পাশাপাশি এই সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারক ছিলো মুসলমানদের সাথে কাফির মুশরিকদের সর্বপ্রথম গাযওয়া বা বড় জিহাদ।
আর এই সম্মানিত বদর জিহাদ ছিলো হক্ব ও নাহক্বের মধ্যে পার্থক্যকারী। সুবহানাল্লাহ!
  খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يَوْمَ الْفُرْقَانِ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ
 অর্থ: “সেই (সম্মানিত বদর জিহাদ উনার) দিন ছিলো হক্ব ও বাতিলের মাঝে পার্থক্যের দিন, যে দিন দু’দল পরস্পর মুখোমুখি হয়েছিলেন”। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪১)
 সম্মানিত বদর জিহাদে অংশগ্রহণকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 اِعْمَلُوا مَا شِئْتُمْ فَقَدْ وَجَبَتْ لَكُمُ الْجَنَّةُ
অর্থ: “আপনারা যা খুশি করুন। আপনাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে।” (বুখারী শরীফ, ইবনে হাব্বান, দালায়িলুন নবুওয়াহ)
 অর্থাৎ পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের প্রাক্কালে গোপনে পবিত্র মক্কা শরীফে এই সংবাদ প্রেরণ করেছিলেন হযরত হাতিব আবূ বালতায়াহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। উনার প্রেরিত পত্র হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কাছে ধরা পরার পর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে শহীদ করার জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট অনুমতি মুবারক প্রার্থনা করলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত বদরী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম উনাদের ব্যাপারে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ মুবারক উল্লেখ করেন, যার অর্থ:  ‘আপনারা যা খুশি করুন। আপনাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে।’ এই পবিত্র হাদীছ শরীফ শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি শুকরিয়া আদায় করেন এবং অনেক কাঁদেন।
সম্মানিত বদরী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ফযীলত সম্পর্কে আরো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالىَ عَنْهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  لَنْ يَدْخُلَ النَّارَ رَجُلٌ شَهِدَ بَدْرًا وَالْحُدَيْبِيَةَ.
 অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, কখনই ঐ ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবেন না। যিনি সম্মানিত বদর ও হুদাইবিয়ার জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ, ফায়জুল ক্বাদির, জামিউছ ছাগীর)
 পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 وَإِذْ يَعِدُكُمُ اللَّـهُ إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ أَنَّهَا لَكُمْ وَتَوَدُّونَ أَنَّ غَيْرَ ذَاتِ الشَّوْكَةِ تَكُونُ لَكُمْ وَيُرِيدُ اللَّـهُ أَن يُحِقَّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَيَقْطَعَ دَابِرَ الْكَافِرِينَ- لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ-
 অর্থ: “স্মরণ করুন! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের কাছে ওয়াদা করেছেন যে, দু’দলের এক দল আপনাদের আয়ত্তাধীন হবে, অথচ আপনারা চাচ্ছিলেন যে, নিরস্ত্র দলটি আপনাদের আয়ত্তাধীন হোক। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি চাচ্ছিলেন যে, সত্যকে তিনি উনার কালাম পাক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং কাফিরদের নির্মূল করবেন। এজন্য তিনি হক্ব বা সত্যকে হক্ব বা সত্যরূপে, নাহক্ব বা অসত্যকে নাহক্ব বা অসত্যরূপে প্রতিপন্ন করেন, যদিও অপরাধীরা এটা পছন্দ করে না।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭-৮)
অর্থাৎ সম্মানিত বদর জিহাদ উনার ফলে মুসলমান উনারা চির বিজয় প্রাপ্ত হয়েছেন এবং হক্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর কাফির মুশরিক বেদ্বীন-বদদ্বীন, মুনাফিকদের ধ্বংস হয়েছে এবং তারা চির লাঞ্চিত ও অপমানিত হয়েছে।
 এই সম্মানিত বদর জিহাদ উনার পর থেকে মুসলমানদের বেমেছাল শক্তি সাহস ও খোদায়ী মদদ প্রাপ্তির বিষয়টি প্রকাশিত হয়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল মু’জিযা শরীফ প্রকাশিত হয়। দলে দলে লোক দ্বীন ইসলাম উনার ছায়াতলে প্রবেশ করতে থাকেন। আর মুনাফিক নেতা উবাই বিন সুলুল ও তারা প্রকাশ্য ভাবে দ্বীন ইসলাম কবুল করতে বাধ্য হয় এবং শত্রুরা ভীত-সন্ত্রস্থ হয়ে চুপসে যায়।
 সম্মানিত বদর জিহাদে মুসলমানদের বিজয় চারটি পক্ষ কঠিন ভাবে ক্ষুব্ধ হয়। পবিত্র মক্কার মুশরিকরা, পবিত্র মদীনা শরীফের ইহুদীরা, মুনাফিকরা এবং পবিত্র মদীনা শরীফের আশপাশের নাজদ প্রর্ভতি এলাকায় বেদুঈনরা। আর এরা ছিলো দস্যু শ্রেণীর লোক। এই চারটি শ্রেণী মুসলমানদের বিজয় প্রাপ্তির পর তারা নিশ্চিত হলো যে, তাদের ধ্বংস অনিবার্য। আর মুসলমানদের বিজয় তাদের সার্থের বিরুদ্ধে যাবে। সেকারণে তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করছে এবং এখনও করে যাচ্ছে। নাউযূবিল্লাহ!
 পাশাপাশি বানূ কাইনুকাসহ অন্যান্য ইহুদী গোত্রগুলো ভীষন ভাবে ভীত ক্রুব্ধ হয় তাদের ষড়যন্ত্র আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার ফলে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে ইহুদীরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করে। সম্মানিত বদর জিহাদের পরেই ২য় হিজরীর শাওয়াল মাসে তা কার্যকর করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
 কাট্টা কাফির ইহুদী মহিলা আসামার হত্যা:
 সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত বদর জিহাদ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফে ফেরার প্রাককালে হযরত উমাইর ইবনে আদী ইবনে খারছা খাতমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাট্টা কাফির দুষ্ট ইহুদী মহিলা আসামাকে কতল করেন।
 উল্লেখ্য যে, আসামা ছিলো এক ইহুদী মহিলা। সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ ও কুৎসামূলক কবিতা রচনা করত এবং নানাভাবে উনাকে কষ্ট দিত। পাশাপাশি সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষদেরকে বিদ্রোহ করে তুলতো ও ওয়াসওয়াসা দিতো। নাউযূবিল্লাহ!  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখনও সম্মানিত বদর জিহাদ থেকে ফিরেননি। এরমধ্যে এই ইহুদী মহিলা সে পুনরায় এ ধরনের ব্যঙ্গমূলক কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলো। তার এই কঠিন হিংসামূলক ব্যাঙ্গ ও কুৎসামূলক কবিতা রচনা দেখে হযরত উমাইর ইবনে আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মান্নত করলেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত দয়া ও ইহসান মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি সম্মানিত বদর জিহাদ থেকে ফিরে আসেন তাহলে আমি এই ইহুদী কাফির মহিলাকে হত্যা করবো। ইনশাআল্লাহ! এদিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সম্মানিত বদর জিহাদ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফ ফিরে আসলেন তখন হযরত উমাইর ইবনে আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি রাত্রিকালে তরবারি নিয়ে সেই ইহুদী মহিলার বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন এবং তার ঘরে প্রবেশ করলেন। যেহেতু হযরত উমাইর ইবনে আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দেখতে পেতেন না, সেহেতু তিনি হাতড়াতে হাতড়াতে ইহুদী মহিলার ঘরে প্রবেশ করলেন। এরপর তিনি ইহুদী মহিলার আশেপাশে  থাকা শিশুদের সরিয়ে দিলেন এবং তার বুকের উপর তরবারি রেখে এত জোরে চাপ দিলেন যে, তা পিঠ দিয়ে বেরিয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! হযরত উমাইর ইবনে আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার মান্নত পূর্ণ করে ফিরে আসলেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে পবিত্র ফযর নামায আদায় করেন।
 অতপর হযরত উমাইর ইবনে আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে সমুদয় ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ জন্যে আমার কোন শাস্তি হবে কি না? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, না এতে আপনার কোন শাস্তি হবে না। অতপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
لاَ يَنْتَطِحُ فِيهَا عَنْزَانِ
 অর্থ: “এ কারণে দু’টি মেষও আপনাকে মাথা দিয়ে আঘাত করবে না।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, আস সীরাতুন নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, তারিখে বাগদাদী, তারিখে দামেশক)
 অর্থাৎ এটা আপনার কোন অপরাধ হয়নি এবং আপনি শাস্তির যোগ্য নন। কোন মানুষতো দুরের কথা কোন বকরী-ভেড়াও এ ব্যাপারে আপনাকে আঘাত করতে পারবে না। সুবহানাল্লাহ!
 উল্লেখ্য যে, এই নারী এতা দুষ্ট বদকার ও দুশ্চরিত্রের ছিলো যে, সে নারীদের অসুস্থতার সময়ের রক্ত মাখা কাপড়, ময়লা কাপড় পবিত্র মসজিদে নববী শরীফে রেখে যেত। যাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কষ্ট পান। নাউযূবিল্লাহ!
 স্মরণীয় যে, হযরত উমাইর ইবনে আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এই সুমহান কাজে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুবই খুশি প্রকাশ করেন।
স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন,
  إذَا أَحْبَبْتُمْ أَنْ تَنْظُرُوا إلَى رَجُلٍ نَصَرَ اللّهَ وَرَسُولَهُ بِالْغَيْبِ فَانْظُرُوا إلَى عُمَيْرِ بْنِ عَدِيّ
 অর্থ: “যদি কেউ এমন বক্তিকে দেখতে চায়, যিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে গোপনে খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দিতে চায়, তা হলে সে যেন হযরত উমাইর ইবনে আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখে।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী)
  সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেছেন, “ঐ অন্ধ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখুন তিনি কেমন গোপনে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেজামন্দী ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষে (উক্ত ইহুদী মহিলাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে) রওয়ানা দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
 নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উমাইর ইবনে আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি খুশি মুবারক প্রকাশ করেছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “উনাকে আপনারা অন্ধ বলবেন না বরং তিনি চক্ষুস্মান।” সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ দৃশ্যত যদিও তিনি অন্ধ কিন্তু অন্তরের দিক থেকে তিনি চক্ষুস্মান। সুবহানাল্লাহ! পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার ২৬ তারিখ রাত্রি মুবারকে হযরত উমাইর ইবনে আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই ইহুদী মহিলাকে হত্যা করেন।
 হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। একবার হযরত উমাইর ইবনে আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
انْطَلِقُوا بِنَا إِلَى الْبَصِيرِ الَّذِى فِى بَنِى وَاقِفٍ نَعُودُهُ-
 অর্থ: “আমাদের ঐ চক্ষুস্মানের কাছে নিয়ে চলুন, যিনি বনী ওয়াকিফে বাস করতেন। আমরা উনাকে দেখতে যাবো।” সুবহানাল্লাহ! (সুনানুল বাইহাক্বী, মা’রিফাতুছ ছাহাবা, তারিখে বাগদাদী)

0 Comments: