হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১০৬০-১২৭৯) (ছ)


এরপর থেকে মুনাফিক উবাই বিন সুলূলের অন্তরে হিংসার আগুন আরো দাউদাউ করে জ্বলতে থাকলো। একদিকে মুনাফিক সর্দার উবাই বিন সুলুলের ষড়যন্ত্র। অন্য দিকে মক্কার কাফিরেরাতো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। নাউযূবিল্লাহ! পবিত্র মদীনা শরীফ আক্রমণ করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করে যাচ্ছিল। নাউযূবিল্লাহ! এ উদ্দেশ্যেইতো হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কমপক্ষে ৫০,০০০ স্বর্ণমুদ্রা ও অনেক অর্থ দিয়ে যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধের মাল-সামানা ক্রয়ের জন্য সিরিয়ায় প্রেরণ করে। আর এসব বিপুল অস্ত্র-শস্ত্র ও মাল-সামানা ব্যবহার হবে নূরে মুজাসসাম, হবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার সম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বিরুদ্ধে। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! 
মক্কার কুরাইশদের অভিযান:
 হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পত্র পেয়ে কুরাইশরা তাদের যুদ্ধাস্ত্র  ও মালসম্পদ পরিপূর্ণ কাফিলা রক্ষার জন্য এবং মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার লক্ষ্যে আবূ জাহিলের নেতৃত্বে মক্কা শরীফ থেকে ১৩০০ সৈন্য নিয়ে অভিযানে বের হয়। ‘জুহফা’ নামক স্থানে কুরাইশ বাহিনী পৌঁছলে হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের খবর তারা পায়। এ সংবাদ পেয়ে বাহিনীর সবাই মক্কা শরীফে ফিরে যেতে চাইলো।
 সেটাই হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন নিশ্চিত হলেন যে, উনার কাফিলাকে মক্কা শরীফের দিকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছেন। তখন তিনি কুরাইশ বাহিনীকে জানালেন, তোমরাতো তোমাদের লোকজন ও অস্ত্র-সস্ত্র রক্ষা করার জন্য এসেছিলে। এখন তা রক্ষা পেয়েছে। কাজেই তোমরা পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে যাও। তখন কাট্টা কাফির আবূ জাহিল ক্বসম খেয়ে বললো, আমরা বদরে না গিয়ে ফিরবোনা। বদরে গিয়ে তিন দিন থাকবো, পশু যবেহ করে সবাইকে খাওয়াবো, মদ পান করবো, গায়িকা বাদ্য বাজিয়ে গান গাইবে। আমরা আমোদ ফূর্তি করবো। নাউযুবিল্লাহ! এর ফলে সমস্ত আরব জাতির উপর আমাদের শক্তি প্রকাশিত হবে এবং সকলে আমাদের ব্যপারে ভীত হবে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মনে আমাদের ভয় ও প্রতাপ চিরদিনের জন্য বদ্ধমূল হয়ে যাবে।  নাউযূবিল্লাহ! অতএব  তোমরা বদর প্রান্তরের দিকে চল।
 কিন্তু কাট্টা কাফির আবূ জাহিল সকলকে যখন এগিয়ে যাওয়ার জন্য বলছিলো তখন তার আদেশ অমান্য করে আখনাস বিন শারীক্ব আছ-ছাক্বাফী-এর নেতৃত্বে বনূ যুহরা গোত্রের ৩০০ লোক পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে গেলো। আখনাস বিন শারীক্ব বনূ যুহরাকে অভয় দিয়ে বললো,  তোমরা মক্কা শরীফে ফিরে যাওয়াতে কেউ যদি তোমাদের উপর ভীরুতার দূর্নাম চাপায় তবে সেটা আমার উপর চাপিয়ে দিও। আবূ জাহিল যা বলে তোমরা তা অনূরসরণ করো না। অবশেষে তারা মক্কা শরীফে ফিরে যায়।
 অপর দিকে  বনূ হাশিম উনারাও ফিরে যেতে চাইলেন কিন্তু উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বগোত্রের হওয়ায় উনাদের উপর কাট্টা কাফির আবূ জাহিল এবং মুশরিকদের কঠোরতা ছিলো অন্যদের চেয়ে বেশি। ফলে উনারা পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে যেতে পারলেন না।
  উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার বড় ভাই ত্বলিব ইবনে ত্বলিব তিনি কুরাইশ বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন, উনাকে কেউ বিদ্রুপ করে বলল, আপনারা আমাদের সাথে এলেও আপনাদের  অন্তর রয়েছে আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সাথে। এ কথা শুনে ত্বলিব তিনি বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করে পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে যান এবং একটি কবিতা পাঠ করেন,
لا هم إما يغزون طالب * في عصبة محالف محارب-
في مقنب من هذه المقانب * فليكن المسلوب غير السالب-
*وليكن المغلوب غير الغالب*

অর্থ: ইয়া আল্লাহ পাক! ‘যদি ত্বলিব এমন দলের সাথে বের হয়, যারা আপনার বিরোধী; তাহলে আপনি তাদেরকে ওদের মতো করুন, যাদের মাল লুন্ঠিত হয়েছে। তারা যেন বিজয়ী না হয়ে পরাজিত হয়।’
 এছাড়া নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চাচাজান খতিমুল মুহাজিরীন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার এক ভাই আক্বীল আলাইহিস সালাম এবং বিনতু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুল উলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত যাওযু মুকাররাম সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নূর আবুল আছ আলাইহিস সালাম তিনিসহ বনূ হাশিমের অনেকেই কুরাইশদের সাথে চলতে থাকেন। উনারা কেউই এই কাফিরদের কাফিলায় যেতে চান নি। কিন্তু কাট্টা কাফির আবূ জহিল এবং অন্যান্য মুশরিকরা উনাদেরকে জোর করে তাদের সাথে নিয়ে যায়। নাউযূবিল্লাহ!
 কুরাইশ কাফির মুশরিকরা সকলেই এই অভিযানে বের হয় কেউ নিজে সরাসরি গমন করে, আবার অনেকে অন্য কাউকে তার স্থলাভিষিক্ত করে। কুরাইশ কাফির নেতাদের মধ্যে আবূ লাহাব ব্যতীত আর কেউ যুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত থাকেনি।
  ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
فكانوا بين رجلين إما خارج وإما باعث مكانه رجلا، وأوعبت قريش فلم يتخلف من أشرافها أحد إلا أن أبا لهب بعث مكانه العاصي بن هشام بن المغيرة، استأجره بأربعة آلاف درهم كانت له عليه قد أفلس بها
 অর্থ: কুরাইশদের নেতারা সকলেই এ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। হয় নিজে সরাসরি গমন করে, না হয় অন্য কাউকে তার স্থলাভিষিক্ত করে পাঠায়। নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে আবূ লাহাব ব্যতীত আর কেউ যুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত থাকেনি। সে তার পরিবর্তে আছী ইবনে হিশাম ইবনে মুগীরাকে পাঠায়। আবূ লাহাবের নিকট আছী চার হাজার দিরহাম ঋণী ছিলো। দরিদ্রতার কারণে সে ঋণ পরিশোধ করতে পারছিলোনা। ঐ পাওনা দিরহামের বিনিময়ে আবূ লাহাব তাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে যুদ্ধে পাঠায়।) আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া: জিলদ-৩ পৃষ্ঠা- ৩১৫, তারিখূল উমাম ওয়াল মুলূক: জিলদ-১, পৃষ্ঠা- ২৪(
 হযরত আবূ নাজীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন যে, উমাইয়া ইবনে খলফও এ যুদ্ধে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে ছিলো অতিশয় বৃদ্ধ মোটাসোটা ভারী দেহের অধিকারী। এ সংবাদ শুনে উকবা ইবনে আবূ ম্আুয়াত তার কাছে আসে। তখন উমাইয়া পবিত্র মসজিদে হারামে নিজের লোকজনসহ বসা ছিলো। উকবার হাতে ছিলো আগুন ও আঙ্গারভর্তী একটা পাত্র। সে পাত্রটি উমাইয়ার সম্মুখে রেখে দিয়ে বললো, হে আবু আলী!  লও, আগুন পোহাও। কেননা তুমি একজন নারী। উমাইয়া বললো, যা তুমি নিয়ে এসেছ তাকে অমঙ্গল করুক। রাবী বলেন, উমাইয়া তখন প্রস্তুতি নিলো ও অন্যদের সাথে যুদ্ধে গমন করে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
  পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عَنْ حضرت سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ رضى الله تعالى عنه  أَنَّهُ قَالَ : كَانَ صَدِيقًا لأُمَيَّةَ بْنِ خَلَفٍ ، وَكَانَ أُمَيَّةُ إِذَا مَرَّ بِالْمَدِينَةِ نَزَلَ عَلَى حضرت سَعْدٍ رضى الله تعالى عنه ، وَكَانَ حضرت سَعْدٌ رضى الله تعالى عنه إِذَا مَرَّ بِمَكَّةَ نَزَلَ عَلَى أُمَيَّةَ ، فَلَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ ، انْطَلَقَ حضرت سَعْدٌ رضى الله تعالى عنه مُعْتَمِرًا ، فَنَزَلَ عَلَى أُمَيَّةَ بِمَكَّةَ ، فَقَالَ لأُمَيَّةَ : انْظُرْ لِي سَاعَةَ خَلْوَةٍ لَعَلِّي أَنْ أَطُوفَ بِالْبَيْتِ , فَخَرَجَ بِهِ قَرِيبًا مِنْ نِصْفِ النَّهَارِ , فَلَقِيَهُمَا أَبُو جَهْلٍ , فَقَالَ : يَا أَبَا صَفْوَانَ ، مَنْ هَذَا مَعَكَ ؟ فَقَالَ : هَذَا حضرت سَعْدٌ رضى الله تعالى عنه، فَقَالَ لَهُ أَبُو جَهْلٍ : أَلاَ أَرَاكَ تَطُوفُ بِمَكَّةَ آمِنًا ، وَقَدْ أَوَيْتُمُ الصُّبَاةَ ، وَزَعَمْتُمْ أَنَّكُمْ تَنْصُرُونَهُمْ وَتُعِينُونَهُمْ ؟ أَمَا وَاللهِ , لَوْلاَ أَنَّكَ مَعَ أَبِي صَفْوَانَ مَا رَجَعْتَ إِلَى أَهْلِكَ سَالِمًا ، فَقَالَ لَهُ حضرت سَعْدٌ رضى الله تعالى عنه ـ وَرَفَعَ صَوْتَهُ عَلَيْهِ ـ : أَمَا وَاللهِ , لَئِنْ مَنَعْتَنِي هَذَا لَمَنَعْتُكَ مَا هُوَ أَشَدُّ عَلَيْكَ مِنْهُ ، طَرِيقَكَ عَلَى الْمَدِينَةِ ، فَقَالَ لَهُ أُمَيَّةُ : لاَ تَرْفَعْ صَوْتَكَ يَا حضرت سَعْدُ رضى الله تعالى عنه عَلَى أَبِي الْحَكَمِ , حضرت سَيِّدِ رضى الله تعالى عنه أَهْلِ الْوَادِي ، فَقَال حضرت سَعْدٌ رضى الله تعالى عنه : دَعْنَا عَنْكَ يَا أُمَيَّةُ ، فَوَاللهِ لَقَدْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : إِنَّهُمْ قَاتِلُوكَ ، قَالَ : بِمَكَّةَ ؟ قَالَ : لاَ أَدْرِي , فَفَزِعَ لِذَلِكَ أُمَيَّةُ فَزَعًا شَدِيدًا ، فَلَمَّا رَجَعَ أُمَيَّةُ إِلَى أَهْلِهِ , قَالَ : يَا أُمَّ صَفْوَانَ ، أَلَمْ تَرَيْ مَا قَالَ لِي حضرت سَعْدٌ رضى الله تعالى عنه ؟ قَالَتْ : وَمَا قَالَ لَكَ ؟ قَالَ : زَعَمَ أَنَّ حضرت مُحَمَّدًا رسول الله صلى الله عليه و سلم أَخْبَرَهُمْ أَنَّهُمْ قَاتِلِيَّ ، فَقُلْتُ لَهُ : بِمَكَّةَ ؟ قَالَ : لاَ أَدْرِي ، فَقَالَ أُمَيَّةُ : وَاللهِ لاَ أَخْرُجُ مِنْ مَكَّةَ ، فَلَمَّا كَانَ يَوْمَُ بَدْرٍ اسْتَنْفَرَ أَبُو جَهْلٍ النَّاسَ , قَالَ : أَدْرِكُوا عِيرَكُمْ , فَكَرِهَ أُمَيَّةُ أَنْ يَخْرُجَ ، فَأَتَاهُ أَبُو جَهْلٍ , فَقَالَ : يَا أَبَا صَفْوَانَ ، إِنَّكَ مَتَى مَا يَرَاكَ النَّاسُ قَدْ تَخَلَّفْتَ ، وَأَنْتَ سَيِّدُ أَهْلِ الْوَادِي , تَخَلَّفُوا مَعَكَ ، فَلَمْ يَزَلْ بِهِ أَبُو جَهْلٍ , حَتَّى قَالَ : أَمَّا إِذْ غَلَبْتَنِي ، فَوَاللهِ لأَشْتَرِيَنَّ أَجْوَدَ بَعِيرٍ بِمَكَّةَ , ثُمَّ قَالَ أُمَيَّةُ : يَا أُمَّ صَفْوَانَ ، جَهِّزِينِي ، فَقَالَتْ لَهُ : يَا أَبَا صَفْوَانَ , وَقَدْ نَسِيتَ مَا قَالَ لَكَ أَخُوكَ الْيَثْرِبِيُّ ؟ قَالَ : لاَ ، مَا أُرِيدُ أَنْ أَجُوزَ مَعَهُمْ إِلاَّ قَرِيبًا , فَلَمَّا خَرَجَ أُمَيَّةُ , أَخَذَ لاَ يَنْزِلُ مَنْزِلاً إِلاَّ عَقَلَ بَعِيرَهُ ، فَلَمْ يَزَلْ بِذَلِكَ حَتَّى قَتَلَهُ اللَّهُ , عَزَّ وَجَلَّ ، بِبَدْرٍ
অর্থ: হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই তিনি বলেন, উনার সাথে উমাইয়া ইবনে খলফের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিলো। উমাইয়া পবিত্র মদিনা শরীফ শরীফ উনার মধ্যে আসলে হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মেহমান হতো এবং হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে আগমন করলে উমাইয়ার আতিথ্য গ্রহণ করতেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ-এ হিজরত মুবারক করার পর একবার হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উমরাহ আদায়ের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা শরীফ-এ গেলেন এবং উমাইয়ার বাড়িতে অবস্থান করলেন। অতপর তিনি উমাইয়াকে বললেন, আমাকে এমন একটি নিরিবিলি সময়ের কথা বল যখন আমি পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করতে পারি। তাই দুপুরের কাছাকাছি সময়ে একদিন উমাইয়া উনাকে সঙ্গে নিয়ে বের হলো, তখন তাদের সঙ্গে আবূ জাহিলের দেখা হলো। তখন সে (উমাইয়াকে লক্ষ করে) বললো, হে আবূ সাফওয়ান! তোমার সঙ্গে উনি কে? সে বললো তিনি হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তখন আবূ জাহিল তাকে (হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে) বললো, আমি আপনাকে নিরাপদে পবিত্র মক্কা শরীফ-এ তাওয়াফ করতে দেখছি অথচ আপনারা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী উনাদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং উনাদের সাহায্য ও সহযোগিতা করে চলছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনি আবূ সাফওয়ানের সঙ্গে না থাকলে আপনার পরিবার-পরিজনের কাছে নিরাপদে ফিরে যেতে পারতেন না। হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তার চেয়ে উচ্চস্বরে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তুমি ইহা করতে যদি আমাকে বাধা দাও তাহলে আমিও এমন একটি বিষয়ে তোমাকে বাধা দিবো যা তোমার জন্য এর চেয়েও কঠিন হবে। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পার্শ্ব দিয়ে তোমার যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দিবো। তখন উমাইয়া উনাকে বললেন, হে হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এ উপত্যকার সরদার আবুল হাকামের সাথে তথা আবু জাহিলের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলবেন না। তখন হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে উমাইয়া! তুমি চুপ করো। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি যে, উনারা তোমার হত্যাকারী। উমাইয়া জিজ্ঞেস করলো পবিত্র মক্কা শরীফ-এ? হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, তা জানি না। উমাইয়া এতে খুবই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো। এরপর উমাইয়া বাড়ি গিয়ে তার স্ত্রীকে বললো, হে উম্মে সাফওয়ান! হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার ব্যাপারে কি বলেছেন জানো? সে বললো, হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তোমাকে কি বলেছেন? উমাইয়া বললো, যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে জানিয়েছেন যে উনারা আমার হত্যাকারী। তখন আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম তা কি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে? তিনি বললেন, তা জানি না। অতপর উমাইয়া বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি কখনো পবিত্র মক্কা শরীফ হতে বের হবো না। ঐতিহাসিক বদর জিহাদের দিন আগত হলে আবু জাহিল সকল কুরাইশদের দলে দলে বের হতে আহবান জানিয়ে বললো, তোমরা তোমাদের যুদ্ধাস্ত্রপূর্ণ কাফিলা রক্ষা করার জন্য অগ্রসর হও। উমাইয়া বের হওয়াকে অপছন্দ করলে আবু জাহিল এসে তাকে বললো, হে আবূ সাফওয়ান! তুমি এ উপত্যকার অধিবাসীদের নেতা, তাই লোকেরা যখন দেখবে তুমি পিছনে রয়ে গেছো তখন তারাও তোমার সঙ্গে পিছনেই থেকে যাবে। এ বলে আবূ জাহিল তার সঙ্গে পীড়াপীড়ি করতে থাকলে সে বললো, তুমি যেহেতু আমাকে বাধ্য করে ফেলেছো তাই মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! অবশ্যই আমি এমন একটি উষ্ট্র ক্রয় করবো যা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে সবচেয়ে ভালো। এরপর উমাইয়া তার স্ত্রীকে বললো, হে উম্মে সাফওয়ান! আমার যাত্রার ব্যবস্থা করো। স্ত্রী বললো, হে আবু সাফওয়ান! তোমার পবিত্র মদীনা শরীফবাসী ভাই যা বলেছিলেন তা কি তুমি ভুলে গেছো? সে বললো, না। আমি তাদের সঙ্গে মাত্র কিছু দূর যেতে চাই। রওয়ানা হওয়ার পর রাস্তায় যে মানযিলেই উমাইয়া কিছুক্ষন অবস্থান করেছে সেখানেই সে তার উট বেঁধে রেখেছে। সারা রাস্তায় সে এমন করলো, শেষে ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে হত্যা করলেন। (বুখারী শরীফ- জিলদ-৫ম: পৃষ্ঠা- ৯১, দালায়িলুন নাবুওয়াহ জিলদ-৩: পৃষ্ঠা- ২৭, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল আহকামুশ শরিয়াতুল কুবরা)। 
প্রসিদ্ধ তারিখ বা ইতিহাস গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে, “ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, মক্কা শরীফের কুরাইশ বাহিনী রণসজ্জা ও যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি সমাপন করলো এবং অভিযানে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো, তখন বনূ বাকর ইবনে আব্দে মানাত ইবনে কিনানার সাথে অতীতের বিরোধের কথা মনে পরলে তারা চিন্তিত হয়ে পড়লো এবং বললো, আমরা আশংকায় রয়েছি যে, আমরা অভিযানে বের হলে হয়ত; তারা পিছন থেকে আমাদের উপর হামলা করতে পারে।
 ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বনূ আমির ইবনে লুয়াই তিনি হযরত মুহম্মদ ইবনে সায়ীদ ইবনে মুসাইয়াব রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সূত্রে আমার কাছে যা বর্ণনা করেছেন, সে প্রেক্ষিতে দেখা যায় কুরাইশ এবং বনূ বাকরের মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো তার কারণ ছিলো হাফস ইবনে আখইয়াফের ছেলের হত্যা। যে ছিলো বনূ মুয়ীস ইবনে আমির ইবনে লুআই এর সদস্য। সে একদা একটি হারানো উটের সন্ধানে দ্বাজনান নামক স্থানে যায়। এ সময় সে ছিলো অল্প বয়সের একটি ছেলে। তার মাথায় ছিলো লম্বা চুল এবং পরিধানে ছিলো সুন্দর পরিপাটি পোশাক আর তার শরীরের রং ছিলো উজ্জ্বল ফর্সা। সে আমির ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আমির ইবনে মালূহ্ এর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিল, যে বনূ ইয়ামার ইবনে আওফ ইবনে কা’ব ইবনে আমির ইবনে লায়ছ ইবনে বাকর ইবনে আব্দে মানাত ইবনে কিনানার লোক ছিলো এবং সে দ্বাজনানে ছিলো। এ সময় সে ছিলো বনূ বাকরের সর্দার। সে ছেলেটিকে দেখে বিস্মিত হল এবং জিজ্ঞেস করলো, হে ছেলে! তুমি কে? সে বলল আমি হাফস ইবনে আখইয়াফ কুরাইশী-এর ছেলে। যখন সে ফিরে গেলো, তখন আমির ইবনে ইয়াযীদ বললো, হে বনূ বাকর! কুরাইশীদের কাছে তোমাদের কোন খুন পাওনা নেই কি? তারা বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! অবশ্যই তাদের কাছে আমাদের অনেক খুন পাওনা আছে। সে বললো, যদি কেউ এ ছেলেটিকে তার নিজের কোন ব্যক্তির বদলে খুন করে  তবে সে তার নিজের খুনের পূর্ণ প্রতিশোধ নিতে পারবে। এ কথা শোনার পর বনূ বাকরের এক ব্যক্তি ঐ ছেলেটির পিছু নিলো এবং সে তাকে ঐ খুনের বদলায় হত্যা করলো, যা কুরাইশের কাছে পাওনা ছিলো। কুরাইশরা এ হত্যার ব্যাপারে কথা-বার্তা বলায় আমির ইবনে ইয়াযীদ বললো, হে বনূ কুরাইশ! তোমাদের কাছে আমাদের অনেক খুন পাওনা আছে এ জন্য আমরা তাকে হত্যা করেছি। এখন তোমরা যা খুশি করতে পারো। যদি তোমরা চাও তবে তোমাদের যিম্মায় যা আছে তা আদায় করে দাও এবং আমাদের যিম্মায় যা আছে তা আমরা আদায় করে দিব। আসলে খুনের ব্যাপারেতো এরূপ যে, একজনের বদলে আরেকজন খুন করা হয়। এখন যদি তোমরা আমাদের যিম্মায় তোমাদের যে খুন পাওনা আছে এর দাবি পরিহার করো; তবে আমরাও তোমাদের যিম্মায় আমাদের যে খুন পাওনা আছে সে দাবি পরিত্যাগ করবো। বস্তুত কুরাইশ গোত্রের মধ্যে এ ছেলেটির হত্যা তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার না হওয়ায় তারা বললো আচ্ছা তাহলে ‘জানের বদলে জান’। অবশেষে তারা ছেলেটির হত্যার কথা ভুলে যায় এবং তার রক্তের বিনিময় দাবি করলো না।
 এ ঘটনার কিছুদিন পর ঐ ছেলের ভাই মিকরায ইবনে হাফস ইবনে আখইয়াফ ‘মাররায যাহরান’ নামক স্থানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলো। হঠাৎ সে আমির ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আমির মালূহকে উটের উপর আরোহিত অবস্থায় দেখলো। যখন তাকে দেখলো, তখনই সে তার কাছে চলে গেলো এবং সে স্বীয় উট তার পাশে নিয়ে বসালো। এ সময় আমিরের তরবারি কোষবদ্ধ ছিলো। মিকরায তরবারি নিয়ে তার উপর হামলা করে তাকে হত্যা করলো এবং সে তরবারি তার পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো। তাকে পবিত্র মক্কা শরীফে নিয়ে এসে রাতের মধ্যেই কা’বা শরীফ উনার পর্দার সাথে তার তরবারি ঝুলিয়ে রাখলো। সকাল বেলা কুরাইশরা ঘুম থেকে জেগে দেখতে পেলো, আমির ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আমিরের তরবারি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার পর্দার সাথে ঝুলছে। তখন তারা বললো, এটাতো আমির ইবনে ইয়াযীদের তরবারি। মিকরায ইবনে হাফস তার উপর হামলা করে তাকে হত্যা করেছে। এটাই ছিলো তাদের যুদ্ধের অবস্থা। তারা যখন তাদের এ যুদ্ধে লিপ্ত ছিলো তখন মানুষের মধ্যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রচার ও প্রসার লাভ করতে থাকে। ফলে তারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি আকৃষ্ট হয়। এমতাবস্থায় কুরাইশরা বদর প্রান্তরে যাওয়ার ইরাদা বা ইচ্ছা করে। সে সময় তাদের এবং বনূ বাকরের মধ্যে যে তিক্ত সম্পর্ক ছিলো তা তাদের মনে পড়ে; ফলে তারা তাদের পক্ষ থেকে ক্ষতির আশংকা করতে থাকে। (সীরতে ইবনে হিশাম, মাগযিউল ওয়াক্বিদী, সবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদি ফি সীরাতি খাইরিল ঈবাদ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া) 
 প্রসিদ্ধ তারিখ তথা ইতিহাস গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
  عَنْ  حضرت عُرْوَةَ بْنِ الزّبَيْرِ رضى الله تعالى عنه قَالَ لَمّا أَجْمَعَتْ قُرَيْشٌ الْمَسِيرَ ذَكَرَتْ الّذِي كَانَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ بَنِي بَكْرٍ فَكَادَ ذَلِكَ يُثْنِيهِمْ فَتَبَدّى لَهُمْ إبْلِيسُ فِي صُورَةِ سُرَاقَةَ بْنِ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ الْمُدْلِجِيّ ، وَكَانَ مِنْ أَشْرَافِ بَنِي كِنَانَةَ فَقَالَ لَهُمْ أَنَا لَكُمْ جَارٌ مِنْ أَنْ تَأْتِيَكُمْ كِنَانَةُ مِنْ خَلْفِكُمْ بِشَيْءِ تَكْرَهُونَهُ فَخَرَجُوا سِرَاعًا .
 অর্থ: “হযরত উরওয়ান ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরাইশরা যুদ্ধে রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে বনূ বাকরের সাথে তাদের বিরোধের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা ভাবতে থাকে।  ঠিক ঐ মুহূর্তে  মালউন ইবলিস সূরাকা ইবনে মালিক ইবনে জু’শাম মুদলাজির আকৃতি ধারণ করে তাদের সামনে হাযির হয়। সূরাকা ছিলো বনূ কিনানার অন্যতম কেন্দ্রীয় ও সম্মানিত নেতা। মালউন ইবলিস সে কুরাইশদের বললো, বনূ কিনানার লোকেরা যাতে পশ্চাৎ দিকে তোমাদের উপর হামলা না করতে পারে আমি তার দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। এ প্রতিশ্রুতি পেয়ে কুরাইশরা দ্রুত যুদ্ধে রওয়ানা হয়ে গেলো”। (আস সীরাতুন নববিয়্যাতু লিইবনে হিশাম, আস সীরাতুন নববিয়্যাতু লিইবনে কাছীর, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখুল উমামে ওয়াল মুলূক )
 পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি এ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে ইরশাদ মুবারক করেছেন,
 وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ خَرَجُوا مِن دِيَارِهِم بَطَرًا وَرِئَاءَ النَّاسِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّـهِ ۚ وَاللَّـهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ - وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَّكُمْ ۖ فَلَمَّا تَرَاءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِّنكُمْ إِنِّي أَرَىٰ مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ اللَّـهَ ۚ وَاللَّـهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ-
 অর্থ: তোমরা তাদের ন্যায় হইও না যারা দম্ভভরে ও লোক দেখাবার জন্যে নিজেদের বাড়ি থেকে বের হয়েছিলো এবং লোকদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার পথ থেকে বাধা দিতে। তারা যা করে মহান আল্লাহ পাক তিনি তা পরিবেষ্টন করে রয়েছেন। আর যখন শয়তান তাদের কার্যাবলী তাদের দৃষ্টিতে সৌন্দর্যময় করেছিলো এবং বলেছিলো আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না। আর আমি তোমাদের পাশেই থাকবো। এরপর দু’দল যখন পরস্পর মুখামুখি হলো তখন সে অতি দ্রুত পায়ে পিছন দিকে সরে পড়লো ও বললো, তোমাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, তোমরা যা দেখতে পাওনা আমি তা দেখি। আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করি। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর। (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৪৭,৪৮)
  অভিশপ্ত শয়তান কুরাইশদেরকে ধোঁকা দিয়ে যুদ্ধ অভিযানে রওয়ানা করে দিলো এবং সে নিজেই তাদের সাথী হলো। এক এক মনযিল অতিক্রম করে সম্মুখে অগ্রসর হতে লাগলো। এই বাহিনীর অনেকেই বলেছে, সূরাকার সাথে দলবল ও ঝান্ডাও ছিলো। এ ভাবে ইবলীস শয়তান তাদেরকে যুদ্ধের রনাঙ্গন পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিলো। পরে যখন সে যুদ্ধের তিব্রতা লক্ষ করলো এবং মুসলমান উনাদের সাহায্যার্থে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের অবতরণ করতে দেখলো ও হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে প্রত্যক্ষ করলো, তখন সে এই কথা বলে পিছনে ধাবিত হলো, আমি যা দেখছি তোমরা তা দেখতে পাচ্ছ না। আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করি। 

0 Comments: